জুলাইয়ের সংগ্রামে যখন যাচ্ছিলাম, তখন মনে পড়ছিল এইসব টুকরো দৃশ্য। মনে হচ্ছিল, জনতার জেগে ওঠার এই সংগ্রামে যুক্ত হওয়া আমাদের এক ঐতিহাসিক কর্তব্য। আবু সাঈদ যেদিন নিহত হলেন সেদিন এই অনুভূতিই আমাকে নাড়া দিচ্ছিল যে জনতাকে আর ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
সুমন সাজ্জাদ
জুলাই আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণে মোটামুটি ঢিঢি পড়ে গিয়েছিল; বেশ কিছু অভিধা পেয়েছিলাম আমি—‘বিএনপি’, ‘জামাত’, ‘বাম’, ‘বামাতি’, ‘বামবিম্পি’, ‘মুক্তিযুদ্ধবিরোধী’, ‘সাম্প্রদায়িক’, ‘মৌলবাদী’, ‘বাংলাদেশবিরোধী’ ইত্যাদি। কিছু অনুচ্চার্য কুৎসা-কথন আমাকে শুনতে হয়েছে, যা মুদ্রণযোগ্য নয়। কিন্তু আমি মিছিলে ছিলাম; ছাত্র, জনতার ঘামের গন্ধ আমার গায়ে এসে লেগেছে। চুপচাপ বসে থাকতে পারিনি। অন্য যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলনের মতো করে জুলাই আন্দোলনেও আমি শরিক হয়েছিলাম। তার মানে এই নয় যে বিরাট বীর সেজে, মঞ্চ, ময়দান কাঁপিয়ে দৌড়ে বেরিয়েছি। কখনো লিখে, কখনো বলে, কখনো মিছিলে দাঁড়িয়ে আমার কথাগুলো আমি বলে গিয়েছি। তাহলে কেন যোগ দিয়েছিলাম জুলাইয়ের জাগরণে?
আমার কারণগুলো খুবই ছোট্ট। এত ছোট যে হয়তো চোখেও পড়ে না, হয়তো মনেও থাকে না। আমি মানুষের ক্ষোভ দেখছিলাম। বোঝা যাচ্ছিল, ব্যক্তির আত্মা থেকে উত্থিত হচ্ছে ক্রোধ; অভিশাপ ও কান্না জমে জমে পরিণত হচ্ছে প্রবল শক্তিতে। একদিন এক অটোওয়ালা চিৎকার করে গালি দিয়ে বললেন, ‘একটা ব্যাটারির দাম অহন কত হইছে, জানেন।’ বলেই ক্ষমতাবান মন্ত্রীর চৌদ্দগোষ্ঠীকে তুলাধুনা করলেন। সেই মন্ত্রীর চেহারা মনে পড়লেই প্রশ্ন জাগত, কত জন্ম সাধনা করলে এই লোকটি মানুষের সঙ্গে ঠিক মানুষের মতো করে আচরণ করতে পারবে?
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় আমি যেন এই ধরনের ভাঁড় আর মন্ত্রীকেই দেখতে পাচ্ছিলাম। সবার মুখে সাঁটানো হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান, হাছান মাহমুদ অথবা সালমান এফ রহমানের মুখ। শেখ হাসিনার দম্ভের ছোট ছোট সংস্করণ দেখতে পেয়েছিলাম জীবনের বিচিত্র চত্বরে। এঁদের মুখ ও মুখোশ দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। আমি দেখতে পাচ্ছিলাম, একরাশ ভাঁড় টেলিভিশনে এসে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে, তাঁদের শব্দের বাক্যে ঝরে পড়ছে ক্ষমতার চকচকে ধার। আর আমি ভাবছিলাম, এই দুর্বৃত্তগুলোকে তাড়ানোর জন্য হলেও মাঠে নামা দরকার।
ক্ষমতা সব সময়ই মানুষকে মাতাল করে তোলে। তখন সেই মানুষ দিগভ্রষ্ট হয়ে ওঠে; ক্ষমতাবানের কল্পনায় প্রতিদিন রচিত হতে থাকে স্বর্গীয় দৃশ্য; সে দৃশ্যে তারা দেখতে পায়, তারাই সেরা, তারাই চিরন্তন, তারাই জগতের সারসত্য। আর এভাবেই বাংলাদেশেও ফ্যাসিবাদের জন্ম ঘটেছে।
কর্তৃত্ববাদী শাসনের পাথরস্তম্ভের নিচে আমরা চাপা পড়েছিলাম। আমার স্মৃতি আর শ্রুতিতে জমা হয়েছিল নিহত ও গুম হয়ে যাওয়া মানুষের দীর্ঘনিশ্বাস। মনে পড়ে, খুন হওয়ার আগ-মুহূর্তে এক বাবা ও কন্যার ফোন কলের রেকর্ড আমাকে সারা রাত ঘুমাতে দেয়নি। ছোট্ট মেয়েটির সেই কান্না জড়ানো গলা, ‘আব্বা, তুমি কানতেছ যে?’ আমার কানে বেজে চলেছে বছরের পর বছর; ভেবেছি, আমারও তো একটি মেয়ে আছে; আমারও তো বাবা ছিল। বহু দিন আমি গুম হয়ে যাওয়া মানুষের চারদিকে ঘিরে থাকা চারটি দেয়ালের কথা ভেবেছি। ভেবেছি তার নৈশব্দ্য, একাকিত্ব আর বিষণ্ণতার কথা।
বড়সড়ো কোনো মানবিক মাহাত্ম্য থেকে এসব ভাবনা আমাকে ঘিরে ধরেনি; খুবই ব্যক্তিকভাবে ভেবেছি, লোকটা যদি আমি হতাম, মেয়েটি যদি আমার হতো। এইতো, ব্যাস। আর কিছুই নয়। এই তুচ্ছ ব্যক্তিক অনুভূতি আমাকে ঘিরে ধরেছে। বুঝতে পারছিলাম আমার অস্তিত্বকে গুমঘরের দেয়াল দিয়ে চেপে চেপে ধরা হচ্ছে। এই অনুভূতিকে হয়তো বলা চলে ক্ষমতার স্তম্ভের নিচে চাপা পড়বার বিভীষিকাময় অনুভূতি– ক্ষমতাপ্রভাবিত এক ক্লাস্ট্রোফোবিয়া।
তীব্র ঘৃণায় আমি ফেটে পড়েছিলাম; দেখছিলাম, মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বেইমানি আর মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে গড়ে তোলা রাজনীতির বেহায়া ব্যবসা। বাঙালি জাতির ঐক্যকে পায়ে পায়ে লাথি দিয়ে খেলেছে শাসক আওয়ামী লীগ। আমি মানতে পারিনি। আমার মনে পড়েছে, ছোটবেলায় যখন কেউ মুজিবের নাম নিতে চাইত না, তখন আমি মুক্তিযুদ্ধ ও মুজিব সম্পর্কে জানতে চেয়েছি। বই জোগাড় করেছি। মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের যে সহানুভূতি ছিল সেই দরদের দাম আওয়ামী লীগ কোনো দিন দেয়নি। মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের প্রতি আমার সমস্ত আবেগের গায়ে লাথি মেরেছে বিগত শাসকগোষ্ঠী। এই লাথির ঘা আমি ভুলতে পারি না।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন, কোটা আন্দোলন–প্রতিটি আন্দোলনের অভিমুখ নিয়ে আমি ভাবতাম। আমার মনে হয়েছিল, এই সব আন্দোলন হলো ছোট ছোট আগ্নেয়গিরি, বড় কোনো বিস্ফোরণের জন্য যেগুলো অপেক্ষমাণ। শাসকগোষ্ঠী এসবের ভার ও ধার নিয়ে মোটেও ভাবেনি।
আমি থাকতে চেয়েছি জনগণের পক্ষে, যেমন আমি থাকতে চাই। বাংলাদেশের জনগণের পক্ষের মানুষ হিসেবে বিভিন্ন আন্দোলনে শরিক হয়েছি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ক্ষেত্রে এর কোনো ব্যতিক্রম ঘটেনি। তারুণ্যের জেগে ওঠার কয়েকটি মুহূর্ত দেখার পর আমার বারবারই মনে হয়েছে, ‘একটা কিছু ঘটতে যাচ্ছে’; যদিও আমার মতো মধ্যবিত্ত জীবনচক্রে পড়ে থাকা মানুষের পক্ষে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনুমান করা সম্ভব ছিল না। কোটা, চাকরি, মধ্যবিত্ত—এই তিনের যোগসূত্র নিয়ে দ্বিধা বোধ করেছি, ঘনীভূত হয়েছে সন্দেহের মেঘ—গরিব মানুষের ভাগ্য কি বদলাবে? তবুও মন বলেছে, বদল আসুক।
ভোট দিতে না পারা নিয়ে আমার কোনো দুঃখ ছিল না, কিন্তু প্রবল ক্ষোভ ছিল। আমি আমার জীবনের প্রথম ভোট দিতে পারিনি। দাঁত বের করে এসে একজন বলেছিল, ‘তোমার ভোট আমি দিয়া দিছি।’ ভোট দেওয়ার ইচ্ছা সেদিনই মিটে গিয়েছে। তবে গণতন্ত্রের জন্য ভোট দানের গুরুত্বকে স্বীকার করি। আর তাই অন্যদের ভোট না দিতে পারার বেদনা আমাকে ক্ষুব্ধ করেছে।
এমন একজন ব্যক্তির কথা আমি জানি, ২০১৮ সালের নির্বাচনে যিনি প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন; তাঁকে ২০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছিল প্রশাসন। তিনি তা নেননি। ইচ্ছামতো ভোটচুরি হয়েছিল সেদিন। ভোটশেষে নৌকায় করে নদী পারি দিয়ে শহরে ফিরছিলেন সেই প্রিজাইডিং অফিসার। ফেরার পথে ভোটচোরদের পক্ষ থেকে ফোন করে বলা হয়েছে, ‘… বাচ্চা, এখন এই মাঝনদীতে তোরে যদি এহনই গুলি কইরে ফালায়ে দেই তোর কোন বাপে আইসে বাঁচাবেনে?’ বেচারা মর্মাহত হয়েছিলেন। ভাগ্য ভালো তাঁর চাকরিটা যায়নি, প্রাণে মরেননি তিনি। তাঁরা বাবা একজন শহিদ মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা করা সরকার মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকেও ছাড় দেয়নি।
আমার এক ছাত্রকে পিটিয়ে হাড়-মাংস একাকার করে ফেলেছিল ছাত্রলীগ। কেননা ছেলেটি অন্য দল করে। আওয়ামী শাসনের প্রথম পর্বে ছাত্রলীগের এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের একটি ছেলেকে নির্মমভাবে খুন করেছিল। খুন হওয়া ছেলেটি বেঁচে থাকতে আমার সঙ্গে একদিন দেখা করতে এসেছিল। শরীরে রড ঢুকিয়ে ওকে হত্যা করা হয়েছিল। ঢাকায় বিশ্বজিৎ দাসের গা থেকে ঝরে পড়েছিল রক্তের স্রোত; তিনি হয়তো জানতেনও না কেন তিনি খুন হচ্ছেন।
জুলাইয়ের সংগ্রামে যখন যাচ্ছিলাম, তখন মনে পড়ছিল এইসব টুকরো দৃশ্য। মনে হচ্ছিল, জনতার জেগে ওঠার এই সংগ্রামে যুক্ত হওয়া আমাদের এক ঐতিহাসিক কর্তব্য। আবু সাঈদ যেদিন নিহত হলেন সেদিন এই অনুভূতিই আমাকে নাড়া দিচ্ছিল যে জনতাকে আর ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
সাঈদের শহিদ হওয়ার দিন সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারে ছোট্ট একটা বক্তৃতা করেছিলাম। সেখানে আমি শাসকদের ধ্বংস কামনা করেছিলাম। সরকারবিরোধী বক্তৃতা হয়ে যাওয়ায় অনেকেই সেদিন আমার ওপর খুব ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তাঁরা চাইছিলেন, ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’র মতো একটি মধ্যপন্থী বক্তৃতা। আমার পক্ষে সেটি করা সম্ভব হয়নি। আমার মন বারবার চাইছিল, আমি সত্য বলি। নিজেকে দমাতে পারিনি। অক্ষমের আর্তনাদের মতো করে অমি অভিশাপও দিয়েছিলাম।
জুলাইয়ের দিনগুলোতে ফেসবুকে বেশ কিছু পোস্ট লিখেছিলাম। তারুণ্যের রাজনৈতিক বোঝাপড়ার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করে নিয়েছিলাম। ওই সব পোস্ট পড়ে অনেকেই আমাকে সতর্ক থাকতে বলেছিলেন। নিরাপত্তার প্রয়োজনে আমার এক শিক্ষক গভীর রাতে ফোন করে অনুরোধ জানিয়েছিলেন, আমি যেন আর পোস্ট না দিই। আমাকে পোস্ট দিতে হয়নি। সরকার নিজেই ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিল। প্রদীপ নেভার আগ-মুহূর্তে দপ করে জ্বলে ওঠার মতো আচরণ করছিল সরকার।
৫ আগস্ট ২০২৪। আরিচা রোড ধরে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছি সাভারের দিকে। রাস্তায় অগণিত মানুষ। মিছিলে এসে যোগ দিয়েছে ইপিজেডের কয়েক হাজার শ্রমিক। গলি থেকে বেরিয়ে এসে যোগ দিয়েছে রিকশাচালক, মুদিদোকানি, ফলওয়ালা, সবজিওয়ালা। বাড়িগুলো থেকে হাত নেড়ে স্বাগত জানিয়েছেন কেউ কেউ। একটু পর দানবিক চিৎকারের মতো ছড়িয়ে পড়ল গুলির শব্দ। টিয়ারশেলের অন্ধকার ধোঁয়া এসে ঘিরে ধরল। পুড়ে যাচ্ছিল আমার চোখ, মুখ আর ত্বক। নিশ্বাসের সঙ্গে ধোঁয়া ঢুকতেই মনে হলো এখনই মরে যাব।
সাভার বাজার রোডের মোড়ে থাকা শ্রমিকেরা আমার চোখের সামনে লাইটার জ্বালিয়ে বলল, ‘পানি দিয়েন না ভাই। পানি গেলে আরও জ্বলব।’ বুঝলাম, ওরা বেশ অভিজ্ঞ। ওরা কাগজ কুড়িয়ে এনে আগুন ধরাল। গরমে ঘামতে ঘামতে আমরা আগুনের সামনে মেলে ধরলাম আমাদের চোখ; ধীরে ধীরে মুছে গেলো টিয়ারশেলের জ্বলুনি। বেশ কিছুক্ষণ পর শুনতে পেলাম হাসিনা পালিয়েছে; এক লাইনে আমি আবারও একটি পোস্ট লিখলাম, ‘চোর খুনি পালাইছে।’
সেদিন রাস্তায় আমি অসংখ্য মানুষকে আমি পাগলের মতো চিৎকার করতে দেখেছি, নামাজ পড়তে দেখেছি, কাঁদতে দেখেছি। আমি নিজেও উন্মাদ গলায় চিৎকার করেছি। আমি বুক ভরে শ্বাস নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়েছি বারবার। ভিজে উঠেছে আমার চোখের কোণ। দানবের প্রস্থানে আমি মুক্তির স্বাদ অনুভব করেছি। ভেবেছি, ১৯৭১ সালে একটি রাষ্ট্র জন্মানোর মুহূর্তে মানুষ কেমন আবেগে ভেসেছিল! আমার বারবার মনে হয়েছে, বাংলাদেশকে সত্যিই ভালোবাসি আমি!
আন্দোলনের পর প্রশ্নের ধরনটি বদলে গেছে। আন্দোলন করে কী পেলাম? দেশ নয়, প্রধানত ব্যক্তিগত লাভ-লোকসানের কথা বোঝাতেই তাঁরা জিজ্ঞেস করেন। প্রশ্ন শুনে মনে হয়, যেন আমার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার কথা ছিল, সরকারি কোনো দপ্তরের প্রধান কর্মকর্তা হওয়ার কথা ছিল। আমার কল্পিত দুঃখের কথা ভেবে লোকেরা আহা, আহা ও হাহাহিহি করে। কেন হলাম না? দায়-দায়িত্বের জন্য কেউ সাধাসাধি করেনি? এসব শুনে বেশির ভাগ সময় আমি চুপ থাকি।
আজ একটা কথা বলি, ‘জুলাই–আন্দোলন’ আমার কাছে ছিল আমার রাজনৈতিক আত্মার আধ্যাত্মিক বহিঃপ্রকাশ। দেশচেতনার আবেগে কাতর হয়ে উঠেছিল আমার মন। আমি ঘুমের ভেতর জনতার পায়ের শব্দ শুনতে পেতাম; মানুষের সমবেত স্লোগানগুলো আমাকে প্রকম্পিত করে তুলত। রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষের হাহাকার, বুলি, গালি, চিৎকার আমাকে আলোড়িত করে তুলছিল। মনে হচ্ছিল, দেড় দশকের রাজনৈতিক দম্ভকে মানুষ গুঁড়িয়ে দিতে চাইছে। সিদ্ধান্ত নিলাম, একজন লাথি খাওয়া মানুষ হিসেবে আমারও উচিত হবে বছরের পর বছর ধরে ওই লাথি খাওয়াদের ভিড়ে মিশে যেতে হবে। ব্যাস, এইটুকুই। জুলাই অভুত্থানের সঙ্গে এভাবেই আমার সংযুক্তি। আজ যদি জুলাই বিতর্কিত হয়, জুলাই যদি গন্তব্যচ্যুতও হয়, গণতন্ত্র যদি না আসে, সংস্কার যদি ব্যর্থ হয়, তবে তা আমার মর্মমূলকে দ্বিখণ্ডিত করবে। তবুও দ্বিধাহীনভাবে বলব, জুলাই ২০২৪-এ আমার অবস্থান ঠিক ছিল। হাজারো মানুষের রক্তের দাগ আমি মুছে ফেলতে পারি না, ফ্যাসিবাদকে চূড়ান্ত সত্য হিসেবে মানতে আমি রাজি নই।
লেখক: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক।
জুলাই আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণে মোটামুটি ঢিঢি পড়ে গিয়েছিল; বেশ কিছু অভিধা পেয়েছিলাম আমি—‘বিএনপি’, ‘জামাত’, ‘বাম’, ‘বামাতি’, ‘বামবিম্পি’, ‘মুক্তিযুদ্ধবিরোধী’, ‘সাম্প্রদায়িক’, ‘মৌলবাদী’, ‘বাংলাদেশবিরোধী’ ইত্যাদি। কিছু অনুচ্চার্য কুৎসা-কথন আমাকে শুনতে হয়েছে, যা মুদ্রণযোগ্য নয়। কিন্তু আমি মিছিলে ছিলাম; ছাত্র, জনতার ঘামের গন্ধ আমার গায়ে এসে লেগেছে। চুপচাপ বসে থাকতে পারিনি। অন্য যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলনের মতো করে জুলাই আন্দোলনেও আমি শরিক হয়েছিলাম। তার মানে এই নয় যে বিরাট বীর সেজে, মঞ্চ, ময়দান কাঁপিয়ে দৌড়ে বেরিয়েছি। কখনো লিখে, কখনো বলে, কখনো মিছিলে দাঁড়িয়ে আমার কথাগুলো আমি বলে গিয়েছি। তাহলে কেন যোগ দিয়েছিলাম জুলাইয়ের জাগরণে?
আমার কারণগুলো খুবই ছোট্ট। এত ছোট যে হয়তো চোখেও পড়ে না, হয়তো মনেও থাকে না। আমি মানুষের ক্ষোভ দেখছিলাম। বোঝা যাচ্ছিল, ব্যক্তির আত্মা থেকে উত্থিত হচ্ছে ক্রোধ; অভিশাপ ও কান্না জমে জমে পরিণত হচ্ছে প্রবল শক্তিতে। একদিন এক অটোওয়ালা চিৎকার করে গালি দিয়ে বললেন, ‘একটা ব্যাটারির দাম অহন কত হইছে, জানেন।’ বলেই ক্ষমতাবান মন্ত্রীর চৌদ্দগোষ্ঠীকে তুলাধুনা করলেন। সেই মন্ত্রীর চেহারা মনে পড়লেই প্রশ্ন জাগত, কত জন্ম সাধনা করলে এই লোকটি মানুষের সঙ্গে ঠিক মানুষের মতো করে আচরণ করতে পারবে?
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় আমি যেন এই ধরনের ভাঁড় আর মন্ত্রীকেই দেখতে পাচ্ছিলাম। সবার মুখে সাঁটানো হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান, হাছান মাহমুদ অথবা সালমান এফ রহমানের মুখ। শেখ হাসিনার দম্ভের ছোট ছোট সংস্করণ দেখতে পেয়েছিলাম জীবনের বিচিত্র চত্বরে। এঁদের মুখ ও মুখোশ দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। আমি দেখতে পাচ্ছিলাম, একরাশ ভাঁড় টেলিভিশনে এসে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে, তাঁদের শব্দের বাক্যে ঝরে পড়ছে ক্ষমতার চকচকে ধার। আর আমি ভাবছিলাম, এই দুর্বৃত্তগুলোকে তাড়ানোর জন্য হলেও মাঠে নামা দরকার।
ক্ষমতা সব সময়ই মানুষকে মাতাল করে তোলে। তখন সেই মানুষ দিগভ্রষ্ট হয়ে ওঠে; ক্ষমতাবানের কল্পনায় প্রতিদিন রচিত হতে থাকে স্বর্গীয় দৃশ্য; সে দৃশ্যে তারা দেখতে পায়, তারাই সেরা, তারাই চিরন্তন, তারাই জগতের সারসত্য। আর এভাবেই বাংলাদেশেও ফ্যাসিবাদের জন্ম ঘটেছে।
কর্তৃত্ববাদী শাসনের পাথরস্তম্ভের নিচে আমরা চাপা পড়েছিলাম। আমার স্মৃতি আর শ্রুতিতে জমা হয়েছিল নিহত ও গুম হয়ে যাওয়া মানুষের দীর্ঘনিশ্বাস। মনে পড়ে, খুন হওয়ার আগ-মুহূর্তে এক বাবা ও কন্যার ফোন কলের রেকর্ড আমাকে সারা রাত ঘুমাতে দেয়নি। ছোট্ট মেয়েটির সেই কান্না জড়ানো গলা, ‘আব্বা, তুমি কানতেছ যে?’ আমার কানে বেজে চলেছে বছরের পর বছর; ভেবেছি, আমারও তো একটি মেয়ে আছে; আমারও তো বাবা ছিল। বহু দিন আমি গুম হয়ে যাওয়া মানুষের চারদিকে ঘিরে থাকা চারটি দেয়ালের কথা ভেবেছি। ভেবেছি তার নৈশব্দ্য, একাকিত্ব আর বিষণ্ণতার কথা।
বড়সড়ো কোনো মানবিক মাহাত্ম্য থেকে এসব ভাবনা আমাকে ঘিরে ধরেনি; খুবই ব্যক্তিকভাবে ভেবেছি, লোকটা যদি আমি হতাম, মেয়েটি যদি আমার হতো। এইতো, ব্যাস। আর কিছুই নয়। এই তুচ্ছ ব্যক্তিক অনুভূতি আমাকে ঘিরে ধরেছে। বুঝতে পারছিলাম আমার অস্তিত্বকে গুমঘরের দেয়াল দিয়ে চেপে চেপে ধরা হচ্ছে। এই অনুভূতিকে হয়তো বলা চলে ক্ষমতার স্তম্ভের নিচে চাপা পড়বার বিভীষিকাময় অনুভূতি– ক্ষমতাপ্রভাবিত এক ক্লাস্ট্রোফোবিয়া।
তীব্র ঘৃণায় আমি ফেটে পড়েছিলাম; দেখছিলাম, মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বেইমানি আর মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে গড়ে তোলা রাজনীতির বেহায়া ব্যবসা। বাঙালি জাতির ঐক্যকে পায়ে পায়ে লাথি দিয়ে খেলেছে শাসক আওয়ামী লীগ। আমি মানতে পারিনি। আমার মনে পড়েছে, ছোটবেলায় যখন কেউ মুজিবের নাম নিতে চাইত না, তখন আমি মুক্তিযুদ্ধ ও মুজিব সম্পর্কে জানতে চেয়েছি। বই জোগাড় করেছি। মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের যে সহানুভূতি ছিল সেই দরদের দাম আওয়ামী লীগ কোনো দিন দেয়নি। মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের প্রতি আমার সমস্ত আবেগের গায়ে লাথি মেরেছে বিগত শাসকগোষ্ঠী। এই লাথির ঘা আমি ভুলতে পারি না।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন, কোটা আন্দোলন–প্রতিটি আন্দোলনের অভিমুখ নিয়ে আমি ভাবতাম। আমার মনে হয়েছিল, এই সব আন্দোলন হলো ছোট ছোট আগ্নেয়গিরি, বড় কোনো বিস্ফোরণের জন্য যেগুলো অপেক্ষমাণ। শাসকগোষ্ঠী এসবের ভার ও ধার নিয়ে মোটেও ভাবেনি।
আমি থাকতে চেয়েছি জনগণের পক্ষে, যেমন আমি থাকতে চাই। বাংলাদেশের জনগণের পক্ষের মানুষ হিসেবে বিভিন্ন আন্দোলনে শরিক হয়েছি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ক্ষেত্রে এর কোনো ব্যতিক্রম ঘটেনি। তারুণ্যের জেগে ওঠার কয়েকটি মুহূর্ত দেখার পর আমার বারবারই মনে হয়েছে, ‘একটা কিছু ঘটতে যাচ্ছে’; যদিও আমার মতো মধ্যবিত্ত জীবনচক্রে পড়ে থাকা মানুষের পক্ষে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনুমান করা সম্ভব ছিল না। কোটা, চাকরি, মধ্যবিত্ত—এই তিনের যোগসূত্র নিয়ে দ্বিধা বোধ করেছি, ঘনীভূত হয়েছে সন্দেহের মেঘ—গরিব মানুষের ভাগ্য কি বদলাবে? তবুও মন বলেছে, বদল আসুক।
ভোট দিতে না পারা নিয়ে আমার কোনো দুঃখ ছিল না, কিন্তু প্রবল ক্ষোভ ছিল। আমি আমার জীবনের প্রথম ভোট দিতে পারিনি। দাঁত বের করে এসে একজন বলেছিল, ‘তোমার ভোট আমি দিয়া দিছি।’ ভোট দেওয়ার ইচ্ছা সেদিনই মিটে গিয়েছে। তবে গণতন্ত্রের জন্য ভোট দানের গুরুত্বকে স্বীকার করি। আর তাই অন্যদের ভোট না দিতে পারার বেদনা আমাকে ক্ষুব্ধ করেছে।
এমন একজন ব্যক্তির কথা আমি জানি, ২০১৮ সালের নির্বাচনে যিনি প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন; তাঁকে ২০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছিল প্রশাসন। তিনি তা নেননি। ইচ্ছামতো ভোটচুরি হয়েছিল সেদিন। ভোটশেষে নৌকায় করে নদী পারি দিয়ে শহরে ফিরছিলেন সেই প্রিজাইডিং অফিসার। ফেরার পথে ভোটচোরদের পক্ষ থেকে ফোন করে বলা হয়েছে, ‘… বাচ্চা, এখন এই মাঝনদীতে তোরে যদি এহনই গুলি কইরে ফালায়ে দেই তোর কোন বাপে আইসে বাঁচাবেনে?’ বেচারা মর্মাহত হয়েছিলেন। ভাগ্য ভালো তাঁর চাকরিটা যায়নি, প্রাণে মরেননি তিনি। তাঁরা বাবা একজন শহিদ মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা করা সরকার মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকেও ছাড় দেয়নি।
আমার এক ছাত্রকে পিটিয়ে হাড়-মাংস একাকার করে ফেলেছিল ছাত্রলীগ। কেননা ছেলেটি অন্য দল করে। আওয়ামী শাসনের প্রথম পর্বে ছাত্রলীগের এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের একটি ছেলেকে নির্মমভাবে খুন করেছিল। খুন হওয়া ছেলেটি বেঁচে থাকতে আমার সঙ্গে একদিন দেখা করতে এসেছিল। শরীরে রড ঢুকিয়ে ওকে হত্যা করা হয়েছিল। ঢাকায় বিশ্বজিৎ দাসের গা থেকে ঝরে পড়েছিল রক্তের স্রোত; তিনি হয়তো জানতেনও না কেন তিনি খুন হচ্ছেন।
জুলাইয়ের সংগ্রামে যখন যাচ্ছিলাম, তখন মনে পড়ছিল এইসব টুকরো দৃশ্য। মনে হচ্ছিল, জনতার জেগে ওঠার এই সংগ্রামে যুক্ত হওয়া আমাদের এক ঐতিহাসিক কর্তব্য। আবু সাঈদ যেদিন নিহত হলেন সেদিন এই অনুভূতিই আমাকে নাড়া দিচ্ছিল যে জনতাকে আর ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
সাঈদের শহিদ হওয়ার দিন সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারে ছোট্ট একটা বক্তৃতা করেছিলাম। সেখানে আমি শাসকদের ধ্বংস কামনা করেছিলাম। সরকারবিরোধী বক্তৃতা হয়ে যাওয়ায় অনেকেই সেদিন আমার ওপর খুব ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তাঁরা চাইছিলেন, ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’র মতো একটি মধ্যপন্থী বক্তৃতা। আমার পক্ষে সেটি করা সম্ভব হয়নি। আমার মন বারবার চাইছিল, আমি সত্য বলি। নিজেকে দমাতে পারিনি। অক্ষমের আর্তনাদের মতো করে অমি অভিশাপও দিয়েছিলাম।
জুলাইয়ের দিনগুলোতে ফেসবুকে বেশ কিছু পোস্ট লিখেছিলাম। তারুণ্যের রাজনৈতিক বোঝাপড়ার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করে নিয়েছিলাম। ওই সব পোস্ট পড়ে অনেকেই আমাকে সতর্ক থাকতে বলেছিলেন। নিরাপত্তার প্রয়োজনে আমার এক শিক্ষক গভীর রাতে ফোন করে অনুরোধ জানিয়েছিলেন, আমি যেন আর পোস্ট না দিই। আমাকে পোস্ট দিতে হয়নি। সরকার নিজেই ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিল। প্রদীপ নেভার আগ-মুহূর্তে দপ করে জ্বলে ওঠার মতো আচরণ করছিল সরকার।
৫ আগস্ট ২০২৪। আরিচা রোড ধরে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছি সাভারের দিকে। রাস্তায় অগণিত মানুষ। মিছিলে এসে যোগ দিয়েছে ইপিজেডের কয়েক হাজার শ্রমিক। গলি থেকে বেরিয়ে এসে যোগ দিয়েছে রিকশাচালক, মুদিদোকানি, ফলওয়ালা, সবজিওয়ালা। বাড়িগুলো থেকে হাত নেড়ে স্বাগত জানিয়েছেন কেউ কেউ। একটু পর দানবিক চিৎকারের মতো ছড়িয়ে পড়ল গুলির শব্দ। টিয়ারশেলের অন্ধকার ধোঁয়া এসে ঘিরে ধরল। পুড়ে যাচ্ছিল আমার চোখ, মুখ আর ত্বক। নিশ্বাসের সঙ্গে ধোঁয়া ঢুকতেই মনে হলো এখনই মরে যাব।
সাভার বাজার রোডের মোড়ে থাকা শ্রমিকেরা আমার চোখের সামনে লাইটার জ্বালিয়ে বলল, ‘পানি দিয়েন না ভাই। পানি গেলে আরও জ্বলব।’ বুঝলাম, ওরা বেশ অভিজ্ঞ। ওরা কাগজ কুড়িয়ে এনে আগুন ধরাল। গরমে ঘামতে ঘামতে আমরা আগুনের সামনে মেলে ধরলাম আমাদের চোখ; ধীরে ধীরে মুছে গেলো টিয়ারশেলের জ্বলুনি। বেশ কিছুক্ষণ পর শুনতে পেলাম হাসিনা পালিয়েছে; এক লাইনে আমি আবারও একটি পোস্ট লিখলাম, ‘চোর খুনি পালাইছে।’
সেদিন রাস্তায় আমি অসংখ্য মানুষকে আমি পাগলের মতো চিৎকার করতে দেখেছি, নামাজ পড়তে দেখেছি, কাঁদতে দেখেছি। আমি নিজেও উন্মাদ গলায় চিৎকার করেছি। আমি বুক ভরে শ্বাস নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়েছি বারবার। ভিজে উঠেছে আমার চোখের কোণ। দানবের প্রস্থানে আমি মুক্তির স্বাদ অনুভব করেছি। ভেবেছি, ১৯৭১ সালে একটি রাষ্ট্র জন্মানোর মুহূর্তে মানুষ কেমন আবেগে ভেসেছিল! আমার বারবার মনে হয়েছে, বাংলাদেশকে সত্যিই ভালোবাসি আমি!
আন্দোলনের পর প্রশ্নের ধরনটি বদলে গেছে। আন্দোলন করে কী পেলাম? দেশ নয়, প্রধানত ব্যক্তিগত লাভ-লোকসানের কথা বোঝাতেই তাঁরা জিজ্ঞেস করেন। প্রশ্ন শুনে মনে হয়, যেন আমার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার কথা ছিল, সরকারি কোনো দপ্তরের প্রধান কর্মকর্তা হওয়ার কথা ছিল। আমার কল্পিত দুঃখের কথা ভেবে লোকেরা আহা, আহা ও হাহাহিহি করে। কেন হলাম না? দায়-দায়িত্বের জন্য কেউ সাধাসাধি করেনি? এসব শুনে বেশির ভাগ সময় আমি চুপ থাকি।
আজ একটা কথা বলি, ‘জুলাই–আন্দোলন’ আমার কাছে ছিল আমার রাজনৈতিক আত্মার আধ্যাত্মিক বহিঃপ্রকাশ। দেশচেতনার আবেগে কাতর হয়ে উঠেছিল আমার মন। আমি ঘুমের ভেতর জনতার পায়ের শব্দ শুনতে পেতাম; মানুষের সমবেত স্লোগানগুলো আমাকে প্রকম্পিত করে তুলত। রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষের হাহাকার, বুলি, গালি, চিৎকার আমাকে আলোড়িত করে তুলছিল। মনে হচ্ছিল, দেড় দশকের রাজনৈতিক দম্ভকে মানুষ গুঁড়িয়ে দিতে চাইছে। সিদ্ধান্ত নিলাম, একজন লাথি খাওয়া মানুষ হিসেবে আমারও উচিত হবে বছরের পর বছর ধরে ওই লাথি খাওয়াদের ভিড়ে মিশে যেতে হবে। ব্যাস, এইটুকুই। জুলাই অভুত্থানের সঙ্গে এভাবেই আমার সংযুক্তি। আজ যদি জুলাই বিতর্কিত হয়, জুলাই যদি গন্তব্যচ্যুতও হয়, গণতন্ত্র যদি না আসে, সংস্কার যদি ব্যর্থ হয়, তবে তা আমার মর্মমূলকে দ্বিখণ্ডিত করবে। তবুও দ্বিধাহীনভাবে বলব, জুলাই ২০২৪-এ আমার অবস্থান ঠিক ছিল। হাজারো মানুষের রক্তের দাগ আমি মুছে ফেলতে পারি না, ফ্যাসিবাদকে চূড়ান্ত সত্য হিসেবে মানতে আমি রাজি নই।
লেখক: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক।
আমরাও রুখে দাঁড়িয়েছিলাম। বলেছিলাম, ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’। বুক চিতিয়ে আমরা গুলির মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলাম সেদিন, এই জুলাই মাসেই।
১৪ ঘণ্টা আগেআইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত, দশ মাসে এমন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৩২৯ জন মানুষ।
১ দিন আগেএই যে নানাজনের নানা মত, মুরাদনগর আটকে গেল পরকীয়া-ধর্ষণ-আওয়ামী লীগ-বিএনপির বৃত্তে, এর মধ্যে শীতের সূর্যের মতো টুপ করে আড়াল হয়ে গেল ‘ন্যায়বিচার’। কেউ বলছে না, কারও সঙ্গে কারও যদি পরকীয়া সম্পর্ক থাকেও, তবুও এভাবে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া যায় না।
২ দিন আগেজোহরান মামদানির জয়পরবর্তী ইসলামোফোবিয়ার মাত্রা উদ্বেগজনক। মার্কিন নেতারা ও মিডিয়া তাঁকে ইসলামি সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করছে। এই ঘটনা কি আমেরিকার ধর্মীয় ও জাতিগত বিদ্বেষের প্রকৃত ছবি তুলে ধরে?
৩ দিন আগে