হাসান জামিল
তুর্কি সিরিয়ালগুলো গেল কয়েক বছরে বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশেষ করে ওসমানীয় ডাইন্যাস্টির ইতিহাস উপজীব্য করে বানানো সিরিয়ালগুলো। দারুণ নির্মাণশৈলী আর স্ক্রিপ্টের কারণে সিরিয়ালগুলো যাঁরাই দেখেছেন, তাঁদের আকর্ষণ করেছে। আমিও অন্তত দুটি দেখছি। ওসমানের বাবা আর্তুগ্রুল গাজীকে নিয়ে বানানো একটা সিরিয়াল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমি বলছিলাম, ওরা একটা কমন প্রার্থনা করে। তা হলো–বেঁচে থাকো। ১২৫০ সালের আশপাশের সময়ে মানুষের মৃত্যু এত ‘সস্তা’ আর সহজ ছিল যে বেঁচে থাকাই যেন ওখানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আর চাওয়া। আমাদের এখনকার ঢাকা নগরে যেমন! একটু বাড়িয়ে বলা মনে হতেই পারে, হাজার বছর আগের সামন্তীয় সমাজের সঙ্গে তুলনা করাটা। কিন্তু ঢাকায় বেঁচে ফেরার চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আর কী হতে পারে বলুন! মিরপুরের শিয়ালবাড়ির আরিয়ান ফ্যাশনে আগুনে পোড়া ১৬ লাশের দিকে তাকিয়ে নিজেকে বরং একবার চ্যালেঞ্জ করুন! বলুন, এখানে মৃত্যুর চেয়ে সস্তা আর কি কিছু আছে? দিনশেষে জান নিয়ে ঘরে ফেরার চেয়ে আর কীই-বা দামি!
কবি নবারুণ ভট্টাচার্যের ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়’-এর অনেক বছর পরে কবি তুহিন খান যখন তাঁর কবিতায় বলেন, ‘এই মৃত্যু উপত্যকাই আমার দেশ’, তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি মিলিয়ে আমাদের তা মানতে বাধ্য হতে হয়। হ্যাঁ, এটা রাজনৈতিক কিংবা দৃশ্যত অরাজনৈতিক–যেকোনো কারণেই হোক; আপনাকে মৃত্যু উপত্যকা মেনেই আলাপটা আগে বাড়াতে হবে। এই দেশ আপনার দেশ, আমার দেশ।
শিয়ালবাড়ির পোড়া লাশের সামনে অনেক অনেক ‘মায়াকান্না’ আর অনেক ‘কারণ’-এর ব্যাখ্যা এখন জানা যাবে। শোক বইবে শীতের হাওয়ার মতো, কিন্তু মানুষের জীবনের মতো–জানেনই তো, শোকের আয়ু খুব কম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তো আরও কম। কথা উঠবে, জানা কথা সব–এই কারখানার অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাপনা ঠিক ছিল না; পাশের কেমিক্যাল কারখানার অনুমোদন নেই ইত্যাদি। ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ-গ্যাস প্রদানকারী সংস্থা, সিটি করপোরেশন, স্থাপনা ব্যবস্থাপনায় যুক্ত কর্তৃপক্ষ বা ফায়ার সার্ভিস–কেউ কি এর দায় নেবে?
আগেও তো এমন ঘটনা ঘটেছে। তখন কি এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে। সিন্ধু সেঁচে হয়তো দুয়েকটা উদাহরণ পাওয়া যাবে, কিন্তু এখানে নিয়ম হলো অনিয়মকারীরা অধরাই থাকেন। তাঁদের বিচার হয় না। আসলে অবিচার সব সময় আরও অবিচারের পথ প্রশস্ত করে।
কদিন আগের কথাই মনে করুন না, ২০২৪ সালের মার্চে বেইলি রোডে রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে ৪৬ জন মানুষ আগুনে পুড়ে মারা গেলেন। তাঁরা তো একেবারে প্রান্তিক নন, ফলে কান্না ও শোকের আয়ু কিছুটা বেশি ছিল। ঢাকার ছাদ-রেস্তোরাঁগুলো বেশ একটা ‘হম্বিতম্বি’ পোহাল। কিন্তু কোনো পোশাক কারখানা বা কেমিক্যাল কারখানার মারা যাওয়াদের তো সেভাবে কোনো এজেন্সি নেই, কণ্ঠ নেই। মাছের মৃত্যু যেন–আওয়াজ নেই। বড়জোর দুদিন হইচই, কেমিক্যাল কারখানা সরাও, আইন আছে, নিয়ম আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। পত্রিকার আছে একটা ফলোআপ, ‘মিরপুরে আগুন নিয়ে যা জানা গেল’ শিরোনাম তার, ভেতরে কমেন্ট দেবেন দুজন বিশেষজ্ঞ। এরপর আবার একটা আগুন বা বড় দুর্ঘটনার জন্য অপেক্ষা। নাতিদীর্ঘ। ঢাকা তো অঘটনেরই শহর।
গত দেড় দশকে কত হাজার শ্রমিক মারা গেছেন, তার ইয়ত্তা নেই। এক রানা প্লাজাই ২০১৩ সালে প্রায় ১২০০ মানুষ মারা গেলেন। এর খানিক আগে ২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিদ্বগ্ধ হওয়ার ঘটনায় ১১৭ জন মানুষকে বলতে গেলে পুড়িয়ে মারা হয়। মূলত এই দুই বড় ট্র্যাজেডির কারণে পোশাক রপ্তানির ওপর বড় প্রভাব পড়ে। তাই কারখানার মালিকেরা পরিবেশবান্ধব কারখানা নির্মাণের দিকে নজর দেন। এখন ঢাকার বাইরের বড় কারখানাগুলোর মধ্যে একটা বড় অংশ দৃশ্যত মনোরম। ২৪০টি কারখানা ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের পরিবেশবান্ধব সনদ পেয়েছে। এর উদ্যোক্তা কিন্তু বাংলাদেশ সরকার না। একেবারেই না। এর হেতু হলো ব্যবসা। এটি তাঁরা করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু ছোট কারখানাগুলোর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রয়েই গেছে। ছোট কারখানার মালিকেরা কন্সান্ট্রেশন ক্যাম্পের মতো কারখানা বানিয়ে রেখেছেন। আবাসিক এলাকায়, জনবহুল অঞ্চলে তাঁরা দেদারসে তৈরি করেছেন কারখানা। মিরপুরের শিয়ালবাড়ি এলাকার ‘বস্তি’র কাছের আরিয়ান ফ্যাশন যেমন।
গতকাল মিরপুরে যে কারখানায় আগুন লেগেছে, এর পাশেই কেমিক্যালের গোডাউন। সেখানকার আগুন এই লেখা লেখার সময়ও নেভেনি। এক্ষণে ঢাকার নিমতলি ট্র্যাজেডির কথা আপনারা মনে করতে পারেন। স্মৃতি থেকে বলছি, তখন টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছিলাম বেঁচে যাওয়া এক প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন, আগুন কেমন দ্রুত মাথার ওপর ভয়াবহ গতিতে উড়ে উড়ে ছড়িয়ে পড়ছিল। কেমিক্যালের কারখানার আগুন বরাবরই ভয়াবহ। বড়কাটারার পাঁচতলা ভবনে লাগা সেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে; অন্তত ১২৪ জন মারা যান এ অগ্নিকাণ্ডে। একই ধরনের ঘটনা ঘটে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে চুরিহাট্টায়। সেখানেও ৭১ জন মারা যান। এত মৃত্যু! ‘কী সহজে হয়ে গেল বলা,/ কাঁপল না গলা এতটুকু।’
এসব ঘটনার পর নগরের ‘মা-বাবারা’ আসেন, রাজনৈতিক নেতারা আসেন, হুংকার দেন। কিন্তু সময় গড়ায় আরেকটা ঘটনার দিকে। কয়েকদিনের ‘টম অ্যান্ড জেরি’, ও ‘ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড’ খেলা ছাড়া যেন আর কিছুই হয় না। এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ।
আজ হয়তো অনেক সাংবাদিক মিরপুরকে সামনে রেখে বলবেন বিগত সময়ে ঘটা পুরান ঢাকার আগুন লাগার কথা। হয়তো তাঁরা পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গোডাউনের খোঁজেও যাবেন। সরকার বাহাদুরের কর্তাব্যক্তিরা বসবেন আইনের কেতাব নিয়ে। মধ্যরাতের টিভি শোতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞদের শিডিউল নিয়ে টানাটানি হবে। ‘তার পর একরাশ কালো কালো ধোঁয়া...তার চলে যাওয়া।’
জোসেফ স্ট্যালিনের সেই বিখ্যাত উক্তিটি মনে করুন, ‘একজনের মৃত্যু একটি ট্র্যাজেডি, আর এক মিলিয়নের মৃত্যু একটি পরিসংখ্যান।’ কাগজে-কলমে ১৮ কোটি মানুষের দেশে মানুষ তো সস্তাই, শ্রমিক হলে আরও সস্তা। কিন্তু এক ইউনিট মানুষের কাছে এক ইউনিট মানুষের ভালোবাসা কি এই হিসাবে আসবে? হাজার লোকের কাছে এসব পরিসংখ্যান তো এটা হাঁসের পালকের মতো অলক্ষ্যে উড়ে যাওয়ার মতোই লঘু ঘটনা। কিন্তু ‘কারখানায় আগুন লেগেছে। আমরা আটকে গেছি, বের হতে পারছি না’—বলে যে মার্জিয়া সুলতানা আলো কোনো দিন আর ফোন না ধরার দেশে চলে গেলেন, তাঁর বাবা কি মার্জিয়ার এই স্বর কখনো ভুলে থাকতে পারবেন? ইতিহাসের পাতায় তাঁদের নাম লেখা হয় না, হবেও না। সেই সন্তান কি পাবে তার মা-বাবাকে, যিনি ঘুমের ভেতর আধো অন্ধকারে চুমু খেয়ে কারখানায় গেছেন, যিনি আর আলো নিয়ে ফিরবেন না তাঁর সন্তানের কাছে! একটা মৃত্য–এই শিশু বা মার্জিয়ার পরিবারের কাছে ‘থাই পাহাড়ের মতোই ভারী’। এই নগরে প্রতিটি জীবন যেন সস্তা, কিন্তু সেই জীবন আদতে কতটা অমূল্য—এটাই আমাদের প্রশ্নের কেন্দ্র। এসব কাঠামোবদ্ধ হত্যার কী জবাব দেব আমরা, যেদিন মুখ খুলে জানতে চাইবে প্রান্তিক মানুষেরা? সেই দিনের জন্য আমরা প্রস্তুত তো?
লেখক: কবি ও সাংবাদিক
তুর্কি সিরিয়ালগুলো গেল কয়েক বছরে বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশেষ করে ওসমানীয় ডাইন্যাস্টির ইতিহাস উপজীব্য করে বানানো সিরিয়ালগুলো। দারুণ নির্মাণশৈলী আর স্ক্রিপ্টের কারণে সিরিয়ালগুলো যাঁরাই দেখেছেন, তাঁদের আকর্ষণ করেছে। আমিও অন্তত দুটি দেখছি। ওসমানের বাবা আর্তুগ্রুল গাজীকে নিয়ে বানানো একটা সিরিয়াল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমি বলছিলাম, ওরা একটা কমন প্রার্থনা করে। তা হলো–বেঁচে থাকো। ১২৫০ সালের আশপাশের সময়ে মানুষের মৃত্যু এত ‘সস্তা’ আর সহজ ছিল যে বেঁচে থাকাই যেন ওখানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আর চাওয়া। আমাদের এখনকার ঢাকা নগরে যেমন! একটু বাড়িয়ে বলা মনে হতেই পারে, হাজার বছর আগের সামন্তীয় সমাজের সঙ্গে তুলনা করাটা। কিন্তু ঢাকায় বেঁচে ফেরার চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আর কী হতে পারে বলুন! মিরপুরের শিয়ালবাড়ির আরিয়ান ফ্যাশনে আগুনে পোড়া ১৬ লাশের দিকে তাকিয়ে নিজেকে বরং একবার চ্যালেঞ্জ করুন! বলুন, এখানে মৃত্যুর চেয়ে সস্তা আর কি কিছু আছে? দিনশেষে জান নিয়ে ঘরে ফেরার চেয়ে আর কীই-বা দামি!
কবি নবারুণ ভট্টাচার্যের ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়’-এর অনেক বছর পরে কবি তুহিন খান যখন তাঁর কবিতায় বলেন, ‘এই মৃত্যু উপত্যকাই আমার দেশ’, তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি মিলিয়ে আমাদের তা মানতে বাধ্য হতে হয়। হ্যাঁ, এটা রাজনৈতিক কিংবা দৃশ্যত অরাজনৈতিক–যেকোনো কারণেই হোক; আপনাকে মৃত্যু উপত্যকা মেনেই আলাপটা আগে বাড়াতে হবে। এই দেশ আপনার দেশ, আমার দেশ।
শিয়ালবাড়ির পোড়া লাশের সামনে অনেক অনেক ‘মায়াকান্না’ আর অনেক ‘কারণ’-এর ব্যাখ্যা এখন জানা যাবে। শোক বইবে শীতের হাওয়ার মতো, কিন্তু মানুষের জীবনের মতো–জানেনই তো, শোকের আয়ু খুব কম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তো আরও কম। কথা উঠবে, জানা কথা সব–এই কারখানার অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাপনা ঠিক ছিল না; পাশের কেমিক্যাল কারখানার অনুমোদন নেই ইত্যাদি। ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ-গ্যাস প্রদানকারী সংস্থা, সিটি করপোরেশন, স্থাপনা ব্যবস্থাপনায় যুক্ত কর্তৃপক্ষ বা ফায়ার সার্ভিস–কেউ কি এর দায় নেবে?
আগেও তো এমন ঘটনা ঘটেছে। তখন কি এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে। সিন্ধু সেঁচে হয়তো দুয়েকটা উদাহরণ পাওয়া যাবে, কিন্তু এখানে নিয়ম হলো অনিয়মকারীরা অধরাই থাকেন। তাঁদের বিচার হয় না। আসলে অবিচার সব সময় আরও অবিচারের পথ প্রশস্ত করে।
কদিন আগের কথাই মনে করুন না, ২০২৪ সালের মার্চে বেইলি রোডে রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে ৪৬ জন মানুষ আগুনে পুড়ে মারা গেলেন। তাঁরা তো একেবারে প্রান্তিক নন, ফলে কান্না ও শোকের আয়ু কিছুটা বেশি ছিল। ঢাকার ছাদ-রেস্তোরাঁগুলো বেশ একটা ‘হম্বিতম্বি’ পোহাল। কিন্তু কোনো পোশাক কারখানা বা কেমিক্যাল কারখানার মারা যাওয়াদের তো সেভাবে কোনো এজেন্সি নেই, কণ্ঠ নেই। মাছের মৃত্যু যেন–আওয়াজ নেই। বড়জোর দুদিন হইচই, কেমিক্যাল কারখানা সরাও, আইন আছে, নিয়ম আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। পত্রিকার আছে একটা ফলোআপ, ‘মিরপুরে আগুন নিয়ে যা জানা গেল’ শিরোনাম তার, ভেতরে কমেন্ট দেবেন দুজন বিশেষজ্ঞ। এরপর আবার একটা আগুন বা বড় দুর্ঘটনার জন্য অপেক্ষা। নাতিদীর্ঘ। ঢাকা তো অঘটনেরই শহর।
গত দেড় দশকে কত হাজার শ্রমিক মারা গেছেন, তার ইয়ত্তা নেই। এক রানা প্লাজাই ২০১৩ সালে প্রায় ১২০০ মানুষ মারা গেলেন। এর খানিক আগে ২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিদ্বগ্ধ হওয়ার ঘটনায় ১১৭ জন মানুষকে বলতে গেলে পুড়িয়ে মারা হয়। মূলত এই দুই বড় ট্র্যাজেডির কারণে পোশাক রপ্তানির ওপর বড় প্রভাব পড়ে। তাই কারখানার মালিকেরা পরিবেশবান্ধব কারখানা নির্মাণের দিকে নজর দেন। এখন ঢাকার বাইরের বড় কারখানাগুলোর মধ্যে একটা বড় অংশ দৃশ্যত মনোরম। ২৪০টি কারখানা ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের পরিবেশবান্ধব সনদ পেয়েছে। এর উদ্যোক্তা কিন্তু বাংলাদেশ সরকার না। একেবারেই না। এর হেতু হলো ব্যবসা। এটি তাঁরা করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু ছোট কারখানাগুলোর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রয়েই গেছে। ছোট কারখানার মালিকেরা কন্সান্ট্রেশন ক্যাম্পের মতো কারখানা বানিয়ে রেখেছেন। আবাসিক এলাকায়, জনবহুল অঞ্চলে তাঁরা দেদারসে তৈরি করেছেন কারখানা। মিরপুরের শিয়ালবাড়ি এলাকার ‘বস্তি’র কাছের আরিয়ান ফ্যাশন যেমন।
গতকাল মিরপুরে যে কারখানায় আগুন লেগেছে, এর পাশেই কেমিক্যালের গোডাউন। সেখানকার আগুন এই লেখা লেখার সময়ও নেভেনি। এক্ষণে ঢাকার নিমতলি ট্র্যাজেডির কথা আপনারা মনে করতে পারেন। স্মৃতি থেকে বলছি, তখন টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছিলাম বেঁচে যাওয়া এক প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন, আগুন কেমন দ্রুত মাথার ওপর ভয়াবহ গতিতে উড়ে উড়ে ছড়িয়ে পড়ছিল। কেমিক্যালের কারখানার আগুন বরাবরই ভয়াবহ। বড়কাটারার পাঁচতলা ভবনে লাগা সেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে; অন্তত ১২৪ জন মারা যান এ অগ্নিকাণ্ডে। একই ধরনের ঘটনা ঘটে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে চুরিহাট্টায়। সেখানেও ৭১ জন মারা যান। এত মৃত্যু! ‘কী সহজে হয়ে গেল বলা,/ কাঁপল না গলা এতটুকু।’
এসব ঘটনার পর নগরের ‘মা-বাবারা’ আসেন, রাজনৈতিক নেতারা আসেন, হুংকার দেন। কিন্তু সময় গড়ায় আরেকটা ঘটনার দিকে। কয়েকদিনের ‘টম অ্যান্ড জেরি’, ও ‘ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড’ খেলা ছাড়া যেন আর কিছুই হয় না। এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ।
আজ হয়তো অনেক সাংবাদিক মিরপুরকে সামনে রেখে বলবেন বিগত সময়ে ঘটা পুরান ঢাকার আগুন লাগার কথা। হয়তো তাঁরা পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গোডাউনের খোঁজেও যাবেন। সরকার বাহাদুরের কর্তাব্যক্তিরা বসবেন আইনের কেতাব নিয়ে। মধ্যরাতের টিভি শোতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞদের শিডিউল নিয়ে টানাটানি হবে। ‘তার পর একরাশ কালো কালো ধোঁয়া...তার চলে যাওয়া।’
জোসেফ স্ট্যালিনের সেই বিখ্যাত উক্তিটি মনে করুন, ‘একজনের মৃত্যু একটি ট্র্যাজেডি, আর এক মিলিয়নের মৃত্যু একটি পরিসংখ্যান।’ কাগজে-কলমে ১৮ কোটি মানুষের দেশে মানুষ তো সস্তাই, শ্রমিক হলে আরও সস্তা। কিন্তু এক ইউনিট মানুষের কাছে এক ইউনিট মানুষের ভালোবাসা কি এই হিসাবে আসবে? হাজার লোকের কাছে এসব পরিসংখ্যান তো এটা হাঁসের পালকের মতো অলক্ষ্যে উড়ে যাওয়ার মতোই লঘু ঘটনা। কিন্তু ‘কারখানায় আগুন লেগেছে। আমরা আটকে গেছি, বের হতে পারছি না’—বলে যে মার্জিয়া সুলতানা আলো কোনো দিন আর ফোন না ধরার দেশে চলে গেলেন, তাঁর বাবা কি মার্জিয়ার এই স্বর কখনো ভুলে থাকতে পারবেন? ইতিহাসের পাতায় তাঁদের নাম লেখা হয় না, হবেও না। সেই সন্তান কি পাবে তার মা-বাবাকে, যিনি ঘুমের ভেতর আধো অন্ধকারে চুমু খেয়ে কারখানায় গেছেন, যিনি আর আলো নিয়ে ফিরবেন না তাঁর সন্তানের কাছে! একটা মৃত্য–এই শিশু বা মার্জিয়ার পরিবারের কাছে ‘থাই পাহাড়ের মতোই ভারী’। এই নগরে প্রতিটি জীবন যেন সস্তা, কিন্তু সেই জীবন আদতে কতটা অমূল্য—এটাই আমাদের প্রশ্নের কেন্দ্র। এসব কাঠামোবদ্ধ হত্যার কী জবাব দেব আমরা, যেদিন মুখ খুলে জানতে চাইবে প্রান্তিক মানুষেরা? সেই দিনের জন্য আমরা প্রস্তুত তো?
লেখক: কবি ও সাংবাদিক
আমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন চার টাকা দিয়ে মুগদা ব্যাংক কলোনির গলি থেকে মতিঝিল মডেল স্কুলে যাতায়াত হয়ে যেত। যেতে লাগত দুই টাকা, আসতে দুই টাকা। এই টাকাটা বাঁচাতে আমি ও আমার বড় ভাই—আমরা দুজনেই হেঁটে যাতায়াত করতাম। বিনিময়ে লুকিয়ে চুরিয়ে একটা সেবা প্রকাশনীর তিন গোয়েন্দা কিনতাম। পেপারব্যাকের চায়না নিউজপ্
১৮ মিনিট আগেযে রাতে রকিব হাসানকে ফোন করেছিলাম, সে রাতে পূর্ণিমা ছিল না। ঘন অন্ধকারই বলা যায়। তবু রাতটি স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে আছে।
২৬ মিনিট আগেজনপ্রিয় গোয়েন্দা লেখক রকিব হাসান আজ প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর ‘তিন গোয়েন্দা’ এক সময় তুমুল জনপ্রিয় ছিল। রকিব হাসানকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন আরেক জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইন।
১ ঘণ্টা আগেঢাকা নগরীর বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা যেন এখন এক ভয়াবহ বাস্তবতা। মিরপুরের রাসায়নিক গুদামে আগুনে ১৬ জনের মৃত্যু, তার আগে বঙ্গবাজারে শতাধিক দোকান ছাই হয়ে যাওয়া কিংবা চকবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে বহু প্রাণহানি—এসব ঘটনা যেন এক ভয়ংকর চক্রে পরিণত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, কেন এই শহরে এত ঘন ঘন আগুন লাগে?
১ ঘণ্টা আগে