স্ট্রিম ডেস্ক
গাজায় যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার ‘প্রথম পর্যায়’ বাস্তবায়নে একমত হয়েছে হামাস ও ইসরায়েল। ফলে যুদ্ধ শেষ হলে ভবিষ্যতে গাজার অবস্থা কেমন হতে পারে—এ প্রশ্ন এখন অনেকের মনে।
গাজার দেইর আল-বালাহ শহরে ইসরায়েলি ড্রোন ও যুদ্ধবিমানের গর্জনের মধ্যে জিহান আবু মেনদিল তার পাঁচ সন্তানকে খেলনা প্রাণী নিয়ে খেলতে দেখছিলেন। অস্থায়ী এক ছোট তাঁবুতে এই সামান্য খেলাই ছিল চলমান হত্যাযজ্ঞের মাঝেও শৈশবের একটুখানি স্বস্তি।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক গণহত্যা বিষয়ক গবেষকরা গাজায় সংঘটিত ঘটনাকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তাদের মতে, ইসরায়েল গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ বাড়ি ও ভবন ধ্বংস করেছে। হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় ও পুরো আবাসিক এলাকা নিশ্চিহ্ন করে তারা জীবনের প্রায় সব উৎস ধ্বংস করেছে।
এ পর্যন্ত অন্তত ৬৭ হাজার ১৬০ জন নিহত এবং এক লাখ ৬৯ হাজার মানুষ আহত হয়েছে। বহু মৃতদেহ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়ে গেছে— সেগুলোর সঙ্গে চাপা পড়ে আছে জীবিতদের আশা এবং স্বপ্নও।
‘আমি শুধু রক্তপাত বন্ধ হতে চাই’, আল জাজিরাকে বলেন ৪১ বছর বয়সী আবু মানদিল। এসময় তিনি কোলে নিয়ে ছিলেন তার সবচেয়ে ছোট সন্তানকে।
ভবিষ্যৎ পুনর্গঠন
হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য মিশরের কায়রোতে পরোক্ষ বৈঠক চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনাই এখন গাজাবাসীর একমাত্র আশার আলো।
গত দুই বছরে ইসরায়েল বহুবার আলোচনা ব্যর্থ করে দিয়েছে, তবে এবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চাপ কিছুটা বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবু যুদ্ধবিরতি হলেও গাজার মানুষের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হবে দেশ ও সমাজ পুনর্গঠন।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজা পুনর্গঠনে ৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ লাগবে। অঞ্চলটি আবার বাসযোগ্য করতে কমপক্ষে ১৫ বছর সময় লাগবে।
তবে শর্ত হচ্ছে— ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ যেন পুনর্গঠনের পথে বড় বাধা না হয়। অতীতে ছোট আকারের যুদ্ধের পরও এই অবরোধ পুনর্গঠনের কাজকে কঠিন করে তুলেছিল বলে ২০১৭ সালে ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
গাজা বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের দোহাভিত্তিক বিশেষজ্ঞ আজমি কেশাওই মনে করেন, যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক চাপ তৈরি করাই সবচেয়ে জরুরি, যাতে পুনর্গঠনের উপকরণ প্রবেশ করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা তাদের জীবন পুনরুদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। কিন্তু শুধু ইচ্ছাশক্তি যথেষ্ট নয়। এটি একা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’
গ্যাং, দলাদলি ও সংঘাতের আশঙ্কা
গাজার ভবিষ্যৎ পুনর্গঠনের পাশাপাশি আরেকটি আশঙ্কা দেখা দিয়েছে—যদি হামাস ক্ষমতা ছাড়ে, তাহলে অঞ্চলটি আইনশৃঙ্খলাহীনতা ও সংঘাতে নিমজ্জিত হতে পারে। ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার একটি ধারা এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছে।
গাজায় অবস্থানরত সাংবাদিক ইয়াসের আল-বান্না বলেন, ‘হামাসের শাসন থাকার একটি সুবিধা হলো, তারা নিরাপত্তা বজায় রাখে।’
গণহত্যার পুরো সময়জুড়ে ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে গাজার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করেছে। একই সঙ্গে তারা কুখ্যাত কিছু গোষ্ঠীকে সহায়তা দিয়েছে, যারা অল্প পরিমাণে প্রবেশ করা মানবিক সহায়তা লুট করে অনেক বেশি দামে বিক্রি করেছে।
যদিও এই গ্যাংগুলো এখন সমস্যা তৈরি করছে, বিশেষজ্ঞ আজমি কেশাওই মনে করেন, ইসরায়েল গাজা ত্যাগ করলে তারা টিকবে না। ফিলিস্তিনি সমাজ নিজ উদ্যোগে এসব গোষ্ঠীকে বিচ্ছিন্ন করবে, কারণ অধিকাংশ মানুষ তাদের বিশ্বাসঘাতক হিসেবে দেখে।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ফাতাহ ও হামাসের মধ্যে গোষ্ঠীগত সংঘাত ভবিষ্যতে বড় সমস্যা হতে পারে।
ফাতাহ বর্তমানে পশ্চিম তীরে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ে ক্ষয়িষ্ণু হলেও হামাস এখনো গাজার নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে।
২০০৬ সালে হামাস ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে নির্বাচনে জয় লাভ করার পরপরই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। এই কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়েছিল ১৯৯৩ সালের অসলো শান্তি চুক্তির মাধ্যমে।
হামাসের জয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোকে বিস্মিত করেছিল। তারা হামাসকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা দেয়, কারণ হামাস ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে ও দখলদারবিরোধী সশস্ত্র প্রতিরোধ ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানায়।
পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ফাতাহকে সহায়তা দেয় হামাসকে ক্ষমতা থেকে সরাতে। এর ফলে স্বল্প সময়ের এক গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ২০০৭ সালের জুনে হামাস ফাতাহকে গাজা থেকে বহিষ্কার করে, যা ফিলিস্তিনি জাতীয় আন্দোলনে স্থায়ী বিভাজন সৃষ্টি করে।
কেশাওই মনে করেন, যদি কিছু নির্বাসিত ফাতাহ নেতা আঞ্চলিক শক্তি বা ইসরায়েলের সহায়তায় গাজায় ফিরে আসে, তাহলে তারা হামাস ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে পারে।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, ‘যদি ইসরায়েল এই ব্যক্তিদের গাজায় ফিরে আসতে দেয়, তবে তারা হামাসকে সমর্থনকারীদের টার্গেট করতে পারে।’
স্থায়ী মানসিক আঘাত
গাজায় যারা থেকে যেতে বাধ্য হয়েছে, তাদের এখন মোকাবিলা করতে হচ্ছে ভয়াবহ মানসিক আঘাতের সঙ্গে। ইসরায়েলের নিরবচ্ছিন্ন হামলায় পরিবার, বন্ধু, ঘরবাড়ি ও ভবিষ্যৎ হারানোর শোক সামলানোর সুযোগও তারা পায়নি।
গণহত্যা শুরু হওয়ার আগেই, ২০২২ সালের এক সমীক্ষায় সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছিল—গাজার প্রতি পাঁচ শিশুর মধ্যে চারজনই হতাশা, দুঃখ ও ভয়ের মধ্যে বাস করছিল।
ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স (এমএসএফ)-এর মতে, সাম্প্রতিক ইতিহাসে এমন ভয়াবহ মানসিক আঘাতের দৃষ্টান্ত খুব কমই দেখা গেছে।
গত বছর জর্ডানের আম্মানে এমএসএফ-এর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আহমদ মাহমুদ আল-সালেম গাজা থেকে আসা শিশুদের চিকিৎসা করেন। তিনি দেখেন, অধিকাংশ শিশুই দুঃস্বপ্ন, বিষণ্নতা ও অনিদ্রায় ভুগছে।
লন্ডনের ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রির সম্মানসূচক অধ্যাপক ডেরেক সামারফিল্ড বলেন, গাজার শিশুদের বর্তমান মানসিক অবস্থা কল্পনাতীত। তার তথ্য অনুযায়ী, গাজায় অন্তত ১৭ হাজার শিশু এখন পরিবারহীন অবস্থায় আছে। এদের অনেকের ভাগ্য অনিশ্চিত—তারা আদৌ নিরাপদ পরিবেশে ফিরতে পারবে কি না, তা কেউ জানে না।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, ‘এই শিশুদের ভবিষ্যৎ তাদের ট্রমা জয় করার ওপর নির্ভর করে না, কারণ তাদের ট্রমা এখনো শেষ হয়নি। তাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তাদের সমাজের ওপর—কিন্তু সেই সমাজই ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই একে গণহত্যা বলা হয়।’
জিহান আবু মানদিলের একটাই আশা—তার সন্তানদের অন্তত সামান্য একটা ভবিষ্যৎ দিতে পারবেন।
তার স্কুলপড়ুয়া সন্তানরা টানা দুই বছর ধরে পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন। তিনি নিজে ভূগোলের শিক্ষক। তাই যতটা পারেন, নিজে থেকেই সন্তানদের কিছু মৌলিক পাঠ দিচ্ছেন যাতে তারা পুরোপুরি পিছিয়ে না পড়ে।
‘আমি শুধু চাই তাদের ভবিষ্যৎ আমাদের চেয়ে ভালো হোক’, বলেন তিনি। ‘নিরন্তর হত্যাযজ্ঞে আমি প্রতিদিন সন্তানদের জন্য ভয় পাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমার একটাই স্বপ্ন—একদিন যেন সন্তানদের গাজা থেকে বের করে নিতে পারি।’
গাজায় যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার ‘প্রথম পর্যায়’ বাস্তবায়নে একমত হয়েছে হামাস ও ইসরায়েল। ফলে যুদ্ধ শেষ হলে ভবিষ্যতে গাজার অবস্থা কেমন হতে পারে—এ প্রশ্ন এখন অনেকের মনে।
গাজার দেইর আল-বালাহ শহরে ইসরায়েলি ড্রোন ও যুদ্ধবিমানের গর্জনের মধ্যে জিহান আবু মেনদিল তার পাঁচ সন্তানকে খেলনা প্রাণী নিয়ে খেলতে দেখছিলেন। অস্থায়ী এক ছোট তাঁবুতে এই সামান্য খেলাই ছিল চলমান হত্যাযজ্ঞের মাঝেও শৈশবের একটুখানি স্বস্তি।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক গণহত্যা বিষয়ক গবেষকরা গাজায় সংঘটিত ঘটনাকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তাদের মতে, ইসরায়েল গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ বাড়ি ও ভবন ধ্বংস করেছে। হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় ও পুরো আবাসিক এলাকা নিশ্চিহ্ন করে তারা জীবনের প্রায় সব উৎস ধ্বংস করেছে।
এ পর্যন্ত অন্তত ৬৭ হাজার ১৬০ জন নিহত এবং এক লাখ ৬৯ হাজার মানুষ আহত হয়েছে। বহু মৃতদেহ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়ে গেছে— সেগুলোর সঙ্গে চাপা পড়ে আছে জীবিতদের আশা এবং স্বপ্নও।
‘আমি শুধু রক্তপাত বন্ধ হতে চাই’, আল জাজিরাকে বলেন ৪১ বছর বয়সী আবু মানদিল। এসময় তিনি কোলে নিয়ে ছিলেন তার সবচেয়ে ছোট সন্তানকে।
ভবিষ্যৎ পুনর্গঠন
হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য মিশরের কায়রোতে পরোক্ষ বৈঠক চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনাই এখন গাজাবাসীর একমাত্র আশার আলো।
গত দুই বছরে ইসরায়েল বহুবার আলোচনা ব্যর্থ করে দিয়েছে, তবে এবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চাপ কিছুটা বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবু যুদ্ধবিরতি হলেও গাজার মানুষের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হবে দেশ ও সমাজ পুনর্গঠন।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজা পুনর্গঠনে ৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ লাগবে। অঞ্চলটি আবার বাসযোগ্য করতে কমপক্ষে ১৫ বছর সময় লাগবে।
তবে শর্ত হচ্ছে— ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ যেন পুনর্গঠনের পথে বড় বাধা না হয়। অতীতে ছোট আকারের যুদ্ধের পরও এই অবরোধ পুনর্গঠনের কাজকে কঠিন করে তুলেছিল বলে ২০১৭ সালে ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
গাজা বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের দোহাভিত্তিক বিশেষজ্ঞ আজমি কেশাওই মনে করেন, যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক চাপ তৈরি করাই সবচেয়ে জরুরি, যাতে পুনর্গঠনের উপকরণ প্রবেশ করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা তাদের জীবন পুনরুদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। কিন্তু শুধু ইচ্ছাশক্তি যথেষ্ট নয়। এটি একা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’
গ্যাং, দলাদলি ও সংঘাতের আশঙ্কা
গাজার ভবিষ্যৎ পুনর্গঠনের পাশাপাশি আরেকটি আশঙ্কা দেখা দিয়েছে—যদি হামাস ক্ষমতা ছাড়ে, তাহলে অঞ্চলটি আইনশৃঙ্খলাহীনতা ও সংঘাতে নিমজ্জিত হতে পারে। ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার একটি ধারা এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছে।
গাজায় অবস্থানরত সাংবাদিক ইয়াসের আল-বান্না বলেন, ‘হামাসের শাসন থাকার একটি সুবিধা হলো, তারা নিরাপত্তা বজায় রাখে।’
গণহত্যার পুরো সময়জুড়ে ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে গাজার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করেছে। একই সঙ্গে তারা কুখ্যাত কিছু গোষ্ঠীকে সহায়তা দিয়েছে, যারা অল্প পরিমাণে প্রবেশ করা মানবিক সহায়তা লুট করে অনেক বেশি দামে বিক্রি করেছে।
যদিও এই গ্যাংগুলো এখন সমস্যা তৈরি করছে, বিশেষজ্ঞ আজমি কেশাওই মনে করেন, ইসরায়েল গাজা ত্যাগ করলে তারা টিকবে না। ফিলিস্তিনি সমাজ নিজ উদ্যোগে এসব গোষ্ঠীকে বিচ্ছিন্ন করবে, কারণ অধিকাংশ মানুষ তাদের বিশ্বাসঘাতক হিসেবে দেখে।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ফাতাহ ও হামাসের মধ্যে গোষ্ঠীগত সংঘাত ভবিষ্যতে বড় সমস্যা হতে পারে।
ফাতাহ বর্তমানে পশ্চিম তীরে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ে ক্ষয়িষ্ণু হলেও হামাস এখনো গাজার নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে।
২০০৬ সালে হামাস ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে নির্বাচনে জয় লাভ করার পরপরই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। এই কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়েছিল ১৯৯৩ সালের অসলো শান্তি চুক্তির মাধ্যমে।
হামাসের জয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোকে বিস্মিত করেছিল। তারা হামাসকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা দেয়, কারণ হামাস ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে ও দখলদারবিরোধী সশস্ত্র প্রতিরোধ ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানায়।
পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ফাতাহকে সহায়তা দেয় হামাসকে ক্ষমতা থেকে সরাতে। এর ফলে স্বল্প সময়ের এক গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ২০০৭ সালের জুনে হামাস ফাতাহকে গাজা থেকে বহিষ্কার করে, যা ফিলিস্তিনি জাতীয় আন্দোলনে স্থায়ী বিভাজন সৃষ্টি করে।
কেশাওই মনে করেন, যদি কিছু নির্বাসিত ফাতাহ নেতা আঞ্চলিক শক্তি বা ইসরায়েলের সহায়তায় গাজায় ফিরে আসে, তাহলে তারা হামাস ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে পারে।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, ‘যদি ইসরায়েল এই ব্যক্তিদের গাজায় ফিরে আসতে দেয়, তবে তারা হামাসকে সমর্থনকারীদের টার্গেট করতে পারে।’
স্থায়ী মানসিক আঘাত
গাজায় যারা থেকে যেতে বাধ্য হয়েছে, তাদের এখন মোকাবিলা করতে হচ্ছে ভয়াবহ মানসিক আঘাতের সঙ্গে। ইসরায়েলের নিরবচ্ছিন্ন হামলায় পরিবার, বন্ধু, ঘরবাড়ি ও ভবিষ্যৎ হারানোর শোক সামলানোর সুযোগও তারা পায়নি।
গণহত্যা শুরু হওয়ার আগেই, ২০২২ সালের এক সমীক্ষায় সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছিল—গাজার প্রতি পাঁচ শিশুর মধ্যে চারজনই হতাশা, দুঃখ ও ভয়ের মধ্যে বাস করছিল।
ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স (এমএসএফ)-এর মতে, সাম্প্রতিক ইতিহাসে এমন ভয়াবহ মানসিক আঘাতের দৃষ্টান্ত খুব কমই দেখা গেছে।
গত বছর জর্ডানের আম্মানে এমএসএফ-এর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আহমদ মাহমুদ আল-সালেম গাজা থেকে আসা শিশুদের চিকিৎসা করেন। তিনি দেখেন, অধিকাংশ শিশুই দুঃস্বপ্ন, বিষণ্নতা ও অনিদ্রায় ভুগছে।
লন্ডনের ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রির সম্মানসূচক অধ্যাপক ডেরেক সামারফিল্ড বলেন, গাজার শিশুদের বর্তমান মানসিক অবস্থা কল্পনাতীত। তার তথ্য অনুযায়ী, গাজায় অন্তত ১৭ হাজার শিশু এখন পরিবারহীন অবস্থায় আছে। এদের অনেকের ভাগ্য অনিশ্চিত—তারা আদৌ নিরাপদ পরিবেশে ফিরতে পারবে কি না, তা কেউ জানে না।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, ‘এই শিশুদের ভবিষ্যৎ তাদের ট্রমা জয় করার ওপর নির্ভর করে না, কারণ তাদের ট্রমা এখনো শেষ হয়নি। তাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তাদের সমাজের ওপর—কিন্তু সেই সমাজই ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই একে গণহত্যা বলা হয়।’
জিহান আবু মানদিলের একটাই আশা—তার সন্তানদের অন্তত সামান্য একটা ভবিষ্যৎ দিতে পারবেন।
তার স্কুলপড়ুয়া সন্তানরা টানা দুই বছর ধরে পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন। তিনি নিজে ভূগোলের শিক্ষক। তাই যতটা পারেন, নিজে থেকেই সন্তানদের কিছু মৌলিক পাঠ দিচ্ছেন যাতে তারা পুরোপুরি পিছিয়ে না পড়ে।
‘আমি শুধু চাই তাদের ভবিষ্যৎ আমাদের চেয়ে ভালো হোক’, বলেন তিনি। ‘নিরন্তর হত্যাযজ্ঞে আমি প্রতিদিন সন্তানদের জন্য ভয় পাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমার একটাই স্বপ্ন—একদিন যেন সন্তানদের গাজা থেকে বের করে নিতে পারি।’
গাজা যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পর ২০ দফা প্রস্তাবের প্রাথমিক পর্যায়ে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এর অংশ হিসেবে সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
২৭ মিনিট আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনায় কিছু ইতিবাচক প্রস্তাব আছে— যেমন জিম্মি মুক্তি, মানবিক সহায়তা ও পুনর্গঠন। কিন্তু পুরো পরিকল্পনাটি উপনিবেশিক মানসিকতায় ভরপুর। এতে বলা হয়েছে, গাজা তদারক করবেন ট্রাম্প নিজে।
১ ঘণ্টা আগেফিলিস্তিনের গাজা যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনার ‘প্রথম পর্যায়‘ বাস্তবায়নে একমত হয়েছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েল। এই খবরে গাজার ধ্বংসস্তূপে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিরা উল্লাস করছেন।
২ ঘণ্টা আগেগাজায় যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ের বাস্তবায়নে একমত হয়েছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলে।
৪ ঘণ্টা আগে