leadT1ad

মামদানির ট্রানজিশন টিমের সব সদস্য নারী

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

বুধবার নিজের ট্রানজিশন টিম ঘোষণা করেন মামদানি। ছবি: সংগৃহীত।

নির্বাচনে জয়ের পর বুধবার নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি তাঁর প্রশাসনের রূপরেখা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আগামী ১ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই কাজ শুরু করবেন। এজন্য তিনি এক ট্রানজিশন টিম গঠন করেছেন, যা তাঁর ভাষায় ‘এক প্রজন্মে শহরের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী নীতি বাস্তবায়ন’ তত্ত্বাবধান করবে।

কুইন্সে এক সংবাদ সম্মেলনে ৩৪ বছর বয়সী এই ডেমোক্রেটিক সমাজতন্ত্রী জানান, তাঁর ট্রানজিশন টিম সম্পূর্ণরূপে নারী নেতৃত্বাধীন। টিমটির নির্বাহী পরিচালক হবেন এলানা লিওপোল্ড। সহ-সভাপতি হিসেবে থাকছেন সাবেক ডেপুটি মেয়র মারিয়া টরেস-স্প্রিঙ্গার, সাবেক ফেডারেল ট্রেড কমিশন চেয়ার লিনা খান, ইউনাইটেড ওয়ের সভাপতি গ্রেস বোনিলা, এবং সাবেক স্বাস্থ্য ও মানবসেবা ডেপুটি মেয়র মেলানি হার্টজগ।

মামদানি বলেন, ‘আগামী কয়েক মাসে আমরা এমন এক সিটি হল গড়ে তুলব, যা আমাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে সক্ষম হবে। আমরা একদল দক্ষ, মানবিক ও ন্যায়নিষ্ঠ কর্মী গঠন করব, যারা নিউইয়র্কবাসীর মতোই পরিশ্রমী হবে।’

লিনা খানের অন্তর্ভুক্তি মামদানির প্রশাসনের সংস্কারধর্মী মনোভাবের ইঙ্গিত বহন করে। বাইডেন প্রশাসনে তাঁর দৃঢ় অ্যান্টিট্রাস্ট নীতির জন্য খ্যাত এই অর্থনীতিবিদকে প্রগতিশীল ও রিপাবলিকান উভয় মহলেই সম্মান করা হয়।

অ্যান্ড্রু কুয়োমো ও রিপাবলিকান কার্টিস স্লিওয়াকে পরাজিত করার পর এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে মামদানি বলেন, ‘আমরা এই শহরের প্রতি ঋণী। তাই ১ জানুয়ারি থেকেই কাজ শুরু করতে হবে। হাতে মাত্র ৫৭ দিন এবং প্রতিটি দিনই প্রস্তুতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’

এই জয়ের মধ্য দিয়ে মামদানি নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম, প্রথম দক্ষিণ এশীয়, প্রথম আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া এবং এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে তরুণ মেয়র হতে যাচ্ছেন।

তাঁর প্রশাসন শুরু হওয়ার আগেই বড় চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, মামদানি দায়িত্ব নিলে নিউইয়র্কের ফেডারেল তহবিল কমিয়ে দেবেন। ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে লিখেছেন, ‘মামদানি জিতলে শহরকে ন্যূনতম ফেডারেল অর্থই দেওয়া হবে।’ তিনি প্রায়ই মামদানিকে ‘কমিউনিস্ট’ বলে অভিহিত করেন।

রাষ্ট্রীয় হিসাব অনুযায়ী, নিউইয়র্ক সিটির ২০২৬ অর্থবছরের মোট বাজেটের ৬ দশমিক ৪ শতাংশ বা প্রায় ৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার আসে ফেডারেল তহবিল থেকে।

নির্বাচনের দিন ট্রাম্প এক পোস্টে লিখেন, ‘কোনো ইহুদি ব্যক্তি যদি স্বঘোষিত “ইহুদিবিদ্বেষী” মামদানির পক্ষে ভোট দেয়, তবে সে নির্বোধ।’ মামদানি বহুবারই ইহুদিবিদ্বেষের নিন্দা জানালেও প্রচারে ইসলামবিরোধী আক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান র‍্যান্ডি ফাইন ও অ্যান্ডি ওগলস বিচার বিভাগকে মামদানির নাগরিকত্ব বাতিল ও তাঁকে বহিষ্কারের আহ্বান জানান। এক রেডিও সাক্ষাৎকারে সাবেক গভর্নর কুয়োমো পর্যন্ত বলেন, মামদানি নাকি আরেকটি ৯/১১ ঘটলে ‘উল্লাস করতেন।’ পাশে দাঁড়ানো মেয়র এরিক অ্যাডামসও মন্তব্য করেন, ‘নিউইয়র্ক ইউরোপ হতে পারে না। ইসলামী চরমপন্থার ফল আমরা অন্য দেশে দেখেছি।’

টেক্সাসের কংগ্রেসম্যান চিপ রয় এক নিবন্ধে মামদানিকে ‘ইসলামিক সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রতীক’ এবং ‘আধুনিক ডেমোক্র্যাট পার্টির মুখপাত্র’ বলে আখ্যা দেন।

সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব অর্গানাইজড হেট-এর এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মধ্যে মামদানিকে নিয়ে ইসলামবিরোধী পোস্ট ৪৫০ শতাংশ বেড়েছে। প্রায় ৩৬ হাজার পোস্টে ৭ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন লাইক হয়েছে, যার ৭২ শতাংশে তাঁকে ‘মুসলিম সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।

তবু মামদানি আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন, ‘আমরা যে নীতিগুলো নিয়ে প্রচার করেছি, সেগুলো বাস্তবায়নে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতি যেমনই হোক, নিউইয়র্কবাসীদের সবাই একই সমস্যার মুখোমুখি।’

মামদানির নির্বাচনী অঙ্গীকারে ছিল প্রগতিশীল নীতি—সরকারি অ্যাপার্টমেন্টে ভাড়া বৃদ্ধি স্থগিত, বিনামূল্যে গণপরিবহন সেবা, সর্বজনীন শিশুসেবা এবং সরকার পরিচালিত মুদি দোকান স্থাপন। এসবের অর্থ আসবে ধনীদের ও করপোরেটদের উপর বাড়তি কর থেকে।

জাতীয়ভাবে এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের জয় ছিল ব্যাপক। নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়ায় গভর্নর নির্বাচনে মিকি শেরিল ও অ্যাবিগেইল স্প্যানবার্গার জয়ী হন। ক্যালিফোর্নিয়ায় ভোটাররা প্রস্তাব ৫০ পাস করেন, যা ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে আসন পুনর্বিন্যাসে সহায়ক হবে। ম্যাসাচুসেটসের সোমারভিলে ৫৫ শতাংশ ভোটার একটি প্রস্তাব সমর্থন করেন, যাতে ইসরায়েলের দখল ও গণহত্যা সমর্থনকারী কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়।

নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত প্রশাসন জানিয়েছে, আগামী দিনে ডেপুটি মেয়র ও এজেন্সি প্রধানদের নাম ঘোষণা করা হবে। মামদানি বলেন, ‘কিছু নাম পরিচিত হবে, কিছু নতুন। কিন্তু সবাই যুক্ত থাকবে পুরনো সমস্যার নতুন সমাধানে।’

তিনি শেষে বলেন, ‘১ জানুয়ারি আমরা শুধু নতুন প্রশাসনের সূচনা নয়, এক নতুন যুগের সূচনাও উদযাপন করব—একটি এমন শহরের, যার সাফল্যে আমরা সবাই অংশীদার।’

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Ad 300x250

সম্পর্কিত