স্ট্রিম ডেস্ক

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, যা নারিকেল জিঞ্জিরা নামেও পরিচিত, বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এটি বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত। বহু বছর ধরে এটি অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দূষণ এবং প্রাণবৈচিত্র্য হারানোর কারণে পরিবেশগত ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এসব সমস্যা মোকাবিলায় সরকার প্রথমবারের মতো একটি আনুষ্ঠানিক মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সোমবার (২৪ নভেম্বর ২০২৫) এর খসড়া প্রকাশ করে। পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো সংরক্ষণ ও সমাজ-অর্থনৈতিক প্রয়োজনের মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন করা।
পটভূমি ও উদ্দেশ্য
দ্বীপটি ১৯৯৯ সালে পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষিত হয়। এখানে প্রবাল, সামুদ্রিক কচ্ছপ, সামুদ্রিক শৈবাল, সমুদ্রঘোড়া এবং নানা বিপন্ন প্রজাতিসহ অনন্য জীববৈচিত্র্য রয়েছে। কিন্তু প্লাস্টিক দূষণ, আবাসস্থল ধ্বংস এবং অতিরিক্ত মৎস্য আহরণের মতো সমস্যায় দ্বীপটি এখন ‘চরম বিপন্ন’ অবস্থায় পৌঁছেছে।
মাস্টারপ্ল্যানের মূল উদ্দেশ্যগুলো হলো—
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও স্থানীয় জীবিকা, এই তিনটি বিষয়ের সমন্বয়ে টেকসই পরিচালনা প্রতিষ্ঠা।
প্রবাল, শৈবাল, কচ্ছপসহ সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় ইসিএ বিধিনিষেধ কঠোরভাবে প্রয়োগ।
অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশগত ক্ষতি রোধ করা। একইসঙ্গে স্থানীয়দের বিকল্প আয়ের সুযোগ তৈরি।
অপ্রয়োজনীয় বা ক্ষতিকর উন্নয়ন ঠেকাতে বিভিন্ন সংস্থার কর্মকাণ্ড সমন্বয় করা।
সম্পর্কিত কৌশলগত নথিতে বলা হয়েছে, ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও জীবিকার সমন্বয়ের মাধ্যমে সেন্ট মার্টিনস দ্বীপের টেকসই ব্যবস্থাপনা।’
মূল উপাদানসমূহ
সংরক্ষণ, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ও নিয়ন্ত্রিত উন্নয়ন—এই তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অংশ যুক্ত করা হয়েছে।
১. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ
প্রবাল, সামুদ্রিক কচ্ছপ, শৈবাল, ঝিনুক ও মোলাস্ক জাতীয় প্রাণী সংরক্ষণে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাছের প্রজননক্ষেত্র ও মেরিন পার্ক গড়ে তোলা হবে।
বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা প্রজাতি রক্ষায় কৃত্রিম প্রজনন ব্যবস্থা করা হবে।
মাছ ধরার নেটে কচ্ছপ ছেড়ে দেওয়ার যন্ত্র (টিইডি) ব্যবহারের মতো ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা হবে।
২. মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনা
উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে ক্ষমতায়ন করতে গ্রামভিত্তিক সংগঠন গঠন করা হবে।
সক্ষমতা বৃদ্ধি, অংশগ্রহণমূলক সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং সচেতনতা বাড়ানো হবে।
মৌসুমি মাছ চাষ, শৈবাল চাষ ও মুক্তা চাষের মতো বিকল্প উদ্যোগ উৎসাহিত করা হবে।
জলাভূমির স্বাভাবিক অবস্থা বদলে ফেলার মতো কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকবে।
৩. পর্যটন উন্নয়ন
পরিবেশবান্ধব ইকো-ট্যুরিজমকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
কটেজ-ধরনের আবাসন, প্রকৃতিনির্ভর পথ এবং স্থানীয় গাইড ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।
বহুতল ভবন নির্মাণ সীমিত রাখা হবে।
পর্যটকদের জন্য স্থানীয় বাড়িতে থাকার সুযোগ বাড়ানো হবে।
৪. জ্বালানি ও অবকাঠামো
স্থানীয়দের মাধ্যমে সৌরবিদ্যুৎ ও বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন উৎসাহিত করা হবে।
সবুজ জ্বালানির জন্য নারকেল খোলসহ জৈববস্তু ব্যবহার করা হবে।
৫. কৃষি ও জীবিকা
কম পানি লাগে এমন ফসল যেমন গম, বাদাম ও সবজি চাষে উৎসাহ দেওয়া হবে।
নারকেল থেকে বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করে আয় বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করা হবে।
স্থানীয়দের পর্যটন গাইড, হস্তশিল্পী ইত্যাদি হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
৬. গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ
গবেষণাগার স্থাপন করে একাডেমিক গবেষণা বাড়ানো হবে।
দ্বীপের জীববৈচিত্র্যের ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হবে।
সংরক্ষণবিষয়ক সচেতনতা কার্যক্রম এবং পর্যটকদের জন্য নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হবে।
জোনিং পরিকল্পনা
দ্বীপের সংবেদনশীল অংশগুলো রক্ষায় জোনিং পদ্ধতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ অংশ (গলাচিপা থেকে কোনাপাড়া):
এই এলাকায় মানব বসবাস সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
কারণ এটি প্রাণবৈচিত্র্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল।
উত্তর ও মধ্যাংশ:
নিয়ন্ত্রিত পর্যটন অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে।
টেকনাফ অংশে প্রয়োজনীয় স্থাপনা স্থাপনে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
দ্বীপের চারপাশে ৫ মিটার গভীরতার মধ্যে মেরিন পার্ক ও মাছের অভয়ারণ্য নির্ধারণ করা হবে।
পুরো দ্বীপজুড়ে:
পর্যটন, বর্জ্য ও পানির ধারণক্ষমতা মূল্যায়ন করা হবে।
কংক্রিটের পরিবর্তে প্রকৃতি-বান্ধব পথ তৈরি হবে।
পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে এমন জলজ চাষ (অ্যাকুয়াকালচার) সীমিত করা হবে।
২০টি চিহ্নিত কচ্ছপ প্রজননক্ষেত্রে বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুকুরের সংখ্যা কমিয়ে কচ্ছপের ডিম ও শিশুকচ্ছপ রক্ষা করা হবে।
পরিকল্পনাটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্বীপের চারপাশে ঘোষিত ১ হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকার সঙ্গে সমন্বয় করে বাস্তবায়ন করা হবে।
উন্নয়ন প্রস্তাব
উন্নয়ন কার্যক্রমকে সম্পূর্ণ পরিবেশকেন্দ্রিক ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীভিত্তিক হিসেবে ধরা হয়েছে।
অবৈধ স্থাপনা, বস্তি ও শুকনা মাছের বাজার অপসারণ করা হবে।
অগভীর পানিতে নৌযান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে, যাতে জাহাজের ব্যালাস্ট পানির কারণে দূষণ না ঘটে।
পরিবার পরিকল্পনার মাধ্যমে জনসংখ্যা বৃদ্ধি সীমিত রাখা হবে।
বিকল্প জীবিকার জন্য অনুদান ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
সম্পদকেন্দ্র, সামুদ্রিক জাদুঘর ও ডরমিটরি নির্মাণ করা হবে।
গবেষণা জাহাজ সংযোজনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
প্রবাল ও মোলাস্ক সংগ্রহ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হবে।
ক্ষতিকর পণ্য বিক্রি বন্ধ করে বিক্রেতাদের টেকসই ব্যবসায় স্থানান্তর করা হবে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় পরিকল্পিতভাবে ম্যানগ্রোভ বনায়ন করা হবে।
মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত করার দায়িত্ব স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পেয়েছে। তারা স্থানীয় মতামত সংগ্রহ করবে এবং ১৯৯৭ সালের কোরাল রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানসহ বিদ্যমান উদ্যোগগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখবে।
পরিবেশগত সুরক্ষা
পরিবেশ সুরক্ষার বিধি অত্যন্ত কঠোরভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
নৌযান থেকে পানি দূষণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হবে।
সব ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রমের আগে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন বাধ্যতামূলক করা হবে।
কঠিন বর্জ্য ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে।
ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস রোধে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হবে।
সম্পদ আহরণ নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
দূষণ রোধে অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হবে।
পর্যটক ও স্থানীয়দের আচরণবিধি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো হবে, যাতে পরিবেশ ক্ষতি কমে।
প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলা এই পরিকল্পনার একটি প্রধান অগ্রাধিকার। এ কারণে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বর্ধিত উৎপাদক দায়বদ্ধতা (ইপিআর) বিষয়ে সমান্তরাল একটি খসড়া নির্দেশিকা জনমতের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
সময়সীমা, অনুমোদন ও সংশ্লিষ্ট পক্ষ
সময়সীমা:
দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম যেমন টেকসই পর্যটন বাস্তবায়নে ১৫-২০ বছর সময় ধরা হয়েছে।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণসহ চলমান প্রকল্পগুলোর মেয়াদ প্রায় ৫ বছর।
ত্রৈমাসিক সমন্বয় সভা আয়োজনের সুপারিশ করা হয়েছে।
অনুমোদন:
খসড়া প্রকাশ করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
এটি চূড়ান্ত করতে সব অংশীজনের মতামত প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্ট পক্ষ:
মন্ত্রণালয় পরিকল্পনার নেতৃত্ব দেবে।
সংহত উপকূলীয় অঞ্চল ব্যবস্থাপনা (আইসিজেএম) প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ১২টি মন্ত্রণালয় ও ৩৫টি সংস্থার কার্যক্রম সমন্বিত হবে।
স্থানীয় জনগোষ্ঠী, এনজিও এবং কোস্টাল ওয়েটল্যান্ড বায়োডাইভারসিটি ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট (সিডাব্লিউবিএমপি) ও এমপাওয়ারমেন্ট অব কোস্টাল ফিশিং কমিউনিটিজসহ বিভিন্ন প্রকল্প এতে যুক্ত থাকবে।
বিতর্ক ও চ্যালেঞ্জ
বর্তমান খসড়ায় বড় কোনো বিতর্ক উল্লেখ নেই। তবে ইতিহাসে দেখা গেছে, পর্যটন আয় এবং সংরক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন। অতীতে অনিয়ন্ত্রিত উন্নয়নে আবাসস্থল ধ্বংস হয়েছে। তাই সমালোচকরা প্রয়োগক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারেন, কারণ পূর্বের কিছু প্রকল্প সময়মতো বাস্তবায়ন হয়নি।
পরিকল্পনাটি জনবসতি অপসারণের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়নি। বরং স্থানীয়দের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে তাদের সমর্থন অর্জনের পথে এগিয়েছে।
পরিণতি ও পরবর্তী পদক্ষেপ
এই মাস্টারপ্ল্যান সেন্ট মার্টিনস দ্বীপকে জাতীয় সম্পদ হিসেবে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এটি দ্বীপের পাঁচ হাজারের বেশি বাসিন্দার জীবন-জীবিকাও সংরক্ষণে সহায়তা করবে।
এতে ইকো-ট্যুরিজম ও পরিবেশ-বান্ধব বিকল্প পদ্ধতি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে বাংলাদেশে অন্যান্য উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য এটি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
চূড়ান্ত পরিকল্পনা জনমতের ওপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হতে পারে।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, যা নারিকেল জিঞ্জিরা নামেও পরিচিত, বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এটি বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত। বহু বছর ধরে এটি অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দূষণ এবং প্রাণবৈচিত্র্য হারানোর কারণে পরিবেশগত ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এসব সমস্যা মোকাবিলায় সরকার প্রথমবারের মতো একটি আনুষ্ঠানিক মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সোমবার (২৪ নভেম্বর ২০২৫) এর খসড়া প্রকাশ করে। পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো সংরক্ষণ ও সমাজ-অর্থনৈতিক প্রয়োজনের মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন করা।
পটভূমি ও উদ্দেশ্য
দ্বীপটি ১৯৯৯ সালে পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষিত হয়। এখানে প্রবাল, সামুদ্রিক কচ্ছপ, সামুদ্রিক শৈবাল, সমুদ্রঘোড়া এবং নানা বিপন্ন প্রজাতিসহ অনন্য জীববৈচিত্র্য রয়েছে। কিন্তু প্লাস্টিক দূষণ, আবাসস্থল ধ্বংস এবং অতিরিক্ত মৎস্য আহরণের মতো সমস্যায় দ্বীপটি এখন ‘চরম বিপন্ন’ অবস্থায় পৌঁছেছে।
মাস্টারপ্ল্যানের মূল উদ্দেশ্যগুলো হলো—
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও স্থানীয় জীবিকা, এই তিনটি বিষয়ের সমন্বয়ে টেকসই পরিচালনা প্রতিষ্ঠা।
প্রবাল, শৈবাল, কচ্ছপসহ সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় ইসিএ বিধিনিষেধ কঠোরভাবে প্রয়োগ।
অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশগত ক্ষতি রোধ করা। একইসঙ্গে স্থানীয়দের বিকল্প আয়ের সুযোগ তৈরি।
অপ্রয়োজনীয় বা ক্ষতিকর উন্নয়ন ঠেকাতে বিভিন্ন সংস্থার কর্মকাণ্ড সমন্বয় করা।
সম্পর্কিত কৌশলগত নথিতে বলা হয়েছে, ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও জীবিকার সমন্বয়ের মাধ্যমে সেন্ট মার্টিনস দ্বীপের টেকসই ব্যবস্থাপনা।’
মূল উপাদানসমূহ
সংরক্ষণ, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ও নিয়ন্ত্রিত উন্নয়ন—এই তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অংশ যুক্ত করা হয়েছে।
১. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ
প্রবাল, সামুদ্রিক কচ্ছপ, শৈবাল, ঝিনুক ও মোলাস্ক জাতীয় প্রাণী সংরক্ষণে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাছের প্রজননক্ষেত্র ও মেরিন পার্ক গড়ে তোলা হবে।
বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা প্রজাতি রক্ষায় কৃত্রিম প্রজনন ব্যবস্থা করা হবে।
মাছ ধরার নেটে কচ্ছপ ছেড়ে দেওয়ার যন্ত্র (টিইডি) ব্যবহারের মতো ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা হবে।
২. মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনা
উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে ক্ষমতায়ন করতে গ্রামভিত্তিক সংগঠন গঠন করা হবে।
সক্ষমতা বৃদ্ধি, অংশগ্রহণমূলক সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং সচেতনতা বাড়ানো হবে।
মৌসুমি মাছ চাষ, শৈবাল চাষ ও মুক্তা চাষের মতো বিকল্প উদ্যোগ উৎসাহিত করা হবে।
জলাভূমির স্বাভাবিক অবস্থা বদলে ফেলার মতো কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকবে।
৩. পর্যটন উন্নয়ন
পরিবেশবান্ধব ইকো-ট্যুরিজমকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
কটেজ-ধরনের আবাসন, প্রকৃতিনির্ভর পথ এবং স্থানীয় গাইড ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।
বহুতল ভবন নির্মাণ সীমিত রাখা হবে।
পর্যটকদের জন্য স্থানীয় বাড়িতে থাকার সুযোগ বাড়ানো হবে।
৪. জ্বালানি ও অবকাঠামো
স্থানীয়দের মাধ্যমে সৌরবিদ্যুৎ ও বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন উৎসাহিত করা হবে।
সবুজ জ্বালানির জন্য নারকেল খোলসহ জৈববস্তু ব্যবহার করা হবে।
৫. কৃষি ও জীবিকা
কম পানি লাগে এমন ফসল যেমন গম, বাদাম ও সবজি চাষে উৎসাহ দেওয়া হবে।
নারকেল থেকে বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করে আয় বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করা হবে।
স্থানীয়দের পর্যটন গাইড, হস্তশিল্পী ইত্যাদি হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
৬. গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ
গবেষণাগার স্থাপন করে একাডেমিক গবেষণা বাড়ানো হবে।
দ্বীপের জীববৈচিত্র্যের ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হবে।
সংরক্ষণবিষয়ক সচেতনতা কার্যক্রম এবং পর্যটকদের জন্য নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হবে।
জোনিং পরিকল্পনা
