leadT1ad

গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে এআই: ব্যাংকিং খাতের ভবিষ্যৎ

স্ট্রিম গ্রাফিক

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত আজ এক অভূতপূর্ব রূপান্তরের পথে। প্রযুক্তির ঝড়ো স্রোতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এআই হয়ে উঠেছে পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি। সংসদে ২০২৪ সালে পাস হওয়া পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা আইন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত ডিজিটাল ব্যাংক গাইডলাইন ব্যাংকিং খাতকে নতুন কাঠামোয় বেঁধে দিয়েছে। এতে শাখাহীন অ্যাপনির্ভর ব্যাংকিংয়ের যুগ শুরু হয়েছে যেখানে গ্রাহক যাচাই সাইবার সুরক্ষা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় এআই বাধ্যতামূলকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ আইসিটি সিকিউরিটি গাইডলাইন প্রতিটি লেনদেনকে রিয়েল টাইম পর্যবেক্ষণের আওতায় এনেছে। ফলে এআই এখন বিলাসিতা নয় ব্যাংকগুলোর টিকে থাকার শর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই পরিবর্তনের প্রতিফলন সবচেয়ে স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে পরিসংখ্যানের ভেতর। ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে দেশে এজেন্ট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ কোটি ৪৪ লাখ। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি নারী গ্রাহকের নামে খোলা যা শুধু সংখ্যার দিক থেকে নয়, নারীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তির দিক থেকেও একটি যুগান্তকারী অর্জন। আগে গ্রামীণ নারীরা ব্যাংকের শাখায় যেতে দ্বিধা বোধ করতেন। এখন তারা নিজ গ্রামেই এজেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে সঞ্চয় ঋণ এমনকি প্রবাসী আয়ের অর্থ গ্রহণ করতে পারছেন।

শুধু অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রেই নয় দেশজুড়ে সক্রিয় আউটলেট সংখ্যা এখন ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। এর ফলে গ্রামীণ অর্থনীতির প্রান্তে প্রান্তে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে যাচ্ছে। কৃষক ফসলের টাকা জমা দিচ্ছেন দিনমজুর বেতন পাচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লেনদেন করছেন নিরাপদে। অন্যদিকে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেও বিস্ফোরণ ঘটেছে। ২০২৪ সালেই লেনদেনের মোট মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৩৭ লাখ কোটি টাকা যা আগের বছরের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি। প্রতিদিন কোটি কোটি ক্ষুদ্র লেনদেন ঘটছে যা মানুষের হাতে পরীক্ষা করা অসম্ভব।

এখানেই এসে এআই হয়ে উঠেছে অপরিহার্য হাতিয়ার। ব্যাংক ও এমএফএস অপারেটররা এখন ট্রান্স্যাকশন লেভেল রিস্ক স্কোরিং বট চালিত গ্রাহকসেবা এবং জালিয়াতি শনাক্তকরণের মতো আধুনিক সমাধান ব্যবহার করছে। অ্যালগরিদম প্রতিটি লেনদেনকে রিয়েল টাইমে যাচাই করছে সন্দেহজনক কার্যকলাপ আলাদা করে ফেলছে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ তৈরি করছে। যেখানে মানুষের পক্ষে কোটি কোটি লেনদেন পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয় সেখানে এআই সহজেই তা করতে সক্ষম।

এই ভার্চ্যুয়াল সহকারীরা শুধু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বা নির্দেশ পালনেই সীমাবদ্ধ নয়, তারা গ্রাহকের আচরণ বিশ্লেষণ করে পারসোনালাইজড পরামর্শ ও অফার দিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ কোনো গ্রাহক নিয়মিত বিল পরিশোধ করলে তাঁকে বিশেষ ছাড় বা লয়্যালটি অফার দেওয়া হচ্ছে। আবার কেউ নিয়মিতভাবে বিদেশে টাকা পাঠালে তার জন্য রেমিট্যান্স-সংশ্লিষ্ট বিশেষ সেবা প্রস্তাব করা হচ্ছে।

অতএব সংখ্যার পেছনের গল্পটি হলো এজেন্ট ব্যাংকিং ও এমএফএস একদিকে দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে ত্বরান্বিত করছে অন্যদিকে এআই এই প্রবাহকে নিরাপদ দক্ষ ও টেকসই করে তুলছে।

গ্রাহকসেবার ক্ষেত্রেও এআই এখন কার্যত ফ্রন্ট ডেস্কে রূপ নিয়েছে। আগে যেখানে গ্রাহককে নানান প্রশ্ন বা সেবার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা কল সেন্টারে অপেক্ষা করতে হতো, সেখানে আজ এক ক্লিকে ভার্চ্যুয়াল সহকারী প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছে। দেশের শীর্ষ ব্যাংকগুলো ইতিমধ্যেই এই ধরনের এআই চালিত ভার্চ্যুয়াল সহকারী চালু করেছে। এগুলো ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে। গ্রাহক যখনই চান তখনই তারা ব্যালেন্স জানতে পারছেন ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারছেন নতুন অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য পাচ্ছেন এমনকি বিদ্যুৎ গ্যাস কিংবা টেলিফোন বিলও পরিশোধ করতে পারছেন। এতে গ্রাহকের সময় বাঁচছে পাশাপাশি কল সেন্টারের ওপর অতিরিক্ত চাপও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

এই ভার্চ্যুয়াল সহকারীরা শুধু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বা নির্দেশ পালনেই সীমাবদ্ধ নয়, তারা গ্রাহকের আচরণ বিশ্লেষণ করে পারসোনালাইজড পরামর্শ ও অফার দিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ কোনো গ্রাহক নিয়মিত বিল পরিশোধ করলে তাঁকে বিশেষ ছাড় বা লয়্যালটি অফার দেওয়া হচ্ছে। আবার কেউ নিয়মিতভাবে বিদেশে টাকা পাঠালে তার জন্য রেমিট্যান্স-সংশ্লিষ্ট বিশেষ সেবা প্রস্তাব করা হচ্ছে। অর্থাৎ এআই এখন কেবল তথ্য সরবরাহ করছে না গ্রাহকের চাহিদা বোঝার মাধ্যমে ব্যবসায়িক কৌশলকেও এগিয়ে নিচ্ছে।

এছাড়া ক্রেডিট স্কোরিং এবং ই কেওয়াইসি যাচাই প্রক্রিয়ায়ও এআই বিপ্লব এনেছে। আগে যেখানে নতুন গ্রাহককে যাচাই করতে অনেক সময় লাগত এবং নানান জটিল কাগজপত্র জমা দিতে হতো এখন সেগুলো অনেকটাই স্বয়ংক্রিয় হয়ে গেছে। উন্নত ফেস রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহকের মুখের ছবি মিলিয়ে দেখা হচ্ছে ডকুমেন্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাই করা হচ্ছে এবং তার আর্থিক আচরণ বিশ্লেষণ করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এতে নতুন গ্রাহক অনবোর্ডিংয়ের সময় ব্যাপকভাবে কমে গেছে।

সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে জালিয়াতি প্রতিরোধে। পূর্বে যেখানে অনেক জালিয়াতি দীর্ঘ সময় পর গিয়ে ধরা পড়ত এখন এআই তাৎক্ষণিকভাবে অস্বাভাবিক আচরণ শনাক্ত করতে পারছে। যেমন অল্প সময়ের মধ্যে একাধিক বড় লেনদেন অচেনা লোকেশনে হঠাৎ লেনদেন শুরু হওয়া অথবা অস্বাভাবিক ট্রান্সফার প্যাটার্ন। এসব ক্ষেত্রে এআই সিস্টেম দ্রুত সতর্ক সংকেত দিচ্ছে এবং প্রয়োজনে লেনদেন স্থগিত করছে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যাঁরা এতদিন ব্যাংক ঋণের বাইরে ছিলেন যেমন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দিনমজুর কিংবা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তাদের জন্যও এখন সুযোগ তৈরি হচ্ছে। কারণ ব্যাংকগুলো বিকল্প ডেটা যেমন মোবাইল ফোন ব্যবহার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ কিংবা সামাজিক আচরণ বিশ্লেষণ করে নতুন করে ক্রেডিট স্কোর তৈরি করছে। এতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও ব্যাংক ঋণের আওতায় আসছে এবং তাদের আর্থিক ক্ষমতায়ন ঘটছে। এআই এখন গ্রাহকসেবার ক্ষেত্রে শুধু একটি সহায়ক টুল নয় এটি আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিরাপত্তা এবং উন্নত সেবা প্রদানের অন্যতম ভিত্তি।

এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। সব ব্যাংককে নিয়মিত আইটি অডিট লগ মনিটরিং এবং ইনসিডেন্ট রেসপন্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আইটি অডিট নিশ্চিত করছে যে ব্যাংকের সাইবার সুরক্ষায় কোনো ফাঁকফোকর নেই লগ মনিটরিং রিয়েল টাইমে প্রতিটি লেনদেনের তথ্য সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করছে এবং ইনসিডেন্ট রেসপন্স দল যেকোনো নিরাপত্তা লঙ্ঘনে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে।

দেশের ব্যাংকগুলোও ধাপে ধাপে বৈশ্বিক মানে পৌঁছাচ্ছে। ব্র্যাক ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই চালিত কাস্টমার সাপোর্ট যুক্ত করেছে এবং সন্দেহজনক লেনদেন শনাক্ত করছে। ডাচ্‌ বাংলা ব্যাংক ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও কার্ড সার্ভিসে রোবোটিক প্রসেস অটোমেশন চালু করেছে যাতে পুনরাবৃত্ত কাজ দ্রুত হয়। ইসলামী ব্যাংক তাদের ই কেওয়াইসি প্রক্রিয়ায় ফেস ম্যাচিং প্রযুক্তি ব্যবহার করছে ফলে গ্রাহক যাচাই আরও নিরাপদ হয়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রীয় ব্যাংক সোনালী ব্যাংক ইতিমধ্যেই সোনালী ই-ওয়ালেট নামের ডিজিটাল অ্যাপ চালু করেছে যা প্লে স্টোরে উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং গ্রাহকের কাছে নতুন সুবিধা হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। একইভাবে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান বিকাশ তাদের মেনুবারে AVA নামে ভার্চ্যুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট যুক্ত করেছে যা গ্রাহকের প্রশ্নের উত্তর নির্দেশনা এবং দ্রুত সমাধান দেওয়ার মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়েছে। এসব পদক্ষেপ দেখায় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বড় ব্যাংক ও এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো এআইকে গ্রহণ করছে।

তবে উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকিও বাড়ছে। ব্যাংকিং খাত যত প্রযুক্তিনির্ভর হচ্ছে প্রতারক চক্রগুলো তত নতুন কৌশল উদ্ভাবন করছে। একসময় যেখানে প্রতারণা মূলত জাল স্বাক্ষর বা ভুয়া কাগজপত্রে সীমাবদ্ধ ছিল এখন তা উন্নত সাইবার আক্রমণে রূপ নিয়েছে। ফিশিং ইমেইল ম্যালওয়্যার ডেটা ব্রিচ কিংবা সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত গ্রাহক তথ্য চুরি হচ্ছে যার কারণে ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর চাপ বাড়ছে। এআইয়ের অগ্রগতি যেমন ব্যাংকগুলোর জন্য সুযোগ তৈরি করছে তেমনি প্রতারকদের হাতেও নতুন অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। তারা এখন ডিপফেক ব্যবহার করে গ্রাহকের মুখ নকল করতে পারে ভুয়া ভয়েস কল তৈরি করতে পারে এমনকি এআই চালিত বট দিয়ে একসঙ্গে হাজার হাজার প্রতারণামূলক লেনদেন পরিচালনা করতে পারে।

এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। সব ব্যাংককে নিয়মিত আইটি অডিট লগ মনিটরিং এবং ইনসিডেন্ট রেসপন্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আইটি অডিট নিশ্চিত করছে যে ব্যাংকের সাইবার সুরক্ষায় কোনো ফাঁকফোকর নেই লগ মনিটরিং রিয়েল টাইমে প্রতিটি লেনদেনের তথ্য সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করছে এবং ইনসিডেন্ট রেসপন্স দল যেকোনো নিরাপত্তা লঙ্ঘনে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে।

এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভরসা হয়ে উঠেছে এআই চালিত সিস্টেম। মানুষের পক্ষে যেখানে হাজার হাজার লগ ফাইল বা কোটি কোটি লেনদেন পর্যবেক্ষণ করা অসম্ভব সেখানে এআই সিস্টেমগুলো ক্রমাগত শিখে নতুন হুমকি শনাক্ত করতে পারে। মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম বিশ্লেষণ করছে কোন লেনদেন স্বাভাবিক আর কোনটি অস্বাভাবিক। উদাহরণস্বরূপ কোনো গ্রাহক যদি হঠাৎ এমন কোনো দেশ থেকে বড় অঙ্কের লেনদেন করেন যেখানে তিনি আগে কখনও লেনদেন করেননি সিস্টেম সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক সংকেত পাঠাচ্ছে। আবার একই অ্যাকাউন্ট থেকে অল্প সময়ের মধ্যে একাধিক লেনদেন ঘটলে বা আচরণগত প্যাটার্নে পরিবর্তন দেখা দিলে সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। সন্দেহজনক অ্যাকাউন্ট নেটওয়ার্ক শনাক্ত করতেও এআই কার্যকর ভূমিকা রাখছে। একাধিক জালিয়াতি অ্যাকাউন্ট যদি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকে অ্যালগরিদম সেই নেটওয়ার্কের মানচিত্র তৈরি করে সম্ভাব্য প্রতারণা আগেই চিহ্নিত করতে পারে। এতে ব্যাংকসহ পুরো আর্থিক খাত আরও সুরক্ষিত হচ্ছে।

সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ছে গ্রাহকের আস্থায়। আগে অনেকেই ডিজিটাল ব্যাংকিং নিয়ে সন্দিহান ছিলেন এখন রিয়েল টাইম পর্যবেক্ষণ এবং দ্রুত প্রতিরোধ ব্যবস্থা দেখে তাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। এতে ব্যাংকিং খাত স্থিতিশীল হচ্ছে আর্থিক অপরাধ কমছে এবং গ্রাহকরা নিশ্চিন্ত হয়ে ডিজিটাল লেনদেনে যুক্ত হচ্ছেন। নিরাপত্তা ও সেবার এই ভারসাম্য দেখায় এআই সুবিধার জন্য ব্যবহৃত কোনো প্রযুক্তি নয় এটি ব্যাংকিং টিকে থাকার প্রধান ভিত্তি।

বাংলাদেশ যদি শ্রমশক্তিকে নতুন দক্ষতা অর্জনের সুযোগ দেয় তবে এআই চালিত পরিবর্তন আশীর্বাদে পরিণত হবে। ব্যাংক কর্মীরা ডিজিটাল সিস্টেম সাইবার নিরাপত্তা ডেটা অ্যানালিটিক্স বা গ্রাহক ব্যবস্থাপনায় দক্ষ হয়ে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করবেন যা অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করবে।

শেষ পর্যন্ত বলা যায় এআইকে চাকরির প্রতিদ্বন্দ্বী না দেখে মানুষের দক্ষতার সহযাত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। ইতিহাসে প্রতিটি শিল্পবিপ্লবের সময়ই ধারণা ছিল নতুন প্রযুক্তি কর্মসংস্থান কমাবে যদিও বাস্তবে দেখা গেছে প্রযুক্তি পুরোনো কিছু কাজ সরিয়ে দিলেও নতুন সুযোগ তৈরি করে এবং শ্রমশক্তিকে আরও উৎপাদনশীল করে। ব্যাংকিং খাতে এআই রুটিন বা পুনরাবৃত্ত কাজ দ্রুত ও নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করছে যেমন লেনদেন যাচাই ডকুমেন্ট মিলিয়ে দেখা কিংবা প্রাথমিক গ্রাহক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া। এতে মানবকর্মীরা এসব কাজ থেকে মুক্ত হয়ে সময় দিচ্ছেন কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ নতুন সেবা উদ্ভাবন এবং সৃজনশীল গ্রাহক অভিজ্ঞতা তৈরির মতো উচ্চমূল্য সংযোজন কাজে। এর ফলে ব্যাংকের অপারেশনাল খরচ কমছে। আগে যেসব কাজ শত শত কর্মী দিয়ে করতে হতো এখন সেগুলো স্বয়ংক্রিয় হয়ে যাচ্ছে খরচ কমছে সেবার গতি বাড়ছে গ্রাহককে আর দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে বা কল সেন্টারে অপেক্ষা করতে হচ্ছে না তারা তাৎক্ষণিক সমাধান পাচ্ছেন। এতে শুধু শহরের নয় প্রান্তিক ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যেও ব্যাংকিং সেবার গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থা বাড়ছে।

বাংলাদেশ যদি শ্রমশক্তিকে নতুন দক্ষতা অর্জনের সুযোগ দেয় তবে এআই চালিত পরিবর্তন আশীর্বাদে পরিণত হবে। ব্যাংক কর্মীরা ডিজিটাল সিস্টেম সাইবার নিরাপত্তা ডেটা অ্যানালিটিক্স বা গ্রাহক ব্যবস্থাপনায় দক্ষ হয়ে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করবেন যা অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করবে।

অন্যদিকে গ্রাহকের আস্থা ধরে রাখতে ডেটা সুরক্ষা নিশ্চিত করাও জরুরি। এআই সিস্টেম যত বেশি ব্যবহৃত হবে গ্রাহকের ব্যক্তিগত ও আর্থিক তথ্য তত বেশি সিস্টেমে প্রবাহিত হবে। তাই তথ্যের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষায় কঠোর নীতি নিয়মিত অডিট এবং উন্নত এনক্রিপশন প্রযুক্তি প্রয়োজন।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এআই চালিত ব্যাংকিং যেন কেবল শহুরে জনগোষ্ঠীর সুবিধায় সীমাবদ্ধ না থাকে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে প্রযুক্তিনির্ভর সেবায় যুক্ত রাখতে পারলে প্রকৃত অর্থে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হবে। যখন গ্রামের কৃষক সহজে ঋণ নিতে পারবেন দিনমজুর নিরাপদে বেতন পাবেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে ব্যবসা বাড়াতে পারবেন তখনই এআইয়ের প্রকৃত সুফল পাওয়া যাবে।

সঠিক নীতি প্রশিক্ষণ ও সুরক্ষার মাধ্যমে এআই শুধু ব্যাংকিং খাতকে শক্তিশালী করবে না ন্যায়ভিত্তিক ও টেকসই আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তুলে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে।

লেখক: ব্যাংকার এবং অর্থনৈতিক বিশ্লেষক

Ad 300x250

সম্পর্কিত