তানভীর অপু
প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বদিকে বিস্তৃত গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ পৃথিবীর সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর দ্বীপসমষ্টিগুলোর একটি। পর্যটকদের কাছেও এটি বিশেষ আকর্ষণ। দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডর উপকূল থেকে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরে, নিরক্ষরেখার ঠিক কাছেই এই দ্বীপগুলোর অবস্থান।
প্রশাসনিকভাবে গ্যালাপাগোস ইকুয়েডরের অন্তর্ভুক্ত হলেও, প্রকৃতির বিচিত্র সৃষ্টির কারণে এর পরিচয় আলাদা। এখানে এমন সব প্রাণীর দেখা মেলে, যাদের অস্তিত্ব পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই।
ছোটবেলা থেকেই গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের গল্প শুনে বড় হয়েছি আমি। চার্লস ডারউইনের পদচারণায় ধন্য এই দ্বীপের কথা বইয়ের পাতায় পড়ার পর থেকে সেখানে কল্পনায় ভেসে বেড়াতাম। কতবার ভেবেছি, সেই জায়গায় একবার দাঁড়িয়ে দেখব কেমন করে মানুষ আর প্রকৃতি একে অন্যের সঙ্গে নিঃশব্দে মিশে থাকে। অবশেষে সেই স্বপ্ন সত্যি হলো।
আমার গ্যালাপাগোস যাত্রা শুরু হয়েছিল আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেস থেকে। সেখান থেকে পেরুর লিমা, তারপর ইকুয়েডরের কিটো হয়ে অবশেষে পৌঁছালাম গ্যালাপাগোসের স্যান ক্রিস্টোবাল দ্বীপে। লম্বা এই যাত্রায় খরচ হয়েছিল প্রায় ৭৫০ ডলার। দ্বীপে পৌঁছেই দিতে হলো দুইশ ডলার কনজারভেশন ফি। এটা এখানকার নিয়মের অংশ।
তারপর দেখা হলো আমার গাইড ইভানের সঙ্গে। হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। জিপ গাড়িতে করে পৌঁছালাম জেটিতে। সেখানে আমাদের জাহাজ তৈরি ছিল যাত্রার জন্য। সাত রাত আট দিনের এই সফরের খরচ পড়েছিল ৩৫০০ ডলার। ব্যয়বহুল হলেও, এই ভ্রমণের প্রতিটি মুহূর্তই ছিল সত্যিই অমূল্য।
স্যান ক্রিস্টোবালে পা রাখতেই চোখে পড়ল বিশাল সীলদের অবাধ বিচরণ। সীলেরা মানুষের বসার বেঞ্চে শুয়ে আছে। রোদও পোহাচ্ছে। আবার কিছু সীল সমুদ্রে গোসল করছে। এমন দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছিল, মানুষ নয়, এই দ্বীপের প্রকৃত মালিক যেন তারাই।
রাস্তা দিয়ে নির্ভয়ে হেঁটে যাওয়া সীলদের দেখে মনে হলো, প্রকৃতি এখানে নিজের ছন্দে বেঁচে আছে, কারও অনুমতির দরকার নেই। দ্বীপে হাঁটতে হাঁটতে পরিচিত গাছপালা দেখতে পেলাম। সজনে গাছ, আমগাছ আর বাহারি ফুলের সমাহার। দূর দেশেও একটুখানি বাংলাদেশের ছোঁয়া মিলল। মনে হলো, প্রকৃতি সত্যিই বিশ্বজনীন।
এরপর গেলাম সান্তা ক্রুজ দ্বীপের চার্লস ডারউইন গবেষণা কেন্দ্রে। এই দ্বীপেই তিনি জীববিবর্তন বোঝার তত্ত্বের বীজ বপন করেছিলেন। গবেষণা কেন্দ্র ঘুরে মনে হলো, আমি যেন ইতিহাসের এক মহিমান্বিত অধ্যায়ের অংশ হয়ে গেছি।
নিঃসঙ্গ জর্জের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিল একটি রহস্যপত্রিকার মাধ্যমে। সেখানে গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের জীবজন্তুদের ছবিসহ তার জীবনের গল্পও ছিল। জর্জ পৃথিবীর বিরলতম কচ্ছপ। নিজের গোত্রের শেষ জীবিত প্রতিনিধি।
জর্জের অস্তিত্ব টিকেছিল বহু বছর। তবে তার তার প্রজাতি আর টিকিয়ে রাখা গেল না। মানুষের নিষ্ঠুরতা আর বোকামির কারণে পৃথিবীজুড়ে অগণিত প্রাণী হারিয়ে গেছে চিরতরে। যেমন জর্জের বাসস্থান পিন্টা দ্বীপে তার প্রজাতির কচ্ছপদের ক্ষেত্রে ঘটেছে। যদিও জর্জের শেষ জীবনে তার সঙ্গিনী খোঁজা হয়েছিল, তবে প্রজাতির পুনরুত্পাদন সম্ভব হয়নি।
১৯৭১ সালে এক বিজ্ঞানী বুঝতে পারেন যে জর্জই তার গোত্রের শেষ বংশধর। অবশেষে ২০১২ সালের ২৪ জুন জর্জের হৃদস্পন্দন থেমে যায়। যদিও তার প্রজাতির কচ্ছপদের অনেক বছর বাঁচার কথা ছিল। হয়ত অজ্ঞাত রোগের কারণে জর্জ মারা যায়।
জর্জের মৃত্যুর পর আমরা আবারো বুঝতে পারলাম, কতটা নিষ্ঠুর আর অজ্ঞানতা দিয়ে আমরা পৃথিবীকে ধ্বংস করে যাচ্ছি। যদিও কিছু মানুষ তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। বিদায় জর্জ, আমাদের ক্ষমা করে দিও।
সান্তা ক্রুজ দ্বীপটি গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ। এই দ্বীপের জীববৈচিত্র্য অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় এবং এটি গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। এখানে দেখা যায় বেশ কিছু বিরল এবং আকর্ষণীয় প্রজাতির প্রাণী ও পাখি, যা বিশ্বজুড়ে পরিচিত। সান্তা ক্রুজ দ্বীপের কিছু উল্লেখযোগ্য প্রাণী ও পাখির মধ্যে রয়েছে:
গ্যালাপাগোস আর্কিপেলাগোর সবচেয়ে বিখ্যাত প্রাণী হলো গ্যালাপাগোস কচ্ছপ। সান্তা ক্রুজ দ্বীপে রয়েছে কচ্ছপের বেশ কয়টি উপপ্রজাতি। তাদের বিশাল আকার এবং দীর্ঘ জীবনযাত্রা তাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের একমাত্র সামুদ্রিক সরীসৃপ মেরিন ইগুয়ানা সান্তা ক্রুজ দ্বীপেও পাওয়া যায়। এরা সমুদ্রের নিচে ডুব দিয়ে খাবার খায় এবং সূর্যস্নানে সময় কাটায়।
সান্তা ক্রুজ দ্বীপের সমুদ্রের কাছে এটি দেখা যায়। এরা সাধারণত ছোট মাছ আর পেঙ্গুইন শিকার করে।
সান্তা ক্রুজ দ্বীপের আকাশে ভেসে বেড়ায় এই অদ্ভুত সুন্দর পাখি। এরা মূলত সাগরের মাছ খেয়ে বেঁচে থাকে এবং সবসময় দল বেঁধে উড়ে। প্রজননের সময় তারা দ্বীপের উপকূলের পাথুরে অংশে বা গাছে বাসা বাঁধে।
সান্তা ক্রুজ দ্বীপের স্যালিনাস ল্যাগুনায় ফ্ল্যামিংগোদের প্রজনন স্থান রয়েছে। গোলাপী রঙের জন্য এই পাখি খুবই পরিচিত।
গ্যালাপাগোস সী বায়রন সান্তা ক্রুজ দ্বীপের অন্যতম আকর্ষণীয় প্রাণী। সৈকতের কাছে এদেরকে দেখা যায়।
সান্তা ক্রুজ দ্বীপে একটি বিরল পাখি প্রজাতি হল রেড ফুটেড বুবি। এটা লাল পায়ের জন্য পরিচিত।
এই পেঙ্গুইন পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তপ্ত পরিবেশে বাস করা পেঙ্গুইন প্রজাতি। এটি সান্তা ক্রুজ দ্বীপসহ গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে বাস করে।
সান্তা ক্রুজ দ্বীপের আরেক বিস্ময়কর পাখি হলো হুড মকিংবার্ড। এই পাখির বিশেষত্ব হলো এর অনুকরণক্ষমতা।
এই পাখি প্রজাতি ডারউইন থিওরির জন্য বিখ্যাত। দ্বীপের পরিবেশ ও খাদ্যাভ্যাস অনুযায়ী এদের ঠোঁটের গঠন ও আকারে দেখা যায় বিস্ময়কর বৈচিত্র্য।
গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে বিস্ময়কর পাখিদের মধ্যে একটি হলো গ্যালাপাগোস পানকৌড়ি. এটি পৃথিবীর একমাত্র পানকৌড়ি প্রজাতি যা উড়তে পারে না।
আমার ভ্রমণের সবচেয়ে বড় অ্যাডভেঞ্চার ছিল সিয়েরা নেগ্রো আগ্নেয়গিরিতে আরোহণ। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। লাভা, ছাই আর পাথরের পথ ধরে চূড়ায় উঠতে উঠতে মনে হচ্ছিল, যেন পৃথিবীর গর্ভে প্রবেশ করছি। চূড়ায় পৌঁছে বিশাল জ্বালামুখের সামনে দাঁড়িয়ে মনে হলো, প্রকৃতির সামনে মানুষ কত ছোট, কত তুচ্ছ।
ইসাবেলা দ্বীপের লাভা টিউবের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বিস্মিত হলাম। গরম লাভা ঠান্ডা হয়ে কীভাবে পাথরে পরিণত হয়েছে, তা নিজ চোখে দেখা সত্যিই অভূতপূর্ব। এই লাভার নিচে এখনও গ্যাস ও মিথেনের প্রবাহ রয়েছে। প্রকৃতির এই নিঃশব্দ রসায়ন যেন পৃথিবীর গভীরে লেখা এক গোপন কাহিনি, যা কেবল দেখলেই বিশ্বাস করা যায়।
ফার্নান্ডিনা দ্বীপে হাজার হাজার মেরিন ইগুয়ানার দেখা পেলাম। এগুলো শুধুমাত্র গ্যালাপাগোসেই পাওয়া যায়। শান্ত, নিরীহ স্বভাবের এই প্রাণীগুলোর দেখে মনে হলো, প্রকৃতি কত নিখুঁতভাবে নিজস্ব বাস্তুসংস্থান তৈরি করে রেখেছে।
রাবিদা দ্বীপের লাল বালুর সৈকত আর লাল পাহাড় দেখে মনে হলো, যেন অন্য কোনো গ্রহে চলে এসেছি। প্রশান্ত মহাসাগরের স্বচ্ছ জলে রঙিন মাছেদের খেলা দেখে মুহূর্তটিকে সিনেমার দৃশ্যের মতো লাগছিল।
সান্তিয়াগো দ্বীপের আগ্নেয় শিলার ভাস্কর্যগুলো প্রকৃতির এক নিখুঁত শিল্পকর্ম। প্রশান্ত মহাসাগরের ঢেউ যখন এই পাথরগুলোর উপর আছড়ে পড়ে, তখন এক অপরূপ দৃশ্য তৈরি হয়। প্রকৃতির এই নিপুণতা দেখে অবাক হতে হয়।
গ্যালাপাগোস ছাড়ার সময় মনে হচ্ছিল, এখানকার প্রতিটি মুহূর্ত আমার হৃদয়ে গেঁথে গেছে। এই দ্বীপপুঞ্জ শুধু একটি পর্যটন স্থান নয়, এটি প্রকৃতির এক অনন্য নিদর্শন। যেখানে প্রাণী ও প্রকৃতি একসঙ্গে টিকে আছে।
গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের প্রতিটি দ্বীপ, প্রতিটি প্রাণী, প্রতিটি দৃশ্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। এই ভ্রমণ কেবল একটি যাত্রা নয়, এটি ছিল প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা। পৃথিবী যে এখনও রহস্যে মোড়া, তার আরেকটি প্রমাণ হয়ে থাকল আমার গ্যালাপাগোস ভ্রমণ।
প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বদিকে বিস্তৃত গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ পৃথিবীর সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর দ্বীপসমষ্টিগুলোর একটি। পর্যটকদের কাছেও এটি বিশেষ আকর্ষণ। দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডর উপকূল থেকে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরে, নিরক্ষরেখার ঠিক কাছেই এই দ্বীপগুলোর অবস্থান।
প্রশাসনিকভাবে গ্যালাপাগোস ইকুয়েডরের অন্তর্ভুক্ত হলেও, প্রকৃতির বিচিত্র সৃষ্টির কারণে এর পরিচয় আলাদা। এখানে এমন সব প্রাণীর দেখা মেলে, যাদের অস্তিত্ব পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই।
ছোটবেলা থেকেই গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের গল্প শুনে বড় হয়েছি আমি। চার্লস ডারউইনের পদচারণায় ধন্য এই দ্বীপের কথা বইয়ের পাতায় পড়ার পর থেকে সেখানে কল্পনায় ভেসে বেড়াতাম। কতবার ভেবেছি, সেই জায়গায় একবার দাঁড়িয়ে দেখব কেমন করে মানুষ আর প্রকৃতি একে অন্যের সঙ্গে নিঃশব্দে মিশে থাকে। অবশেষে সেই স্বপ্ন সত্যি হলো।
আমার গ্যালাপাগোস যাত্রা শুরু হয়েছিল আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেস থেকে। সেখান থেকে পেরুর লিমা, তারপর ইকুয়েডরের কিটো হয়ে অবশেষে পৌঁছালাম গ্যালাপাগোসের স্যান ক্রিস্টোবাল দ্বীপে। লম্বা এই যাত্রায় খরচ হয়েছিল প্রায় ৭৫০ ডলার। দ্বীপে পৌঁছেই দিতে হলো দুইশ ডলার কনজারভেশন ফি। এটা এখানকার নিয়মের অংশ।
তারপর দেখা হলো আমার গাইড ইভানের সঙ্গে। হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। জিপ গাড়িতে করে পৌঁছালাম জেটিতে। সেখানে আমাদের জাহাজ তৈরি ছিল যাত্রার জন্য। সাত রাত আট দিনের এই সফরের খরচ পড়েছিল ৩৫০০ ডলার। ব্যয়বহুল হলেও, এই ভ্রমণের প্রতিটি মুহূর্তই ছিল সত্যিই অমূল্য।
স্যান ক্রিস্টোবালে পা রাখতেই চোখে পড়ল বিশাল সীলদের অবাধ বিচরণ। সীলেরা মানুষের বসার বেঞ্চে শুয়ে আছে। রোদও পোহাচ্ছে। আবার কিছু সীল সমুদ্রে গোসল করছে। এমন দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছিল, মানুষ নয়, এই দ্বীপের প্রকৃত মালিক যেন তারাই।
রাস্তা দিয়ে নির্ভয়ে হেঁটে যাওয়া সীলদের দেখে মনে হলো, প্রকৃতি এখানে নিজের ছন্দে বেঁচে আছে, কারও অনুমতির দরকার নেই। দ্বীপে হাঁটতে হাঁটতে পরিচিত গাছপালা দেখতে পেলাম। সজনে গাছ, আমগাছ আর বাহারি ফুলের সমাহার। দূর দেশেও একটুখানি বাংলাদেশের ছোঁয়া মিলল। মনে হলো, প্রকৃতি সত্যিই বিশ্বজনীন।
এরপর গেলাম সান্তা ক্রুজ দ্বীপের চার্লস ডারউইন গবেষণা কেন্দ্রে। এই দ্বীপেই তিনি জীববিবর্তন বোঝার তত্ত্বের বীজ বপন করেছিলেন। গবেষণা কেন্দ্র ঘুরে মনে হলো, আমি যেন ইতিহাসের এক মহিমান্বিত অধ্যায়ের অংশ হয়ে গেছি।
নিঃসঙ্গ জর্জের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিল একটি রহস্যপত্রিকার মাধ্যমে। সেখানে গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের জীবজন্তুদের ছবিসহ তার জীবনের গল্পও ছিল। জর্জ পৃথিবীর বিরলতম কচ্ছপ। নিজের গোত্রের শেষ জীবিত প্রতিনিধি।
জর্জের অস্তিত্ব টিকেছিল বহু বছর। তবে তার তার প্রজাতি আর টিকিয়ে রাখা গেল না। মানুষের নিষ্ঠুরতা আর বোকামির কারণে পৃথিবীজুড়ে অগণিত প্রাণী হারিয়ে গেছে চিরতরে। যেমন জর্জের বাসস্থান পিন্টা দ্বীপে তার প্রজাতির কচ্ছপদের ক্ষেত্রে ঘটেছে। যদিও জর্জের শেষ জীবনে তার সঙ্গিনী খোঁজা হয়েছিল, তবে প্রজাতির পুনরুত্পাদন সম্ভব হয়নি।
১৯৭১ সালে এক বিজ্ঞানী বুঝতে পারেন যে জর্জই তার গোত্রের শেষ বংশধর। অবশেষে ২০১২ সালের ২৪ জুন জর্জের হৃদস্পন্দন থেমে যায়। যদিও তার প্রজাতির কচ্ছপদের অনেক বছর বাঁচার কথা ছিল। হয়ত অজ্ঞাত রোগের কারণে জর্জ মারা যায়।
জর্জের মৃত্যুর পর আমরা আবারো বুঝতে পারলাম, কতটা নিষ্ঠুর আর অজ্ঞানতা দিয়ে আমরা পৃথিবীকে ধ্বংস করে যাচ্ছি। যদিও কিছু মানুষ তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। বিদায় জর্জ, আমাদের ক্ষমা করে দিও।
সান্তা ক্রুজ দ্বীপটি গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ। এই দ্বীপের জীববৈচিত্র্য অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় এবং এটি গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। এখানে দেখা যায় বেশ কিছু বিরল এবং আকর্ষণীয় প্রজাতির প্রাণী ও পাখি, যা বিশ্বজুড়ে পরিচিত। সান্তা ক্রুজ দ্বীপের কিছু উল্লেখযোগ্য প্রাণী ও পাখির মধ্যে রয়েছে:
গ্যালাপাগোস আর্কিপেলাগোর সবচেয়ে বিখ্যাত প্রাণী হলো গ্যালাপাগোস কচ্ছপ। সান্তা ক্রুজ দ্বীপে রয়েছে কচ্ছপের বেশ কয়টি উপপ্রজাতি। তাদের বিশাল আকার এবং দীর্ঘ জীবনযাত্রা তাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের একমাত্র সামুদ্রিক সরীসৃপ মেরিন ইগুয়ানা সান্তা ক্রুজ দ্বীপেও পাওয়া যায়। এরা সমুদ্রের নিচে ডুব দিয়ে খাবার খায় এবং সূর্যস্নানে সময় কাটায়।
সান্তা ক্রুজ দ্বীপের সমুদ্রের কাছে এটি দেখা যায়। এরা সাধারণত ছোট মাছ আর পেঙ্গুইন শিকার করে।
সান্তা ক্রুজ দ্বীপের আকাশে ভেসে বেড়ায় এই অদ্ভুত সুন্দর পাখি। এরা মূলত সাগরের মাছ খেয়ে বেঁচে থাকে এবং সবসময় দল বেঁধে উড়ে। প্রজননের সময় তারা দ্বীপের উপকূলের পাথুরে অংশে বা গাছে বাসা বাঁধে।
সান্তা ক্রুজ দ্বীপের স্যালিনাস ল্যাগুনায় ফ্ল্যামিংগোদের প্রজনন স্থান রয়েছে। গোলাপী রঙের জন্য এই পাখি খুবই পরিচিত।
গ্যালাপাগোস সী বায়রন সান্তা ক্রুজ দ্বীপের অন্যতম আকর্ষণীয় প্রাণী। সৈকতের কাছে এদেরকে দেখা যায়।
সান্তা ক্রুজ দ্বীপে একটি বিরল পাখি প্রজাতি হল রেড ফুটেড বুবি। এটা লাল পায়ের জন্য পরিচিত।
এই পেঙ্গুইন পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তপ্ত পরিবেশে বাস করা পেঙ্গুইন প্রজাতি। এটি সান্তা ক্রুজ দ্বীপসহ গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে বাস করে।
সান্তা ক্রুজ দ্বীপের আরেক বিস্ময়কর পাখি হলো হুড মকিংবার্ড। এই পাখির বিশেষত্ব হলো এর অনুকরণক্ষমতা।
এই পাখি প্রজাতি ডারউইন থিওরির জন্য বিখ্যাত। দ্বীপের পরিবেশ ও খাদ্যাভ্যাস অনুযায়ী এদের ঠোঁটের গঠন ও আকারে দেখা যায় বিস্ময়কর বৈচিত্র্য।
গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে বিস্ময়কর পাখিদের মধ্যে একটি হলো গ্যালাপাগোস পানকৌড়ি. এটি পৃথিবীর একমাত্র পানকৌড়ি প্রজাতি যা উড়তে পারে না।
আমার ভ্রমণের সবচেয়ে বড় অ্যাডভেঞ্চার ছিল সিয়েরা নেগ্রো আগ্নেয়গিরিতে আরোহণ। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। লাভা, ছাই আর পাথরের পথ ধরে চূড়ায় উঠতে উঠতে মনে হচ্ছিল, যেন পৃথিবীর গর্ভে প্রবেশ করছি। চূড়ায় পৌঁছে বিশাল জ্বালামুখের সামনে দাঁড়িয়ে মনে হলো, প্রকৃতির সামনে মানুষ কত ছোট, কত তুচ্ছ।
ইসাবেলা দ্বীপের লাভা টিউবের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বিস্মিত হলাম। গরম লাভা ঠান্ডা হয়ে কীভাবে পাথরে পরিণত হয়েছে, তা নিজ চোখে দেখা সত্যিই অভূতপূর্ব। এই লাভার নিচে এখনও গ্যাস ও মিথেনের প্রবাহ রয়েছে। প্রকৃতির এই নিঃশব্দ রসায়ন যেন পৃথিবীর গভীরে লেখা এক গোপন কাহিনি, যা কেবল দেখলেই বিশ্বাস করা যায়।
ফার্নান্ডিনা দ্বীপে হাজার হাজার মেরিন ইগুয়ানার দেখা পেলাম। এগুলো শুধুমাত্র গ্যালাপাগোসেই পাওয়া যায়। শান্ত, নিরীহ স্বভাবের এই প্রাণীগুলোর দেখে মনে হলো, প্রকৃতি কত নিখুঁতভাবে নিজস্ব বাস্তুসংস্থান তৈরি করে রেখেছে।
রাবিদা দ্বীপের লাল বালুর সৈকত আর লাল পাহাড় দেখে মনে হলো, যেন অন্য কোনো গ্রহে চলে এসেছি। প্রশান্ত মহাসাগরের স্বচ্ছ জলে রঙিন মাছেদের খেলা দেখে মুহূর্তটিকে সিনেমার দৃশ্যের মতো লাগছিল।
সান্তিয়াগো দ্বীপের আগ্নেয় শিলার ভাস্কর্যগুলো প্রকৃতির এক নিখুঁত শিল্পকর্ম। প্রশান্ত মহাসাগরের ঢেউ যখন এই পাথরগুলোর উপর আছড়ে পড়ে, তখন এক অপরূপ দৃশ্য তৈরি হয়। প্রকৃতির এই নিপুণতা দেখে অবাক হতে হয়।
গ্যালাপাগোস ছাড়ার সময় মনে হচ্ছিল, এখানকার প্রতিটি মুহূর্ত আমার হৃদয়ে গেঁথে গেছে। এই দ্বীপপুঞ্জ শুধু একটি পর্যটন স্থান নয়, এটি প্রকৃতির এক অনন্য নিদর্শন। যেখানে প্রাণী ও প্রকৃতি একসঙ্গে টিকে আছে।
গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের প্রতিটি দ্বীপ, প্রতিটি প্রাণী, প্রতিটি দৃশ্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। এই ভ্রমণ কেবল একটি যাত্রা নয়, এটি ছিল প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা। পৃথিবী যে এখনও রহস্যে মোড়া, তার আরেকটি প্রমাণ হয়ে থাকল আমার গ্যালাপাগোস ভ্রমণ।
আজ আমাদের সংগীতজগতের ক্ষণজন্মা প্রতিভা হ্যাপী আখান্দের জন্মদিন। হ্যাপীর চলে যাওয়া কেন বাংলা ব্যান্ড ইতিহাসের প্রথম বড় কোনো ধাক্কা? কেমন ছিল মিউজিশিয়ান হ্যাপীর পথচলা?
৩ ঘণ্টা আগেএ বছর সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন হাঙ্গেরির কথাসাহিত্যিক লাজলো ক্রাসনাহোরকাই। তাঁর বিশেষত্ব কোথায়? কেন তাঁর গদ্যের ভেতর ঘোর আর ঘোরের ভেতর গদ্য?
১ দিন আগেগতকাল প্রয়াত হয়েছেন বরেণ্য কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। কেন তিনি অতীতের বর্তমান এবং একই সঙ্গে আগামী দিনের পাঠকের ভবিষ্যতের স্মৃতি হয়ে থাকবেন? লিখেছেন এই সময়ের এক কথাসাহিত্যিক।
১ দিন আগেআজ আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস। বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর ১১ অক্টোবর পালিত হয় এ দিবস। ব্যস্ত ঢাকা শহরে কন্যাশিশুকে লালন-পালন করতে গিয়ে কী কী সমস্যার মুখোমুখি হন মায়েরা? এই লেখক কেন এক কন্যাশিশুর মা হিসেবে নিজেকে ‘অপরাধী’ভাবছেন?
১ দিন আগে