মানিকগঞ্জে বাউলশিল্পী আবুল সরকারকে গ্রেপ্তার ও তার ভক্ত-অনুরাগীদের ওপর হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশের ৭৫ বিশিষ্ট নাগরিক। তারা বলেছেন, শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে হামলা এবং পুলিশি ব্যর্থতা নাগরিকদের নিরাপত্তার ওপর বড় ধরনের আঘাত। হামলাকারীদের ‘মব’ বলে দায়মুক্তি দেওয়ার সুযোগ নেই উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, এই চিহ্নিত গোষ্ঠীকে ছাড় দিলে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দেবে। অবিলম্বে বাউল আবুল সরকারের মুক্তি এবং মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপারকে (এসপি) প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
গত ২৩ নভেম্বর (সোমবার) এক যৌথ বিবৃতিতে অর্থনীতিবিদ, আইনজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্টসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৭৫ নাগরিক প্রতিবাদ জানান।
বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে দাঁড়াতে যাওয়া বাউল ভক্তদের ওপর একটি গোষ্ঠী নৃশংস হামলা চালিয়েছে এবং নাগরিকদের রক্তাক্ত করেছে। অথচ স্থানীয় পুলিশ তাদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ‘ধর্ম অবমাননা’র অভিযোগ তুলে ‘তৌহিদি জনতা’ নামধারী একটি গোষ্ঠী অনেক ক্ষেত্রেই আইন নিজেদের হাতে তুলে নিচ্ছে, যা অত্যন্ত শঙ্কার বিষয়।’ মানিকগঞ্জের ঘটনাটি কেবল একদল বাউলের ওপর হামলা নয়, বরং এটি সমগ্র নাগরিক নিরাপত্তার ওপর আঘাত। হামলাকারীদের ছবি ও পরিচয় গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পরও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়াকে দায়মুক্তি হিসেবে অভিহিত করেন বিশিষ্টজনেরা।
বিবৃতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হয়, সরকার গঠনের সময় বাক্স্বাধীনতা রক্ষা ও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাউলদের ওপর হামলা, উসকানিমূলক মিছিল, প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি এবং আবুল সরকারের মুক্তি না পাওয়ার ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে সরকার সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হচ্ছে।
নাগরিক বিবৃতিতে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—মানিকগঞ্জসহ সারা দেশে বাউলশিল্পী ও তাদের আয়োজনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, মানিকগঞ্জের হামলার ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করা এবং দায়িত্বে অবহেলার কারণে সেখানকার পুলিশ সুপারকে (এসপি) প্রত্যাহার করা।
এছাড়া ধর্মীয় অনুভূতির নামে উসকানি ও হামলা বন্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। ধর্ম অবমাননার অভিযোগে আটক বাউলশিল্পী আবুল সরকারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যথাযথভাবে তদন্ত করে তার দ্রুত মুক্তি এবং এ ধরনের মামলার অপব্যবহার বন্ধের জোর দাবি জানানো হয়।
বাউল, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিকসহ সব নাগরিকের মতপ্রকাশের অধিকার রক্ষার প্রমাণ হিসেবে সরকারকে অবিলম্বে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন:
অর্থনীতিবিদ জিয়া হাসান, দ্য বাংলাদেশ ডায়ালগের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রুবাইয়াত মান্নান রাফি, শিক্ষক ও নাট্যকর্মী সামিনা লুৎফা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ মোহাম্মদ শাহান, স্থপতি মারজিয়া মিথিলা, শিক্ষক ও গবেষক আহমেদ আবিদ, অ্যাক্টিভিস্ট এমডি রাশেদ, লেখক সুবাইল বিন আলম, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সারা হোসেন, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাদিক মাহবুব ইসলাম, শিক্ষক ও লেখক ফাহমিদুল হক, অর্থনীতিবিদ ইসলামুল হক, গবেষক মীর হুযাইফা আল মামদূহ, গণমাধ্যমকর্মী ও উন্নয়নকর্মী তাজওয়ার মাহমিদ, জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির ডক্টরাল ফেলো আসিফ বিন আলী, ব্রেইনের এক্সিকিউটিভ মেম্বার আসিফ ইকবাল, ডিয়াস্পোরা এলায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি’র শামারুহ মির্জা, অর্থনীতি গবেষক ও অ্যাক্টিভিস্ট হুমায়ুন কবির, সাংবাদিক ও সংস্কৃতি কর্মী মৌমিতা জান্নাত, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট অনুপম সৈকত শান্ত, কৌশিক আহমেদ, সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট রঞ্জন কুমার দে, লেখক ও সংগঠক নাহিদ হাসান, সাংবাদিকতার শিক্ষক আল রাজী, শিক্ষক মানস চৌধুরী, উন্নয়ন কর্মী কামরুজ্জামান রিপন, লেখক ও শিক্ষক মো. আদনান আরিফ সালিম, লেখক ও সাংবাদিক হাসনাত শোয়েব, গবেষক ও শিল্পী জাকারিয়া সুরেশ্বরী, শিল্পী শহীদুল ইসলাম শিশির, গবেষক ও নাট্যকর্মী আশিক ইসতিয়াক, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি পলিসি অ্যান্ড অ্যানালাইসিস সেন্টারের গবেষক ও লেখক ড. মোবাশ্বার হাসান, ঔপন্যাসিক ও লেখক আশীফ এন্তাজ রবি, স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা সজীব তানভীর, নৃবিজ্ঞান গবেষক পুন্নি কবীর, টাইমস অব বাংলাদেশের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের, অ্যাক্টিভিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুরশীদ সেলিন, কবি ও অধিকার কর্মী ফেরদৌস আরা রুমী, ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট ইশরাত জাহান প্রীতিলতা, লেখক ও সাংবাদিক সাবিদিন ইব্রাহিম, কবি ও সাংবাদিক রহমান মুফিজ, গবেষক রাইসুল ইসলাম আকাশ, পলিসি রিসার্চ অ্যানালিস্ট হাসনাত কালাম সুহান, শিক্ষক ও অনুবাদক টিনা নন্দী, নৃবিজ্ঞানী ও চলচ্চিত্রকার রাফসান আহমেদ, আইনজীবী মাসুদ রানা, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট রাহাত মুস্তাফিজ, ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার ও সত্য নিউজের নির্বাহী সম্পাদক মো. অহিদুজ্জামান, গণিতবিদ ও অ্যাক্টিভিস্ট নাফিসা রায়হানা এবং অস্ট্রেলিয়ার সিডনির রাজনৈতিক কর্মী, সরকারি আমলা সৈয়দ সামনান,স্থপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আমিনুল ইসলাম ইমন, সাংবাদিক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আলমগীর স্বপন, প্রবাসী চিকিৎসক গবেষক শাহেদ ইকবাল, শিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ, প্রাবন্ধিক ও রাজনীতিক ফিরোজ আহমেদ, সাংবাদিক ও ফ্যাক্ট চেকার কদরুদ্দিন শিশির, সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাইফুল খোন্দকার, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সালাহউদ্দিন ভূঁইয়া, অর্থনীতিবিদ গালিব ইবনে আনোয়ারুল আজীম, সাংবাদিক মুক্তাদির রশীদ, যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের পিএইচডি গবেষক মো. ইমরান হোসেন ভূঁইয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ের গবেষক আলতাফ পারভেজ, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ইমতিয়াজ মির্জা, লেখক ও রাজনৈতিক কর্মী তুহিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মনোবিজ্ঞানী কামাল চৌধুরী, আইনজীবী ও ওয়াশিংটন ডিসির আমেরিকান ইউনিভার্সিটির খণ্ডকালীন অধ্যাপক এহতেশামুল হক, সিডনি পলিসি অ্যান্ড অ্যানালাইসিস সেন্টার (অস্ট্রেলিয়া), অ্যাক্টিভিস্ট রাসেল হিমাদ্রী, পলিসি ওয়াচ বিডির ফাউন্ডিং মেম্বার রন্টি চৌধুরী, সোশ্যাল ইনোভেশন স্পেশালিস্ট আশরাফুল হাসান, রাজনৈতিক কর্মী ফারুক সাদিক, কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক রেসাত আমিন প্রিয়া, ব্রেইনের নির্বাহী পরিচালক সফিকুর রহমান, কাউন্টারপয়েন্টের নির্বাহী সম্পাদক জ্যোতি রহমান এবং কবি ও সাংবাদিক রাফসান গালিব।