দ্বীপের সংবেদনশীল অংশগুলো রক্ষায় জোনিং পদ্ধতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ অংশ (গলাচিপা থেকে কোনাপাড়া):
এই এলাকায় মানব বসবাস সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
কারণ এটি প্রাণবৈচিত্র্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল।
উত্তর ও মধ্যাংশ:
নিয়ন্ত্রিত পর্যটন অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে।
টেকনাফ অংশে প্রয়োজনীয় স্থাপনা স্থাপনে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
দ্বীপের চারপাশে ৫ মিটার গভীরতার মধ্যে মেরিন পার্ক ও মাছের অভয়ারণ্য নির্ধারণ করা হবে।
পুরো দ্বীপজুড়ে:
পর্যটন, বর্জ্য ও পানির ধারণক্ষমতা মূল্যায়ন করা হবে।
কংক্রিটের পরিবর্তে প্রকৃতি-বান্ধব পথ তৈরি হবে।
পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে এমন জলজ চাষ (অ্যাকুয়াকালচার) সীমিত করা হবে।
২০টি চিহ্নিত কচ্ছপ প্রজননক্ষেত্রে বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুকুরের সংখ্যা কমিয়ে কচ্ছপের ডিম ও শিশুকচ্ছপ রক্ষা করা হবে।
পরিকল্পনাটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্বীপের চারপাশে ঘোষিত ১ হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকার সঙ্গে সমন্বয় করে বাস্তবায়ন করা হবে।
উন্নয়ন প্রস্তাব
উন্নয়ন কার্যক্রমকে সম্পূর্ণ পরিবেশকেন্দ্রিক ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীভিত্তিক হিসেবে ধরা হয়েছে।
অবৈধ স্থাপনা, বস্তি ও শুকনা মাছের বাজার অপসারণ করা হবে।
অগভীর পানিতে নৌযান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে, যাতে জাহাজের ব্যালাস্ট পানির কারণে দূষণ না ঘটে।
পরিবার পরিকল্পনার মাধ্যমে জনসংখ্যা বৃদ্ধি সীমিত রাখা হবে।
বিকল্প জীবিকার জন্য অনুদান ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
সম্পদকেন্দ্র, সামুদ্রিক জাদুঘর ও ডরমিটরি নির্মাণ করা হবে।
গবেষণা জাহাজ সংযোজনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
প্রবাল ও মোলাস্ক সংগ্রহ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হবে।
ক্ষতিকর পণ্য বিক্রি বন্ধ করে বিক্রেতাদের টেকসই ব্যবসায় স্থানান্তর করা হবে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় পরিকল্পিতভাবে ম্যানগ্রোভ বনায়ন করা হবে।
মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত করার দায়িত্ব স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পেয়েছে। তারা স্থানীয় মতামত সংগ্রহ করবে এবং ১৯৯৭ সালের কোরাল রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানসহ বিদ্যমান উদ্যোগগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখবে।
পরিবেশগত সুরক্ষা
পরিবেশ সুরক্ষার বিধি অত্যন্ত কঠোরভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
নৌযান থেকে পানি দূষণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হবে।
সব ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রমের আগে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন বাধ্যতামূলক করা হবে।
কঠিন বর্জ্য ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে।
ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস রোধে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হবে।
সম্পদ আহরণ নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
দূষণ রোধে অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হবে।
পর্যটক ও স্থানীয়দের আচরণবিধি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো হবে, যাতে পরিবেশ ক্ষতি কমে।
প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলা এই পরিকল্পনার একটি প্রধান অগ্রাধিকার। এ কারণে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বর্ধিত উৎপাদক দায়বদ্ধতা (ইপিআর) বিষয়ে সমান্তরাল একটি খসড়া নির্দেশিকা জনমতের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
সময়সীমা, অনুমোদন ও সংশ্লিষ্ট পক্ষ
সময়সীমা:
দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম যেমন টেকসই পর্যটন বাস্তবায়নে ১৫-২০ বছর সময় ধরা হয়েছে।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণসহ চলমান প্রকল্পগুলোর মেয়াদ প্রায় ৫ বছর।
ত্রৈমাসিক সমন্বয় সভা আয়োজনের সুপারিশ করা হয়েছে।
অনুমোদন:
খসড়া প্রকাশ করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
এটি চূড়ান্ত করতে সব অংশীজনের মতামত প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্ট পক্ষ:
মন্ত্রণালয় পরিকল্পনার নেতৃত্ব দেবে।
সংহত উপকূলীয় অঞ্চল ব্যবস্থাপনা (আইসিজেএম) প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ১২টি মন্ত্রণালয় ও ৩৫টি সংস্থার কার্যক্রম সমন্বিত হবে।
স্থানীয় জনগোষ্ঠী, এনজিও এবং কোস্টাল ওয়েটল্যান্ড বায়োডাইভারসিটি ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট (সিডাব্লিউবিএমপি) ও এমপাওয়ারমেন্ট অব কোস্টাল ফিশিং কমিউনিটিজসহ বিভিন্ন প্রকল্প এতে যুক্ত থাকবে।
বিতর্ক ও চ্যালেঞ্জ
বর্তমান খসড়ায় বড় কোনো বিতর্ক উল্লেখ নেই। তবে ইতিহাসে দেখা গেছে, পর্যটন আয় এবং সংরক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন। অতীতে অনিয়ন্ত্রিত উন্নয়নে আবাসস্থল ধ্বংস হয়েছে। তাই সমালোচকরা প্রয়োগক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারেন, কারণ পূর্বের কিছু প্রকল্প সময়মতো বাস্তবায়ন হয়নি।
পরিকল্পনাটি জনবসতি অপসারণের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়নি। বরং স্থানীয়দের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে তাদের সমর্থন অর্জনের পথে এগিয়েছে।
পরিণতি ও পরবর্তী পদক্ষেপ
এই মাস্টারপ্ল্যান সেন্ট মার্টিনস দ্বীপকে জাতীয় সম্পদ হিসেবে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এটি দ্বীপের পাঁচ হাজারের বেশি বাসিন্দার জীবন-জীবিকাও সংরক্ষণে সহায়তা করবে।
এতে ইকো-ট্যুরিজম ও পরিবেশ-বান্ধব বিকল্প পদ্ধতি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে বাংলাদেশে অন্যান্য উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য এটি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
চূড়ান্ত পরিকল্পনা জনমতের ওপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হতে পারে।

গত আট দশকে বিশ্বের কোনো বড় শক্তির মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ হয়নি। রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর এই কালপর্বকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ শান্তির সময় হিসেবে গণ্য হয়। এই শান্তি একদিনে আসেনি—দুটি ভয়াবহ বিশ্বযুদ্ধের রক্তক্ষয়ী অভিজ্ঞতার পর বিশ্ব নেতারা বাধ্য হয়েছিলেন শান্তির প্রয়োজনীয়তা বুঝতে।
১৩ ঘণ্টা আগে
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সম্প্রতি দ্বিতীয়বারের মতো ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) গত বছর জুলাই-আগস্টের দমন-পীড়নের ঘটনায় হাসিনার অনুপস্থিতিতেই দোষী সাব্যস্ত করে তাঁকে...
১ দিন আগে
আজ মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বিকেল ৫টা ২২ মিনিটের দিকে রাজধানীর মহাখালী এলাকার কড়াইল বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে কড়াইল কেবল একটি বস্তি নয়, বরং ঢাকার রাজনৈতিক অর্থনীতির এক পরীক্ষাগার। সরকারি জমিতে জন্মানো এই জনপদ তিন দশকে একটি শক্তিশালী অনানুষ্ঠানিক আবাসনে পরিণত হয়েছে।
২ দিন আগে
বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্থির দামের সঙ্গে লড়াই করে আসছে। বিশেষ করে চাল, পেঁয়াজ, ডিম ও ভোজ্যতেলের মতো পণ্যের দাম প্রায়শই ওঠানামা করে। ২৪ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত এক বৈঠকের পর অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কেবল প্রশাসন
২ দিন আগে