গত তিন অর্থবছরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ২০ শতাংশ কোটায় জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের বই ক্রয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে শেখ পরিবার সংশ্লিষ্ট বইকেই নজিরবিহীন প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১-২২ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত বই কেনার বাজেটের সিংহভাগই ব্যয় হয়েছে শেখ পরিবারের বইয়ে।
সর্বশেষ অর্থবছরে ৭০ লাখ টাকার মধ্যে প্রায় ৪৩ লাখ টাকাই গেছে এই খাতে, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের বই কেনা হয়েছে মাত্র ৬ লাখ টাকার। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে মুক্তিযুদ্ধের বই কেনা হয়েছিল মাত্র ৮৫ হাজার টাকার। এছাড়া দেশি প্রকাশকদের বঞ্চিত করে ১০ লাখ টাকার ভারতীয় বইও কেনা হয়েছে।
হুমায়ূন শফিক

ভাঁজে কি, তা বিষয় নয়। মলাটে বঙ্গবন্ধু কিংবা শেখ পরিবারের কারও নাম মানেই গুরুত্বপূর্ণ। লুফে নিয়েছে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শেষ তিন অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মন্ত্রী-আমলাদের লেখা দ্বিগুণ দামে মানহীন, এমনকি ভারতীয় প্রকাশনীর বই কেনার অভিযোগ উঠেছে। এ জন্য অবশ্য জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ‘সংস্কৃতিমন্ত্রী ও সচিবের ২০ শতাংশ কোটা’ কাজে লাগিয়েছে।
স্ট্রিমের অনুসন্ধানে এসেছে, বেসরকারি গ্রন্থাগারে বিতরণের জন্য ২০২১-২২ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় দুই কোটি ৬২ হাজার টাকার বই কিনেছে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। এর মধ্যে শুধু শেখ পরিবারের নামের বই কিনতে ব্যয় করেছে ৮৪ লাখ টাকার বেশি। অথচ মহান মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা বই কেনা হয়েছে মাত্র ১৮ লাখ টাকার। আবার ঘুরেফিরে একই লেখক ও প্রকাশনীর বই কেনা হয়েছে। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র তৎকালীন সংস্কৃতিমন্ত্রী এবং সচিবের পছন্দের প্রতিষ্ঠান ও লেখক, কিছু ক্ষেত্রে নিজেরাই তোষামোদির জন্য শেখ পরিবারের বইকে প্রাধান্য দিয়েছে।
সাহিত্যিকদের অভিযোগ, সরকারি টাকা ‘গৌরি সেন’ করার জন্যই ২০২০ সালে বেসরকারি গ্রন্থাগারে বই নির্বাচন ও অনুদান বিতরণ নীতিমালা করা হয়। বিতর্কের পর ২০২২ সালে সংশোধনী আনা হলেও, মোট বরাদ্দের ২০ শতাংশ কোটা বহাল রাখে। এই বিশেষ কোটা ব্যবহার করেই রাজনৈতিক বিবেচনায় বই কেনা হয়েছে, যা সাহিত্যসমাজকে কলুষিত এবং ধ্বংস হয়েছে সৃজনশীলতা।
এ ব্যাপারে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগম স্ট্রিমকে বলেছেন, বিগত আমলে ২০ শতাংশ কোটা ব্যবহার করে মন্ত্রী এবং সচিব ঘনিষ্ঠ প্রকাশক ও লেখকদের মানহীন অনেক বই কেনা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কর্মকর্তা বা আমলাদের নিজের লেখা বইও কেনা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিতর্কের কারণে আমরা এবার ১০৩টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো বই নিইনি। মৌলিক, অনুবাদ বা সম্পাদিত বইয়ের ক্ষেত্রে প্রকাশককে লেখক, সম্পাদক ও অনুবাদকের সঙ্গে করা চুক্তিপত্র দিতে হচ্ছে। এরপর তা যাচাই-বাছাই করা হবে। পরেও ভুয়া প্রমাণিত হলে বই বাতিল করা হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মঞ্জুরিকৃত অনুদান থেকে ২০ শতাংশ কোটায় জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ৪৭ প্রকাশনী থেকে ১২৪টি বই কেনে। ২৪ হাজার ৮০০ কপির জন্য দেয় ৬৪ লাখ ১৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে শেখ পরিবার সংশ্লিষ্ট ১৮টি বই (৫ হাজার ৬০০ কপি) কেনা হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকায়। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের বই মাত্র ৮৫ হাজার টাকার।
২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৫ লাখ ৫৭ হাজার টাকার বই কেনে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। ৫৯ প্রকাশনীর ১৩৩টি বইয়ের ১৫ হাজার ৩১৫ কপির মধ্যে শুধু শেখ পরিবার সংশ্লিষ্ট ৫৪টির (৬ হাজার ৪৩০ কপি) দাম প্রায় ২৬ লাখ টাকা। এই অর্থবছরে মুক্তিযুদ্ধের বই কেনা হয়েছে ১১ লাখ ১২ হাজার টাকার।
একইভাবে কোটায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫১ প্রকাশনীর ৯২টি বইয়ের ১৩ হাজার ৩৭৫ কপি কিনতে ব্যয় করেছে ৭০ লাখ ২৩ হাজার টাকার বেশি। এর মধ্যে শেখ পরিবার সংশ্লিষ্ট ৩৯টি বইয়ে (৫ হাজার ৬৪৫ কপি) ব্যয় ৪২ লাখ ৬৮, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের বই কেনা হয়েছে ছয় লাখ ১১ হাজার টাকার। এছাড়া এই অর্থবছরে ১০ লাখ ৬৭ হাজার টাকার ভারতীয় বই কিনেছে গ্রন্থকেন্দ্র।
২০২১-২২ অর্থবছরে কোটায় সবচেয়ে বেশি বাংলা একাডেমির ছয়টি বইয়ের দুই হাজার ৮০০ কপি কেনা হয়। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সুভাষ সিংহ রায়ের ‘বঙ্গবন্ধু ও অসাম্প্রদায়িকতা’, বেবি মওদুদের ‘রাসেলের গল্প’ এবং শেখ মুজিবুর রহমানের ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘আমার দেখা নয়াচীন’। এরপর চিত্রা প্রকাশনী থেকে ১০ বইয়ের দুই হাজার কপি কেনা হয়। কোটার বাইরেও গ্রন্থকেন্দ্র ৪৩৯ প্রকাশনীর যে এক হাজার ২০৯টি বই কেনে, তার মধ্যে ১০৩টিই শেখ পরিবারকেন্দ্রিক।
আমরা আর পেছনে যেতে চাই না। ভবিষ্যতের দিকে তাকাই। এখন বই কেনার জন্য কমিটি রয়েছে, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে। ২০ শতাংশ কোটা বহাল আছে। রাষ্ট্রপতির কিছু ক্ষমতা যেমন সংরক্ষিত থাকে, এটিও তেমন একটি বিষয়। সাইফুল ইসলাম, সংস্কৃতি সচিবের একান্ত সচিব (উপসচিব)
২০২২-২৩ অর্থবছরে কোটায় সবচেয়ে বেশি বই কেনা হয়েছে বাংলা একাডেমির ২০টি। এর মধ্যে শেখ পরিবারের ওপর লেখা বই ১৪টি, যা মোট বইয়ের ৭৫ শতাংশ। নীতিমালা অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বইকে সমান গুরুত্ব দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে কেনা হয়েছে একটি। দ্বিতীয় অবস্থানে গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র। তাদের ১০টি বই কেনা হয়েছে তিন লাখ ২৫ হাজার টাকায়। তৃতীয় স্থানে আগের অর্থবছরে দ্বিতীয় চিত্রা প্রকাশনীর ছয় বই। কোটার বাইরে ৩৫৩ প্রকাশনীর ৮৫৬টি বই কেনা হয়েছে, যার মধ্যে শেখ পরিবারকেন্দ্রিক ৫৩টি। লেখকদের আবেদনের ভিত্তিতে নেওয়া ১৫ বইয়ের মধ্যে তিনটি শেখ পরিবারের। তালিকায় দেখা গেছে, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের লেখা একটি বইয়ের ৩০ কপি কেনা হয়েছে প্রতিটি দুই হাজার ১০০ টাকা দরে।
এছাড়া ঘুরেফিরে কেনার ক্ষেত্রে ঋদ্ধি প্রকাশন, অন্যপ্রকাশ, সময়, আগামী, প্রথমা, চারুলিপি, অনন্যা, সাহিত্যপ্রকাশ, কথাপ্রকাশ, বাতিঘর, ইউপিএল, মাওলা ব্রাদার্স ও সময় প্রকাশনের বইকে বেছে নিয়েছে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র।
সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের। ২০ শতাংশ কোটায় যে ১৩ হাজার ৩৭৫ কপি কেনা হয়েছে, তাতে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার-সংক্রান্ত বই-ই বেশি। শেখ হাসিনার লেখা বা সম্পাদিত বইও নেহায়েত কম নয়। সবচেয়ে বেশি কেনা হয়েছে হাক্কানী পাবলিশার্সের তিন বইয়ের ২২০ কপি। সাত লাখ টাকায় কেনা তিনটিই শেখ মুজিবকে নিয়ে। বইগুলো হলো– শেখ হাসিনার ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টিলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য ন্যাশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’, ‘বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ ও এনায়েতুর রাহিমের ‘ইউকে ফরেইন অ্যান্ড কমনওয়েল্থ অফিস অ্যান্ড ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট: ডিক্লাসিফাইড ডকুমেন্টস ১৯৬২-১৯৭১, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যান্ড স্ট্রাগল ফর ইন্ডিপেন্ডেন্স’। প্রথম বইটির মূল্য ৩৯ হাজার ২০০ এবং পরের দুটি দুই হাজার টাকা করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাক্কানীর কাছ থেকে বাজার দরের চেয়ে বেশি দামে বইগুলো কেনে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। যেমন: ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস’ বইটি সেময় বাজারে ৫০ শতাংশ ছাড়ে ১৫ হাজারে বিক্রি হলেও, কেনা হয়েছে ৩০ হাজার টাকায়।
এরপর বাংলা একাডেমি ও মাওলা ব্রাদার্স থেকে বেশি বই কেনা হয়। এর মধ্যে মওলা থেকে শেখ হাসিনার ‘আগরতলা কন্সপিরেসি কেস (১-৪)’ এর দাম তিন হাজার ৬০০ টাকা। আরও ছিল বেবী মওদুদের অনুবাদ ‘জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ (২০১০-১১)’, ‘সবুজ মাঠ পেরিয়ে’ ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের ‘বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ একজন যুদ্ধশিশুর গল্প ও অন্যান্য’।
জিনিয়াস পাবলিকেশন থেকে কেনা চারটির মধ্যে তিনটিই শেখ হাসিনার লেখা। এগুলো হলো– শেখ হাসিনার ‘আহ্বান: জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ (২০০৯-২০২৩)’, ‘সকলের তরে সকলে আমরা: জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৯-২০২৩’ ও শেখ মেহেদী হাসানের ‘বঙ্গমাতা: সংকটে সংগ্রামে নির্ভীক সহযাত্রী’। এর মধ্যে দ্বিতীয় বইটি দুবার কেনা হয়েছে।
পাঞ্জেরি পাবলিকেশন থেকে মারুফ রসুলের ‘বাকশালের আদ্যোপান্ত (১ম খণ্ড)’ একই বছরে দুবারে কেনা হয়েছে ৩০০ কপি। জোনাকী প্রকাশনী থেকে শেখ হাফিজুর রহমানের ‘ফাদার অব দ্য ন্যাশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ এবং ওবায়দুল কাদেরের ‘সংবাদপত্র স্মারকগ্রন্থ: ১৭ মার্চ ২০২০’ কেনা হয়েছে।
এ তালিকায় ভারতের হাভার্ড প্রকাশনা সংস্থার ‘দ্য অ্যাসেনশিয়াল টেগর’ও রয়েছে, প্রতিটি পাঁচ হাজার ৩৩৬ টাকা করে ২০০ কপি কেনা হয়েছে। এ হিসাবে ভারতীয় বই কিনতে খরচ হয়েছে ১০ লাখ ৬৭ হাজার টাকার বেশি।
এই বইটির বাংলাদেশি কোনো সংস্করণ পাওয়া যায়নি। বইটির সম্পাদক যথাক্রমে ফকরুল আলম, রাধা চক্রবর্তী ও অমিত চৌধুরী। এ ব্যাপারে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগম বলেন, ‘এ ধরনের আরও কিছু বিদেশি বই আগেও কেনা হয়েছিল বলে জানতে পেরেছি। নতুন করে আর কেনা হবে না।’
কোটা থাকলে, অবশ্যই তার অধীনে নির্দিষ্ট নিয়ম থাকতে হবে। যা খুশি তাই কিনলাম, এমন যেন না হয়।’ কাজল শাহনেওয়াজ, কবি ও কথাসাহিত্যিক
নীতিমালায় বলা হয়েছে, মোট বরাদ্দের ২০ শতাংশ অর্থ সংস্কৃতিমন্ত্রী ও সচিবের বিশেষ বিবেচনায় সরাসরি মঞ্জুরির জন্য সংরক্ষিত থাকবে। অর্থাৎ, বই কেনার টাকার এক-পঞ্চমাংশে মন্ত্রী ও সচিব নিজের পছন্দমতো বই বেছে নিতে পারেন, যত কপি খুশি।
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের এক কর্মকর্তা স্ট্রিমের কাছে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নীতিমালার ২০ শতাংশ বিশেষ কোটা কিছু নির্দিষ্ট প্রকাশনাকে সুবিধা দিয়েছে। মন্ত্রী বা সচিবদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা প্রকাশনা সংস্থাগুলোর বইকে গুরুত্ব দিয়েছে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। বিগত আমলে তোষণের জন্যই সরকারি অর্থে কেনা বইয়ে শেখ পরিবার গুরুত্ব পেয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বইকেও তারা প্রাধান্য দেয়নি।
এ ব্যাপারে সংস্কৃতি সচিবের একান্ত সচিব (উপসচিব) সাইফুল ইসলাম স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমরা আর পেছনে যেতে চাই না। ভবিষ্যতের দিকে তাকাই। এখন বই কেনার জন্য কমিটি রয়েছে, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে।’ তিনি বলেন, ’২০ শতাংশ কোটা বহাল আছে। রাষ্ট্রপতির কিছু ক্ষমতা যেমন সংরক্ষিত থাকে, এটিও তেমন একটি বিষয়।’
নীতিমালা অনুযায়ী এখন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের মোট বরাদ্দের ৮০ শতাংশ বই একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি নির্বাচন করে। এই কমিটির সভাপতি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের শাখা–৪ এর যুগ্মসচিব। সদস্য জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, বাংলা একাডেমি, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, আর্কাইভ ও কপিরাইট অফিসের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও দুজন সাহিত্যিক কিংবা বুদ্ধিজীবী।
তবে বিশেষ কোটা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে কবি ও কথাসাহিত্যিক কাজল শাহনেওয়াজ স্ট্রিমকে বলেছেন, ‘কোটা থাকলে, অবশ্যই তার অধীনে নির্দিষ্ট নিয়ম থাকতে হবে। যা খুশি তাই কিনলাম, এমন যেন না হয়।’ কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কালাম ও মোস্তাক শরীফ বলেন, ‘মন্ত্রণালয় পরামর্শ দিতে পারে। কোটার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’
গবেষক ও লেখক পুলিন বকসী প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘সচিব বা মন্ত্রী কি বই বিশেষজ্ঞ? মন্ত্রী বা সচিবের অংশগ্রহণই উচিত নয়।’ তরুণ লেখক আরিফ রহমানের মতে, ‘বই নির্বাচন রাজনৈতিক বিবেচনা বা ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয় হতে পারে না। এর একমাত্র মাপকাঠি হবে সাহিত্যিক ও জ্ঞানতাত্ত্বিক মূল্য। ২০ শতাংশ কোটা মূলত রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহার করে একটি সুবিধাভোগী লেখক গোষ্ঠী তৈরি করার ঘৃণ্য প্রক্রিয়া। জনগণের পয়সায় আমরা জ্ঞানের পরিবর্তে স্বজনপ্রীতি কিনতে পারি না। এই অপচয় বন্ধ করতে হবে।’
প্রথমা প্রকাশনের ব্যবস্থাপক কাউছার আহম্মেদ বলেন, ‘বই বাছাইয়ে বিশেষজ্ঞরা দায়িত্ব পেলে পাঠকদের চাহিদা ও রুচি তৈরির সহায়ক বই গ্রন্থাগারে স্থান পাবে।’ আদর্শ প্রকাশনীর প্রকাশক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কোটার কারণে বিগত আমলে দেখেছি, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র দেদারছে কিনেছে মানহীন বই। এই প্রথা চলতে থাকলে প্রকাশনী জগতই ধ্বংস হয়ে যাবে।’

ভাঁজে কি, তা বিষয় নয়। মলাটে বঙ্গবন্ধু কিংবা শেখ পরিবারের কারও নাম মানেই গুরুত্বপূর্ণ। লুফে নিয়েছে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শেষ তিন অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মন্ত্রী-আমলাদের লেখা দ্বিগুণ দামে মানহীন, এমনকি ভারতীয় প্রকাশনীর বই কেনার অভিযোগ উঠেছে। এ জন্য অবশ্য জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ‘সংস্কৃতিমন্ত্রী ও সচিবের ২০ শতাংশ কোটা’ কাজে লাগিয়েছে।
স্ট্রিমের অনুসন্ধানে এসেছে, বেসরকারি গ্রন্থাগারে বিতরণের জন্য ২০২১-২২ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় দুই কোটি ৬২ হাজার টাকার বই কিনেছে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। এর মধ্যে শুধু শেখ পরিবারের নামের বই কিনতে ব্যয় করেছে ৮৪ লাখ টাকার বেশি। অথচ মহান মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা বই কেনা হয়েছে মাত্র ১৮ লাখ টাকার। আবার ঘুরেফিরে একই লেখক ও প্রকাশনীর বই কেনা হয়েছে। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র তৎকালীন সংস্কৃতিমন্ত্রী এবং সচিবের পছন্দের প্রতিষ্ঠান ও লেখক, কিছু ক্ষেত্রে নিজেরাই তোষামোদির জন্য শেখ পরিবারের বইকে প্রাধান্য দিয়েছে।
সাহিত্যিকদের অভিযোগ, সরকারি টাকা ‘গৌরি সেন’ করার জন্যই ২০২০ সালে বেসরকারি গ্রন্থাগারে বই নির্বাচন ও অনুদান বিতরণ নীতিমালা করা হয়। বিতর্কের পর ২০২২ সালে সংশোধনী আনা হলেও, মোট বরাদ্দের ২০ শতাংশ কোটা বহাল রাখে। এই বিশেষ কোটা ব্যবহার করেই রাজনৈতিক বিবেচনায় বই কেনা হয়েছে, যা সাহিত্যসমাজকে কলুষিত এবং ধ্বংস হয়েছে সৃজনশীলতা।
এ ব্যাপারে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগম স্ট্রিমকে বলেছেন, বিগত আমলে ২০ শতাংশ কোটা ব্যবহার করে মন্ত্রী এবং সচিব ঘনিষ্ঠ প্রকাশক ও লেখকদের মানহীন অনেক বই কেনা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কর্মকর্তা বা আমলাদের নিজের লেখা বইও কেনা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিতর্কের কারণে আমরা এবার ১০৩টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো বই নিইনি। মৌলিক, অনুবাদ বা সম্পাদিত বইয়ের ক্ষেত্রে প্রকাশককে লেখক, সম্পাদক ও অনুবাদকের সঙ্গে করা চুক্তিপত্র দিতে হচ্ছে। এরপর তা যাচাই-বাছাই করা হবে। পরেও ভুয়া প্রমাণিত হলে বই বাতিল করা হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মঞ্জুরিকৃত অনুদান থেকে ২০ শতাংশ কোটায় জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ৪৭ প্রকাশনী থেকে ১২৪টি বই কেনে। ২৪ হাজার ৮০০ কপির জন্য দেয় ৬৪ লাখ ১৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে শেখ পরিবার সংশ্লিষ্ট ১৮টি বই (৫ হাজার ৬০০ কপি) কেনা হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকায়। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের বই মাত্র ৮৫ হাজার টাকার।
২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৫ লাখ ৫৭ হাজার টাকার বই কেনে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। ৫৯ প্রকাশনীর ১৩৩টি বইয়ের ১৫ হাজার ৩১৫ কপির মধ্যে শুধু শেখ পরিবার সংশ্লিষ্ট ৫৪টির (৬ হাজার ৪৩০ কপি) দাম প্রায় ২৬ লাখ টাকা। এই অর্থবছরে মুক্তিযুদ্ধের বই কেনা হয়েছে ১১ লাখ ১২ হাজার টাকার।
একইভাবে কোটায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫১ প্রকাশনীর ৯২টি বইয়ের ১৩ হাজার ৩৭৫ কপি কিনতে ব্যয় করেছে ৭০ লাখ ২৩ হাজার টাকার বেশি। এর মধ্যে শেখ পরিবার সংশ্লিষ্ট ৩৯টি বইয়ে (৫ হাজার ৬৪৫ কপি) ব্যয় ৪২ লাখ ৬৮, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের বই কেনা হয়েছে ছয় লাখ ১১ হাজার টাকার। এছাড়া এই অর্থবছরে ১০ লাখ ৬৭ হাজার টাকার ভারতীয় বই কিনেছে গ্রন্থকেন্দ্র।
২০২১-২২ অর্থবছরে কোটায় সবচেয়ে বেশি বাংলা একাডেমির ছয়টি বইয়ের দুই হাজার ৮০০ কপি কেনা হয়। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সুভাষ সিংহ রায়ের ‘বঙ্গবন্ধু ও অসাম্প্রদায়িকতা’, বেবি মওদুদের ‘রাসেলের গল্প’ এবং শেখ মুজিবুর রহমানের ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘আমার দেখা নয়াচীন’। এরপর চিত্রা প্রকাশনী থেকে ১০ বইয়ের দুই হাজার কপি কেনা হয়। কোটার বাইরেও গ্রন্থকেন্দ্র ৪৩৯ প্রকাশনীর যে এক হাজার ২০৯টি বই কেনে, তার মধ্যে ১০৩টিই শেখ পরিবারকেন্দ্রিক।
আমরা আর পেছনে যেতে চাই না। ভবিষ্যতের দিকে তাকাই। এখন বই কেনার জন্য কমিটি রয়েছে, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে। ২০ শতাংশ কোটা বহাল আছে। রাষ্ট্রপতির কিছু ক্ষমতা যেমন সংরক্ষিত থাকে, এটিও তেমন একটি বিষয়। সাইফুল ইসলাম, সংস্কৃতি সচিবের একান্ত সচিব (উপসচিব)
২০২২-২৩ অর্থবছরে কোটায় সবচেয়ে বেশি বই কেনা হয়েছে বাংলা একাডেমির ২০টি। এর মধ্যে শেখ পরিবারের ওপর লেখা বই ১৪টি, যা মোট বইয়ের ৭৫ শতাংশ। নীতিমালা অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বইকে সমান গুরুত্ব দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে কেনা হয়েছে একটি। দ্বিতীয় অবস্থানে গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র। তাদের ১০টি বই কেনা হয়েছে তিন লাখ ২৫ হাজার টাকায়। তৃতীয় স্থানে আগের অর্থবছরে দ্বিতীয় চিত্রা প্রকাশনীর ছয় বই। কোটার বাইরে ৩৫৩ প্রকাশনীর ৮৫৬টি বই কেনা হয়েছে, যার মধ্যে শেখ পরিবারকেন্দ্রিক ৫৩টি। লেখকদের আবেদনের ভিত্তিতে নেওয়া ১৫ বইয়ের মধ্যে তিনটি শেখ পরিবারের। তালিকায় দেখা গেছে, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের লেখা একটি বইয়ের ৩০ কপি কেনা হয়েছে প্রতিটি দুই হাজার ১০০ টাকা দরে।
এছাড়া ঘুরেফিরে কেনার ক্ষেত্রে ঋদ্ধি প্রকাশন, অন্যপ্রকাশ, সময়, আগামী, প্রথমা, চারুলিপি, অনন্যা, সাহিত্যপ্রকাশ, কথাপ্রকাশ, বাতিঘর, ইউপিএল, মাওলা ব্রাদার্স ও সময় প্রকাশনের বইকে বেছে নিয়েছে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র।
সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের। ২০ শতাংশ কোটায় যে ১৩ হাজার ৩৭৫ কপি কেনা হয়েছে, তাতে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার-সংক্রান্ত বই-ই বেশি। শেখ হাসিনার লেখা বা সম্পাদিত বইও নেহায়েত কম নয়। সবচেয়ে বেশি কেনা হয়েছে হাক্কানী পাবলিশার্সের তিন বইয়ের ২২০ কপি। সাত লাখ টাকায় কেনা তিনটিই শেখ মুজিবকে নিয়ে। বইগুলো হলো– শেখ হাসিনার ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টিলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য ন্যাশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’, ‘বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ ও এনায়েতুর রাহিমের ‘ইউকে ফরেইন অ্যান্ড কমনওয়েল্থ অফিস অ্যান্ড ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট: ডিক্লাসিফাইড ডকুমেন্টস ১৯৬২-১৯৭১, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যান্ড স্ট্রাগল ফর ইন্ডিপেন্ডেন্স’। প্রথম বইটির মূল্য ৩৯ হাজার ২০০ এবং পরের দুটি দুই হাজার টাকা করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাক্কানীর কাছ থেকে বাজার দরের চেয়ে বেশি দামে বইগুলো কেনে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। যেমন: ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস’ বইটি সেময় বাজারে ৫০ শতাংশ ছাড়ে ১৫ হাজারে বিক্রি হলেও, কেনা হয়েছে ৩০ হাজার টাকায়।
এরপর বাংলা একাডেমি ও মাওলা ব্রাদার্স থেকে বেশি বই কেনা হয়। এর মধ্যে মওলা থেকে শেখ হাসিনার ‘আগরতলা কন্সপিরেসি কেস (১-৪)’ এর দাম তিন হাজার ৬০০ টাকা। আরও ছিল বেবী মওদুদের অনুবাদ ‘জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ (২০১০-১১)’, ‘সবুজ মাঠ পেরিয়ে’ ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের ‘বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ একজন যুদ্ধশিশুর গল্প ও অন্যান্য’।
জিনিয়াস পাবলিকেশন থেকে কেনা চারটির মধ্যে তিনটিই শেখ হাসিনার লেখা। এগুলো হলো– শেখ হাসিনার ‘আহ্বান: জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ (২০০৯-২০২৩)’, ‘সকলের তরে সকলে আমরা: জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৯-২০২৩’ ও শেখ মেহেদী হাসানের ‘বঙ্গমাতা: সংকটে সংগ্রামে নির্ভীক সহযাত্রী’। এর মধ্যে দ্বিতীয় বইটি দুবার কেনা হয়েছে।
পাঞ্জেরি পাবলিকেশন থেকে মারুফ রসুলের ‘বাকশালের আদ্যোপান্ত (১ম খণ্ড)’ একই বছরে দুবারে কেনা হয়েছে ৩০০ কপি। জোনাকী প্রকাশনী থেকে শেখ হাফিজুর রহমানের ‘ফাদার অব দ্য ন্যাশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ এবং ওবায়দুল কাদেরের ‘সংবাদপত্র স্মারকগ্রন্থ: ১৭ মার্চ ২০২০’ কেনা হয়েছে।
এ তালিকায় ভারতের হাভার্ড প্রকাশনা সংস্থার ‘দ্য অ্যাসেনশিয়াল টেগর’ও রয়েছে, প্রতিটি পাঁচ হাজার ৩৩৬ টাকা করে ২০০ কপি কেনা হয়েছে। এ হিসাবে ভারতীয় বই কিনতে খরচ হয়েছে ১০ লাখ ৬৭ হাজার টাকার বেশি।
এই বইটির বাংলাদেশি কোনো সংস্করণ পাওয়া যায়নি। বইটির সম্পাদক যথাক্রমে ফকরুল আলম, রাধা চক্রবর্তী ও অমিত চৌধুরী। এ ব্যাপারে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগম বলেন, ‘এ ধরনের আরও কিছু বিদেশি বই আগেও কেনা হয়েছিল বলে জানতে পেরেছি। নতুন করে আর কেনা হবে না।’
কোটা থাকলে, অবশ্যই তার অধীনে নির্দিষ্ট নিয়ম থাকতে হবে। যা খুশি তাই কিনলাম, এমন যেন না হয়।’ কাজল শাহনেওয়াজ, কবি ও কথাসাহিত্যিক
নীতিমালায় বলা হয়েছে, মোট বরাদ্দের ২০ শতাংশ অর্থ সংস্কৃতিমন্ত্রী ও সচিবের বিশেষ বিবেচনায় সরাসরি মঞ্জুরির জন্য সংরক্ষিত থাকবে। অর্থাৎ, বই কেনার টাকার এক-পঞ্চমাংশে মন্ত্রী ও সচিব নিজের পছন্দমতো বই বেছে নিতে পারেন, যত কপি খুশি।
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের এক কর্মকর্তা স্ট্রিমের কাছে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নীতিমালার ২০ শতাংশ বিশেষ কোটা কিছু নির্দিষ্ট প্রকাশনাকে সুবিধা দিয়েছে। মন্ত্রী বা সচিবদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা প্রকাশনা সংস্থাগুলোর বইকে গুরুত্ব দিয়েছে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। বিগত আমলে তোষণের জন্যই সরকারি অর্থে কেনা বইয়ে শেখ পরিবার গুরুত্ব পেয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বইকেও তারা প্রাধান্য দেয়নি।
এ ব্যাপারে সংস্কৃতি সচিবের একান্ত সচিব (উপসচিব) সাইফুল ইসলাম স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমরা আর পেছনে যেতে চাই না। ভবিষ্যতের দিকে তাকাই। এখন বই কেনার জন্য কমিটি রয়েছে, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে।’ তিনি বলেন, ’২০ শতাংশ কোটা বহাল আছে। রাষ্ট্রপতির কিছু ক্ষমতা যেমন সংরক্ষিত থাকে, এটিও তেমন একটি বিষয়।’
নীতিমালা অনুযায়ী এখন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের মোট বরাদ্দের ৮০ শতাংশ বই একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি নির্বাচন করে। এই কমিটির সভাপতি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের শাখা–৪ এর যুগ্মসচিব। সদস্য জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, বাংলা একাডেমি, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, আর্কাইভ ও কপিরাইট অফিসের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও দুজন সাহিত্যিক কিংবা বুদ্ধিজীবী।
তবে বিশেষ কোটা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে কবি ও কথাসাহিত্যিক কাজল শাহনেওয়াজ স্ট্রিমকে বলেছেন, ‘কোটা থাকলে, অবশ্যই তার অধীনে নির্দিষ্ট নিয়ম থাকতে হবে। যা খুশি তাই কিনলাম, এমন যেন না হয়।’ কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কালাম ও মোস্তাক শরীফ বলেন, ‘মন্ত্রণালয় পরামর্শ দিতে পারে। কোটার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’
গবেষক ও লেখক পুলিন বকসী প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘সচিব বা মন্ত্রী কি বই বিশেষজ্ঞ? মন্ত্রী বা সচিবের অংশগ্রহণই উচিত নয়।’ তরুণ লেখক আরিফ রহমানের মতে, ‘বই নির্বাচন রাজনৈতিক বিবেচনা বা ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয় হতে পারে না। এর একমাত্র মাপকাঠি হবে সাহিত্যিক ও জ্ঞানতাত্ত্বিক মূল্য। ২০ শতাংশ কোটা মূলত রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহার করে একটি সুবিধাভোগী লেখক গোষ্ঠী তৈরি করার ঘৃণ্য প্রক্রিয়া। জনগণের পয়সায় আমরা জ্ঞানের পরিবর্তে স্বজনপ্রীতি কিনতে পারি না। এই অপচয় বন্ধ করতে হবে।’
প্রথমা প্রকাশনের ব্যবস্থাপক কাউছার আহম্মেদ বলেন, ‘বই বাছাইয়ে বিশেষজ্ঞরা দায়িত্ব পেলে পাঠকদের চাহিদা ও রুচি তৈরির সহায়ক বই গ্রন্থাগারে স্থান পাবে।’ আদর্শ প্রকাশনীর প্রকাশক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কোটার কারণে বিগত আমলে দেখেছি, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র দেদারছে কিনেছে মানহীন বই। এই প্রথা চলতে থাকলে প্রকাশনী জগতই ধ্বংস হয়ে যাবে।’

মিঠা পানিটুকু মাটির নিচে আবদ্ধ (ট্র্যাপড) অবস্থায় রয়েছে। লোনা পানির সঙ্গে এর সরাসরি সংযোগ নেই। ফলে পানি উত্তোলনে তাৎক্ষণিক লোনা পানি ঢুকে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার শঙ্কা কম
২ দিন আগে
উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে ছাত্রলীগকে চাঁদা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম। তবে তিনি জানিয়েছিলেন, ছাত্রলীগের সে সময়ের নেতারা তাঁর কাছে কমিশন চেয়েছিলেন।
৩ দিন আগে
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবির কার্যত ভূমিধস জয় পেয়েছে। এর পেছনে সংগঠনটির প্রার্থী নির্ধারণের ‘বৈচিত্র’ সামনে এসেছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীও একই ‘কৌশল’ নিচ্ছে বলে জানা গেছে। দলটির নেতারা একে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর সমন্বয়ে ‘দেশ গড়ার’ কৌশল বলছেন।
৪ দিন আগে
এক হতে যাচ্ছে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। বিভক্ত দুই অংশ বিরোধ মিটিয়ে দ্রুতই মিলে যেতে পারে বলে স্ট্রিমকে জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
১৩ দিন আগে