leadT1ad

মুসলমানদের জন্য ‘গাজা গণহত্যা মডেল’ কেন দুশ্চিন্তার

ফিলিস্তিনে মুসলিমদের ওপর হত্যাযজ্ঞ আসলে এক ধরনের অসম মৃত্যুনীতি প্রতিষ্ঠা করছে। এই নীতি ভবিষ্যতে বৈশ্বিকভাবেও মুসলিমদের ওপর গণহত্যার পথ প্রশস্ত করবে। মিডল ইস্ট আইয়ে লিখেছেন ড. আমিনা শরীফ।

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১৭: ৩০
মুসলমানদের জন্য ‘গাজা গণহত্যা মডেল’ কেন দুশ্চিন্তার। স্ট্রিম গ্রাফিক

খাবারের অপেক্ষায় হাতে খালি গামলা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য মানুষ। শিশুদের কারও হাত নেই, কারও পা নেই, কারও দুটোই নেই। জরুরি চিকিৎসাকর্মীরা নিহত হচ্ছেন। ধ্বংস হওয়া অ্যাম্বুলেন্সের পাশেই তাঁদের গণকবরে শুইয়ে দেওয়া হচ্ছে।

ত্রাণ বিতরণের জায়গায় ফিলিস্তিনিদের গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। গাজা সিটি থেকে পরিবারগুলোকে জোর করে বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে। সাংবাদিক আনাস আল-শরীফের মতো মানুষ শুধু সত্য জানানোর জন্য খুন হচ্ছেন।

এগুলো কেবল মৃত্যুর দৃশ্য নয়। এগুলো হলো নির্মূলের দৃশ্য—এগুলো জীবনকে পরিকল্পিতভাবে শেষ করার ধ্বংসযজ্ঞ। নিরবচ্ছিন্ন বোমাবর্ষণ, অনাহার, তৃষ্ণা, অঙ্গহানি, চিকিৎসাহীনতা, মানসিক আঘাত, ক্লান্তি, আশ্রয়হীনতা—সব মিলিয়ে একটি জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার বীভৎস এক আয়োজন।

অধিকৃত পশ্চিম তীরেও ফিলিস্তিনিরা নিরাপদ নন। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সেখানেও ইসরায়েলি বাহিনী ও বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন।

বহুদিন ধরেই ফিলিস্তিনিদের তিলে তিলে মেরে ফেলার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। গুলি করে মানুষকে পঙ্গু করা হচ্ছে। গাজায় খাদ্যের ক্যালোরি সীমিত করা হয়েছে। ধ্বংস করা হয়েছে পানির ব্যবস্থা, বর্জ্য শোধনাগার ও হাসপাতাল।

ড. আমিনা শরীফ। সংগৃহীত ছবি
ড. আমিনা শরীফ। সংগৃহীত ছবি

এমন হত্যাযজ্ঞ সম্ভব হয়েছে পশ্চিমাদের দীর্ঘদিনের অমানবিক দৃষ্টিভঙ্গি—ফিলিস্তিনিদের ‘সন্ত্রাসী’ বা ‘মানবপশু’ হিসেবে দেখার কারণে।

তবে ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করা বিশ্ব মুসলিম সমাজের জন্য কী অর্থ বহন করে তা এখনো পুরোপুরি ভাবা হয়নি। মুসলিমদেরকে বিশ্বব্যাপী ‘সন্ত্রাসী হুমকি’ হিসেবে দেখে নির্মূলের লক্ষ্য বানানো হয়েছে।

ফিলিস্তিন বহুদিন ধরেই এমন এক স্থান হয়ে উঠেছে, যেখানে মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কৌশল ও বর্ণবাদী যুক্তি তৈরি হয় এবং তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে শুরু করে ইয়েমেনের মতো ধ্বংসস্তূপ হওয়া অন্যান্য ভূখণ্ডসহ ফিলিস্তিনে মুসলিমদের ওপর হত্যাযজ্ঞ আসলে এক ধরনের নির্বিচার মৃত্যুনীতি প্রতিষ্ঠা করছে। এই নীতি ভবিষ্যতে বৈশ্বিকভাবেও মুসলিমদের গণহত্যার পথ প্রশস্ত করবে।

এই অসম মৃত্যুকেন্দ্রিক রাজনৈতিক যুক্তি ও নীতি যদি ভেঙে ফেলা না যায়, তাহলে আজ ফিলিস্তিনিরা যে গণহত্যার শিকার হচ্ছেন, তা ভবিষ্যতে বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের গণহত্যার নকশায় পরিণত হতে পারে।

বিদ্রোহ দমন পরীক্ষাগার

ফিলিস্তিন বহুদিন ধরেই বিদ্রোহ দমনের এক পরীক্ষাগার হিসেবে কাজ করেছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ও পরে ইসরায়েলি দখলদারত্বের সময়ও ফিলিস্তিন হয়ে ওঠে বিদ্রোহ দমনের কৌশল জানার একটি পরীক্ষাগার। সেখানে নজরদারি, দমননীতি ও সামরিকায়ন করা পুলিশি ব্যবস্থার নানা কৌশল তৈরি ও পরীক্ষা করা হয়। বিশ্বব্যাপী মুসলিম জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণের জন্য এই কৌশলগুলো সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে ব্যবহার করা হয়।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার পর এই কথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ শুরু হয়। বিশ্বব্যাপী এই যুদ্ধ এখনো চলমান।

সফট পাওয়ারের কৌশল দেখা যায় বিভিন্ন দেশের জাতীয় সন্ত্রাসবিরোধী নীতিতে। এগুলো মূলত সহিংস চরমপন্থা মোকাবিলা নামক এজেন্ডার অধীনে বাস্তবায়িত হয়েছে। এসব নীতির বড় অংশের ভিত্তি তৈরি হয়েছে ফিলিস্তিন দখলের অভিজ্ঞতা থেকে।

১৯৩৬ থেকে ১৯৩৯ সালের মধ্যে ব্রিটিশ ম্যান্ডেট শাসনের সময়ে ফিলিস্তিনি বিদ্রোহ চলাকালে ঔপনিবেশিক বিদ্রোহ দমন কৌশল তৈরি হয়। উপনিবেশে গণআন্দোলন দমনের এই কৌশল পরবর্তী সময়ে পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফিলিস্তিনে কর্মরত পশ্চিমা পুলিশ ও সেনারা অন্য উপনিবেশগুলোতে মধ্য ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতে গিয়ে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগান।

ফিলিস্তিন আসলে ছিল পশ্চিমাদের বিভিন্ন উপনিবেশে বিদ্রোহ দমনের কৌশল-বিনিময়ের এক কেন্দ্র। এখান থেকেই তাদের ‘উপনিবেশ শাসনের সেরা কৌশল’ ছড়িয়ে পড়ত। সরকারের নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা, বর্ণবাদী যুক্তি এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ করার পদ্ধতি ঘুরে বেড়াত উপনিবেশ ও কেন্দ্রীয় শাসনের মধ্যে, একই সাম্রাজ্যের বিভিন্ন উপনিবেশে, এমনকি ভিন্ন ভিন্ন সাম্রাজ্যের মধ্যেও।

মুসলমানদের জন্য ‘গাজা গণহত্যা মডেল’ কেন দুশ্চিন্তার। সংগৃহীত ছবি
মুসলমানদের জন্য ‘গাজা গণহত্যা মডেল’ কেন দুশ্চিন্তার। সংগৃহীত ছবি

আজও ফিলিস্তিন বৈশ্বিক বিদ্রোহ-দমন জ্ঞান বিনিময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এর স্পষ্ট উদাহরণ হলো ‘ছোট গাজা’—মরুভূমির মাঝখানে তৈরি ৬০০ ভবনের এক ভূতুড়ে নগরী। সেখানে ইসরায়েলি সেনারা নগরযুদ্ধের মহড়া দেয়। একই জায়গায় মার্কিন কর্মকর্তারাও প্রশিক্ষণ নেন নজরদারি, প্রোফাইল তৈরি ও বিক্ষোভ দমন কৌশলের। পরে এসব কৌশল যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ ব্যবস্থায়ও প্রয়োগ করা হয়। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনে ইসরায়েলি নজরদারি ও সন্ত্রাসবিরোধী কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে।

আর সন্ত্রাসবিরোধী নীতি বিদ্রোহ-দমনে সামরিক নীতির ওপর ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছে। তাই বিশ্বজুড়ে মুসলিম জনগোষ্ঠীও মূলত ফিলিস্তিন দখল থেকে সংগৃহীত সামরিক জ্ঞানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।

শুধু দমন কৌশল নয়, প্রাণঘাতী বহু প্রযুক্তিও ফিলিস্তিন দখলের অভিজ্ঞতা থেকে এসেছে। সাংবাদিক অ্যান্টনি লোয়েনস্টাইন তাঁর দ্য প্যালেস্টাইন ল্যাবরেটরি বইতে লিখেছেন, ইসরায়েল দখলকৃত ফিলিস্তিনকে অস্ত্র ও নজরদারি প্রযুক্তি পরীক্ষার ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করে। পরে এই প্রযুক্তি তারা স্বৈরশাসক ও গণতান্ত্রিক উভয় রাষ্ট্রেই রপ্তানি করে।

ইসরায়েলি অস্ত্র ও নজরদারি প্রযুক্তির ছাপ পাওয়া যায় মুসলিম হত্যার বহু ঘটনাস্থলে। যেমন, ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সালে বসনিয়ায় মুসলিম গণহত্যায়, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যায় এবং ভূমধ্যসাগরে যেসব শরণার্থী নৌযানে অগণিত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

সারকথা, দখলকৃত ফিলিস্তিনকে একটি পরীক্ষাগার হিসেবে দেখা হয়। এখানেই তৈরি হয় নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের নানা কৌশল ও প্রযুক্তি, যা পরে বিশ্বজুড়ে মুসলিম জনগোষ্ঠীকে দমনে ব্যবহৃত হয়।

বর্ণবাদী ব্যাকরণ

বিদ্রোহ দমনের জ্ঞানের ক্ষেত্র হিসেবে ফিলিস্তিন থেকেই সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের বর্ণবাদী ব্যাকরণও তৈরি হয়েছে। এই জ্ঞানব্যবস্থায় মুসলিমদেরকে একটি নীচু বা পশুর মতো জনগোষ্ঠী হিসেবে দেখা হয়। এর মূল লক্ষ্য তাদের নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল করা।

সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনা শুরু হয় মূলত ১৯৭০-এর দশকে। যা উপনিবেশমুক্তির আন্দোলন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে উত্থানের প্রেক্ষাপটে তৈরি হয়। তবে এর বর্তমান রূপ আসে ১৯৮০-র দশকে স্নায়ু যুদ্ধের সমাপ্তি এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর।

১৯৭৯ সালে জেরুজালেমে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ নিয়ে একটি সম্মেলন হয়। সেখানে সন্ত্রাসবাদকে ‘সভ্যতা’ ও ‘পাশ্চাত্যের’ জন্য হুমকি হিসেবে ধারণা তৈরির চেষ্টা করা হয়।

সেই সম্মেলনের প্রতিবেদনের ভূমিকা লেখেন বর্তমান ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সেখানে তিনি যুক্তি দেন, সন্ত্রাসবাদ হলো স্বাধীনতার প্রতি ঘৃণা এবং গণতান্ত্রিক জীবনধারা ধ্বংসের সংকল্পের প্রতীক। সেখানে ইসরায়েলকে পশ্চিমা সভ্যতার অংশ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।

সন্ত্রাসবাদকে সভ্যতাবিরোধী ও অসুস্থ প্রবণতা হিসেবে চিত্রিত করা আসলে বর্ণবাদী ব্যাকরণ। এর মাধ্যমে মুসলিম সন্ত্রাসীকে এমন এক জনগোষ্ঠী হিসেবে দেখানো হয়, যারা জৈবিক-সাংস্কৃতিক কারণে আইনের শাসনের যুগে প্রবেশ করতে অক্ষম।

এই সময়ে সন্ত্রাসবাদকে ইসলামি বলে পরিচিত কিছু গোষ্ঠীর রাজনৈতিক সহিংসতার সঙ্গে এক করে দেখা হয়। এর নাম দেওয়া হয় ‘নতুন সন্ত্রাসবাদ’। নতুন সন্ত্রাসীকে উপস্থাপন করা হয় চরম অযৌক্তিক এবং নজিরবিহীন সহিংস এক চরিত্র হিসেবে।

এর বিপরীতে, সোভিয়েত যুগের সন্ত্রাসীদের বর্ণনা করা হতো ‘সম্মানজনক প্রতিদ্বন্দ্বী’ হিসেবে। তাদের সহিংসতাকে বলা হতো যৌক্তিক, বোধগম্য ও রাজনৈতিক।

ফিলিস্তিনি আত্মঘাতী হামলাকারীকেই নতুন সন্ত্রাসীর তকমা দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে ‘ইসলামী সন্ত্রাসবাদ’কে অযৌক্তিক এবং মুসলিম সন্ত্রাসীকে বর্বর হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।

সন্ত্রাসবাদকে সভ্যতাবিরোধী ও অসুস্থ প্রবণতা হিসেবে চিত্রিত করা আসলে বর্ণবাদী ব্যাকরণ। এর মাধ্যমে মুসলিম সন্ত্রাসীকে এমন এক জনগোষ্ঠী হিসেবে দেখানো হয়, যারা জৈবিক-সাংস্কৃতিক কারণে আইনের শাসনের যুগে প্রবেশ করতে অক্ষম।

এই যে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধকে ‘সভ্যতার সংঘর্ষ’ আর সন্ত্রাসবাদকে চরমপন্থার তত্ত্ব ব্যবহার করে মানসিক বিপর্যয়ের ফল হিসেবে দেখায় পশ্চিম, দখলকৃত ফিলিস্তিন থেকেই সেই বর্ণবাদী ব্যাকরণ তৈরি হয়েছে।

অসম মৃত্যুকেন্দ্রিক রাজনৈতিক যুক্তি ও নীতি

দখলকৃত ফিলিস্তিন হলো এমন এক কেন্দ্রীয় স্থান, যেখানে শাসন ও বর্ণবাদী জ্ঞান তৈরি হয় এবং সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে সেগুলো বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এখানেই মুসলিমদের নির্মূল করাকে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে, যা এই সহিংসতাকে বিশ্বব্যাপী প্রয়োগের ঝুঁকিও তৈরি করে।

ফিলিস্তিন থেকে ভেসে আসা ধ্বংসের দৃশ্য এক অসম মৃত্যুকেন্দ্রিক রাজনৈতিক যুক্তি ও নীতি প্রকাশ করে। সেই নীতিতে বলা হয়—ইসরায়েলিদের বাঁচতে হলে ফিলিস্তিনিদের মরতে হবে।

এই হিসাবকে বৈধতা দিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেস সদস্যরা, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্যরা এবং বিশ্বের বহু নেতা। তারা ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রেখেছেন। জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। এমনকি যখন ইসরায়েলের নির্মূল করার লক্ষ্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, তখনও বলে গেছেন— “ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে।”

বলা যায়, ফিলিস্তিনে মুসলিম জীবন ধ্বংস আসলে এক পরীক্ষাক্ষেত্র। এখানেই তৈরি হয়েছে এমন এক অসম মৃত্যুকেন্দ্রিক রাজনৈতিক যুক্তি ও নীতি, যা অন্যত্রও প্রয়োগ করা যায়। ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুকে হত্যা বা গণহত্যা হিসেবে নয় বরং বিকৃতভাবে অন্যদের জীবন বাঁচানোর শর্ত হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। মুসলিমদের ব্যাপকভাবে হত্যাকে রাজনৈতিক প্রয়োজন হিসেবে বৈধতা দেওয়া হয়েছে।

ফিলিস্তিনে চলমান মুসলিমদের জীবনের এই ধ্বংসযজ্ঞ তাদের অস্তিত্বকে কেবল হত্যাযোগ্য হিসেবে বোঝার উপযোগী করে তুলেছে। তাদের মৃত্যু শোকযোগ্য নয়, সমাহিত করার যোগ্যও নয়।

ফিলিস্তিনে চলমান মুসলিমদের জীবনের এই ধ্বংসযজ্ঞ তাদের অস্তিত্বকে কেবল হত্যাযোগ্য হিসেবে বোঝার উপযোগী করে তুলেছে। তাদের মৃত্যু শোকযোগ্য নয়, সমাহিত করার যোগ্যও নয়।

আরও ভয়ংকর ব্যাপার হলো, সন্ত্রাসবাদ দমনের কৌশল, প্রযুক্তি ও বর্ণবাদী ব্যাকরণ যেভাবে ফিলিস্তিনে তৈরি হয়ে পরে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে, তেমনি এই অসম মৃত্যুনীতিও বিশ্বজুড়ে রপ্তানি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের বয়ানে যতদিন মুসলিমদের অমানবিকভাবে চিত্রিত করে তাদের ধ্বংসযোগ্য হুমকি হিসেবে উপস্থাপন বন্ধ না করা হয় ততদিন এই বিপদের ঝুঁকি থাকবে।

ফিলিস্তিন দখল বহুদিন ধরেই ধ্বংসযজ্ঞের এক চুল্লি হিসেবে কাজ করছে। সেখানে নিয়ন্ত্রণ ও ধ্বংসের কৌশল তৈরি হয় এবং স্বাভাবিক করা হয়। যা সেখানে শুরু হয়, তা সচরাচর সেখানেই শেষ হয় না।

এই অসম মৃত্যুকেন্দ্রিক রাজনৈতিক যুক্তি ও নীতি যদি ভেঙে ফেলা না যায়, তাহলে আজ ফিলিস্তিনিরা যে গণহত্যার শিকার হচ্ছেন, তা ভবিষ্যতে বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের গণহত্যার নকশায় পরিণত হতে পারে।

লেখক: মুসলিমবিদ্বেষী বর্ণবাদবিষয়ক গবেষক

(মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মাহবুবুল আলম তারেক)

Ad 300x250

সম্পর্কিত