leadT1ad

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

১৪ মে, ২০২৫ তারিখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের রিয়াদে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সাথে দেখা করেন। ছবি: রয়টার্স।

যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে একটি বিমানঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। এই ঘাঁটির উদ্দেশ্য হলো সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হতে যাওয়া নিরাপত্তা চুক্তি বাস্তবায়নে সহায়তা করা। বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত ছয়টি সূত্র রয়টার্স-কে এ তথ্য জানিয়েছে।

এই পরিকল্পনা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। এটি সিরিয়ার রাজনৈতিক ও কৌশলগত অবস্থানে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। গত বছর ইরানঘনিষ্ঠ সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর এটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন সমন্বয়ের প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিমানঘাঁটিটি দক্ষিণ সিরিয়ার প্রবেশমুখে অবস্থিত। এই অঞ্চল ভবিষ্যতে সিরিয়া-ইসরায়েল শান্তি চুক্তির আওতায় নিরস্ত্রীকৃত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হতে পারে। এ চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের মধ্যস্থতায় হচ্ছে।

রয়টার্স-এর সঙ্গে কথা বলা ছয়টি সূত্রের মধ্যে দুইজন পশ্চিমা কর্মকর্তা ও একজন সিরীয় প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র বিমানঘাঁটিটি ব্যবহার করে সম্ভাব্য ইসরায়েল-সিরিয়া চুক্তি পর্যবেক্ষণ করার পরিকল্পনা করছে।

তবে সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা-কে জানায়, রয়টার্স-এর খবরটি ‘ভুল।’ কিন্তু তিনি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি।

সানা সূত্রকে উদ্ধৃত করে আরও জানায়, ‘অস্থায়ী সংস্থাগুলোর সঙ্গে যে চুক্তি ও সমঝোতা হয়েছে, তা এখন দামেস্কে স্থানান্তরের কাজ চলছে—রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক সমন্বয়ের কাঠামোর মধ্য দিয়ে।’

হোয়াইট হাউসে সিরীয় প্রেসিডেন্টের সফর

আগামী সোমবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে সিরীয় প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে বৈঠক করবেন। এটি হবে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো সিরীয় রাষ্ট্রপ্রধানের প্রথম সরকারি সফর।

এই সফর নির্বিঘ্ন করতে গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর ২০২৫) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি আহমেদ আল-শারার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে। সিরিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনাস খাত্তাবের উপর থেকেও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

১৩ বছরের গৃহযুদ্ধ শেষে গত ডিসেম্বর মাসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হন। ইসলামপন্থী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী জোট এক আকস্মিক অভিযানে তাকে অপসারণ করে।

এইচটিএস পূর্বে ‘নুসরা ফ্রন্ট’ নামে পরিচিত ছিল এবং ২০১৬ সাল পর্যন্ত এটি সিরিয়ায় আল-কায়েদার আনুষ্ঠানিক শাখা হিসেবে কাজ করেছিল। ২০১৪ সালের মে মাস থেকে এই গোষ্ঠী জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের আল-কায়েদা ও ইসলামিক স্টেট (আইএস) নিষেধাজ্ঞা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এইচটিএস-এর বেশ কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে এখনো জাতিসংঘের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, সম্পদ জব্দ এবং অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে।

রয়টার্স-এর হাতে পাওয়া জুলাই মাসের এক জাতিসংঘ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর আল-কায়েদা ও এইচটিএস-এর মধ্যে কোনো ‘সক্রিয় সম্পর্ক’ দেখা যায়নি।

পেন্টাগনের প্রস্তুতি ও কার্যক্রম

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর (পেন্টাগন) এবং সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টিতে কোনো মন্তব্য করেনি। সিরীয় প্রেসিডেন্সি ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও প্রশ্নের উত্তর দেয়নি।

যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সবসময় সিরিয়ায় আমাদের অবস্থান মূল্যায়ন করি, যাতে কার্যকরভাবে আইএসবিরোধী লড়াই চালানো যায়। তবে আমরা সৈন্যদের অবস্থান বা সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে মন্তব্য করি না।’

পশ্চিমা এক সামরিক কর্মকর্তা জানান, গত দুই মাসে পেন্টাগন পরিকল্পনা ত্বরান্বিত করেছে এবং কয়েকটি নজরদারি অভিযান চালিয়েছে। এসব অভিযানে দেখা গেছে, ঘাঁটির দীর্ঘ রানওয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবহারের উপযোগী।

দুইজন সিরীয় সামরিক সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও সিরিয়া প্রযুক্তিগত আলোচনায় ঘাঁটির ব্যবহার নিয়ে কাজ করছে। আলোচনার মূল বিষয় হলো—লজিস্টিকস, নজরদারি, জ্বালানি সরবরাহ ও মানবিক কার্যক্রমে ঘাঁটির ভূমিকা। তবে ঘাঁটির পূর্ণ সার্বভৌমত্ব থাকবে সিরিয়ার হাতে।

একজন সিরীয় প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্র সামরিক পরিবহন বিমান সি-১৩০ ব্যবহার করে রানওয়ের সক্ষমতা পরীক্ষা করেছে। ঘাঁটির নিরাপত্তারক্ষীরাও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিমান সেখানে ‘পরীক্ষামূলকভাবে’ অবতরণ করছে। তবে মার্কিন সৈন্যরা কবে থেকে সেখানে যাবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

যৌথ মার্কিন-সিরীয় উপস্থিতি ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট

নতুন মার্কিন উদ্যোগটি মধ্যপ্রাচ্যে তাদের অন্য দুটি নজরদারি মিশনের মতো। একটি লেবাননে, যেখানে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ করা হয়। আরেকটি ইসরায়েলে, যেখানে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ চলছে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় অবস্থান করছে। তারা দীর্ঘ এক দশক ধরে কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনীকে সহায়তা করছে আইএসবিরোধী লড়াইয়ে। এপ্রিলে পেন্টাগন জানায়, সেখানে সৈন্যসংখ্যা কমিয়ে ১ হাজারে আনা হবে।

প্রেসিডেন্ট শারা বলেছেন, সিরিয়ায় যে কোনো মার্কিন সামরিক উপস্থিতি অবশ্যই নতুন সিরীয় রাষ্ট্রের সম্মতিতে হতে হবে। সিরিয়া শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বৈশ্বিক আইএসবিরোধী জোটে যোগ দিতে যাচ্ছে বলে দুই দেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এক সূত্র জানায়, এই ঘাঁটি স্থাপনের আলোচনা হয়েছিল ১২ সেপ্টেম্বর দামেস্ক সফরের সময়, যখন মার্কিন সেন্টকম প্রধান অ্যাডমিরাল ব্র্যাড কুপার ও মার্কিন দূত থমাস ব্যারাক সিরীয় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেন।

সেন্টকমের বিবৃতিতে বলা হয়, তারা প্রেসিডেন্ট শারাকে আএসবিরোধী লড়াইয়ে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান। এই প্রচেষ্টা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য ও স্থিতিশীল সিরিয়া’–র স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহায়ক হবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্র কয়েক মাস ধরে সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে নিরাপত্তা চুক্তি সম্পন্ন করার চেষ্টা করছে। সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এ চুক্তি ঘোষণা করার পরিকল্পনা ছিল, তবে শেষ মুহূর্তে আলোচনা স্থগিত হয়।

সিরীয় এক সূত্র রয়টার্স-কে জানায়, ওয়াশিংটন এখন বছর শেষের আগেই চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য দামেস্কের ওপর চাপ দিচ্ছে—সম্ভবত প্রেসিডেন্ট শারার যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগেই।

সূত্র: রয়টার্স

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত