.png)
আজ মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। শোষণ ও বঞ্চনাহীন, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁর ছিল বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক পরিকল্পনাও। কোন ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা তিনি ভেবেছিলেন, তা জানা যাবে এ লেখায়।

সুমন সাজ্জাদ

আশির দশকের শেষ দিকে। আমাদের শহরের দেয়ালেও ছিল মওলানা ভাসানীর নাম। মনে পড়ে, লাল কালিতে লেখা ছিল ‘ভাসানী’, ‘ন্যাপ’; ভাসানীকে স্মরণ করে দেয়ালে ঝোলানো কিছু পোস্টার দেখেছিলাম; সাদাকালো অক্ষরে লেখা, ‘ফারাক্কা’, ‘লং মার্চ’।
ওই শহরেই শামসুর রাহমানের ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’য় ভাসানীকে নিয়ে লেখা একটা কবিতা পড়েছিলাম। কবির চোখে তিনি হলেন ‘অলৌকিক স্টাফ রিপোর্টার’, পল্টনের মাঠে যাঁর কণ্ঠে শোনা গিয়েছিল দক্ষিণ বাংলার প্লাবনের বিশ্বস্ত খবর; শামসুর রাহমান লিখেছেন:
‘সবাই এলেন ছুটে পল্টনের মাঠে, শুনবেন
দুর্গত এলাকা-প্রত্যাগত বৃদ্ধ মৌলানা ভাসানী
কী বলেন।...
শোনালেন কিছু কথা, যেন নেতা
নন, অলৌকিক স্টাফ রিপোর্টার। জনসমাবেশে
সখেদে দিলেন ছুঁড়ে সারা খাঁ-খাঁ দক্ষিণ বাংলাকে।’
ভাসানীকে নিয়ে তেমন কোনো শোরগোল দেখি নি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে ভাসানীর নামে গড়া হলটিতে যেদিন ঢুকতে গেলাম, সেদিন দেখলাম তার একটি রঙিন ম্যুরাল। টুপি, দাড়ি, পাঞ্জাবির আবরণে ঢাকা মানুষটির দিকে আমি গভীর শ্রদ্ধায় তাকিয়েছিলাম। ততো দিনে এই মানুষটিকে ঘিরে নানা রকম গল্প শুনে। তাঁর স্বশিক্ষা, রাজনীতি, ধর্মবিশ্বাস, জীবন সংগ্রামের ‘পাগলামি’গুলো আমাকে ব্যাপকভাবে আকর্ষণ করেছিল। তবু সত্য যে, গভীরভাবে তাঁকে পড়া হয় নি।
মনে মনে খুঁজতাম ভাসানীর লেখা বই, সম্পাদিত ‘হক-কথা’। একদিন পেয়েও গেলাম ‘মওলানা ভাসানীর রচনা’। ভূমিকা লিখেছেন আবুল কাসেম ফজলুল হক, সম্পাদনা করেছেন খান মাহবুব। ওখানে সংকলিত হয়েছে মওলানার নানা রকম লেখা, ছোটখাটো গদ্য, ভাষণ ও বিবৃতি। চীন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে ভাসানী লিখেছেন ‘মাও সে-তুঙ-এর দেশে’।
আমাকে দারুণভাবে আকর্ষণ করল মওলানা ভাসানীর বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক পরিকল্পনা। অন্তত তিনটি গদ্য লিখেছেন তিনি—‘আমার পরিকল্পনায় ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়’, ‘কেন ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়?’, ‘ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ ও কাঠামো’। ১৯৭০ সালে একজন স্বশিক্ষিত ব্যক্তি একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনার কথা বলছেন, এই পোড়ার দেশে এর চেয়ে বিস্ময়কর আনন্দের বিষয় আর কী হতে পারে।
মওলানা ভাসানীর বিশ্ববিদ্যালয় চিন্তায় তাত্ত্বিক পড়ালেখার গুণগান নেই, আছে প্রায়োগিক শিক্ষার প্রসঙ্গ। প্রায় কাছাকাছি দুটি শব্দ প্রয়োগ করে তিনি লিখেছেন, ‘পড়াশুনা’ ও ‘শিক্ষা-দীক্ষা’; মওলানার দৃষ্টিতে ‘পড়াশুনা’ উপরিতলের ব্যাপার, কিন্তু ‘শিক্ষা-দীক্ষা’ জুড়ে থাকে চৈতন্য ও কর্মের সঙ্গে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে ভাসানী ব্যক্তিকে গড়ে তুলতে চান ভাবুক ও কর্মী হিসেবে। বিশেষভাবে প্র্রয়োগ করতে চান হাদিস ও কোরআনের বৈপ্লবিক উপাদানগুলোকে। ভাসানীর কল্পনার শিক্ষার্থীরা কেমন হবে? মওলানা লিখেছেন, ‘তাহারা হইবে আবুজর গিফারীর মতো প্রতিবাদকারী, হযরত আলীর ন্যায় জ্ঞানপিপাসু, গাজী সালাহ উদ্দীনের মতোই মোজাহেদ এবং ইমাম আবু হানিফার ন্যায় শহীদ।’ মনে হতে পারে, মওলানা বুঝি ইসলামের বাইরে পা ফেলবেন না; তা নয়, তিনি বিস্ময়করভাবেই হাজির করেন আব্রাহাম লিঙ্কন ও মাও সে তুঙের নাম।
মওলানা ভাসানী ১৯৭০ সালে কল্পনা করতে পেরেছেন যে, ‘গোটা বিশ্ববিদ্যালয়’টি হবে আবাসিক। থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা এখানেই। থাকবে খেলাধুলার বন্দোবস্ত। খাবে কী? ভাসানী লিখেছেন, ‘তাহারা নিজেদের হাতে পাক করা মোটা ভাত খাইবে। নিজেদের হাতে বোনা মোটা কাপড় পরিবে।’ ভাসানী চান ‘কঠোর পরিশ্রম’ আর ‘রীতিমতো কষ্ট সহ্য করিবার শিক্ষা’ তারা পাক। মওলানার জীবনও এমন শিক্ষার কথাই বলে।
তাছাড়া মওলানা তো একটু আগেই বলেছেন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘তাঁতের কাজ, যান্ত্রিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ, মাছের চাষ, রেশমের চাষ, গাছ-গাছড়া, ফল ও সবজির চাষ, পশু-পালন, রাজ-মিস্ত্রী ও সূতার মিস্ত্রীর কাজ, চামড়ার কাজ ইত্যাদি যাবতীয় টেকনিক্যাল শিক্ষা’ লাভ করবে। শুধু তা-ই নয়, ‘বাধ্যতামূলক’ করা হবে।

দুটি উপলব্ধি ভাসানীকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনার পেছনে উৎসাহ জুগিয়েছিল; এক. প্রথাগত বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষাপ্রাপ্ত হইয়াও অজ্ঞ থাকিয়া যায়, মূর্খতার স্বভাব লাভ করিয়া যায়।’ অর্থাৎ সত্যিকার জ্ঞানের চোখ আদতে খোলে না। দুই. ভাসানীর মনে হয়েছে, ‘গণচেতনা ও গণ আন্দোলনের সাথে সাথে আগামী দিনের জন্য ত্যাগী পুরুষ গড়িয়া তোলা দরকার।’ বলা ভালো, ভাসানী এখানে ‘পুরুষ’ বলতে লৈঙ্গিক পরিচয়ের ‘পুরুষ’ বুঝিয়েছেন বলে মনে হয় না। ‘পুরুষ’ শব্দের আরেক অর্থ মানুষ, আত্মা।
বোঝা যাচ্ছে, ভাসানী পশ্চিমী লিবারেল কাঠামোয় গড়া কোনো সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা ভাবেন নি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিবেচনায় নিয়েছেন রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক বিবেচনা থেকে। আর তাই আমরা তাঁকে ভাবতে দেখি বাংলাদেশের ১৯৪৭-উত্তর প্রেক্ষাপট ও গ্রামসমাজ প্রসঙ্গে। ভাসানী লিখেছেন, ‘১৯৪৭ সালের পর আমরা যুব সমাজকে কিছুই দিতে পারি নাই। তাই আজ তাহাদের মধ্যে এতো উচ্ছৃঙ্খলতা।’
তরুণদের মধ্যে হতাশার ভাব জেঁকে বসলে জাতি পিছিয়ে পড়বে -- এই ভাবনা মওলানাকে এটুকু ভাবতে উৎসাহিত করল যে, ‘কাল বিলম্ব না করিয়া কাজে ঝাঁপাইয়া পড়া দরকার।’ কেননা ‘এখন বাংলাদেশের ৬২ হাজার গ্রাম কিছু পাইবার জন্য অপেক্ষা করিতেছে।... তাহা না-হইলে গোটা জাতি অজানা লক্ষের পানে ছুটিয়া ধ্বংস ডাকিয়া আনিবে।’ এই বাস্তবতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বসে থাকবে, তা তো হয় না। ভাসানী বলেন, ‘আমি ভাবিতেছি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদিগকে বাধ্যতামূলকভাবে গ্রামে গ্রামে কাজ করিবার জন্য নিয়োজিত করিব।’
ভাসানী মোটা পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের আলোকে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়কে আলাদা করতে চেয়েছেন; সেগুলো এই:
১. কলা, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য পড়ানো হলেও একজন শিক্ষার্থীকে আবশ্যিকভাবে যেকোনো একটি কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
২. শিক্ষার্থীদের জন্য ‘নির্দিষ্ট মাত্রার দৈহিক প্রশিক্ষণ’ আবশ্যিক থাকবে। খেলাধুলা করতে হবে। অনাড়ম্বর পোশাক পরতে হবে।
৩. শিক্ষার্থীকে ধর্মের মূল শিক্ষা প্রদান করা হবে। মওলানা লিখেছেন, ‘হিন্দু হউক, মুসলমান হউক, খ্রিস্টান হউক, বৌদ্ধ হউক, প্রত্যেক ছাত্রকে স্বীয় ধর্মের ধারায় শৃঙ্খলা, পবিত্রতা, চরিত্র গঠন এবং বিশ্বানুভূতির শিক্ষা দান করা হইবে।’
৪. শিক্ষার্থীকে উৎপাদকের ভূমিকায়ও অবতীর্ণ হতে হবে। ভাসানীর পরিকল্পনায়, ‘কেরোসিন তৈল ও লবণ ছাড়া বাকি সবকিছুই বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে ছাত্রদিগকে উৎপাদন করিয়া লইতে হইবে।’ বিনিময় প্রথা মেনে একে অন্যেরটি ভোগ করবে।
৫. প্রতি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীকে চার-পাঁচ সপ্তাহব্যাপী গ্রাম অথবা শিল্পএলাকায় ব্যবহারিক কাজে অংশ নিতে হবে। লক্ষ্য হলো ‘বৈপ্লবিক দৃষ্টিভঙ্গী লইয়া শ্রমের প্রতি মর্যাদাবোধ’ সৃষ্টি করা।
ভাসানীর প্রস্তাব ও পরিকল্পনার পেছনে ঐতিহাসিক কার্যকারণ আছে। বাংলার শিক্ষাব্যবস্থার যে ইতিহাসকে তিনি বিস্তৃত হতে দেখেছেন নিজের তরফ থেকে ছিল তার একটি মূল্যায়নও ছিল। তাঁর অবস্থান ছিল পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে। তিনি লিখেছেন, ‘পুঁজিবাদের ধারক-বাহক উপনিবেশিকতাবাদী ও সাম্রাজ্যবাদীরা দেশে শাসন-শোষণ অব্যাহত রাখা ও কেরাণিকুল সৃষ্টি করার জন্য যে শিক্ষা-ব্যবস্থা চালু করিয়াছিল আমরা অন্ধভাবে সেই শিক্ষানীতিই অনুসরণ কলিয়া চলিয়াছি।’
ভাসানী নিঃসন্দেহে এর বিপরীত স্রোতের মানুষ। নিজে তো কেরানি ননই, কেরানি সৃষ্টির তৎপরতাকেই প্রশ্ন করেছেন। খুব চমৎকার এক উক্তি করেছেন তিনি, ‘মদ চোলাইয়ের কারখাণা হইতে যেমন কেহ দুধ প্রত্যাশা করে না, তেমনি কেরাণিকুল ও গোলামী মানসিকতা সৃষ্টির জন্য যে শিক্ষাব্যবস্থা প্রাবর্তিত হইয়াছিলা তাহা হইতে স্বাধীন, স্বাবলম্বী পরিশ্রমী, সহানুভূতিশীল মানুষ সৃষ্টি সম্ভব নয়।’
এই কথাগুলো ভাসানী লিখেছিলেন ১৯৭১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারিতে। টাঙ্গাইলের সন্তোষে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় দরবার হলে সেদিন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ‘পূ্র্ব পাকিস্তান শিক্ষা ও কৃষ্টি সম্মেলন’। ভাসানীর সেদিনের লেখা ‘কেন ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়?’ নামে প্রকাশিত হয়েছে।
১৯৭৪ সালের ৭ এপ্রিলে জাতীয় শিক্ষা সম্মেলনে ভাসানী পেশ করেন ‘ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ ও কাঠামো’। তাঁর আগের প্রস্তাবগুলোর মতো করে এই প্রস্তাবেও ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রণয়ন করেছেন। এখানে ভাসানী অনেকটাই অ্যাকাডেমিক প্রস্তাব পেশ করেছেন। সে অনুযায়ী ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ধাপগুলো হলো : ১. শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : নার্সারি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত; ২. কিশোর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার ব্যবস্থা; ৩. উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি কেন্দ্র : এই স্তরে শিক্ষার্থীর পারদর্শিতার সম্ভাবনা নিরূপণ করার পাশাপাশি ‘যথাযোগ্য উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতির ব্যবস্থা’ করা হবে; ৪. উচ্চশিক্ষা কেন্দ্র : এই স্তরের লক্ষ্য ‘মানুষের সার্বিক উন্নয়ন এবং বিশেষ বিষয়ে ব্যুৎপত্তি’।

উচ্চশিক্ষা কেন্দ্রই ভাসানীর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ধাপ। আমাদের চেনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো মূলত এই ধাপেরই অংশ। বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়ে ভাসানী মোট উনিশটি একাডেমির কথা ভেবেছেন; যেমন ইসলামী শিক্ষা ও গবেষণা একাডেমি, সামাজ বিজ্ঞান একাডেমি, মানবিক সম্পর্ক উন্নয়ন একাডেমি, জৈব-সমাজবিজ্ঞান একাডেমি, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি একাডেমি, শিল্প-সাহিত্য একাডেমি, নাট্য-শিল্প ও চারুকলা একাডেমি, জীবিজ্ঞান একাডিম, সমাজসেবা একাডেমি, কৃষিবিদ্যা একাডেমি, চিকিৎসাবিদ্যা একাডেমি, প্রকৌশল একাডেমি, ব্যবসায় প্রশাসন একাডেমি ইত্যাদি। এছাড়ও আছে ধর্ম ও আদর্শের তুলনামূলক অধ্যয়ন একাডেমি, শিক্ষক প্রশিক্ষণ একাডেমি, মরমী স্বজ্ঞা একাডেমি, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দূরপ্রাচ্য সম্পর্কিত অধ্যয়ন একাডেমি। একাডেমিগুলো অধীন বিভাগগুলো বিশেষায়িত।
মওলানা ভাসানীর পরিকল্পনায় থাকা ধর্ম, ধর্মীয় জ্ঞান, আধ্যাত্মিকতার সম্পর্ক দেখে নাক কুচকানোর সুযোগ নেই। পৃথিবীর ইতিহাসে ধর্মের সিঁড়ি বেয়েই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উচ্চস্থানে অধিষ্ঠিত হয়েছে। এখনকার বাস্তবতায় বাংলাদেশে সে রকম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন আছে, কি নেই, তা আলাদা প্রশ্ন। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ভাবছেন, পরিকল্পনা করছেন, বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছেন -- বাংলাদেশের জন্য এই ঘটনাকে আমি বিরাট সৌভাগ্য বলে মানি।
আমাদের এই দুর্ভাগ্যের দেশে রাজনীতিকদের মস্তিষ্ক ও হৃদয় বিদ্যার জন্য কাতর নয়; এরা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করতে চায় চাকরি ও আঞ্চলিক প্রতিপত্তি বিস্তারের লক্ষ্যে। প্রকল্পের পর প্রকল্প বাগিয়ে পাড়ায় পাড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার জিকির করেছে লোভী সরকার। অন্যদিকে ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার স্বপ্ন দেখেন বৈপ্লবিক সমাজ রূপান্তরের লক্ষ্যে।
বিগত পঞ্চাশ বছরে রাজনীতিবিদরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ব্যবহার করেছে কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতা উৎপাদনের কারখানা হিসেবে, কিন্তু ভাসানী হাজির করেছেন পাল্টা ক্ষমতার বয়ান; তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় গণমানুষের ও গণচেতনার বিশ্ববিদ্যালয়, সমাজের উচ্চবর্গের আধিপত্য খর্ব করার বিশ্ববিদ্যালয়। ধর্ম সেখানে চিত্তশুদ্ধির একটি উপাদানমাত্র।
ভাসানীর বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা পড়ে যে কেউ বলতে পারেন, ‘ইউটোপিয়া’, আশ্রমধর্মী, বামপন্থী। কিন্তু এ ধরনের ইউটোপিয়ান ভাষায় বাংলাদেশের কয় জন ভাবুক ভাবতে পারেন, কথা বলতে পারেন? রাজনীতিবিদেরা তো পারেনই না, শিক্ষাবিদেরা কি পারেন? প্রশ্ন তোলা থাকল।

আশির দশকের শেষ দিকে। আমাদের শহরের দেয়ালেও ছিল মওলানা ভাসানীর নাম। মনে পড়ে, লাল কালিতে লেখা ছিল ‘ভাসানী’, ‘ন্যাপ’; ভাসানীকে স্মরণ করে দেয়ালে ঝোলানো কিছু পোস্টার দেখেছিলাম; সাদাকালো অক্ষরে লেখা, ‘ফারাক্কা’, ‘লং মার্চ’।
ওই শহরেই শামসুর রাহমানের ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’য় ভাসানীকে নিয়ে লেখা একটা কবিতা পড়েছিলাম। কবির চোখে তিনি হলেন ‘অলৌকিক স্টাফ রিপোর্টার’, পল্টনের মাঠে যাঁর কণ্ঠে শোনা গিয়েছিল দক্ষিণ বাংলার প্লাবনের বিশ্বস্ত খবর; শামসুর রাহমান লিখেছেন:
‘সবাই এলেন ছুটে পল্টনের মাঠে, শুনবেন
দুর্গত এলাকা-প্রত্যাগত বৃদ্ধ মৌলানা ভাসানী
কী বলেন।...
শোনালেন কিছু কথা, যেন নেতা
নন, অলৌকিক স্টাফ রিপোর্টার। জনসমাবেশে
সখেদে দিলেন ছুঁড়ে সারা খাঁ-খাঁ দক্ষিণ বাংলাকে।’
ভাসানীকে নিয়ে তেমন কোনো শোরগোল দেখি নি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে ভাসানীর নামে গড়া হলটিতে যেদিন ঢুকতে গেলাম, সেদিন দেখলাম তার একটি রঙিন ম্যুরাল। টুপি, দাড়ি, পাঞ্জাবির আবরণে ঢাকা মানুষটির দিকে আমি গভীর শ্রদ্ধায় তাকিয়েছিলাম। ততো দিনে এই মানুষটিকে ঘিরে নানা রকম গল্প শুনে। তাঁর স্বশিক্ষা, রাজনীতি, ধর্মবিশ্বাস, জীবন সংগ্রামের ‘পাগলামি’গুলো আমাকে ব্যাপকভাবে আকর্ষণ করেছিল। তবু সত্য যে, গভীরভাবে তাঁকে পড়া হয় নি।
মনে মনে খুঁজতাম ভাসানীর লেখা বই, সম্পাদিত ‘হক-কথা’। একদিন পেয়েও গেলাম ‘মওলানা ভাসানীর রচনা’। ভূমিকা লিখেছেন আবুল কাসেম ফজলুল হক, সম্পাদনা করেছেন খান মাহবুব। ওখানে সংকলিত হয়েছে মওলানার নানা রকম লেখা, ছোটখাটো গদ্য, ভাষণ ও বিবৃতি। চীন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে ভাসানী লিখেছেন ‘মাও সে-তুঙ-এর দেশে’।
আমাকে দারুণভাবে আকর্ষণ করল মওলানা ভাসানীর বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক পরিকল্পনা। অন্তত তিনটি গদ্য লিখেছেন তিনি—‘আমার পরিকল্পনায় ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়’, ‘কেন ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়?’, ‘ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ ও কাঠামো’। ১৯৭০ সালে একজন স্বশিক্ষিত ব্যক্তি একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনার কথা বলছেন, এই পোড়ার দেশে এর চেয়ে বিস্ময়কর আনন্দের বিষয় আর কী হতে পারে।
মওলানা ভাসানীর বিশ্ববিদ্যালয় চিন্তায় তাত্ত্বিক পড়ালেখার গুণগান নেই, আছে প্রায়োগিক শিক্ষার প্রসঙ্গ। প্রায় কাছাকাছি দুটি শব্দ প্রয়োগ করে তিনি লিখেছেন, ‘পড়াশুনা’ ও ‘শিক্ষা-দীক্ষা’; মওলানার দৃষ্টিতে ‘পড়াশুনা’ উপরিতলের ব্যাপার, কিন্তু ‘শিক্ষা-দীক্ষা’ জুড়ে থাকে চৈতন্য ও কর্মের সঙ্গে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে ভাসানী ব্যক্তিকে গড়ে তুলতে চান ভাবুক ও কর্মী হিসেবে। বিশেষভাবে প্র্রয়োগ করতে চান হাদিস ও কোরআনের বৈপ্লবিক উপাদানগুলোকে। ভাসানীর কল্পনার শিক্ষার্থীরা কেমন হবে? মওলানা লিখেছেন, ‘তাহারা হইবে আবুজর গিফারীর মতো প্রতিবাদকারী, হযরত আলীর ন্যায় জ্ঞানপিপাসু, গাজী সালাহ উদ্দীনের মতোই মোজাহেদ এবং ইমাম আবু হানিফার ন্যায় শহীদ।’ মনে হতে পারে, মওলানা বুঝি ইসলামের বাইরে পা ফেলবেন না; তা নয়, তিনি বিস্ময়করভাবেই হাজির করেন আব্রাহাম লিঙ্কন ও মাও সে তুঙের নাম।
মওলানা ভাসানী ১৯৭০ সালে কল্পনা করতে পেরেছেন যে, ‘গোটা বিশ্ববিদ্যালয়’টি হবে আবাসিক। থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা এখানেই। থাকবে খেলাধুলার বন্দোবস্ত। খাবে কী? ভাসানী লিখেছেন, ‘তাহারা নিজেদের হাতে পাক করা মোটা ভাত খাইবে। নিজেদের হাতে বোনা মোটা কাপড় পরিবে।’ ভাসানী চান ‘কঠোর পরিশ্রম’ আর ‘রীতিমতো কষ্ট সহ্য করিবার শিক্ষা’ তারা পাক। মওলানার জীবনও এমন শিক্ষার কথাই বলে।
তাছাড়া মওলানা তো একটু আগেই বলেছেন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘তাঁতের কাজ, যান্ত্রিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ, মাছের চাষ, রেশমের চাষ, গাছ-গাছড়া, ফল ও সবজির চাষ, পশু-পালন, রাজ-মিস্ত্রী ও সূতার মিস্ত্রীর কাজ, চামড়ার কাজ ইত্যাদি যাবতীয় টেকনিক্যাল শিক্ষা’ লাভ করবে। শুধু তা-ই নয়, ‘বাধ্যতামূলক’ করা হবে।

দুটি উপলব্ধি ভাসানীকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনার পেছনে উৎসাহ জুগিয়েছিল; এক. প্রথাগত বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষাপ্রাপ্ত হইয়াও অজ্ঞ থাকিয়া যায়, মূর্খতার স্বভাব লাভ করিয়া যায়।’ অর্থাৎ সত্যিকার জ্ঞানের চোখ আদতে খোলে না। দুই. ভাসানীর মনে হয়েছে, ‘গণচেতনা ও গণ আন্দোলনের সাথে সাথে আগামী দিনের জন্য ত্যাগী পুরুষ গড়িয়া তোলা দরকার।’ বলা ভালো, ভাসানী এখানে ‘পুরুষ’ বলতে লৈঙ্গিক পরিচয়ের ‘পুরুষ’ বুঝিয়েছেন বলে মনে হয় না। ‘পুরুষ’ শব্দের আরেক অর্থ মানুষ, আত্মা।
বোঝা যাচ্ছে, ভাসানী পশ্চিমী লিবারেল কাঠামোয় গড়া কোনো সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা ভাবেন নি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিবেচনায় নিয়েছেন রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক বিবেচনা থেকে। আর তাই আমরা তাঁকে ভাবতে দেখি বাংলাদেশের ১৯৪৭-উত্তর প্রেক্ষাপট ও গ্রামসমাজ প্রসঙ্গে। ভাসানী লিখেছেন, ‘১৯৪৭ সালের পর আমরা যুব সমাজকে কিছুই দিতে পারি নাই। তাই আজ তাহাদের মধ্যে এতো উচ্ছৃঙ্খলতা।’
তরুণদের মধ্যে হতাশার ভাব জেঁকে বসলে জাতি পিছিয়ে পড়বে -- এই ভাবনা মওলানাকে এটুকু ভাবতে উৎসাহিত করল যে, ‘কাল বিলম্ব না করিয়া কাজে ঝাঁপাইয়া পড়া দরকার।’ কেননা ‘এখন বাংলাদেশের ৬২ হাজার গ্রাম কিছু পাইবার জন্য অপেক্ষা করিতেছে।... তাহা না-হইলে গোটা জাতি অজানা লক্ষের পানে ছুটিয়া ধ্বংস ডাকিয়া আনিবে।’ এই বাস্তবতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বসে থাকবে, তা তো হয় না। ভাসানী বলেন, ‘আমি ভাবিতেছি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদিগকে বাধ্যতামূলকভাবে গ্রামে গ্রামে কাজ করিবার জন্য নিয়োজিত করিব।’
ভাসানী মোটা পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের আলোকে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়কে আলাদা করতে চেয়েছেন; সেগুলো এই:
১. কলা, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য পড়ানো হলেও একজন শিক্ষার্থীকে আবশ্যিকভাবে যেকোনো একটি কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
২. শিক্ষার্থীদের জন্য ‘নির্দিষ্ট মাত্রার দৈহিক প্রশিক্ষণ’ আবশ্যিক থাকবে। খেলাধুলা করতে হবে। অনাড়ম্বর পোশাক পরতে হবে।
৩. শিক্ষার্থীকে ধর্মের মূল শিক্ষা প্রদান করা হবে। মওলানা লিখেছেন, ‘হিন্দু হউক, মুসলমান হউক, খ্রিস্টান হউক, বৌদ্ধ হউক, প্রত্যেক ছাত্রকে স্বীয় ধর্মের ধারায় শৃঙ্খলা, পবিত্রতা, চরিত্র গঠন এবং বিশ্বানুভূতির শিক্ষা দান করা হইবে।’
৪. শিক্ষার্থীকে উৎপাদকের ভূমিকায়ও অবতীর্ণ হতে হবে। ভাসানীর পরিকল্পনায়, ‘কেরোসিন তৈল ও লবণ ছাড়া বাকি সবকিছুই বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে ছাত্রদিগকে উৎপাদন করিয়া লইতে হইবে।’ বিনিময় প্রথা মেনে একে অন্যেরটি ভোগ করবে।
৫. প্রতি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীকে চার-পাঁচ সপ্তাহব্যাপী গ্রাম অথবা শিল্পএলাকায় ব্যবহারিক কাজে অংশ নিতে হবে। লক্ষ্য হলো ‘বৈপ্লবিক দৃষ্টিভঙ্গী লইয়া শ্রমের প্রতি মর্যাদাবোধ’ সৃষ্টি করা।
ভাসানীর প্রস্তাব ও পরিকল্পনার পেছনে ঐতিহাসিক কার্যকারণ আছে। বাংলার শিক্ষাব্যবস্থার যে ইতিহাসকে তিনি বিস্তৃত হতে দেখেছেন নিজের তরফ থেকে ছিল তার একটি মূল্যায়নও ছিল। তাঁর অবস্থান ছিল পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে। তিনি লিখেছেন, ‘পুঁজিবাদের ধারক-বাহক উপনিবেশিকতাবাদী ও সাম্রাজ্যবাদীরা দেশে শাসন-শোষণ অব্যাহত রাখা ও কেরাণিকুল সৃষ্টি করার জন্য যে শিক্ষা-ব্যবস্থা চালু করিয়াছিল আমরা অন্ধভাবে সেই শিক্ষানীতিই অনুসরণ কলিয়া চলিয়াছি।’
ভাসানী নিঃসন্দেহে এর বিপরীত স্রোতের মানুষ। নিজে তো কেরানি ননই, কেরানি সৃষ্টির তৎপরতাকেই প্রশ্ন করেছেন। খুব চমৎকার এক উক্তি করেছেন তিনি, ‘মদ চোলাইয়ের কারখাণা হইতে যেমন কেহ দুধ প্রত্যাশা করে না, তেমনি কেরাণিকুল ও গোলামী মানসিকতা সৃষ্টির জন্য যে শিক্ষাব্যবস্থা প্রাবর্তিত হইয়াছিলা তাহা হইতে স্বাধীন, স্বাবলম্বী পরিশ্রমী, সহানুভূতিশীল মানুষ সৃষ্টি সম্ভব নয়।’
এই কথাগুলো ভাসানী লিখেছিলেন ১৯৭১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারিতে। টাঙ্গাইলের সন্তোষে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় দরবার হলে সেদিন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ‘পূ্র্ব পাকিস্তান শিক্ষা ও কৃষ্টি সম্মেলন’। ভাসানীর সেদিনের লেখা ‘কেন ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়?’ নামে প্রকাশিত হয়েছে।
১৯৭৪ সালের ৭ এপ্রিলে জাতীয় শিক্ষা সম্মেলনে ভাসানী পেশ করেন ‘ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ ও কাঠামো’। তাঁর আগের প্রস্তাবগুলোর মতো করে এই প্রস্তাবেও ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রণয়ন করেছেন। এখানে ভাসানী অনেকটাই অ্যাকাডেমিক প্রস্তাব পেশ করেছেন। সে অনুযায়ী ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ধাপগুলো হলো : ১. শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : নার্সারি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত; ২. কিশোর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার ব্যবস্থা; ৩. উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি কেন্দ্র : এই স্তরে শিক্ষার্থীর পারদর্শিতার সম্ভাবনা নিরূপণ করার পাশাপাশি ‘যথাযোগ্য উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতির ব্যবস্থা’ করা হবে; ৪. উচ্চশিক্ষা কেন্দ্র : এই স্তরের লক্ষ্য ‘মানুষের সার্বিক উন্নয়ন এবং বিশেষ বিষয়ে ব্যুৎপত্তি’।

উচ্চশিক্ষা কেন্দ্রই ভাসানীর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ধাপ। আমাদের চেনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো মূলত এই ধাপেরই অংশ। বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়ে ভাসানী মোট উনিশটি একাডেমির কথা ভেবেছেন; যেমন ইসলামী শিক্ষা ও গবেষণা একাডেমি, সামাজ বিজ্ঞান একাডেমি, মানবিক সম্পর্ক উন্নয়ন একাডেমি, জৈব-সমাজবিজ্ঞান একাডেমি, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি একাডেমি, শিল্প-সাহিত্য একাডেমি, নাট্য-শিল্প ও চারুকলা একাডেমি, জীবিজ্ঞান একাডিম, সমাজসেবা একাডেমি, কৃষিবিদ্যা একাডেমি, চিকিৎসাবিদ্যা একাডেমি, প্রকৌশল একাডেমি, ব্যবসায় প্রশাসন একাডেমি ইত্যাদি। এছাড়ও আছে ধর্ম ও আদর্শের তুলনামূলক অধ্যয়ন একাডেমি, শিক্ষক প্রশিক্ষণ একাডেমি, মরমী স্বজ্ঞা একাডেমি, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দূরপ্রাচ্য সম্পর্কিত অধ্যয়ন একাডেমি। একাডেমিগুলো অধীন বিভাগগুলো বিশেষায়িত।
