ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের স্মৃতিস্তম্ভে কালি দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) ভোরে উপজেলার চিনাইর গ্রামের চিনাইর আঞ্জুমান আরা স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, চিনাইর আঞ্জুমান আরা স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিস্তম্ভ ছিল। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের সময় সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে সেটিকে শহীদ মুগ্ধের স্মরণে নতুন করে করা হয়। বঙ্গবন্ধুর ক্ষতিগ্রস্ত ছবির স্থানে বসানো হয় মুগ্ধের প্রতিকৃতি। আজ সকালে সেই প্রতিকৃতি কালি মাখা অবস্থায় পান স্থানীয়রা। ভোরে দুর্বৃত্তরা মুগ্ধের ছবিতে কালি দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সদর মডেল থানার ওসি আজহারুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। তদন্ত চলছে। জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে ২০২৪ সালে ঢাকার উত্তরায় মুক্তমঞ্চের নাম বদলে শহীদ মীর মুগ্ধের মুগ্ধ মঞ্চ রাখা হয়। ২০২২ সালে এটি বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চ নামে পরিচিত ছিল।
২০২৪ সালের ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় রাজধানীর উত্তরায় গুলিবিদ্ধ হন মুগ্ধ। পরে বন্ধুরা রাজধানীর ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মুগ্ধ নিহতের পর তাঁর যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করলে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওতে আন্দোলনকারীদের পানি পান করাতে দেখা যায় মুগ্ধকে। তিনি পানির বোতল হাতে ঘুরে ঘুরে বলছিলেন, ‘পানি লাগবে কারও, পানি’। এ অবস্থাতেই গুলি তাঁর মাথায় লাগে। পরে ‘পানি লাগবে পানি’ বাক্যটি আন্দোললেন প্রতীকী স্লোগানে পরিণত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, মীর মুগ্ধ আহত বা ক্লান্ত শিক্ষার্থীদের পাশে গিয়ে বারবার পানি দিচ্ছিলেন। পানি বিতরণের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর আন্দোলনের পুরো সময় রাজধানী ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে দেয়ালে মীর মুগ্ধের গ্রাফিতি হয়।
মীর মুগ্ধ ফ্রিল্যান্সার ছিলেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২৩ সালে গণিতে স্নাতকের পর বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে এমবিএ করছিলেন। মৃত্যুর সময় তাঁর গলায় বিইউপির আইডি কার্ডটি রক্তমাখা পাওয়া যায়।
মুগ্ধের বাবার নাম মীর মোস্তাফিজুর রহমান, মা শাহানা চৌধুরী। গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রামরাইল। তিন ভাইয়ের মধ্যে মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ ও মুগ্ধ ছিলেন যমজ। মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত ফাইভারে এক হাজারের বেশি কাজ করেছেন মীর মুগ্ধ। ২০২৪ সালের ৩১ জুলাই ফাইভার ভেরিফাইড অফিশিয়াল পেজে জানায়, মুগ্ধ ছিলেন একজন প্রতিভাবান মার্কেটার। বিশেষ করে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবস্থাপনায় তাঁর অসাধারণ দক্ষতা ছিল।