leadT1ad

এলডিসি উত্তরণ ও চট্টগ্রাম বন্দরের সিদ্ধান্ত নিয়ে তারেক রহমানের উদ্বেগ

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ৩৪
তারেক রহমানের মতে হঠাৎ করে এলডিসি থেকে উত্তরণ করা হলে জনগণের উপর চাপ পড়বে। ছবি: তারেক রহমানের ফেসবুক পোস্ট।

বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ প্রক্রিয়া এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সাম্প্রতিক দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সোমবার এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন—দেশের অর্থনীতি ও জাতীয় সম্পদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের বিষয়টি জনগণের নির্বাচিত সরকারের হাতেই ছেড়ে দেওয়া উচিৎ। কোনো অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকার এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

পোস্টে তিনি গাজীপুরের একটি ছোট গার্মেন্টস মালিক এবং নারায়ণগঞ্জের একটি শ্রমিক পরিবারের উদাহরণ তুলে ধরে লেখেন—ট্যারিফ সুবিধা হারানো ও রপ্তানিজনিত চাপ সরাসরি সাধারণ মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলছে, কিন্তু এসব সংকট নীরবে ঘটে এবং সংবাদের শিরোনামে জায়গা পায় না।

তারেক রহমান লেখেন, ‘গাজীপুরের এক ক্ষুদ্র গার্মেন্টস মালিকের কথা ভাবুন। তিনি দশ বছরের বেশি সময় ধরে তার ব্যবসা গড়ে তুলেছেন। একশোর বেশি কর্মী নিয়োগ দিয়েছেন। খুব কম লাভের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক বৈশ্বিক বাজারে টিকে আছেন। হঠাৎ একদিন, কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই ট্যারিফ সুবিধা হারিয়ে যায়। এতে তার পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক মূল্য ভেঙে পড়ে। অর্ডার কমতে শুরু করে। কারখানা চালু রাখা, কর্মীদের বেতন দেওয়া এবং নিজের পরিবারের নিরাপত্তা বজায় রাখা—সবকিছুতেই তার ওপর চাপ বাড়ে।

‘এখন নারায়ণগঞ্জের এক তরুণী স্নাতকের কথা ভাবুন। তিনি অনিশ্চয়তার মধ্যে তার পরিবারকে হারিয়ে যেতে দেখছেন। তার বাবা একটি কারখানায় কাজ করেন। সংসার চালাতে তিনি ওভারটাইমের ওপর নির্ভর করেন। রপ্তানির চাপ বাড়লে ওভারটাইম প্রথমেই বন্ধ হয়। এরপর শিফট কমে যায়। তারপর চাকরি হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়। এসব ঘটনা শিরোনামে আসে না। এগুলো সাধারণ পরিবারের ভেতরের নীরব সংকট।

এই সিদ্ধান্তে তারা কেউ ভোট দেননি। তাদের কেউ জিজ্ঞেসও করেনি। তাদের প্রকৃত হিসাবও দেখানো হয়নি। এই কারণেই বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণের বিতর্ক সরকারি বিবৃতির চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

তারেক রহমান দাবি করেন, ২০২৬ সালকে এলডিসি উত্তরণের সময়সীমা ধরে এগোনো, কিন্তু সময় বাড়ানোর বিকল্প না রাখা একটি ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’। এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে একটি অন্তর্বর্তী সরকার, যার কোনো নির্বাচনী ম্যান্ডেট নেই। তারপরও তারা এমন দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতিকে বহু দশকের জন্য প্রভাবিত করবে।

তার বক্তব্যে আরও উঠে আসে—সময়সীমা বাড়ানোর সম্ভাবনাকে সরকার প্রকাশ্যে অস্বীকার করায় আন্তর্জাতিক দরকষাকষিতে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ছে। তারঁ মতে, সময়সীমা বাড়ানো ‘অসম্ভব’ বা এই অনুরোধ করা হলে তা হবে ‘অপমানজনক’ এবং জাতিসংঘ তা বিবেচনাও করবে না, এই ধরনের দাবি আসলে ঠিক নয়। কারণ ইতিহাস থেকে দেখা যায় অনেক দেশকেই জাতিসংঘ অতীতে এই সুযোগ দিয়েছে।

তিনি বলেন, বিশ্বের কয়েকটি দেশ, বিশেষ করে অ্যাঙ্গোলা ও সামোয়া, তাদের উত্তরণ সময়সীমা বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছে। জাতিসংঘের নিয়মেও অর্থনৈতিক ধাক্কা বা সংকটে এমন নমনীয়তার সুযোগ রয়েছে। তাই প্রয়োজন হলে সময় চাইতে লজ্জা বা অপমানের কিছু নেই—বরং এটি হবে দায়িত্বশীল পদক্ষেপ।

তারেক রহমান বলেন, ‘তাহলে আমরা কেন ভাবছি যে কোনো বিকল্প নেই? কেন আমরা আমাদের ভবিষ্যত সীমাবদ্ধ করছি? যখন আমরা প্রকাশ্যে সময় বাড়ানোর সম্ভাবনা বাদ দিই, তখন আমরা নিজেদের দরকষাকষির ক্ষমতা দুর্বল করি। আন্তর্জাতিক আলোচনায় আমরা আগেই আমাদের সব তাস দেখিয়ে ফেলি। এতে আলোচনা শুরু হওয়ার আগেই আমাদের প্রভাব কমে যায়। বাংলাদেশ এই অগ্রগতি অর্জন করেছে। কিন্তু উত্তরণের ‘অধিকার’ থাকা আর উত্তরণের জন্য ‘প্রস্তুত’ থাকা এক বিষয় নয়।’

চট্টগ্রাম বন্দরের সাম্প্রতিক কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিএনপির এই নেতা। তার দাবি, জাতীয় সম্পদ নিয়ে নেওয়া এই দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তগুলোও একটি অনির্বাচিত সরকারের হাতে থাকা উচিত নয়। জনমতকে গুরুত্ব না দেওয়া এবং ‘অপরিহার্যতার’ নামে সমালোচনাকে উপেক্ষা করা গণতান্ত্রিক নীতির পরিপন্থী বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তারেক রহমান স্পষ্ট করেন, তিনি এলডিসি উত্তরণ কিংবা বন্দর সংস্কারের বিরোধিতা করছেন না। তার বক্তব্য—উন্নয়ন ও কৌশলগত সিদ্ধান্ত যেন নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে নেওয়া হয়, কারণ দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে এসবের প্রভাব বহু দশক ধরে পড়বে।

তিনি বলেন, ‘একটি জাতির ভবিষ্যৎ সেই সরকার দ্বারা নির্ধারিত হওয়া উচিত নয়, যাকে জাতি নির্বাচিত করেনি। কৌশলগত ধৈর্য দুর্বলতা নয়। জনপরামর্শ বাধা নয়। গণতান্ত্রিক বৈধতা বিলম্ব নয়।’

পোস্টের শেষে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কখনোই নিষ্ক্রিয় নয়। তাদের দাবি—তাদের মত প্রকাশ, অংশগ্রহণ এবং সম্মানের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

আগামী ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনকে তিনি জনগণের মত প্রকাশের গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, ‘এই দেশের ভবিষ্যৎ ঠিক করবে দেশের মানুষরাই, যারা “সবার আগে বাংলাদেশ” নীতিতে বিশ্বাস করে।’

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত