কুদরত-ই-হুদা
কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ও বেড়ে ওঠা পশ্চিম বাংলায়। মাঝেমধ্যে তিনি পূর্ব বাংলায় অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশে এসেছেন। কিন্তু ১৯৭২ সালের আগে সেই আসা স্থায়ীভাবে তো ছিলেনই না, এমনকি রবীন্দ্রনাথের মতো দীর্ঘ দিনের জন্যও কখনো বাংলাদেশে থাকেননি। খেয়ালের বশে বা কোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে বা বেড়ানোর অংশ হিসেবে দিন কয়েকের জন্য থেকে দ্রুত চলে গেছেন কলকাতায়। এদিক থেকে বলতে গেলে বাংলাদেশের সঙ্গে নজরুলের সম্পর্ক রবীন্দ্রনাথের তুলনায়ও অনেক আলগা। তাঁর কবিত্বের বিকাশ-প্রকাশের সঙ্গেও বাংলাদেশের খুব একটা ভূমিকা নেই। মূলত কলকাতায় জমাট বাঁধা ব্রিটিশবিরোধী খেলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের উপজাত কবি ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম।
এসব কারণে প্রশ্ন জাগে, নজরুল বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর এত প্রিয়তা অর্জন করলেন কীভাবে। কোন সূত্রে নজরুল বাংলাদেশের সঙ্গে এত গভীরভাবে যুক্ত? বাংলাদেশের মানুষ নজরুলকে কীভাবে তাদের নিজেদের সাথে সম্পৃক্ত করে পড়ে? নজরুলের জীবন ও সাহিত্যকে কাজে লাগায়? শুধু অভিন্ন ভাষার সাহিত্যিক বলেই কি কবি নজরুল বাংলাদেশে গুরুত্ব পান? তাঁর ধর্মীয় পরিচয় কি তবে তাঁকে বাংলাদেশের মানুষের কাছে তাঁকে এত আদরণীয় করে তুলেছে? নাকি আরও কোনো ব্যাপার আছে!
বাংলাদেশের গৌরবজনক অধ্যায়ের বয়ান-বর্ণনা ইতিহাসে কম নেই। বিভিন্ন গৌরবময় অধ্যায়ের ইতিহাসকে জোড়া লাগিয়ে যে জাতীয়-ইতিহাস নির্মিত হয়েছে তাতে জনগোষ্ঠী হিসেবে এখানকার মানুষদের গৌরব করার মতো অনেক কিছুই পাওয়া যায়। কিন্তু উনিশ শতকের পরের পূর্ব বাংলার যে ইতিহাস পাওয়া যায় তা খুব একটা সুবিধার নয়। এই সময়ের ইতিহাসের নিবিড় পাঠ দিলে দেখা যাবে এটি পাণ্ডববর্জিত ভূখণ্ড। জল-জঙ্গলের ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়েছে পূর্ব বাংলা।
১৮৬৬ সালে দীনবন্ধু মিত্র রচিত ‘সধবার একাদশী’ নাটকে কলকাতার এক চরিত্রকে দেখা যাচ্ছে পূর্ব বাংলার এক চরিত্রের সামনে পা ফাঁক করে হাঁটছে আর কৌতুককরভাবে মুখ বাঁকিয়ে বলছে, ‘বাঙ্গাল! ড্যাঙ্গা পথের কাঙ্গাল’। ব্যাপারটা কেবল রাস্তাহীন, জলবাসী বলে খোটা দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, পূর্ব বাংলার মানুষের ব্যবহৃত ভাষাও যে যথেষ্ট গ্রাম্য সেই ইঙ্গিতও আছে সংলাপটিতে। সংলাপটির মধ্যে কৃষক, জেলে ইত্যাদি ‘ঊনপেশা’র ইঙ্গিত আবিষ্কার করে উঠতে পারাটাও খুব বেশি কষ্টসাধ্য নয়।
কথা যে পুরোপুরি মিছা তা না। উনিশ শতক, এমনকি বিশ শতকের প্রথম দিকের পূর্ব বাংলা বলতে মূলত বোঝানো হতো জেলে, চাষি, তাঁতি, কামার, কুমারের দেশ। দেশ ভাগের আগে এবং পরে পাকিস্তান আমলেও পূর্ব বাংলার মানুষদের অনেকে বলেছেন ‘নিম্নভূমির নিম্নজাতের মানুষ’।
পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের লেখা বয়ান-বর্ণনায় বাংলাদেশের মানুষদের ‘ঊন’ই মনে করা হতো। একারণে দেখা যাবে, বিশেষত ষাটের দশকের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-সংগ্রামের সময় আল মাহমুদের মতো গুরুত্বপূর্ণ কবিরা এখানকার মানুষদের ‘অনার্যতা’ নিয়ে শ্লাঘা অনুভব করে প্রচুর কাব্য-কবিতা রচনা করেছেন। অনেক ঐতিহাসিকের ইতিহাসগ্রন্থেও বলা হয়েছে, বাংলার উত্তর দিক থেকে এক জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে ঢুকেছে। তাদের রক্তের মিশ্রণে বাংলাদেশের নৃগোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। ওই অনুপ্রবেশকারী জনগোষ্ঠী ছিল ‘কল্পনাহীন’, ‘পরিশ্রমী’, ‘গোঁয়ার’ প্রকৃতির।
এ-ই তো অন্যের চোখে বাংলাদেশ। উপরের সব বয়ান-বর্ণনা পুরোপুরি ঠিক তা নয়; আলোচনার দাবি রাখে। কিন্তু সবই মিথ্যা নয়। বিশেষত উনিশ শতকের বাংলাদেশ যে গরিব মানুষদের এলাকা ছিল এতে খুব একটা সন্দেহ নেই।
‘দরিদ্র’ আর ‘অনালোকিত’ হওয়ার কারণে এখানকার মানুষকে বরাবরই অবর্ণনীয় সংগ্রাম করতে হয়েছে। এই সংগ্রাম ক্ষমতাবানের তরফ থেকে আরোপিত বঞ্চনা-অবমাননার বিরুদ্ধে যেমন, তেমনি বিরূপ প্রকৃতির বিরুদ্ধেও। সংগ্রাম, প্রতিরোধ, প্রতিবাদ, বিদ্রোহ এখানকার মানুষের ইতিহাসের নিত্যসঙ্গী, প্রধান স্বাতন্ত্র্যসূচক পরিচয়।
নজরুলের কবিতার অনেক মাত্রা আছে। সেই মাত্রা অনুসারে নজরুলের কবিসত্তার নানা পরিচয় শনাক্ত করা যাবে। কিন্তু একথা তো সত্য যে, ব্যক্তিজীবনে নজরুল ছিলেন এক হতদরিদ্র ঘরের সন্তান। এই দারিদ্র্য তাঁর কবিস্বভাবকে যে প্রধান গড়নটা দিয়েছে সেকথা তিনি নিজেই বলেছেন। তিনি বলেছেন, দারিদ্র্য তাঁকে দিয়েছে ‘অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস’, দিয়েছে, ‘বাণী ক্ষুরধার’। আর দিয়েছে, ‘উদ্ধত উলঙ্গ দৃষ্টি’। একারণে ইংরেজের অধীনে সেনবাহিনীর চাকরি থেকে চলে আসার দু-চার মাসের মধ্যেই তিনি উন্মোচন করে ফেলেছেন বাংলায় ইংরেজ শাসনের স্বরূপ।
নজরুল যখন উচ্চারণ করেন, ‘আমি উপাড়ি ফেলিব অধীন বিশ্ব’ বা যখন বলেন ‘আমি অবমানিতের ক্রন্দনরোল’ অথবা যখন বলেন, ‘তুমি শুয়ে র’বে তেতালার পরে আমরা রহিব নীচে,/অথচ তোমারে দেবতা বলিব, সে ভরসা আজ মিছে!’ তখন তা বাংলাদেশের মানুষকে একটু ভিন্নভাবে যুক্ত করে বৈ কি!
নজরুলের হামদ-নাত ও ইসলামি ইতিহাস-ঐতিহ্যানুরাগ প্রকাশক পরিচয়বাদী চিন্তার কথা না হয় না-ই বললাম। না হয় বাদ দেয়া যাক, নজরুলের কবিতায় প্রকাশিত পূর্ব বাংলার জনজীবনের গভীরে প্রবাহিত সহজিয়া অসাম্প্রদায়িক মানব-সম্পর্কের কথাও।
আসলে নজরুলের কবিতার এইসব ব্যাপার বাংলাদেশের মানুষকে যতটা দ্রুত যুক্ত করে কলকাতা বা অবিভক্ত বাংলার অপরাপর অংশকে অতটা ওই মাত্রায় যুক্ত করে না। নজরুলের কবিতার ভেতরকার অভিজ্ঞতার সঙ্গে কলকাতার মানুষের একাত্ম হওয়ার ব্যাপারটি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামের পরে আর তেমনটি কাজ করেনি। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের সংগ্রামী অভিযাত্রায় নজরুলকে আরো দীর্ঘকাল দরকার হয়েছে।
শুধু একাত্তরে শুধু নয়, বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সকল সংগ্রামে নজরুলকে দরকার হয়েছে এবং এখনো প্রয়োজন হয়। জনগোষ্ঠীর সামষ্টিক স্বভাব ও ইতিহাসের সঙ্গে নজরুল যতটা একাত্ম হন, অপরাপর খুব কমসংখ্যক কবির ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা ঘটে।
ফলে নজরুলের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের সম্পর্ক কেবল সাহিত্যিক সম্পর্ক নয়। এই সম্পর্ক সংগ্রামী স্বভাবের নৈকট্যেও সাথে গভীরভাবে যুক্ত। এই নৈকট্যকে রাজনীতি দিয়েই শুধু ব্যাখ্যা করা যাবে। অসম্ভব নয় যে, রাষ্ট্রীয় রাজনীতির বাইরেও নন্দনতাত্ত্বিক রাজনীতির আলোকেও ব্যাখ্যা করা যাবে। এও ব্যাখ্যা করা যাবে, বাংলাদেশের ‘অসাধারণ’ ও ‘অভিজাত’দের এলাকায় নজরুলের বিচরণ কেন তুলনামূলকভাবে কম।
কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ও বেড়ে ওঠা পশ্চিম বাংলায়। মাঝেমধ্যে তিনি পূর্ব বাংলায় অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশে এসেছেন। কিন্তু ১৯৭২ সালের আগে সেই আসা স্থায়ীভাবে তো ছিলেনই না, এমনকি রবীন্দ্রনাথের মতো দীর্ঘ দিনের জন্যও কখনো বাংলাদেশে থাকেননি। খেয়ালের বশে বা কোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে বা বেড়ানোর অংশ হিসেবে দিন কয়েকের জন্য থেকে দ্রুত চলে গেছেন কলকাতায়। এদিক থেকে বলতে গেলে বাংলাদেশের সঙ্গে নজরুলের সম্পর্ক রবীন্দ্রনাথের তুলনায়ও অনেক আলগা। তাঁর কবিত্বের বিকাশ-প্রকাশের সঙ্গেও বাংলাদেশের খুব একটা ভূমিকা নেই। মূলত কলকাতায় জমাট বাঁধা ব্রিটিশবিরোধী খেলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের উপজাত কবি ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম।
এসব কারণে প্রশ্ন জাগে, নজরুল বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর এত প্রিয়তা অর্জন করলেন কীভাবে। কোন সূত্রে নজরুল বাংলাদেশের সঙ্গে এত গভীরভাবে যুক্ত? বাংলাদেশের মানুষ নজরুলকে কীভাবে তাদের নিজেদের সাথে সম্পৃক্ত করে পড়ে? নজরুলের জীবন ও সাহিত্যকে কাজে লাগায়? শুধু অভিন্ন ভাষার সাহিত্যিক বলেই কি কবি নজরুল বাংলাদেশে গুরুত্ব পান? তাঁর ধর্মীয় পরিচয় কি তবে তাঁকে বাংলাদেশের মানুষের কাছে তাঁকে এত আদরণীয় করে তুলেছে? নাকি আরও কোনো ব্যাপার আছে!
বাংলাদেশের গৌরবজনক অধ্যায়ের বয়ান-বর্ণনা ইতিহাসে কম নেই। বিভিন্ন গৌরবময় অধ্যায়ের ইতিহাসকে জোড়া লাগিয়ে যে জাতীয়-ইতিহাস নির্মিত হয়েছে তাতে জনগোষ্ঠী হিসেবে এখানকার মানুষদের গৌরব করার মতো অনেক কিছুই পাওয়া যায়। কিন্তু উনিশ শতকের পরের পূর্ব বাংলার যে ইতিহাস পাওয়া যায় তা খুব একটা সুবিধার নয়। এই সময়ের ইতিহাসের নিবিড় পাঠ দিলে দেখা যাবে এটি পাণ্ডববর্জিত ভূখণ্ড। জল-জঙ্গলের ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়েছে পূর্ব বাংলা।
১৮৬৬ সালে দীনবন্ধু মিত্র রচিত ‘সধবার একাদশী’ নাটকে কলকাতার এক চরিত্রকে দেখা যাচ্ছে পূর্ব বাংলার এক চরিত্রের সামনে পা ফাঁক করে হাঁটছে আর কৌতুককরভাবে মুখ বাঁকিয়ে বলছে, ‘বাঙ্গাল! ড্যাঙ্গা পথের কাঙ্গাল’। ব্যাপারটা কেবল রাস্তাহীন, জলবাসী বলে খোটা দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, পূর্ব বাংলার মানুষের ব্যবহৃত ভাষাও যে যথেষ্ট গ্রাম্য সেই ইঙ্গিতও আছে সংলাপটিতে। সংলাপটির মধ্যে কৃষক, জেলে ইত্যাদি ‘ঊনপেশা’র ইঙ্গিত আবিষ্কার করে উঠতে পারাটাও খুব বেশি কষ্টসাধ্য নয়।
কথা যে পুরোপুরি মিছা তা না। উনিশ শতক, এমনকি বিশ শতকের প্রথম দিকের পূর্ব বাংলা বলতে মূলত বোঝানো হতো জেলে, চাষি, তাঁতি, কামার, কুমারের দেশ। দেশ ভাগের আগে এবং পরে পাকিস্তান আমলেও পূর্ব বাংলার মানুষদের অনেকে বলেছেন ‘নিম্নভূমির নিম্নজাতের মানুষ’।
পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের লেখা বয়ান-বর্ণনায় বাংলাদেশের মানুষদের ‘ঊন’ই মনে করা হতো। একারণে দেখা যাবে, বিশেষত ষাটের দশকের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-সংগ্রামের সময় আল মাহমুদের মতো গুরুত্বপূর্ণ কবিরা এখানকার মানুষদের ‘অনার্যতা’ নিয়ে শ্লাঘা অনুভব করে প্রচুর কাব্য-কবিতা রচনা করেছেন। অনেক ঐতিহাসিকের ইতিহাসগ্রন্থেও বলা হয়েছে, বাংলার উত্তর দিক থেকে এক জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে ঢুকেছে। তাদের রক্তের মিশ্রণে বাংলাদেশের নৃগোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। ওই অনুপ্রবেশকারী জনগোষ্ঠী ছিল ‘কল্পনাহীন’, ‘পরিশ্রমী’, ‘গোঁয়ার’ প্রকৃতির।
এ-ই তো অন্যের চোখে বাংলাদেশ। উপরের সব বয়ান-বর্ণনা পুরোপুরি ঠিক তা নয়; আলোচনার দাবি রাখে। কিন্তু সবই মিথ্যা নয়। বিশেষত উনিশ শতকের বাংলাদেশ যে গরিব মানুষদের এলাকা ছিল এতে খুব একটা সন্দেহ নেই।
‘দরিদ্র’ আর ‘অনালোকিত’ হওয়ার কারণে এখানকার মানুষকে বরাবরই অবর্ণনীয় সংগ্রাম করতে হয়েছে। এই সংগ্রাম ক্ষমতাবানের তরফ থেকে আরোপিত বঞ্চনা-অবমাননার বিরুদ্ধে যেমন, তেমনি বিরূপ প্রকৃতির বিরুদ্ধেও। সংগ্রাম, প্রতিরোধ, প্রতিবাদ, বিদ্রোহ এখানকার মানুষের ইতিহাসের নিত্যসঙ্গী, প্রধান স্বাতন্ত্র্যসূচক পরিচয়।
নজরুলের কবিতার অনেক মাত্রা আছে। সেই মাত্রা অনুসারে নজরুলের কবিসত্তার নানা পরিচয় শনাক্ত করা যাবে। কিন্তু একথা তো সত্য যে, ব্যক্তিজীবনে নজরুল ছিলেন এক হতদরিদ্র ঘরের সন্তান। এই দারিদ্র্য তাঁর কবিস্বভাবকে যে প্রধান গড়নটা দিয়েছে সেকথা তিনি নিজেই বলেছেন। তিনি বলেছেন, দারিদ্র্য তাঁকে দিয়েছে ‘অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস’, দিয়েছে, ‘বাণী ক্ষুরধার’। আর দিয়েছে, ‘উদ্ধত উলঙ্গ দৃষ্টি’। একারণে ইংরেজের অধীনে সেনবাহিনীর চাকরি থেকে চলে আসার দু-চার মাসের মধ্যেই তিনি উন্মোচন করে ফেলেছেন বাংলায় ইংরেজ শাসনের স্বরূপ।
নজরুল যখন উচ্চারণ করেন, ‘আমি উপাড়ি ফেলিব অধীন বিশ্ব’ বা যখন বলেন ‘আমি অবমানিতের ক্রন্দনরোল’ অথবা যখন বলেন, ‘তুমি শুয়ে র’বে তেতালার পরে আমরা রহিব নীচে,/অথচ তোমারে দেবতা বলিব, সে ভরসা আজ মিছে!’ তখন তা বাংলাদেশের মানুষকে একটু ভিন্নভাবে যুক্ত করে বৈ কি!
নজরুলের হামদ-নাত ও ইসলামি ইতিহাস-ঐতিহ্যানুরাগ প্রকাশক পরিচয়বাদী চিন্তার কথা না হয় না-ই বললাম। না হয় বাদ দেয়া যাক, নজরুলের কবিতায় প্রকাশিত পূর্ব বাংলার জনজীবনের গভীরে প্রবাহিত সহজিয়া অসাম্প্রদায়িক মানব-সম্পর্কের কথাও।
আসলে নজরুলের কবিতার এইসব ব্যাপার বাংলাদেশের মানুষকে যতটা দ্রুত যুক্ত করে কলকাতা বা অবিভক্ত বাংলার অপরাপর অংশকে অতটা ওই মাত্রায় যুক্ত করে না। নজরুলের কবিতার ভেতরকার অভিজ্ঞতার সঙ্গে কলকাতার মানুষের একাত্ম হওয়ার ব্যাপারটি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামের পরে আর তেমনটি কাজ করেনি। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের সংগ্রামী অভিযাত্রায় নজরুলকে আরো দীর্ঘকাল দরকার হয়েছে।
শুধু একাত্তরে শুধু নয়, বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সকল সংগ্রামে নজরুলকে দরকার হয়েছে এবং এখনো প্রয়োজন হয়। জনগোষ্ঠীর সামষ্টিক স্বভাব ও ইতিহাসের সঙ্গে নজরুল যতটা একাত্ম হন, অপরাপর খুব কমসংখ্যক কবির ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা ঘটে।
ফলে নজরুলের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের সম্পর্ক কেবল সাহিত্যিক সম্পর্ক নয়। এই সম্পর্ক সংগ্রামী স্বভাবের নৈকট্যেও সাথে গভীরভাবে যুক্ত। এই নৈকট্যকে রাজনীতি দিয়েই শুধু ব্যাখ্যা করা যাবে। অসম্ভব নয় যে, রাষ্ট্রীয় রাজনীতির বাইরেও নন্দনতাত্ত্বিক রাজনীতির আলোকেও ব্যাখ্যা করা যাবে। এও ব্যাখ্যা করা যাবে, বাংলাদেশের ‘অসাধারণ’ ও ‘অভিজাত’দের এলাকায় নজরুলের বিচরণ কেন তুলনামূলকভাবে কম।
স্থান, কাল ও ভাষাগত দিক থেকে ওমর খৈয়াম আমাদের একটু দূরের মানুষ ছিলেন—অথচ তাঁর নানান উক্তি আমাদের জীবনযাপনের অংশ হয়ে গেছে। নজরুলই বলতে গেলে দারুণভাবে তাঁকে আমাদের কাছের মানুষ করে দিয়েছেন।
৫ ঘণ্টা আগেচুক্তিতে আসলে কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কি না, সেই স্বীকৃতি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। প্রকৃতপক্ষে ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি বাংলাদেশের একমাত্র দাবি ছিল না। বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানি নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়া এবং ১৯৭১-এর আগে যৌথ সম্পদের ন্যায্য অংশও বাংলাদেশের দাবি ছিল।
১৩ ঘণ্টা আগে২০২৫ সালের আগস্টে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট দিল্লি ও আশেপাশের এলাকা থেকে সব পথকুকুর সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। আদেশটি দুই সপ্তাহের মধ্যে কার্যকর করতে বলা হয়েছিল। এই আদেশই জন্ম দেয় ‘কুকুর বাঁচাও’ আন্দোলনের।
১ দিন আগে২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার পর এই যুদ্ধ শুরু হয়। এখনো এটি এক বৈশ্বিক অভিযান, যার উদ্দেশ্য হলো কথিত ‘সন্ত্রাসবাদ’ দমন।
১ দিন আগে