মওলানা ভাসানীর পরিকল্পনায় থাকা ধর্ম, ধর্মীয় জ্ঞান, আধ্যাত্মিকতার সম্পর্ক দেখে নাক কুচকানোর সুযোগ নেই। পৃথিবীর ইতিহাসে ধর্মের সিঁড়ি বেয়েই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উচ্চস্থানে অধিষ্ঠিত হয়েছে। এখনকার বাস্তবতায় বাংলাদেশে সে রকম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন আছে, কি নেই, তা আলাদা প্রশ্ন। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ভাবছেন, পরিকল্পনা করছেন, বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছেন -- বাংলাদেশের জন্য এই ঘটনাকে আমি বিরাট সৌভাগ্য বলে মানি।
আমাদের এই দুর্ভাগ্যের দেশে রাজনীতিকদের মস্তিষ্ক ও হৃদয় বিদ্যার জন্য কাতর নয়; এরা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করতে চায় চাকরি ও আঞ্চলিক প্রতিপত্তি বিস্তারের লক্ষ্যে। প্রকল্পের পর প্রকল্প বাগিয়ে পাড়ায় পাড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার জিকির করেছে লোভী সরকার। অন্যদিকে ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার স্বপ্ন দেখেন বৈপ্লবিক সমাজ রূপান্তরের লক্ষ্যে।
বিগত পঞ্চাশ বছরে রাজনীতিবিদরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ব্যবহার করেছে কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতা উৎপাদনের কারখানা হিসেবে, কিন্তু ভাসানী হাজির করেছেন পাল্টা ক্ষমতার বয়ান; তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় গণমানুষের ও গণচেতনার বিশ্ববিদ্যালয়, সমাজের উচ্চবর্গের আধিপত্য খর্ব করার বিশ্ববিদ্যালয়। ধর্ম সেখানে চিত্তশুদ্ধির একটি উপাদানমাত্র।
ভাসানীর বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা পড়ে যে কেউ বলতে পারেন, ‘ইউটোপিয়া’, আশ্রমধর্মী, বামপন্থী। কিন্তু এ ধরনের ইউটোপিয়ান ভাষায় বাংলাদেশের কয় জন ভাবুক ভাবতে পারেন, কথা বলতে পারেন? রাজনীতিবিদেরা তো পারেনই না, শিক্ষাবিদেরা কি পারেন? প্রশ্ন তোলা থাকল।
.png)

আজ মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। শোষণ ও বঞ্চনাহীন, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে এ লেখা।
১ ঘণ্টা আগে
আজ বাংলা সাহিত্যের একজন শক্তিমান কথাশিল্পী মাহমুদুল হকের জন্মদিন। তাঁর বহুল পঠিত উপন্যাস 'জীবন আমার বোন'। ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন পরবর্তী সময়ের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ ও ব্যক্তিজীবনে তাঁর প্রভাব নিয়ে এই উপন্যাসের কাহিনি ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
১৭ ঘণ্টা আগে
অনেক সময় কাউকে ফোন করা যায় না, কাউকে ইনবক্সে বলা যায় না, ‘আমি ভালো নেই।’ এ সময়েই অনেকেই মোবাইল বা ল্যাপটপে খুলে চ্যাটজিপিটির মতো এআই নিয়ে বসেন। আমার এক বন্ধুও আজকাল মন খারাপ হলে চ্যাটজিপিটির কাছে যায়। বন্ধুটির মনে হয় এআই যেন সত্যিই তাঁর উদ্বেগ বুঝতে পারছে।
২০ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে কোটি মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনা এক নাম টনি রবিন্স। তিনি শুধু মোটিভেশনাল স্পিকার নন, বরং বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ‘লাইফ কোচ’ ও মেন্টর। অসংখ্য উদ্যোক্তা, নেতা ও সেলিব্রিটিকে তিনি গড়ে তুলেছেন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে।
১ দিন আগে