leadT1ad

দেশে ৪১ শতাংশ আইসিইউ রোগীর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ৩৬
সংগৃহীত ছবি

দেশে অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর)। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) নতুন জাতীয় জরিপ বলছে, আইসিইউতে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৪১ শতাংশের শরীরে এমন জীবাণু পাওয়া গেছে, যেগুলোর বিরুদ্ধে কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই কার্যকর নয়।

আজ সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাজধানীর মহাখালীতে আইইডিসিআরের নতুন ভবনে এএমআর-বিষয়ক এই জাতীয় জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংস্থাটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন এবং প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন হাবিব।

জুলাই ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত এক বছরের এই কেস-ভিত্তিক নজরদারিতে ৯৬ হাজারের বেশি রোগীর নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়। পাঁচটি আইসিইউ থেকে সংগৃহীত নমুনায় ৭১ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক পরীক্ষা করে দেখা গেছে, অনেক ক্ষেত্রে কোনো অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালই কাজ করেনি।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, 'সাধারণ সর্দি–কাশি–জ্বর অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া ভালো হয়ে যায়। তাই জ্বর হলেই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া উচিত নয়।'

অধ্যাপক শিরিন আরও বলেন, 'অনেকে দুই-তিন দিন খেয়ে ওষুধ বন্ধ করে দেন, এটি অত্যন্ত ক্ষতিকর। যে কোনো অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স অবশ্যই শেষ করতে হবে।'

অধ্যাপক হাবিব বলেন, 'যথেচ্ছ এবং ভুলভাবে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ফলেই জীবাণুর প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ছে। হাসপাতাল পরিবেশে এএমআর এখন দ্রুত সংকটের দিকে যাচ্ছে।'

প্রতিবেদনে দেখা যায়, সব নমুনা থেকে মোট ১২৩টি ড্রাগ-বাগ কম্বিনেশন বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং সংবেদনশীলতা পরীক্ষার ক্ষেত্রে আগের বছরের প্রতিবেদনের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮টি বৃদ্ধি পেয়েছে, ৭৯টি কমেছে এবং ৬টি অপরিবর্তিত রয়েছে।

এই গবেষণায় আইসিইউতে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসায় ৫টি জীবাণুর ক্ষেত্রে ৭১টি অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৫টি অ্যান্টিবায়োটিকের সংবেদনশীলতা ৮০ শতাংশের ওপরে। একটির সংবেদনশীলতা ৬০ থেকে ৮০ শতাংশের মধ্যে। বাকিগুলোর সংবেদনশীলতা ৬০ শতাংশের নিচে।

আইসিইউয়ে ৪১ শতাংশ পিডিআর, অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না

জরিপে দেখা যায়, সব মিলিয়ে ৭ শতাংশ রোগীর মধ্যে প্যান-ড্রাগ-রেজিস্ট্যান্ট (পিডিআর) জীবাণু পাওয়া গেছে। আইসিইউ রোগীদের ক্ষেত্রে এই হার ৪১ শতাংশ, অর্থাৎ প্রতি ১০ জন আইসিইউ রোগীর ৪ জনের সংক্রমণে কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই কার্যকর নয়।

এই গবেষণায় আইসিইউতে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসায় ৫টি জীবাণুর ক্ষেত্রে ৭১টি অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৫টি অ্যান্টিবায়োটিকের সংবেদনশীলতা ৮০ শতাংশের ওপরে। একটির সংবেদনশীলতা ৬০ থেকে ৮০ শতাংশের মধ্যে। বাকিগুলোর সংবেদনশীলতা ৬০ শতাংশের নিচে।

আইসিইউ রোগীদের ক্ষেত্রে পিডিআরের উপস্থিতি ৪১ শতাংশ। অর্থাৎ আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীদের ৪১ শতাংশের ক্ষেত্রে কোনো ওষুধ কাজ করছে না।

অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে ঢাকার অবস্থান শীর্ষে

জরিপ অনুযায়ী, দেশে ব্যবহৃত মোট অ্যান্টিবায়োটিকের ৫৭ শতাংশই ঢাকায় ব্যবহৃত হয়। বিশেষায়িত হাসপাতাল, চিকিৎসাসুবিধা ও রোগীর ঘনত্ব বেশি হওয়ায় রাজধানীতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের চাপও সর্বোচ্চ। ঢাকার পর রয়েছে রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও সিলেট বিভাগ। এ ছাড়া ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই) আক্রান্ত রোগীদের মধ্যেও উচ্চমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রবণতা দেখা গেছে।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত