leadT1ad

দেশের সবচেয়ে বড় শহর এখন ‘কমিউনিস্ট শহর’ হয়ে উঠবে: মামদানির জয়ে ট্রাম্প

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

মামদানি (বামে) ও ট্রাম্প (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত।

যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম নগরী নিউইয়র্ক সিটির রাজনীতিতে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন ঘটেছে। ৩৪ বছর বয়সী গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী জোহরান মামদানি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি সাবেক ডেমোক্র্যাট গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো এবং রিপাবলিকান কার্টিস স্লিওয়াকে পরাজিত করেছেন।

আফ্রিকার উগান্ডায় জন্ম নেওয়া ভারতীয় বংশোদ্ভুত মামদানি রাজ্যের অ্যাসেম্বলির সদস্য এবং নিউইয়র্কের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র। নির্বাচনী প্রচারে তিনি ‘কর্মজীবী শ্রেণির এজেন্ডা’ ঘোষণা করেন, যার মূল লক্ষ্য ছিল বাড়ি ভাড়া স্থিতিশীলতা, গণপরিবহন বিনামুল্যে করা এবং জলবায়ু ন্যায়বিচার। তার এসব নীতি কমিউনিজমঘেষা।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর ২০২৫) অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মামদানি ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে নিরঙ্কুশ জয় অর্জন করেন। মামদানির রাজনৈতিক উত্থান ছিল দ্রুত ও লক্ষণীয়। ২০২০ সালে কুইন্সের অ্যাস্টোরিয়া জেলা থেকে তিনি রাজ্য অ্যাসেম্বলিতে নির্বাচিত হন। এরপর তিনি গ্রিন নিউ ডিল ও পুলিশ তহবিল কমানোর পক্ষে সরব কণ্ঠে পরিণত হন। বার্নি স্যান্ডার্স ও আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজের মতো জাতীয় নেতাদের সমর্থনও পান।

তাঁর প্রচারণায় ১ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বেশি তহবিল সংগ্রহ হয়, যার বেশিরভাগই ক্ষুদ্র দাতাদের কাছ থেকে আসে। তিনি সর্বজনীন শিশুসেবা, ঘণ্টাপ্রতি ৩০ ডলারের ন্যূনতম মজুরি এবং অতিধনীদের ওপর কর আরোপের মাধ্যমে সামাজিক সেবা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন। এসব নীতি কোভিড-১৯ মহামারী পরবর্তী আবাসন সংকট ও বৈষম্যে ভুগতে থাকা শহরের মানুষের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল।

জয়ের রাতে ফ্লাশিং মেডোজ-কোরোনা পার্কে উৎসবমুখর সমাবেশে মামদানি বলেন, ‘নিউইয়র্ক ঘৃণার নয়, আশার পক্ষে ভোট দিয়েছে। মুনাফার উপরে মানুষের মর্যাদা স্থান পেয়েছে।’ অভিবাসী সম্প্রদায় ও তরুণ ভোটাররা এই জয়কে রাজনীতির পুরনো ধারার প্রত্যাখ্যান হিসেবে উদযাপন করে।

লন্ডনের মেয়র সাদিক খান একে ‘বিশ্ব প্রগতিশীলদের জন্য চমৎকার জয়’ বলে অভিহিত করেন। মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স বলেন, ‘এটি শ্রমজীবী মানুষের বিজয়।’

ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া

নির্বাচনের পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মামদানিকে ‘কমিউনিস্ট উন্মাদ’ বলে অভিহিত করেন। তিনি সতর্ক করেন, নিউইয়র্ক এখন ‘কমিউনিস্ট শহরে’ পরিণত হবে। বুধবার (৫ নভেম্বর ২০২৫) মায়ামির এক ব্যবসায়িক ফোরামে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘সার্বভৌমত্ব’ হারিয়েছে। কারণ, নিউইয়র্কের ভোটাররা ‘বামপন্থী’ জোহরান মামদানিকে তাঁদের পরবর্তী মেয়র হিসেবে বেছে নিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের বৃহত্তম শহর এখন এক কমিউনিস্টের হাতে। এটি ভয়ানক হবে, তবে আমরা সামলে নেব।’

তিনি শহরটির অভিবাসীবান্ধব নীতির সমালোচনা করে ফেডারেল তহবিল কমানোর হুমকি দেন এবং বাসিন্দাদের রিপাবলিকান রাজ্যগুলোতে চলে যাওয়ার আহ্বান জানান।

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘কমিউনিস্ট, মার্কসবাদী ও গ্লোবালিস্টরা তাদের সুযোগ পেয়েছিল, কিন্তু তারা শুধু বিপর্যয়ই ডেকে এনেছে। এখন দেখা যাক, নিউইয়র্কে এক কমিউনিস্ট কেমন করে।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা তাকে সাহায্য করব, অবশ্যই করব। আমরা চাই নিউইয়র্ক সফল হোক—তাকে হয়তো অল্প একটু সাহায্য করব।’

অন্যদিকে, মামদানি সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়ায় লেখেন, ‘ভয় দেখিয়ে কোনো সংকটের সমাধান হয় না—ঐক্য ও সাহসী পদক্ষেপই পথ দেখাবে।’

রিপাবলিকান নেতারা অভিযোগ করেন, মামদানির নীতি বিভিন্ন দেশের ব্যর্থ সমাজতান্ত্রিক পরীক্ষার অনুকরণ, যা অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। অন্যদিকে প্রগতিশীলরা এই জয়কে ট্রাম্পবাদের মোকাবেলায় জনগণমুখী রাজনীতির সাফল্য হিসেবে দেখছেন।

মামদানির এই জয় নিউইয়র্কের রাজনীতিতে বামধারার উত্থানের লক্ষণ। বিশ্বের আর্থিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত এই শহরে এখন গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রীরা গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত। আগামী ১ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে তাঁর প্রশাসন কাজ শুরু করবে। সামনে রয়েছে বিশাল চ্যালেঞ্জ—১০ বিলিয়ন ডলারের বাজেট ঘাটতি, ক্রমবর্ধমান গৃহহীনতা এবং পুলিশের সঙ্গে সংস্কার-সংক্রান্ত টানাপোড়েন।

জাতীয়ভাবে এই নির্বাচন ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের ইঙ্গিতবাহী। ট্রাম্পের কঠোর মন্তব্য তাঁর সমর্থকদের উৎসাহিত করলেও তা মধ্যপন্থীদের দূরে সরিয়ে দিতে পারে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত