আবু উবায়দার মৃত্যুর খবর সত্য হলে এটি হবে একটি বড় ঘটনা। কারণ আরব বিশ্বে তার বেশ প্রভাব ছিল। হামাসের জন্য তার বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। তবে এতে হামাসের কার্যকর নেতৃত্বে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে না। তিনি ইয়াহিয়া সিনওয়ার বা ইসমাইল হানিয়ার মতো শীর্ষ সিদ্ধান্তগ্রহণকারী ছিলেন না।
স্ট্রিম ডেস্ক
ফিলিস্তিনের সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবায়দাকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের দাবি, শনিবার (৩০ আগস্ট ২০২৫) আবু উবায়দাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে, যদিও হামাস এটি নিশ্চিত করেনি।
তাঁর নিহত হওয়ার খবরে ইসরায়েল উৎসব করছে। কারণ তিনি হামাসের প্রচারযুদ্ধের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং ইসরায়েল তাঁকে বহুবার গুপ্তহত্যার লক্ষ্যবস্তু করে। তাঁর জনপ্রিয়তা এবং প্রভাব ইসরায়েলের ‘মাথাব্যথার’ একটি বড় কারণ ছিল।
গত দুই দশক ধরে তিনি লাল-সাদা কেফিয়ায় মুখ ঢেকে গণমাধ্যমে হামাসের সামরিক সাফল্য ও বক্তব্য তুলে ধরতেন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের চলমান গণহত্যার সময় তিনি ফিলিস্তিনি মুক্তিসংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠেন এবং বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। তাঁর দৃঢ় কণ্ঠ, রহস্যময় পরিচয় এবং তেজি ভাষণ তাঁকে বীর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
তার বক্তৃতা হামাসের প্রতি সাধারণ জনগণের সমর্থন জাগিয়েছে এবং বৈশ্বিক জনমত গঠনে প্রভাব ফেলেছে। তার মৃত্যুকে হামাসের ‘ন্যারেটিভ ওয়ার’ বা ‘বয়ানের যুদ্ধে’ একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইসরায়েল তার প্রচারণার মোকাবিলায় হিমশিম খেত। তাই তার মৃত্যুকে হামাসের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধক্ষমতা দুর্বল করার একটি ধাপ হিসেবে দেখছে ইসরায়েল।
আবু উবায়দার আসল নাম বা ব্যক্তিগত তথ্য কখনো প্রকাশ করা হয়নি। তিনি ২০০০ সাল থেকে ছদ্মনামে কাজ করতেন, যা ইসলামের ঐতিহাসিক সেনাপতি আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহর নাম থেকে গ্রহণ করা। তাঁর পরিবার ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন থেকে উচ্ছেদের শিকার হয়ে গাজায় আশ্রয় নিয়েছিল।
২০০৪ সাল থেকে তিনি হামাসের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর ভাষণ আরব বিশ্বে এতটাই প্রভাবশালী ছিল যে তা শুনতে বিয়ের অনুষ্ঠানও থেমে যেত। তাঁর নামে গান রচিত হয়েছে, এবং তিনি ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হন।
ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলো তাঁকে সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনা করে এবং যুক্তরাষ্ট্র ২০২৪ সালে তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। হামাসের নীরবতা এবং ইসরায়েলের দাবির মধ্যে তাঁর নিহত হওয়ার খবর এখনো অনিশ্চিত। তবুও এই খবর ফিলিস্তিনিদের মধ্যে গভীর শোকের সৃষ্টি করেছে।
তার মৃত্যুর খবর সত্য হলে এটি একটি বড় ঘটনা হবে। কারণ আরব বিশ্বে তার বেশ প্রভাব ছিল। হামাসের জন্য তার বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। তবে এতে হামাসের কার্যকর নেতৃত্বে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে না। তিনি ইয়াহিয়া সিনওয়ার বা ইসমাইল হানিয়ার মতো শীর্ষ সিদ্ধান্তগ্রহণকারী ছিলেন না।
হামাস এখনো তার মৃত্যুর বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করেনি বা তার উত্তরসূরির নাম ঘোষণা করেনি। সাধারণত নিরাপত্তার কারণে বা কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে তারা এমন ঘোষণা দিতে দেরি করে।
হামাসের নেতৃত্ব কাঠামো গোপনীয় ও খণ্ডিত। এর রাজনৈতিক ব্যুরো অবস্থিত কাতার বা তুরস্কে। আর গাজায় রয়েছে সামরিক নেতৃত্ব। সংগঠনটি সাধারণত শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুর বিষয়টি প্রকাশ করতে সময় নেয়। এই বিলম্বের উদ্দেশ্য হলো সমর্থকদের মনোবল অটুট রাখা এবং দুর্বলতা প্রকাশ না করা।
উদাহরণস্বরূপ, ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও মোহাম্মদ দেইফের মৃত্যুর খবরও প্রাথমিক রিপোর্টের কয়েক মাস পর নিশ্চিত করা হয়েছে। ইসরায়েলের দাবির ৫ মাস পর গত ৩০ আগস্ট ইয়াহইয়া সিনওয়ারের মৃত্যু নিশ্চত করা হয়। একইভাবে, আবু উবায়দার মৃত্যুর বিষয়টি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি এবং কোনো উত্তরসূরির নামও প্রকাশ করা হয়নি। এটি চলমান সংঘাতকালে তথ্য গোপন রাখার হামাসের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
গোপনীয়তা রক্ষা: হামাস তার নেতৃত্বে পরিবর্তনের ঘোষণা সাধারণত তাৎক্ষণিকভাবে দেয় না। এর মাধ্যমে তারা তাদের কার্যক্রম চালানো নেতাদের ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্য হওয়া থেকে রক্ষা করে। খুব অল্পসংখ্যক ব্যক্তিই আবু উবায়দার আসল নাম-পরিচয় জানতেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তার উত্তরসূরিও সম্ভবত একইভাবে গোপনে বাছাই করা হবে।
চলমান সংঘাত: গাজা যুদ্ধের পরিস্থিতি এখনো অনেক উত্তপ্ত। সম্প্রতি ইসরায়েল গাজা সিটিতে অভিযান আরও জোরদার করেছে। এ অবস্থায় নতুন মুখপাত্রের নাম প্রকাশ করা তাকে তাৎক্ষণিকভাবে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। কারণ ইসরায়েল হামাসের শীর্ষ নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করে।
কৌশলগত সময় নির্বাচন: উত্তরসূরির নাম ঘোষণা বিলম্বিত করার মাধ্যমে হামাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। এতে দুর্বলতার বার্তা না দিয়ে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী দেখানো সম্ভব হয়। আবু উবায়দার মৃত্যু নিশ্চিত হলে এটি প্রতীকীভাবে বড় ক্ষতি হবে। তাই নতুন মুখপাত্রকে সামনে আনার জন্য হামাস হয়তো উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করছে।
কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো সামনে আসেনি। তবে হামাসের পূর্ববর্তী ধারা এবং আবু উবায়দার ভূমিকায় নজর দিলে সম্ভাব্য প্রার্থীর বৈশিষ্ট্য অনুমান করা যায়। হামাসের অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব কাঠামো এবং ইয়াহিয়া সিনওয়ারের উত্তরসুরি নির্বাচন থেকে কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যায়। সেগুলো থেকে ধারণা করা যায়, উত্তরসূরির সন্ধান হামাসের ভেতর থেকেই করা হবে।
ইজ্জুদ্দিন আল-হাদ্দাদ (আবু সুওহাইব): গাজা ব্রিগেডের বর্তমান শীর্ষ কমান্ডার। ১৯৮৭ সাল থেকে হামাসের সঙ্গে যুক্ত। নেতৃত্বের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তার নাম উঠে এসেছে। তবে তার সামরিক অভিজ্ঞতা কৌশলগত ও অপারেশনাল ভূমিকায় বেশি মানানসই, মুখপাত্র হিসেবে নয়।
হাইসাম আল-হাওয়াজরি ও হুসেইন ফায়াদ: এরা যথাক্রমে আল-শাতি ও বেইত হানুন ব্যাটালিয়নের কমান্ডার। তাদের যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা আছে, তবে প্রকাশ্য মুখপাত্র হওয়ার মতো কৌশলগত নেতৃত্বগুণ বা ক্যারিশমা নেই। তাই আবু উবায়দার জায়গায় তাদের আসার সম্ভাবনা কম।
মিডিয়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিত্বরা: ২০০৪ সালে হামাস আনুষ্ঠানিকভাবে একটি মিডিয়া অফিস গড়ে তোলে। সেই সময় থেকে আবু উবায়দা ছিলেন একমাত্র মুখপাত্র। এবার সংগঠনটি হয়তো এই অফিস থেকেই কাউকে সামনে আনতে পারে। অথবা কাসাম ব্রিগেডের মধ্য থেকে এমন একজন সদস্যকে বেছে নিতে পারে, যার যোগাযোগ দক্ষতা আছে এবং যিনি সংগঠনের আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ফিলিস্তিনি পরিচয়: হামাস সাধারণত নেতৃত্বে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের অগ্রাধিকার দেয়। বিশেষ করে গাজা বা পশ্চিম তীরের বাসিন্দাদের। এটি তাদের বৈধতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। আবু উবায়দার পরিবার ১৯৪৮ সালের নাকবার সময় নিয়িলিয়া থেকে উৎখাত হয়েছিল। তার মতোই নতুন মুখপাত্রের পেছনেও একই ধরনের ফিলিস্তিনি বংশগত ইতিহাস থাকার সম্ভাবনা বেশি।
মিডিয়ায় দক্ষতা: আবু উবায়দাকে আল-কাসাম ব্রিগেডের প্রচারযুদ্ধের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে বর্ণনা করা হতো। তিনি শক্তিশালী ভাষণ দিতেন, যা আরব বিশ্বে ব্যাপক প্রভাব ফেলত। নতুন মুখপাত্রেরও এমন দক্ষ বক্তৃতা দেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। টেলিগ্রাম, আল-আকসা টিভির মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে দক্ষ হতে হবে এবং প্রতিরোধ ও দৃঢ়তার বার্তা পৌঁছে দিতে পারতে হবে।
গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা: আবু উবায়দা সবসময় মুখোশ পরে ও লাল কেফিয়াহ ব্যবহার করে প্রকাশ্যে আসতেন। তার মতো উত্তরসূরিও সম্ভবত পরিচয় গোপন রাখবেন। হামাস তাদের নেতাদের পরিচয় কঠোরভাবে গোপন রাখে। তাই নতুন মুখপাত্রও ছদ্মনামে পরিচিত হবেন বলে ধারণা করা যায়।
আদর্শিক সামঞ্জস্যতা: উত্তরসূরিকে অবশ্যই হামাসের ইসলামপন্থী আদর্শ ধারণ করতে হবে। হামাসের প্রতিরোধকে ‘জায়োনিস্ট দখলের’ বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জনগণ ছাড়াও বৈশ্বিক পর্যায়ে সমর্থন আদায় করতে হবে, যেমনটি আবু উবায়দা করেছিলেন।
বাহ্যিক নেতৃত্বের সম্ভাবনা: হামাসের রাজনৈতিক বার্তা সাধারণত কাতারভিত্তিক খালেদ মেশালের মতো নেতারা দেন। কিন্তু আল-কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র সাধারণত গাজা থেকে আসেন। তাই নতুন মুখপাত্রও গাজার সামরিক কাঠামো থেকেই আসার সম্ভাবনা বেশি।
উত্তরসূরির নাম প্রকাশ না করার বিষয়টি ইঙ্গিত দেয় যে হামাস এখনো বিকল্প খুঁজছে বা ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য গোপন করছে। তবে পছন্দ নির্ধারণে নিরাপত্তা ও ধারাবাহিকতাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ধারণা করা যায়, হামাস গাজাভিত্তিক, মিডিয়ায় দক্ষ, দৃঢ় ফিলিস্তিনি পরিচয়ের এবং পরিচয় গোপন রাখতে সক্ষম কাসাম ব্রিগেডের কাউকেই বেছে নেবে। ইজ্জুদ্দিন আল-হাদ্দাদ, হাইসাম আল-হাওয়াজরি বা হুসেইন ফায়াদের নাম নেতৃত্বের প্রেক্ষাপটে উঠলেও তারা মুখপাত্র হওয়ার মতো উপযুক্ত নন, কারণ তাদের ভূমিকা মূলত সামরিক কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ। হামাসের গোপনীয়তা নীতি ও চলমান সংঘাতের কারণে উত্তরসূরি ঘোষণায় আরও সময় লাগতে পারে।
তথ্যসূত্র: মিডল ইস্ট আই, আল জাজিরা, মিডল ইস্ট মনিটর
ফিলিস্তিনের সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবায়দাকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের দাবি, শনিবার (৩০ আগস্ট ২০২৫) আবু উবায়দাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে, যদিও হামাস এটি নিশ্চিত করেনি।
তাঁর নিহত হওয়ার খবরে ইসরায়েল উৎসব করছে। কারণ তিনি হামাসের প্রচারযুদ্ধের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং ইসরায়েল তাঁকে বহুবার গুপ্তহত্যার লক্ষ্যবস্তু করে। তাঁর জনপ্রিয়তা এবং প্রভাব ইসরায়েলের ‘মাথাব্যথার’ একটি বড় কারণ ছিল।
গত দুই দশক ধরে তিনি লাল-সাদা কেফিয়ায় মুখ ঢেকে গণমাধ্যমে হামাসের সামরিক সাফল্য ও বক্তব্য তুলে ধরতেন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের চলমান গণহত্যার সময় তিনি ফিলিস্তিনি মুক্তিসংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠেন এবং বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। তাঁর দৃঢ় কণ্ঠ, রহস্যময় পরিচয় এবং তেজি ভাষণ তাঁকে বীর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
তার বক্তৃতা হামাসের প্রতি সাধারণ জনগণের সমর্থন জাগিয়েছে এবং বৈশ্বিক জনমত গঠনে প্রভাব ফেলেছে। তার মৃত্যুকে হামাসের ‘ন্যারেটিভ ওয়ার’ বা ‘বয়ানের যুদ্ধে’ একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইসরায়েল তার প্রচারণার মোকাবিলায় হিমশিম খেত। তাই তার মৃত্যুকে হামাসের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধক্ষমতা দুর্বল করার একটি ধাপ হিসেবে দেখছে ইসরায়েল।
আবু উবায়দার আসল নাম বা ব্যক্তিগত তথ্য কখনো প্রকাশ করা হয়নি। তিনি ২০০০ সাল থেকে ছদ্মনামে কাজ করতেন, যা ইসলামের ঐতিহাসিক সেনাপতি আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহর নাম থেকে গ্রহণ করা। তাঁর পরিবার ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন থেকে উচ্ছেদের শিকার হয়ে গাজায় আশ্রয় নিয়েছিল।
২০০৪ সাল থেকে তিনি হামাসের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর ভাষণ আরব বিশ্বে এতটাই প্রভাবশালী ছিল যে তা শুনতে বিয়ের অনুষ্ঠানও থেমে যেত। তাঁর নামে গান রচিত হয়েছে, এবং তিনি ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হন।
ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলো তাঁকে সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনা করে এবং যুক্তরাষ্ট্র ২০২৪ সালে তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। হামাসের নীরবতা এবং ইসরায়েলের দাবির মধ্যে তাঁর নিহত হওয়ার খবর এখনো অনিশ্চিত। তবুও এই খবর ফিলিস্তিনিদের মধ্যে গভীর শোকের সৃষ্টি করেছে।
তার মৃত্যুর খবর সত্য হলে এটি একটি বড় ঘটনা হবে। কারণ আরব বিশ্বে তার বেশ প্রভাব ছিল। হামাসের জন্য তার বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। তবে এতে হামাসের কার্যকর নেতৃত্বে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে না। তিনি ইয়াহিয়া সিনওয়ার বা ইসমাইল হানিয়ার মতো শীর্ষ সিদ্ধান্তগ্রহণকারী ছিলেন না।
হামাস এখনো তার মৃত্যুর বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করেনি বা তার উত্তরসূরির নাম ঘোষণা করেনি। সাধারণত নিরাপত্তার কারণে বা কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে তারা এমন ঘোষণা দিতে দেরি করে।
হামাসের নেতৃত্ব কাঠামো গোপনীয় ও খণ্ডিত। এর রাজনৈতিক ব্যুরো অবস্থিত কাতার বা তুরস্কে। আর গাজায় রয়েছে সামরিক নেতৃত্ব। সংগঠনটি সাধারণত শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুর বিষয়টি প্রকাশ করতে সময় নেয়। এই বিলম্বের উদ্দেশ্য হলো সমর্থকদের মনোবল অটুট রাখা এবং দুর্বলতা প্রকাশ না করা।
উদাহরণস্বরূপ, ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও মোহাম্মদ দেইফের মৃত্যুর খবরও প্রাথমিক রিপোর্টের কয়েক মাস পর নিশ্চিত করা হয়েছে। ইসরায়েলের দাবির ৫ মাস পর গত ৩০ আগস্ট ইয়াহইয়া সিনওয়ারের মৃত্যু নিশ্চত করা হয়। একইভাবে, আবু উবায়দার মৃত্যুর বিষয়টি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি এবং কোনো উত্তরসূরির নামও প্রকাশ করা হয়নি। এটি চলমান সংঘাতকালে তথ্য গোপন রাখার হামাসের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
গোপনীয়তা রক্ষা: হামাস তার নেতৃত্বে পরিবর্তনের ঘোষণা সাধারণত তাৎক্ষণিকভাবে দেয় না। এর মাধ্যমে তারা তাদের কার্যক্রম চালানো নেতাদের ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্য হওয়া থেকে রক্ষা করে। খুব অল্পসংখ্যক ব্যক্তিই আবু উবায়দার আসল নাম-পরিচয় জানতেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তার উত্তরসূরিও সম্ভবত একইভাবে গোপনে বাছাই করা হবে।
চলমান সংঘাত: গাজা যুদ্ধের পরিস্থিতি এখনো অনেক উত্তপ্ত। সম্প্রতি ইসরায়েল গাজা সিটিতে অভিযান আরও জোরদার করেছে। এ অবস্থায় নতুন মুখপাত্রের নাম প্রকাশ করা তাকে তাৎক্ষণিকভাবে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। কারণ ইসরায়েল হামাসের শীর্ষ নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করে।
কৌশলগত সময় নির্বাচন: উত্তরসূরির নাম ঘোষণা বিলম্বিত করার মাধ্যমে হামাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। এতে দুর্বলতার বার্তা না দিয়ে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী দেখানো সম্ভব হয়। আবু উবায়দার মৃত্যু নিশ্চিত হলে এটি প্রতীকীভাবে বড় ক্ষতি হবে। তাই নতুন মুখপাত্রকে সামনে আনার জন্য হামাস হয়তো উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করছে।
কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো সামনে আসেনি। তবে হামাসের পূর্ববর্তী ধারা এবং আবু উবায়দার ভূমিকায় নজর দিলে সম্ভাব্য প্রার্থীর বৈশিষ্ট্য অনুমান করা যায়। হামাসের অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব কাঠামো এবং ইয়াহিয়া সিনওয়ারের উত্তরসুরি নির্বাচন থেকে কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যায়। সেগুলো থেকে ধারণা করা যায়, উত্তরসূরির সন্ধান হামাসের ভেতর থেকেই করা হবে।
ইজ্জুদ্দিন আল-হাদ্দাদ (আবু সুওহাইব): গাজা ব্রিগেডের বর্তমান শীর্ষ কমান্ডার। ১৯৮৭ সাল থেকে হামাসের সঙ্গে যুক্ত। নেতৃত্বের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তার নাম উঠে এসেছে। তবে তার সামরিক অভিজ্ঞতা কৌশলগত ও অপারেশনাল ভূমিকায় বেশি মানানসই, মুখপাত্র হিসেবে নয়।
হাইসাম আল-হাওয়াজরি ও হুসেইন ফায়াদ: এরা যথাক্রমে আল-শাতি ও বেইত হানুন ব্যাটালিয়নের কমান্ডার। তাদের যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা আছে, তবে প্রকাশ্য মুখপাত্র হওয়ার মতো কৌশলগত নেতৃত্বগুণ বা ক্যারিশমা নেই। তাই আবু উবায়দার জায়গায় তাদের আসার সম্ভাবনা কম।
মিডিয়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিত্বরা: ২০০৪ সালে হামাস আনুষ্ঠানিকভাবে একটি মিডিয়া অফিস গড়ে তোলে। সেই সময় থেকে আবু উবায়দা ছিলেন একমাত্র মুখপাত্র। এবার সংগঠনটি হয়তো এই অফিস থেকেই কাউকে সামনে আনতে পারে। অথবা কাসাম ব্রিগেডের মধ্য থেকে এমন একজন সদস্যকে বেছে নিতে পারে, যার যোগাযোগ দক্ষতা আছে এবং যিনি সংগঠনের আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ফিলিস্তিনি পরিচয়: হামাস সাধারণত নেতৃত্বে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের অগ্রাধিকার দেয়। বিশেষ করে গাজা বা পশ্চিম তীরের বাসিন্দাদের। এটি তাদের বৈধতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। আবু উবায়দার পরিবার ১৯৪৮ সালের নাকবার সময় নিয়িলিয়া থেকে উৎখাত হয়েছিল। তার মতোই নতুন মুখপাত্রের পেছনেও একই ধরনের ফিলিস্তিনি বংশগত ইতিহাস থাকার সম্ভাবনা বেশি।
মিডিয়ায় দক্ষতা: আবু উবায়দাকে আল-কাসাম ব্রিগেডের প্রচারযুদ্ধের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে বর্ণনা করা হতো। তিনি শক্তিশালী ভাষণ দিতেন, যা আরব বিশ্বে ব্যাপক প্রভাব ফেলত। নতুন মুখপাত্রেরও এমন দক্ষ বক্তৃতা দেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। টেলিগ্রাম, আল-আকসা টিভির মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে দক্ষ হতে হবে এবং প্রতিরোধ ও দৃঢ়তার বার্তা পৌঁছে দিতে পারতে হবে।
গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা: আবু উবায়দা সবসময় মুখোশ পরে ও লাল কেফিয়াহ ব্যবহার করে প্রকাশ্যে আসতেন। তার মতো উত্তরসূরিও সম্ভবত পরিচয় গোপন রাখবেন। হামাস তাদের নেতাদের পরিচয় কঠোরভাবে গোপন রাখে। তাই নতুন মুখপাত্রও ছদ্মনামে পরিচিত হবেন বলে ধারণা করা যায়।
আদর্শিক সামঞ্জস্যতা: উত্তরসূরিকে অবশ্যই হামাসের ইসলামপন্থী আদর্শ ধারণ করতে হবে। হামাসের প্রতিরোধকে ‘জায়োনিস্ট দখলের’ বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জনগণ ছাড়াও বৈশ্বিক পর্যায়ে সমর্থন আদায় করতে হবে, যেমনটি আবু উবায়দা করেছিলেন।
বাহ্যিক নেতৃত্বের সম্ভাবনা: হামাসের রাজনৈতিক বার্তা সাধারণত কাতারভিত্তিক খালেদ মেশালের মতো নেতারা দেন। কিন্তু আল-কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র সাধারণত গাজা থেকে আসেন। তাই নতুন মুখপাত্রও গাজার সামরিক কাঠামো থেকেই আসার সম্ভাবনা বেশি।
উত্তরসূরির নাম প্রকাশ না করার বিষয়টি ইঙ্গিত দেয় যে হামাস এখনো বিকল্প খুঁজছে বা ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য গোপন করছে। তবে পছন্দ নির্ধারণে নিরাপত্তা ও ধারাবাহিকতাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ধারণা করা যায়, হামাস গাজাভিত্তিক, মিডিয়ায় দক্ষ, দৃঢ় ফিলিস্তিনি পরিচয়ের এবং পরিচয় গোপন রাখতে সক্ষম কাসাম ব্রিগেডের কাউকেই বেছে নেবে। ইজ্জুদ্দিন আল-হাদ্দাদ, হাইসাম আল-হাওয়াজরি বা হুসেইন ফায়াদের নাম নেতৃত্বের প্রেক্ষাপটে উঠলেও তারা মুখপাত্র হওয়ার মতো উপযুক্ত নন, কারণ তাদের ভূমিকা মূলত সামরিক কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ। হামাসের গোপনীয়তা নীতি ও চলমান সংঘাতের কারণে উত্তরসূরি ঘোষণায় আরও সময় লাগতে পারে।
তথ্যসূত্র: মিডল ইস্ট আই, আল জাজিরা, মিডল ইস্ট মনিটর
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বহু দেশ, মানবাধিকার সংগঠন ও অন্যান্য সংস্থার গণহত্যার অভিযোগের সঙ্গে এখন তাদের এই প্রস্তাবও যুক্ত হলো। এই প্রস্তাবের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে যে গণহত্যা বিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষক মহলও গাজায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে দেখছে।
৮ ঘণ্টা আগেদুনিয়াজুড়ে সোনার দাম এখন ইতিহাসে সর্বোচ্চ। কিন্তু সোনাকে কেন এত মূল্যবান মনে করা হয়, আর কেনই-বা ঘন ঘন বাড়ে-কমে সোনার দাম? বাংলাদেশে সোনার দাম এখন কত? এসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে এ লেখায়।
১ দিন আগেগাজার ফিলিস্তিনিদের ওপর হত্যাযজ্ঞ এবং না খাইয়ে মারার বৈধতা দিতে ইসরায়েল শুরু থেকেই এক অভিনব কৌশল নেয়। হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শিশুদের শিরশ্ছেদ, গণধর্ষণ কিংবা হাসপাতালগুলোকে ‘কমান্ড সেন্টার’ হিসেবে ব্যবহার করার মতো ভয়াবহ অভিযোগ ছড়ানো হয়। ইসরায়েল এমনকি দাবি করে, জাতিসংঘও আসলে হামাসকে আড়ালে সুবিধা দে
১ দিন আগেফাইভ-জি কী, ফাইভ-জি বনাম ফোর-জি, কী সুবিধা নিয়ে এল ফাইভ-জি, যেভাবে চালু করবেন ফাইভ-জি, গুনতে হবে কী অতিরিক্ত টাকা– ফাইভ-জি নিয়ে যত প্রশ্নের জবাব পড়ুন এই লেখায়।
২ দিন আগে