leadT1ad

শক্ত বার্তা উপদেষ্টা খলিলুরের, দিল্লির নিরাপত্তা সম্মেলনে কী পেল ঢাকা

স্ট্রিম গ্রাফিক

ভারতের নয়াদিল্লিতে পাঁচ দেশীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সম্মেলন ‘কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ (সিএসসি)’ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত সপ্তম সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান।

সম্মেলনে দেওয়া বক্তৃতায় খলিলুর রহমান সার্বভৌমত্বের ওপর বহিরাগতদের হস্তক্ষেপ বিষয়ে কঠোর বার্তা দেন। আঞ্চলিক নিরাপত্তার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, জাতীয় সার্বভৌমত্ব, সমঅধিকার, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান– এসব নীতি বাংলাদেশের কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিবর্তিত নিরাপত্তা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এবারের সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকারের পতন ও পালিয়ে শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান ঘিরে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। এরই মধ্যে ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় সম্মেলনকে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।

বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মালদ্বীপ, মরিশাস এবং শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। পর্যবেক্ষক দেশ হিসেবে সিশেলস ও অতিথি হিসেবে মালয়েশিয়া সম্মেলনে অংশ নেন। ভারতীয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের আমন্ত্রণে সম্মেলনে যোগ দিতে ১৮ নভেম্বর নয়াদিল্লি যান খলিলুর রহমান। পরের দিন ১৯ নভেম্বর অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা করেন দুজন।

সিএসসি কী, কেন গুরুত্বপূর্ণ

সিএসসি হলো ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যৌথ নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে গঠিত একটি আঞ্চলিক ফোরাম। এটি ২০২০ সালে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের উদ্যোগে শুরু হয়। ২০২২ সালে মরিশাস ও ২০২৪ সালে বাংলাদেশ সদস্য হিসেবে যোগ দেয়। সংস্থাটির কার্যালয় শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে। সিএসসি উন্মুক্ত আঞ্চলিকতা, পারস্পরিক আস্থা, সম্মান এবং সুবিধা ভাগাভাগির নীতিতে পরিচালিত হয়। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর যৌথভাবে মোকাবিলা করা আন্তঃসীমান্ত নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলো মূল অগ্রাধিকার।

সংস্থাটির কাঠামো পাঁচটি মূল নিরাপত্তা স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এগুলো হলো–

সমুদ্র নিরাপত্তা:

জলদস্যুতা, অবৈধ মাছধরা ও সামুদ্রিক সন্ত্রাস মোকাবিলা।

সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রপন্থা প্রতিরোধ:

গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ জোরদার।

মানবপাচার ও আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন:

মাদক ও মানবপাচারসহ সংগঠিত অপরাধ দমন।

সাইবার নিরাপত্তা ও গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি সুরক্ষা:

ডিজিটাল অবকাঠামোকে সুরক্ষিত রাখা।

মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা:

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবিক সংকটে সমন্বিত প্রতিক্রিয়া।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যে, সিএসসির লক্ষ্য ‘সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তাবিষয়ক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদার করা’। ২০১১ সালের অনানুষ্ঠানিক আলোচনা থেকে এটি ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ কাঠামোবদ্ধ সংস্থায় রূপ নেয়। ভারতের ‘প্রতিবেশ প্রথম’ নীতির সঙ্গেও সিএসসির কার্যক্রম সামঞ্জস্যপূর্ণ।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, এটি ভারত মহাসাগরে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় নয়াদিল্লির কৌশলগত উদ্যোগের অংশ। সিএসসি ভারতকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে তার ভূমিকা শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশেনের বিশেষজ্ঞ ডেরেক গ্রসম্যান সিএসসিকে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, সিএসসি ভারতের ‘পছন্দের নিরাপত্তা অংশীদারত্ব’ গড়ে তোলায় বিশেষ ভূমিকা রাখছে।

একই ফাউন্ডেশনের ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক হর্ষ ভি পন্ত সিএসসিকে ‘হাইব্রিড হুমকির বিরুদ্ধে বাস্তবধর্মী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তাঁর মতে, এটি চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সরাসরি সংঘাতে না গিয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। এর লক্ষ্য হলো ভারত মহাসাগর অঞ্চলকে ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত’ সামুদ্রিক পরিসর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।

দিল্লিতে সপ্তম এনএসএ বৈঠক

২০ নভেম্বর নয়াদিল্লির সুষমা স্বরাজ ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে ২০২৩ সালে মরিশাসে হওয়া ষষ্ঠ বৈঠকের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। পাঁচটি নিরাপত্তা স্তম্ভে সহযোগিতা জোরদারের বিষয়েও সদস্যরা আলোচনা করেন। অজিত দোভাল উদ্বোধনী বক্তব্যে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে যৌথ ঐতিহ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ক্ষেত্র হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতি ভারতের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। এই বৈঠকের বড় সিদ্ধান্ত ছিল– সিশেলেসের পূর্ণ সদস্যপদ লাভ, যা সিএসসিকে আরও বিস্তৃত পরিসরে নিয়ে যায়।

বৈঠকে খলিলুর রহমান ও অজিত দোভাল দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় অংশ নেন। সেখানে সিএসসির কার্যক্রম, সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা এবং সংখ্যালঘুদের অধিকারসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। খলিলুর রহমান দোভালকে ঢাকায় সফরের আমন্ত্রণও জানান।

সম্মেলনে যা বললেন খলিলুর রহমান

সম্মেলনে খলিলুর রহমান আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি সার্বভৌমত্ব ও আন্তর্জাতিক আইনের নীতিকে সামনে রেখে বলেন, জাতীয় সার্বভৌমত্ব, সমঅধিকার, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান– এসব নীতি বাংলাদেশের কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। তিনি উল্লেখ করেন যে জাতিসংঘ সনদের নীতিগুলোও বাংলাদেশের জন্য মৌলিক ভিত্তি।

খলিলুর রহমান ভারত মহাসাগর অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, বঙ্গোপসাগর-সংলগ্ন রাষ্ট্র হিসেবে এই অঞ্চলের স্থিতি ও সমৃদ্ধি সবার পারস্পরিক স্বার্থে জরুরি। তিনি জানান, বৈশ্বিক জিডিপি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং সামগ্রিক কৌশলগত প্রভাব—সব ক্ষেত্রেই ভারত মহাসাগর এলাকার ভূমিকা ক্রমেই বাড়ছে এবং তা আমাদের সম্মিলিত চিন্তা ও আকাঙ্ক্ষাকে প্রভাবিত করছে।

তিনি সিএসসির বিভিন্ন স্তম্ভে বাংলাদেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তাঁর ভাষায়, বাংলাদেশ তার যথাযথ ভূমিকা রাখতে অটল। বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে মিলে দেশটি জলদস্যুতা, অবৈধ মৎস্য আহরণ, সামুদ্রিক সন্ত্রাসবাদ এবং অন্যান্য অপরাধ দমনে কাজ করে যাচ্ছে।

সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ বিষয়ে খলিলুর রহমান বলেন, অতীতে বাংলাদেশ বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদের কিছু কঠিন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে। তাই সকল ধরনের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ শূন্য-সহনশীলতার নীতি অনুসরণ করে। তিনি ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে সাইবার নিরাপত্তার গুরুত্বও তুলে ধরেন। তাঁর বক্তব্যে ছিল– ডিজিটাল ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা বাংলাদেশের অগ্রাধিকার। কারণ বাংলাদেশ ভুয়া তথ্য ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। তাই সাইবারস্পেস, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রকে নিরাপদ রাখতে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যাতে দেশের ভেতর থেকে কোনো ক্ষতিকর কার্যক্রম শুরু হয়ে আঞ্চলিক বা বৈশ্বিক সম্প্রদায় আক্রান্ত না হয়।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ একটি স্থিতিশীল, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ অঞ্চল গঠনে অন্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে হাতে হাত রেখে কাজ করতে প্রস্তুত। পাশাপাশি তিনি সিএসসিকে একটি উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আঞ্চলিক বহুপাক্ষিক সংস্থায় রূপান্তরের আহ্বান জানান, যা ‘ওপেন রিজিওনালিজম’-এর নীতিতে পরিচালিত হবে।

কী বার্তা দিতে চেয়েছেন খলিলুর রহমান

খলিলুর রহমানের বক্তব্যে সার্বভৌম স্বাধীনতার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ও যৌথ নিরাপত্তা সহযোগিতার প্রতি আগ্রহ– এই দুই বিষয়ই বিশেষভাবে প্রকাশ পায়। তিনি স্পষ্ট করে জানান, বাংলাদেশ কোনো ধরনের বহিরাগত হস্তক্ষেপ বরদাশত করতে চায় না। তাঁর ভাষায়, কোনো বহিরাগত বা অভ্যন্তরীণ কারণ যেন কোনো রাষ্ট্র বা সম্প্রদায়ের জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি না করে– এ বিষয়ে বাংলাদেশ সতর্ক। তাই তিনি পারস্পরিক আস্থা, সম্মান, স্বার্থের মিল এবং সুফল ভাগাভাগির ভিত্তিতে সমস্যার সমাধানে যৌথ অঙ্গীকারের কথা বলেন।

বিশ্লেষকদের মতে, খলিলুর রহমানের বক্তব্যে বাংলাদেশের নতুন পররাষ্ট্র অভিমুখের ইঙ্গিত রয়েছে। ২০২৪-পরবর্তী পর্যায়ে বাংলাদেশ যে বহুমাত্রিক সম্পর্ক গড়ে তুলছে– চীন, পাকিস্তানসহ অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে, তার প্রতিফলনও এতে দেখা যায়। সন্ত্রাসবাদবিরোধী জোরালো অবস্থান এবং সাইবার নিরাপত্তায় উন্নত ভূমিকার ওপর জোর দেওয়ার মাধ্যমে তিনি আঞ্চলিক সহযোগিতায় বাংলাদেশের সক্রিয় উপস্থিতি তুলে ধরেছেন।

এ ছাড়া দোভালকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানানোকে অনেকেই ভারতের সঙ্গে আলোচনার জন্য একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। সার্বিকভাবে, খলিলুরের বক্তব্য বাংলাদেশকে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম কিন্তু সহযোগিতাপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরে। তিনি সিএসসিকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর একটি প্ল্যাটফর্মে পরিণত করার আহ্বান জানান, যাতে পরিবর্তিত নিরাপত্তা পরিবেশে যৌথভাবে উদীয়মান হুমকি মোকাবিলা করা যায়।

অজিত দোভাল কী চান

অজিত দোভাল ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক কূটনীতি তদারকি করেন। বিশেষ করে অস্থিতিশীলতার মুখে থাকা প্রতিবেশী দেশগুলোর ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সিএসসি বৈঠকগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ ইস্যুতে উত্তেজনার মধ্যেও তিনি খলিলুর রহমানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, যাতে সংলাপ বজায় থাকে এবং সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতার মতো দ্বিপাক্ষিক ইস্যুতে কাজ করা যায়।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত বাংলাদেশকে সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকির উৎস হিসেবে দেখছে। ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধারণা তৈরি হয়েছে চীন-ভারত প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের ভূমিকা নিয়ে। তাঁদের মতে, হাসিনার পতনের পর পররাষ্ট্রনীতিতে ভারসাম্য আনতে ঢাকার সিদ্ধান্ত দেশটিকে নতুন কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্র বানাতে পারে। বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত ভারসাম্য বদলে গেলে বাংলাদেশ মহাশক্তিদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে। চীন-ভারতের মধ্যকার প্রক্সি প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র হয়ে যেতে পারে। ভারতের জন্য বাংলাদেশ পাকিস্তান ও চীনের পাশাপাশি ‘তৃতীয় ফ্রন্ট’ তৈরি করতে পারে।

তবে এই পরিপ্রেক্ষিতে চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারত কিছুটা সুর বদল করে। অজিত দোভাল গত ৩ নভেম্বর তার এক বক্তব্যে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপালসহ সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে সরকার পরিবর্তনের জন্য পুরোনো শাসনব্যস্থাকেই দায়ী করেন। সরকারগুলোর ব্যর্থতার মূল কারণ হিসেবে দোভাল স্বৈরাচার, অবিচার ও বৈষম্যকে চিহ্নিত করেন।

এর আগে চীন ও পাকিস্তানের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে কৌশলগত প্রভাব বজায় রাখার জন্য নয়াদিল্লি এই পতিত সরকারগুলোকে সমর্থন করে আসছিল। বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে ভারত দৃঢ়ভাবে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে। ফলে দোভালের ওই বক্তব্যকে ভারতীয় কূটনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হয়।

দোভালের ওই মন্তব্য ছিল প্রথমবারের মতো একজন উচ্চপদস্থ ভারতীয় কর্মকর্তার প্রতিবেশী দেশগুলোর পতিত সরকারগুলোর ওপর দায় চাপানোর প্রকাশ্য ইঙ্গিত, যা ভারতের পুরোনো নীতি থেকে সরে আসার বার্তা দেয়। এর মধ্য দিয়ে ভারত হয়তো পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন এবং নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ইঙ্গিত দেয়। এ থেকে বোঝা যায় যে নয়াদিল্লি এখন আঞ্চলিক অস্থিরতায় ক্লান্ত এবং চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় নতুন কৌশল খুঁজছে। আর তারপরই আসলো এই সম্মেলন এবং বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে তার আমন্ত্রণ।

বাংলাদেশ কীভাবে এগোতে পারে

বাংলাদেশকে ‘স্ট্র্যাটেজিক হেজিং’– এর পথে এগোতে হবে। অর্থাৎ দুই পরাশক্তির প্রভাব সামলাতে ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতি বজায় রাখতে হবে। একই সঙ্গে প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে হবে। স্প্রিংগারের বিশ্লেষকরা বলেছেন, বহুপক্ষীয় ফোরামে সক্রিয় থাকা এবং আঞ্চলিক শান্তিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা কার্যকর প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করতে পারে।

বিডি মিলিটারি ডটকমের মতে, বাংলাদেশের লক্ষ্য হওয়া উচিত প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ২ শতাংশে নেওয়া, আধুনিক বাহিনী তৈরি করা এবং একটি ন্যাশনাল রিজার্ভ ফোর্স গঠন করা। ‘জাতীয় টিকে থাকার যুক্তিতেই’ ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিরক্ষা কাঠামো জরুরি।

বর্ডার লেন্স পরামর্শ দিয়েছে, বাংলাদেশকে ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কের পাশাপাশি নিরাপত্তা সহযোগিতাও রাখতে হবে এবং সাংস্কৃতিক কূটনীতিও চালাতে হবে। এতে পাকিস্তান বা চীনের ওপর অতি-নির্ভরতাও কমবে।

কেউ কেউ ‘কৌশলগত বাস্তববাদ’-এর পরামর্শ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জোট পুনর্গঠন, আঞ্চলিক সমন্বয় এবং প্রয়োজন হলে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চীন-পাকিস্তানের সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশকে ‘সতর্কভাবে এগোতে হবে’ এবং ভারত-চীন প্রতিযোগিতার মাঝামাঝি অবস্থান বজায় রেখে কূটনীতিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এর মাধ্যমেই জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত করা সম্ভব হবে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত