গুগলের ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্টে বাংলাদেশ থেকে করা কনটেন্ট অপসারণের অনুরোধ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
আজ শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, মিসইনফরমেশন, প্রোপাগান্ডা ও বেআইনি মানহানিকর তথ্য ছাড়া দেশের কোনো পত্রিকার সংবাদ, অনলাইন নিবন্ধ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট, ভিডিও, রিলস বা রাজনৈতিক সমালোচনামূলক কনটেন্ট অপসারণে অন্তর্বর্তী সরকার কখনোই কোনো প্ল্যাটফর্মকে অনুরোধ করেনি।
সরকার নাগরিকদের নিশ্চয়তা দিয়ে জানিয়েছে, বর্তমান প্রশাসন সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে বিগত সরকারের মতো কোনো ‘বট বাহিনী’ পরিচালনা করে না এবং বিটিআরসি বা অন্য কোনো সংস্থার সরাসরি কনটেন্ট মুছে ফেলার ক্ষমতা নেই।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সির মাধ্যমে শুধু মিসইনফরমেশন ও চরিত্রহননের অপচেষ্টা রোধে বিটিআরসির মাধ্যমে গুগল বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মকে অনুরোধ জানানো হয়।
পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলা হয়, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাসের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে মোট ২৭৯টি অনুরোধ গেছে, যা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের (জুন-ডিসেম্বর ২০২২) ৮৬৭টি অনুরোধের তিন ভাগের এক ভাগের চেয়েও কম। এমনকি এর আগের ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৪) অনুরোধের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫৩টি। গুগলের রিপোর্টে এসব অনুরোধের ৬৫ শতাংশই ‘অপর্যাপ্ত তথ্য’ ক্যাটাগরিতে দেখানো হয়েছে, যা প্রমাণ করে এগুলোর পেছনে কোনো বিশেষ বা অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না।
বিবৃতিতে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন সময়কালের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলা হয়, এই সময়ে বাংলাদেশ ভেতর ও বাইরে থেকে মিসইনফরমেশন ক্যাম্পেইনের শিকার হয়েছে। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশের মিডিয়া থেকে ক্রমাগত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাইবার স্পেসে ভুল তথ্য ছড়ানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। দেশের সাইবার স্পেস নিরাপদ রাখা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে সরকারকে দায়িত্বশীল জায়গা থেকে গুগলকে কিছু রিপোর্ট করতে হয়েছে। এ ছাড়া অনলাইন জুয়াসংক্রান্ত কনটেন্ট সরানোর জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে। যেহেতু গুগলের রিপোর্টে মিসইনফরমেশন বা প্রোপাগান্ডার জন্য আলাদা কোনো ক্যাটাগরি নেই, তাই এগুলোকে ‘সরকারের সমালোচনা’ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমের ভূমিকার সমালোচনা করে বলা হয়, বাংলা ও ইংরেজি সংবাদমাধ্যমে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশের পূর্বে সরকারের ব্যাখ্যা বা বক্তব্য নেওয়া হয়নি, যা অত্যন্ত হতাশার। প্রকৃত সত্য আড়াল করে খণ্ডিত সংবাদ প্রকাশ দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার পরিচয় বহন করে না।
তবে সরকার জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের বাকস্বাধীনতা ও ইন্টারনেট সূচকে ‘অসামান্য’ অগ্রগতি হয়েছে। ফ্রিডম হাউসের ‘ফ্রিডম অন দ্য নেট ২০২৫’ রিপোর্ট অনুযায়ী, ইন্টারনেট স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একক দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ অগ্রগতি অর্জন করেছে। বাংলাদেশের স্কোর গত বছরের ৪০ থেকে বেড়ে ৪৫ হয়েছে, যা গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
অন্তর্বর্তী সরকারের ইন্টারনেট বন্ধ প্রতিরোধে নেওয়া পদক্ষেপ ও সাইবার সুরক্ষায় ইতিবাচক সংস্কারের ফলেই এই উন্নতি সম্ভব হয়েছে বলে ওই আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।