.png)

স্ট্রিম ডেস্ক

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতির এক কিংবদন্তিতুল্য পুরুষ। তাঁর সংগ্রামী ও আপোষহীন নেতৃত্ব অগণিত মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিল। ‘মজলুম জননেতা’ হিসেবে পরিচিত এই নেতার রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকেই রাজনীতিতে এসেছিলেন। তাঁরা পরে জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর অনুসারীরা মূলত কৃষক-শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু পরে হেঁটেছেন ভিন্ন পথে।
মওলানা ভাসানীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ করলেও শেখ মুজিবুর রহমান মূলত ছিলেন হসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অনুসারী। মাওলানার অনুসারীদের মধ্যে অনেক উল্লেখযোগ্য নেতা রয়েছেন, তাঁদের রাজনৈতিক পথচলা বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়েছে। সেসব অনুসারীদের কয়েকজনের কথা এখানে উল্লেখ করা হলো—
মওলানা ভাসানী ১৯৫৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) প্রতিষ্ঠা করেন, যা ছিল তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল। এই দলের মাধ্যমে অনেক নেতাই ভাসানীর সংস্পর্শে আসেন এবং তার রাজনৈতিক শিষ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন:
মশিউর রহমান (যাদু মিয়া): তিনি ছিলেন ভাসানীর একজন অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহচর এবং ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক। ভাসানীর মৃত্যুর পর তিনি ন্যাপের একাংশের নেতৃত্ব দেন এবং পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের আহ্বানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) যোগ দেন। তাঁকে বিএনপি গঠনে অন্যতম প্রধান সংগঠক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ: তিনি ন্যাপের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। যদিও পরবর্তীতে ন্যাপে বিভক্তি দেখা দিলে তিনি মস্কোপন্থী অংশের নেতৃত্ব দেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে মওলানা ভাসানীর প্রভাব ছিল অপরিসীম। মুক্তিযুদ্ধের সময়েও মোজাফফর আহমদ ছিলেন ভাসানীর রাজনৈতিক দর্শনের ধারক—সাম্রাজ্যবাদবিরোধী, কৃষক-শ্রমিকমুখী ও ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদ ছিল সেই আদর্শের মূল। মোজাফফর আহমদ ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭৯ সালে অধ্যাপক মোজাফফর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হলে তিনি ন্যাপ, সিপিবি এবং প্রগতিশীল শক্তির পক্ষে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২০১৯ সালের ২৩ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ: উপমহাদেশের কিংবদন্তী কৃষক নেতা হাজী মোহাম্মদ দানেশও মওলানা ভাসানীর একজন একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। তিনি ভাসানীর সঙ্গে একত্রে কৃষক-শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। হাজী মোহাম্মদ দানেশকে তেভাগা আন্দোলনের ‘জনক’ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম প্রবক্তা। তিনি পূর্ব বাঙ্গলার কমিউনিস্ট আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ভাসানীর ন্যাপের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পরে জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে দানেশ জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়ন গঠন করেন। পরে বাকশালে যোগ দেন এবং এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। ১৯৭৬ সালে তিনি গণমুক্তি ইউনিয়ন পুনরায় গঠন করেন। পরে ১৯৮০ সালে গণতান্ত্রিক পার্টি নামক দল গঠনের জন্য ইউনিয়ন বিলুপ্ত করেন। ১৯৮৬ সালে গণতান্ত্রিক পার্টিকে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে যুক্ত করা হয়।
মওলানা ভাসানীর অনেক অনুসারীই পরবর্তীতে বিএনপির রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন:
আবদুল মান্নান ভূঁইয়া: তিনি ছাত্রজীবনে ভাসানীপন্থী ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন এবং পরবর্তীতে ন্যাপের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তিনি মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তান কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। ভাসানীর মৃত্যুর পর তিনি বিএনপিতে যোগ দেন এবং ১৯৯৬-২০০৭ পর্যন্ত দীর্ঘ ১১ বছর দলের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
খন্দকার দেলোয়ার হোসেন: তিনি ১৯৫৭ সাল থেকে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাপের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন এবং ২০০৭ সালে দলের মহাসচিব নির্বাচিত হয়ে ২০১১ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেই পদে বহাল ছিলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: বিএনপির বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ছাত্রজীবনে ভাসানীর অনুসারী ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ভাসানীপন্থী ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম: ভাসানীর দ্বারা প্রশিক্ষিত আরেক আলোচিত নেতা। শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর হলেও তাঁর রাজনৈতিক প্রাথমিক গঠনে ভাসানীর প্রভাব ছিল প্রবল। যুক্তফ্রন্টের সময়কার আন্দোলনে তিনি ভাসানীর কর্মীদের সঙ্গে মাঠে কাজ করেছেন। পরবর্তীতে মুজিবনেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাও ছিলেন, কিন্তু শেকড়ের জায়গাটি ছিল ভাসানীর রাজনীতি।
শামসুল হক: ভাসানীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার প্রথম সারির ছাত্র। টাঙ্গাইলের শামসুল হক ছিলেন ভাসানীর অত্যন্ত বিশ্বস্ত সহযোগী। ভাসানীর সঙ্গে থেকেই তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনে নেতৃত্ব দেন। তাঁকে বলা হয় ভাসানীর প্রশাসনিক মেধার ধারক—দল পরিচালনায় ভাসানীর পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর। তিনি ছিলেন ভাসানীর কূটনৈতিক ও সাংগঠনিক ভরসা।
মণি সিংহ: কমিউনিস্ট আন্দোলন ও ভাসানীর আদর্শিক মৈত্রী। কমিউনিস্ট নেতা মণি সিংহ যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে ভাসানীর দলের রাজনীতিতে ছিলেন না, কিন্তু ভাসানীর সাম্রাজ্যবাদবিরোধী রাজনীতি তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে ভাসানী ও কমিউনিস্টদের ঐক্য গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ভাসানীর জনমুখী রাজনীতি কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে একটি শক্তিশালী মাঠভিত্তিক সম্পর্ক সৃষ্টি করে।
হায়দার আকবর খান: হায়দার আকবর খান রনো তাঁর রাজনৈতিক জীবনের প্রথম দিকে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর অনুসারী ও সহযোদ্ধা ছিলেন। যদিও পরবর্তীতে তিনি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী ধারার কমিউনিস্ট রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন, কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ ও বিকাশে মওলানা ভাসানীর প্রভাব ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি ১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৭০ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ের রণাঙ্গনের সৈনিক এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও নেতা। ১৯৭২ সালে তিনি অন্যান্য রাজনৈতিক সহকর্মীদের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (লেনিনবাদী) গঠন করেন। ১৯৭৯ সালে দলের নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি নামকরণ করা হয়। ১৯৭৯-৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৮২-১৯৯০ এর সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন ও ১৯৯০ এর গণ অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ও নেতা ছিলেন। ২০১২ সালে তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হন। ২০২৪ সালের ১১ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী জাফর: কাজী জাফর আহমদ তাঁর রাজনৈতিক জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ পর্বে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর একজন একনিষ্ঠ অনুসারী এবং অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। যদিও তার রাজনৈতিক জীবনের শেষভাগ ভিন্ন পথে প্রবাহিত হয়েছে, কিন্তু তাঁর উত্থান ও বিকাশে মওলানা ভাসানীর প্রভাব ছিল অপরিসীম।
কাজী জাফর আহমদ তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন একজন প্রভাবশালী ছাত্রনেতা হিসেবে। তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ছাত্রজীবন শেষে তিনি শ্রমিক রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং দীর্ঘকাল বাংলা শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
মওলানা ভাসানীর একজন একনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে কাজী জাফর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তাঁর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তবে পরবর্তীকালে তার রাজনৈতিক ধারায় পরিবর্তন আসে। তিনি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভায় শিক্ষামন্ত্রী হন এবং পরে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৮৯ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন।
জীবনের শেষ দিকে, এরশাদের সঙ্গে মতবিরোধের ফলে তিনি ২০১৩ সালে জাতীয় পার্টি (জাফর) নামে নতুন দল গঠন করেন এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিয়ে আমৃত্যু সেই দলের চেয়ারম্যান ছিলেন।
রাশেদ খান মেনন: বাংলাদেশের একজন বামপন্থী ধারার রাজনৈতিক নেতা। তিনি তার রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর একজন অনুসারী ও ভাবশিষ্য ছিলেন। বাংলাদেশের বামপন্থী রাজনীতির অন্যতম এই পুরোধা ব্যক্তিত্বের রাজনৈতিক বিকাশে মওলানা ভাসানীর আদর্শ ও নেতৃত্বের গভীর প্রভাব ছিল।
ষাটের দশকে মেনন যখন ছাত্র রাজনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন, তখন তিনি মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সমর্থক ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। ১৯৬৩-৬৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন। এই সময়ে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন এবং শিক্ষা আন্দোলনে তিনি ভাসানীর সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদ বিরোধী নীতির দ্বারা অনুপ্রাণিত হন।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পর জেল থেকে মুক্তি পেয়ে রাশেদ খান মেনন সরাসরি মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন কৃষক সমিতিতে যোগ দেন। তিনি সন্তোষে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক কৃষক সম্মেলনের অন্যতম সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন কৃষক সমিতির দপ্তর সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে রাশেদ খান মেনন ও কাজী জাফর আহমদ ন্যাপের তরুণ বামপন্থী অংশকে নিয়ে ১৯৭৪ সালে ইউনাইটেড পিপলস পার্টি (ইউপিপি) গঠন করেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গঠন করেন এবং বর্তমানে এই দলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের জন্য গঠিত মন্ত্রিসভায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। এই নির্বাচনে তিনি ঢাকা থেকে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ২০১৮ ও ২০২৪ সালের একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করলে তিনি সংসদ সদস্য পদ হারান। জুলাই আন্দোলনে নিহতদের স্বজনদের করা একাধিক মামলায় অভিযুক্ত হয়ে বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।
উপরোক্ত নেতারা ছাড়াও আরও অনেক রাজনীতিবিদ মওলানা ভাসানীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সরাসরি তার দলের সাথে যুক্ত ছিলেন, আবার কেউ তার দেখানো পথে হেঁটে নিজেদের রাজনৈতিক জীবনকে সমৃদ্ধ করেছেন। ভাসানীর সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী, আধিপত্যবাদ বিরোধী এবং শোষিতের পক্ষে আপোষহীন অবস্থান অনেক তরুণ রাজনীতিবিদকে আকৃষ্ট করেছিল।
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর রাজনৈতিক অনুসারীরা বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের অংশ। তারা বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলে অবস্থান করলেও তাদের অনেকের মধ্যেই ভাসানীর কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদ বিরোধী চেতনার প্রতিফলন দেখা যায়।

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতির এক কিংবদন্তিতুল্য পুরুষ। তাঁর সংগ্রামী ও আপোষহীন নেতৃত্ব অগণিত মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিল। ‘মজলুম জননেতা’ হিসেবে পরিচিত এই নেতার রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকেই রাজনীতিতে এসেছিলেন। তাঁরা পরে জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর অনুসারীরা মূলত কৃষক-শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু পরে হেঁটেছেন ভিন্ন পথে।
মওলানা ভাসানীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ করলেও শেখ মুজিবুর রহমান মূলত ছিলেন হসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অনুসারী। মাওলানার অনুসারীদের মধ্যে অনেক উল্লেখযোগ্য নেতা রয়েছেন, তাঁদের রাজনৈতিক পথচলা বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়েছে। সেসব অনুসারীদের কয়েকজনের কথা এখানে উল্লেখ করা হলো—
মওলানা ভাসানী ১৯৫৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) প্রতিষ্ঠা করেন, যা ছিল তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল। এই দলের মাধ্যমে অনেক নেতাই ভাসানীর সংস্পর্শে আসেন এবং তার রাজনৈতিক শিষ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন:
মশিউর রহমান (যাদু মিয়া): তিনি ছিলেন ভাসানীর একজন অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহচর এবং ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক। ভাসানীর মৃত্যুর পর তিনি ন্যাপের একাংশের নেতৃত্ব দেন এবং পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের আহ্বানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) যোগ দেন। তাঁকে বিএনপি গঠনে অন্যতম প্রধান সংগঠক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ: তিনি ন্যাপের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। যদিও পরবর্তীতে ন্যাপে বিভক্তি দেখা দিলে তিনি মস্কোপন্থী অংশের নেতৃত্ব দেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে মওলানা ভাসানীর প্রভাব ছিল অপরিসীম। মুক্তিযুদ্ধের সময়েও মোজাফফর আহমদ ছিলেন ভাসানীর রাজনৈতিক দর্শনের ধারক—সাম্রাজ্যবাদবিরোধী, কৃষক-শ্রমিকমুখী ও ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদ ছিল সেই আদর্শের মূল। মোজাফফর আহমদ ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭৯ সালে অধ্যাপক মোজাফফর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হলে তিনি ন্যাপ, সিপিবি এবং প্রগতিশীল শক্তির পক্ষে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২০১৯ সালের ২৩ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ: উপমহাদেশের কিংবদন্তী কৃষক নেতা হাজী মোহাম্মদ দানেশও মওলানা ভাসানীর একজন একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। তিনি ভাসানীর সঙ্গে একত্রে কৃষক-শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। হাজী মোহাম্মদ দানেশকে তেভাগা আন্দোলনের ‘জনক’ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম প্রবক্তা। তিনি পূর্ব বাঙ্গলার কমিউনিস্ট আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ভাসানীর ন্যাপের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পরে জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে দানেশ জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়ন গঠন করেন। পরে বাকশালে যোগ দেন এবং এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। ১৯৭৬ সালে তিনি গণমুক্তি ইউনিয়ন পুনরায় গঠন করেন। পরে ১৯৮০ সালে গণতান্ত্রিক পার্টি নামক দল গঠনের জন্য ইউনিয়ন বিলুপ্ত করেন। ১৯৮৬ সালে গণতান্ত্রিক পার্টিকে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে যুক্ত করা হয়।
মওলানা ভাসানীর অনেক অনুসারীই পরবর্তীতে বিএনপির রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন:
আবদুল মান্নান ভূঁইয়া: তিনি ছাত্রজীবনে ভাসানীপন্থী ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন এবং পরবর্তীতে ন্যাপের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তিনি মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তান কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। ভাসানীর মৃত্যুর পর তিনি বিএনপিতে যোগ দেন এবং ১৯৯৬-২০০৭ পর্যন্ত দীর্ঘ ১১ বছর দলের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
খন্দকার দেলোয়ার হোসেন: তিনি ১৯৫৭ সাল থেকে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাপের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন এবং ২০০৭ সালে দলের মহাসচিব নির্বাচিত হয়ে ২০১১ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেই পদে বহাল ছিলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: বিএনপির বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ছাত্রজীবনে ভাসানীর অনুসারী ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ভাসানীপন্থী ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম: ভাসানীর দ্বারা প্রশিক্ষিত আরেক আলোচিত নেতা। শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর হলেও তাঁর রাজনৈতিক প্রাথমিক গঠনে ভাসানীর প্রভাব ছিল প্রবল। যুক্তফ্রন্টের সময়কার আন্দোলনে তিনি ভাসানীর কর্মীদের সঙ্গে মাঠে কাজ করেছেন। পরবর্তীতে মুজিবনেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাও ছিলেন, কিন্তু শেকড়ের জায়গাটি ছিল ভাসানীর রাজনীতি।
শামসুল হক: ভাসানীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার প্রথম সারির ছাত্র। টাঙ্গাইলের শামসুল হক ছিলেন ভাসানীর অত্যন্ত বিশ্বস্ত সহযোগী। ভাসানীর সঙ্গে থেকেই তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনে নেতৃত্ব দেন। তাঁকে বলা হয় ভাসানীর প্রশাসনিক মেধার ধারক—দল পরিচালনায় ভাসানীর পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর। তিনি ছিলেন ভাসানীর কূটনৈতিক ও সাংগঠনিক ভরসা।
মণি সিংহ: কমিউনিস্ট আন্দোলন ও ভাসানীর আদর্শিক মৈত্রী। কমিউনিস্ট নেতা মণি সিংহ যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে ভাসানীর দলের রাজনীতিতে ছিলেন না, কিন্তু ভাসানীর সাম্রাজ্যবাদবিরোধী রাজনীতি তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে ভাসানী ও কমিউনিস্টদের ঐক্য গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ভাসানীর জনমুখী রাজনীতি কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে একটি শক্তিশালী মাঠভিত্তিক সম্পর্ক সৃষ্টি করে।
হায়দার আকবর খান: হায়দার আকবর খান রনো তাঁর রাজনৈতিক জীবনের প্রথম দিকে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর অনুসারী ও সহযোদ্ধা ছিলেন। যদিও পরবর্তীতে তিনি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী ধারার কমিউনিস্ট রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন, কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ ও বিকাশে মওলানা ভাসানীর প্রভাব ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি ১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৭০ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ের রণাঙ্গনের সৈনিক এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও নেতা। ১৯৭২ সালে তিনি অন্যান্য রাজনৈতিক সহকর্মীদের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (লেনিনবাদী) গঠন করেন। ১৯৭৯ সালে দলের নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি নামকরণ করা হয়। ১৯৭৯-৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৮২-১৯৯০ এর সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন ও ১৯৯০ এর গণ অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ও নেতা ছিলেন। ২০১২ সালে তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হন। ২০২৪ সালের ১১ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী জাফর: কাজী জাফর আহমদ তাঁর রাজনৈতিক জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ পর্বে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর একজন একনিষ্ঠ অনুসারী এবং অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। যদিও তার রাজনৈতিক জীবনের শেষভাগ ভিন্ন পথে প্রবাহিত হয়েছে, কিন্তু তাঁর উত্থান ও বিকাশে মওলানা ভাসানীর প্রভাব ছিল অপরিসীম।
কাজী জাফর আহমদ তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন একজন প্রভাবশালী ছাত্রনেতা হিসেবে। তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ছাত্রজীবন শেষে তিনি শ্রমিক রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং দীর্ঘকাল বাংলা শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
মওলানা ভাসানীর একজন একনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে কাজী জাফর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তাঁর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তবে পরবর্তীকালে তার রাজনৈতিক ধারায় পরিবর্তন আসে। তিনি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভায় শিক্ষামন্ত্রী হন এবং পরে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৮৯ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন।
জীবনের শেষ দিকে, এরশাদের সঙ্গে মতবিরোধের ফলে তিনি ২০১৩ সালে জাতীয় পার্টি (জাফর) নামে নতুন দল গঠন করেন এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিয়ে আমৃত্যু সেই দলের চেয়ারম্যান ছিলেন।
রাশেদ খান মেনন: বাংলাদেশের একজন বামপন্থী ধারার রাজনৈতিক নেতা। তিনি তার রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর একজন অনুসারী ও ভাবশিষ্য ছিলেন। বাংলাদেশের বামপন্থী রাজনীতির অন্যতম এই পুরোধা ব্যক্তিত্বের রাজনৈতিক বিকাশে মওলানা ভাসানীর আদর্শ ও নেতৃত্বের গভীর প্রভাব ছিল।
ষাটের দশকে মেনন যখন ছাত্র রাজনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন, তখন তিনি মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সমর্থক ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। ১৯৬৩-৬৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন। এই সময়ে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন এবং শিক্ষা আন্দোলনে তিনি ভাসানীর সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদ বিরোধী নীতির দ্বারা অনুপ্রাণিত হন।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পর জেল থেকে মুক্তি পেয়ে রাশেদ খান মেনন সরাসরি মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন কৃষক সমিতিতে যোগ দেন। তিনি সন্তোষে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক কৃষক সম্মেলনের অন্যতম সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন কৃষক সমিতির দপ্তর সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে রাশেদ খান মেনন ও কাজী জাফর আহমদ ন্যাপের তরুণ বামপন্থী অংশকে নিয়ে ১৯৭৪ সালে ইউনাইটেড পিপলস পার্টি (ইউপিপি) গঠন করেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গঠন করেন এবং বর্তমানে এই দলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের জন্য গঠিত মন্ত্রিসভায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। এই নির্বাচনে তিনি ঢাকা থেকে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ২০১৮ ও ২০২৪ সালের একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করলে তিনি সংসদ সদস্য পদ হারান। জুলাই আন্দোলনে নিহতদের স্বজনদের করা একাধিক মামলায় অভিযুক্ত হয়ে বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।
উপরোক্ত নেতারা ছাড়াও আরও অনেক রাজনীতিবিদ মওলানা ভাসানীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সরাসরি তার দলের সাথে যুক্ত ছিলেন, আবার কেউ তার দেখানো পথে হেঁটে নিজেদের রাজনৈতিক জীবনকে সমৃদ্ধ করেছেন। ভাসানীর সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী, আধিপত্যবাদ বিরোধী এবং শোষিতের পক্ষে আপোষহীন অবস্থান অনেক তরুণ রাজনীতিবিদকে আকৃষ্ট করেছিল।
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর রাজনৈতিক অনুসারীরা বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের অংশ। তারা বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলে অবস্থান করলেও তাদের অনেকের মধ্যেই ভাসানীর কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদ বিরোধী চেতনার প্রতিফলন দেখা যায়।
.png)

আজ সুর-সম্রাজ্ঞী রুনা লায়লার জন্মদিন। রুনা লায়লা ও তাঁর গানে লুকিয়ে থাকা অনুভূতি, সময়ের আবেশ, প্রেম ও একাকিত্ব নিয়ে ‘মায়ার সিংহাসন’ গীতি-উপন্যাস লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির। উপন্যাস লেখার ঘোরলাগা ভ্রমণ লেখক শেয়ার করেছেন স্ট্রিম পাঠকদের সঙ্গে।
৪ ঘণ্টা আগে
আজ মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। শোষণ ও বঞ্চনাহীন, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে এ লেখা।
১১ ঘণ্টা আগে
আজ মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। শোষণ ও বঞ্চনাহীন, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁর ছিল বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক পরিকল্পনাও। কোন ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা তিনি ভেবেছিলেন, তা জানা যাবে এ লেখায়।
১২ ঘণ্টা আগে
আজ বাংলা সাহিত্যের একজন শক্তিমান কথাশিল্পী মাহমুদুল হকের জন্মদিন। তাঁর বহুল পঠিত উপন্যাস 'জীবন আমার বোন'। ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন পরবর্তী সময়ের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ ও ব্যক্তিজীবনে তাঁর প্রভাব নিয়ে এই উপন্যাসের কাহিনি ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
১ দিন আগে