leadT1ad

সম্মেলনে ব্রির মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা

কৃষক মাঠে কাজ করবেন এসিযুক্ত মেশিনে, সেই লক্ষ্যে কাজ করছে ব্রি

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক

‘কৃষি ও খাদ্যে রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন। স্ট্রিম ছবি

ধান উৎপাদনে কৃষকের সহায়তার জন্য নানা ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি উদ্ভাবনের কাজ করে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। কৃষিকাজকে একটি সম্মানজনক এবং আরামদায়ক পেশায় রূপান্তর করার লক্ষ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কৃষিযন্ত্র আবিষ্কারে ব্রি কাজ করছে বলে জানিয়েছেন এর মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর তোপখানা রোডের সিরডাপ মিলনায়তনে শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ব্রির মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ‘যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধান চাষাবাদের লক্ষ্যে খামার যন্ত্রপাতি গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্পের পরিচালক এ কে এম সাইফুল ইসলাম এ সব কথা বলেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এই পর্যায়ে এসে আমরা একটি নতুন ধরনের যন্ত্র আবিষ্কারের গবেষণা করছি, যে যন্ত্রে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) ব্যবস্থা থাকবে। কৃষক সেই এসিতে বসে কমফোর্ট ফিল করে রোদের মধ্যে মাঠে কাজ করবে। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।’

সম্মেলনে এ কে এম সাইফুল ইসলাম জানান, ২০২১ সালে তারা প্রথম আধুনিক মেশিন উদ্ভাবন করেন। এই ধারাবাহিকতায় ধান বপনের যন্ত্র, চারা রোপনের যন্ত্র, আগাছা দমন এবং একই সঙ্গে ধান কাটা, মাড়াই ও ঝাড়াই করার জন্য ‘ব্রি হেড ফিড কম্বাইন হারভেস্টার’সহ নানা যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

তবে উদ্ভাবন হলেও মাঠপর্যায়ে এসব যন্ত্রের প্রাপ্যতা ও মান নিয়ে রয়েছে বড় চ্যালেঞ্জ। এ বিষয়ে ব্রির ফার্ম মেশিনারি অ্যান্ড পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগের পরিচালক মো. দুররুল হুদা বলেন, ‘আমাদের বড় বদনাম হলো, আমাদের উদ্ভাবিত যন্ত্রপাতি ল্যাবে থাকে, মাঠে যায় না। আমরা এই জায়গা থেকে উত্তরণের চেষ্টায় আছি। আবার প্রটোটাইপ ভালো কাজ করলেও যখন মাল্টিপ্লিকেশন করা হয়, তখন সেগুলোর মান থাকে না। কারণ, আমাদের দেশে মানসম্মত কৃষি যন্ত্রপাতির কারখানা নেই।’ তিনি এই সমস্যা সমাধানে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে বিটাকের মতো কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

কৃষি গবেষণার দীর্ঘ ইতিহাসের কথা স্মরণ করে ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের দেশে ১৯০৯ সাল থেকে কৃষি ও ধান নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। কিন্তু মেকানাইজেশনের বিষয়ে তেমন অগ্রগতি হয়নি। আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা। সেটা কতটুকু করতে পেরেছি আপনারা বলবেন। এখন আমাদের স্টেজ হলো মেকানাইজেশনের, আমরা সেটা করে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’

সেমিনারে কৃষি সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়ান যান্ত্রিকীকরণের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দিয়েও দেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ পুরোপুরি সফল হয়নি। এর পেছনের মূল কারণ হিসেবে তিনি দক্ষ জনবলের অভাবকে দায়ী করেন।

কৃষি সচিব বলেন, ‘মেকানাইজেশন কেন হচ্ছে না? কারণ, আমাদের ইঞ্জিনিয়ার নেই। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে (ডিএই) কৃষি প্রকৌশলীর ২২৯টি পদের মধ্যে ১৭৬টিই খালি। পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ দিতে গেলে লিখিত পরীক্ষায় মাত্র ২০ জন পাস করে। ভাইভাতেও লোক পাওয়া যায় না। মেকানাইজেশন করতে হলে তো ইঞ্জিনিয়ার লাগবে, সেটা আমাদের নেই।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, কৃষিতে বিনিয়োগের রিটার্ন অর্থনীতির অন্যান্য খাতের চেয়ে সবচেয়ে কম (মাত্র ৬ শতাংশ), যা এই পেশার প্রতি অনীহার একটি বড় কারণ।

আগামীর কৃষিকে একটি ‘ডিগনিফাইড’ বা সম্মানজনক পেশায় রূপান্তরের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল কাদের। তিনি বলেন, ‘পিকেএসএফ প্রতি বছর ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ করছে, এর মধ্যে ৪০ শতাংশ কৃষি খাতে। আগামীর কৃষি হবে ডিগনিফাইড পেশা এবং কৃষকদের হতে হবে সার্টিফায়েড। এই কাজের জন্য পিকেএসএফ এবং ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট সম্মিলিতভাবে কাজ করতে পারে।’

কৃষিপণ্য রপ্তানির চ্যালেঞ্জ

প্রাণ আরএফএল গ্রুপের বিপনণ বিভাগের পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল রপ্তানির ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সক্ষমতার অভাবের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে নানা লিমিটেশন আছে। যেমন—বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পন্য রপ্তানি করতে হলে সরকারের ১৮টি সংস্থার অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। এটা বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।’

কামরুজ্জামান কামাল আরও বলেন, ‘এরপর আছে বাংলাদেশের কান্ট্রি ইমেজ তৈরির বিষয়। কোয়ালিটি কন্ট্রোল ও কমপ্লায়েন্স তৈরি করা জরুরি। আন্তর্জাতিক ক্রেতারা এখন ট্রেসিবিলিটি (পণ্যটি কোন জমিতে, কার মাধ্যমে উৎপাদিত হয়েছে) জানতে চায়। কিন্তু আমাদের সেই ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মানের অ্যাক্রেডিটেড ল্যাবরেটরি আমাদের এখানে নেই, যার ফলে বায়াররা আমাদের সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে চায় না।’ তিনি উল্লেখ করেন, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে পেস্টিসাইড রেসিডিউ বা বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ পাওয়ার কারণে অনেক সময় রপ্তানি চালান ফেরত আসে। তাই শুধু খাদ্য উৎপাদন নয়, ‘নিরাপদ খাদ্য’ উৎপাদনের দিকে জোর দেন তিনি।

ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান হারানোর কথা বলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এস এম সোহরাব উদ্দিন। তিনি বলেন, ইউরোপের বাজারে একসময় আমাদের পণ্য রপ্তানি হতো, এখন সেটি কমে গেছে। মূলত কমপ্লায়েন্স এবং ল্যাবের অভাবেই আমরা পিছিয়ে পড়ছি।

সম্মেলনে কৃষি সচিব পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হওয়ার পরেও কৃষকের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া এবং উল্টো দিকে ভোক্তাদের চড়া দাম দেওয়ার অসামঞ্জস্যতা তুলে ধরেন।

সচিব জানান, কৃষি মন্ত্রণালয় ‘ট্রান্সফরমিং বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচার আউটলুক ২০৫০’ নামে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। একইসাথে ‘পার্টনার’ প্রকল্পের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবরেটরি স্থাপন এবং সোলার ইরিগেশনের মাধ্যমে সেচ খরচ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

বিষয়:

কৃষকধান
Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত