leadT1ad

সেই সময়ের পত্রিকার পাতায় ৭ নভেম্বর

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গতিপথ নির্ধারণী দিন। এ দিন সিপাহী-জনতার বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন। সেই সময়ে ৮ নভেম্বরের সংবাদপত্রের সব খবর ছিল তাঁকে ঘিরেই।

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক

স্ট্রিম গ্রাফিক

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গতিপথ নির্ধারণী দিন। এ দিন সিপাহী-জনতার বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন। সেই সময়ে ৮ নভেম্বরের সংবাদপত্রের সব খবর ছিল তাঁকে ঘিরেই।

৭ নভেম্বর নিহত হন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফ। এই খবর পত্র-পত্রিকায় প্রথম পাতায় দেখা যায়নি। আর ঘটনাপ্রবাহের অন্যতম নায়ক কর্নেল আবু তাহের সংবাদে উপেক্ষিত ছিলেন। পত্রিকার প্রথম পাতার খবরে তাঁর নাম দেখা যায়নি। রাস্তায় জনতার ভিড়, সৈনিকদের আনন্দ, জনগণ ও সেনাবাহিনীর ঐক্য, এসব শব্দ স্থান পেয়েছিল সংবাদপত্রের প্রথম পাতায়।

দৈনিক বাংলা, ১৯৭৫ সালের ৮ নভেম্বর। ছবি: সংগ্রামের নোটবুক
দৈনিক বাংলা, ১৯৭৫ সালের ৮ নভেম্বর। ছবি: সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক ইত্তেফাক

৭ নভেম্বরের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে ৮ নভেম্বর "দৈনিক ইত্তেফাক' ছাপে ‘নয়া প্রধান বিচারপতির শপথ গ্রহণ’, ‘রব-জলিলসহ পাঁচ জনকে মুক্তির নির্দেশ’, ‘সংশয় ও দুস্বপ্ন অতিক্রম করিয়া’ এই শিরোনামের খবরগুলো।

‘সংশয় ও দুস্বপ্ন অতিক্রম করিয়া’ এই শিরোনামে ইত্তেফাকের খবরে বলা হয়, ‘…সকল সংশয় দ্বিধা আর আচ্ছন্নতার মেঘ অতিক্রম করিয়া গত শুক্রবার বাঙালি জাতির জীবনে এক ঐতিহাসিক ও অভূতপূর্ব বিজয় সূচিত হইয়াছে। এই বিজয়ে স্বর্ণোজ্জল দলিলে জনতার প্রাণের অর্ঘ্য দিয়ে লেখা হইলো বাংলার বীর সেনানীর নাম। আর দলিলের শিরোনামে শোভা পাইলো একটি নাম জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম পিএসসি-একটি প্রিয় ও বিচক্ষণ ব্যক্তিত্ব।....কিন্তু বাংলার দেশপ্রেমিক সিপাহীরা গত শুক্রবার প্রভাতে সকল চক্রান্তের অবসান ঘটাইয়া তাহাদের প্রিয় মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেন এবং তাহাকে স্বীয় পদে বহাল করেন।’

১৯৭৫ সালের ৮ নভেম্বরের 'দ্য বাংলাদেশ অবজারভার' পত্রিকার পাতায়। ছবি: সংগ্রামের নোটবুক
১৯৭৫ সালের ৮ নভেম্বরের 'দ্য বাংলাদেশ অবজারভার' পত্রিকার পাতায়। ছবি: সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক বাংলা

১৯৭৫ সালের ৮ নভেম্বর ‘দৈনিক বাংলা’ পত্রিকায় প্রধান শিরোনাম হয়েছিল ‘জিয়ার নেতৃত্বে সিপাহী জনতার বিপ্লব’। সেখানে লেখা হয়, ‘মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে সিপাহী ও জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব সফল হয়েছে।’

প্রথম পাতায় ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ শিরোনামে ছাপা সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, ‘…সশস্ত্রবাহিনী এবং জনগণের ইচ্ছায় সেনাবাহিনী প্রধানের দায়িত্বের সঙ্গে সাময়িকভাবে প্রধান সামরিক শাসনকর্তার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন জেনারেল জিয়া।’

দৈনিক বাংলার প্রথম পাতায় ছাপা সংবাদে দেখা যায় ‘আনন্দে উদ্বেল মানুষের ঢল নেমেছিল’ ঢাকার রাস্তায়। ‘আমি জিয়া বলছি’ শিরোনামে তৎকালীন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের বেতার ভাষণও ছাপা হয়েছিল।

১৯৭৫ সালের ৮ নভেম্বর 'দৈনিক বাংলা' পত্রিকা। ছবি: সংগ্রামের নোটবুক
১৯৭৫ সালের ৮ নভেম্বর 'দৈনিক বাংলা' পত্রিকা। ছবি: সংগ্রামের নোটবুক

এছাড়া প্রথম পাতার অন্যান্য সংবাদ শিরোনামে দেখা যায় ‘রাষ্ট্রপতি নিজেই প্রধান সামরিক কর্মকর্তা’, ‘উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হবে’, ‘সম্ভব হলে ৭৭-এর ফেব্রুয়ারির আগে নির্বাচন’, ‘এক্ষণে রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্দলীয় ব্যক্তির প্রয়োজন: মোশতাক’, ‘রাজনৈতিক কারণে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়া হবে’।

দৈনিক সংবাদ

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে ৮ নভেম্বর ‘সংবাদ’ পত্রিকায় প্রধান শিরোনাম হয়েছিল ‘সামরিক আইন প্রশাসন কাঠামো গঠিত’। সেখানে লেখা ছিল রাষ্ট্রপতি প্রধান প্রশাসক, বাহিনী প্রধান উপ প্রশাসক, ৪জন আঞ্চলিক প্রশাসক।

প্রথম পাতার অন্যান্য সংবাদ শিরোনামে দেখা যায় ‘দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতি জিয়ার অভিনন্দন’, ‘কাল সারাদেশে যোগাযোগব্যবস্থা স্বাভাবিক ছিল’, ‘রাজধানীর পথে পথে লাখো জনতার আনন্দ মিছিল’, ‘তাহের ঠাকুর ও শাহ্ মোয়াজ্জেম মুক্তি পেয়েছেন’।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত ৮ নভেম্বরের ‘দৈনিক যুগান্তর’ পত্রিকা। ছবি: সংগ্রামের নোটবুক
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত ৮ নভেম্বরের ‘দৈনিক যুগান্তর’ পত্রিকা। ছবি: সংগ্রামের নোটবুক

এছাড়া জাতির উদ্দেশ্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদের বেতার ও টেলিভিশন ভাষণ প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘দেশের প্রতি ইঞ্চি ভূমিকে হায়েনার আক্রমণ থেকে প্রতিরক্ষা করতে হবে।’

দ্য বাংলাদেশ অবজারভার

৮ নভেম্বরে ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য বাংলাদেশ অবজারভার’ প্রথম শিরোনাম করেছিল ‘প্রেসিডেন্ট সায়েম বিকামস সিএমএলএ’।

এছাড়া অবজারভারের প্রথম পাতার সংবাদে এসেছিল মোশতাক জনগণের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন, জিয়া আহ্বান জানিয়েছেন স্বাভাবিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে কারফিউ জারি করা হয়েছে, শহরে বিজয় উদ্যাপন চলছে এবং সৈনিকদের অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে, মোশতাক বঙ্গভবন ত্যাগ করেছেন, উল্লাসে অংশ নেওয়া ২৭ জন আহত হয়েছেন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে।

১৯৭৫ সালের ৮ নভেম্বরের 'দ্য বাংলাদেশ অবজারভার' পত্রিকার প্রথম পাতা। ছবি: সংগ্রামের নোটবুক
১৯৭৫ সালের ৮ নভেম্বরের 'দ্য বাংলাদেশ অবজারভার' পত্রিকার প্রথম পাতা। ছবি: সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক যুগান্তর (ভারত)

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত ৮ নভেম্বরের ‘দৈনিক যুগান্তর’ পত্রিকার প্রথম পাতাও ফলাও করে বাংলাদেশ নিয়ে খবর ছাপা হয়েছিল।

যুগান্তর শিরোনাম করেছিল ‘বাংলাদেশের ঘটনায় ভারত নির্বিকার থাকতে পারে না—সরকারী মুখপাত্র’। যুগান্তর সেখানে ‘সৈন্য-জনতা সংঘর্ষ, কার্ফু’ নামে শিরোনামে বড় অক্ষরে সংবাদ ছেপেছিল।

প্রথম পাতায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আরও দুটি সংবাদ ছাপা হয়েছিল ‘ঢাকার ঘটনায় ইন্দিরা উদ্বিগ্ন’ ও ‘জিয়াউর নয়, রাষ্ট্রপতি সায়েমই মূখ্যসামরিক শাসক’।

Ad 300x250

সম্পর্কিত