leadT1ad

জাতীয় নিরাপত্তায় সশস্ত্র বাহিনীর কৌশলগত ভূমিকা কী

সশস্ত্র বাহিনী। ছবি: সংগৃহীত

সামরিক বাহিনী একটি দেশের জাতীয় নিরাপত্তায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সামরিক বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব হলো জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা করা। তারা দেশের সীমানা রক্ষা করে এবং সম্ভাব্য হুমকি প্রতিহত করে। একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনী শত্রুপক্ষকে আক্রমণ বা আগ্রাসন থেকে বিরত রাখে। ফলে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষিত থাকে।

বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী—সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং কোস্ট গার্ড—রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, সীমানা সুরক্ষা এবং অপ্রচলিত নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং আঞ্চলিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে এই ভূমিকাটি আরও বিস্তৃত হয়েছে।

জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল এবং ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’-এর দিকনির্দেশনায় বাহিনীটি আধুনিকায়নের পথে এগোচ্ছে। ২০০৯ সালে শুরু হয়ে ২০১৭ সালে সংশোধিত এই পরিকল্পনা সশস্ত্র বাহিনীকে একটি বহুমাত্রিক সক্ষমতা সম্পন্ন শক্তিতে রূপান্তর করছে, যা প্রতিরোধমূলক ভূমিকা পালন করতে পারে এবং হাইব্রিড যুদ্ধের চাহিদা মোকাবিলা করতে সক্ষম। ২০২৫ সাল পর্যন্ত আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে উন্নত অস্ত্র সংগ্রহ, নতুন ইউনিট গঠন এবং দেশীয় উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০২৬-২০৪০ সময়কালের জন্য প্রস্তাবিত ৭৫ বিলিয়ন ডলারের কাঠামোগত পরিবর্তনের পরিকল্পনায় বিদ্যমান ঘাটতি সমাধানের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

এই রূপান্তর একটি জটিল ভূরাজনৈতিক পরিবেশে ঘটছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সশস্ত্র বাহিনীকে আরও বিস্তৃত কৌশলগত ভূমিকার দিকে অগ্রসর হতে দেখা যাচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুত পরিবর্তনশীল ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ কারণ। শেখ হাসিনা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ তার পূর্ববর্তী ভারত-নির্ভর অবস্থান থেকে সরে এসে চীন, পাকিস্তান এবং তুরস্কের সঙ্গে অংশীদারত্ব বৈচিত্র্যময় করতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র–চীন প্রতিযোগিতা, ভারত–চীন সীমান্ত উত্তেজনা এবং আঞ্চলিক শক্তিগুলোর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাও এই পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করেছে।

এই পুনর্গঠন বাংলাদেশের জন্য কৌশলগত স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের সুযোগ তৈরি করেছে। এভাবে গড়ে উঠছে একটি নতুন কৌশলগত মেরুকরণ, যা ‘চীন–পাকিস্তান–বাংলাদেশ ত্রিভুজ’-এর প্রাথমিক রূপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ পুনরায় সক্রিয় করতে চাইছে সার্ক, আর পাশাপাশি বিমসটেক এবং আসিয়ান-এর সঙ্গেও যোগাযোগ জোরদার করছে। এই বহুমাত্রিক সম্পৃক্ততা সশস্ত্র বাহিনীকে আঞ্চলিক ভারসাম্য রক্ষাকারী শক্তিতে পরিণত করতে পারে। এটি প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াবে, পাশাপাশি প্রতিরক্ষা কূটনীতির মাধ্যমে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা শক্তিশালী করবে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিবর্তন বাংলাদেশকে প্রান্তিক ভূমিকায় থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্থিতিশীল আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। চাথাম হাউসের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ভারসাম্য বজায় রাখা গেলে এই পরিবর্তন বাংলাদেশকে ‘একটি স্থিতিশীল আঞ্চলিক শক্তি’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে। তবে এর ঝুঁকিও রয়েছে। বিশেষ করে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জড়িয়ে পড়া বা চীনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা বাংলাদেশের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনকে দুর্বল করতে পারে।

সীমান্ত নিরাপত্তা: প্রতিবেশীদের প্রতিরোধ এবং হাইব্রিড হুমকি মোকাবিলা

সেনাবাহিনী এবং বিজিবির নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনী ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে ৪ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি সীমান্ত সুরক্ষায় নিয়োজিত। তারা অনুপ্রবেশ, চোরাচালান, মানবপাচার ও সন্ত্রাসী তৎপরতা মোকাবিলায় নিয়মিত টহল, গোয়েন্দা কার্যক্রম এবং যৌথ অভিযান পরিচালনা করে।

২০২৫ সালে সীমান্ত পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। মিয়ানমার সীমান্তে সহিংসতা বেড়েছে। আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে, অস্ত্র পাচার বাড়ছে, আর রোহিঙ্গা সংকটের কারণে এক মিলিয়নের বেশি শরণার্থীর উপস্থিতি পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলছে। ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার কারণ হিসেবে অবৈধ অভিবাসন, সীমান্তে বেড়াজাল নির্মাণ বিতর্ক, এবং বিভিন্ন ক্রস-বর্ডার অপরাধ উল্লেখযোগ্য। জলবায়ুজনিত বাস্তুচ্যুতি ও ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অস্থিরতা এসব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। ভূরাজনৈতিক মেরুকরণও ঝুঁকি বৃদ্ধি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভারতবিরোধী উত্তরণের কারণে পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানো—যেমন ২০২৪ পরবর্তী পরিবর্তনের পর পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত বিষয়ে নতুন সহযোগিতা গড়ে ওঠা।

ফোর্সেস গোল ২০৩০–এর আওতায় ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রস্তুতি ও আধুনিকায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। নতুন ডিভিশন গঠন, চীনা ভিটি-৫ ট্যাংক এবং ডব্লিউএস-২২ এমএলআরএস সংগ্রহ, তুরস্কের ওটকার কোবরা এপিসি ও টিআরজি-৩০০ এমএলআরএস অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রাশিয়ার বিটিআর-৮০ যানও যান্ত্রিক বাহিনীকে শক্তিশালী করেছে। অন্তবর্তী সরকার সশস্ত্রবাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে চীন থেকে ২০টি পর্যন্ত চীনা নির্মিত জে-১০ যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনাও অনুমোদন দিয়েছে।

২০২৫ সালে অনুমোদিত বিশেষ প্রতিরক্ষা অর্থনৈতিক অঞ্চল দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করেছে। পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে বিএসএফ–বিজিবি পর্যালোচনা বৈঠকের মতো দ্বিপাক্ষিক কাঠামোও চলমান রয়েছে।

এছাড়া ২০২৫ সালের জুনে চীন–পাকিস্তান–বাংলাদেশ ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা এগিয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে নিয়মিত সামরিক সফরের চুক্তি এবং তুরস্কের সঙ্গে যৌথ মহড়া ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের কাঠামো সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

২০৩০–এর পর দেশীয় সক্ষমতা বাড়াতে ৭৫ বিলিয়ন ডলারের একটি আধুনিকায়ন পরিকল্পনা আলোচনায় আছে। এ উদ্যোগ বাহিনীকে ‘জননিরাপত্তার নির্ভরযোগ্য রক্ষক’ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। এতে জলবায়ু সহনশীলতা, যুব প্রশিক্ষণ এবং অভ্যন্তরীণ মেরুকরণ কমাতে সমন্বিত কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা অভিযোজনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। মেজর জেনারেল (অব.) মো. শহিদুল হক বলেছেন, ‘আরাকান আর্মির মতো নন-স্টেট অ্যাক্টরের সঙ্গে যোগাযোগের নীতি আমাদের প্রয়োজন। সার্বভৌমত্বকে অগ্রাধিকার দিয়ে মিয়ানমার সংকটকে জিও-স্ট্র্যাটেজিক দৃষ্টিতে সামলাতে হবে।’

নিরাপত্তা বিশ্লেষক শফকাত মুনির বলেছেন, বাংলাদেশকে ‘সমন্বিত ও অগ্রসরমান নিরাপত্তা এজেন্ডা’ নিতে হবে, যা সাইবার সিকিউরিটি এবং ক্লাইমেট সিকিউরিটির মতো নতুন হুমকির মোকাবিলায় সহায়ক হবে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহেদুল আনাম খান মনে করেন, ‘জনগণের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতে হলে অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত হুমকি সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হবে।’ মেজর জেনারেল (অব.) এ এন এম মুনিরুজ্জামান হাইব্রিড যুদ্ধ পরিস্থিতি সামলাতে ‘সমগ্র নিরাপত্তা খাত সংস্কারের’ আহ্বান জানিয়েছেন।

সামুদ্রিক সীমানা সুরক্ষা: প্রতিযোগিতামূলক জলসীমায় সমুদ্র অর্থনীতির নিরাপত্তা

নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইইজেড) সুরক্ষায় দায়িত্ব পালন করে। তারা দেশের সমুদ্রপথের বাণিজ্য ব্যবস্থাকে নিরাপদ রাখে, যা মোট বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ। পাশাপাশি জলদস্যুতা, অবৈধ মাছ ধরা এবং অন্যান্য অবৈধ কর্মকাণ্ড দমন করে সমুদ্র অর্থনীতিকে সহায়তা করে।

উদীয়মান চ্যালেঞ্জ এখন বহুমুখী। অবৈধ মৎস্য আহরণ, পরিবেশগত অবক্ষয়, জলদস্যুতার পুনরুত্থান এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা নিরাপত্তাকে জটিল করে তুলছে। মিয়ানমার সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বিদ্রোহী তৎপরতা কখনও কখনও সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়ে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূল ভাঙন বাড়ছে এবং উপকূলীয় অবকাঠামোর নিরাপত্তা দুর্বল হয়ে পড়ছে।

আন্তর্জাতিক মেরুকরণ পরিস্থিতিকে আরও সংবেদনশীল করে তুলছে। বাংলাদেশ চীন–পাকিস্তানের যৌথ মহড়া আমান২৫-এ অংশ নিয়ে ভারতনির্ভরতা থেকে কিছুটা দূরে নতুন কৌশলগত অবস্থান তৈরির চেষ্টা করছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় শক্তিগুলোর প্রতিযোগিতা বাংলাদেশের জন্য নতুন কৌশলগত চাপ তৈরি করছে। আন্তর্জাতিক অংশীদারত্বও বেড়েছে। মার্কিন নৌবাহিনীর সঙ্গে সিএআরএটি মহড়ায় বাংলাদেশ নিয়মিত অংশ নেয়।

২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রস্তুতি ও আধুনিকায়নের পরিকল্পনা ‘ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী’ গঠনে গুরুত্ব দিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে চীনা মিং-শ্রেণির সাবমেরিন, টাইপ ০৫৩ ফ্রিগেট এবং টাইপ ০৫৬ করভেট সংগ্রহ। তুরস্কের কাছ থেকে সম্ভাব্য ফ্রিগেট অধিগ্রহণের আলোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোস্ট গার্ড কাটার যুক্ত হয়েছে। আকাশ নজরদারির জন্য ডরনিয়ার এমপিএ যুক্ত করা হয়েছে। খুলনার জাহাজশালা সম্প্রসারিত হয়েছে, যেখানে অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল (ওপিভি) তৈরি হচ্ছে। বন্দর ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল, যদিও ২০২৫ সালে এর কিছু অংশ পুনর্বিবেচনা করা হয়।

চীনের সঙ্গে সামরিক প্রযুক্তি সহযোগিতা ২০২৫ সালের মার্চে আরও জোরদার হয়। পাকিস্তানের সঙ্গে সমুদ্র সংযোগ ও নৌ সহযোগিতাও বৃদ্ধি পায়। তুরস্কের ‘এশিয়া অ্যানিউ’ উদ্যোগ যৌথ প্রতিরক্ষা উৎপাদনের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে। আঞ্চলিক সহযোগিতার লক্ষ্য হলো সক্ষমতার ঘাটতি পূরণ এবং কার্যকর অংশীদারিত্ব তৈরি করা।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এ পদক্ষেপগুলো জরুরি। ইস্ট-ওয়েস্ট সেন্টারের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘কার্যকর সামুদ্রিক নিরাপত্তা নির্ভর করে অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা গড়ে তোলা ও শক্তিশালী বহিঃসহযোগিতার ওপর।’বিশ্লেষক মৌতুসী ইসলাম উল্লেখ করেছেন যে ‘উদীয়মান সামুদ্রিক নিরাপত্তা হুমকি’ মোকাবিলায় অভিযোজিত কৌশল প্রয়োজন। অধ্যাপক ড. রাশেদ উজ জামান বলেছেন, ‘এই অঞ্চলের সামুদ্রিক নিরাপত্তায় ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

সাইবার প্রতিরক্ষা: তথ্যযুদ্ধ ও ডিজিটাল অনুপ্রবেশ মোকাবিলা

সশস্ত্র বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সাইবার ইউনিটগুলো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোকে সুরক্ষা দেয়। এর মধ্যে বিদ্যুৎ গ্রিড, আর্থিক খাত এবং অন্যান্য ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা রয়েছে। তারা সাইবার হামলা, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য এবং বিভিন্ন ধরনের হাইব্রিড হুমকি মোকাবিলা করে থাকে। মেরুকৃত রাজনৈতিক পরিবেশে সশস্ত্র বাহিনী সাইবার প্রতিরক্ষায় নেতৃত্বমূলক ভূমিকা নিতে পারে। তারা রাষ্ট্র–সমর্থিত সাইবার হামলা এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য–অভিযান থেকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম।

২০২৫ সালে চ্যালেঞ্জের ধরন আরও জটিল হয়েছে। ডিজিটাল সেবার ওপর বাড়তি আক্রমণ দেখা দিচ্ছে। সাইবার হামলার প্রকৃতি আরও উন্নত ও সুসংগঠিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ জনবলের ঘাটতি পরিস্থিতিকে কঠিন করে তুলছে। দ্রুত ডিজিটালাইজেশন এবং আঞ্চলিক উত্তেজনার কারণে ভুয়া তথ্য ছড়ানো আরও বাড়ছে। ভূ-রাজনৈতিক মেরুকরণ বিদেশি রাষ্ট্র–সমর্থিত সাইবার অনুপ্রবেশের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

প্রস্তুতি ও আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে সাইবার সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি ২০২১–২০২৫ বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০২৫ সালে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন করা হয়। জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারাভিযান চালানো হচ্ছে। চীনের সঙ্গে সামরিক প্রযুক্তি চুক্তির মাধ্যমে সাইবার সরঞ্জামের সহযোগিতা বাড়ছে। পাকিস্তানের সঙ্গে নিরাপত্তা সংলাপ সক্রিয় রয়েছে। তুরস্কের সহযোগিতা কাঠামোতে সাইবার সক্ষমতার সম্ভাব্য অংশীদারিত্ব যুক্ত হয়েছে। আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্ম কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ যৌথ কর্মসূচির আহ্বান জানিয়েছে।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, ‘সাইবার নিরাপত্তা এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য মোকাবিলায় আরও শক্তিশালী যৌথ পদক্ষেপ প্রয়োজন।’ মেজর জেনারেল (অব.) এ. এন. এম. মুনীরুজ্জামান হাইব্রিড যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ‘সমন্বিত নিরাপত্তা খাত সংস্কার’ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন।

সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এস. এম. আব্দুল ওয়াদুদ ‘সাইবার আক্রমণের ক্রমবর্ধমান জটিলতা’ এবং ‘দক্ষ জনবল সংকট’কে গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি শক্তিশালী কৌশল গ্রহণের ওপর জোর দেন।

এই মেরুকৃত পরিবেশে সশস্ত্র বাহিনী কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন স্পষ্টভাবে জানান যে ঢাকা ‘কোনো ব্লকভিত্তিক বা বিরোধমূলক জোটে যোগদানের ইচ্ছা পোষণ করে না।’ বাংলাদেশ নন-অ্যালাইনমেন্টকেই বা জোট নিরপেক্ষতাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষকেরা মনে করেন, বাংলাদেশের চলমান কৌশলগত ভারসাম্য স্থাপন প্রচেষ্টা ‘দক্ষিণ এশিয়ায় বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাসের’ দিকে নিয়ে যেতে পারে। এ পরিস্থিতিতে সশস্ত্র বাহিনী ভারসাম্য রক্ষা করতে পারলে সামগ্রিক জাতীয় স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে সক্ষম হবে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত