হুমায়ূন শফিক

অস্কারের দৌড়ে থাকা নতুন সিনেমা ‘হ্যামনেট’। উইলিয়াম ও অ্যাগনেস শেক্সপিয়ারের সংসার জীবনকে কল্পনায় তুলে ধরেছে এই সিনেমা। এতে দেখানো হয়েছে সন্তান হারানোর তীব্র বেদনা।
ম্যাগি ও’ফ্যারেলের চমৎকার উপন্যাস ‘হ্যামনেট’ অবলম্বনে তৈরি হয়েছে এই আবেগঘন সিনেমা। গল্পে শেক্সপিয়ারের স্ত্রী অ্যাগনেস একজন ভেষজ চিকিৎসক। ভবিষ্যৎ আঁচ করতে পারেন তিনি। কিন্তু প্লেগ রোগ থেকে নিজের ছেলেকে বাঁচাতে পারেননি। অনেকের ধারণা, ছেলের মৃত্যু বাবাকে পৃথিবীর অন্যতম সেরা নাটক ‘হ্যামলেট’ লিখতে অনুপ্রাণিত করে। তবে ঐতিহাসিকভাবে এর প্রায় কিছুই প্রমাণিত নয়। বই ও পর্দায় ‘হ্যামনেট’ মূলত একটি দুর্দান্ত কল্পনা। সামান্য কিছু তথ্যের ওপর ভিত্তি করে শোকের এক গভীর চিত্র আঁকা হয়েছে। লেখক ও’ফ্যারেল এবং পরিচালক ক্লোই ঝাও আসল ইতিহাস বিকৃত করেছেন বলা যাবে না। কারণ শেক্সপিয়ারের অতীত নিয়ে বহু গবেষণা হলেও কোনো নিশ্চিত ইতিহাস জানা নেই।
শেক্সপিয়ারের পরিবার সম্পর্কে তথ্যের চেয়ে প্রশ্নই বেশি। নথিপত্র বলে, ১৫৮২ সালে ১৮ বছর বয়সী উইলিয়াম ২৬ বছর বয়সী অ্যান হ্যাথাওয়েকে বিয়ে করেন। অ্যান তখন তাঁদের প্রথম সন্তান সুজানাকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন। তিন বছর পর তাঁদের যমজ সন্তান জুডিথ ও হ্যামনেটের জন্ম হয়। সে সময় হ্যামনেট ও হ্যামলেট নাম দুটি একই অর্থে ব্যবহৃত হতো। ১৫৯৬ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে হ্যামনেট মারা যায়। ১১ আগস্ট তাকে সমাহিত করা হয়। তখন শেক্সপিয়ার নাটকের দলের সঙ্গে ভ্রমণে ছিলেন। তাই শেষকৃত্যে তাঁর পক্ষে স্ট্র্যাটফোর্ডে ফেরা প্রায় অসম্ভব ছিল। এর প্রায় চার বছর পর তিনি ‘হ্যামলেট’ নাটকটি লেখেন। বিষয়টিকে আপনি যেভাবে খুশি ব্যাখ্যা করতে পারেন।
কেউ জানে না শেক্সপিয়ার বাধ্য হয়ে অ্যানকে বিয়ে করেছিলেন, নাকি তাঁরা গভীর প্রেমে ছিলেন। হ্যামনেটের মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল তাও অজানা। তবে তখন প্লেগের প্রকোপ ছিল, তাই ওটাই সম্ভাব্য কারণ। সবচেয়ে বড় কথা, অ্যান সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। এমনকি তিনি পড়তে বা লিখতে পারতেন কি না, সেটাও নিশ্চিত নয়। গল্পে তাঁকে দৃঢ় ইচ্ছাশক্তির নারী হিসেবে দেখানো হয়েছে। পর্দায় এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন জেসি বাকলি। শেক্সপিয়ারের (পল মেসকাল) সঙ্গে তাঁর গভীর প্রেমের সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। ‘হ্যামনেট’ আসলে অ্যাগনেসেরই গল্প।
গল্পের মোড় পরিবর্তন
উপন্যাসের শেষে ও’ফ্যারেল স্বীকার করেছেন যে হ্যামনেট ও তাঁর বাবা-মাকে নিয়ে খুব কম তথ্যই আছে। তবে তিনি ষোড়শ শতাব্দীর প্রেক্ষাপট নিয়ে যথেষ্ট গবেষণা করেছেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ইতিহাস ও পণ্ডিতেরা শেক্সপিয়ারের স্ত্রীর প্রতি খুব অবিচার করেছেন। আমরা তাঁকে অ্যান হ্যাথাওয়ে নামেই চিনি। জীবনীকারেরা তাঁকে অশিক্ষিত গ্রাম্য নারী হিসেবে চিত্রিত করেছেন। বলা হয়েছে, তিনি শেক্সপিয়ারকে ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেছিলেন এবং শেক্সপিয়ার তাঁকে ঘৃণা করতেন বলেই লন্ডনে পালিয়ে গিয়েছিলেন।’
এমনকি তাঁর নাম নিয়েও ধোঁয়াশা আছে। তাঁর বাবা ছিলেন একজন সফল কৃষক। উইলে তিনি মেয়েকে ‘অ্যাগনেস’ বলে উল্লেখ করেছেন। ও’ফ্যারেল তাই এই নামটিই বেছে নিয়েছেন। তাঁর যুক্তি, ‘মেয়ের নাম বাবা জানবেন, এটাই স্বাভাবিক।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা প্রতীকী যে এত কিছুর পরেও আমরা তাঁর নামটাও সঠিকভাবে জানি না।’
শেক্সপিয়ারের স্ত্রীকে খলনায়িকা বানানোর বিপক্ষে ও’ফ্যারেলের যুক্তি বেশ জোরালো। অধ্যাপক জো এলড্রিজ কার্নি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ও’ফ্যারেলের এই চিত্রায়ন শতবর্ষের ভুল ধারণার এক প্রতিবাদ। অ্যানকে হয়তো নিপাট গৃহিনী অথবা দুশ্চরিত্রা নারী হিসেবে ভাবা হতো। এই গল্প সেই ধারণা ভেঙে দিয়েছে।’
তাঁর আসল নাম বের করা বেশ জটিল। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও শেক্সপিয়ার গবেষক ডেভিড স্কট কাস্টান বলেন, ‘বাবার উইল ছাড়া বাকি সব দলিলেই তাঁর নাম অ্যান।’ আর কিছুই নিশ্চিত নয়। তিনি বলেন, ‘হয়তো জন্মসূত্রে নাম ছিল অ্যাগনেস, কিন্তু ডাকা হতো অ্যান।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘উপন্যাসে তাঁকে শেক্সপিয়ারের স্ত্রী পরিচয়ের বাইরে স্বতন্ত্র এক সত্তা দেওয়া হয়েছে, যা আমার ভালো লেগেছে।’
একজন আধুনিক নারী
অ্যাগনেসের চরিত্রটি সাজাতে ও’ফ্যারেল শেক্সপিয়ারের নাটকগুলোর সাহায্য নিয়েছেন। তিনি নাটকগুলো নতুন করে পড়েছেন। তিনি হ্যামলেট নাটকের মধ্যে হ্যামনেটকে খুঁজে পেয়েছেন। তাঁর মনে হয়েছে, সেখানে নিশ্চয়ই শিশুটির মা-ও উপস্থিত আছেন।
নাটকে ভবিষ্যৎ বাণীর অনেক উদাহরণ আছে, যেমন ‘জুলিয়াস সিজার’-এ। আবার কাল্পনিক অ্যাগনেসের ভেষজ জ্ঞানের ছাপও নাটকে পাওয়া যায়। বিশেষ করে ‘হ্যামলেট’-এ ওফেলিয়ার সংলাপ ও ফুল বিতরণের দৃশ্যে এর মিল পাওয়া যায়।
ও’ফ্যারেল বলেন, ‘সে সময় প্রতিটি বাড়িতেই ওষুধি বাগান থাকত। রোগ নিরাময় ও ওষুধ তৈরির দায়িত্ব ছিল বাড়ির নারীদের ওপর। পুরুষেরা এসব বিষয়ে খুব একটা জানতেন না।’ তাঁর ধারণা, ভেষজ সম্পর্কিত লেখার সময় শেক্সপিয়ার সম্ভবত তাঁর স্ত্রীর জ্ঞানের ওপর নির্ভর করতেন।
অ্যাগনেসকে শেক্সপিয়ারের সমান অংশীদার হিসেবে দেখানোটা হয়তো আমাদের এক ধরনের ফ্যান্টাসি। বাকলি অভিনীত অ্যাগনেস চরিত্রটি অসাধারণ। সিনেমায় তাঁকে ‘বনের ডাইনির সন্তান’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। তিনি বুদ্ধিমতী ও স্পষ্টবাদী। তিনি বুঝতে পারেন যে স্বামীকে শিল্পচর্চার জন্য লন্ডনে যেতেই হবে। একজন জিনিয়াস বা প্রতিভাবান ব্যক্তি এমন নারীর প্রেমেই পড়বেন, এটা সহজেই বোঝা যায়।
তবে অ্যাগনেসের এই রূপায়ণ কেবল কল্পনাপ্রসূত নয়। কার্নি বলেন, ‘ও’ফ্যারেলের অ্যানকে আধুনিক নারীবাদী মনে হতে পারে। তবে সেই যুগের অনেক নারীর জীবনের সঙ্গে এর মিল রয়েছে।’ তিনি জানান, তখনকার নারীরা ছোটখাটো ব্যবসা যেমন—বুনন, ভেষজ চিকিৎসা বা ব্যবসার কাজ চালাতেন। তবে তাঁদের স্বাক্ষরজ্ঞান ছিল কি না, তা নির্ণয় করা কঠিন।
শেক্সপিয়ারের স্ত্রী পড়তে জানতেন কি না, তা আজও অজানা। গল্পের অ্যাগনেস পড়তে জানেন। তবে ও’ফ্যারেল মনে করেন, বাস্তবের অ্যাগনেস সম্ভবত নিরক্ষর ছিলেন। তিনি বলেন, ‘সে সময় ভেড়া পালনকারীর মেয়েকে পড়ালেখা শেখানোটা অর্থহীন মনে করা হতো।’
হ্যামলেট-হ্যামনেট সংযোগ
শেক্সপিয়ার যখন দীর্ঘ সময়ের জন্য লন্ডনে থাকতেন, তখন পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ত—এটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য। কিন্তু হ্যামনেটের মৃত্যু এবং পরবর্তী শোকের বিষয়টি কেবলই অনুমানের ওপর নির্ভরশীল।
শেক্সপিয়ার গবেষক স্টিফেন গ্রিনব্লাটের মতে, ছেলের মৃত্যুর সঙ্গে ‘হ্যামলেট’ নাটকের সরাসরি যোগসূত্র আছে। ও’ফ্যারেলও তা বিশ্বাস করেন। সিনেমায় দেখানো হয়েছে, অ্যাগনেস লন্ডনে নাটকটি দেখতে যান। সেখানে ‘হ্যামলেট’ চরিত্রে অভিনয় করা ছেলেটির সাজসজ্জা হুবহু মৃত হ্যামনেটের মতো। বাস্তব জীবনে দুই ভাই জ্যাকোবি জুপ (হ্যামনেট) এবং নোয়া জুপ (হ্যামলেট অভিনেতা) এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ফলে তাদের চেহারার মিল স্পষ্ট। এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী, নাটকে হ্যামলেটের বাবার ভূতের চরিত্রে অভিনয় করে শেক্সপিয়ার মূলত মঞ্চেই তাঁর মৃত ছেলেকে বিদায় জানিয়েছেন।
হ্যামনেটের মৃত্যু ও নাটকের সংযোগ সম্পর্কে কাস্টান বলেন, ‘এর প্রভাব নিশ্চয়ই ছিল, কিন্তু ঠিক কী ছিল তা আমরা জানি না। ছেলের মৃত্যুর সঙ্গে হ্যামলেট নাটকের সম্পর্ক খোঁজাটা খুবই স্বাভাবিক। হ্যামনেটের মৃত্যু পরিবারের জন্য ছিল এক বিশাল আঘাত।’ ছেলের মৃত্যুর কয়েক বছর পর শেক্সপিয়ার ‘হ্যামলেট’ লেখেন। প্রচলিত আছে যে, তিনি নিজেই নাটকে ভূতের চরিত্রে অভিনয় করতেন। তবে যতই আকর্ষণীয় হোক না কেন, ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে শিল্পের এই সংযোগ শুধুই অনুমান।
শেক্সপিয়ার তাঁর স্ত্রী বা পরিবার সম্পর্কে কী ভাবতেন, তার কোনো লিখিত প্রমাণ নেই। এমনকি একটি চিঠির টুকরোও পাওয়া যায়নি। তবে ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাথু স্টেগল একটি নতুন গবেষণার কথা জানিয়েছেন। তিনি লন্ডনে ‘মিসেস শেক্সপিয়ার’ নামে একটি চিঠির সন্ধান পেয়েছেন। যদি এটি অ্যানের জন্য হয়ে থাকে, তবে বোঝা যাবে ১৬০০ থেকে ১৬১০ সালের মধ্যে তিনি স্বামীর সঙ্গে লন্ডনে ছিলেন। এটি তাঁর স্বাক্ষরজ্ঞানেরও প্রমাণ হতে পারে। তবে স্টেগল নিজেই বলেছেন, ‘এটি একটি সম্ভাবনা মাত্র, কোনো নিশ্চিত প্রমাণ নয়।’
কোনো গবেষণার চেয়ে এই জনপ্রিয় সিনেমাটিই হয়তো শেক্সপিয়ারের স্ত্রী সম্পর্কে মানুষের ধারণা বদলে দেবে। সবাই তাঁকে ‘অ্যাগনেস’ হিসেবেই চিনবে। ও’ফ্যারেল বলেন, ‘এটা সত্যি হলে খুবই ভালো হবে।’ তবে তিনি এও বলেন, ‘হয়তো এটি সাময়িক। হয়তো ভবিষ্যতে নতুন কোনো তথ্য আসবে এবং আমাদের ধারণা আবার বদলাতে হবে।’ সবশেষে তিনি সেই চিরন্তন প্রশ্নটিই রেখেছেন: ‘কে জানে?’
সূত্র: বিবিসি

অস্কারের দৌড়ে থাকা নতুন সিনেমা ‘হ্যামনেট’। উইলিয়াম ও অ্যাগনেস শেক্সপিয়ারের সংসার জীবনকে কল্পনায় তুলে ধরেছে এই সিনেমা। এতে দেখানো হয়েছে সন্তান হারানোর তীব্র বেদনা।
ম্যাগি ও’ফ্যারেলের চমৎকার উপন্যাস ‘হ্যামনেট’ অবলম্বনে তৈরি হয়েছে এই আবেগঘন সিনেমা। গল্পে শেক্সপিয়ারের স্ত্রী অ্যাগনেস একজন ভেষজ চিকিৎসক। ভবিষ্যৎ আঁচ করতে পারেন তিনি। কিন্তু প্লেগ রোগ থেকে নিজের ছেলেকে বাঁচাতে পারেননি। অনেকের ধারণা, ছেলের মৃত্যু বাবাকে পৃথিবীর অন্যতম সেরা নাটক ‘হ্যামলেট’ লিখতে অনুপ্রাণিত করে। তবে ঐতিহাসিকভাবে এর প্রায় কিছুই প্রমাণিত নয়। বই ও পর্দায় ‘হ্যামনেট’ মূলত একটি দুর্দান্ত কল্পনা। সামান্য কিছু তথ্যের ওপর ভিত্তি করে শোকের এক গভীর চিত্র আঁকা হয়েছে। লেখক ও’ফ্যারেল এবং পরিচালক ক্লোই ঝাও আসল ইতিহাস বিকৃত করেছেন বলা যাবে না। কারণ শেক্সপিয়ারের অতীত নিয়ে বহু গবেষণা হলেও কোনো নিশ্চিত ইতিহাস জানা নেই।
শেক্সপিয়ারের পরিবার সম্পর্কে তথ্যের চেয়ে প্রশ্নই বেশি। নথিপত্র বলে, ১৫৮২ সালে ১৮ বছর বয়সী উইলিয়াম ২৬ বছর বয়সী অ্যান হ্যাথাওয়েকে বিয়ে করেন। অ্যান তখন তাঁদের প্রথম সন্তান সুজানাকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন। তিন বছর পর তাঁদের যমজ সন্তান জুডিথ ও হ্যামনেটের জন্ম হয়। সে সময় হ্যামনেট ও হ্যামলেট নাম দুটি একই অর্থে ব্যবহৃত হতো। ১৫৯৬ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে হ্যামনেট মারা যায়। ১১ আগস্ট তাকে সমাহিত করা হয়। তখন শেক্সপিয়ার নাটকের দলের সঙ্গে ভ্রমণে ছিলেন। তাই শেষকৃত্যে তাঁর পক্ষে স্ট্র্যাটফোর্ডে ফেরা প্রায় অসম্ভব ছিল। এর প্রায় চার বছর পর তিনি ‘হ্যামলেট’ নাটকটি লেখেন। বিষয়টিকে আপনি যেভাবে খুশি ব্যাখ্যা করতে পারেন।
কেউ জানে না শেক্সপিয়ার বাধ্য হয়ে অ্যানকে বিয়ে করেছিলেন, নাকি তাঁরা গভীর প্রেমে ছিলেন। হ্যামনেটের মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল তাও অজানা। তবে তখন প্লেগের প্রকোপ ছিল, তাই ওটাই সম্ভাব্য কারণ। সবচেয়ে বড় কথা, অ্যান সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। এমনকি তিনি পড়তে বা লিখতে পারতেন কি না, সেটাও নিশ্চিত নয়। গল্পে তাঁকে দৃঢ় ইচ্ছাশক্তির নারী হিসেবে দেখানো হয়েছে। পর্দায় এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন জেসি বাকলি। শেক্সপিয়ারের (পল মেসকাল) সঙ্গে তাঁর গভীর প্রেমের সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। ‘হ্যামনেট’ আসলে অ্যাগনেসেরই গল্প।
গল্পের মোড় পরিবর্তন
উপন্যাসের শেষে ও’ফ্যারেল স্বীকার করেছেন যে হ্যামনেট ও তাঁর বাবা-মাকে নিয়ে খুব কম তথ্যই আছে। তবে তিনি ষোড়শ শতাব্দীর প্রেক্ষাপট নিয়ে যথেষ্ট গবেষণা করেছেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ইতিহাস ও পণ্ডিতেরা শেক্সপিয়ারের স্ত্রীর প্রতি খুব অবিচার করেছেন। আমরা তাঁকে অ্যান হ্যাথাওয়ে নামেই চিনি। জীবনীকারেরা তাঁকে অশিক্ষিত গ্রাম্য নারী হিসেবে চিত্রিত করেছেন। বলা হয়েছে, তিনি শেক্সপিয়ারকে ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেছিলেন এবং শেক্সপিয়ার তাঁকে ঘৃণা করতেন বলেই লন্ডনে পালিয়ে গিয়েছিলেন।’
এমনকি তাঁর নাম নিয়েও ধোঁয়াশা আছে। তাঁর বাবা ছিলেন একজন সফল কৃষক। উইলে তিনি মেয়েকে ‘অ্যাগনেস’ বলে উল্লেখ করেছেন। ও’ফ্যারেল তাই এই নামটিই বেছে নিয়েছেন। তাঁর যুক্তি, ‘মেয়ের নাম বাবা জানবেন, এটাই স্বাভাবিক।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা প্রতীকী যে এত কিছুর পরেও আমরা তাঁর নামটাও সঠিকভাবে জানি না।’
শেক্সপিয়ারের স্ত্রীকে খলনায়িকা বানানোর বিপক্ষে ও’ফ্যারেলের যুক্তি বেশ জোরালো। অধ্যাপক জো এলড্রিজ কার্নি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ও’ফ্যারেলের এই চিত্রায়ন শতবর্ষের ভুল ধারণার এক প্রতিবাদ। অ্যানকে হয়তো নিপাট গৃহিনী অথবা দুশ্চরিত্রা নারী হিসেবে ভাবা হতো। এই গল্প সেই ধারণা ভেঙে দিয়েছে।’
তাঁর আসল নাম বের করা বেশ জটিল। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও শেক্সপিয়ার গবেষক ডেভিড স্কট কাস্টান বলেন, ‘বাবার উইল ছাড়া বাকি সব দলিলেই তাঁর নাম অ্যান।’ আর কিছুই নিশ্চিত নয়। তিনি বলেন, ‘হয়তো জন্মসূত্রে নাম ছিল অ্যাগনেস, কিন্তু ডাকা হতো অ্যান।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘উপন্যাসে তাঁকে শেক্সপিয়ারের স্ত্রী পরিচয়ের বাইরে স্বতন্ত্র এক সত্তা দেওয়া হয়েছে, যা আমার ভালো লেগেছে।’
একজন আধুনিক নারী
অ্যাগনেসের চরিত্রটি সাজাতে ও’ফ্যারেল শেক্সপিয়ারের নাটকগুলোর সাহায্য নিয়েছেন। তিনি নাটকগুলো নতুন করে পড়েছেন। তিনি হ্যামলেট নাটকের মধ্যে হ্যামনেটকে খুঁজে পেয়েছেন। তাঁর মনে হয়েছে, সেখানে নিশ্চয়ই শিশুটির মা-ও উপস্থিত আছেন।
নাটকে ভবিষ্যৎ বাণীর অনেক উদাহরণ আছে, যেমন ‘জুলিয়াস সিজার’-এ। আবার কাল্পনিক অ্যাগনেসের ভেষজ জ্ঞানের ছাপও নাটকে পাওয়া যায়। বিশেষ করে ‘হ্যামলেট’-এ ওফেলিয়ার সংলাপ ও ফুল বিতরণের দৃশ্যে এর মিল পাওয়া যায়।
ও’ফ্যারেল বলেন, ‘সে সময় প্রতিটি বাড়িতেই ওষুধি বাগান থাকত। রোগ নিরাময় ও ওষুধ তৈরির দায়িত্ব ছিল বাড়ির নারীদের ওপর। পুরুষেরা এসব বিষয়ে খুব একটা জানতেন না।’ তাঁর ধারণা, ভেষজ সম্পর্কিত লেখার সময় শেক্সপিয়ার সম্ভবত তাঁর স্ত্রীর জ্ঞানের ওপর নির্ভর করতেন।
অ্যাগনেসকে শেক্সপিয়ারের সমান অংশীদার হিসেবে দেখানোটা হয়তো আমাদের এক ধরনের ফ্যান্টাসি। বাকলি অভিনীত অ্যাগনেস চরিত্রটি অসাধারণ। সিনেমায় তাঁকে ‘বনের ডাইনির সন্তান’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। তিনি বুদ্ধিমতী ও স্পষ্টবাদী। তিনি বুঝতে পারেন যে স্বামীকে শিল্পচর্চার জন্য লন্ডনে যেতেই হবে। একজন জিনিয়াস বা প্রতিভাবান ব্যক্তি এমন নারীর প্রেমেই পড়বেন, এটা সহজেই বোঝা যায়।
তবে অ্যাগনেসের এই রূপায়ণ কেবল কল্পনাপ্রসূত নয়। কার্নি বলেন, ‘ও’ফ্যারেলের অ্যানকে আধুনিক নারীবাদী মনে হতে পারে। তবে সেই যুগের অনেক নারীর জীবনের সঙ্গে এর মিল রয়েছে।’ তিনি জানান, তখনকার নারীরা ছোটখাটো ব্যবসা যেমন—বুনন, ভেষজ চিকিৎসা বা ব্যবসার কাজ চালাতেন। তবে তাঁদের স্বাক্ষরজ্ঞান ছিল কি না, তা নির্ণয় করা কঠিন।
শেক্সপিয়ারের স্ত্রী পড়তে জানতেন কি না, তা আজও অজানা। গল্পের অ্যাগনেস পড়তে জানেন। তবে ও’ফ্যারেল মনে করেন, বাস্তবের অ্যাগনেস সম্ভবত নিরক্ষর ছিলেন। তিনি বলেন, ‘সে সময় ভেড়া পালনকারীর মেয়েকে পড়ালেখা শেখানোটা অর্থহীন মনে করা হতো।’
হ্যামলেট-হ্যামনেট সংযোগ
শেক্সপিয়ার যখন দীর্ঘ সময়ের জন্য লন্ডনে থাকতেন, তখন পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ত—এটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য। কিন্তু হ্যামনেটের মৃত্যু এবং পরবর্তী শোকের বিষয়টি কেবলই অনুমানের ওপর নির্ভরশীল।
শেক্সপিয়ার গবেষক স্টিফেন গ্রিনব্লাটের মতে, ছেলের মৃত্যুর সঙ্গে ‘হ্যামলেট’ নাটকের সরাসরি যোগসূত্র আছে। ও’ফ্যারেলও তা বিশ্বাস করেন। সিনেমায় দেখানো হয়েছে, অ্যাগনেস লন্ডনে নাটকটি দেখতে যান। সেখানে ‘হ্যামলেট’ চরিত্রে অভিনয় করা ছেলেটির সাজসজ্জা হুবহু মৃত হ্যামনেটের মতো। বাস্তব জীবনে দুই ভাই জ্যাকোবি জুপ (হ্যামনেট) এবং নোয়া জুপ (হ্যামলেট অভিনেতা) এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ফলে তাদের চেহারার মিল স্পষ্ট। এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী, নাটকে হ্যামলেটের বাবার ভূতের চরিত্রে অভিনয় করে শেক্সপিয়ার মূলত মঞ্চেই তাঁর মৃত ছেলেকে বিদায় জানিয়েছেন।
হ্যামনেটের মৃত্যু ও নাটকের সংযোগ সম্পর্কে কাস্টান বলেন, ‘এর প্রভাব নিশ্চয়ই ছিল, কিন্তু ঠিক কী ছিল তা আমরা জানি না। ছেলের মৃত্যুর সঙ্গে হ্যামলেট নাটকের সম্পর্ক খোঁজাটা খুবই স্বাভাবিক। হ্যামনেটের মৃত্যু পরিবারের জন্য ছিল এক বিশাল আঘাত।’ ছেলের মৃত্যুর কয়েক বছর পর শেক্সপিয়ার ‘হ্যামলেট’ লেখেন। প্রচলিত আছে যে, তিনি নিজেই নাটকে ভূতের চরিত্রে অভিনয় করতেন। তবে যতই আকর্ষণীয় হোক না কেন, ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে শিল্পের এই সংযোগ শুধুই অনুমান।
শেক্সপিয়ার তাঁর স্ত্রী বা পরিবার সম্পর্কে কী ভাবতেন, তার কোনো লিখিত প্রমাণ নেই। এমনকি একটি চিঠির টুকরোও পাওয়া যায়নি। তবে ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাথু স্টেগল একটি নতুন গবেষণার কথা জানিয়েছেন। তিনি লন্ডনে ‘মিসেস শেক্সপিয়ার’ নামে একটি চিঠির সন্ধান পেয়েছেন। যদি এটি অ্যানের জন্য হয়ে থাকে, তবে বোঝা যাবে ১৬০০ থেকে ১৬১০ সালের মধ্যে তিনি স্বামীর সঙ্গে লন্ডনে ছিলেন। এটি তাঁর স্বাক্ষরজ্ঞানেরও প্রমাণ হতে পারে। তবে স্টেগল নিজেই বলেছেন, ‘এটি একটি সম্ভাবনা মাত্র, কোনো নিশ্চিত প্রমাণ নয়।’
কোনো গবেষণার চেয়ে এই জনপ্রিয় সিনেমাটিই হয়তো শেক্সপিয়ারের স্ত্রী সম্পর্কে মানুষের ধারণা বদলে দেবে। সবাই তাঁকে ‘অ্যাগনেস’ হিসেবেই চিনবে। ও’ফ্যারেল বলেন, ‘এটা সত্যি হলে খুবই ভালো হবে।’ তবে তিনি এও বলেন, ‘হয়তো এটি সাময়িক। হয়তো ভবিষ্যতে নতুন কোনো তথ্য আসবে এবং আমাদের ধারণা আবার বদলাতে হবে।’ সবশেষে তিনি সেই চিরন্তন প্রশ্নটিই রেখেছেন: ‘কে জানে?’
সূত্র: বিবিসি

বাংলা গদ্যরীতির শুরু হয়েছিল তিনটি পৃথক ছাঁচ ধরে; যথাক্রমে জনবুলি অসংস্কৃত ছাঁচে উইলিয়াম কেরির ‘কথোপকথন’, আরবি-ফারসিমিশ্রিত ছাঁচে রাম রাম বসুর ‘প্রতাপাদিত্য চরিত্র’ এবং সংস্কৃত ব্যাকরণে তৎসম শব্দবহুল ছাঁচে মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারের ‘বত্রিশ সিংহাসনে’র মাধ্যমে।
১৬ ঘণ্টা আগে
ভোজনরসিক বাঙালির খাদ্যাভ্যাসে পিঠার প্রচলন বহু পুরোনো। বিভিন্ন মুখরোচক আর বাহারি স্বাদের পিঠার প্রচলন ছিল আদিকাল থেকেই। এর সন্ধান পাওয়া যায় ১০০ বছরের পুরোনো রেসিপি বইতেও। এমন তিনটি বাহারি পিঠার রেসিপি ‘মিষ্টান্ন-পাক’ বই থেকে তুলে ধরা হলো স্ট্রিমের পাঠকদের জন্য।
১ দিন আগে
‘পিঠা’ শব্দটি শোনা মাত্রই চোখে ভেসে ওঠে শীতের সকালের কুয়াশা, আগুন জ্বলা চুলা, গরম–গরম ভাপা পিঠা, গুড় আর খেজুর রসের ঘ্রাণ। কিন্তু ‘পিঠা’ শব্দটি এসেছে কোথা থেকে এবং কীভাবে বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে পিঠা এত গভীরভাবে মিশে গেছে, তা কি জানেন?
১ দিন আগে
আমাদের দেশে বছরজুড়েই নানা উপলক্ষে পিঠা বানানো হয়। তবে শীতকালে পিঠার বৈচিত্র্য চোখে পড়ে সবচেয়ে বেশি। কারণটা লুকিয়ে আছে ঐতিহ্যের ভেতর। শীতের ঠিক আগে আগেই শুরু হয় হেমন্তের নবান্ন উৎসব। কৃষকের গোলাঘর ভরে ওঠে সোনালী ধানে। সেই আমন ধান থেকে আসে নতুন চাল।
২ দিন আগে