স্ট্রিম ডেস্ক

হংকংয়ের তাই পো জেলার ওয়াং ফুক কোর্ট সরকারি আবাসিক কমপ্লেক্সে বুধবার (২৬ নভেম্বর ২০২৫) ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। অল্প সময়ের মধ্যেই এটি কয়েক দশকের মধ্যে শহরের সবচেয়ে বড় দুর্যোগে পরিণত হয়। আটটি উচ্চ ভবনের মধ্যে সাতটিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৪ জনে দাঁড়িয়েছে। আর নিখোঁজ রয়েছেন ২৭৯ জন। ১৯৬২ সালের আগুনের পর এটি হংকংয়ের সবচেয়ে প্রাণঘাতী অগ্নিকাণ্ড। তবে এই অগ্নিকাণ্ডের ১৯৯৬ সালের কওলুন আগুনের সঙ্গে বেশ মিল আছে।
কমপ্লেক্সটি ১৯৮০–র দশকে নির্মিত হয়। এতে প্রায় ২ হাজার ফ্ল্যাটে প্রায় ৪ হাজার ৮০০ মানুষ বসবাস করেন। এখানকার বাসিন্দাদের বড় অংশই বয়স্ক। প্রায় ৩৬ শতাংশের বয়স ৬৫ বা তার বেশি। মধ্যম বয়স ৫৬ বছর। ফলে দুর্যোগ মোকাবিলায় তাদের অক্ষমতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। এই অগ্নিকাণ্ড পুরোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি ও বিশেষ করে সংস্কারকাজে বাঁশের মাচা ব্যবহারের সমস্যাকে সামনে নিয়ে আসে। ঘটনার পরপরই সরকার জরুরি তদন্ত শুরু করে।
ঘটনার সারসংক্ষেপ
বুধবার দুপুর ৩টার কিছু আগে ৩২-তলা একটি ভবনে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। ওয়াং ফুক কোর্ট একটি ঘনবসতিপূর্ণ সরকারি আবাসিক এলাকা, যা নিউ টেরিটরিজের উত্তরাংশে অবস্থিত। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, আগুন শুরু হয়েছিল বাইরের বাঁশের মাচা থেকে, যা বড় ধরনের সংস্কারকাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল। বিকেলের মধ্যে আগুন পাশের ভবনগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। তীব্র বাতাস ও দাহ্য সামগ্রী আগুনকে আরও দ্রুত ছড়িয়ে দেয়। চারদিকে কালো ধোঁয়া, জ্বলন্ত টুকরা ও চিৎকারে এলাকা আতঙ্কে ভারী হয়ে ওঠে।
সন্ধ্যার দিকে এই আগুনকে ‘লেভেল-৫’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়, যা হংকংয়ের অগ্নিকাণ্ড শ্রেণিবিন্যাসে সর্বোচ্চ সতর্ক সংকেত। এ কারণে বিপুল পরিমাণ জরুরি সহায়তা মোতায়েন করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে ঘটনাস্থলের আতঙ্ক স্পষ্ট হয়। ৭১ বছরের এক বাসিন্দা ওং জানান, তার স্ত্রী ভবনের ভেতরেই আটকে ছিলেন। ঘটনাস্থলের দৃশ্যে ভবনগুলোর পোড়া অংশ ও ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন আকাশ দেখা যায়।

আগুনের বিস্তারে বাঁশের মাচা বড় ভূমিকা রাখে। হংকংয়ে এখনো ঐতিহ্যগতভাবে বাঁশের মাচা ব্যবহৃত হলেও চীনের মূল ভূখণ্ডে এটি বহু আগেই বাদ দেওয়া হয়েছে। চীনে বাঁশের মাচার বদলে ধাতব কাঠামো ব্যবহার করা হয়। মাচার চারপাশে থাকা সবুজ নেট ও ওয়াটারপ্রুফ ত্রিপল দ্রুত দাহ্য হয়ে ওঠে। মাচার কাঠামো ভেঙে ১০ থেকে ২০ তলা নিচে পড়ে আরও ছোট ছোট আগুনের সৃষ্টি করে। ভবনের ভেতরে ব্যবহৃত দাহ্য স্টাইরোফোমের কারণে আগুন করিডোরজুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বাইরের দেওয়ালেও অগ্নিরোধক মানদণ্ড যথাযথভাবে মেনে চলা হয়েছিল কি না—তা এখন তদন্তাধীন।
তীব্র বাতাস আগুনকে আরও বেশি করে ছড়িয়ে দেয় এবং আটটির মধ্যে সাতটি ভবন আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিছু বাসিন্দা জানান, তাদের ইউনিটে কোনো অগ্নিসংকেত বেজে ওঠেনি। ফলে তারা দেরিতে টের পান এবং বহু মানুষ উপরের তলার ফ্ল্যাটে আটকে পড়েন। এ সময় তাই পো নদীর ওপারে একটি বনাঞ্চলে আরেকটি ছোট আগুন দেখা গেলেও তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসে এবং এর সঙ্গে মূল ঘটনার কোনো সম্পর্ক ছিল না। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাঁশের মতো দাহ্য উপাদান ব্যবহার ‘গুরুতর অবহেলা’।
ছবি ও ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, বিশাল আগুনে ভবনগুলো জ্বলছে এবং ঘন ধোঁয়ায় আকাশ ঢেকে গেছে।
ক্ষয়ক্ষতি ও বাসিন্দাদের ওপর প্রভাব
বৃহস্পতিবার সকাল (২৭ নভেম্বর) পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪। মৃতদের মধ্যে ৩৭ বছর বয়সী দমকলকর্মী হো ওয়াই-হোও আছেন, যিনি উদ্ধারকাজে মারাত্মক আহত হন। আরও ২৭৯ জনকে নিখোঁজ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ২৯ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে কারও ধোঁয়া ইনহেলেশনের সমস্যা, কারও আবার দগ্ধ হওয়ার আঘাত রয়েছে।
বসবাসকারীদের মধ্যে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ক্ষতির মাত্রা বেড়েছে। অনেকেই দ্রুত বের হতে পারেননি। বেঁচে যাওয়া বাসিন্দারা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ চোখের সামনে নিজ ঘরবাড়ি পুড়ে যেতে দেখেছেন। হাজারো মানুষকে নিকটবর্তী স্কুল ও পার্কে আশ্রয় দেওয়া হয়। সেখানে তাদের পানি ও খাবার সরবরাহ করা হয়।
উঁচু তলার ফ্ল্যাটে আটকে পড়া মানুষ দমকলকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেও তীব্র তাপের কারণে তাদের কাছে দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোকাহত মানুষের মানসিক চাপ স্পষ্ট। বিভিন্ন দেশ থেকে সমবেদনা জানানো হয়। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও ক্ষতি কমাতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান।

জরুরি সাড়া ও চ্যালেঞ্জ
হংকং ফায়ার সার্ভিস দ্রুত সাড়া দেয়। প্রায় ২০০টি ফায়ার ট্রাক, ১০০টির বেশি অ্যাম্বুলেন্স এবং শত শত ফায়ারফাইটার, পুলিশ ও প্যারামেডিক সেখানে মোতায়েন করা হয়। মইযুক্ত ট্রাক ব্যবহার করে উপর থেকে পানির প্রবাহ দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলে।
তবে উদ্ধারকর্মীদের সামনে ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। ভবনের ভেতরে অসহনীয় তাপ, বাইরে ভেঙে পড়া মাচা ও ধ্বংসাবশেষ, আর চারদিকে ঘন ধোঁয়া—এসবই উদ্ধারকাজকে কঠিন করে তোলে। ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক ডেরেক আর্মস্ট্রং চ্যান জানান, ভবনের ভাঙা অংশ ও মাচার টুকরা পড়ে ফায়ারফাইটারদের জন্য অতিরিক্ত বিপদের সৃষ্টি করছিল। তীব্র তাপের কারণে উপরের ফ্লোরে সরাসরি পৌঁছানোও সম্ভব হয়নি।
আটকে পড়া বাসিন্দাদের দরজা-জানালা ভেজা তোয়ালে ও টেপ দিয়ে সিল করে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়। হংকং লিয়াজোঁ অফিস সরকারকে সহায়তা সমন্বয় করে। নিহত দমকলকর্মীর প্রতি সরকারি শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং তার পরিবারকে সহায়তার অঙ্গীকার করা হয়। আজও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
তদন্ত ও গ্রেপ্তার
অবহেলার সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিরাপত্তা সচিব ক্রিস ট্যাং জানান, আগুন এত দ্রুত ছড়ানো সন্দেহজনক। এ কারণে বিল্ডিং উপকরণ ও অগ্নিনিরাপত্তা মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়েছিল কি না—তা নিয়ে তদন্ত চলছে। ফায়ার সার্ভিস পরিচালক অ্যান্ডি ইয়ুং ইয়ান-কিন উল্লেখ করেন যে স্টাইরোফোম আগুন ছড়ানোকে দ্রুততর করেছে এবং ভবনে প্রবেশ কঠিন করেছে।
হুইসলব্লোয়ার জেসন পুন জানান, মাচায় অগ্নিনিরোধক উপাদান ব্যবহার করা হয়নি। তিনি দাবি করেন, মানদণ্ড অনুযায়ী আগুন-প্রতিরোধী নেট ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। সরকার চলমান প্রকল্পগুলোতে বিশেষ পরিদর্শন ও জনপদের কাজে পুনর্মূল্যায়ন করার পরিকল্পনা করছে। তবে শ্রম সচিব ক্রিস সান জানিয়েছেন, বাঁশের মাচা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই।

এই অগ্নিকাণ্ড ১৯৯৬ সালের কওলুন বাণিজ্যিক ভবনের আগুনকে ছাড়িয়ে গেছে, যেখানে ওয়েল্ডিং কাজের সময় ৪১ জন মারা যান। সেই ঘটনার পর নিরাপত্তা বিধি হালনাগাদ করা হয়েছিল। এ বছরও হংকংয়ে মাচা-সম্পর্কিত আগুন দেখা গেছে, যার মধ্যে অক্টোবরের চায়নাচেম টাওয়ারের আগুন উল্লেখযোগ্য।
যদিও শ্রমিকদের মধ্যে ধাতব মাচা ব্যবহারের প্রবণতা তিনগুণ বেশি, তবুও ঐতিহ্য ও কম খরচের কারণে বাঁশের মাচা টিকে আছে। বর্তমানে প্রায় ২ হাজার ৫০০ নিবন্ধিত বাঁশের মাচা বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। সাম্প্রতিক নীতিতে বলা হয়েছে, নতুন সরকারি প্রকল্পের অর্ধেকেই ধাতব মাচা ব্যবহার করা হবে। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ২২ জন মাচাশ্রমিকের মৃত্যুর পর এই নীতি জোরদার করা হয়। তবে অগ্নিঝুঁকি এখনো পূর্ণমাত্রায় বিবেচনায় আনা হয়নি। বিশেষজ্ঞরা অগ্নিনিরোধক মানদণ্ড আরও কঠোরভাবে প্রয়োগের সুপারিশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তীব্র তাপ ও ধোঁয়ার মধ্যে দমকলকর্মীদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। উদ্ধারকাজ চলছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আগুন এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বহু বাসিন্দা এখনো ঘরে ফিরতে পারছেন না। এই ঘটনা হংকংয়ের ঘনবসতিপূর্ণ নগর কাঠামোয় ভবন-নিরাপত্তা সংস্কারের দাবিকে আরও জোরালো করেছে।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

হংকংয়ের তাই পো জেলার ওয়াং ফুক কোর্ট সরকারি আবাসিক কমপ্লেক্সে বুধবার (২৬ নভেম্বর ২০২৫) ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। অল্প সময়ের মধ্যেই এটি কয়েক দশকের মধ্যে শহরের সবচেয়ে বড় দুর্যোগে পরিণত হয়। আটটি উচ্চ ভবনের মধ্যে সাতটিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৪ জনে দাঁড়িয়েছে। আর নিখোঁজ রয়েছেন ২৭৯ জন। ১৯৬২ সালের আগুনের পর এটি হংকংয়ের সবচেয়ে প্রাণঘাতী অগ্নিকাণ্ড। তবে এই অগ্নিকাণ্ডের ১৯৯৬ সালের কওলুন আগুনের সঙ্গে বেশ মিল আছে।
কমপ্লেক্সটি ১৯৮০–র দশকে নির্মিত হয়। এতে প্রায় ২ হাজার ফ্ল্যাটে প্রায় ৪ হাজার ৮০০ মানুষ বসবাস করেন। এখানকার বাসিন্দাদের বড় অংশই বয়স্ক। প্রায় ৩৬ শতাংশের বয়স ৬৫ বা তার বেশি। মধ্যম বয়স ৫৬ বছর। ফলে দুর্যোগ মোকাবিলায় তাদের অক্ষমতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। এই অগ্নিকাণ্ড পুরোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি ও বিশেষ করে সংস্কারকাজে বাঁশের মাচা ব্যবহারের সমস্যাকে সামনে নিয়ে আসে। ঘটনার পরপরই সরকার জরুরি তদন্ত শুরু করে।
ঘটনার সারসংক্ষেপ
বুধবার দুপুর ৩টার কিছু আগে ৩২-তলা একটি ভবনে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। ওয়াং ফুক কোর্ট একটি ঘনবসতিপূর্ণ সরকারি আবাসিক এলাকা, যা নিউ টেরিটরিজের উত্তরাংশে অবস্থিত। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, আগুন শুরু হয়েছিল বাইরের বাঁশের মাচা থেকে, যা বড় ধরনের সংস্কারকাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল। বিকেলের মধ্যে আগুন পাশের ভবনগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। তীব্র বাতাস ও দাহ্য সামগ্রী আগুনকে আরও দ্রুত ছড়িয়ে দেয়। চারদিকে কালো ধোঁয়া, জ্বলন্ত টুকরা ও চিৎকারে এলাকা আতঙ্কে ভারী হয়ে ওঠে।
সন্ধ্যার দিকে এই আগুনকে ‘লেভেল-৫’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়, যা হংকংয়ের অগ্নিকাণ্ড শ্রেণিবিন্যাসে সর্বোচ্চ সতর্ক সংকেত। এ কারণে বিপুল পরিমাণ জরুরি সহায়তা মোতায়েন করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে ঘটনাস্থলের আতঙ্ক স্পষ্ট হয়। ৭১ বছরের এক বাসিন্দা ওং জানান, তার স্ত্রী ভবনের ভেতরেই আটকে ছিলেন। ঘটনাস্থলের দৃশ্যে ভবনগুলোর পোড়া অংশ ও ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন আকাশ দেখা যায়।

আগুনের বিস্তারে বাঁশের মাচা বড় ভূমিকা রাখে। হংকংয়ে এখনো ঐতিহ্যগতভাবে বাঁশের মাচা ব্যবহৃত হলেও চীনের মূল ভূখণ্ডে এটি বহু আগেই বাদ দেওয়া হয়েছে। চীনে বাঁশের মাচার বদলে ধাতব কাঠামো ব্যবহার করা হয়। মাচার চারপাশে থাকা সবুজ নেট ও ওয়াটারপ্রুফ ত্রিপল দ্রুত দাহ্য হয়ে ওঠে। মাচার কাঠামো ভেঙে ১০ থেকে ২০ তলা নিচে পড়ে আরও ছোট ছোট আগুনের সৃষ্টি করে। ভবনের ভেতরে ব্যবহৃত দাহ্য স্টাইরোফোমের কারণে আগুন করিডোরজুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বাইরের দেওয়ালেও অগ্নিরোধক মানদণ্ড যথাযথভাবে মেনে চলা হয়েছিল কি না—তা এখন তদন্তাধীন।
তীব্র বাতাস আগুনকে আরও বেশি করে ছড়িয়ে দেয় এবং আটটির মধ্যে সাতটি ভবন আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিছু বাসিন্দা জানান, তাদের ইউনিটে কোনো অগ্নিসংকেত বেজে ওঠেনি। ফলে তারা দেরিতে টের পান এবং বহু মানুষ উপরের তলার ফ্ল্যাটে আটকে পড়েন। এ সময় তাই পো নদীর ওপারে একটি বনাঞ্চলে আরেকটি ছোট আগুন দেখা গেলেও তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসে এবং এর সঙ্গে মূল ঘটনার কোনো সম্পর্ক ছিল না। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাঁশের মতো দাহ্য উপাদান ব্যবহার ‘গুরুতর অবহেলা’।
ছবি ও ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, বিশাল আগুনে ভবনগুলো জ্বলছে এবং ঘন ধোঁয়ায় আকাশ ঢেকে গেছে।
ক্ষয়ক্ষতি ও বাসিন্দাদের ওপর প্রভাব
বৃহস্পতিবার সকাল (২৭ নভেম্বর) পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪। মৃতদের মধ্যে ৩৭ বছর বয়সী দমকলকর্মী হো ওয়াই-হোও আছেন, যিনি উদ্ধারকাজে মারাত্মক আহত হন। আরও ২৭৯ জনকে নিখোঁজ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ২৯ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে কারও ধোঁয়া ইনহেলেশনের সমস্যা, কারও আবার দগ্ধ হওয়ার আঘাত রয়েছে।
বসবাসকারীদের মধ্যে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ক্ষতির মাত্রা বেড়েছে। অনেকেই দ্রুত বের হতে পারেননি। বেঁচে যাওয়া বাসিন্দারা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ চোখের সামনে নিজ ঘরবাড়ি পুড়ে যেতে দেখেছেন। হাজারো মানুষকে নিকটবর্তী স্কুল ও পার্কে আশ্রয় দেওয়া হয়। সেখানে তাদের পানি ও খাবার সরবরাহ করা হয়।
উঁচু তলার ফ্ল্যাটে আটকে পড়া মানুষ দমকলকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেও তীব্র তাপের কারণে তাদের কাছে দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোকাহত মানুষের মানসিক চাপ স্পষ্ট। বিভিন্ন দেশ থেকে সমবেদনা জানানো হয়। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও ক্ষতি কমাতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান।

জরুরি সাড়া ও চ্যালেঞ্জ
হংকং ফায়ার সার্ভিস দ্রুত সাড়া দেয়। প্রায় ২০০টি ফায়ার ট্রাক, ১০০টির বেশি অ্যাম্বুলেন্স এবং শত শত ফায়ারফাইটার, পুলিশ ও প্যারামেডিক সেখানে মোতায়েন করা হয়। মইযুক্ত ট্রাক ব্যবহার করে উপর থেকে পানির প্রবাহ দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলে।
তবে উদ্ধারকর্মীদের সামনে ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। ভবনের ভেতরে অসহনীয় তাপ, বাইরে ভেঙে পড়া মাচা ও ধ্বংসাবশেষ, আর চারদিকে ঘন ধোঁয়া—এসবই উদ্ধারকাজকে কঠিন করে তোলে। ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক ডেরেক আর্মস্ট্রং চ্যান জানান, ভবনের ভাঙা অংশ ও মাচার টুকরা পড়ে ফায়ারফাইটারদের জন্য অতিরিক্ত বিপদের সৃষ্টি করছিল। তীব্র তাপের কারণে উপরের ফ্লোরে সরাসরি পৌঁছানোও সম্ভব হয়নি।
আটকে পড়া বাসিন্দাদের দরজা-জানালা ভেজা তোয়ালে ও টেপ দিয়ে সিল করে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়। হংকং লিয়াজোঁ অফিস সরকারকে সহায়তা সমন্বয় করে। নিহত দমকলকর্মীর প্রতি সরকারি শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং তার পরিবারকে সহায়তার অঙ্গীকার করা হয়। আজও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
তদন্ত ও গ্রেপ্তার
অবহেলার সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিরাপত্তা সচিব ক্রিস ট্যাং জানান, আগুন এত দ্রুত ছড়ানো সন্দেহজনক। এ কারণে বিল্ডিং উপকরণ ও অগ্নিনিরাপত্তা মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়েছিল কি না—তা নিয়ে তদন্ত চলছে। ফায়ার সার্ভিস পরিচালক অ্যান্ডি ইয়ুং ইয়ান-কিন উল্লেখ করেন যে স্টাইরোফোম আগুন ছড়ানোকে দ্রুততর করেছে এবং ভবনে প্রবেশ কঠিন করেছে।
হুইসলব্লোয়ার জেসন পুন জানান, মাচায় অগ্নিনিরোধক উপাদান ব্যবহার করা হয়নি। তিনি দাবি করেন, মানদণ্ড অনুযায়ী আগুন-প্রতিরোধী নেট ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। সরকার চলমান প্রকল্পগুলোতে বিশেষ পরিদর্শন ও জনপদের কাজে পুনর্মূল্যায়ন করার পরিকল্পনা করছে। তবে শ্রম সচিব ক্রিস সান জানিয়েছেন, বাঁশের মাচা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই।

এই অগ্নিকাণ্ড ১৯৯৬ সালের কওলুন বাণিজ্যিক ভবনের আগুনকে ছাড়িয়ে গেছে, যেখানে ওয়েল্ডিং কাজের সময় ৪১ জন মারা যান। সেই ঘটনার পর নিরাপত্তা বিধি হালনাগাদ করা হয়েছিল। এ বছরও হংকংয়ে মাচা-সম্পর্কিত আগুন দেখা গেছে, যার মধ্যে অক্টোবরের চায়নাচেম টাওয়ারের আগুন উল্লেখযোগ্য।
যদিও শ্রমিকদের মধ্যে ধাতব মাচা ব্যবহারের প্রবণতা তিনগুণ বেশি, তবুও ঐতিহ্য ও কম খরচের কারণে বাঁশের মাচা টিকে আছে। বর্তমানে প্রায় ২ হাজার ৫০০ নিবন্ধিত বাঁশের মাচা বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। সাম্প্রতিক নীতিতে বলা হয়েছে, নতুন সরকারি প্রকল্পের অর্ধেকেই ধাতব মাচা ব্যবহার করা হবে। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ২২ জন মাচাশ্রমিকের মৃত্যুর পর এই নীতি জোরদার করা হয়। তবে অগ্নিঝুঁকি এখনো পূর্ণমাত্রায় বিবেচনায় আনা হয়নি। বিশেষজ্ঞরা অগ্নিনিরোধক মানদণ্ড আরও কঠোরভাবে প্রয়োগের সুপারিশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তীব্র তাপ ও ধোঁয়ার মধ্যে দমকলকর্মীদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। উদ্ধারকাজ চলছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আগুন এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বহু বাসিন্দা এখনো ঘরে ফিরতে পারছেন না। এই ঘটনা হংকংয়ের ঘনবসতিপূর্ণ নগর কাঠামোয় ভবন-নিরাপত্তা সংস্কারের দাবিকে আরও জোরালো করেছে।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের কাছে দুজন ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ন্যাশনাল গার্ড সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের অবস্থা গুরুতর। কর্মকর্তারা এটিকে একটি পরিকল্পিত হামলা হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
১১ ঘণ্টা আগে
পশ্চিম আফ্রিকার ছোট দেশ গিনি-বিসাউ আবারও সামরিক অভ্যুত্থানের কবলে। দেশটি দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও মাদক পাচারের সমস্যায় জর্জরিত। গত ২৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর উত্তেজনা বাড়তে থাকে।
১৫ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কি কারাগারে খুন হয়েছেন? সামাজিক মাধ্যমে, বিশেষ করে ভারতের বিভিন্ন মিডিয়ায় আবারও এই গুজব ছড়িয়ে পড়ছে।
১ দিন আগে
হংকংয়ের একাধিক উচ্চ ভবনে লাগা আগুনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে অন্তত ১৩ হয়েছে। কিছু বাসিন্দা ভিতরে আটকা পড়েছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে। হংকংয়ের কর্তৃপক্ষ বরাতে আল-জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
১ দিন আগে