leadT1ad

বিশেষ সাক্ষাৎকার

আমরা যেদিকে যাব, বাংলাদেশের রাজনীতি ও ভবিষ্যৎ সেই দিকে শেপ করবে: নাহিদ ইসলাম

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান সংগঠক এবং নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। আন্দোলনের উত্তাল সময় পেরিয়ে রাজনৈতিক দল গঠনের পর বর্তমান বাস্তবতা, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা স্ট্রিমের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা স্ট্রিমের সম্পাদক ইফতেখার মাহমুদ। আজ প্রকাশিত হলো প্রথম পর্ব।

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি আশরাফুল আলম

ইফতেখার মাহমুদ: জুলাই অভ্যুত্থানের ‘পোস্টার বয়’ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্য এবং এখন একটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব পালন। এটারও মোটামুটি অনেক সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। এই পথচলাকে আপনি ব্যক্তিগতভাবে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

নাহিদ ইসলাম: আপনাকে ধন্যবাদ। গত এক-দেড় বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে যেমন একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে, তেমনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে যুক্ত আমাদের প্রত্যেকের জীবনেও সেই পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। ব্যক্তিগতভাবে আমার জীবন তিনটি স্বতন্ত্র পর্বের মধ্য দিয়ে গেছে—প্রথমত, অভ্যুত্থানের সময় একজন আন্দোলনকারী হিসেবে ভূমিকা পালন; দ্বিতীয়ত, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে অংশগ্রহণ এবং রাষ্ট্রপরিচালনার অভিজ্ঞতা অর্জন; এবং তৃতীয়ত, একটি নতুন রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ।

এখনকার পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিবর্তিত ও জটিল। গণঅভ্যুত্থানের সময় আমরা সব শ্রেণিপেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও সমর্থন পেয়েছিলাম, যা সরকার গঠনেও প্রতিফলিত হয়েছিল। কিন্তু এখন একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার মাঠে নামতে হয়েছে। এই নতুন বাস্তবতায় আমি আগের চেয়ে অনেক বেশি দায়িত্ববোধ অনুভব করি। কারণ আমাদের এই পথচলার সঙ্গে অগণিত মানুষের আত্মত্যাগ, স্বপ্ন এবং একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা জড়িত। জনগণের সেই প্রত্যাশা পূরণের দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা এখন একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি।

ইফতেখার মাহমুদ: আন্দোলনের নেতা হিসেবে সেই সময় সাধারণ মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। মানুষ আপনার প্রতি আস্থাও রাখতো। রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় নামার পর সেই ধারাবাহিকতায় কোনো পরিবর্তন দেখছেন কি?

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি: আশরাফুল আলম
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি: আশরাফুল আলম

নাহিদ ইসলাম: পরিবর্তন হয়েছে। আগে তো ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোও আমাদের পেছনে এসেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে আন্দোলন করেছিল। ৫ আগস্টের পরে যার যার এজেন্ডা যেহেতু আলাদা হয়ে গেছে। ফলে ৫ আগস্টের বা সরকার গঠনের পর থেকে কিন্তু সবাই যার যার ক্যাম্পে ফিরে গেছে। সেই রাজনৈতিক সমর্থন নাই বা সহযোগিতা আমরা পাই না। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে সেই সহমর্মিতা বা ভালোবাসাটা আমরা এখনও পাই। মানুষের কাছে গেলে আমাদের প্রতি তাঁদের সেই স্নেহটা আমরা দেখি, প্রত্যাশাও দেখি। কারণ বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটবে, নতুন একটা দল বা রাজনীতির আবির্ভাব হবে; এটা বাংলাদেশে অনেকদিনের একটা প্রত্যাশা। এর আগে বিভিন্ন সময় দ্বি-দলীয় যে চক্র, তার বাইরে এসে অনেক চেষ্টা হয়েছে। মানুষ ৫ আগস্টে পরে সেই সম্ভাবনা দেখছে, এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের কাছে সেই সমর্থন আমরা পাই।

