leadT1ad

‘পিঠা’ শব্দটি কোথা থেকে এল

তামান্না আনজুম
তামান্না আনজুম

প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ০১
স্ট্রিম গ্রাফিক

বাংলার ঋতুবৈচিত্রের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে নানা বৈচিত্রের পিঠা। ‘পিঠা’ শব্দটি শোনা মাত্রই চোখে ভেসে ওঠে শীতের সকালের কুয়াশা, আগুন জ্বলা চুলা, গরম–গরম ভাপা পিঠা, গুড় আর খেজুর রসের ঘ্রাণ। কিন্তু ‘পিঠা’ শব্দটি এসেছে কোথা থেকে এবং কীভাবে বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে পিঠা এত গভীরভাবে মিশে গেছে, তা কি জানেন?

অনেক ভাষাবিজ্ঞানীর মতে, পিঠা শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে প্রাচীন সংস্কৃত শব্দ ‘পিষ্টক’ থেকে। এর অর্থ ‘পিষে ফেলা, মাড়ানো, চূর্ণিত’— অর্থাৎ, শস্য বা দানা–মূলকে মাড়িয়ে গুঁড়া বা চাল তৈরি করার কাজ। সেই চাল বা গুঁড়া দিয়ে তৈরি মিষ্টান্নকে বলা হতো পিষ্টক। পরে, সময়ের পরিক্রমায়, স্থান ও উচ্চারণ বদলায়। স্থানীয় ভাষা ও উপভাষায় তা হয়ে ওঠে ‘পিঠা’, ‘পিঠে’ বা ‘পিঠি’।

পিঠার পেছনে রয়েছে কৃষি-সংস্কৃতি

কৃষিপ্রধান এই বঙ্গীয় ব-দ্বীপে ধান চাষ, নতুন ধানের ফলন, গুঁড়া চাল—সবই ছিল সাধারণ বিষয়। গ্রামীণ বা কৃষিজীবী সমাজে যখন ফসল তোলা হয়, ধান ভানা শেষ হয়, তখন নতুন চালের গুঁড়া দিয়ে শুরু হয় পিঠার উৎসব। যেমন পাটিসাপটা পিঠা তৈরি হয় চালের গুঁড়া, নারকেল, গুড় বা দুধ দিয়ে। ভাপা, চিতই, নকশিপিঠা, পুলি পিঠা—এসবেরও প্রধান উপাদান চালের গুঁড়া।

নকশি পিঠা শুধু স্বাদ নয়, এক ধরনের শিল্প। চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি এই পিঠার ওপর হাতের তৈরি বা মোল্ড-করা নকশা, পুঁতির নকশা, পাতার নকশা থাকে। এই নকশিপিঠা সাধারণত উৎসব, আমন্ত্রণ বা পিঠা মেলায় দেওয়া হয়।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে পিঠা

আজকের বাংলাদেশে পিঠা তৈরি আর আগের মতো নিয়মিত বা সহজ নয়। গুঁড়া চাল মাড়ানো, চুলায় পিঠা ভাপানো, গুড় তৈরি—এত ঝামেলা করার সময় কম। তাই অনেকেই এখন বাজারজাত খাবার বা প্যাকেট স্ন্যাকস পছন্দ করেন।

তবে যারা পিঠা করেন বা পিঠা খেতে ভালোবাসেন, তারা পিঠা কেবল খাবার নয়, স্মৃতি, ঐতিহ্য, ধারাবাহিকতা, গন্ধ, উষ্ণতা, সংস্কৃতি—সব একসঙ্গে অনুভব করেন। পিঠা মেলা, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে পিঠা খাওয়া, পরিবারে পিঠা আয়োজন—এসব বাঙালির জীবনেরই অংশ।

প্রাচীন বা মধ্যযুগীয় বাংলা ভাষার সাহিত্য ও মঙ্গলকাব্যেও পিঠা-পুলির উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন চৈতন্য মঙ্গল গ্রন্থে একটি লাইনে বলা হয়েছে—‘পিঠা পানা ভোজনে বৈষ্ণবে সন্তোসিলা …’।

এ ছাড়া মনসামঙ্গল কাব্যেও বলা হয়েছে—‘খিড় খিড়িয়া রন্ধ্রে দুগ্ধের পঞ্চপিঠা, গুড় চিনি দিয়া রান্ধ্রে খাইচে লাগে মিঠা।’

এই ধরনের উল্লেখ নির্দেশ করে যে, পিঠা বহু শতাব্দী আগে থেকে বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতিতে গেঁথে গেছে। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তার বঙ্গীয় শব্দকোষে লিখেছেন, পিঠা হলো চালের গুঁড়া, ডাল বাটা, গুড় ও নারিকেলের মিশ্রণে তৈরি একটি মিষ্টান্ন। বাংলাদেশে প্রধান খাদ্যশস্য ধান, যা থেকে চাল তৈরি হয়ে পিঠার মূল উপাদান হয়ে ওঠে। আনুমানিক পাঁচশ বছর আগে থেকেই বাঙালি খাদ্য সংস্কৃতিতে পিঠার ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল এবং এটি একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে পরিচিত।

Ad 300x250

সম্পর্কিত