leadT1ad

গাজায় শুধু ধ্বংসযজ্ঞ দেখল বিবিসি

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৫
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর নেতৃত্বে গাজা শহরের পূর্বদিকে বিবিসির লুসি উইলিয়ামসনকে নিয়ে যাওয়া হয়। ছবি: বিবিসি।

গাজা সিটির পাশের এক উঁচু বাঁধ থেকে তাকালে বোঝা যায়, যুদ্ধ এই শহরকে কীভাবে ধ্বংস করেছে। মানচিত্রের গাজার চিহ্ন এখন নেই। স্মৃতির শহরটি পরিণত হয়েছে ধূসর ধ্বংসস্তূপে, যা একদিক থেকে অন্যদিকে প্রসারিত। বেইত হানুন থেকে গাজা সিটি পর্যন্ত যতদূর চোখ যায়, শুধু ভাঙাচোরা ইট-পাথর।

দূরে কয়েকটি ভবন টিকে আছে, কিন্তু চারপাশে এমন কিছুই অবশিষ্ট নেই যা দেখে বোঝা যায় এখানে একসময় মানুষ বাস করত। এই এলাকাতেই যুদ্ধের প্রথম দিকে ইসরায়েলি স্থলবাহিনী প্রবেশ করেছিল। এরপর হামাস পুনর্গঠিত হওয়ায় ইসরায়েলি সেনারা একাধিকবার আবারও এখানে অভিযান চালায়।

ইসরায়েল গাজা থেকে স্বাধীন সংবাদ প্রচারের অনুমতি দেয় না। বুধবার, সরকারি ব্যবস্থাপনায়, বিবিসিসহ কয়েকজন সাংবাদিককে দখলকৃত অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয়। সফরটি ছিল সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত এবং কোনো ফিলিস্তিনির সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি।

সামরিক সেন্সর আইনের কারণে প্রকাশের আগে ইসরায়েলি সেনারা প্রতিবেদনের উপকরণ পর্যালোচনা করে, তবে বিবিসি সম্পূর্ণ সম্পাদনাগত নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে।

এলাকার ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে প্রশ্ন করলে ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র নাদাভ শোশানি বলেন, ‘এটি আমাদের লক্ষ্য নয়। লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করা। প্রায় প্রতিটি ঘরেই ছিল টানেল, বোমা ফাঁদ, রকেট বা স্নাইপার পজিশন।’

তিনি বলেন, ‘অক্টোবর ৭ তারিখে যা ঘটেছিল, তাতে বোঝা গেছে—সীমান্ত থেকে মিনিটের মধ্যে সন্ত্রাসীরা ইসরায়েলের ঘরে পৌঁছে যেতে পারে।’

মানচিত্রের গাজার চিহ্ন এখন নেই। ছবি: বিবিসি।
মানচিত্রের গাজার চিহ্ন এখন নেই। ছবি: বিবিসি।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ১০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এরপর থেকে গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ৬৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

শোশানি জানান, ওই এলাকায় কয়েকজন জিম্মির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যার মধ্যে ইটাই চেনের দেহও রয়েছে, যাকে হামাস সম্প্রতি ফেরত দেয়। আরও সাতজনের সন্ধান এখনো চলছে।

সাংবাদিকদের নেওয়া সামরিক ঘাঁটিটি অবস্থিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় নির্ধারিত ‘হলুদ রেখা’-র কাছে। এই রেখা ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত এলাকা ও হামাসের নিয়ন্ত্রিত এলাকার সীমা নির্দেশ করে।

ইসরায়েলি সেনারা ধীরে ধীরে রেখাটি স্থায়ীভাবে চিহ্নিত করছে, যাতে হামাস যোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ দুজনেই সতর্ক থাকে। যদিও এখনো কিছু স্থানে সীমানা চিহ্নিত হয়নি। সৈন্যরা ধ্বংসস্তূপের মাঝখানে এক টুকরো বালির দাগ দেখিয়ে জানান—সেখানেই সীমারেখা।

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে এক মাস আগে, কিন্তু ইসরায়েল জানায়, তারা এখনো প্রায় প্রতিদিন হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। গাজা সিটির দিকে মুখ করা বাঁধের ওপর গুলি বর্ষণের চিহ্ন হিসেবে ছড়িয়ে আছে ব্রোঞ্জ রঙের খোসা।

এমন কিছুই অবশিষ্ট নেই যা দেখে বোঝা যায় এখানে একসময় মানুষ বাস করত। ছবি: বিবিসি।
এমন কিছুই অবশিষ্ট নেই যা দেখে বোঝা যায় এখানে একসময় মানুষ বাস করত। ছবি: বিবিসি।

অন্যদিকে হামাস অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল শত শতবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এসব হামলায় ২৪০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

শোশানি বলেন, ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন শান্তি পরিকল্পনার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। তবে তারা হামাসের হুমকি নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকবে।

তিনি বলেন, ‘সবাই জানে হামাস এখনো সশস্ত্র এবং গাজা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। আমরা এখনো অনেক দূরে আছি শান্তি থেকে।’

শান্তি পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপে হামাসকে নিরস্ত্র হয়ে ক্ষমতা একটি আন্তর্জাতিকভাবে তত্ত্বাবধানকৃত ফিলিস্তিনি কমিটির হাতে তুলে দিতে হবে। তবে শোশানির দাবি, হামাস বরং উল্টো কাজ করছে—আরও অস্ত্র সংগ্রহ করছে এবং জনগণকে আতঙ্কিত করছে।

ইসরায়েলি সেনারা সাংবাদিকদের দেখায় টানেলের মানচিত্র—একটি জটিল নেটওয়ার্ক, যার কিছু ধ্বংস হয়েছে, কিছু এখনো সক্রিয়।

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে এক মাস আগে, কিন্তু ইসরায়েল জানায়, তারা এখনো প্রায় প্রতিদিন হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। ছবি: বিবিসি।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে এক মাস আগে, কিন্তু ইসরায়েল জানায়, তারা এখনো প্রায় প্রতিদিন হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। ছবি: বিবিসি।

ভবিষ্যৎ কী হবে তা এখনো অনিশ্চিত। গাজা এক ধরনের অচলাবস্থায় আছে। যুক্তরাষ্ট্র জানে পরিস্থিতি কতটা ভঙ্গুর—যুদ্ধবিরতি ইতিমধ্যে দুবার ভেঙেছে।

ওয়াশিংটন এখন একটি দীর্ঘমেয়াদি শান্তি পরিকল্পনার দিকে অগ্রসর হতে চায়। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো খসড়া প্রস্তাবে গাজার নিরাপত্তা ও হামাস নিরস্ত্রীকরণের জন্য দুই বছরের জন্য একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী গঠনের কথা বলা হয়েছে।

তবে বিস্তারিত কিছুই এখনো পরিষ্কার নয়—কোন দেশ সেনা পাঠাবে, কখন ইসরায়েলি বাহিনী সরে যাবে, কিংবা নতুন গাজা প্রশাসন কীভাবে গঠিত হবে, এসব প্রশ্নের উত্তর এখনো অনির্দিষ্ট।

ট্রাম্প গাজাকে একটি বিনিয়োগ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। কিন্তু আজকের বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত গাজা এখন কেবল বিনিয়োগের নয়, অস্তিত্বের প্রশ্নে দাঁড়িয়ে আছে। নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গাজার মানুষের ভূমিকা আসলে কতটা থাকবে, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

সূত্র: বিবিসি

Ad 300x250

সম্পর্কিত