অপরাপর ভাষার মতো বাংলাতেও সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন শব্দ, এক্সপ্রেশন। ইয়ুথের ভাষা, বিশেষত স্ল্যাং সবসময়ই বর্নিল ও এনার্জেটিক। পপুলার কালচারে সৃষ্ট নতুন নতুন শব্দ ও ভঙ্গিকে নিয়মিত আর্কাইভিং করতে চায় পপ স্ট্রিম। আজ এই সিরিজের প্রথম পর্ব।
কে এম রাকিব
আমি ভাষাখোর বান্দা, শব্দভুক প্রাণী। আর ভাষায় আমার বিশেষ পছন্দের বিষয় স্ল্যাং। স্ল্যাং ভাষার অংশ; সম্ভবত সবচে কালারফুল অংশ। অনেক ভাষাবিদ এজন্য স্ল্যাংরে পিপল'স পোয়েট্রি বা আমজনতার কবিতাও বলেন। নতুন কোনো স্ল্যাং চালু হইতে দেখলে তাই আমার মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করে। কিছুদিন ধইরা নতুন একটা স্ল্যাং নেট দুনিয়ায় ঘুরতে দেখতেছি। বাংলা ভাষায় তৈরি হওয়া নতুনতম স্ল্যাং: চুদলিং পং।
স্ল্যাং বোঝা যত সহজ, ডিফাইন করা ততই কঠিন। মোটাদাগে এইভাবে বলা যায়: স্ল্যাং মূলত কাউন্টার ল্যাঙ্গুয়েজ/প্রতি-ভাষা। এই প্রতি-ভাষা হওয়ায় স্ল্যাং চিল্লায় বলে, ‘না’। সম্মানিত বা মাননীয়দের নিয়ম-কানুন বা মতাদর্শকে এই ভাষা থোরাই কেয়ার করে। দ্রোহী, ল্যাং মারার এই ভাষা, মকারি করে, যাবতীয় কর্তৃত্বতন্ত্ররে অস্বীকার করে। চুদলিং পং-এও এইসব বৈশিষ্ট্য আছে।
বাংলা নেটস্ফিয়ারে আর্বান ডিকশনারি ধরণের কিছু নাই। অক্সফোর্ড, মারিয়াম-ওয়েবস্টার কিংবা ডিকশনারি ডট কম যেমন নতুন শব্দ নিয়মিত আপডেইট করে, প্রতি বছর ইংরেজি ভাষায় সৃষ্ট নতুন শব্দের লিস্ট করে, ওয়ার্ড অভ দ্য ইয়ার প্রকাশ করে– তেমন কাজকর্ম বাংলায় কোনো প্রতিষ্ঠান করে না। ফলে বাংলা ভাষার ভাষিক উদ্ভাবনা ও সৃজনশীলতার এই দিকটা আড়ালেই থেকে যায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেকদিন ধরে স্ল্যাং টুকে রাখি। ভাবতেছি, এখন থেকে এই টোকাটুকির কাজটা পাবলিক পরিসরে করবো। আসেন, শুরু করি।
চুদলিং কথাটা আমি প্রথম শুনছি বছর খানেক আগে। জটিলতা, ঝামেলা, গ্যাঞ্জাম, ক্যাচাল ইত্যাদি বুঝাইতে ঢাকার ইয়ুথ চুদলিং শব্দটা ব্যবহার করতো। যেমন– ‘আরেহ ব্রো, আর বইলেন না। পুরাই চুদলিং অবস্থায় আছি।’
তবে বর্তমানে চুদলিং পং কথাটার মানে বদলে গেছে, এবং বদলটা ঘটছে রাতারাতি। অর্থের এই যে আকস্মিক বদলে যাওয়া, উল্লম্ফন বা লাফ দেওয়া—ভাষাতত্ত্বে এইটারে বলে সেমান্টিক জাম্প। ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ায় এত দ্রুত এই জাম্প ঘটতেছে যে, অর্থের গতিপথ বা ট্রাজেকটরি শনাক্ত করাও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আমাদের ভাগ্য ভালো যে চুদলিং পং-এর গতিপথ ট্রেস করা যায়।
স্যাটায়ার নিউজ পেইজ বালের কন্ঠ গত ২৬ আগস্ট একটা খবর প্রকাশ করে: চীন গিয়ে ভোল পাল্টালেন নাহিদ, নিজের নতুন নাম রাখলেন ‘চুদলিং পং’।
মজার ব্যাপার হইতেছে, ‘বালের কন্ঠ’ প্রকাশিত ভুয়া খবরের অর্থের বাইরে, চুদলিং পং কথাটা ভিন্ন অর্থে ইয়াংপিপল ব্যবহার করতে শুরু করছে। চুদলিং পং-এর বর্তমান অর্থের সাথে নাহিদ ইসলামের নামে প্রচারিত ফেইক নিউজের সম্পর্ক যেমন নাই, তেমনই চুদলিং কথাটার পূর্বেকার (ঝামেলা/গ্যাঞ্জাম) অর্থেরও কোনো সম্পর্ক নাই। বর্তমানে শব্দটার অর্থ হচ্ছে, টুট টুট করে দেওয়া, ‘জয় বাংলা’ করে দেওয়া, আকাশ ভরা সূর্যতারা… মারা সারা, বা হোমাসা।
চ অক্ষরযুক্ত শব্দ হওয়ায়, শক-ভ্যালু থাকাতেই খুব সম্ভব ইয়ুথের একটা অংশ শব্দটারে পিক করছে। অনেক বছর আগে, এক টিভি রিপোর্টে, ক্যামেরার সামনে বলা উত্তরবঙ্গের শামসুল কাকার ‘শীতের **নে দাড়াতি পারছি না’, কথাটাও জনপ্রিয় হইছিলো। এরপর থেকে শামসুল কাকা ভার্চুয়াল বাংলায় মোটামুটি শীতকালীন আইকন হয়ে গেছেন।
ধ্বনিগতভাবে চুদলিং পং- এ একটা চাইনিজ আব্রু আছে; যেন বিদেশি বা ভিন্ন কিছু বলতেছে। স্ল্যাং যখন পাবলিক পরিসরে হাজির হয়, গ্রহণযোগ্যতার খাতিরে তারে এক ধরণের আব্রু বা আংশিক সুরতবদল নিতে হয়। শামসুল সাহেবের ক্ষেত্রেও এই আব্রুকরণ প্রক্রিয়ায় হয়ে গেছিল শীতের ‘সো-দ-নে’।
বলা কঠিন। যেকোন শব্দই একদিন না একদিন হারায়ে যায়। কোনোটা টিকে থাকে ২ হাজার বছর, কোনোটা ২ বছর। এখন সুপারফাস্ট ইন্টারনেটের দুনিয়ায় বেশিরভাগ নতুন শব্দের আয়ু বেশিদিন হয় না। ডিজ্যুস, জোস– ইত্যাদি শব্দগুলো ১ দশক আগে বেশ পপুলার ছিল, অথচ এখন শব্দগুলির ব্যবহার নগন্য।
শব্দের মূল্যমান রাজনৈতিক ও সামাজিক আবহাওয়া অনুযায়ী ওঠানামা করে। কখনও অতিব্যবহার বা মুদ্রাস্ফীতি হয়। কখনও প্রাসঙ্গিকতা কমে যায়, ব্যবহারও কমে যায়। আর ব্যবহার একদমই না থাকলে জায়গা হয় ডিকশনারিতে বা ভাষার ইতিহাসের বইয়ে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক জলবায়ু এখন যেমন দেখতেছি, এবং যেভাবে বিভিন্ন মহলে ভার্বাল কামড়াকামড়ি চলে, তাতে আমার অনুমান এই স্ল্যাং-এর শিশুমৃত্যু ঘটবে না; চুদলিং পং দীর্ঘায়ু লাভ করবে।
আমি ভাষাখোর বান্দা, শব্দভুক প্রাণী। আর ভাষায় আমার বিশেষ পছন্দের বিষয় স্ল্যাং। স্ল্যাং ভাষার অংশ; সম্ভবত সবচে কালারফুল অংশ। অনেক ভাষাবিদ এজন্য স্ল্যাংরে পিপল'স পোয়েট্রি বা আমজনতার কবিতাও বলেন। নতুন কোনো স্ল্যাং চালু হইতে দেখলে তাই আমার মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করে। কিছুদিন ধইরা নতুন একটা স্ল্যাং নেট দুনিয়ায় ঘুরতে দেখতেছি। বাংলা ভাষায় তৈরি হওয়া নতুনতম স্ল্যাং: চুদলিং পং।
স্ল্যাং বোঝা যত সহজ, ডিফাইন করা ততই কঠিন। মোটাদাগে এইভাবে বলা যায়: স্ল্যাং মূলত কাউন্টার ল্যাঙ্গুয়েজ/প্রতি-ভাষা। এই প্রতি-ভাষা হওয়ায় স্ল্যাং চিল্লায় বলে, ‘না’। সম্মানিত বা মাননীয়দের নিয়ম-কানুন বা মতাদর্শকে এই ভাষা থোরাই কেয়ার করে। দ্রোহী, ল্যাং মারার এই ভাষা, মকারি করে, যাবতীয় কর্তৃত্বতন্ত্ররে অস্বীকার করে। চুদলিং পং-এও এইসব বৈশিষ্ট্য আছে।
বাংলা নেটস্ফিয়ারে আর্বান ডিকশনারি ধরণের কিছু নাই। অক্সফোর্ড, মারিয়াম-ওয়েবস্টার কিংবা ডিকশনারি ডট কম যেমন নতুন শব্দ নিয়মিত আপডেইট করে, প্রতি বছর ইংরেজি ভাষায় সৃষ্ট নতুন শব্দের লিস্ট করে, ওয়ার্ড অভ দ্য ইয়ার প্রকাশ করে– তেমন কাজকর্ম বাংলায় কোনো প্রতিষ্ঠান করে না। ফলে বাংলা ভাষার ভাষিক উদ্ভাবনা ও সৃজনশীলতার এই দিকটা আড়ালেই থেকে যায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেকদিন ধরে স্ল্যাং টুকে রাখি। ভাবতেছি, এখন থেকে এই টোকাটুকির কাজটা পাবলিক পরিসরে করবো। আসেন, শুরু করি।
চুদলিং কথাটা আমি প্রথম শুনছি বছর খানেক আগে। জটিলতা, ঝামেলা, গ্যাঞ্জাম, ক্যাচাল ইত্যাদি বুঝাইতে ঢাকার ইয়ুথ চুদলিং শব্দটা ব্যবহার করতো। যেমন– ‘আরেহ ব্রো, আর বইলেন না। পুরাই চুদলিং অবস্থায় আছি।’
তবে বর্তমানে চুদলিং পং কথাটার মানে বদলে গেছে, এবং বদলটা ঘটছে রাতারাতি। অর্থের এই যে আকস্মিক বদলে যাওয়া, উল্লম্ফন বা লাফ দেওয়া—ভাষাতত্ত্বে এইটারে বলে সেমান্টিক জাম্প। ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ায় এত দ্রুত এই জাম্প ঘটতেছে যে, অর্থের গতিপথ বা ট্রাজেকটরি শনাক্ত করাও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আমাদের ভাগ্য ভালো যে চুদলিং পং-এর গতিপথ ট্রেস করা যায়।
স্যাটায়ার নিউজ পেইজ বালের কন্ঠ গত ২৬ আগস্ট একটা খবর প্রকাশ করে: চীন গিয়ে ভোল পাল্টালেন নাহিদ, নিজের নতুন নাম রাখলেন ‘চুদলিং পং’।
মজার ব্যাপার হইতেছে, ‘বালের কন্ঠ’ প্রকাশিত ভুয়া খবরের অর্থের বাইরে, চুদলিং পং কথাটা ভিন্ন অর্থে ইয়াংপিপল ব্যবহার করতে শুরু করছে। চুদলিং পং-এর বর্তমান অর্থের সাথে নাহিদ ইসলামের নামে প্রচারিত ফেইক নিউজের সম্পর্ক যেমন নাই, তেমনই চুদলিং কথাটার পূর্বেকার (ঝামেলা/গ্যাঞ্জাম) অর্থেরও কোনো সম্পর্ক নাই। বর্তমানে শব্দটার অর্থ হচ্ছে, টুট টুট করে দেওয়া, ‘জয় বাংলা’ করে দেওয়া, আকাশ ভরা সূর্যতারা… মারা সারা, বা হোমাসা।
চ অক্ষরযুক্ত শব্দ হওয়ায়, শক-ভ্যালু থাকাতেই খুব সম্ভব ইয়ুথের একটা অংশ শব্দটারে পিক করছে। অনেক বছর আগে, এক টিভি রিপোর্টে, ক্যামেরার সামনে বলা উত্তরবঙ্গের শামসুল কাকার ‘শীতের **নে দাড়াতি পারছি না’, কথাটাও জনপ্রিয় হইছিলো। এরপর থেকে শামসুল কাকা ভার্চুয়াল বাংলায় মোটামুটি শীতকালীন আইকন হয়ে গেছেন।
ধ্বনিগতভাবে চুদলিং পং- এ একটা চাইনিজ আব্রু আছে; যেন বিদেশি বা ভিন্ন কিছু বলতেছে। স্ল্যাং যখন পাবলিক পরিসরে হাজির হয়, গ্রহণযোগ্যতার খাতিরে তারে এক ধরণের আব্রু বা আংশিক সুরতবদল নিতে হয়। শামসুল সাহেবের ক্ষেত্রেও এই আব্রুকরণ প্রক্রিয়ায় হয়ে গেছিল শীতের ‘সো-দ-নে’।
বলা কঠিন। যেকোন শব্দই একদিন না একদিন হারায়ে যায়। কোনোটা টিকে থাকে ২ হাজার বছর, কোনোটা ২ বছর। এখন সুপারফাস্ট ইন্টারনেটের দুনিয়ায় বেশিরভাগ নতুন শব্দের আয়ু বেশিদিন হয় না। ডিজ্যুস, জোস– ইত্যাদি শব্দগুলো ১ দশক আগে বেশ পপুলার ছিল, অথচ এখন শব্দগুলির ব্যবহার নগন্য।
শব্দের মূল্যমান রাজনৈতিক ও সামাজিক আবহাওয়া অনুযায়ী ওঠানামা করে। কখনও অতিব্যবহার বা মুদ্রাস্ফীতি হয়। কখনও প্রাসঙ্গিকতা কমে যায়, ব্যবহারও কমে যায়। আর ব্যবহার একদমই না থাকলে জায়গা হয় ডিকশনারিতে বা ভাষার ইতিহাসের বইয়ে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক জলবায়ু এখন যেমন দেখতেছি, এবং যেভাবে বিভিন্ন মহলে ভার্বাল কামড়াকামড়ি চলে, তাতে আমার অনুমান এই স্ল্যাং-এর শিশুমৃত্যু ঘটবে না; চুদলিং পং দীর্ঘায়ু লাভ করবে।
আজ বিশ্ব বাঁশ দিবস। পান্ডা বাঁশ খায়, মানুষও খায়; তবে মেটাফোরিকালি। অনেকের মতে, বিশ্ব রাজনীতি চলে আসলে বাশ-সান্ডা তত্ত্ব অনুযায়ী। এই তত্ত্ব আমাদেরকে জানায়, বিশ্ব রাজনীতিতে, পান্ডা কেন বাঁশ খায় আর কফিল কেন সান্ডা খায়।
১৮ ঘণ্টা আগেআজ নিজের আত্মকথা শোনাবার জন্য প্রাণটা আইঢাঁই করছে। কত আর অন্যের কমেন্ট বক্স আর মেসেঞ্জারে গুঁতোগুঁতি করে বেড়াব? মাঝে সাঝে তো নিজের কথাও বলতে ইচ্ছা করে। মানছি, আমার কোনো মন নেই। তাই বলে কি ‘মনের কথাও’ থাকতে নেই?
২ দিন আগেতথ্যের কেয়ামত বা ইনফরমেশন এপক্যালিপ্স শুরু হয়ে গেছে– এ কথা আজকাল প্রায়ই শোনা যায়। চারিদিকে তথ্যের ছড়াছড়ি, কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা বোঝা দুষ্কর। অনেকেই মানছে না মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার বুলি, বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল। জনপ্রিয় হচ্ছে অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রোপাগান্ডা। মিসইনফরমেশনকে টক্কর দিতে ফ্যাক্ট চেকি
৩ দিন আগে‘প্যারা নাই, চিল’ দর্শনের সূচনা করেছিলেন টাক মাথার এক দার্শনিক। নাম এপিকিউরাস। খ্রিস্টপূর্ব ৩৭১ সালে সামোসে জন্ম। ছোটবেলায় বন্ধুদের সঙ্গে তিনি খেলাধুলা তেমন করেননি, পাবজি ও টিকটক তখনও আসেনি, তাই তিনি সময় কাটাতেন একটা কাজ করতেই। সেই কাজের নাম ‘ভাবনা’। আর ভাবতে ভাবতেই এপিকিউরাস বুঝলেন, মানুষ জীবনে
৪ দিন আগে