leadT1ad

ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামে ধ্বংসযজ্ঞের পর কম্বোডিয়ার দিক ধেয়ে যাচ্ছে কালমায়েগি

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

টাইফুন কালমায়েগিতে ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামে ১১৭ জন নিহত ও ১২০ নিখোঁজ হয়। ছবি: সংগৃহীত।

বছরের অন্যতম ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় টাইফুন কালমায়েগি এবার কম্বোডিয়া ও লাওসের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বৃহস্পতিবার এটি মধ্য ভিয়েতনামে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯২ মাইল (১৪৯ কিলোমিটার) বেগে আঘাত হানে।

এর আগে সপ্তাহের শুরুতে ঘূর্ণিঝড়টি ফিলিপাইনে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। সেখানে অন্তত ১১৪ জন নিহত এবং ১২০ জনেরও বেশি নিখোঁজ হন। ভিয়েতনামে দাক লাক প্রদেশে একটি বাড়ি ধসে একজনের মৃত্যু হয় এবং জিয়া লাই প্রদেশে আরও দুজন প্রাণ হারান। সরকারিভাবে এখনো ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

ভিয়েতনাম ইতোমধ্যেই টানা বৃষ্টিপাতে ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। গত সপ্তাহে রেকর্ড বৃষ্টিতে দেশটির প্রায় ৫০ জন মারা যায়। নতুন করে এই ঝড় আঘাত হানায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।

ঝড়ের আগে ভিয়েতনামের সেনাবাহিনী ২ লাখ ৬০ হাজারের বেশি সদস্য ও কর্মী মোতায়েন করে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে। এতে অংশ নেয় ৬ হাজার ৭০০টি যানবাহন ও ছয়টি বিমান। দেশটির কয়েকটি বিমানবন্দর ও মহাসড়ক বন্ধ রাখা হয়, আর লাখো মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

ঝড়ের পর উদ্ধার অভিযান। ছবি: সংগৃহীত।
ঝড়ের পর উদ্ধার অভিযান। ছবি: সংগৃহীত।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা ২৯ মিনিটে ঘূর্ণিঝড়টি ভিয়েতনামে আঘাত হানার পর শত শত মানুষ সাহায্যের আবেদন জানান। দাক লাক প্রদেশের বহু বাসিন্দার বাড়িঘর ধসে পড়েছে বা প্লাবিত হয়েছে। প্রবল বাতাস ও বৃষ্টিতে বহু এলাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

ভিয়েতনামের আবহাওয়া অধিদপ্তর সাতটি শহর ও প্রদেশে বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কা জানিয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে ঘরবাড়ির ছাদ উড়ে গেছে, হোটেলের কাঁচের দেয়াল ভেঙে পড়েছে, শহর ও গ্রামীণ সড়কে গাছ উপড়ে পড়েছে।

বুধবার সকালে উপকূলীয় এলাকায় কর্মকর্তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে সরিয়ে নিতে অনুরোধ করতে দেখা যায়। প্রধানমন্ত্রী ফাম মিন চিন এক অনলাইন সভায় বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই দুর্গম এলাকায় পৌঁছাতে হবে এবং কেউ যেন যেন খাদ্য, পানি ও প্রয়োজনীয় জিনিসের সংকটে না ভোগে তা নিশ্চিত করতে হবে।’

ভিয়েতনামে তিনজন নিহত হয়। ছবি: সংগৃহীত।
ভিয়েতনামে তিনজন নিহত হয়। ছবি: সংগৃহীত।

ভিয়েতনামে আঘাত হানার আগে ঘূর্ণিঝড়টি ফিলিপাইনে ভয়াবহ ক্ষতি করে। স্থানীয়ভাবে টাইফুন টিনো নামে পরিচিত এই ঝড় সেখানে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুরো একটি মাসের সমপরিমাণ বৃষ্টি ঝরায়। সেবু দ্বীপসহ মধ্যাঞ্চলের বহু শহর প্লাবিত হয়, গাড়ি ও বাস বন্যার পানিতে ভেসে যায়।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর অনেকাংশেই নিম্নবিত্ত পরিবার বাস করত, যাদের দুর্বল ঘরবাড়ি একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তালিসায় সিটির বাসিন্দা মেলি সাবেরন বলেন, ‘আমাদের আর কোনো ঘর নেই। কিছুই উদ্ধার করতে পারিনি। এত ভয়াবহ ঝড় আমরা আগে দেখিনি।’

এখন স্থানীয়রা ঘরবাড়ির ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করছেন এবং যা কিছু পুনরায় ব্যবহারযোগ্য তা খুঁজে নিচ্ছেন।

ঝড়ের গতিপথ।
ঝড়ের গতিপথ।

ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বৃহস্পতিবার সকালে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। সরকারের হিসাবে এটি এমন একটি পরিস্থিতি, যেখানে ব্যাপক প্রাণহানি, সম্পত্তির ক্ষতি এবং মানুষের স্বাভাবিক জীবনে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটে।

এরই মধ্যে ভিয়েতনামের বিখ্যাত পর্যটন শহরগুলো যেমন ইউনেস্কো স্বীকৃত হুয়ে ও ঐতিহাসিক হোই আন প্লাবিত হয়েছে। নদীর পানি উপচে পড়ায় স্থানীয়রা নৌকায় করে চলাচল করছেন।

এদিকে থাইল্যান্ডও ঝড়ের প্রভাবে প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ হঠাৎ বন্যা, ভূমিধস ও নদীর পানি উপচে পড়ার সতর্কতা জারি করেছে।

টাইফুন কালমায়েগি এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশে ভারী বৃষ্টি ও প্রবল বাতাসের আশঙ্কা তৈরি করেছে। উদ্ধারকাজ চললেও প্রাণহানি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সূত্র: বিবিসি

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত