leadT1ad

বিশ্ব টয়লেট দিবস ২০২৫

ভবিষ্যতের উপযোগী টয়লেট দরকার এখনই

আজ বিশ্ব টয়লেট দিবস। কিন্তু আজও পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ এই মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। জাতিসংঘ বলছে, ভবিষ্যতের পৃথিবীতে স্যানিটেশন ব্যবস্থাকে ‘ফিউচার-রেডি’ হতে হবে।

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক

ছবি: ইউএন

দুনিয়া যতই বদলাক, একটাই সত্য কখনো বদলায় না, আমাদের সবসময় টয়লেটের দরকার হবে। নিরাপদ স্যানিটেশন শুধু রোগ থেকে রক্ষা করে না, একই সঙ্গে পরিবেশকে রাখে পরিচ্ছন্ন। কিন্তু আজও পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ এই মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। এই অভাবের সবচেয়ে বড় চাপ পড়ে গরিব মানুষের ওপর, বিশেষ করে নারী ও মেয়েদের ওপর।

স্যানিটেশন ব্যবস্থার ওপর এই চাপ কেবল সময়ের সঙ্গে বাড়ছেই। অনেক দেশে পুরোনো অবকাঠামো ভেঙে পড়ছে, নতুন বিনিয়োগের গতি চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। দ্রুত নগরায়ন আরও চাপে ফেলছে শহরগুলোর নর্দমা ও বর্জ্য ব্যবস্থাকে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব। এসব মিলিয়ে একটি টেকসই স্যানিটেশন ব্যবস্থা এখন আর শুধু উন্নয়ন নয়, বরং জলবায়ুর সঙ্গে অভিযোজনের জন্যও জরুরি।

ভবিষ্যতের জন্য টয়লেট হতে হবে

জাতিসংঘ বলছে, ভবিষ্যতের পৃথিবীতে স্যানিটেশন ব্যবস্থাকে শুধু টয়লেট সরবরাহের পর্যায়ে রাখলে হবে না। এগুলোকে হতে হবে আরও আধুনিক, শক্তিশালী এবং জলবায়ু–সহনশীল। তাই ভবিষ্যতের জন্য ‘ফিউচার-রেডি’স্যানিটেশন তৈরি করা ছাড়া বিকল্প নেই।

প্রথমত, টয়লেট হতে হবে সবার নাগালের মধ্যে। সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থান, লিঙ্গ বা প্রতিবন্ধকতা, কোনো কিছুই যেন একজন মানুষের টয়লেট ব্যবহারের অধিকারকে সীমাবদ্ধ করতে না পারে। শহর, গ্রাম, পাহাড়ি অঞ্চল, দ্বীপ, বস্তি—সব জায়গায় মানুষের চাহিদা অনুযায়ী স্যানিটেশন সুবিধা পৌঁছানোই ভবিষ্যতের বড় চ্যালেঞ্জ।

বিশ্বে এখনও নিরাপদ স্যানিটেশন সুবিধার ঘাটতি ভয়াবহ রকমের। জাতিসংঘের ২০২৫ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন মানুষ এখনও ‘নিরাপদ স্যানিটেশন’ সুবিধা পাচ্ছে না।

দ্বিতীয়ত, ভবিষ্যতের টয়লেটকে হতে হবে বন্যা, খরা, প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা যেকোনো জলবায়ু বিপর্যয়ের মধ্যে টিকে থাকার মতো সক্ষম। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা বিশ্বেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় টয়লেট ব্যবস্থা। অনেক অঞ্চলে বন্যার সময় টয়লেট তলিয়ে গিয়ে পানি দূষিত হয়, রোগ ছড়ায়। আবার খরার সময় পর্যাপ্ত পানি না থাকায় নষ্ট হয় স্যানিটেশন ব্যবস্থার কার্যকারিতা। তাই ভবিষ্যতের স্যানিটেশনকে এসব জলবায়ু বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে।

তৃতীয়ত, টয়লেট এমন হতে হবে যাতে গ্রিনহাউস গ্যাস কম নিঃসরণ হয়। ভবিষ্যতের টয়লেট প্রযুক্তি তাই হতে হবে পরিবেশবান্ধব, যেখানে বর্জ্য পুনর্ব্যবহার হবে, বায়োগ্যাস উৎপাদন করা যাবে, বা এমনভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হবে যাতে পরিবেশগত ক্ষতি কমে যায়।

চতুর্থত, একটি টয়লেট নির্মাণ করাই শেষ কাজ নয়, এগুলোকে ধরে রাখতে প্রয়োজন শক্তিশালী নীতিগত ব্যবস্থাপনা। স্থানীয় সরকার, পানি ও স্যানিটেশন বিভাগ, উন্নয়ন সংস্থা, বেসরকারি খাত—সবার অংশগ্রহণ ছাড়া একটি স্থায়ী স্যানিটেশন ব্যবস্থা সম্ভব নয়। আর শুধু অবকাঠামো নয়, দরকার নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, প্রশিক্ষিত কর্মী, আর্থিক নিরাপত্তা এবং সমন্বিত নীতিমালা।

টয়লেট এমন হতে হবে যাতে গ্রিনহাউস গ্যাস কম নিঃসরণ হয়। ছবি: জাতিসংঘের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া
টয়লেট এমন হতে হবে যাতে গ্রিনহাউস গ্যাস কম নিঃসরণ হয়। ছবি: জাতিসংঘের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

বৈশ্বিক পরিস্থিতি

বিশ্বে এখনও নিরাপদ স্যানিটেশন সুবিধার ঘাটতি ভয়াবহ রকমের। জাতিসংঘের ২০২৫ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন মানুষ এখনও ‘নিরাপদ স্যানিটেশন’ সুবিধা পাচ্ছে না। অর্থাৎ বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষই মৌলিক এই অধিকার থেকে বঞ্চিত। শুধু তাই নয়, ৩৫৪ মিলিয়ন মানুষ আজও খোলা জায়গায় প্রাকৃতিক প্রয়োজন মেটাতে বাধ্য হচ্ছে, যা গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য।

অনিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে প্রতিদিন ১,০০০ শিশুর মৃত্যু হচ্ছে, যা বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় সতর্ক সংকেত। এদিকে জলবায়ু সংকটও পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার ফলে উপকূলীয় এলাকার স্যানিটেশন অবকাঠামো তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ বলছে, এমন হতে থাকলে ২০৩০ সালেও প্রায় তিন বিলিয়ন মানুষ নিরাপদ টয়লেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকবে। সারা বিশ্বে সবার জন্য নিরাপদ স্যানিটেশন নিশ্চিত করতে অগ্রগতির গতি এখনকার তুলনায় ৬ গুণ বাড়াতে হবে। আর নিম্ন-আয়ের দেশগুলোতে এই গতি বাড়াতে হবে ১৮ গুণ, নইলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব হয়ে পড়বে।

তথ্যসূত্র: ইউএন, ডব্লিউএইচও

Ad 300x250

সম্পর্কিত