leadT1ad

পানিতে চুবিয়ে ৮ কুকুরছানা হত্যা, কর্মকর্তার বিচার দাবি

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
পাবনা

বিরক্ত হয়ে বস্তাবন্দি করে ছানাগুলো পুকুরে ফেলে দেন সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী। ছবি সংগৃহীত

পাবনার ঈশ্বরদীতে সদ্যোজাত আটটি কুকুরছানাকে পানিতে চুবিয়ে হত্যার অভিযোগে এক কর্মকর্তাকে তাঁর বরাদ্দকৃত সরকারি বাসা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। গতকাল সোমবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম চত্বরে জরুরি বৈঠক শেষে এ নির্দেশ দেন ইউএনও মো. মনিরুজ্জামান।

অভিযুক্ত হাসানুর রহমান নয়ন ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ঈশ্বরদী উপজেলা কর্মকর্তা। তিনি উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসের সরকারি কোয়ার্টারে বসবাস করেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সপ্তাহখানেক আগে ওই কর্মকর্তার বাসার আঙিনায় একটি কুকুর আটটি ছানা জন্ম দেয়। সোমবার হঠাৎ মা কুকুরকে পরিষদ চত্বরে ছোটাছুটি ও কান্নারত দেখা যায়। এক পর্যায়ে স্থানীয়রা পুকুর থেকে বস্তাবন্দি মৃত ছানাগুলো তুলে আনলে, মা কুকুর পাশে বসে আর্তনাদ করে। পরে সেগুলো মাটিচাপা দেওয়া হয়।

ঈশ্বরদীর ইউএনও বলেন, ‘এটি চরম অমানবিক ও নিষ্ঠুর কাজ। শাস্তি হিসেবে ওই কর্মকর্তাকে এক দিনের মধ্যে সরকারি কোয়ার্টার ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’ মা কুকুরটির চিকিৎসার জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

জানা যায়, ঈশ্বরদীর বিদায়ী নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাশ লালনপালন করতেন মা কুকুরটি, ডাকতেন লাল্টু নামে। তিনি চলে যাওয়ার পর ছানাদের নিয়ে অনেকটা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে কুকুরটি। খাবারের জন্য বারবার ধরনা দেয় ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক হাসানুর রহমান বাড়ির দরজায়। এতে বিরক্ত হয়ে বস্তাবন্দি করে ছানাগুলো পুকুরে ফেলে দেন তাঁর স্ত্রী।

এ ঘটনায় ফেসবুকে ঈশ্বরদীর সাবেক ইউএনও সুবীর কুমার দাশ লিখেছেন, ‘সভ্য মানবজাতির জন্য এ ধরনের কাজ কখনো গ্রহণযোগ্য নয়। আমার সাবেক কর্মস্থলে আমার পোষা কুকুর ছিল, যার একটির নাম লাল্টু। তার জন্ম থেকে আমি লালন পালন করেছি।’

তিনি লেখেন, ‘আমার বদলির পর সেখানে কুকুরছানাদের ওপর অন্ধকার নেমে আসে। সকালে শুনেছি, উপজেলা পরিষদের এক সরকারি কর্মকর্তা ও তাঁর পরিবার ছানাগুলোকে পুকুরে ডুবিয়ে হত্যা করেছেন। আমি বর্তমান সরকারের কাছে এই হত্যার বিচার চেয়েছি এবং সবাইকে বিচারের দাবিতে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাই। মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট আমি মন থেকে অভিশাপ দিয়েছি।’

ঘটনার বিচার দাবি করেছেন প্রাণী সংরক্ষণ কর্মীরা। পাবনা নেচার অ্যান্ড ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন কমিউনিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মাহমুদ বলেন, ‘এটি চরম অমানবিক। কোনো মানুষ এমন কাজ করতে পারে, আমরা বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি ছানাগুলো হত্যায় জড়িত ব্যক্তির শাস্তি চাই।’

পাবনার সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রাণী অধিকার আইনে মালিকবিহীন কোনো পশুকে হত্যা করলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বা নিয়মিত আদালতে শাস্তির বিধান রয়েছে। এতে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। কিন্তু সচরাচর এর প্রয়োগের নজির নেই। আইনের সঠিক প্রয়োগ হলে এ ধরনের অপরাধ কমে আসবে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত