leadT1ad

ভূমিকম্পে করণীয়– ড্রপ, কভার ও হোল্ড অন

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক

ভূমিকম্পে করণীয় বিষয়ে স্ট্রিম গ্রাফিক

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আজ শুক্রবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে মাত্র কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী এ ভূমিকম্প দেশে স্মরণকালের সবচেয়ে শক্তিশালী বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর মাধবদী। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস এবং ইএমএসসির মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো অবশ্য ৫ দশমিক ৫ থেকে ৫ দশমিক ৭ মাত্রা উল্লেখ করেছে। যদিও ভূ-পৃষ্ঠের অভিজ্ঞতা ছিল একই : আকস্মিক ঝাঁকুনি, ভবন দুলে ওঠা এবং ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে আতঙ্ক।

নরসিংদী শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে এবং ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে উৎপন্ন এ ভূমিকম্পকে একটি বড় বিপর্যয় থেকে ‘অল্পের জন্য রক্ষা’ বলে মনে করা হচ্ছে।

এ ধরনের মুহূর্তে আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি বলে দৌড়াতে, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৌড়ানো অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। এমন সময়ে ঠিক কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে, তা জানা থাকলে আপনার জীবন বাঁচতে পারে। সবচেয়ে কার্যকর, গবেষণা-সমর্থিত কৌশলটি বেশ সহজ–ড্রপ (বসা বা শোয়া), কভার (ঢাকা) ও হোল্ড অন (ধরা)।

এই কৌশলটি কী?

ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) এবং আমেরিকান রেড ক্রসের মতে, ভূমিকম্পের সময় বেশিরভাগ মানুষ আঘাত পায় উপর থেকে পড়া জিনিসপত্র (কাচ, বইয়ের তাক, ছোট বস্তু) বা দৌড়ানোর সময় পড়ে গিয়ে। নিজেকে রক্ষা করতে, তাৎক্ষণিকভাবে এই তিনটি ধাপ অনুসরণ করুন :

বসা বা শোয়া : অপেক্ষা করবেন না। মাটি কাঁপতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটু ও হাতের উপর ভর করে বসে পড়ুন বা শুয়ে পড়ুন। এই অবস্থান আপনাকে ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করবে। আবার হামাগুড়ি দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে যেতে পারবেন।

ঢাকা : হাত দিয়ে মাথা ও ঘাড় ঢেকে ফেলুন। যদি আশেপাশে একটি মজবুত টেবিল বা ডেস্ক থাকে, তবে সেটির নিচে হামাগুড়ি দিয়ে চলে যান। যদি কোনো আশ্রয় না থাকে, তবে ভেতরের দেয়ালের কাছে যান। এ সময় জানালার কাছে থাকা যাবে না। আর শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো রক্ষা করার জন্য হাঁটু গেড়ে বসে সামনের দিকে ঝুঁকুন। এটি আপনাকে উপর থেকে পড়া ধ্বংসাবশেষ, কাঁচ ভাঙা ও আলগা প্লাস্টার থেকে রক্ষা করবে।

ধরা : যেখানে আশ্রয় নেবেন আশপাশে ভারী কিছু পেলে এক হাত দিয়ে শক্তভাবে ধরে থাকুন। কারণ কম্পন বেশি শক্তিশালী হলে ভারী আসবাবপত্রও সরে যায়। ধরে থাকলে আপনার ‘ঢাল’ আপনার উপরেই থাকবে। যদি কোনো আশ্রয় না থাকে, তবে দুই হাত দিয়ে মাথা ও ঘাড় ধরে থাকুন।

আপৎকালীন ব্যাগ : বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র

কম্পন বন্ধ হওয়ার পর, বিশেষ করে কাঠামোগত ক্ষতি বা আগুনের ঝুঁকি থাকলে আপনাকে ভবন থেকে বেরিয়ে যেতে হতে পারে। এই সময়ে একটি ‘গো ব্যাগ’ (আপৎকালীন ব্যাগ) জীবন রক্ষাকারী হতে পারে। জরুরি জিনিসপত্র দিয়ে এটি আগেই গুছিয়ে রাখতে হবে এবং দরজার কাছে বা সহজে পাওয়া যায় এমন স্থানে রাখতে হবে।

একটি আদর্শ গো ব্যাগে যা থাকা উচিত :

পানি : প্রতিজনের জন্য কমপক্ষে এক লিটার।

দীর্ঘক্ষণ শক্তি জোগানো খাবার : শুকনা খাবার, যেমন : বিস্কুট, এনার্জি বার, বা টিনের খাবার।

