সালেহ ফুয়াদ

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবির কার্যত ভূমিধস জয় পেয়েছে। এর পেছনে সংগঠনটির প্রার্থী নির্ধারণের ‘বৈচিত্র’ সামনে এসেছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীও একই ‘কৌশল’ নিচ্ছে বলে জানা গেছে। দলটির নেতারা একে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর সমন্বয়ে ‘দেশ গড়ার’ কৌশল বলছেন।
প্রায় এক বছর আগে থেকে সংসদ সদস্যপ্রার্থী ঘোষণা করে ভোটের মাঠে রয়েছে জামায়াত। তবে ছাত্র সংসদে ছাত্রশিবির প্যানেলের বিজয়ের পর মানুষের মধ্যকার প্রভাব বিবেচনায় এখন তারা বেশ কিছু আসনের প্রার্থী পরিবর্তন করছে। চূড়ান্ত মনোনয়ন তালিকায় নারী, অমুসলিম এমনকি সংগঠনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ নন, কিন্তু রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে পারেন– এমন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিতে যাচ্ছে। আর এর জন্যই নির্বাচনী প্রচারে দলটি স্লোগান ঠিক করেছে– ‘চলো একসাথে গড়ি বাংলাদেশ’। ইতিমধ্যে এই স্লোগান দিয়ে পোস্টার-ব্যানার সাঁটানোর পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে।
জামায়াতের পছন্দ ইনক্লুসিভ প্রার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচন হয়েছে। সবগুলোতে শিবির সমর্থিতরা বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাচনে বিপুল জয় পেতে কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল তারা। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠনের নামে কোনো প্যানেল দেয়নি। গুরুত্বপূর্ণ পদে নেতাদের রেখে বাকিগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচিত ও সম্ভাবনাময় মুখ নিয়ে সমন্বিত প্যানেল দেয়, যেটি তাদের ভাষায় ‘ইনক্লুসিভ প্রার্থী’। তাতে অতীতের রেকর্ড ভেঙে ভিন্ন ধর্ম, ক্ষৃদ্র জাতিগোষ্ঠী ও নারীদের যুক্ত করা হয়। পরে ভোটের প্রচারেও তারা বিষয়গুলোতে জোর দেয়। আর এই কৌশলের কাছেই ছাত্রদলসহ বাকিরা ধরাশায়ী হয়। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সাফল্য পায় শিবির।
জামায়াতও এই কৌশলে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রায় গুছিয়ে এনেছে। এজন্য শুধু রুকন বা শপথধারী সদস্যদের প্রার্থী করা থেকে বেরিয়ে আসার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথমবারের মতো ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও নারীকে প্রার্থী করার কথা ভাবছে। ভোটের বৈতরণী পার হতে জামায়াত দল থেকে দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্ন, শিবিরের সাবেক নেতা, খ্যাতিমান ধর্মীয় বক্তা, প্রবাসী, সাংবাদিক, চিকিৎসক, আইনজীবীসহ দলের বাইরের তরুণ ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের পেশাজীবীকে দলীয় মনোনয়ন দিচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমরা ইনক্লুসিভ প্রার্থী দিচ্ছি। ইনক্লুসিভ মানে নারী-পুরুষ, ভিন্ন ধর্ম, নানা পেশার মানুষ থাকবেন তালিকায়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জামায়াতের নারীনেত্রীরা আগেও সংসদে ছিলেন। এবারও থাকবেন। নির্বাচনে নারীদের সরাসরি প্রার্থী হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।’
জামায়াত বছরখানেক আগে যাদের প্রার্থী ঘোষণা করে, তাদের কয়েকজনকে বাদ দিয়েছে। তাদের জায়গায় নতুন মুখ চূড়ান্ত করেছে। এমনই একজন ৩০ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে থাকা চিকিৎসক মোসলেহ উদ্দীন ফরিদ। যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে তিনি মনোনয়ন পাচ্ছেন, এটি প্রায় নিশ্চিত। তুরস্কে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন মোস্তফা ফয়সাল পারভেজ ও ড. হাফিজুর রহমান। তাঁদেরকে যথাক্রমে বগুড়া-৬ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) এবং গাজীপুর-৬ (বৃহত্তর টঙ্গী) আসনে প্রার্থী করেছে। আবার কর্নেল (অব.) আবদুল বাতেনকে ঢাকা-১৬ (পল্লবী-রূপনগর) আসনে চূড়ান্ত করেছে।
গত ২৬ নভেম্বর দুপুরে সাবেক বিএনপি নেতা ফয়জুল হককে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে জামায়াত। অথচ এসব আসনে প্রায় এক বছর ধরে নির্বাচনী প্রচারে ছিলেন দলটির স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা।
জামায়াতের একাধিক নেতা স্ট্রিমকে জানিয়েছেন, তফসিল ঘোষণার আগেই চমক হিসেব আরো কিছু নতুন মুখ দেখা যাবে। দল সূত্রের দাবি, শিগগির দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ওলিউল্লাহ নোমানকে হবিগঞ্জের এবং খুলনার একটি আসনে জামায়াতের হিন্দুনেতা কৃষ্ণ নন্দীকে প্রার্থী ঘোষণা করা হতে পারে। যদিও তফসিলের পরে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে আরেক দফা চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করবে জামায়াত।
প্রাধান্য তরুণ ও পরিচ্ছন্ন ইমেজ
আর্থ-সামাজিকভাবে পরিচিত ও পেশাদার ব্যক্তি হিসেবে সুনাম রয়েছে বিভিন্ন পেশার এমন ব্যক্তিদের প্রার্থী হিসেবে প্রাধান্য দিচ্ছে জামায়াত। দলীয় সূত্রে জানা যায়, শিবির নেতা থেকে জামায়াতে সরাসরি যুক্ত না হলেও শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে পরিচিত এমন ব্যক্তিদের নির্বাচনে টেনে আনা হচ্ছে। যশোরে প্রবাসী চিকিৎসক মোসলেহ উদ্দীন ফরিদ এমনই একজন। যশোর এমএম কলেজের প্রয়াত অধ্যক্ষ ও পাঠাগার আন্দোলনের জন্য পরিচিত অধ্যাপক শরীফ হোসেনের সন্তান তিনি। যশোরের বিখ্যাত খড়কীর পীরবাড়ি হিসেবে এই পরিবারের সুনাম রয়েছে। শিশু হৃদরোগ ও ইনটেনসিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ মোসলেহ উদ্দীন প্রায় ৩০ বছর যুক্তরাজ্যে আছেন। দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি দেশে আসেন। ছাত্রশিবিরের ঢাকা মেডিকেল কলেজ শাখার সাবেক এই সভাপতির নাম ঘোষণার আগে এখানে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছিলেন স্থানীয় গাজীর দরগাহ মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক মাওলানা আরশাদুল আলম। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে জামায়াত নেতা মোহাদ্দিস আবু সাঈদ নির্বাচিত হয়েছিলেন।
একইভাবে বগুড়ায় মোস্তফা ফয়সাল পারভেজ ও গাজীপুরে ড. হাফিজুর রহমানকে প্রার্থী করেছে জামায়াত। দুজনই বয়সে তরুণ এবং যথাক্রমে তুরস্ক জামায়াতের সভাপতি ও সেক্রেটারি ছিলেন। নির্বাচনে লড়তে তারা শিক্ষকতা ছেড়ে তুরস্ক থেকে দেশে এসেছেন।
সাংবাদিক ওলিউল্লাহ নোমান ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন বিচারপতি এবং একজন আইন বিশেষজ্ঞের মধ্যকার স্কাইপ ফোনে কথাবার্তার বিবরণ ‘আমার দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর চাপের মুখে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। নোমানের ব্যাপারে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আযাদ ও এহসানুল মাহবুব জুবায়ের স্ট্রিমকে জানিয়েছেন, তাঁকে জামায়াতের জন্য কাজ করতে বলা হয়েছে।
এদিকে, গত ১২ জুলাই ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন ড. ফয়জুল হক। তিনি দাবি করেন, ২০১৫ সাল থেকে বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত। দলটির মালয়েশিয়া কমিটির সহসমাজকল্যাণ সম্পাদক ছিলেন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে তিনি ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ারও ঘোষণা দেন।
তাঁর এই পোস্টের পরপরই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মালয়েশিয়া বিএনপির দপ্তর সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রতন জানান, শৃঙ্খলা বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকায় চলতি বছরের ২৯ জুন ফয়জুল হককে সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিএনপি ছাড়ার পর থেকে ফয়জুল হককে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে দেখা যায়। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের সমাবেশে তিনি বক্তৃতা করেন। সম্প্রতি বরিশালে একটি অনুষ্ঠানে জামায়াত আমিরের বক্তৃতার সময়, পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। অবশেষে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২৬ নভেম্বর ফয়জুলকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত। আগে এ আসনে ঝালকাঠি জেলা কর্মপরিষদ সদস্য ও রাজাপুর উপজেলার সাবেক আমির মাওলানা হেমায়েত উদ্দিনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল।
ফয়জুল হক ঝালকাঠির বিখ্যাত নেছারাবাদ দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা মুহম্মদ আযীযুর রহমান কায়েদ নেছারাবাদীর নাতি। ঝালকাঠিতে পরিবারটির বেশ প্রভাব রয়েছে। নেছারাবাদ ও ছারছিনা দরবার শরীফের মধ্যে সুসম্পর্ক রয়েছে। অবশ্য জামায়াতের সঙ্গে তাদের আদর্শিক দূরত্ব বহুদিনের। যদিও ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পরই ছারছিনায় ছুটে যান জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। গত ২২ আগস্ট নেছারাবাদ দরবারের বার্ষিক মাহফিলে ফয়জুল হককে পাশে নিয়ে তিনি বক্তৃতা করেন।
প্রার্থী হতে পারেন নারীরাও
প্রথমবারের মতো সরাসরি নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছেন জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। উপজেলা নির্বাচনে দলটির নারী কর্মীদের অংশগ্রহণ ছিল। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে জামায়াত মনোনীত ৩৬ নারী ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) নির্বাচিত হন। সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনেও দলটির নেত্রীরা ছিলেন।
এ ব্যাপারে এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেছেন, নারী কর্মীরা সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হয়েছেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে লড়েছে বিজয়ী হয়েছেন। এবার সংসদ নির্বাচনে তাদের প্রার্থী করা নিয়ে দলে আলোচনা রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক-সংস্কৃতি অন্য দেশের মতো নয়। এ কারণে রাজনীতি করলেও কোনো নারী নিজে থেকে প্রার্থী হতে না চাইলে আমরা তাঁকে ঠেলে দিতে পারি না। কেউ চাইলে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় তাঁর সম্ভাবনা থাকলে জামায়াত মনোনয়ন দেওয়ার বিষয় বিবেচনা করবে।
গত ৩১ আগস্ট নির্বাচন কমিশন (ইসি) ২০২৫ সালের হালনাগাদ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে মোট ভোটার ১২ কোটি ৬৩ লাখ ৭ হাজার ৫০৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ছয় কোটি ৪১ লাখ ৪৪৫ এবং নারী ছয় কোটি ২২ লাখ ৫ হাজার ৮১৯ জন। ইসির হিসাবে নারী ভোটার প্রায় অর্ধেক। বিপুল সংখ্যক নারী ভোটারদের টানতে চলতি বছরের শুরুতে মহিলা জামায়াতের কর্মীরা জোরেসোরে মাঠে নামেন।
হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, নারীদের প্রার্থিতা নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা চলছে। উপযুক্ত প্রার্থী হলে তাদের সংসদে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করতে কোনো সমস্যা দেখি না।
প্রথমবার প্রার্থী তালিকায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী
সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রার্থী দিতে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। বিশেষ করে যেসব এলাকা হিন্দু অধ্যুষিত বা আওয়ামী লীগের ঘাঁটি, সেখানে তাদের সম্প্রদায় থেকে প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছে দলটি। এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জানিয়েছেন, অমুসলিমদের সংসদ সদস্য প্রার্থী করার কথা ভাবছেন তারা। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কিছু এলাকায় অমুসলিম ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়ার বাস্তবতা রয়েছে। তবে এসব সিদ্ধান্তের আগে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী দলগুলোর মতামত নেওয়া হবে।
জামায়াত নেতারা জানান, দলীয় মনোনয়ন পেতে হলে ন্যূনতম রুকন পর্যায়ের নেতা হতে হতো। চব্বিশের পটপরিবর্তনের পর এই নীতিতে পরিবর্তন এসেছে। এখন ইসলাম ধর্মাবলম্বীর পাশাপাশি অন্যদেরও বিচেনায় রাখা হচ্ছে। যদিও তাদের কীভাবে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তা নিয়ে দুই ধরনের আলাপ রয়েছে দলটিতে।
সূত্র জানায়, অন্য প্রার্থীদের মতো হিন্দু সম্প্রদায়ের মনোনীত ব্যক্তিকে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক দেওয়া হতে পারে। আবার সমঝোতার মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে সমর্থন দেবে জামায়াত।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নেতা অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক ও জামায়াতের ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি বাবু কৃষ্ণ নন্দীর নাম আলোচনায় রয়েছে। জামায়াতের সূত্র জানিয়েছে, খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে বাবু কৃষ্ণ নন্দীর দলের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি এ আসনে জামায়াত বা বিএনপি কেউই কখনো ভোটে সুবিধা করতে পারেনি। হিন্দু অধ্যুষিত এই আসনে ১৯৯১ সাল থেকে টানা জয়ী হয়েছে নৌকার প্রার্থী।
আসনটিতে জামায়াতের বর্তমান প্রার্থী ও উপজেলা আমির শেখ আবু ইউসুফ ১৯৯৬ সালে পেয়েছিলেন দুই হাজার ৩০৮ ভোট, যা ছিল কাস্ট ভোটের মাত্র ২ শতাংশ। এরপর আর কোনো নির্বাচনেই এখানে প্রার্থী দেয়নি জামায়াত। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ। এ কারণে দলটির ঘাঁটিতে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করতে হিন্দু ধর্মের কৃষ্ণ নন্দীকে প্রার্থী ঘোষণা করতে যাচ্ছে জামায়াত।
২০০৩ সাল থেকে সাংগঠনিকভাবে জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত কৃষ্ণ নন্দী স্ট্রিমকে বলেছেন, ‘মনোনয়ন পাওয়ার আগে নিশ্চিত করে বলতে পারব না। তবে কাজ করছি। ঘোষণা হওয়ার পরে আমির আসবেন, পরিচয় করিয়ে দেবেন। সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারও আসবেন। তারপরেই নিশ্চিত বলা যাবে।’
প্রতীকের পরিবর্তে সমর্থন দেবে
বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া ‘বিশিষ্ট’ বা অমুসলিম প্রার্থীকে জামায়াতের দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা দেওয়া হলে তৃণমূল তাঁকে মেনে না নিতে পারেন বলে আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে বিকল্প হিসেবে অমুসলিম প্রার্থীকে স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড় করিয়ে প্রকাশ্যে সমর্থন দেওয়া হবে বলে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক সদস্য স্ট্রিমকে জানিয়েছেন। তিনি জানান, এক্ষেত্রে জামায়াত দুটি উপায় নিয়ে ভাবছে। সরাসরি জামায়াতের প্রতীক দাঁড়িপাল্লা নিয়েই তারা লড়বেন। অথবা সমঝোতার মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থী করে বরাদ্দ প্রতীকে সমর্থন দেবে জামায়াত। বিশিষ্ট বা অমুসলিম প্রার্থীরা যেভাবেই নির্বাচন করুক না কেন, দল সমর্থন দিলে তাদের জয়ী হওয়ার সম্ভবনা বেশি।
এক প্রশ্নের উত্তরে স্ট্রিমকে এই নেতা বলেছেন, জামায়াত সমমনা অন্য কয়েকটি দলের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশ নেবে। আরপিও সংশোধনীর কারণে নেতাদের দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। ফলে স্বতন্ত্র হয়ে দাঁড়ালেও একই রকম সমর্থন দেওয়া হবে। এতে দলের তৃণমূলের সমর্থন মিলবে। ছাত্রসংসদের আদলে প্রার্থীদের বিজয়ী হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকবে।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবির কার্যত ভূমিধস জয় পেয়েছে। এর পেছনে সংগঠনটির প্রার্থী নির্ধারণের ‘বৈচিত্র’ সামনে এসেছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীও একই ‘কৌশল’ নিচ্ছে বলে জানা গেছে। দলটির নেতারা একে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর সমন্বয়ে ‘দেশ গড়ার’ কৌশল বলছেন।
প্রায় এক বছর আগে থেকে সংসদ সদস্যপ্রার্থী ঘোষণা করে ভোটের মাঠে রয়েছে জামায়াত। তবে ছাত্র সংসদে ছাত্রশিবির প্যানেলের বিজয়ের পর মানুষের মধ্যকার প্রভাব বিবেচনায় এখন তারা বেশ কিছু আসনের প্রার্থী পরিবর্তন করছে। চূড়ান্ত মনোনয়ন তালিকায় নারী, অমুসলিম এমনকি সংগঠনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ নন, কিন্তু রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে পারেন– এমন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিতে যাচ্ছে। আর এর জন্যই নির্বাচনী প্রচারে দলটি স্লোগান ঠিক করেছে– ‘চলো একসাথে গড়ি বাংলাদেশ’। ইতিমধ্যে এই স্লোগান দিয়ে পোস্টার-ব্যানার সাঁটানোর পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে।
জামায়াতের পছন্দ ইনক্লুসিভ প্রার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচন হয়েছে। সবগুলোতে শিবির সমর্থিতরা বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাচনে বিপুল জয় পেতে কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল তারা। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠনের নামে কোনো প্যানেল দেয়নি। গুরুত্বপূর্ণ পদে নেতাদের রেখে বাকিগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচিত ও সম্ভাবনাময় মুখ নিয়ে সমন্বিত প্যানেল দেয়, যেটি তাদের ভাষায় ‘ইনক্লুসিভ প্রার্থী’। তাতে অতীতের রেকর্ড ভেঙে ভিন্ন ধর্ম, ক্ষৃদ্র জাতিগোষ্ঠী ও নারীদের যুক্ত করা হয়। পরে ভোটের প্রচারেও তারা বিষয়গুলোতে জোর দেয়। আর এই কৌশলের কাছেই ছাত্রদলসহ বাকিরা ধরাশায়ী হয়। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সাফল্য পায় শিবির।
জামায়াতও এই কৌশলে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রায় গুছিয়ে এনেছে। এজন্য শুধু রুকন বা শপথধারী সদস্যদের প্রার্থী করা থেকে বেরিয়ে আসার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথমবারের মতো ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও নারীকে প্রার্থী করার কথা ভাবছে। ভোটের বৈতরণী পার হতে জামায়াত দল থেকে দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্ন, শিবিরের সাবেক নেতা, খ্যাতিমান ধর্মীয় বক্তা, প্রবাসী, সাংবাদিক, চিকিৎসক, আইনজীবীসহ দলের বাইরের তরুণ ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের পেশাজীবীকে দলীয় মনোনয়ন দিচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমরা ইনক্লুসিভ প্রার্থী দিচ্ছি। ইনক্লুসিভ মানে নারী-পুরুষ, ভিন্ন ধর্ম, নানা পেশার মানুষ থাকবেন তালিকায়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জামায়াতের নারীনেত্রীরা আগেও সংসদে ছিলেন। এবারও থাকবেন। নির্বাচনে নারীদের সরাসরি প্রার্থী হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।’
জামায়াত বছরখানেক আগে যাদের প্রার্থী ঘোষণা করে, তাদের কয়েকজনকে বাদ দিয়েছে। তাদের জায়গায় নতুন মুখ চূড়ান্ত করেছে। এমনই একজন ৩০ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে থাকা চিকিৎসক মোসলেহ উদ্দীন ফরিদ। যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে তিনি মনোনয়ন পাচ্ছেন, এটি প্রায় নিশ্চিত। তুরস্কে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন মোস্তফা ফয়সাল পারভেজ ও ড. হাফিজুর রহমান। তাঁদেরকে যথাক্রমে বগুড়া-৬ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) এবং গাজীপুর-৬ (বৃহত্তর টঙ্গী) আসনে প্রার্থী করেছে। আবার কর্নেল (অব.) আবদুল বাতেনকে ঢাকা-১৬ (পল্লবী-রূপনগর) আসনে চূড়ান্ত করেছে।
গত ২৬ নভেম্বর দুপুরে সাবেক বিএনপি নেতা ফয়জুল হককে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে জামায়াত। অথচ এসব আসনে প্রায় এক বছর ধরে নির্বাচনী প্রচারে ছিলেন দলটির স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা।
জামায়াতের একাধিক নেতা স্ট্রিমকে জানিয়েছেন, তফসিল ঘোষণার আগেই চমক হিসেব আরো কিছু নতুন মুখ দেখা যাবে। দল সূত্রের দাবি, শিগগির দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ওলিউল্লাহ নোমানকে হবিগঞ্জের এবং খুলনার একটি আসনে জামায়াতের হিন্দুনেতা কৃষ্ণ নন্দীকে প্রার্থী ঘোষণা করা হতে পারে। যদিও তফসিলের পরে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে আরেক দফা চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করবে জামায়াত।
প্রাধান্য তরুণ ও পরিচ্ছন্ন ইমেজ
আর্থ-সামাজিকভাবে পরিচিত ও পেশাদার ব্যক্তি হিসেবে সুনাম রয়েছে বিভিন্ন পেশার এমন ব্যক্তিদের প্রার্থী হিসেবে প্রাধান্য দিচ্ছে জামায়াত। দলীয় সূত্রে জানা যায়, শিবির নেতা থেকে জামায়াতে সরাসরি যুক্ত না হলেও শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে পরিচিত এমন ব্যক্তিদের নির্বাচনে টেনে আনা হচ্ছে। যশোরে প্রবাসী চিকিৎসক মোসলেহ উদ্দীন ফরিদ এমনই একজন। যশোর এমএম কলেজের প্রয়াত অধ্যক্ষ ও পাঠাগার আন্দোলনের জন্য পরিচিত অধ্যাপক শরীফ হোসেনের সন্তান তিনি। যশোরের বিখ্যাত খড়কীর পীরবাড়ি হিসেবে এই পরিবারের সুনাম রয়েছে। শিশু হৃদরোগ ও ইনটেনসিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ মোসলেহ উদ্দীন প্রায় ৩০ বছর যুক্তরাজ্যে আছেন। দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি দেশে আসেন। ছাত্রশিবিরের ঢাকা মেডিকেল কলেজ শাখার সাবেক এই সভাপতির নাম ঘোষণার আগে এখানে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছিলেন স্থানীয় গাজীর দরগাহ মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক মাওলানা আরশাদুল আলম। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে জামায়াত নেতা মোহাদ্দিস আবু সাঈদ নির্বাচিত হয়েছিলেন।
একইভাবে বগুড়ায় মোস্তফা ফয়সাল পারভেজ ও গাজীপুরে ড. হাফিজুর রহমানকে প্রার্থী করেছে জামায়াত। দুজনই বয়সে তরুণ এবং যথাক্রমে তুরস্ক জামায়াতের সভাপতি ও সেক্রেটারি ছিলেন। নির্বাচনে লড়তে তারা শিক্ষকতা ছেড়ে তুরস্ক থেকে দেশে এসেছেন।
সাংবাদিক ওলিউল্লাহ নোমান ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন বিচারপতি এবং একজন আইন বিশেষজ্ঞের মধ্যকার স্কাইপ ফোনে কথাবার্তার বিবরণ ‘আমার দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর চাপের মুখে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। নোমানের ব্যাপারে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আযাদ ও এহসানুল মাহবুব জুবায়ের স্ট্রিমকে জানিয়েছেন, তাঁকে জামায়াতের জন্য কাজ করতে বলা হয়েছে।
এদিকে, গত ১২ জুলাই ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন ড. ফয়জুল হক। তিনি দাবি করেন, ২০১৫ সাল থেকে বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত। দলটির মালয়েশিয়া কমিটির সহসমাজকল্যাণ সম্পাদক ছিলেন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে তিনি ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ারও ঘোষণা দেন।
তাঁর এই পোস্টের পরপরই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মালয়েশিয়া বিএনপির দপ্তর সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রতন জানান, শৃঙ্খলা বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকায় চলতি বছরের ২৯ জুন ফয়জুল হককে সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিএনপি ছাড়ার পর থেকে ফয়জুল হককে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে দেখা যায়। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের সমাবেশে তিনি বক্তৃতা করেন। সম্প্রতি বরিশালে একটি অনুষ্ঠানে জামায়াত আমিরের বক্তৃতার সময়, পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। অবশেষে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২৬ নভেম্বর ফয়জুলকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত। আগে এ আসনে ঝালকাঠি জেলা কর্মপরিষদ সদস্য ও রাজাপুর উপজেলার সাবেক আমির মাওলানা হেমায়েত উদ্দিনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল।
ফয়জুল হক ঝালকাঠির বিখ্যাত নেছারাবাদ দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা মুহম্মদ আযীযুর রহমান কায়েদ নেছারাবাদীর নাতি। ঝালকাঠিতে পরিবারটির বেশ প্রভাব রয়েছে। নেছারাবাদ ও ছারছিনা দরবার শরীফের মধ্যে সুসম্পর্ক রয়েছে। অবশ্য জামায়াতের সঙ্গে তাদের আদর্শিক দূরত্ব বহুদিনের। যদিও ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পরই ছারছিনায় ছুটে যান জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। গত ২২ আগস্ট নেছারাবাদ দরবারের বার্ষিক মাহফিলে ফয়জুল হককে পাশে নিয়ে তিনি বক্তৃতা করেন।
প্রার্থী হতে পারেন নারীরাও
প্রথমবারের মতো সরাসরি নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছেন জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। উপজেলা নির্বাচনে দলটির নারী কর্মীদের অংশগ্রহণ ছিল। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে জামায়াত মনোনীত ৩৬ নারী ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) নির্বাচিত হন। সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনেও দলটির নেত্রীরা ছিলেন।
এ ব্যাপারে এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেছেন, নারী কর্মীরা সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হয়েছেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে লড়েছে বিজয়ী হয়েছেন। এবার সংসদ নির্বাচনে তাদের প্রার্থী করা নিয়ে দলে আলোচনা রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক-সংস্কৃতি অন্য দেশের মতো নয়। এ কারণে রাজনীতি করলেও কোনো নারী নিজে থেকে প্রার্থী হতে না চাইলে আমরা তাঁকে ঠেলে দিতে পারি না। কেউ চাইলে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় তাঁর সম্ভাবনা থাকলে জামায়াত মনোনয়ন দেওয়ার বিষয় বিবেচনা করবে।
গত ৩১ আগস্ট নির্বাচন কমিশন (ইসি) ২০২৫ সালের হালনাগাদ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে মোট ভোটার ১২ কোটি ৬৩ লাখ ৭ হাজার ৫০৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ছয় কোটি ৪১ লাখ ৪৪৫ এবং নারী ছয় কোটি ২২ লাখ ৫ হাজার ৮১৯ জন। ইসির হিসাবে নারী ভোটার প্রায় অর্ধেক। বিপুল সংখ্যক নারী ভোটারদের টানতে চলতি বছরের শুরুতে মহিলা জামায়াতের কর্মীরা জোরেসোরে মাঠে নামেন।
হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, নারীদের প্রার্থিতা নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা চলছে। উপযুক্ত প্রার্থী হলে তাদের সংসদে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করতে কোনো সমস্যা দেখি না।
প্রথমবার প্রার্থী তালিকায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী
সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রার্থী দিতে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। বিশেষ করে যেসব এলাকা হিন্দু অধ্যুষিত বা আওয়ামী লীগের ঘাঁটি, সেখানে তাদের সম্প্রদায় থেকে প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছে দলটি। এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জানিয়েছেন, অমুসলিমদের সংসদ সদস্য প্রার্থী করার কথা ভাবছেন তারা। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কিছু এলাকায় অমুসলিম ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়ার বাস্তবতা রয়েছে। তবে এসব সিদ্ধান্তের আগে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী দলগুলোর মতামত নেওয়া হবে।
জামায়াত নেতারা জানান, দলীয় মনোনয়ন পেতে হলে ন্যূনতম রুকন পর্যায়ের নেতা হতে হতো। চব্বিশের পটপরিবর্তনের পর এই নীতিতে পরিবর্তন এসেছে। এখন ইসলাম ধর্মাবলম্বীর পাশাপাশি অন্যদেরও বিচেনায় রাখা হচ্ছে। যদিও তাদের কীভাবে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তা নিয়ে দুই ধরনের আলাপ রয়েছে দলটিতে।
সূত্র জানায়, অন্য প্রার্থীদের মতো হিন্দু সম্প্রদায়ের মনোনীত ব্যক্তিকে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক দেওয়া হতে পারে। আবার সমঝোতার মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে সমর্থন দেবে জামায়াত।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নেতা অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক ও জামায়াতের ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি বাবু কৃষ্ণ নন্দীর নাম আলোচনায় রয়েছে। জামায়াতের সূত্র জানিয়েছে, খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে বাবু কৃষ্ণ নন্দীর দলের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি এ আসনে জামায়াত বা বিএনপি কেউই কখনো ভোটে সুবিধা করতে পারেনি। হিন্দু অধ্যুষিত এই আসনে ১৯৯১ সাল থেকে টানা জয়ী হয়েছে নৌকার প্রার্থী।
আসনটিতে জামায়াতের বর্তমান প্রার্থী ও উপজেলা আমির শেখ আবু ইউসুফ ১৯৯৬ সালে পেয়েছিলেন দুই হাজার ৩০৮ ভোট, যা ছিল কাস্ট ভোটের মাত্র ২ শতাংশ। এরপর আর কোনো নির্বাচনেই এখানে প্রার্থী দেয়নি জামায়াত। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ। এ কারণে দলটির ঘাঁটিতে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করতে হিন্দু ধর্মের কৃষ্ণ নন্দীকে প্রার্থী ঘোষণা করতে যাচ্ছে জামায়াত।
২০০৩ সাল থেকে সাংগঠনিকভাবে জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত কৃষ্ণ নন্দী স্ট্রিমকে বলেছেন, ‘মনোনয়ন পাওয়ার আগে নিশ্চিত করে বলতে পারব না। তবে কাজ করছি। ঘোষণা হওয়ার পরে আমির আসবেন, পরিচয় করিয়ে দেবেন। সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারও আসবেন। তারপরেই নিশ্চিত বলা যাবে।’
প্রতীকের পরিবর্তে সমর্থন দেবে
বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া ‘বিশিষ্ট’ বা অমুসলিম প্রার্থীকে জামায়াতের দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা দেওয়া হলে তৃণমূল তাঁকে মেনে না নিতে পারেন বলে আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে বিকল্প হিসেবে অমুসলিম প্রার্থীকে স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড় করিয়ে প্রকাশ্যে সমর্থন দেওয়া হবে বলে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক সদস্য স্ট্রিমকে জানিয়েছেন। তিনি জানান, এক্ষেত্রে জামায়াত দুটি উপায় নিয়ে ভাবছে। সরাসরি জামায়াতের প্রতীক দাঁড়িপাল্লা নিয়েই তারা লড়বেন। অথবা সমঝোতার মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থী করে বরাদ্দ প্রতীকে সমর্থন দেবে জামায়াত। বিশিষ্ট বা অমুসলিম প্রার্থীরা যেভাবেই নির্বাচন করুক না কেন, দল সমর্থন দিলে তাদের জয়ী হওয়ার সম্ভবনা বেশি।
এক প্রশ্নের উত্তরে স্ট্রিমকে এই নেতা বলেছেন, জামায়াত সমমনা অন্য কয়েকটি দলের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশ নেবে। আরপিও সংশোধনীর কারণে নেতাদের দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। ফলে স্বতন্ত্র হয়ে দাঁড়ালেও একই রকম সমর্থন দেওয়া হবে। এতে দলের তৃণমূলের সমর্থন মিলবে। ছাত্রসংসদের আদলে প্রার্থীদের বিজয়ী হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকবে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দোয়া চাওয়ায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তারেক রহমান।
২৩ মিনিট আগে
সারাদেশে বাউল শিল্পী ও সাধকদের ওপর অব্যাহত আক্রমণ এবং আজ (শুক্রবার) ঢাকায় বাউলদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।
২ ঘণ্টা আগে
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, বিশ্বস্ত সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি—তাড়াহুড়ো করে দুটি আইন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পাস করাতে চাইছে। আইন দুটির মধ্যে একটি সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন এবং অন্যটি এনজিও সংক্রান্ত আইন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
৩ ঘণ্টা আগে
টানা তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডা. শফিকুর রহমান। সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর আজ শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর মগবাজারের আল-ফালাহ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে ২০২৬–২৮ কার্যকালের জন্য তিনি এই শপথ নেন।
৪ ঘণ্টা আগে