leadT1ad

নিজের শুভেচ্ছা বিলবোর্ডের নিচেই নিহত সরোয়ার

চট্টগ্রাম নগরীর চালিতাতলীতে যে দোকানের সামনে বুধবার সরোয়ারকে গুলি করা হয়, সেই দোকানের ওপরেই ঝুলে আছে তাঁর ছবিসংবলিত একটি শুভেচ্ছা বিলবোর্ড। তাতে এলাকাবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন তিনি।

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ২১: ২১
নিজের শুভেচ্ছা বিলবোর্ডের নিচেই নিহত সরোয়ার। স্ট্রিম ছবি

চট্টগ্রাম নগরীর চালিতাতলীতে বাড়ি সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলার (৪৩)। বাড়ি থেকে দুই-তিনশ গজ দূরেই পাশাপাশি কয়েকটি দোকান। এর একটি দোকানের ওপর ঝুলে আছে তাঁর ছবিসংবলিত একটি শুভেচ্ছা বিলবোর্ড। তাতে এলাকাবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে লেখা, ‘ঈদের খুশি সবার তরে, ছড়িয়ে পড়ুক ঘরে ঘরে।’

গতকাল বুধবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে সেখানে নির্বাচনি প্রচার চালাচ্ছিলেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম–৮ আসনে মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ। সেখানেই গুলি করা হওয়া সরোয়ারসহ ছয়জনকে। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় সরোয়ারের।

নির্বাচনি প্রচার সভায় গুলি চালানোর সময় সরোয়ারের পাশেই ছিলেন আব্দুর রশীদ। তিনি বায়েজিদ থানা বিএনপির সি-ইউনিটের সাংগঠনিক সম্পাদক ও গুলিতে আহত শান্তর খালাতো ভাই। স্ট্রিমকে তিনি জানান, চালিতাতলীর ওই এলাকায় পাশাপাশি তিনটি দোকান ছিল। এরশাদ উল্লাহ ঠিক করেছিলেন তিনটা দোকানে জনসংযোগ চালিয়ে তিনি কার্যালয়ে ফিরে নামাজ পড়বেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম দুটি দোকানে প্রচার শেষে তৃতীয় দোকানের সামনে যেতেই ঘটে গুলির ঘটনা। হত্যার এ মিশনে অংশ নেয় পাঁচ থেকে ছয়জন।

আব্দুর রশীদ বলেন, ‘স্যার বলছিলেন, তিনটা দোকান আছে। এই তিনটা দোকানে জনসংযোগ চালিয়ে আমি নামাজ পড়ে চলে যাব। তিন দোকানের শেষ দোকানে যেতেই এই ঘটনা ঘটে। একজন ওপর দিকে গুলি ছোড়ে, একজন সরাসরি গুলি করে। আরেকজন নিচে পড়ে যাওয়ার পর গুলি করে। আতঙ্কে সবাই দৌড়ে পালিয়ে যায়। এরপর দেখি আমার খালাতো ভাই ও এরশাদ উল্লাহ পড়ে আছে। আমি দ্রুত তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাই।’

গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সরোয়ার চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত নাম। তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও হত্যাসহ অন্তত ১৫টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাঁকে চলতি বছরের ৩০ মার্চ নগরীর বাকলিয়া অ্যাকসেস রোড এলাকায় একটি প্রাইভেটকারে গুলি চালিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এতে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও ওই সময় প্রাইভেটকারে থাকা দুজন ঘটনাস্থলেই মারা যান।

বাবার কোলেই মৃত্যু হয় সরোয়ারের

বুধবার যে স্থানে সরোয়ার গুলিবিদ্ধ হন, সেখান থেকে দুই-তিনশ গজ দূরেই তাঁর বাড়ি। এরশাদ উল্লাহর জনসংযোগ চলাকালে কাছাকাছিই ছিলেন সরোয়ারের বাবা। তিনি গুলির শব্দ শুনলেও তাঁর ছেলেকেই গুলি করা হয়েছে, তা জানতেন না। মানুষের কাছে শুনে দ্রুতই ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে তাঁর ছেলে। পরে রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যান আবদুল কাদের। তিনি বলেন, ‘রিকশাতেই আমার ছেলে আমার কোলে মারা যায়। তবু মনকে বোঝাতে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম।’

তিন দিন আগে পেয়েছিলেন হত্যার হুমকি

সরোয়ার হোসেনের ওপর হামলার তিন দিন আগেই (রবিবার) তাঁকে হত্যার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন স্থানীয় রায়হান। তিনিও পুলিশের খাতায় একাধিক মামলার আসামি। সেদিন ফোনে সরোয়ারকে বলা হয়েছিল, ‘তোর সময় শেষ, যা খাওয়ার খেয়ে নে।’ এই হুমকির কথাই সংবাদমাধ্যমকে জানান নিহত সরোয়ারের বাবা আবদুল কাদের।

বুধবার রাতে বায়েজিদ বোস্তামীর চালিতাতলী এলাকার খন্দকারপাড়ায় নিজ বাড়িতে গণমাধ্যমকর্মীদের আবদুল কাদের বলেন, ‘আমার ছেলেকে রোববার রাতে ফোন করে হুমকি দেয় রায়হান। এরপর থেকে ও খুব সতর্ক ছিল। বাইরে গেলে সঙ্গে লোক নিত।’

সরোয়ারের বাবা জানান, তাঁর ছেলেকে দীর্ঘদিন ধরে হুমকি দিয়ে আসছিল বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী, তাঁর সহযোগী ছোট সাজ্জাদ ও রায়হান। তাই আশঙ্কা থাকলেও সরোয়ার নিজের এলাকায় নিরাপদ মনে করতেন।

২৩ ঘণ্টায়ও মামলা হয়নি

সরোয়ারের মৃত্যুর ইতোমধ্যে ২৩ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। আজ বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের হয়নি। দাফন করা হয়নি লাশও। এর আগে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ আজ দুপুরের দিকে পরিবারের মরদেহ কাছে বুঝিয়ে দেয় পুলিশ।

বিকেল পাঁচটার দিকে বিষয়টি স্ট্রিমকে নিশ্চিত করেছেন বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখনও দাফন হয়নি। মামলাও দায়ের হয়নি। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত