বাউল আবুল সরকারকে গ্রেপ্তার এবং মানিকগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁওয়ে বাউল শিল্পীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর দুই স্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। আগামীকাল শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে ‘গানের আর্তনাদ’ নামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সামাজিক প্ল্যাটফর্ম ‘সম্প্রীতি যাত্রা’। আর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ করবে দুই সংগঠন ‘সাধুগুরুভক্ত ও ওলি-আউলিয়া আশেকান পরিষদ’ ও ‘ভাববৈঠকী’।
সম্প্রীতি যাত্রা জানিয়েছে, শাহবাগের আয়োজনে থাকবে নাগরিক সংহতি, মশাল মিছিল ও প্রতিবাদী গান। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বহুবর্ণ সংস্কৃতির অংশ মাজার-দরগাহ, সাধু-সন্ন্যাসী-বাউল আখড়া, মন্দির-মসজিদ ও মঠ। শতবর্ষ ধরে এসব স্থাপনা শ্রমজীবী মানুষের জ্ঞান-দর্শন, যুক্তি-তর্ক ও আধ্যাত্মিকতার পীঠস্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। গাঙ্গেয় বদ্বীপের ভক্তিবাদ, মরমিবাদ ও লোকধর্মের সহজিয়া চেতনা এই জনপদের সাংস্কৃতিক ঐশ্বর্যের প্রধান ভিত্তি।
এতে আরও বলা হয়, সম্প্রতি ধর্মের নামে ঘৃণাচর্চা, গানের আসর ভাঙচুর, মাজার-আখড়ায় হামলা এবং সাংস্কৃতিক চর্চায় নিষেধাজ্ঞার প্রচেষ্টা এই ঐতিহ্যকে বিপন্ন করে তুলেছে। এর বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজ, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সচেতন মানুষদের নিয়ে ‘গণপ্রতিরোধ’ গড়ে তুলতেই এ আয়োজন।
এদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বিকেল ৩টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত সমাবেশের পাশাপাশি থাকবে প্রতিবাদী গান, বিচার গান, মরমি সুর, পালাগানসহ লোক আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যভিত্তিক নানা পরিবেশনা।
আয়োজকরা জানান, এই কর্মসূচির মূল দাবি— বাউল আবুল সরকারের নিঃশর্ত মুক্তি এবং সারা দেশে ধারাবাহিকভাবে মাজার, দরগাহ ও মাজার ভক্তদের ওপর হামলার প্রতিবাদ এবং বিচার নিশ্চিত করা।
তারা আরও জানান, বাংলাদেশের শতবর্ষের আধ্যাত্মিক, মরমি ও লোক ঐতিহ্যকে নষ্ট করার লক্ষ্যে যে ধরনের হামলা, ভাঙচুর এবং ভয়ভীতি ছড়ানো হচ্ছে, তা দেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন। এই দেশ প্রেম, সুর, ভক্তি আর মানবতার দেশ। এই ঐতিহ্যের ওপর আঘাত মানে মানুষের হৃদয়ের ওপর আঘাত।’
এর আগে ধর্ম নিয়ে ‘কটূক্তির’ অভিযোগে ২০ নভেম্বর মানিকগঞ্জের বাউলশিল্পী আবুল সরকারকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২৩ নভেম্বর তাঁর মুক্তি দাবিতে মানিকগঞ্জে বাউল ভক্তদের ডাকা কর্মসূচিতে হামলা হয়। এতে চারজন আহত হন। হামলা থেকে বাঁচতে ওই সময় বাউল ভক্তদের পুকুরে নামার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
এরপর বাউল আবুল সরকারের মুক্তি ও মানিকগঞ্জে বাউল শিল্পীদের ওপর হামলার বিচার দাবিতে বুধবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ ডাকা হয়। তবে সেই সমাবেশের আগে শহরের কোর্ট চত্বর এলাকায় পিটিয়ে দুই বাউলশিল্পীকে আহত করা হয়।