.png)

স্ট্রিম ডেস্ক

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রসিকিউটর করিম খানের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনা এক নারীর ওপর গোপনে নজরদারি চালানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, যে প্রাইভেট গোয়েন্দা সংস্থা এই নজরদারি চালায় তারা কাতারের হয়ে কাজটি করেছে।
দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, এই গোপন অভিযানে ঐ নারীর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ফাঁস হওয়া নথি ও সূত্রের তথ্যমতে, অভিযানে যুক্ত একটি গোয়েন্দা সংস্থা তার পাসপোর্টের বিবরণ, সন্তান সংক্রান্ত তথ্যসহ ব্যক্তিগত নথি সংগ্রহের চেষ্টা করে।
এই গোয়েন্দা অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল ওই নারীর বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করা এবং করিম খানের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ দুর্বল করে দেওয়া। একজন বিশিষ্ট ব্রিটিশ আইনজীবী করিম খান তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন।
তার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো দাবি করেছে, এই অভিযোগ ইসরায়েলের একটি অপপ্রচারের অংশ। ২০২৪ সালে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিশোধ হিসেবে এই অপপ্রচার চালায় ইসরায়েল।
গোয়েন্দা অভিযানটি পরিচালনা করেছে লন্ডনের মেফেয়ার এলাকায় অবস্থিত হাইগেট নামের একটি প্রাইভেট গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান। সংস্থাটি নিজেকে ‘কৌশলগত পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে পরিচয় দেয়। তারা ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদের সংকট মোকাবিলায় পরামর্শ দেয়।
হাইগেট অন্তত আরেকটি সংস্থার সঙ্গে মিলে ওই নারীর সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো যোগসূত্র আছে কি না তা খোঁজার চেষ্টা করে। কিন্তু দ্য গার্ডিয়ান-এর দেখা নথিতে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
গোয়েন্দা সংস্থাটির কার্যক্রমের সঙ্গে পরিচিত অনেকে অভিযোগ করেন, অভিযানটি কাতারের একটি উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক ইউনিটের পক্ষ থেকে পরিচালিত হয়েছিল।
অভিযোগকারী নারী দ্য গার্ডিয়ান-কে জানান, তিনি এই ‘বীভৎস ও ভয়ানক’ তৎপরতায় গভীরভাবে মর্মাহত। তার ভাষায়, ‘আমাকে লক্ষ্য করে বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—এই ধারণা যেমন বিস্ময়কর, তেমনি হৃদয়বিদারক।’
হাইগেট দ্য গার্ডিয়ান-কে দেওয়া এক বিবৃতিতে স্বীকার করেছে যে তারা আইসিসি-সংশ্লিষ্ট একটি প্রকল্পে কাজ করেছে, তবে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে। তারা আরও জানিয়েছে, এই প্রকল্প কাতার সরকারের অর্থায়নে বা নির্দেশে পরিচালিত হয়নি।
গোয়েন্দা অভিযানে কাতারের একটি ইউনিটের সম্পৃক্ততা এবং আরও কয়েকজন আইসিসি কর্মকর্তাকে টার্গেট করা হয়েছে—এই তথ্য আদালতের সাম্প্রতিক সংকটকে আরও জটিল করেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির সিদ্ধান্ত করিম খানকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমালোচনার মুখে ফেলেছে।
অভিযোগের তদন্ত চলাকালীন খান সাময়িকভাবে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। দ্য গার্ডিয়ান জানায়, তার ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে হাইগেট সংস্থার প্রতিনিধিরা করিম খানের টিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে বলে জানা গেছে, যা এই বৈঠকের উদ্দেশ্য নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে।
অশান্ত এক বছর
গত বছরের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রসিকিউটর করিম খানের মেয়াদকাল গভীর সংকটে পড়ে। আদালতের এক নারী কর্মী তার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ করেন।
৩০ বছরের বেশি বয়সী এই নারী আইনজীবী সরাসরি খানের অধীনে কাজ করতেন। তার অভিযোগ অনুযায়ী, খান কর্মক্ষেত্রের ভ্রমণকালে হোটেল কক্ষে, আইসিসি অফিসে এবং নিজের বাসায় তাকে যৌননিপীড়ন করেন।
জাতিসংঘের একটি পর্যবেক্ষক সংস্থা এই অভিযোগের তদন্ত করছে। দ্য গার্ডিয়ান আগস্টে জানায়, তদন্তের সময় আরও একজন নারী এগিয়ে এসে জানান, খানের কর্মজীবনের আগের এক পর্যায়ে তিনি বিনা বেতনে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করার সময়ও এমন আচরণের শিকার হয়েছিলেন।
খানের আইনজীবীরা বারবার বলেছেন, তিনি কখনও কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেননি এবং অভিযোগগুলো একটি ‘পরিকল্পিত প্রচারণার অংশ’, যা তাকে হেয় করার উদ্দেশ্যে চালানো হচ্ছে।
দ্য গার্ডিয়ানও জানতে পারে, কিছু ইসরায়েলপন্থী পক্ষ অভিযোগপত্রের তথ্য ফাঁসের চেষ্টা করেছিল। তবে কোনো প্রমাণ মেলেনি যে অভিযোগকারী নারীরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই অভিযোগ এনেছেন।
জাতিসংঘ তদন্ত কেন্দ্রে থাকা ওই নারীকে লক্ষ্য করে গোপন গোয়েন্দা অভিযানটি এ বছরের শুরুতে চালানো হয়। সেসময় হাইগেটকে কাতারি একটি কুটনৈতিক ইউনিট পৃষ্ঠপোষকতা দেয় বলে অভিযোগ।
দ্য গার্ডিয়ান-এর দেখা প্রমাণ অনুযায়ী, হাইগেটের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানতেন যে প্রকল্পটির মূল অর্থদাতা একটি কাতারি কুটনৈতিক ইউনিট। অর্থায়নকে অত্যন্ত ‘সংবেদনশীল’ হিসেবে ধরা হয়েছিল এবং কর্মকর্তারা কাতারকে ‘মক্কেল রাষ্ট্র’ বলে উল্লেখ করতেন।
একটি নথি থেকে জানা যায়, অভিযানের এক পর্যায়ে হাইগেট চেষ্টা করেছিল অভিযোগকারী নারী ও তার পরিবারের সঙ্গে ইসরায়েল বা ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার কোনো যোগসূত্র আছে কিনা তা খুঁজে বের করতে।
এই কাজে তারা এলিসিয়াস ইন্টেলিজেন্স নামের একটি বিশেষায়িত সংস্থাকে নিয়োগ দেয়। এই সংস্থা ওই নারীর সন্তান, স্বামী এবং শ্বশুর-শাশুড়িসহ পরিবারের ব্যক্তিগত তথ্য অনুসন্ধান করে। তারা এমনকি আইসিসির অন্যান্য কর্মকর্তাদের সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করে, যারা অভিযোগ তদন্তে যুক্ত ছিলেন।
নথি অনুযায়ী, এলিসিয়াস সংস্থা হাইগেটের জন্য একাধিক রিপোর্ট তৈরি করে, যেখানে তাদের ব্যক্তিগত জীবন, অতীত সম্পর্ক এবং আর্থিক অবস্থার সংবেদনশীল তথ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল। এক পর্যায়ে, হাইগেট অভিযোগকারী নারীর সন্তানের জন্মসনদ সংগ্রহের চেষ্টাও করে।
তারা নারীর পাসপোর্টের বিস্তারিত তথ্য, সাম্প্রতিক বছরগুলোর ফ্লাইট রেকর্ড, এমনকি তার ব্যক্তিগত ইমেল অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পর্যন্ত সংগ্রহ করে—যা সম্ভবত ডার্ক ওয়েবে ফাঁস হওয়া হ্যাকড ডেটা থেকে নেওয়া হয়েছিল।
হাইগেট অবশ্য দাবি করেছে, ওই নারীর সন্তানের তথ্য সংগ্রহের অভিযোগ ‘ভুল’ এবং অন্যান্য তথ্যও ‘অসম্পূর্ণ’। সংস্থাটি বলেছে, তারা শুধু একটি ‘স্বাধীন মূল্যায়ন’ করেছে, যার উদ্দেশ্য ছিল আইসিসির বিশ্বাসযোগ্যতা বা স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার সম্ভাব্য গোপন কর্মকাণ্ড শনাক্ত করা।
হাইগেট খানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি অস্বীকার করেনি, তবে একে ‘বাণিজ্যিকভাবে গোপনীয় ও সংবেদনশীল’ বলে বর্ণনা করেছে। খানের আইনজীবীরাও বৈঠকের সত্যতা অস্বীকার করেননি, তবে বলেছেন, খান বা তার প্রতিনিধিরা এই গোয়েন্দা অভিযানের বিষয়ে কিছুই জানতেন না এবং কোনো তথ্য পাননি।
এলিসিয়াস ইন্টেলিজেন্স মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কাতার সরকারও কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি।
অভিযোগকারী নারী প্রায় এক বছর ধরে জাতিসংঘ তদন্তের রায় প্রত্যাশা করছেন। এখন তিনি আন্তর্জাতিক আদালতের এক বৃহৎ রাজনৈতিক সংঘর্ষের কেন্দ্রে। হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এই সব কোথায় গিয়ে শেষ হবে? আন্তর্জাতিক বিচার যদি এমন হয়, তবে এটি সেই ন্যায়বিচার নয়, যার জন্য আমি সারাজীবন কাজ করে এসেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সব সময় নীরবে কাজ করেছি, পরিচিতি বা আলোচনায় আসা আমার লক্ষ্য ছিল না।’
গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহু, ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গত বছরের ২১ নভেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি। নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত এই আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করে না ইসরায়েল। তারা গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগও অস্বীকার করে।
এর আগে গত মে মাসে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদনের পর করিম খানকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তাঁকে বলা হয়েছিল, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন তুলে না নিলে তাঁকে (করিম খান) এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে ‘ধ্বংস’ করে দেওয়া হবে।
আইসিসির আসামিপক্ষের আইনজীবী ও ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক নিকোলাস কফম্যান এ হুমকি দিয়েছিলেন। আদালতে নথিভুক্ত হওয়া একটি বৈঠকের নোট থেকে মিডল ইস্ট আই এসব তথ্য জানতে পারে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রসিকিউটর করিম খানের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনা এক নারীর ওপর গোপনে নজরদারি চালানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, যে প্রাইভেট গোয়েন্দা সংস্থা এই নজরদারি চালায় তারা কাতারের হয়ে কাজটি করেছে।
দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, এই গোপন অভিযানে ঐ নারীর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ফাঁস হওয়া নথি ও সূত্রের তথ্যমতে, অভিযানে যুক্ত একটি গোয়েন্দা সংস্থা তার পাসপোর্টের বিবরণ, সন্তান সংক্রান্ত তথ্যসহ ব্যক্তিগত নথি সংগ্রহের চেষ্টা করে।
এই গোয়েন্দা অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল ওই নারীর বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করা এবং করিম খানের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ দুর্বল করে দেওয়া। একজন বিশিষ্ট ব্রিটিশ আইনজীবী করিম খান তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন।
তার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো দাবি করেছে, এই অভিযোগ ইসরায়েলের একটি অপপ্রচারের অংশ। ২০২৪ সালে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিশোধ হিসেবে এই অপপ্রচার চালায় ইসরায়েল।
গোয়েন্দা অভিযানটি পরিচালনা করেছে লন্ডনের মেফেয়ার এলাকায় অবস্থিত হাইগেট নামের একটি প্রাইভেট গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান। সংস্থাটি নিজেকে ‘কৌশলগত পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে পরিচয় দেয়। তারা ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদের সংকট মোকাবিলায় পরামর্শ দেয়।
হাইগেট অন্তত আরেকটি সংস্থার সঙ্গে মিলে ওই নারীর সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো যোগসূত্র আছে কি না তা খোঁজার চেষ্টা করে। কিন্তু দ্য গার্ডিয়ান-এর দেখা নথিতে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
গোয়েন্দা সংস্থাটির কার্যক্রমের সঙ্গে পরিচিত অনেকে অভিযোগ করেন, অভিযানটি কাতারের একটি উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক ইউনিটের পক্ষ থেকে পরিচালিত হয়েছিল।
অভিযোগকারী নারী দ্য গার্ডিয়ান-কে জানান, তিনি এই ‘বীভৎস ও ভয়ানক’ তৎপরতায় গভীরভাবে মর্মাহত। তার ভাষায়, ‘আমাকে লক্ষ্য করে বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—এই ধারণা যেমন বিস্ময়কর, তেমনি হৃদয়বিদারক।’
হাইগেট দ্য গার্ডিয়ান-কে দেওয়া এক বিবৃতিতে স্বীকার করেছে যে তারা আইসিসি-সংশ্লিষ্ট একটি প্রকল্পে কাজ করেছে, তবে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে। তারা আরও জানিয়েছে, এই প্রকল্প কাতার সরকারের অর্থায়নে বা নির্দেশে পরিচালিত হয়নি।
গোয়েন্দা অভিযানে কাতারের একটি ইউনিটের সম্পৃক্ততা এবং আরও কয়েকজন আইসিসি কর্মকর্তাকে টার্গেট করা হয়েছে—এই তথ্য আদালতের সাম্প্রতিক সংকটকে আরও জটিল করেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির সিদ্ধান্ত করিম খানকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমালোচনার মুখে ফেলেছে।
অভিযোগের তদন্ত চলাকালীন খান সাময়িকভাবে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। দ্য গার্ডিয়ান জানায়, তার ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে হাইগেট সংস্থার প্রতিনিধিরা করিম খানের টিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে বলে জানা গেছে, যা এই বৈঠকের উদ্দেশ্য নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে।
অশান্ত এক বছর
গত বছরের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রসিকিউটর করিম খানের মেয়াদকাল গভীর সংকটে পড়ে। আদালতের এক নারী কর্মী তার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ করেন।
৩০ বছরের বেশি বয়সী এই নারী আইনজীবী সরাসরি খানের অধীনে কাজ করতেন। তার অভিযোগ অনুযায়ী, খান কর্মক্ষেত্রের ভ্রমণকালে হোটেল কক্ষে, আইসিসি অফিসে এবং নিজের বাসায় তাকে যৌননিপীড়ন করেন।
জাতিসংঘের একটি পর্যবেক্ষক সংস্থা এই অভিযোগের তদন্ত করছে। দ্য গার্ডিয়ান আগস্টে জানায়, তদন্তের সময় আরও একজন নারী এগিয়ে এসে জানান, খানের কর্মজীবনের আগের এক পর্যায়ে তিনি বিনা বেতনে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করার সময়ও এমন আচরণের শিকার হয়েছিলেন।
খানের আইনজীবীরা বারবার বলেছেন, তিনি কখনও কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেননি এবং অভিযোগগুলো একটি ‘পরিকল্পিত প্রচারণার অংশ’, যা তাকে হেয় করার উদ্দেশ্যে চালানো হচ্ছে।
দ্য গার্ডিয়ানও জানতে পারে, কিছু ইসরায়েলপন্থী পক্ষ অভিযোগপত্রের তথ্য ফাঁসের চেষ্টা করেছিল। তবে কোনো প্রমাণ মেলেনি যে অভিযোগকারী নারীরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই অভিযোগ এনেছেন।
জাতিসংঘ তদন্ত কেন্দ্রে থাকা ওই নারীকে লক্ষ্য করে গোপন গোয়েন্দা অভিযানটি এ বছরের শুরুতে চালানো হয়। সেসময় হাইগেটকে কাতারি একটি কুটনৈতিক ইউনিট পৃষ্ঠপোষকতা দেয় বলে অভিযোগ।
দ্য গার্ডিয়ান-এর দেখা প্রমাণ অনুযায়ী, হাইগেটের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানতেন যে প্রকল্পটির মূল অর্থদাতা একটি কাতারি কুটনৈতিক ইউনিট। অর্থায়নকে অত্যন্ত ‘সংবেদনশীল’ হিসেবে ধরা হয়েছিল এবং কর্মকর্তারা কাতারকে ‘মক্কেল রাষ্ট্র’ বলে উল্লেখ করতেন।
একটি নথি থেকে জানা যায়, অভিযানের এক পর্যায়ে হাইগেট চেষ্টা করেছিল অভিযোগকারী নারী ও তার পরিবারের সঙ্গে ইসরায়েল বা ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার কোনো যোগসূত্র আছে কিনা তা খুঁজে বের করতে।
এই কাজে তারা এলিসিয়াস ইন্টেলিজেন্স নামের একটি বিশেষায়িত সংস্থাকে নিয়োগ দেয়। এই সংস্থা ওই নারীর সন্তান, স্বামী এবং শ্বশুর-শাশুড়িসহ পরিবারের ব্যক্তিগত তথ্য অনুসন্ধান করে। তারা এমনকি আইসিসির অন্যান্য কর্মকর্তাদের সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করে, যারা অভিযোগ তদন্তে যুক্ত ছিলেন।
নথি অনুযায়ী, এলিসিয়াস সংস্থা হাইগেটের জন্য একাধিক রিপোর্ট তৈরি করে, যেখানে তাদের ব্যক্তিগত জীবন, অতীত সম্পর্ক এবং আর্থিক অবস্থার সংবেদনশীল তথ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল। এক পর্যায়ে, হাইগেট অভিযোগকারী নারীর সন্তানের জন্মসনদ সংগ্রহের চেষ্টাও করে।
তারা নারীর পাসপোর্টের বিস্তারিত তথ্য, সাম্প্রতিক বছরগুলোর ফ্লাইট রেকর্ড, এমনকি তার ব্যক্তিগত ইমেল অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পর্যন্ত সংগ্রহ করে—যা সম্ভবত ডার্ক ওয়েবে ফাঁস হওয়া হ্যাকড ডেটা থেকে নেওয়া হয়েছিল।
হাইগেট অবশ্য দাবি করেছে, ওই নারীর সন্তানের তথ্য সংগ্রহের অভিযোগ ‘ভুল’ এবং অন্যান্য তথ্যও ‘অসম্পূর্ণ’। সংস্থাটি বলেছে, তারা শুধু একটি ‘স্বাধীন মূল্যায়ন’ করেছে, যার উদ্দেশ্য ছিল আইসিসির বিশ্বাসযোগ্যতা বা স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার সম্ভাব্য গোপন কর্মকাণ্ড শনাক্ত করা।
হাইগেট খানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি অস্বীকার করেনি, তবে একে ‘বাণিজ্যিকভাবে গোপনীয় ও সংবেদনশীল’ বলে বর্ণনা করেছে। খানের আইনজীবীরাও বৈঠকের সত্যতা অস্বীকার করেননি, তবে বলেছেন, খান বা তার প্রতিনিধিরা এই গোয়েন্দা অভিযানের বিষয়ে কিছুই জানতেন না এবং কোনো তথ্য পাননি।
এলিসিয়াস ইন্টেলিজেন্স মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কাতার সরকারও কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি।
অভিযোগকারী নারী প্রায় এক বছর ধরে জাতিসংঘ তদন্তের রায় প্রত্যাশা করছেন। এখন তিনি আন্তর্জাতিক আদালতের এক বৃহৎ রাজনৈতিক সংঘর্ষের কেন্দ্রে। হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এই সব কোথায় গিয়ে শেষ হবে? আন্তর্জাতিক বিচার যদি এমন হয়, তবে এটি সেই ন্যায়বিচার নয়, যার জন্য আমি সারাজীবন কাজ করে এসেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সব সময় নীরবে কাজ করেছি, পরিচিতি বা আলোচনায় আসা আমার লক্ষ্য ছিল না।’
গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহু, ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গত বছরের ২১ নভেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি। নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত এই আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করে না ইসরায়েল। তারা গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগও অস্বীকার করে।
এর আগে গত মে মাসে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদনের পর করিম খানকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তাঁকে বলা হয়েছিল, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন তুলে না নিলে তাঁকে (করিম খান) এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে ‘ধ্বংস’ করে দেওয়া হবে।
আইসিসির আসামিপক্ষের আইনজীবী ও ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক নিকোলাস কফম্যান এ হুমকি দিয়েছিলেন। আদালতে নথিভুক্ত হওয়া একটি বৈঠকের নোট থেকে মিডল ইস্ট আই এসব তথ্য জানতে পারে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
.png)

যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে একটি বিমানঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। এই ঘাঁটির উদ্দেশ্য হলো সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হতে যাওয়া নিরাপত্তা চুক্তি বাস্তবায়নে সহায়তা করা। বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত ছয়টি সূত্র রয়টার্স-কে এ তথ্য জানিয়েছে।
৩৫ মিনিট আগে
বছরের অন্যতম ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় টাইফুন কালমায়েগি এবার কম্বোডিয়া ও লাওসের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বৃহস্পতিবার এটি মধ্য ভিয়েতনামে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯২ মাইল (১৪৯ কিলোমিটার) বেগে আঘাত হানে।
৪ ঘণ্টা আগে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, ২০২৫ সালের ১৩ জুন ইরানে ইসরায়েলের বিমান হামলা তার নির্দেশেই পরিচালিত হয়েছিল। এ বক্তব্যে হোয়াইট হাউসের আগের অস্বীকারোক্তি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
কানাডা তার সাম্প্রতিক দশকগুলোর সবচেয়ে বড় অভিবাসন সংস্কার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। দেশটি আগামী বছর থেকে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫–৩২ শতাংশ পর্যন্ত কমাবে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এইচ–১বি ভিসাধারী ও দক্ষ গবেষকদের জন্য বিশেষ ভিসা চালুর পরিকল্পনা করেছে সরকার।
১৭ ঘণ্টা আগে