স্ট্রিম ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শান্তি প্রস্তাব এবং ইউক্রেনের জন্য দেওয়া কঠোর আলটিমেটাম এমন সময়ে এসেছে, যখন পরিস্থিতি সবচেয়ে প্রতিকূল। রুশ সেনা, ড্রোন এবং কুয়াশা তৈরিকারী রোবট দক্ষিণ-পূর্ব ফ্রন্টলাইন ভেদ করেছে।
জাপোরিঝঝিয়া শহরের মানুষ প্রায় প্রতিরাতেই গোলা হামলার শব্দ শোনে। এবার তারা ভারী গ্লাইডিং বোমার বিস্ফোরণ শুনছে যা আরও আতঙ্কজনক। একই সময়ে রুশ গোলাবর্ষণ ইউক্রেনের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সম্প্রচার অবকাঠামো ধ্বংস করে চলেছে।
সূর্যাস্তের পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে ব্ল্যাকআউট তৈরি হচ্ছে। সন্ধ্যা চারটায় অন্ধকার নেমে আসে এবং রাতের তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির নিচে নেমে যায়।
মঙ্গলবার ইউক্রেন আবারও জাতীয় শোক পালন করেছে। রাতে রাশিয়ার হামলায় কিয়েভে কমপক্ষে ছয়জন নিহত হয়। অন্যদিকে রাশিয়ার দক্ষিণ রোস্তভ অঞ্চলে ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে।
কিছু ইউক্রেনীয় সেনার কাছে ট্রাম্পের এই প্রস্তাব কঠিন এক বাস্তবতার স্বীকারোক্তি। বগদান নামের এক ড্রোন অপারেটর আল জাজিরাকে বলেন—পশ্চিমা দেশগুলোর ‘অসহায়ত্ব ও নির্মমতা অনন্ত’। পূর্বাঞ্চলীয় ফ্রন্ট থেকে ছুটিতে কিয়েভে এসেছেন তিনি।
তিনি অভিযোগ করেন, পশ্চিমা দেশগুলো সামরিক সহায়তা আটকে রেখেছে এবং সিদ্ধান্তে আসতে দেরি করছে। আর সেই দীর্ঘসূত্রতার মূল্য ইউক্রেনিয়রা রক্ত দিয়ে দিচ্ছেন— নিজেদের এবং তাঁদের শিশুদের রক্ত দিয়ে। যুদ্ধকালীন নিয়ম অনুসারে তিনি পদবি প্রকাশ করেননি।
তবুও বগদানের কিছুটা আশাবাদ আছে। তিনি মনে করেন, রাশিয়ার অগ্রসর হওয়ার ক্ষমতা সীমিত। তার ভাষায়, তিন বছরে রাশিয়া ইউক্রেনের মাত্র ১ শতাংশ এলাকা দখল করেছে। এতে তাদের প্রায় ১০ লাখ সেনা হতাহত হয়েছে।
২০২২ সালের শুরুর সাফল্যের পর রুশ বাহিনী কিয়েভের আশপাশসহ উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণের বেশ কিছু এলাকা থেকে পিছু হটে। তারপর থেকে তারা যেকোনো শহর দখল করতে বিশাল মানবিক ক্ষতির শিকার হয়েছে।
বগদান ব্যঙ্গ করে বলেন, এভাবে চললে রাশিয়া তার সব পুরুষ নাগরিকদের হারিয়েও ইউক্রেন জয় করতে পারবে না।
যুক্তরাষ্ট্র ‘আমাদের আত্মসমর্পণ করাতে চায়’
এই রক্তক্ষয়ী প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনে আবারও বড় দুর্নীতির কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়েছে। এতে জড়িত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ঘনিষ্ঠ সহযোগীরাই, যিনি ২০১৯ সালে দুর্নীতিবিরোধী প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসেন।
এমন সময়ে গত সপ্তাহে ট্রাম্প ২৮ দফা শান্তি প্রস্তাব দেন। তিনি হুমকি দেন, ইউক্রেন ২৭ নভেম্বরের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে প্রস্তাব না মানলে সামরিক সহায়তা স্থগিত করা হবে। এতে ইউক্রেনীয়রা নিজেদের প্রতারিত ও পরিত্যক্ত মনে করেছেন।
কিয়েভের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বীজ, টব ও সার বিক্রেতা ৪২ বছর বয়সী ইয়েভহেনিয়া দেমিয়ানেঙ্কো ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—সবাই আমাদের বিরুদ্ধাচরণ করছে। এবং এখন হোয়াইট হাউসের ওই নির্বোধ ব্যক্তি আবারও আমাদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে চায়।
শীতের পোশাকে পরে নিজের দোকানে বসে তিনি কথা বলছিলেন। বাইরে বিদ্যুতের জন্য ডিজেল জেনারেটর চলছিল।
তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এমন কোনো লজ্জাজনক তথ্য আছে, যার কারণে ট্রাম্প আমেরিকার মূল নীতিও ত্যাগ করে বসছেন। পরে ওয়াশিংটন জানায়, এই সময়সীমা ‘স্থিতিস্থাপক’।
কিয়েভভিত্তিক এক বিশ্লেষকের মতে, ট্রাম্পের পরিকল্পনা মূলত ক্রেমলিনের দাবির প্রতিফলন। প্রস্তাবের ধারাগুলো সংক্ষিপ্ত ও অস্পষ্ট এবং ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে খুব কম সুরক্ষা দেয়।
একটি ধারা বলছে, ইউক্রেন যদি ‘রাশিয়ায় আক্রমণ’ করে, তবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা প্রত্যাহার করবে—যদিও এই নিশ্চয়তার ধরন স্পষ্ট নয়। আরেকটি ধারা ইউক্রেনকে সংবিধানে উল্লেখ করতে বাধ্য করবে যে তারা ন্যাটোতে যোগ দেবে না।
সাবেক রুশ কূটনীতিক বরিস বন্দরেভ এই প্রস্তাবকে ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতি এবং ইউরোপের নিরাপত্তা কাঠামোর ওপর তিন স্তরের বিজয় হিসেবে দেখছেন।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন—এই পরিকল্পনা ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব সংকুচিত করে, বিশ্বাসযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেয় না এবং ওয়াশিংটনের ক্রেমলিনের কাছে নতি স্বীকারের ইঙ্গিত দেয়।
তিনি বলেন, পুতিন এটাকে যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বলতার প্রমাণ হিসেবে দেখছেন। এ ছাড়া এমন একটি সুযোগ হিসেবেও বিবেচনা করছেন, যার মাধ্যমে ন্যাটোর ওপর চাপ সৃষ্টি করে ইউরোপের সমগ্র নিরাপত্তা কাঠামো পুনর্বিবেচনা করানো যেতে পারে।
কাম ব্যাক অ্যালাইভ নামের থিংক ট্যাঙ্কের বিশেষজ্ঞ মারিয়া কুচেরেঙ্কোর মতে, এই প্রস্তাবে ভুক্তভোগী এবং আগ্রাসী—উভয় পক্ষকে একই অবস্থানে দাঁড় করানো হয়েছে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, ইউক্রেন কখনো রাশিয়ায় আক্রমণ চালিয়েছে? নাকি অধিকৃত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টাকেই আক্রমণ হিসেবে ধরা হচ্ছে?
তিনি আরও সমালোচনা করেন সেই ধারাটির, যেখানে ওয়াশিংটন ক্রিমিয়া এবং লুহানস্ক-দোনেৎস্ক অঞ্চলের দখলকে ‘কার্যত রুশ ভূখণ্ড’ হিসেবে স্বীকৃতি দেবে।
রাশিয়া লুহানস্কের বেশিরভাগ এবং দোনেৎস্কের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। তারা কিয়েভের কাছে বাকি অংশও ছাড়ার দাবি করছে—যেখানে গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ, উচ্চভূমি এবং সামরিক স্থাপনা রয়েছে।
এসব অঞ্চল পেলে রাশিয়ার জন্য ইউক্রেনের আরও গভীরে ঢোকা সহজ হবে। বিনিময়ে মস্কো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, তারা দক্ষিণাঞ্চলীয় ফ্রন্টলাইন স্থির রাখবে এবং উত্তরের কিছু দখলকৃত এলাকা থেকে সরে যাবে।
কিন্তু কুচেরেঙ্কো জানান, কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা থাকবে—এ বিষয়ে পরিকল্পনায় কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। তিনি ১০০ দিনের মধ্যে ইউক্রেনে নির্বাচন আয়োজনের কথাকেও প্রশ্নবিদ্ধ বলেন। কোন পরিস্থিতির পর ১০০ দিন গণনা শুরু হবে—এ বিষয়ে কোনো বিবরণ নেই।
তিনি জানতে চান, যদি যুদ্ধবিরতির পর নির্বাচন হয় এবং সেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘিত হয়, তবে কারা শাস্তি দেবে এবং কীভাবে তা বাস্তবায়ন হবে?
তিনি সতর্ক করেন, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত প্রকৃত অর্থে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে না। এছাড়া পূর্ণাঙ্গ শান্তি চুক্তির আগে শুধুমাত্র যুদ্ধবিরতির প্রেক্ষাপটে নির্বাচন হলে ভোটারদের জন্য কঠোর নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হবে।
তিনি আরেকটি প্রশ্ন তুলেছেন—অধিকৃত অঞ্চলগুলোর ইউক্রেনীয় নাগরিক এবং বিদেশে থাকা শরণার্থীদের ভোট সুরক্ষা নিশ্চিত করবে কে? রুশ-নিযুক্ত প্রশাসন তাদের দখল করা অঞ্চলে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষকে রুশ পাসপোর্ট নিতে বাধ্য করেছে।
পাসপোর্ট নিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের চিকিৎসা ও আইনি সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং চাকরি হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
কুচেরেঙ্কো বলেন, প্রশ্ন অসংখ্য, কিন্তু নিশ্চিত উত্তর নেই। তার মতে, এই পরিকল্পনা একটি ‘ক্লাসিক গোয়েন্দা কৌশলের মতো।’ এতে মস্কোর দাবির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, কিন্তু কিয়েভ বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান বিবেচনা করা হয়নি।
প্রকাশের সময়ও নির্ধারিত হয়েছে ইউক্রেনের রাজনৈতিক ও জ্বালানি সংকট এবং মর্যাদার বিপ্লবের বার্ষিকীর সঙ্গে মিলিয়ে। ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর শুরু হওয়া সেই বিপুল গণআন্দোলন কয়েক মাস স্থায়ী ছিল এবং তাতে ক্ষমতায় আসে পশ্চিমাপন্থী সরকার।
তিনি বলেন, এসব বিবেচনায় ইউক্রেনীয় কূটনীতিকদের সংযত থাকা প্রয়োজন। তাদের ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করা উচিত। একই সঙ্গে শান্ত, দৃঢ় এবং ধারাবাহিকভাবে ইউক্রেনের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।
ইউক্রেনীয় পার্লামেন্টের স্পিকার রুসলান স্তেফানচুক সোমবার স্পষ্ট বলেন যে, কিয়েভ রাশিয়ার দখলদারত্ব স্বীকার করবে না। ইউক্রেনীয় বাহিনীকে ৬ লাখে সীমিত করা কিংবা ন্যাটোতে যোগদান থেকে বিরত রাখার মতো শর্তও তারা মেনে নেবে না।
কিয়েভ জানায়, শান্তি অবশ্যই মর্যাদাপূর্ণ ও স্থায়ী হতে হবে। এ জন্য প্রস্তাব পুনর্বিন্যাস ও সংশোধন করা প্রয়োজন।
এদিকে ইউরোপীয় নেতারা প্রস্তাবে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার পথ খোলা রাখা এবং জব্দ করা রাশিয়ার অর্থ ব্যবহার করে ইউক্রেন পুনর্গঠনের দাবি জানান।
জার্মানির ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নিকোলাই মিত্রোখিন আল জাজিরাকে বলেন, ইউক্রেন ও ইউরোপের প্রতিক্রিয়া মূলত যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে বলা— ‘আমাদের একা ছেড়ে দাও’।
তার মতে, রাশিয়া এখনই আত্মসমর্পণ করবে না। বরং বসন্তের মধ্যে তারা জাপোরিঝঝিয়া এবং নিপ্রো শহরের উপকণ্ঠে পৌঁছানোর মতো সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।
অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন হয়তো ঠান্ডায় অবরুদ্ধ শহরগুলো থেকে পালিয়ে আসা ৫০ থেকে ৭০ লাখ ইউক্রেনীয় শরণার্থী গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হতে পারে।
সূত্র: আল-জাজিরা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শান্তি প্রস্তাব এবং ইউক্রেনের জন্য দেওয়া কঠোর আলটিমেটাম এমন সময়ে এসেছে, যখন পরিস্থিতি সবচেয়ে প্রতিকূল। রুশ সেনা, ড্রোন এবং কুয়াশা তৈরিকারী রোবট দক্ষিণ-পূর্ব ফ্রন্টলাইন ভেদ করেছে।
জাপোরিঝঝিয়া শহরের মানুষ প্রায় প্রতিরাতেই গোলা হামলার শব্দ শোনে। এবার তারা ভারী গ্লাইডিং বোমার বিস্ফোরণ শুনছে যা আরও আতঙ্কজনক। একই সময়ে রুশ গোলাবর্ষণ ইউক্রেনের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সম্প্রচার অবকাঠামো ধ্বংস করে চলেছে।
সূর্যাস্তের পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে ব্ল্যাকআউট তৈরি হচ্ছে। সন্ধ্যা চারটায় অন্ধকার নেমে আসে এবং রাতের তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির নিচে নেমে যায়।
মঙ্গলবার ইউক্রেন আবারও জাতীয় শোক পালন করেছে। রাতে রাশিয়ার হামলায় কিয়েভে কমপক্ষে ছয়জন নিহত হয়। অন্যদিকে রাশিয়ার দক্ষিণ রোস্তভ অঞ্চলে ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে।
কিছু ইউক্রেনীয় সেনার কাছে ট্রাম্পের এই প্রস্তাব কঠিন এক বাস্তবতার স্বীকারোক্তি। বগদান নামের এক ড্রোন অপারেটর আল জাজিরাকে বলেন—পশ্চিমা দেশগুলোর ‘অসহায়ত্ব ও নির্মমতা অনন্ত’। পূর্বাঞ্চলীয় ফ্রন্ট থেকে ছুটিতে কিয়েভে এসেছেন তিনি।
তিনি অভিযোগ করেন, পশ্চিমা দেশগুলো সামরিক সহায়তা আটকে রেখেছে এবং সিদ্ধান্তে আসতে দেরি করছে। আর সেই দীর্ঘসূত্রতার মূল্য ইউক্রেনিয়রা রক্ত দিয়ে দিচ্ছেন— নিজেদের এবং তাঁদের শিশুদের রক্ত দিয়ে। যুদ্ধকালীন নিয়ম অনুসারে তিনি পদবি প্রকাশ করেননি।
তবুও বগদানের কিছুটা আশাবাদ আছে। তিনি মনে করেন, রাশিয়ার অগ্রসর হওয়ার ক্ষমতা সীমিত। তার ভাষায়, তিন বছরে রাশিয়া ইউক্রেনের মাত্র ১ শতাংশ এলাকা দখল করেছে। এতে তাদের প্রায় ১০ লাখ সেনা হতাহত হয়েছে।
২০২২ সালের শুরুর সাফল্যের পর রুশ বাহিনী কিয়েভের আশপাশসহ উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণের বেশ কিছু এলাকা থেকে পিছু হটে। তারপর থেকে তারা যেকোনো শহর দখল করতে বিশাল মানবিক ক্ষতির শিকার হয়েছে।
বগদান ব্যঙ্গ করে বলেন, এভাবে চললে রাশিয়া তার সব পুরুষ নাগরিকদের হারিয়েও ইউক্রেন জয় করতে পারবে না।
যুক্তরাষ্ট্র ‘আমাদের আত্মসমর্পণ করাতে চায়’
এই রক্তক্ষয়ী প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনে আবারও বড় দুর্নীতির কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়েছে। এতে জড়িত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ঘনিষ্ঠ সহযোগীরাই, যিনি ২০১৯ সালে দুর্নীতিবিরোধী প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসেন।
এমন সময়ে গত সপ্তাহে ট্রাম্প ২৮ দফা শান্তি প্রস্তাব দেন। তিনি হুমকি দেন, ইউক্রেন ২৭ নভেম্বরের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে প্রস্তাব না মানলে সামরিক সহায়তা স্থগিত করা হবে। এতে ইউক্রেনীয়রা নিজেদের প্রতারিত ও পরিত্যক্ত মনে করেছেন।
কিয়েভের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বীজ, টব ও সার বিক্রেতা ৪২ বছর বয়সী ইয়েভহেনিয়া দেমিয়ানেঙ্কো ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—সবাই আমাদের বিরুদ্ধাচরণ করছে। এবং এখন হোয়াইট হাউসের ওই নির্বোধ ব্যক্তি আবারও আমাদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে চায়।
শীতের পোশাকে পরে নিজের দোকানে বসে তিনি কথা বলছিলেন। বাইরে বিদ্যুতের জন্য ডিজেল জেনারেটর চলছিল।
তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এমন কোনো লজ্জাজনক তথ্য আছে, যার কারণে ট্রাম্প আমেরিকার মূল নীতিও ত্যাগ করে বসছেন। পরে ওয়াশিংটন জানায়, এই সময়সীমা ‘স্থিতিস্থাপক’।
কিয়েভভিত্তিক এক বিশ্লেষকের মতে, ট্রাম্পের পরিকল্পনা মূলত ক্রেমলিনের দাবির প্রতিফলন। প্রস্তাবের ধারাগুলো সংক্ষিপ্ত ও অস্পষ্ট এবং ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে খুব কম সুরক্ষা দেয়।
একটি ধারা বলছে, ইউক্রেন যদি ‘রাশিয়ায় আক্রমণ’ করে, তবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা প্রত্যাহার করবে—যদিও এই নিশ্চয়তার ধরন স্পষ্ট নয়। আরেকটি ধারা ইউক্রেনকে সংবিধানে উল্লেখ করতে বাধ্য করবে যে তারা ন্যাটোতে যোগ দেবে না।
সাবেক রুশ কূটনীতিক বরিস বন্দরেভ এই প্রস্তাবকে ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতি এবং ইউরোপের নিরাপত্তা কাঠামোর ওপর তিন স্তরের বিজয় হিসেবে দেখছেন।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন—এই পরিকল্পনা ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব সংকুচিত করে, বিশ্বাসযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেয় না এবং ওয়াশিংটনের ক্রেমলিনের কাছে নতি স্বীকারের ইঙ্গিত দেয়।
তিনি বলেন, পুতিন এটাকে যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বলতার প্রমাণ হিসেবে দেখছেন। এ ছাড়া এমন একটি সুযোগ হিসেবেও বিবেচনা করছেন, যার মাধ্যমে ন্যাটোর ওপর চাপ সৃষ্টি করে ইউরোপের সমগ্র নিরাপত্তা কাঠামো পুনর্বিবেচনা করানো যেতে পারে।
কাম ব্যাক অ্যালাইভ নামের থিংক ট্যাঙ্কের বিশেষজ্ঞ মারিয়া কুচেরেঙ্কোর মতে, এই প্রস্তাবে ভুক্তভোগী এবং আগ্রাসী—উভয় পক্ষকে একই অবস্থানে দাঁড় করানো হয়েছে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, ইউক্রেন কখনো রাশিয়ায় আক্রমণ চালিয়েছে? নাকি অধিকৃত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টাকেই আক্রমণ হিসেবে ধরা হচ্ছে?
তিনি আরও সমালোচনা করেন সেই ধারাটির, যেখানে ওয়াশিংটন ক্রিমিয়া এবং লুহানস্ক-দোনেৎস্ক অঞ্চলের দখলকে ‘কার্যত রুশ ভূখণ্ড’ হিসেবে স্বীকৃতি দেবে।
রাশিয়া লুহানস্কের বেশিরভাগ এবং দোনেৎস্কের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। তারা কিয়েভের কাছে বাকি অংশও ছাড়ার দাবি করছে—যেখানে গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ, উচ্চভূমি এবং সামরিক স্থাপনা রয়েছে।
এসব অঞ্চল পেলে রাশিয়ার জন্য ইউক্রেনের আরও গভীরে ঢোকা সহজ হবে। বিনিময়ে মস্কো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, তারা দক্ষিণাঞ্চলীয় ফ্রন্টলাইন স্থির রাখবে এবং উত্তরের কিছু দখলকৃত এলাকা থেকে সরে যাবে।
কিন্তু কুচেরেঙ্কো জানান, কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা থাকবে—এ বিষয়ে পরিকল্পনায় কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। তিনি ১০০ দিনের মধ্যে ইউক্রেনে নির্বাচন আয়োজনের কথাকেও প্রশ্নবিদ্ধ বলেন। কোন পরিস্থিতির পর ১০০ দিন গণনা শুরু হবে—এ বিষয়ে কোনো বিবরণ নেই।
তিনি জানতে চান, যদি যুদ্ধবিরতির পর নির্বাচন হয় এবং সেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘিত হয়, তবে কারা শাস্তি দেবে এবং কীভাবে তা বাস্তবায়ন হবে?
তিনি সতর্ক করেন, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত প্রকৃত অর্থে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে না। এছাড়া পূর্ণাঙ্গ শান্তি চুক্তির আগে শুধুমাত্র যুদ্ধবিরতির প্রেক্ষাপটে নির্বাচন হলে ভোটারদের জন্য কঠোর নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হবে।
তিনি আরেকটি প্রশ্ন তুলেছেন—অধিকৃত অঞ্চলগুলোর ইউক্রেনীয় নাগরিক এবং বিদেশে থাকা শরণার্থীদের ভোট সুরক্ষা নিশ্চিত করবে কে? রুশ-নিযুক্ত প্রশাসন তাদের দখল করা অঞ্চলে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষকে রুশ পাসপোর্ট নিতে বাধ্য করেছে।
পাসপোর্ট নিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের চিকিৎসা ও আইনি সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং চাকরি হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
কুচেরেঙ্কো বলেন, প্রশ্ন অসংখ্য, কিন্তু নিশ্চিত উত্তর নেই। তার মতে, এই পরিকল্পনা একটি ‘ক্লাসিক গোয়েন্দা কৌশলের মতো।’ এতে মস্কোর দাবির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, কিন্তু কিয়েভ বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান বিবেচনা করা হয়নি।
প্রকাশের সময়ও নির্ধারিত হয়েছে ইউক্রেনের রাজনৈতিক ও জ্বালানি সংকট এবং মর্যাদার বিপ্লবের বার্ষিকীর সঙ্গে মিলিয়ে। ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর শুরু হওয়া সেই বিপুল গণআন্দোলন কয়েক মাস স্থায়ী ছিল এবং তাতে ক্ষমতায় আসে পশ্চিমাপন্থী সরকার।
তিনি বলেন, এসব বিবেচনায় ইউক্রেনীয় কূটনীতিকদের সংযত থাকা প্রয়োজন। তাদের ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করা উচিত। একই সঙ্গে শান্ত, দৃঢ় এবং ধারাবাহিকভাবে ইউক্রেনের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।
ইউক্রেনীয় পার্লামেন্টের স্পিকার রুসলান স্তেফানচুক সোমবার স্পষ্ট বলেন যে, কিয়েভ রাশিয়ার দখলদারত্ব স্বীকার করবে না। ইউক্রেনীয় বাহিনীকে ৬ লাখে সীমিত করা কিংবা ন্যাটোতে যোগদান থেকে বিরত রাখার মতো শর্তও তারা মেনে নেবে না।
কিয়েভ জানায়, শান্তি অবশ্যই মর্যাদাপূর্ণ ও স্থায়ী হতে হবে। এ জন্য প্রস্তাব পুনর্বিন্যাস ও সংশোধন করা প্রয়োজন।
এদিকে ইউরোপীয় নেতারা প্রস্তাবে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার পথ খোলা রাখা এবং জব্দ করা রাশিয়ার অর্থ ব্যবহার করে ইউক্রেন পুনর্গঠনের দাবি জানান।
জার্মানির ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নিকোলাই মিত্রোখিন আল জাজিরাকে বলেন, ইউক্রেন ও ইউরোপের প্রতিক্রিয়া মূলত যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে বলা— ‘আমাদের একা ছেড়ে দাও’।
তার মতে, রাশিয়া এখনই আত্মসমর্পণ করবে না। বরং বসন্তের মধ্যে তারা জাপোরিঝঝিয়া এবং নিপ্রো শহরের উপকণ্ঠে পৌঁছানোর মতো সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।
অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন হয়তো ঠান্ডায় অবরুদ্ধ শহরগুলো থেকে পালিয়ে আসা ৫০ থেকে ৭০ লাখ ইউক্রেনীয় শরণার্থী গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হতে পারে।
সূত্র: আল-জাজিরা

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের কাছে দুজন ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ন্যাশনাল গার্ড সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের অবস্থা গুরুতর। কর্মকর্তারা এটিকে একটি পরিকল্পিত হামলা হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
১০ ঘণ্টা আগে
পশ্চিম আফ্রিকার ছোট দেশ গিনি-বিসাউ আবারও সামরিক অভ্যুত্থানের কবলে। দেশটি দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও মাদক পাচারের সমস্যায় জর্জরিত। গত ২৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর উত্তেজনা বাড়তে থাকে।
১৪ ঘণ্টা আগে
হংকংয়ের তাই পো জেলার ওয়াং ফুক কোর্ট সরকারি আবাসিক কমপ্লেক্সে বুধবার (২৬ নভেম্বর ২০২৫) ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। অল্প সময়ের মধ্যেই এটি কয়েক দশকের মধ্যে শহরের সবচেয়ে বড় দুর্যোগে পরিণত হয়।
১৫ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কি কারাগারে খুন হয়েছেন? সামাজিক মাধ্যমে, বিশেষ করে ভারতের বিভিন্ন মিডিয়ায় আবারও এই গুজব ছড়িয়ে পড়ছে।
১ দিন আগে