leadT1ad

ইমরান খানকে নিয়ে কী ঘটছে পাকিস্তানে

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৫৪
ইমরান খানের মৃত্যুর গুজবে পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ঘিরে পাকিস্তানে তীব্র রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ইমরান খান ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাবন্দী। সম্প্রতি তার মৃত্যু বা গুরুতর অসুস্থতার গুজব ছড়িয়ে পড়ায় তার সমর্থকদের মাঝে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। সহিংস দমন-পীড়ন সত্ত্বেও তার সমর্থকেরা বিক্ষোভ শুরু করেছেন। এই পরিস্থিতি ইমরান খানের দল পিটিআই, পাকিস্তানের সেনা সমর্থিত সরকার এবং বিচার বিভাগের গভীর দ্বন্দ্বকে আরও প্রকাশ্য করেছে।

ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ২০১৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত। ২০২২-এর এপ্রিলে তিনি অনাস্থা ভোটে পদচ্যুত হন। তিনি অভিযোগ করেন, এই প্রক্রিয়া ছিল সামরিক বাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ পরিকল্পনা।

২০২৩-এর আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে তিনি রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে বন্দী। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় উপহার বিক্রির মামলাসহ দুর্নীতি ও কূটনৈতিক নথি ফাঁসের অভিযোগ রয়েছে। ৭৩ বছর বয়সী খান এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেন।

তার দল পিটিআই এখনো একটি শক্তিশালী বিরোধী শক্তি। তারা প্রায়ই প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন, সামরিক বাহিনীসমর্থিত সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ায়। পিটিআইয়ের পূর্ববর্তী আন্দোলনগুলোতে সহিংস সংঘর্ষ, গ্রেপ্তার ও দমন-পীড়নের ঘটনা ঘটেছে।

বিচ্ছিন্নতা ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত গুজব নিয়ে উদ্বেগ

বর্তমান অস্থিরতার মূল কারণ ইমরান খানের দীর্ঘদিনের একাকী বন্দিত্ব। পরিবারের সদস্য, আইনজীবী ও চিকিৎসকদের তাকে দেখতে দেওয়া হচ্ছে না। গত তিন থেকে ছয় সপ্তাহ ধরে তারসঙ্গে কারাগারে কেউ দেখা করতে পারছেন না। ইসলামাবাদ হাই কোর্টের সাপ্তাহিক সাক্ষাতের নির্দেশ থাকলেও তা কার্যকর হয়নি।

যুক্তরাজ্যে থাকা তার দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান প্রকাশ্যে উদ্বেগ জানিয়েছেন। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে তাদের বাবা হয়তো গুরুতর অসুস্থ বা মারা গেছেন। তারা এই পরিস্থিতিকে ‘মানসিক নির্যাতন’ বলে বর্ণনা করেছেন।

কাসিম অভিযোগ করেন, কর্তৃপক্ষ হয়তো কোনো ‘অপরিবর্তনীয় ঘটনা’ গোপন করছে। তিনি জানান, কয়েক মাস ধরে কোনো সরাসরি যোগাযোগ নেই এবং খানের ব্যক্তিগত চিকিৎসককে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

তার দুই বোন আলীমা খান ও উজমা খান বলেছেন, খান একাকী সেলে বন্দী এবং পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ইমরান খানের সাবেক স্ত্রী জেমাইমা গোল্ডস্মিথও তার সঙ্গে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কথা তুলে ধরেছেন।

এসব অভিযোগের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে খানের মৃত্যুর গুজব। এতে দেশজুড়ে আতঙ্ক তৈরি হয়। তবে কারা কর্তৃপক্ষ ও সরকারি মুখপাত্ররা বারবার এসব গুজব অস্বীকার করেছেন। তারা দাবি করেছেন, ইমরান খান সুস্থ আছেন এবং শারীরিকভাবে ভালো অবস্থায় রয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কারা কর্মকর্তা বলেন, ইমরান খানকে উচ্চ নিরাপত্তাবেষ্টিত স্থানে স্থানান্তরের কোনো পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি কিছু জানে না। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানা গেছে, খানের বোন উজমা এবং এক আইনজীবীকে সীমিত সময়ের জন্য সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে তাদের উপর কঠোর নির্দেশ ছিল, যাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা না হয়।

পরিকল্পিত বিক্ষোভ ও সরকারি দমন-পীড়ন

দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতার প্রতিবাদে পিটিআই আজ মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর ২০২৫) শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের ঘোষণা দেয়। বিক্ষোভের স্থান হিসেবে ঠিক করা হয় আদিয়ালা জেল এবং ইসলামাবাদ হাই কোর্টের সামনে। তাদের দাবি ইমরান খানের ‘বেঁচে থাকার প্রমাণ’ দেখানো এবং আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন।

পিটিআই নেতা আসাদ কায়সার জানান, বিরোধী সংসদ সদস্যরা প্রথমে ইসলামাবাদ হাই কোর্ট প্রাঙ্গণে জড়ো হবেন। পরে তারা সেখান থেকে আদিয়ালা জেলের দিকে মার্চ করবেন। তিনি অভিযোগ করেন যে আদালতের নির্দেশ কার্যকর করা হয়নি।

মুখ্যমন্ত্রী সোহেল আফ্রিদির নেতৃত্বে খাইবার পাখতুনখোয়া পিটিআই ইউনিট একই দিন বড় মাপের সমাবেশের পরিকল্পনা করে। এসব সমাবেশ সড়কপথ অবরোধের আশঙ্কা তৈরি করছে। আফ্রিদি এর আগে জেল গেটের সামনে অবস্থান কর্মসূচিও করেছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টে দেখা যায়, দেশব্যাপী সমর্থকরা আন্দোলনে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পরিস্থিতি উচ্চ সতর্কতার পর্যায়ে পৌঁছায়।

সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নেয়। ১-৩ ডিসেম্বর রাওয়ালপিন্ডি এবং ১৮ জানুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এই ঔপনিবেশিক আইন অনুযায়ী পাঁচজনের বেশি মানুষের সমাবেশ, র‌্যালি, মিছিল, অস্ত্র বহন এবং ঘৃণাসূচক বক্তব্য নিষিদ্ধ।

কর্তৃপক্ষ দাবি করে, সংবেদনশীল স্থানে সহিংসতার আশঙ্কা থাকায় এই নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন। মোটরসাইকেলে ডাবল রাইডিং এবং লাউডস্পিকার ব্যবহারের ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। পিটিআই নেতারা এই নিষেধাজ্ঞা মানতে অস্বীকৃতি জানান, ফলে পুলিশের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি

চলমান সঙ্কট বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মানবাধিকার এবং পাকিস্তানের রাজনীতিতে সামরিক প্রভাব নিয়ে দীর্ঘদিনের উদ্বেগকে সামনে এনেছে। আদালতের আদেশ উপেক্ষার ঘটনা নির্বাহী ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে সমালোচিত হয়েছে। এতে আইনের শাসন দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ফেডারেল ও প্রাদেশিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে খাইবার পাখতুনখোয়ায় গভর্নর শাসন জারির সম্ভাবনা নিয়েও জল্পনা চলছে। এ পরিস্থিতিতে ইমরান খানের পরিবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।

যদি বিক্ষোভ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, তাহলে গ্রেপ্তার, সহিংসতা বা আরও রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। এর আগেও পিটিআইয়ের আন্দোলনে এমন ঘটনা ঘটেছে। ইমরান খানের স্থায়ী জনপ্রিয়তা, যাকে অনেকেই ‘খাঁচাবন্দী বাঘ’ বলে বর্ণনা করেন, পাকিস্তানের প্রচলিত ক্ষমতার ভারসাম্যকে চ্যালেঞ্জ করে যাচ্ছে। আজকের ঘটনাবলী দেশটির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথ বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত