leadT1ad

টনি রবিন্স: কোটি মানুষের জীবন বদলে দেওয়া ‘লাইফ কোচ’

বিশ্বজুড়ে কোটি মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনা এক নাম টনি রবিন্স। তিনি শুধু মোটিভেশনাল স্পিকার নন, বরং বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ‘লাইফ কোচ’ ও মেন্টর। অসংখ্য উদ্যোক্তা, নেতা ও সেলিব্রিটিকে তিনি গড়ে তুলেছেন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে।

মিনহাজ রহমান পিয়াস
মিনহাজ রহমান পিয়াস

প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৭
স্ট্রিম গ্রাফিক

এক শীতের রাতে মাদকাসক্ত ও মানসিকভাবে অস্থিতিশীল এক মহিলা মদ্যপ অবস্থায় ছুরি হাতে তাড়া করেন তাঁরই ১৭ বছর বয়সী কিশোর ছেলেকে। এই ঘটনায় ছেলেটির জীবনের মোড় ঘুরে যায়। তিনি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসেন, এরপর আর সেখানে ফিরে যাননি। এর সাত বছর পর, মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে ছেলেটি মিলিয়ন ডলার আয় করে। বলছি বিশ্বসেরা কোচ টনি রবিন্সের কথা।

বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে কলেজে ভর্তি না হয়ে রবিন্স প্রবেশ করেন কর্মজীবনে। প্রথমদিকে সেমিনার আয়োজনের কাজ করতেন তিনি। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে মেন্টর হিসেবে কাজ শুরু করেন। তখন রবিন্স লক্ষ্য করেছিলেন, কীভাবে মাইন্ডসেট বদলে দেওয়া যেতে পারে, কীভাবে একজন মানুষের ধারণা ও অনুভূতি পরিবর্তন করা যায়।

মাত্র ২৩ বছর বয়সে রবিন্স তাঁর কোম্পানি ‘রবিন্স রিসার্চ ইন্টারন্যাশনাল ইনকর্পোরেটেড’ শুরু করেন। কোম্পানির মাধ্যমে তিনি পেশা হিসেবে তাঁর নিজের মোটিভেশনাল (অনুপ্রেরণামূলক) বক্তৃতা আর কোচিং ব্যবসা গড়ে তোলেন। এর এক বছরের মধ্যে প্রথম মিলিয়ন ডলার আয় করেন। বর্তমানে তিনি ৬০০ মিলিয়ন ডলারের মালিক। বলা হয়ে থাকে, টনি রবিন্স তাঁর সেমিনার, অডিও, ভিডিও প্রোগ্রাম মিলিয়ে প্রায় ১০০টি দেশের পাঁচ কোটির বেশি মানুষের কাছে মেন্টর হিসেবে পৌঁছেছেন।

টনি রবিন্সের বই। সংগৃহীত ছবি
টনি রবিন্সের বই। সংগৃহীত ছবি

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, টেনিস কিংবদন্তি সেরেনা উইলিয়ামস, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব অপরাহ উইনফ্রে, সেলসফোর্সের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক বেনিওফ, অভিনেতা হিউ জ্যাকম্যান, অভিনেতা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওসহ অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের কোচ অথবা পরামর্শদাতা হিসেবে বিভিন্ন প্রতিবেদনে রবিন্সের নাম উঠে এসেছে। তাঁর সম্পর্কে অপরাহ উইনফ্রে বলেছিলেন, ‘টনি শুধু মোটিভেট করেন না, তিনি একজন মানুষের ভেতরটাকেই জাগিয়ে তোলেন।’

বলা হয়ে থাকে, দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া রবিন্সের জীবনের শুরুর কষ্টই তাঁকে মানবিক করে তুলেছে। ১৯৯১ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন টনি রবিন্স ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশন বিভিন্ন দেশে শিক্ষা, খাদ্য সহায়তা ও কমিউনিটি সার্ভিস প্রকল্পের মাধ্যমে লাখো মানুষের কাছে পৌঁছেছে। পরে তিনি ‘ফিডিং আমেরিকা’-এর সঙ্গে মিলে ‘১ বিলিয়ন মিলস চ্যালেঞ্জ’শুরু করেন, যার মাধ্যমে ইতিমধ্যে কোটি কোটি খাবারের প্যাকেট দরিদ্র মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে। রবিন্স বলেন, ‘আমি ছোটবেলায় না খেয়ে থেকেছি। তাই আজ আমি নিশ্চিত করতে চাই, আর কেউ যেন ক্ষুধা নিয়ে ঘুমাতে না যায়।’

টনি রবিন্স। সংগৃহীত ছবি
টনি রবিন্স। সংগৃহীত ছবি

তবে রবিন্সের জীবনও বিতর্কমুক্ত নয়। ২০১৮ সালে তিনি নারীদের সমালোচনা করে বলেছিলেন যে, অনেকে নাকি নিজেদের গুরুত্ব বাড়াতে #MeToo আন্দোলনকে ব্যবহার করছেন। এই মন্তব্যের জন্য পরবর্তী সময়ে তিনি ক্ষমা চান। পরের বছর বেশ কয়েকজন নারী অভিযোগ করেন যে ১৯৯০-২০০০ সাল পর্যন্ত টনি রবিন্স তাঁদের যৌন হয়রানি করেছেন এবং তাঁর সেমিনারে নারীদের অবমাননাকর আচরণের শিকার হতে হয়েছে। অভিযোগকারীদের মধ্যে কয়েকজন তাঁর নিজের দলের সদস্যও ছিলেন। পরে আরও অভিযোগ ওঠে যে তিনি একজন কিশোরীকে যৌন নির্যাতন করেছিলেন।

রবিন্স এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, এসব অভিযোগ তাঁর সুনাম নষ্ট ও পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। এ ঘটনার পর তিনি যুক্তরাজ্যে বাজফিড নিউজের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কারণ, তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবেদনটি তারাই প্রকাশ করেছিল। এছাড়াও তাঁর ব্যক্তিগত আচরণ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। যদিও তিনি পরে ক্ষমা চেয়ে বলেছিলেন যে শেখার প্রক্রিয়া সব সময় নিখুঁত হয় না।

তবুও রবিন্সের জনপ্রিয়তা ও প্রভাব এতটাই গভীর যে আজও প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ তাঁর বক্তৃতা, বই ও ভিডিও থেকে জীবনের পথ খুঁজে নেয়।

Ad 300x250

সম্পর্কিত