আবার রাজনৈতিক দলগুলো একটা রাজনৈতিক বিরোধিতা করে। কিন্তু আমাদের প্রতি সমর্থনও আছে। এটা রাজনীতির বাইরে। তৃণমূল পর্যায়ে গেলে দেখা যায় বিএনপি হোক, আর জামায়াত; তাদের নেতাকর্মীরা কিন্তু আমাদের খুবই পছন্দ করে। আমাদের প্রতি তাঁদের মধ্যে একটা কৃতজ্ঞতাবোধও দেখি।

ইফতেখার মাহমুদ: অতীতে দেখা গেছে, যেকোনো নতুন রাজনৈতিক দল প্রচুর গণআন্দোলন এবং গণসংযোগের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে। আমরা যদি ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো গড়ে ওঠা দেখি, এমনকি যারা নানা ধরনের অরাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েও গড়ে উঠেছে—তাদের মধ্যেও একটা গণসংযোগ শুরু থেকেই ছিল। এনসিপি একটা পদযাত্রা করেছে। পদযাত্রার ছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে দেশব্যাপী বিস্তৃত গণসংযোগ কি আপনাদের প্রত্যাশিতভাবে করতে পারছেন? অনেকে বলছেন যে একটা দল হিসেবে গড়ে উঠতে যে ধরনের সংযোগ দরকার, তা কম দেখা যাচ্ছে।

নাহিদ ইসলাম: আমরা তো আসলে বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের পার্টি প্রতিষ্ঠার পরেই দুইটা ঈদ আমরা পেয়েছি। এই দুই ঈদে আমাদের নেতাকর্মীরা ব্যাপক গণসংযোগ করেছেন। তারপরে জুলাই পদযাত্রার এক মাসে… আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা অভূতপূর্ব। এই ধরনের কর্মসূচি বাংলাদেশে এর আগে হয়েছে কিনা। এক মাসে ৬৪টা জেলা টার্গেট ছিল, ৫৯টা জেলায় আমরা পৌঁছাতে পেরেছি।

বর্তমানে আমাদের তৃণমূল নেতাকর্মীরা প্রতিটি উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়মিত উঠান বৈঠকের আয়োজন করছেন, কেন্দ্রীয় নেতারাও বিভিন্ন জায়াগায় যাচ্ছেন। আমাদের কার্যক্রম কিন্তু চলমান। তবে আগের তুলনায় মিডিয়া সাপোর্ট কিছুটা কম পাচ্ছি, কিছু নেতিবাচক বা প্রোপাগান্ডাও মিডিয়ায় এসেছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টিতে বিভিন্ন মতাদর্শ বা বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে লোকেরা এসেছেন। হ্যাঁ, অনেকে এসে তাদের মতাদর্শটা এখানে বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছেন। আবার অনেক সময় বিভিন্ন গ্রুপ চেষ্টা করেছে, আমরা তাদের অনুযায়ী অ্যাক্ট করি, তাদের এজেন্ডা অনুযায়ী কাজ করি। সেটা যখন আমরা করি নাই, তখন অনেকে বেরিয়ে গেছেন। অনেকের বিরাগভাজন হয়েছি। একটা কথা আমাদের সম্পর্কে বলা যায় আমরা সবাইকে শত্রু বানিয়েছি বা সবার সঙ্গেই আমাদের ঝামেলা।

ইফতেখার মাহমুদ: আপনাদের সম্পর্কে একটা প্রচারণা আছে, এনসিপির মধ্যে দক্ষিণপন্থী প্রবণতা বাড়ছে এবং বামপন্থী অংশটি কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। দলের শীর্ষ নেতা হিসেবে এই অভিযোগকে কীভাবে দেখছেন?

নাহিদ ইসলাম: আমি এরকম দেখি না। আমরা শুরু থেকে একটা মধ্যপন্থী, গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আমাদের দেশের রাজনীতিতে তর্কের যে বিষয়গুলো আছে বা আমরা যেভাবে ফ্রেমিং করি— ধর্মের প্রশ্নে, নারী প্রশ্নে বা মুক্তিযুদ্ধ; প্রত্যেকটা বিষয়ে কিন্তু এনসিপির আলাদা আলাদা অবস্থান আছে। আমরা বিভিন্ন সময় সেটা বলার চেষ্টা করেছি।

আমাদের জাতীয় নাগরিক পার্টিতে বিভিন্ন মতাদর্শ বা বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে লোকেরা এসেছেন। হ্যাঁ, অনেকে এসে তাদের মতাদর্শটা এখানে বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছেন। আবার অনেক সময় বিভিন্ন গ্রুপ চেষ্টা করেছে, আমরা তাদের অনুযায়ী অ্যাক্ট করি, তাদের এজেন্ডা অনুযায়ী কাজ করি। সেটা যখন আমরা করি নাই, তখন অনেকে বেরিয়ে গেছেন। অনেকের বিরাগভাজন হয়েছি। একটা কথা আমাদের সম্পর্কে বলা যায় আমরা সবাইকে শত্রু বানিয়েছি বা সবার সঙ্গেই আমাদের ঝামেলা। তো ঝামেলাটা এই কারণে যে একটা নতুন ফোর্স হিসেবে সব বাংলাদেশের রাজনীতির সবগুলো শক্তি এটা এই ফোর্সটাকে ব্যবহার করতে চেয়েছে।

ইফতেখার মাহমুদ: যখন আওয়ামী লীগ গড়ে ওঠে, তখনও কিন্তু কমিউনিস্টরা ভেতরে ঢুকেছিল, মুসলিম লীগের একটা অংশ ছিল। আবার ধরেন যখন জাসদ তৈরি হয়, তখনও একই প্রবণতা ছিল। ইভেন আমরা যখন বিএনপি গড়ে উঠতে দেখেছি, তখনও ন্যাপের একটা অংশ ছিল, মুসলিম লীগের একটা অংশ ঢুকেছিল, সাবেক বামপন্থীদের একটা অংশও ছিল। নতুন একটা দল যখন গঠিত হয় তখন তো এমন থাকেই। শেষ পর্যন্ত দলটার একটা ক্যারেক্টারটা কী দাঁড়াবে—এটা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মূলত ঠিক করে। আপনাদের দিক থেকে এখন পর্যন্ত দলটাকে কীভাবে দেখছেন? গত এক-দেড় বছরের যাত্রায় আপনারা আসলে কোন জায়গায় আছেন?

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি: আশরাফুল আলম
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি: আশরাফুল আলম

নাহিদ ইসলাম: আমরা যে আকাঙ্ক্ষা থেকে বা লক্ষ্য সামনে রেখে দলটা শুরু করেছিলাম। আমরা মনে করি, সেই পথেই যাচ্ছে। আমরা একটি গণতান্ত্রিক, মধ্যপন্থী ও বাংলাদেশপন্থী রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমাদের দরজা বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা মানুষদের জন্য খোলা। কিন্তু শর্ত একটাই—এই দলে এসে দলের আদর্শ ও চরিত্রকে ধারণ করেই কাজ করতে হবে।

আমাদের দলকে বিভিন্ন দিকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা যে হয়নি, তা না। আবার বাংলাদেশের সামগ্রিক রাজনীতিতেও একটি রূপান্তর ঘটছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা জামায়াতকে আগে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করা হতো, আমার মনে হয় সেই প্রেক্ষাপট এখন অনেকটাই বদলে গেছে। এই পরিবর্তন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা বুঝতে হয়তো আরও কিছুটা সময় লাগবে। তবে এনসিপি তার মৌলিক অবস্থানে অর্থাৎ মধ্যপন্থী গণতান্ত্রিক পথেই অবিচল থাকবে। এই আদর্শিক অবস্থানের কারণে সাময়িকভাবে আমাদের সমর্থনের কমতি হলেও আমরা বিশ্বাস করি যে, দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের কল্যাণ এই পথেই নিহিত এবং রাজনীতিকে এখানেই ফিরে আসতে হবে।

ইফতেখার মাহমুদ: বিএনপিও তো নিজেকে মধ্যপন্থী গণতান্ত্রিক দল বলে দাবি করে। তো আপনাদের মধ্যপন্থা আর বিএনপির মধ্যপন্থার মধ্যে পার্থক্য কী?

নাহিদ ইসলাম: বিএনপি নিজেদের মধ্যপন্থী দল হিসেবে দাবি করলেও তাদের রাজনৈতিক দর্শনের সঙ্গে আমাদের মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। প্রথমত, বিএনপি যে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছিল, সেই জাতীয়তাবাদ অনেকাংশেই ব্যর্থ হয়েছে। আমরা কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট জাতীয়তাবাদের রাজনীতিতে নিজেদের ব্যাখ্যা করি না। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশকে একটি বহু-জাতিক, বহু-ভাষিক ও বহু-সাংস্কৃতিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ব্যর্থতার কারণেই যে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, তা আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদকে রাষ্ট্রক্ষমতায় জেঁকে বসার সুযোগ করে দেয়।

দ্বিতীয়ত, বিএনপি প্রায়শই ইসলামী মূল্যবোধের কথা বলে, কিন্তু এর দৃশ্যমান কোনো সাংস্কৃতিক প্রতিফলন তাদের রাজনীতিতে দেখা যায় না। সত্যি বলতে, বিএনপির বর্তমানে কোনো সুনির্দিষ্ট আদর্শ আছে কি না, সে বিষয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। দলটির মূল চালিকাশক্তি ছিল মূলত আওয়ামী লীগ-বিরোধিতা। এখন যেহেতু আওয়ামী লীগ ক্ষমতার কেন্দ্রে নেই, বিএনপি ভবিষ্যতে কীভাবে নিজেদের রাজনীতি পরিচালনা করবে, তা সময়ই বলে দেবে।

এই সরকারকে এক অর্থে জাতীয় সরকার বলা যেতে পারে, যেখানে প্রায় সকল দলেরই অংশীদারত্ব রয়েছে। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে সরকারের ভুলত্রুটির সমালোচনা করা আমাদের দায়িত্ব। আবার যেখানে সমর্থন প্রয়োজন, আমরা সেটাও দিচ্ছি। ফলে বাংলাদেশে এখন সরকারি দল বা বিরোধী দল-এর গতানুগতিক ধারণাটি কার্যকর নেই। এটা সত্য যে, সরকার আমাদের প্রস্তাবনার ভিত্তিতেই গঠিত হয়েছে।

ইফতেখার মাহমুদ: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে আপনাদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। আপনি নিজেও উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন। অথচ সম্প্রতি এনসিপিকেই সরকারের সবচেয়ে কঠোর সমালোচক হিসেবে দেখা যাচ্ছে। এই অবস্থানকে অনেকে ‘দ্বিচারিতা’ হিসেবে দেখছেন। এ বিষয়ে আপনার ব্যাখ্যা কী?

নাহিদ ইসলাম: না, এটিকে আমি দ্বিচারিতা মনে করি না। আমাদের বিরুদ্ধে ‘কিংস পার্টি’ হওয়ার যে অভিযোগ তোলা হয়, তার প্রেক্ষাপটে এই বিষয়টি স্পষ্ট করা প্রয়োজন। ইতিহাসে সফল কিংস পার্টির উদাহরণ হিসেবে জাতীয় পার্টি রয়েছে, যারা সরাসরি রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য পেয়েছে। আমরা তেমন কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাইনি। এখন যেটুকু সুবিধা সব দল পাচ্ছে, আমরাও তার অংশীদার মাত্র।

এই সরকারকে এক অর্থে জাতীয় সরকার বলা যেতে পারে, যেখানে প্রায় সকল দলেরই অংশীদারত্ব রয়েছে। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে সরকারের ভুলত্রুটির সমালোচনা করা আমাদের দায়িত্ব। আবার যেখানে সমর্থন প্রয়োজন, আমরা সেটাও দিচ্ছি। ফলে বাংলাদেশে এখন সরকারি দল বা বিরোধী দল-এর গতানুগতিক ধারণাটি কার্যকর নেই। এটা সত্য যে, সরকার আমাদের প্রস্তাবনার ভিত্তিতেই গঠিত হয়েছে। কিন্তু যখন আমরা দেখছি সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভুল করছে বা জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে, তখন সেই ভুলের দায় তো আমাদের উপরেও আসছে। সাধারণ মানুষ সরকারের ব্যর্থতার জন্য আমাদের দায়ী করছে। আমরা সেই দায় কেন নেব? আমরা ড. ইউনূস এবং উপদেষ্টা পরিষদকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। এখন সঠিক পথে রাষ্ট্র পরিচালনা করা তাদের কর্তব্য। তারা যদি সঠিক পথে চলত, আমরা অবশ্যই সহযোগিতা করতাম। সেই অবস্থান থেকেই আমরা প্রয়োজনে সমালোচনা করি এবং একই সাথে সহযোগিতার মানসিকতাও রাখি।

