আজ ১১ সেপ্টেম্বর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিশালী গল্পকার শহীদুল জহিরের জন্মদিন। পূর্ণিমা রাতে শহীদুল জহিরকে মিস করা ছাড়া আপনার উপায় নাই। লক্ষ্মীবাজারে কিংবা দক্ষিণ মৈশুন্ডিতে এখনও ডুমুরখেকো কিছু মানুষ আপনারই মতো থাকে অনন্ত অপেক্ষায়।
আল মাহফুজ
‘আব্বাস আলী তার নাম বললে ছয়জন রাজাকার মুখ ভেঙ্গিয়ে বলেছিল যে, তার নাম আব্বাস আলী নয়, গাবগাছ আলী।’
এইটা ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’ বইয়ের একটা লাইন। শহীদুল জহির এইভাবে সিরিয়াস মুহূর্তে আমোদ মাখাইয়া আপন গদ্য ভঙ্গিমায় নিজেরে জাহির করেন। তাঁর গল্পে বেড়াল আর বেড়াল থাকে না, হয়ে যায় ‘বিলাই’। ইঁদুরকে বলেন ‘ইন্দুর’। এমনি কইরাই তিনি আমাদের সামনে দাঁড় করান, তাঁর ‘ইন্দুর বিলাই খেলা’, ‘কাঠুরে ও দাঁড়কাক’ ইত্যাদি গল্প।
বাংলাদেশের সাহিত্যের প্রেক্ষাপটে ‘সেরা দশ’ গল্প বাছাই করা হইলে তালিকাটা কেমন হইতে পারে? মোটাদাগে বলা যায়, সেইটা ‘কনস্ট্যান্ট’ কিছু হবে না। একেকজনের ভালোলাগা বা প্রিয়তার সংজ্ঞা একেকরকম। তাই লিস্টটা হবে সাবজেক্টিভ; অব্জেক্টিভ না। তালিকাটা যদি আমি করি, সেইখানে শহিদুল জহিরের ‘কাঁটা’ গল্পটা অবশ্যই থাকবে। ‘ইন্দুর বিলাই খেলা’ বা ‘চতুর্থ মাত্রা’কেও সেইখানে রাখা যাইতে পারে। অথবা ‘আগারগাঁও কলোনিতে নয়নতারা ফুল কেন নেই’ গল্পটারেও কি কইরা অগ্রাহ্য করি?
শহীদুল জহিরের ন্যারেটিভ অন্তর্মাত্রা আর বহির্মাত্রাকে একাকার অবস্থায় নিয়া যায়। পড়তে গেলে পাঠককে একটু শ্রম দিতে হয়। এই যে একটু চিন্তা করা বা মনঃসংযোগ ধইরা রাইখা নিজেরে হাওয়ার মতো ভাসানো; এই যে একটু সামনে আগানো, আবার পিছায়া যাওয়া; এই যে বাস্তব আর স্বপ্নের মধ্যে বারবার ঘুরপাক খাওয়া; এই যে আপাত অপ্রাসঙ্গিক জিনিস বইলা জহিরের গল্পরে সেইভাবে গুরুত্ব না দেওয়া, আবার পরক্ষণেই তাঁর ন্যারেটিভের জাদুর জালে আটকা পড়া—এই কারণেই শহীদুল জহির অনন্য। এই কারণেই তাঁর লেখা আপনারে মুগ্ধ করে।
শহীদুল জহির ম্যাজিক রিয়ালিজমের ওপর ভর কইরা লেখেন। সেই স্ট্রাকচারের ভেতর ঢুকলে পাঠক এক আনন্দময় ঘোরে হাঁটতে থাকে। জহিরের লেখায় মুহুর্মূহু অনিশ্চয়তা ও রহস্যময়তার খেলা থাকে, যা পাঠকের কাছে ক্রমশ উপভোগ্য মনে হয়। বারবার সমষ্টির অভিজ্ঞতা বা ঘটনা চক্রাবর্তের মতো ক্ষণেক্ষণে তাঁর বয়ান ভঙিমায় উইঠা আসে। আবার অনেকের কাছে এও মনে হইতেও পারে–অধিক পুনরাবৃত্তি গল্পের স্বাদ নষ্ট কইরা দেয়।
শহীদুল জহিরের গল্প দোলনার মতো। দুলতে দুলতে একসময় আবিষ্কার হয়, ভাবনার স্ফুরণও তো প্রকাশিত হইলো! ‘কাঁটা’ তেমনই এক গল্প। এইখানে অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যতের গোলকধাঁধায় উইঠা আসে বাংলাদেশের ‘সংখ্যালঘু’ সম্প্রদায়ের ওপর সংখ্যাগুরুদের নির্যাতন। ‘কাঁটা’ মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলাতে ভূতের গলির মহল্লার লোকজনদের কথা তুইলা ধরে। তুইলা ধরে আক্রান্ত কওমের কুয়ার জলে বলি দেওয়ার নামতাও। গল্পটার প্রকৃত নাম কি তাইলে ‘মনোজগতের কাঁটা’ বলা যায়?
অথবা ধরা যাক, শহীদুল জহিরের ‘আমাদের কুটির শিল্পের ইতিহাস’ গল্পের কথা। লেখায় কোনো প্যারাগ্রাফ নাই, বিরাম চিহ্ন নাই। বিরাট বর্ণনা অথচ কোনো দাঁড়িকমা নাই। বাক্যের পর বাক্য কেবল দ্বিধা আর কুণ্ঠার অবগুণ্ঠন। ভাবা যায়! হ্যা, লেখক তাই ভাবসিলেন। এই কারণেই প্রথাবিরোধী গল্প বলার ‘শহীদুল জহিরীয়’ স্টাইল তৈরি করতে পারসিলেন। শহীদুল পড়া শুরু করলে আদতেই এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হইতে হয়।
এখন কথা হইতেছে, কোনো পাঠক যদি শুধু প্রথাগত ‘গল্প’ পড়তে চায়, সেখানে বর্ণনা কিংবা ন্যারেটিভের অভিনবত্ব খুঁজতে না চায়, সেইটা তো তাঁর স্বাধীনতা। কিন্তু এইটাও মনে রাখতে হবে, আধুনিক কিংবা উত্তরাধুনিক পাঠক হইতে গেলে আপনার সব রসের স্বাদ আস্বাদন করা জরুরি।
সে যাই হোক, আপনি একদিন ভুল কইরা নারিন্দার ভূতের গলিতে চইলা যান কিংবা ডলু নদীর তীরে। আপনি সেইখানে সঙ্গমরত প্রেমিকের পিঠের মতো একটা বাঁকা সাঁকোর সন্ধান পাবেন। সাঁকোর তলে টলটলে জলের ফেনায় আপনি পা ভেজাবেন অথবা ভেজাবেন না। ফেনা আইসা আপনার পায়ে পাটের দড়ির মতো গড়াগড়ি খাবে অথবা স্থির থাকবে অথবা এর কোনোটাই ঘটবে না।
আপনি আছেন বিরামবিহীন শহীদুল জহিরে। আজ ১১ সেপ্টেম্বর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিশালী এই গল্পকারের জন্মদিন। পূর্ণিমা রাতে শহীদুল জহিরকে মিস করা ছাড়া আপনার উপায় নাই। লক্ষ্মীবাজারে কিংবা দক্ষিণ মৈশুন্ডিতে এখনও ডুমুরখেকো কিছু মানুষ আপনারই মতো থাকে অনন্ত অপেক্ষায়।
(লেখার ধরনটা ইচ্ছাকৃত। শহীদুল জহিরের ভাষার মতো করেই করা হয়েছে)
‘আব্বাস আলী তার নাম বললে ছয়জন রাজাকার মুখ ভেঙ্গিয়ে বলেছিল যে, তার নাম আব্বাস আলী নয়, গাবগাছ আলী।’
এইটা ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’ বইয়ের একটা লাইন। শহীদুল জহির এইভাবে সিরিয়াস মুহূর্তে আমোদ মাখাইয়া আপন গদ্য ভঙ্গিমায় নিজেরে জাহির করেন। তাঁর গল্পে বেড়াল আর বেড়াল থাকে না, হয়ে যায় ‘বিলাই’। ইঁদুরকে বলেন ‘ইন্দুর’। এমনি কইরাই তিনি আমাদের সামনে দাঁড় করান, তাঁর ‘ইন্দুর বিলাই খেলা’, ‘কাঠুরে ও দাঁড়কাক’ ইত্যাদি গল্প।
বাংলাদেশের সাহিত্যের প্রেক্ষাপটে ‘সেরা দশ’ গল্প বাছাই করা হইলে তালিকাটা কেমন হইতে পারে? মোটাদাগে বলা যায়, সেইটা ‘কনস্ট্যান্ট’ কিছু হবে না। একেকজনের ভালোলাগা বা প্রিয়তার সংজ্ঞা একেকরকম। তাই লিস্টটা হবে সাবজেক্টিভ; অব্জেক্টিভ না। তালিকাটা যদি আমি করি, সেইখানে শহিদুল জহিরের ‘কাঁটা’ গল্পটা অবশ্যই থাকবে। ‘ইন্দুর বিলাই খেলা’ বা ‘চতুর্থ মাত্রা’কেও সেইখানে রাখা যাইতে পারে। অথবা ‘আগারগাঁও কলোনিতে নয়নতারা ফুল কেন নেই’ গল্পটারেও কি কইরা অগ্রাহ্য করি?
শহীদুল জহিরের ন্যারেটিভ অন্তর্মাত্রা আর বহির্মাত্রাকে একাকার অবস্থায় নিয়া যায়। পড়তে গেলে পাঠককে একটু শ্রম দিতে হয়। এই যে একটু চিন্তা করা বা মনঃসংযোগ ধইরা রাইখা নিজেরে হাওয়ার মতো ভাসানো; এই যে একটু সামনে আগানো, আবার পিছায়া যাওয়া; এই যে বাস্তব আর স্বপ্নের মধ্যে বারবার ঘুরপাক খাওয়া; এই যে আপাত অপ্রাসঙ্গিক জিনিস বইলা জহিরের গল্পরে সেইভাবে গুরুত্ব না দেওয়া, আবার পরক্ষণেই তাঁর ন্যারেটিভের জাদুর জালে আটকা পড়া—এই কারণেই শহীদুল জহির অনন্য। এই কারণেই তাঁর লেখা আপনারে মুগ্ধ করে।
শহীদুল জহির ম্যাজিক রিয়ালিজমের ওপর ভর কইরা লেখেন। সেই স্ট্রাকচারের ভেতর ঢুকলে পাঠক এক আনন্দময় ঘোরে হাঁটতে থাকে। জহিরের লেখায় মুহুর্মূহু অনিশ্চয়তা ও রহস্যময়তার খেলা থাকে, যা পাঠকের কাছে ক্রমশ উপভোগ্য মনে হয়। বারবার সমষ্টির অভিজ্ঞতা বা ঘটনা চক্রাবর্তের মতো ক্ষণেক্ষণে তাঁর বয়ান ভঙিমায় উইঠা আসে। আবার অনেকের কাছে এও মনে হইতেও পারে–অধিক পুনরাবৃত্তি গল্পের স্বাদ নষ্ট কইরা দেয়।
শহীদুল জহিরের গল্প দোলনার মতো। দুলতে দুলতে একসময় আবিষ্কার হয়, ভাবনার স্ফুরণও তো প্রকাশিত হইলো! ‘কাঁটা’ তেমনই এক গল্প। এইখানে অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যতের গোলকধাঁধায় উইঠা আসে বাংলাদেশের ‘সংখ্যালঘু’ সম্প্রদায়ের ওপর সংখ্যাগুরুদের নির্যাতন। ‘কাঁটা’ মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলাতে ভূতের গলির মহল্লার লোকজনদের কথা তুইলা ধরে। তুইলা ধরে আক্রান্ত কওমের কুয়ার জলে বলি দেওয়ার নামতাও। গল্পটার প্রকৃত নাম কি তাইলে ‘মনোজগতের কাঁটা’ বলা যায়?
অথবা ধরা যাক, শহীদুল জহিরের ‘আমাদের কুটির শিল্পের ইতিহাস’ গল্পের কথা। লেখায় কোনো প্যারাগ্রাফ নাই, বিরাম চিহ্ন নাই। বিরাট বর্ণনা অথচ কোনো দাঁড়িকমা নাই। বাক্যের পর বাক্য কেবল দ্বিধা আর কুণ্ঠার অবগুণ্ঠন। ভাবা যায়! হ্যা, লেখক তাই ভাবসিলেন। এই কারণেই প্রথাবিরোধী গল্প বলার ‘শহীদুল জহিরীয়’ স্টাইল তৈরি করতে পারসিলেন। শহীদুল পড়া শুরু করলে আদতেই এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হইতে হয়।
এখন কথা হইতেছে, কোনো পাঠক যদি শুধু প্রথাগত ‘গল্প’ পড়তে চায়, সেখানে বর্ণনা কিংবা ন্যারেটিভের অভিনবত্ব খুঁজতে না চায়, সেইটা তো তাঁর স্বাধীনতা। কিন্তু এইটাও মনে রাখতে হবে, আধুনিক কিংবা উত্তরাধুনিক পাঠক হইতে গেলে আপনার সব রসের স্বাদ আস্বাদন করা জরুরি।
সে যাই হোক, আপনি একদিন ভুল কইরা নারিন্দার ভূতের গলিতে চইলা যান কিংবা ডলু নদীর তীরে। আপনি সেইখানে সঙ্গমরত প্রেমিকের পিঠের মতো একটা বাঁকা সাঁকোর সন্ধান পাবেন। সাঁকোর তলে টলটলে জলের ফেনায় আপনি পা ভেজাবেন অথবা ভেজাবেন না। ফেনা আইসা আপনার পায়ে পাটের দড়ির মতো গড়াগড়ি খাবে অথবা স্থির থাকবে অথবা এর কোনোটাই ঘটবে না।
আপনি আছেন বিরামবিহীন শহীদুল জহিরে। আজ ১১ সেপ্টেম্বর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিশালী এই গল্পকারের জন্মদিন। পূর্ণিমা রাতে শহীদুল জহিরকে মিস করা ছাড়া আপনার উপায় নাই। লক্ষ্মীবাজারে কিংবা দক্ষিণ মৈশুন্ডিতে এখনও ডুমুরখেকো কিছু মানুষ আপনারই মতো থাকে অনন্ত অপেক্ষায়।
(লেখার ধরনটা ইচ্ছাকৃত। শহীদুল জহিরের ভাষার মতো করেই করা হয়েছে)
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতের আকাশে দেখা গেল ‘ব্লাড মুন’। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ উপভোগ করেছেন এই বিরল মুহূর্ত। এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, বাংলাদেশ থেকে এমন দৃশ্য আবার কবে দেখা যাবে?
৩ দিন আগেবাংলাদেশের ইতিহাস মানেই একটার পর একটা গণসংগ্রামের উত্তাল আখ্যান। এই আখ্যানের বহুল প্রচলিত, রাষ্ট্রস্বীকৃত পাঠ আমাদের সবারই জানা। কিন্তু এর সমান্তরালে বরাবরই নির্মোহ বিকল্প পাঠ হাজির করেছেন যে গুটিকতক মানুষ, সদ্যপ্রয়াত লেখক ও বুদ্ধিজীবি বদরুদ্দীন উমর তাঁদেরই একজন।
৩ দিন আগেলোকটা ছিল একেবারে ওজি মিনিমালিস্ট ইনফ্লুয়েন্সার। বাড়ি-ঘর নাই, ধনসম্পদ নাই, গ্ল্যামার নাই। সে মানি হাইস্ট-এর বার্লিনের মতো ক্ষমতালোভী নয়, বরং এমন এক অ্যান্টি-হিরো, যে সবার নজর কাড়ে কিন্তু কারো ধনরত্ন কাড়ে না। আপোষহীন, প্রথাভাঙা এই দার্শনিককে নিয়েই এই লেখা।
৪ দিন আগেতাঁর মৃত্যুর বছর তাঁকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়, কিন্তু তিনি তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। তিনি এক বিবৃতিতে জানান, তিনি সরকারি ও বেসরকারি কোনো পুরস্কার গ্রহণ করেননি এবং এই পুরস্কার গ্রহণ করাও তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।
৪ দিন আগে