leadT1ad

যে তিন প্রতিশ্রুতি রাখলে বিশ্ব এখনো জলবায়ু বিপর্যয় এড়াতে পারে

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ২৫
নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাড়ানো, জ্বালানি সাশ্রয় এবং মিথেন নির্গমন কমানোর তিনটি প্রতিশ্রুতি রাখলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ ডিগ্রি কমানো সম্ভব।

কপ৩০ জলবায়ু সম্মেলনে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জ্বালানি সাশ্রয় এবং মিথেন নির্গমন কমানোর বিষয়ে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা গেলে প্রায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব।

বিশ্লেষণে আরও বলা হয়েছে, যদি এই প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়িত হয়, তাহলে জলবায়ু বিপর্যয় এড়ানোও সম্ভব হবে।

সরকারগুলো ইতোমধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন তিনগুণ বাড়াতে সম্মত হয়েছে। তাদের লক্ষ্য জ্বালানি দক্ষতা দ্বিগুণ করা এবং মিথেন নির্গমন উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো।

তবে এগুলো বাস্তবায়ন হবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত। গত ১০ নভেম্বর জলবায়ু সংকট নিয়ে আলোচনার জন্য দেশগুলো ব্রাজিলে জড়ো হয়েছে, যা চলবে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত।

ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্র্যাকার জোটের মতে, প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করা গেলে এ শতকে সম্ভাব্য তাপমাত্রা বৃদ্ধি ০.৯ ডিগ্রি কমানো সম্ভব হবে। এটি হবে এক ‘মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা’।

জি২০ এর দেশগুলো শুধু এই ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ২০৩৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ১৮ বিলিয়ন টন কমানো যাবে।

এর ফলে আগামী দশকে বৈশ্বিক উষ্ণতার হার এক-তৃতীয়াংশ কমবে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে তা অর্ধেকে নামবে।

ক্লাইমেট অ্যানালিটিক্সের প্রধান নির্বাহী বিল হেয়ার বলেন, যদি দেশগুলো ২০৩৫ সালের মধ্যে এই প্রতিশ্রুতি পূরণ করে, তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনের গতি দ্রুত কমবে।

তিনি বলেন, এতে এ শতকের বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ২.৬ ডিগ্রি থেকে কমে প্রায় ১.৭ ডিগ্রিতে নেমে আসতে পারে।

এই হার প্রাক-শিল্পবিপ্লব যুগের তুলনায় বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যের কাছাকাছি।

হেয়ার বলেন, এই ফলাফল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এটি হবে প্রথম বড় উন্নতি এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।

বন উজাড় বন্ধ করার প্রতিশ্রুতিও এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এই প্রতিশ্রুতি পূরণ করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বনই পৃথিবীর প্রধান ‘কার্বন সিংক’, যা কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে।

বন ধ্বংস অব্যাহত থাকলে জীবাশ্ম জ্বালানির নির্গমন ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।

হেয়ার বলেন, এসব লক্ষ্য ইতোমধ্যেই আলোচনা ও সম্মতির মাধ্যমে নির্ধারিত হয়েছে। এখন শুধু বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

২০২৩ সালে দুবাইয়ের কপ২৮ সম্মেলনে নবায়নযোগ্য জ্বালানি তিনগুণ এবং জ্বালানি সাশ্রয় দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

এরপর থেকে নবায়নযোগ্য খাতে বৈশ্বিক বিনিয়োগ বেড়েছে এবং গত বছর তা ২ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, যা জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগের দ্বিগুণেরও বেশি।

চীনের নবায়নযোগ্য খাত দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতও সৌর ও বায়ুশক্তিতে বিপুল বিনিয়োগ করে লক্ষ্য পাঁচ বছর আগেই অর্জন করেছে।

তবে মিথেন নির্গমন কমানো অনেক বেশি কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৬০টিরও বেশি দেশ মিথেন কমানোর বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতিতে নাম লিখিয়েছে। তাদের লক্ষ্য ২০২০ সালের তুলনায় ২০৩০ সালের মধ্যে নির্গমন ৩০ শতাংশ কমানো।

কিন্তু মিথেন নির্গমন বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক দেশ নির্গমন কম দেখানোরও অভিযোগের মুখে।

রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র—এই তিনটি দেশই বড় মাত্রায় মিথেন নির্গমন ঘটাচ্ছে। তাদের তেল ও গ্যাস খাত থেকে নির্গত মিথেন সংগ্রহ করা বা পরিত্যক্ত কয়লাখনি ও তেলকূপ বন্ধ করার মতো পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনাও কম।

হেয়ার বলেন, সরকারগুলোকে এখনই প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে।

বেলেমে কপ৩০–এ দেশগুলোকে নতুন প্রতিক্রিয়া জানাতে বলা হয়েছে, কারণ বর্তমান নির্গমন–হ্রাস পরিকল্পনা বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২.৫ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়তে দেবে। এটা ১.৫ ডিগ্রি লক্ষ্যের অনেক উপরে।

বুধবার দেশগুলো ব্রাজিলিয়ান সভাপতির কাছ থেকে নতুন খসড়া আশা করছিল। এ খসড়ায় এসব বিষয় ও জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ‘রূপান্তর’–সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতিগুলোর উল্লেখ থাকবে। এই প্রতিশ্রুতিও কপ২৮–এ দেওয়া হয়েছিল।

কিছু দেশ জীবাশ্ম জ্বালানি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার রোডম্যাপ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করতে চায়। তবে তারা তেল–গ্যাস সমৃদ্ধ দেশগুলোর তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়তে পারে।

নিউক্লাইমেট ইনস্টিটিউটের নিকলাস হোহনে বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি তিনগুণ করা, জ্বালানি দক্ষতা দ্বিগুণ করা ও মিথেন কমানো—এই তিন পদক্ষেপ এত বড় পরিবর্তন আনবে যে তা কার্যত জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার যাত্রা শুরু করবে।

তিনি বলেন, সংখ্যাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০৩০–এর দশকের মাঝামাঝি থেকেই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ব্যাপকহারে কমতে পারে। যা আমাদের বৈশ্বিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে রূপান্তর বাস্তবায়নের দিকেই নিয়ে যাবে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Ad 300x250

সম্পর্কিত