প্রাথমিক চিকিৎসা কিট : ব্যান্ডেজ, অ্যান্টিসেপটিক, ব্যথানাশক এবং প্রেসক্রাইবড ওষুধ।

আলো: অতিরিক্ত ব্যাটারিসহ একটি উন্নতমানের টর্চলাইট। বড় ভূমিকম্পের সময় প্রায়শ বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়। আবার এটা জানার কোনো উপায় নেই ভূমিকম্প দিনে না রাতে আঘাত হানবে।

পাওয়ার ব্যাংক : জরুরি কল ও খবর জানার জন্য মোবাইল ফোন চালু রাখা জরুরি। মোবাইলের চার্জ ঠিক রাখতে পাওয়ার ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ।

বাঁশি : আপনি যদি আটকে পড়েন তবে উদ্ধারকারীদের সংকেত দেওয়ার জন্য অপরিহার্য।

মাস্ক : ধ্বংসাবশেষ থেকে দূষিত বাতাস বা ধুলো ফিল্টার করার জন্য ভালোমানের মাস্ক বা সাধারণ কাপড়।

গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র : এনআইডি কার্ড, পাসপোর্ট, বিমা কাগজপত্র এবং জরুরি যোগাযোগের নম্বরের ফটোকপি একটি জলরোধী প্লাস্টিকের ব্যাগে সিল করে রাখুন।

নগদ অর্থ : পাওয়ার গ্রিড ব্যর্থ হলে এটিএম বুথ কাজ নাও করতে পারে। এজন্য কিছু অর্থ হাতে রাখুন।

কম্পনের সময় আপনি কোথায় আছেন তা গুরুত্বপূর্ণ

যদি আপনি ভবনের ভেতরে থাকেন এবং বাইরে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়, তবে ভেতরেই থাকুন। কম্পনের সময় বাইরে বের হলেও দৌড়াবেন না। এ সময় ভবনের বাইরের অংশ কাচ ও ইটের আঘাতে আহত হতে পারেন। যেকোনো মূল্যে লিফট এড়িয়ে চলুন।

যদি আপনি বাইরে থাকেন, তবে দ্রুত ভবন, গাছ, সড়কবাতি ও বৈদ্যুতিক তার থেকে দূরে একটি খোলা জায়গায় চলে যান। মাটিতে বসে পড়ুন এবং আপনার মাথা ঢেকে রাখুন।

যদি আপনি কোনো গাড়িতে থাকেন, তবে ওভারপাস এবং বিদ্যুতের লাইন থেকে দূরে সড়কের পাশে গাড়ি থামান। হ্যান্ডব্রেক ব্যবহার করুন এবং গাড়ির ভেতরেই থাকুন। গাড়ির ধাতব কাঠামো আপনাকে ধ্বংসাবশেষ থেকে সুরক্ষা দেবে।

ঝাঁকুনি বন্ধ হওয়ার পর কী করবেন

কম্পন শেষ হলেই বিপদ শেষ হয় না। ঝাঁকুনি বন্ধ হওয়ার পর অন্য কোনো বিপদ আছে কি না পরীক্ষা করুন। গ্যাস লিকেজ, রাসায়নিক বিকিরণ বা ক্ষতিগ্রস্ত বৈদ্যুতিক তারের সন্ধান করুন। যদি গ্যাস লিকেজের সন্দেহ করেন তবে একটি জানালা খুলে সঙ্গে সঙ্গে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। দিয়াশলাই ব্যবহার করবেন না বা বৈদ্যুতিক সুইচ চালু করবেন না। এ সময় স্ফুলিঙ্গ বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।

আফটারশকের জন্য প্রস্তুত থাকুন। সেক্ষেত্রে আবারও ‘ড্রপ, কভার ও হোল্ড অন’র জন্য প্রস্তুত থাকুন।

সবশেষে সার্বিক বিষয় জানতে হবে। আপডেট তথ্যের জন্য সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটগুলোতে যান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাচাই হয়নি এমন গুজব ছড়ানো এড়িয়ে চলুন, কারণ এমন সময়ে আতঙ্কও ভূমিকম্পের মতোই মারাত্মক হতে পারে।

আজকের ভূমিকম্প একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করছে। টেকটোনিক প্লেটগুলো কখন সরবে তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব নয়। তবে একটি ‘গো ব্যাগ’ প্রস্তুত রাখা এবং ‘ড্রপ, কভার ও হোল্ড অন’ কৌশল আয়ত্তে থাকা এটুকু নিশ্চিত করে আবার ভূমিকম্প হলে আপনি প্রস্তুত থাকবেন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত