leadT1ad

নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির স্ত্রী কে এই রামা দুয়াজি

নিউ ইয়র্ক সিটির সর্বকনিষ্ঠ ফার্স্ট লেডি হবেন এই শিল্পী

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

রামা দুয়াজি নিউইয়র্কের ব্রুকলিনভিত্তিক একজন শিল্পী। ছবি: রয়টার্স।

নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সী ফার্স্ট লেডি হতে যাচ্ছেন ২৮ বছর বয়সী রামা দুয়াজি। মঙ্গলবার রাতে তাঁর স্বামী জোহরান মামদানি মেয়র নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তিনি আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন।

বিজয় ভাষণে মামদানি বিশেষভাবে তাঁর স্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অসাধারণ স্ত্রী রামা, হায়াতি (আরবি শব্দ হায়াতি অর্থ ‘আমার জীবন’)। জীবনের এই মুহূর্তে এবং প্রতিটি মুহূর্তে তাঁকে ছাড়া আমি আর কাউকে সঙ্গী হিসেবে চাই না।’

রামা দুয়াজি নিউইয়র্কভিত্তিক একজন শিল্পী। তাঁর পারিবারিক শেকড় সিরিয়ায়। তাঁর শিল্পকর্মে প্রায়ই মধ্যপ্রাচ্যের সংস্কৃতি ও অভিজ্ঞতা উঠে আসে। তাঁর কাজ বিবিসি নিউজ, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, ভাইস ও লন্ডনের টেট মডার্নে প্রকাশিত হয়েছে।

২০২৪ সালের ১২ মে মামদানি এক পোস্টে জানান, তাঁরা তিন মাস আগে বিয়ে করেছেন। তিনি লেখেন, ‘রামা শুধু আমার স্ত্রী নন, তিনি এক অসাধারণ শিল্পী, যিনি নিজের যোগ্যতায় পরিচিত হওয়ার দাবি রাখেন।’ সেই পোস্টে রামা মজার ছলে মন্তব্য করেন, ‘ওহ মাই গড, আমি সত্যিই আছি!’

পরিচয় ও পটভূমি

দুয়াজি ও মামদানি একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হন ডেটিং অ্যাপ হিঞ্জ-এ। মামদানি পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে, ডেটিং অ্যাপগুলোরও কিছু আশা এখনো বাকি আছে।’

নির্বাচনের শুরুতে রামা খুব কমই জনসমক্ষে আসতেন। বিরোধীরা তখন অভিযোগ তোলে যে মামদানি নাকি তাঁর স্ত্রীকে ‘আড়াল করে রাখছেন।’ যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক প্রার্থীরা সাধারণত পরিবারিক ভাবমূর্তি জোরদার করতে জীবনসঙ্গীকে প্রচারে সামনের সারিতে রাখেন।

মে মাসের সেই একই পোস্টে মামদানি এই সমালোচনার জবাব দেন। তিনি নিউইয়র্ক সিটি ক্লার্কের অফিসে তাঁদের বিয়ের কিছু ছবি প্রকাশ করেন এবং লেখেন, ‘রাজনীতি কতটা নির্মম হতে পারে, তা টুইটার দেখলেই বোঝা যায়। সাধারণত এসব উপেক্ষা করি—মৃত্যুর হুমকি বা দেশছাড়ার ডাক—সবই শুনেছি। কিন্তু প্রিয়জনদের নিয়ে আক্রমণ অন্যরকম। আমার মতাদর্শ নিয়ে সমালোচনা করা যেতে পারে, তবে পরিবার নিয়ে নয়।’

শিল্পী হিসেবে রামা দুয়াজি

রামা যদিও জনসমক্ষে খুব কম আসেন, তবুও সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি পর্দার আড়ালে স্বামীর প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি মেয়র প্রচারণার রঙ, ফন্ট ও প্রতীকের নকশা নির্ধারণে নেতৃত্ব দেন।

দুয়াজির জন্ম টেক্সাসের হিউস্টনে। নয় বছর বয়সে তিনি পরিবারের সঙ্গে দুবাইয়ে চলে যান এবং কিছু সময় কাতারে পড়াশোনা করেন। তাঁর বাবা-মা সিরিয়ার দামেস্কের মুসলিম পরিবার থেকে আসা।

বন্ধুদের মতে, রামা এখন প্রচারের আলোয় এসে আনন্দিত হলেও কিছুটা বিপর্যস্তও। তাঁর এক বন্ধু নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘রামা আমাদের যুগের আধুনিক প্রিন্সেস ডায়ানা।’

তিনি ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক এবং নিউইয়র্কের স্কুল অব ভিজ্যুয়াল আর্টস থেকে ইলাস্ট্রেশনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

রামা দুয়াজি। ছবি: রয়টার্স।
রামা দুয়াজি। ছবি: রয়টার্স।

তাঁর ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে লেখা আছে, ‘রামা দৈনন্দিন জীবন যাপনের প্রতিকৃতি আঁকার মাধ্যমে ভগিনীত্ব ও কমিউনিটি অভিজ্ঞতার সূক্ষ্মতা অন্বেষণ করেন।’ তাঁর অনেক কাজ সাদা-কালো রঙে আঁকা, যা আরব বিশ্বের দৃশ্যপটকে চিত্রিত করে।

২০২২ সালে তাঁর কিছু কাজ বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের প্রামাণ্যচিত্র হু কিলড মাই গ্র্যান্ড ফাদার-এ দেখা যায়। ১৯৭৪ সালে এক ইয়েমেনি রাজনীতিকের হত্যাকাণ্ড নিয়ে বানানো হয় সেই প্রামাণ্য চিত্র।

রামার কিছু শিল্পকর্ম মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, ইসরায়েলি যুদ্ধাপরাধ ও ফিলিস্তিনে ‘জাতিগত নিধন’ বিরোধী বার্তা বহন করে। এসব মতামত তাঁর স্বামীর রাজনৈতিক অবস্থানের সঙ্গেও সাদৃশ্যপূর্ণ।

তিনি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহমুদ খলিলের পক্ষেও সমর্থন জানান, যাকে ট্রাম্প প্রশাসন ফিলিস্তিনি অধিকার আন্দোলনের কারণে বহিষ্কার করতে চায়।

বিশ্ব ও রাজনীতি নিয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি

ব্রুকলিনের বাসিন্দা রামা করোনাকালীন সময়ে মূলত দুবাইয়ে ছিলেন, যেখানে তাঁর পরিবার বসবাস করে। ইয়ুং নামের এক ওয়েবসাইটে এপ্রিলের এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এখন নিউইয়র্কের পরিস্থিতি অন্ধকারাচ্ছন্ন। আমি আমার পরিবার ও বন্ধুদের জন্য উদ্বিগ্ন এবং মনে হয় সবকিছু আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যখন এত মানুষ ভয় পেয়ে চুপ করে যাচ্ছে, তখন আমি যা পারি তা হলো নিজের কণ্ঠে যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিস্তিন ও সিরিয়ায় যা ঘটছে সে সম্পর্কে কথা বলা।’

শিল্পীর সামাজিক দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নিনা সিমোন যেমন বলেছেন, শিল্পীর কর্তব্য হলো তার সময়কে প্রতিফলিত করা।’

তাঁর মতে, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা প্রত্যেকের দায়িত্ব। শিল্পের শক্তি সেই বার্তা ছড়াতে সক্ষম। সবাইকে রাজনৈতিক শিল্প করতে হবে না, কিন্তু শিল্প স্বভাবতই রাজনৈতিক—যেভাবে তা তৈরি, অর্থায়ন ও প্রচারিত হয়, সবই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এমনকি ভয়াবহ বাস্তবতা থেকে আশ্রয় হিসেবে শিল্প সৃষ্টিও আমার কাছে রাজনৈতিক কাজ।’

নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়রের স্ত্রী হিসেবে রামা দুয়াজি এখন শহরের নতুন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রতীকে পরিণত হচ্ছেন—যিনি একাধারে শিল্পী, অধিকার কর্মী ও পরিবর্তনের প্রতিচ্ছবি।

সূত্র: বিবিসি

Ad 300x250

সম্পর্কিত