গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব প্রায় শেষের দিকে। এক বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করা এই সরকারের কার্যক্রম, সাফল্য, ব্যর্থতা এবং দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে ঢাকা স্ট্রিম–এর সঙ্গে কথা বলেছেন বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ। তাঁর সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।
ড. মাহবুব উল্লাহ

ঢাকা স্ট্রিম: অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব পালন প্রায় শেষের দিকে। এই সরকারের গত প্রায় ১৬ মাসের কার্যক্রমকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ: কোনো সরকারের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করতে গেলে প্রথমে দেখতে হয়, তারা উত্তরাধিকার সূত্রে কী পেয়েছিল। এই সরকার পেয়েছিল ভয়াবহ সংকটে থাকা একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা। প্রথমত, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গিয়েছিল। দ্বিতীয়ত, ব্যাংকিং খাত ছিল প্রায় বিপর্যস্ত। এর দুটি কারণ—একদিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছিল, অন্যদিকে বহু ব্যাংককে কার্যত তহবিলশূন্য করে ফেলা হয়েছিল। হাতে গোনা কয়েকটি ব্যাংক ছাড়া অধিকাংশ ব্যাংকের অবস্থাই ছিল করুণ, অনেকে গ্রাহকের পাওনা পর্যন্ত পরিশোধ করতে পারছিল না। তারল্য সংকট মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বারবার সহায়তা দিয়েও পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারেনি, যার ফলে কয়েকটি ব্যাংক একীভূত করার কথাও ওঠে।
তৃতীয়ত, একটি গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একেবারেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল, যা এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।
ঢাকা স্ট্রিম: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণ কী এবং সরকার এ ক্ষেত্রে কতটা সফল হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ: এর মূল কারণ হলো, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশ বাহিনীকে একটি দলীয় পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত করেছিল। পদোন্নতি, পুরস্কার—সবকিছু নির্ভর করত সরকারের প্রতি আনুগত্য এবং বিরোধী দল দমনের ক্ষমতার ওপর, পেশাগত দক্ষতার ওপর নয়। ফলে ২৪-এর অভ্যুত্থানের পর পুলিশ বাহিনীর একটি বড় অংশ তাদের কর্মস্থল ছেড়ে পালিয়ে যায়। রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি অঙ্গ, যেমন—পুলিশ, আমলাতন্ত্র, বিচার বিভাগ বা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ওপর সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ ছিল, যার ফলে জনগণের রোষ তাদের ওপর পড়ে।
পুলিশ বাহিনীর অনুপস্থিতিতে যে শূন্যতা তৈরি হয়, তাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

ঢাকা স্ট্রিম: আপনি পুলিশ বাহিনীতে একটি শূন্যতা তৈরির কথা বলছেন। এই শূন্যতা মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপ কী হওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন?
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ: আমার মনে হয়, সরকারের উচিত ছিল জরুরি ভিত্তিতে পুলিশ বাহিনীতে কমপক্ষে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ নতুন সদস্য নিয়োগ দেওয়া। এ ক্ষেত্রে ব্যাটালিয়ন আনসার বা সশস্ত্র বাহিনী থেকে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত দক্ষ সৈনিকদের (যাঁরা সাধারণত ৪৫-৪৬ বছর বয়সে অবসরে যান) নিয়োগ দিয়ে বাহিনী পুনর্গঠন করা যেত। তাঁদের শুধু পুলিশের আইনকানুন বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ দিলেই চলত। কিন্তু সরকার সেদিকে না গিয়ে পুরোনোদেরই বারবার কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছে। ফলে অভিযুক্ত ও অপরাধী কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশ এখনো পলাতক। এমন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা অত্যন্ত কঠিন। আমরা দেখেছি, অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে ঢাকা শহরে ডাকাতি বেড়ে গিয়েছিল এবং জনগণকেই মহল্লায় মহল্লায় পাহারা দিয়ে তা প্রতিরোধ করতে হয়েছে।
ঢাকা স্ট্রিম: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এই চ্যালেঞ্জের সঙ্গে তো আরও নতুন কিছু বিষয় যুক্ত হয়েছে। আমরা দেখছি, সম্প্রতি আন্দোলন-অবরোধের মতো কর্মসূচি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এই বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ: একের পর এক আন্দোলন-অবরোধ ও দাবি-দাওয়া সরকারের কাজকে অনেক কঠিন করেছে। এই সরকার আসার পর সরকারি হিসাবেই প্রায় ১,৪০০-১,৫০০ হরতাল-অবরোধ হয়েছে। সদ্য পাওয়া স্বাধীনতা ও অধিকারের সুযোগে অনেকেই নিজেদের দাবি আদায়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, যা জনদুর্ভোগ বাড়িয়েছে। যেহেতু এই সরকার কঠোরভাবে বলপ্রয়োগ করতে পারে না—পাছে তা ফ্যাসিবাদী শাসনের সঙ্গে তুলনীয় হয়ে যায়—তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। অথচ আমাদের উচিত ছিল সরকারকে সহযোগিতা করা, সরকারের কাজকে সহজ করতে সমর্থন দেওয়া।
ঢাকা স্ট্রিম: প্রশাসনিক কাঠামো বা আমলাতন্ত্রের সংস্কারে সরকার কতটা সফল হয়েছে বলে মনে করেন?
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ: আমলাতন্ত্রেও একটি বড় শূন্যতা তৈরি হয়েছিল। শেখ হাসিনার প্রতি ব্যক্তিগতভাবে অনুগত আমলাদের দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়ে। এই শূন্যতা পূরণে সরকার অবসরে যাওয়া কিছু কর্মকর্তাকে ফিরিয়ে এনেছে। কিন্তু তাঁরা তাঁদের পূর্বের কর্মজীবনের মতো সেবা (সার্ভিস ডেলিভারি) দিতে পারছেন না।
এর চেয়েও বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, নতুন নিয়োগ ও পদোন্নতি নিয়ে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে, যা পত্রপত্রিকা ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এর ফলে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য তো আসেইনি, উল্টো অভিযোগ উঠেছে যে পূর্ববর্তী ফ্যাসিবাদী সরকারের সহযোগীদেরই আবার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসানো হয়েছে। এতে বোঝা যায়, আমরা দুর্নীতিমুক্ত হতে পারিনি। নতুন পরিস্থিতিতে সুযোগসন্ধানীরা নতুন করে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব নিয়ে লেখালেখি হলেও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে, তাদেরও অপসারণ করা হয়নি, যা হতাশাজনক।
ঢাকা স্ট্রিম: অর্থনৈতিক ও বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য বা চ্যালেঞ্জ কী ছিল?
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ: এই সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য এসেছে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যে পাল্টা শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিল, তা বাস্তবায়িত হলে আমাদের অর্থনীতি ভেঙে পড়ত। কারণ, আমাদের রপ্তানি খাত মূলত তৈরি পোশাকশিল্প এবং জনশক্তি রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল।
সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সফল আলোচনার মাধ্যমে এই শুল্কের মাত্রা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে, যা একটি বড় বিপদ থেকে দেশকে রক্ষা করেছে। এখন পোশাক কারখানার মালিকরাও আর প্রণোদনার জন্য তেমন সোচ্চার নন, কারণ তাঁরা প্রচুর রপ্তানি আদেশ পাচ্ছেন, যা তাঁদের উৎপাদন ক্ষমতার বাইরে। এটি নিঃসন্দেহে সরকারের একটি বড় সাফল্য।
তবে এর জন্য কিছু মূল্যও দিতে হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা, গম এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো কিছু পণ্য আমদানি করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে। এর ফলে আমাদের অর্থনীতিতে কতটা প্রভাব পড়বে, তা সময়ই বলে দেবে।
ঢাকা স্ট্রিম: রোহিঙ্গা সংকট বা অন্যান্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের নীতিকে কীভাবে দেখছেন?
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ: রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে অধ্যাপক ইউনূস বেশ আশাবাদী ছিলেন। তিনি এমনকি বলেছিলেন, রোহিঙ্গারা পরের ঈদ নিজেদের দেশেই করতে পারবে। কিন্তু বিষয়টি এতটা সহজ ছিল না। এখানে ভারত, চীন, মিয়ানমার সরকার এবং আরাকান আর্মির মতো অনেক পক্ষের স্বার্থ জড়িত, যা পরিস্থিতিকে অত্যন্ত জটিল করে তুলেছে।
এর মাঝে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি ‘শান্তিপূর্ণ করিডোর’ তৈরির কথা উঠলেও এর স্বরূপ সম্পর্কে দেশবাসীকে পরিষ্কারভাবে কিছু জানানো হয়নি, যা জনমনে বিভ্রান্তি ও সন্দেহের জন্ম দিয়েছিল। তবে সৌভাগ্যবশত, সেই আলোচনা এখন অনেকটাই স্তিমিত।
ঢাকা স্ট্রিম: আমরা দেখেছি, ২০২৫ সালের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি থেকে প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। এই বিষয়টিকে নিয়ে আপনি কী বলবেন?
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ: এর দুটি দিক রয়েছে। প্রথমত, তিনি প্রথাগত নিয়ম ভেঙে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বকে সঙ্গে নিয়ে গেছেন, যা একটি ইতিবাচক দিক। যদিও ছোট দলগুলো এতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। শুনেছি, মাহমুদুর রহমান মান্নারও যাওয়ার কথা ছিল। তাঁরা সবাই একই বিমানে, পাশাপাশি বসে যাত্রা করেছেন এবং সম্ভবত একই হোটেলে থেকেছেন। একসঙ্গে ভ্রমণ, খাওয়া-দাওয়া বা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একধরনের অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই ধরনের সুযোগ দেশের বাইরের মুক্ত পরিবেশে রাজনৈতিক মতপার্থক্যগুলো নিয়ে কথা বলার একটি বিরল সুযোগ তৈরি করতে পারে, যা দেশের ভেতরে সম্ভব হয় না।
ঢাকা স্ট্রিম: আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এই যৌথ সফরের তাৎপর্য কী হতে পারে? এটি কি সরকারের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে?
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ: হ্যাঁ, অধ্যাপক ইউনূসের জন্য এবার রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়াটা জরুরি ছিল। এর মাধ্যমে তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়কে দেখাতে চেয়েছেন যে জাতি তাঁর পেছনে ঐক্যবদ্ধ এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো তাঁর সঙ্গে আছে। এটি তাঁর সরকারের বৈধতা বা ‘লেজিটিমেসি’কে আরও শক্তিশালী করে।
এর মাধ্যমে বিশ্ব একটি বার্তা পায় যে ইউনূস সরকারকে যতটা ‘নড়বড়ে’ বলে প্রচার করা হয়, বাস্তবে তা নয়। সরকার এখনো রাজনৈতিক দলগুলোর আশীর্বাদপুষ্ট। যেমনটা সরকার গঠনের সময় তারেক রহমানসহ অন্যান্য নেতা বলেছিলেন যে ‘এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।’ আমার মনে হয়, দলগুলো এখনো সেই অবস্থান থেকে সরে আসেনি, আর সে কারণেই তারা একযোগে এই সফরে গিয়েছিল।
এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, আওয়ামী লীগ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে যে নেতিবাচক প্রচারণা ও বিক্ষোভের আয়োজন করছে, তা মোকাবিলা করা। এই সরকারের যেহেতু কোনো দলীয় বা সাংগঠনিক কাঠামো নেই, তাই বিদেশে পাল্টা কোনো অবস্থান তৈরি করা কঠিন। বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর বিদেশে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ও সমর্থক গোষ্ঠী রয়েছে। এই দলগুলোকে সঙ্গে নেওয়ার ফলে জাতিসংঘের বাইরে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য বিক্ষোভের বিপরীতে একটি শক্তিশালী পাল্টা সমাবেশ আয়োজন করা সম্ভব হয়েছিল, যা সরকারের পক্ষে জনসমর্থন প্রমাণ করে।
ঢাকা স্ট্রিম: ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো একটি অভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এসেছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এমনটা কেন হলো?
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ: এটা ঠিক যে অভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক শক্তি ও দলের মধ্যে একটি ঐক্য ছিল। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন ইস্যু সামনে এসেছে। প্রথমে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে একধরনের অস্পষ্টতা ছিল, যা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস কোনো সুনির্দিষ্ট ইঙ্গিত দেননি। অবশেষে লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার একটি ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
নির্বাচনের প্রশ্ন আসতেই স্বাভাবিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও সামনে চলে আসে। প্রতিটি দলই এখন নির্বাচন থেকে নিজ নিজ পক্ষে সর্বোচ্চ সুবিধা আদায় করার লক্ষ্যে কাজ করছে। এই প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের কারণেই সেই ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে একটি চিড় ধরেছে।
ঢাকা স্ট্রিম: সরকারের দায়িত্ব পালনের প্রায় শেষ সময়ে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনি আশাবাদী হওয়ার মতো কী দেখছেন?
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ: আমি চূড়ান্তভাবে হতাশাবাদী নই। কারণ, দলগুলোর মধ্যে এখনো কথাবার্তা চলছে, একে অপরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হচ্ছে, সামাজিক সৌজন্যবোধ বজায় আছে। অধ্যাপক ইউনূস যখন তাঁর ‘জাতীয় ঐক্য কমিশনে’ সব দলকে আমন্ত্রণ জানান, তখন ছোট-বড় নির্বিশেষে প্রায় ২৭-২৮টি দলই আলোচনায় অংশ নেয়। আলোচনার মাধ্যমে জুলাই সনদ চূড়ান্ত হয়েছে। সরকার আগামী ফেব্রুয়ারিতে একই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের ঘোষণা করেছে। এটি দেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন পথ তৈরি করবে বলে আমি মনে করি।
সবশেষে বলব, এই মুহূর্তে জাতির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। এই ঐক্য না থাকলে বাংলাদেশবিরোধী, ফ্যাসিবাদী ও পতিত শক্তির জন্য পরিস্থিতি লাভজনক হবে, যা নিশ্চয়ই কারও কাম্য হওয়া উচিত নয়।
ঢাকা স্ট্রিম: আপনাকে ধন্যবাদ, আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য।
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ: ধন্যবাদ ঢাকা স্ট্রিমকে এবং ঢাকা স্ট্রিমের পাঠকদেরও।
শ্রুতিলিখন: মুজাহিদুল ইসলাম

ঢাকা স্ট্রিম: অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব পালন প্রায় শেষের দিকে। এই সরকারের গত প্রায় ১৬ মাসের কার্যক্রমকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ: কোনো সরকারের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করতে গেলে প্রথমে দেখতে হয়, তারা উত্তরাধিকার সূত্রে কী পেয়েছিল। এই সরকার পেয়েছিল ভয়াবহ সংকটে থাকা একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা। প্রথমত, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গিয়েছিল। দ্বিতীয়ত, ব্যাংকিং খাত ছিল প্রায় বিপর্যস্ত। এর দুটি কারণ—একদিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছিল, অন্যদিকে বহু ব্যাংককে কার্যত তহবিলশূন্য করে ফেলা হয়েছিল। হাতে গোনা কয়েকটি ব্যাংক ছাড়া অধিকাংশ ব্যাংকের অবস্থাই ছিল করুণ, অনেকে গ্রাহকের পাওনা পর্যন্ত পরিশোধ করতে পারছিল না। তারল্য সংকট মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বারবার সহায়তা দিয়েও পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারেনি, যার ফলে কয়েকটি ব্যাংক একীভূত করার কথাও ওঠে।
তৃতীয়ত, একটি গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একেবারেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল, যা এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।
ঢাকা স্ট্রিম: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণ কী এবং সরকার এ ক্ষেত্রে কতটা সফল হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ: এর মূল কারণ হলো, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশ বাহিনীকে একটি দলীয় পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত করেছিল। পদোন্নতি, পুরস্কার—সবকিছু নির্ভর করত সরকারের প্রতি আনুগত্য এবং বিরোধী দল দমনের ক্ষমতার ওপর, পেশাগত দক্ষতার ওপর নয়। ফলে ২৪-এর অভ্যুত্থানের পর পুলিশ বাহিনীর একটি বড় অংশ তাদের কর্মস্থল ছেড়ে পালিয়ে যায়। রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি অঙ্গ, যেমন—পুলিশ, আমলাতন্ত্র, বিচার বিভাগ বা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ওপর সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ ছিল, যার ফলে জনগণের রোষ তাদের ওপর পড়ে।
পুলিশ বাহিনীর অনুপস্থিতিতে যে শূন্যতা তৈরি হয়, তাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

ঢাকা স্ট্রিম: আপনি পুলিশ বাহিনীতে একটি শূন্যতা তৈরির কথা বলছেন। এই শূন্যতা মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপ কী হওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন?
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ: আমার মনে হয়, সরকারের উচিত ছিল জরুরি ভিত্তিতে পুলিশ বাহিনীতে কমপক্ষে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ নতুন সদস্য নিয়োগ দেওয়া। এ ক্ষেত্রে ব্যাটালিয়ন আনসার বা সশস্ত্র বাহিনী থেকে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত দক্ষ সৈনিকদের (যাঁরা সাধারণত ৪৫-৪৬ বছর বয়সে অবসরে যান) নিয়োগ দিয়ে বাহিনী পুনর্গঠন করা যেত। তাঁদের শুধু পুলিশের আইনকানুন বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ দিলেই চলত। কিন্তু সরকার সেদিকে না গিয়ে পুরোনোদেরই বারবার কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছে। ফলে অভিযুক্ত ও অপরাধী কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশ এখনো পলাতক। এমন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা অত্যন্ত কঠিন। আমরা দেখেছি, অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে ঢাকা শহরে ডাকাতি বেড়ে গিয়েছিল এবং জনগণকেই মহল্লায় মহল্লায় পাহারা দিয়ে তা প্রতিরোধ করতে হয়েছে।
ঢাকা স্ট্রিম: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এই চ্যালেঞ্জের সঙ্গে তো আরও নতুন কিছু বিষয় যুক্ত হয়েছে। আমরা দেখছি, সম্প্রতি আন্দোলন-অবরোধের মতো কর্মসূচি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এই বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ: একের পর এক আন্দোলন-অবরোধ ও দাবি-দাওয়া সরকারের কাজকে অনেক কঠিন করেছে। এই সরকার আসার পর সরকারি হিসাবেই প্রায় ১,৪০০-১,৫০০ হরতাল-অবরোধ হয়েছে। সদ্য পাওয়া স্বাধীনতা ও অধিকারের সুযোগে অনেকেই নিজেদের দাবি আদায়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, যা জনদুর্ভোগ বাড়িয়েছে। যেহেতু এই সরকার কঠোরভাবে বলপ্রয়োগ করতে পারে না—পাছে তা ফ্যাসিবাদী শাসনের সঙ্গে তুলনীয় হয়ে যায়—তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। অথচ আমাদের উচিত ছিল সরকারকে সহযোগিতা করা, সরকারের কাজকে সহজ করতে সমর্থন দেওয়া।
ঢাকা স্ট্রিম: প্রশাসনিক কাঠামো বা আমলাতন্ত্রের সংস্কারে সরকার কতটা সফল হয়েছে বলে মনে করেন?
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ: আমলাতন্ত্রেও একটি বড় শূন্যতা তৈরি হয়েছিল। শেখ হাসিনার প্রতি ব্যক্তিগতভাবে অনুগত আমলাদের দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়ে। এই শূন্যতা পূরণে সরকার অবসরে যাওয়া কিছু কর্মকর্তাকে ফিরিয়ে এনেছে। কিন্তু তাঁরা তাঁদের পূর্বের কর্মজীবনের মতো সেবা (সার্ভিস ডেলিভারি) দিতে পারছেন না।
এর চেয়েও বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, নতুন নিয়োগ ও পদোন্নতি নিয়ে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে, যা পত্রপত্রিকা ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এর ফলে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য তো আসেইনি, উল্টো অভিযোগ উঠেছে যে পূর্ববর্তী ফ্যাসিবাদী সরকারের সহযোগীদেরই আবার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসানো হয়েছে। এতে বোঝা যায়, আমরা দুর্নীতিমুক্ত হতে পারিনি। নতুন পরিস্থিতিতে সুযোগসন্ধানীরা নতুন করে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব নিয়ে লেখালেখি হলেও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে, তাদেরও অপসারণ করা হয়নি, যা হতাশাজনক।
ঢাকা স্ট্রিম: অর্থনৈতিক ও বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য বা চ্যালেঞ্জ কী ছিল?
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ: এই সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য এসেছে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যে পাল্টা শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিল, তা বাস্তবায়িত হলে আমাদের অর্থনীতি ভেঙে পড়ত। কারণ, আমাদের রপ্তানি খাত মূলত তৈরি পোশাকশিল্প এবং জনশক্তি রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল।
সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সফল আলোচনার মাধ্যমে এই শুল্কের মাত্রা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে, যা একটি বড় বিপদ থেকে দেশকে রক্ষা করেছে। এখন পোশাক কারখানার মালিকরাও আর প্রণোদনার জন্য তেমন সোচ্চার নন, কারণ তাঁরা প্রচুর রপ্তানি আদেশ পাচ্ছেন, যা তাঁদের উৎপাদন ক্ষমতার বাইরে। এটি নিঃসন্দেহে সরকারের একটি বড় সাফল্য।
তবে এর জন্য কিছু মূল্যও দিতে হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা, গম এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো কিছু পণ্য আমদানি করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে। এর ফলে আমাদের অর্থনীতিতে কতটা প্রভাব পড়বে, তা সময়ই বলে দেবে।
ঢাকা স্ট্রিম: রোহিঙ্গা সংকট বা অন্যান্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের নীতিকে কীভাবে দেখছেন?
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ: রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে অধ্যাপক ইউনূস বেশ আশাবাদী ছিলেন। তিনি এমনকি বলেছিলেন, রোহিঙ্গারা পরের ঈদ নিজেদের দেশেই করতে পারবে। কিন্তু বিষয়টি এতটা সহজ ছিল না। এখানে ভারত, চীন, মিয়ানমার সরকার এবং আরাকান আর্মির মতো অনেক পক্ষের স্বার্থ জড়িত, যা পরিস্থিতিকে অত্যন্ত জটিল করে তুলেছে।
এর মাঝে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি ‘শান্তিপূর্ণ করিডোর’ তৈরির কথা উঠলেও এর স্বরূপ সম্পর্কে দেশবাসীকে পরিষ্কারভাবে কিছু জানানো হয়নি, যা জনমনে বিভ্রান্তি ও সন্দেহের জন্ম দিয়েছিল। তবে সৌভাগ্যবশত, সেই আলোচনা এখন অনেকটাই স্তিমিত।
ঢাকা স্ট্রিম: আমরা দেখেছি, ২০২৫ সালের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি থেকে প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। এই বিষয়টিকে নিয়ে আপনি কী বলবেন?
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ: এর দুটি দিক রয়েছে। প্রথমত, তিনি প্রথাগত নিয়ম ভেঙে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বকে সঙ্গে নিয়ে গেছেন, যা একটি ইতিবাচক দিক। যদিও ছোট দলগুলো এতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। শুনেছি, মাহমুদুর রহমান মান্নারও যাওয়ার কথা ছিল। তাঁরা সবাই একই বিমানে, পাশাপাশি বসে যাত্রা করেছেন এবং সম্ভবত একই হোটেলে থেকেছেন। একসঙ্গে ভ্রমণ, খাওয়া-দাওয়া বা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একধরনের অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই ধরনের সুযোগ দেশের বাইরের মুক্ত পরিবেশে রাজনৈতিক মতপার্থক্যগুলো নিয়ে কথা বলার একটি বিরল সুযোগ তৈরি করতে পারে, যা দেশের ভেতরে সম্ভব হয় না।
ঢাকা স্ট্রিম: আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এই যৌথ সফরের তাৎপর্য কী হতে পারে? এটি কি সরকারের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে?
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ: হ্যাঁ, অধ্যাপক ইউনূসের জন্য এবার রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়াটা জরুরি ছিল। এর মাধ্যমে তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়কে দেখাতে চেয়েছেন যে জাতি তাঁর পেছনে ঐক্যবদ্ধ এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো তাঁর সঙ্গে আছে। এটি তাঁর সরকারের বৈধতা বা ‘লেজিটিমেসি’কে আরও শক্তিশালী করে।
এর মাধ্যমে বিশ্ব একটি বার্তা পায় যে ইউনূস সরকারকে যতটা ‘নড়বড়ে’ বলে প্রচার করা হয়, বাস্তবে তা নয়। সরকার এখনো রাজনৈতিক দলগুলোর আশীর্বাদপুষ্ট। যেমনটা সরকার গঠনের সময় তারেক রহমানসহ অন্যান্য নেতা বলেছিলেন যে ‘এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।’ আমার মনে হয়, দলগুলো এখনো সেই অবস্থান থেকে সরে আসেনি, আর সে কারণেই তারা একযোগে এই সফরে গিয়েছিল।
এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, আওয়ামী লীগ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে যে নেতিবাচক প্রচারণা ও বিক্ষোভের আয়োজন করছে, তা মোকাবিলা করা। এই সরকারের যেহেতু কোনো দলীয় বা সাংগঠনিক কাঠামো নেই, তাই বিদেশে পাল্টা কোনো অবস্থান তৈরি করা কঠিন। বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর বিদেশে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ও সমর্থক গোষ্ঠী রয়েছে। এই দলগুলোকে সঙ্গে নেওয়ার ফলে জাতিসংঘের বাইরে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য বিক্ষোভের বিপরীতে একটি শক্তিশালী পাল্টা সমাবেশ আয়োজন করা সম্ভব হয়েছিল, যা সরকারের পক্ষে জনসমর্থন প্রমাণ করে।
ঢাকা স্ট্রিম: ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো একটি অভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এসেছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এমনটা কেন হলো?
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ: এটা ঠিক যে অভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক শক্তি ও দলের মধ্যে একটি ঐক্য ছিল। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন ইস্যু সামনে এসেছে। প্রথমে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে একধরনের অস্পষ্টতা ছিল, যা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস কোনো সুনির্দিষ্ট ইঙ্গিত দেননি। অবশেষে লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার একটি ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
নির্বাচনের প্রশ্ন আসতেই স্বাভাবিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও সামনে চলে আসে। প্রতিটি দলই এখন নির্বাচন থেকে নিজ নিজ পক্ষে সর্বোচ্চ সুবিধা আদায় করার লক্ষ্যে কাজ করছে। এই প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের কারণেই সেই ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে একটি চিড় ধরেছে।
ঢাকা স্ট্রিম: সরকারের দায়িত্ব পালনের প্রায় শেষ সময়ে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনি আশাবাদী হওয়ার মতো কী দেখছেন?
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ: আমি চূড়ান্তভাবে হতাশাবাদী নই। কারণ, দলগুলোর মধ্যে এখনো কথাবার্তা চলছে, একে অপরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হচ্ছে, সামাজিক সৌজন্যবোধ বজায় আছে। অধ্যাপক ইউনূস যখন তাঁর ‘জাতীয় ঐক্য কমিশনে’ সব দলকে আমন্ত্রণ জানান, তখন ছোট-বড় নির্বিশেষে প্রায় ২৭-২৮টি দলই আলোচনায় অংশ নেয়। আলোচনার মাধ্যমে জুলাই সনদ চূড়ান্ত হয়েছে। সরকার আগামী ফেব্রুয়ারিতে একই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের ঘোষণা করেছে। এটি দেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন পথ তৈরি করবে বলে আমি মনে করি।
সবশেষে বলব, এই মুহূর্তে জাতির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। এই ঐক্য না থাকলে বাংলাদেশবিরোধী, ফ্যাসিবাদী ও পতিত শক্তির জন্য পরিস্থিতি লাভজনক হবে, যা নিশ্চয়ই কারও কাম্য হওয়া উচিত নয়।
ঢাকা স্ট্রিম: আপনাকে ধন্যবাদ, আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য।
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ: ধন্যবাদ ঢাকা স্ট্রিমকে এবং ঢাকা স্ট্রিমের পাঠকদেরও।
শ্রুতিলিখন: মুজাহিদুল ইসলাম

আবুল সরকার পালাগান করেছিলেন। তিন ঘণ্টার এই পালার বিষয় ছিল ‘জীব বনাম পরম’। পালাগান হচ্ছে পাল্টাপাল্টি গান। দুটি চরিত্রের মধ্যে গানে গানে বিতর্ক হয়। জগতের গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক ও ধর্মতাত্ত্বিক তর্কগুলো লোকায়ত সমাজে আলোচনা করার এটিই পাটাতন। যুগে যুগে।
৬ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যখন সংবিধান থেকে সমাজতন্ত্রকে বাদ দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে, তখন লেখক এই পদক্ষেপকে অগ্রহণযোগ্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর মতে, বৈষম্য নিরসনের জন্য সমাজতন্ত্র অপরিহার্য।
১ দিন আগে
যেকোনো দুর্যোগই (বন্যা, ঘূর্ণিঝড় বা ভূমিকম্প) মানুষের জীবনকে সংখ্যায় পর্যবসিত করে। কিন্তু সাম্প্রতিক এই ভূমিকম্প সেই সংখ্যায়ও যেন এক ভয়ংকর বিভাজন রেখা টেনে দিল। সেই বিভাজনের নাম—প্রাপ্তবয়স্ক বনাম অপ্রাপ্তবয়স্ক, সচেতন বনাম অসহায়, রাজনৈতিক উপযোগিতা বনাম অনুপযোগিতা।
১ দিন আগে
ভূমিকম্পের ঝুঁকির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ দিনের জন্য এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজও বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সাধারণ ছুটি মনে হলেও এটি মূলত শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট সকলের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নেওয়া একটি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ।
২ দিন আগে