ইফতেখার মাহমুদ: জুলাই সনদে সবচেয়ে বেশি দাবি যুক্ত হয়েছে আপনাদের। তারপরও আপনারা স্বাক্ষর করছেন না। কেন? জুলাই সনদে সর্বশেষ যে সংযোজনগুলো এল, বলা হচ্ছে সেগুলো আপনাদেরই দাবির প্রেক্ষিতে আসা। সামনে ইলেকশন, আবার গণভোটের বিষয়ও আছে। সব মিলিয়ে আপনাদের অবস্থানটাকে আপনারা কিভাবে মূল্যায়ন করছেন?

নাহিদ ইসলাম: জুলাই সনদে আমাদের স্বাক্ষর না করাটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ছিল বলে আমি মনে করি। এটার ফলে কিন্তু এখনও জুলাই সনদটা প্রাসঙ্গিক এবং সেটা নিয়ে আলোচনাও চলছে। কারণ আমরা খুবই স্পষ্ট করেছিলাম যে এটা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, তার প্রক্রিয়া না জানা ছাড়া আমরা এটাতে স্বাক্ষর করব না। ঐকমত্য কমিশন তো সুপারিশমালা দিয়েছে এবং আমরা শুনছি, সরকার সেই সুপারিশ অনুযায়ী কাজ করবে না। তারা তাদের মতো আবার কী কাজ করছে। ফলে আমরা এখন আসলে স্পষ্ট নই। এই কারণে আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করিনি। এটা হলে ঠিকমতো হতে হবে, না হলে এটা হবে না। অথবা এটার জন্য আমরা আন্দোলনে নামব। কিন্তু এইটা কোনো ধরনের গোজামিল দিয়ে যাবে, এইটা আমরা মানব না।

ইফতেখার মাহমুদ: কিন্তু এই অনাস্থা বা মতপার্থক্যের পরিস্থিতি তৈরি হলো কেন? সনদ তৈরির প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফোরামে তো আপনাদের আন্দোলনের সহযোদ্ধারাই রয়েছেন। তাহলে ঠিক কোন জায়গায় এসে আপনাদের পথ ভিন্ন হয়ে গেল?

নাহিদ ইসলাম: এটা তো আসলে ৫ আগস্ট পর্যন্ত একভাবে আগানো। ৫ আগস্টের পরে কিন্তু সবাই যার যার দলীয় এজেন্ডায় চলে গেছে এবং আমরা সাত মাস অপেক্ষা করেছিলাম। আমরা প্রথমেই কোনো রাজনৈতিক দল করি নাই। আমরা চেয়েছিলাম যে বিদ্যমান দলগুলোই আমাদের দাবিগুলো পূরণ করবে। কিন্তু আমরা যখন দেখলাম নতুন সংবিধান থেকে শুরু করে অনেক দাবি বা এই আকাঙ্ক্ষাগুলোর প্রতি তারা কমিটেড না এবং দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়াটাই প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, সেই চাপ প্রয়োগ করছিল, তখন আমরা রাজনৈতিক দল করতে বাধ্য হই। ফলে আমরা চেয়েছিলাম বা ভেবেছিলাম যে, বাংলাদেশের এবং গণতন্ত্রের কথা ভেবে আমরা ঐকমত্য কমিশনে আমাদের আলোচনাগুলো চালাব। কিন্তু সেখানে আমরা দেখেছি, যুক্তির থেকেও শক্তির প্রভাবটা বেশি ছিল। মানে বিএনপি বড় একটা প্রভাব বিস্তার করেছে এবং তাদের ৩১ দফাতে যেই প্রস্তাবনাগুলো ছিল, সেই জায়গা থেকেও তারা সরে এসেছে ঐক্যমত্য কমিশনে। এইটা তো আমাদের আসলে কাম্য ছিল না। সেই জায়গা থেকে আমরা এটাতে স্ট্রিক্ট থেকেছিলাম যে, জুলাই সনদ অবশ্যই বাস্তবায়িত হতে হবে।

জামায়াতে ইসলামী যে সংস্কারের প্রতি বা গণতন্ত্রের প্রতি খুবই কমিটেড, এটাও আমাদের কাছে মনে হয়নি। সংস্কারকে তারা একটা রাজনৈতিক টুল হিসেবে নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও ঐতিহাসিক ও আদর্শিক নানান অভিযোগ আছে। বাংলাদেশে যে নতুন করে আরেকটা ফ্যাসিবাদ আসবে না তা বলা যায় না। ধর্মের নামে ফ্যাসিবাদ কায়েম হতে যাচ্ছে বা একটা সম্ভাবনার কথা কিন্তু অনেকেই বলছে।

ইফতেখার মাহমুদ: সামনে নির্বাচন। আপনাদের সম্পর্কে রাজনীতির মাঠে কথা আছে যে, আপনারা কোন একটা জোটের সঙ্গে যাচ্ছেন এবং সেটা বিএনপির নেতৃত্বে যে জোট। ৫০ টা, ২৫ টা, ১৫ টা এরকম নানা কথা শোনা যাচ্ছে। দুইটা মন্ত্রিত্ব, দুইটা প্রতিমন্ত্রীত্ব, এরকম আলাপও আছে। এসব বিষয় কতটুকু সত্য?

নাহিদ ইসলাম: এখনো আমাদের কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। আমরা মাত্র আমাদের প্রতীকটা পেলাম। আমরা নির্বাচনে এককভাবেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই। কিন্তু সামগ্রিক পরিস্থিতিতে যদি কারও সঙ্গে কোনো সমঝোতা করতে হয়, সেটার জন্য আমরা বিবেচনা করব। সেই দরজাটা আমরা খোলা রেখেছি। কিন্তু কারও সঙ্গে সরাসরি কোনো ধরনের জোটের পরিকল্পনা এই মুহূর্তে নেই। ফলে বিএনপি বা জামায়াত—আমরা কোনোভাবেই তাদের সঙ্গে ঐক্যের জায়গাটা আসলে পাচ্ছি না। বিএনপি পুরো সময়টা ধরে সংস্কারের বিরোধিতা করল এবং শেষ পর্যন্ত তাদের ভূমিকা কী হয়, আমরা জানি না। সারা দেশে ৫ আগস্টের পরে যে দুর্নীতি এবং দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি নতুন করে শুরু হয়েছে, সেটার সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়িত। ফলে সাধারণ মানুষ কিন্তু সেই স্বস্তিটা পায়নি। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বা ফ্যাসিবাদ তৃণমূল থেকে বিতাড়িত হইল। কিন্তু সেখানে নতুন একটা শক্তির আবির্ভাব ঘটেছে। যে মাফিয়াতান্ত্রিক একটা ব্যবস্থা, সেটা কিন্তু রয়ে গেছে। এই বিএনপি বা আরও কিছু দল কিন্তু সেটাকে সমর্থন দিচ্ছে।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী যে সংস্কারের প্রতি বা গণতন্ত্রের প্রতি খুবই কমিটেড, এটাও আমাদের কাছে মনে হয়নি। সংস্কারকে তারা একটা রাজনৈতিক টুল হিসেবে নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও ঐতিহাসিক ও আদর্শিক নানান অভিযোগ আছে। বাংলাদেশে যে নতুন করে আরেকটা ফ্যাসিবাদ আসবে না তা বলা যায় না। ধর্মের নামে ফ্যাসিবাদ কায়েম হতে যাচ্ছে বা একটা সম্ভাবনার কথা কিন্তু অনেকেই বলছে। আমরাও এটা দেখছি। সেই জায়গায় জামায়াত জাতিকে কোনো ধরনের নিশ্চয়তা দিতে পারেনি, আস্থার জায়গাটা দিতে পারেনি।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি: আশরাফুল আলম
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি: আশরাফুল আলম

বাংলাদেশে আমরা এখন এসব বহুমুখী সংকটের মধ্যে আছি। একদিকে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের যে বৈদেশিক অ্যালাই, তারা এক ধরনের ষড়যন্ত্র করছে, অন্যদিকে দেশের দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি। আরেকদিকে হচ্ছে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের উত্থানের আশঙ্কা। আমাদের হয়তো সেই সাংগঠনিক বিস্তৃতি ঘটেনি গত এক বছরে। কিন্তু আমাদের ওপরে দায়িত্বটা অনেক বেশি। আমরা যেদিকে যাব, বাংলাদেশের রাজনীতি এবং ভবিষ্যৎ আসলে সেই দিকে শেপ করবে। ফলে আমাদেরকে খুবই চিন্তাভাবনা করে এই সিদ্ধান্তটা নিতে হবে।

ইফতেখার মাহমুদ: আসন্ন নির্বাচনে আপনি নিজে কোন আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনা করছেন এবং সেই আসনটি বেছে নেওয়ার পেছনের কারণ কী?

নাহিদ ইসলাম: ঢাকা-১১ এবং ঢাকা-৯, দুইটাই আমার লোকালিটি বলা যায়। বাড্ডা থানার অন্তর্গত বেড়াইদের ফকিরখালী গ্রামে আমার জন্ম। সেখানেই আমার বাবা-দাদা আমার কয়েক পুরুষের বসতি। আবার আমি বড় হয়েছি খিলগাঁও-গোড়ান এলাকায়, যেটা ঢাকা-৯। ফলে আমি হয়তো ঢাকা-১১ তে ইলেকশন করব। এটা বাড্ডা, ভাটারা, রামপুরা। ছোটবেলা থেকেই ঢাকার এই এলাকাগুলোতেই আমার যাতায়াত, বড় হওয়া, আমার স্কুল, কলেজ। ফলে হয়তো সেখানকার জনগণের সঙ্গে আমি অনেক বেশি কানেক্টেড ফিল করি।

ইফতেখার মাহমুদ: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আপনাদের সহযোদ্ধারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন। গুঞ্জন রয়েছে, কয়েকজন উপদেষ্টা দায়িত্ব শেষে আপনাদের দলে যোগ দিতে পারেন। এরকম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দলে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে এনসিপির নীতিগত অবস্থান কী?

নাহিদ ইসলাম: আমরা তো সবাইকে ওয়েলকাম করব। এটা উপদেষ্টা না, বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক যারা আমাদের আদর্শ-লক্ষ্যের সঙ্গে অ্যালাইড ফিল করে, উপদেষ্টা হিসেবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের যেসব ছাত্র নেতৃত্ব আছে, তারা যদি ইলেকশন করতে চায়, আমরা অবশ্যই চাইব, তারা আমাদের সঙ্গেই থাকবে। এছাড়া অন্য যে কেউ যদি আমাদের সঙ্গে আসতে চায়, আমরা তো অবশ্যই তাদেরকে ওয়েলকাম জানাব।

ইফতেখার মাহমুদ: এই বিষয়ে নির্দিষ্ট কারো সঙ্গে কি আপনাদের আলোচনা এগিয়েছে?

নাহিদ ইসলাম: না, সেরকম কারও সঙ্গে আমাদের কথা হয়নি।

আমরা এই নির্বাচনে ফাইট করতে চাই। আমরা জয় বা পরাজয়ের কথা ভাবছি না। গণঅভ্যুত্থানের সময় এত মানুষের অংশগ্রহণ ছিল, এত মানুষের সাপোর্ট ছিল, এখন দলের সমর্থন সেই তুলনায় তো কম। এটা একটা যেমন ব্যাখ্যা আছে, আবার আরেকভাবে বললে যে, এক বছরে বা দেড় বছরে একটা দলের এতখানি বিস্তৃতি, সেটা তো বাংলাদেশের ইতিহাসে খুবই বিরল। ফলে আপনি নানাভাবে এটা বলতে পারেন।

ইফতেখার মাহমুদ: রাজনীতির মাঠে একটি আলোচনা আছে যে, অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এখন বিভিন্ন দলের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, অনেকটা দলবদলের মৌসুমের মতো। ক্রিকেট বা ফুটবল লীগে যেরকম অনেক বড় বড় খেলোয়াড়রা কোন দলে যাবে, এ ব্যাপারে একটা যাচাই-বাছাই করে, ওরকম হয়ে যাচ্ছে কিনা?

নাহিদ ইসলাম: না, আমার মনে হয় না উপদেষ্টা পরিষদের খুব বেশি কেউ রাজনীতিতে বা ইলেকশনে এটলিস্ট অংশগ্রহণ করবে। তাদের একটা নিরপেক্ষতার জায়গাও তো আসলে রাখা উচিত।

ইফতেখার মাহমুদ: সবশেষে নির্বাচন নিয়ে জানতে চাই। আপনারা তো ইলেকশন করবেন। কয়টা আসনে কী পরিকল্পনা? মানে আপনারা ইলেকশনের পরে নিজেদেরকে কীভাবে দেখতে চান? মানে জয়ের ব্যাপারে বা পরাজয়ের ব্যাপারে?

নাহিদ ইসলাম: আমরা এই নির্বাচনে ফাইট করতে চাই। আমরা জয় বা পরাজয়ের কথা ভাবছি না। গণঅভ্যুত্থানের সময় এত মানুষের অংশগ্রহণ ছিল, এত মানুষের সাপোর্ট ছিল, এখন দলের সমর্থন সেই তুলনায় তো কম। এটা একটা যেমন ব্যাখ্যা আছে, আবার আরেকভাবে বললে যে, এক বছরে বা দেড় বছরে একটা দলের এতখানি বিস্তৃতি, সেটা তো বাংলাদেশের ইতিহাসে খুবই বিরল। ফলে আপনি নানাভাবে এটা বলতে পারেন। কিন্তু আমরা মনে করি, আমাদের জার্নিটা দীর্ঘমেয়াদী হবে এবং এই নির্বাচন আমাদের। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা মূলত জনগণের কাছে যেতে চাই। আমাদের তো গত এক বছরে নানান আন্দোলন, নানান প্রতিবিপ্লবী পরিস্থিতি, সরকারকে বাঁচানো—এগুলোতে অনেক বেশি সময় দিতে হয়েছে। আমরা কিন্তু জনগণের কাছে আমাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে যেতে পারিনি। নির্বাচন আমাদের জন্য একটা বড় সুযোগ। আমাদের সামনের লক্ষ্য হচ্ছে, মানুষের কাছে পৌঁছানো, একেবারেই সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো। ফলে নির্বাচনকে আমরা সেই সুযোগ হিসেবে দেখছি। এ কারণে আমরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দিতে চাচ্ছি যাতে আমরা মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারি। জয়-পরাজয় সেটা তো আসলে অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করবে। এই নির্বাচন শেষ পর্যন্ত একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি না, ভোটকেন্দ্র দখল হবে কি না, এই সবকিছুই আমরা কিন্তু এখন বলতে পারতেছি না।

ইফতেখার মাহমুদ: আপনি সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে কিছুটা সংশয় প্রকাশ করলেন। এই আশঙ্কার মূল উৎস কী এবং ঠিক কাদের দিক থেকে আপনারা বাধার সম্মুখীন হতে পারেন বলে মনে করছেন?

নাহিদ ইসলাম: হ্যাঁ, সেই আশঙ্কা তো এখনো আছে। দেশে যে দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি শুরু হয়েছে এবং আওয়ামী লীগের যে টাকা, আওয়ামী লীগের যে অর্থনীতি, সেটা তো ভেঙে দেওয়া সম্ভব হয় নাই। সেটা তো অবশ্যই ইলেকশনে ব্যবহৃত হবে। বিভিন্ন দল ব্যবহার করবে। আওয়ামী লীগের যে মাফিয়া গ্রুপ, তারাও যে সবাই গ্রেপ্তার হয়েছে, বিচারে এসেছে, এরকমও না। নতুন নতুন মাফিয়া গ্রুপের আবার আবির্ভাব ঘটেছে বা তারা ক্ষমতায়িত হয়েছে। ফলে সেই আশঙ্কা আছে। তবে এই নির্বাচনে আমরা খুব বেশি ভালো করলে আমাদের বিশাল অর্জন বা খুব খারাপ করলে আমরা হারিয়ে যাব, আমরা এটা মনে করি না। আমরা মনে করি এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমাদের একটা গণভিত্তি খুব শক্তভাবে তৈরি হবে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত