leadT1ad

তিন মামলায় শেখ হাসিনার ২১ বছরের কারাদণ্ড

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অবৈধভাবে সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে করা পৃথক তিনটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মোট ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন এ রায় ঘোষণা করেন।

তিনটি মামলার প্রতিটিতে শেখ হাসিনাকে সাত বছর করে সাজা দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে তার সাজা ২১ বছর। এই তিন মামলায় শেখ হাসিনা ও তার দুই সন্তান ছাড়াও সাবেক প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ আরও ১৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকারকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

রায় ঘোষণার সময় মামলার একমাত্র কারাবন্দী আসামি রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলমকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় শেষে তাকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। শেখ হাসিনাসহ দণ্ডপ্রাপ্ত বাকি আসামিরা পলাতক থাকায় আদালত তাদের বিরুদ্ধে সাজার পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এর আগে গত ২৩ নভেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করেছিলেন। পলাতক থাকায় শেখ হাসিনাসহ অন্য আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে পারেননি এবং তারা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাননি।

রায়ের পর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রসিকিউটর মইনুল হাসান প্রেস ব্রিফিংয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে পৃথক তিন মামলায় সাত বছর করে ২১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তারা এ রায়ে খুশি নন। তারা প্রত্যাশা করেছিলেন প্রত্যেক মামলায় শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে। দোষী প্রমাণিত হলেও সর্বোচ্চ সাজা না হওয়ায় তারা মর্মাহত উল্লেখ করে জানান, কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

প্লট বরাদ্দের দুর্নীতির অভিযোগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুদক পৃথক ছয়টি মামলা করে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও তারা পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরে ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ নেন। তদন্ত ও বিচারিক কার্যক্রম শেষে আজ তিনটি মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।

আদালত দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কারাদণ্ডের পাশাপাশি অর্থদণ্ডও দিয়েছেন। অনাদায়ে তাদের অতিরিক্ত কারাভোগ করতে হবে। শেখ হাসিনাকে তিন মামলায় সাত বছর করে মোট ২১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে; অনাদায়ে তাকে আরও দেড় বছর কারাভোগ করতে হবে।

সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে একটি করে মামলায় পাঁচ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে; অনাদায়ে তাদের আরও ছয় মাস করে জেল খাটতে হবে।

এছাড়া সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সাবেক সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনের প্রত্যেককে তিনটি করে মামলায় ছয় বছর করে মোট ১৮ বছরের কারাদণ্ড ও ৩ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনকে দুই মামলায় ছয় বছর করে মোট ১২ বছরের কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞাকে তিন মামলায় পাঁচ বছর করে মোট ১৫ বছরের কারাদণ্ড ও দেড় লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

একই সাথে রাজউকের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন ও মেজর (অব.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরীকে তিন মামলায় তিন বছর করে মোট ৯ বছরের কারাদণ্ড এবং ৬০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদারকে তিন মামলায় এক বছর করে মোট তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া রাজউকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা কবির আল আসাদ, তন্ময় দাস, মো. নুরুল ইসলাম, শেখ শাহিনুল ইসলাম, মো. কামরুল ইসলাম, মো. হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান সবুজ, নায়েব আলী শরীফ, মাজহারুল ইসলাম এবং একমাত্র গ্রেপ্তার আসামি মোহাম্মদ খুরশীদ আলমকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত