মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান
ভারত কি বাংলাদেশের বন্ধু? মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। আপনি যেকোনো আওয়ামী লীগের সমর্থক বা কর্মীকে প্রশ্নটি করলে তাঁরা কোনো দ্বিধা না করে বলবেন, অবশ্যই। এমনকি এটাও বলতে পারেন, ভারত না থাকলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকত না। আবার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী বা এনসিপির কোনো সমর্থককে জিজ্ঞেস করলে উল্টো কথা শুনবেন—ভারত বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থের বিপরীতে কাজ করছে।
কূটনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে ইংল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লর্ড পামারস্টোনের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে, ‘আমাদের কোনো চিরন্তন মিত্র নেই, আমাদের কোনো চিরস্থায়ী শত্রুও নেই। আমাদের স্বার্থই চিরন্তন ও চিরস্থায়ী, এবং সেই স্বার্থ অনুসরণ করাই আমাদের কর্তব্য।’ কিন্ত ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে কেবলই স্বার্থের ছকে ফেলা যাচ্ছে না, এখানে দেশের স্বার্থের চেয়ে বেশি যুক্তি-অতিক্রমী আবেগ ও ব্যক্তির পছন্দের পরিষ্কার প্রতিফলন দৃশ্যমান, যা দুটি দেশকেই ভোগাচ্ছে।
সহজভাবে বলতে গেলে ভারত নিজেকে নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় দেখতে চায়। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের আধিপত্যবাদী আচরণ স্পষ্ট। সবচেয়ে অদ্ভুত হচ্ছে ভারতের ‘বন্ধুত্বসুলভ’ আচরণ কেবল বাংলাদেশের একটি দলের সঙ্গে, দেশের সঙ্গে নয়।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমরা দেখেছি, আগের বছরের তুলনায় ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা অনেক কমিয়ে দিয়েছে। ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর দখল করার কথা বলেছেন, ভারতের কয়েকটি বন্দর ও স্থাপনা দিয়ে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বন্ধ করেছে। এছাড়াও এসময়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু ভারতীয় মিডিয়া ডিসইনফরমেশন ক্যাম্পেইন বা উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপতথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে, যাতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজ ক্ষুণ্ণ হয়।
একটা বিষয় পরিষ্কার বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে ভারতের বিজেপি সরকার সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করতে আগ্রহী নয়। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস তাঁর সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারগুলোতে সম্পর্কের এই টানাপোড়েনের ব্যাপারে কোনো রাখঢাক না রেখেই বলেছেন ভারত ছাত্রদের আন্দোলনের বিষয়টি পছন্দ করেনি।
ভারত পছন্দ না করলেও ভারতের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রভাব এখন মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে ভারত-বিরোধিতা আরও তীব্র হয়েছে। নেপালে জেন-জি অভ্যুত্থানের পর সাধারণ মানুষ নেপালপন্থী ছাড়া ভারত বা চীনপন্থী কাউকেই চায় না।
মালদ্বীপ থেকে ‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইনের পরবর্তী সময়ে ভারতীয় সেনারা ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে। শ্রীলঙ্কার বর্তমান সরকারের সময় কিছু অগ্রগতি থাকলেও সাধারণ মানুষ ভারতের ভূমিকা নিয়ে সন্দিহান। সর্বশেষ যুদ্ধের পর পাকিস্তানের সঙ্গে ‘চিরশত্রু’ বৈরিতা কেবল বেড়েছে।
ভারত-পাকিস্তানের সর্বশেষ যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভূমিকা অস্বীকার করার পর থেকে ভারত- যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কার্যত প্রায় তলানিতে ঠেকেছে। রাশিয়ার তেল কেনার কারণে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ, এইচ ওয়ান বি ভিসার (যার বর্তমান সুবিধাভোগী কর্মীর ৭০ শতাংশের বেশি ভারতীয়) ওপর ১লক্ষ ডলার ফি আরোপ, ইরানের চাবাহার বন্দরে ভারতীয় বিনিয়োগে ছাড় বাতিলসহ ভারতীয় কয়েকটি কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞায় ভারতের জাতীয় আয়, বৈশ্বিক ব্যবসা ও কূটনৈতিক ভাবমূর্তি মারাত্মক সংকটে পড়েছে।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে সৌদি আরবের কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রভাব। চীনের এসসিও সামিটে প্রেসিডেন্ট শি জিং পিং-এর সঙ্গে বন্ধুত্বের ছবি মিডিয়াতে ছড়িয়ে নতুন বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বার্তা দিতে চাইলেও ভারত কোথা থেকে আয় করে আর কোথায় খরচ করে সে হিসাব মেলাতে গেলে দেখে বাস্তবতা ভিন্ন । কূটনৈতিক এ বাস্তবতায় বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ভারতকে কাগুজে বাঘ হিসেবে দেখবে সেটাই স্বাভাবিক ।
বাংলাদেশ মর্যাদার ভিত্তিতে প্রতিবেশীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায়। অভিন্ন নদীগুলোর পানির ন্যায্য হিস্যা চায়। সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধ দেখতে চায়। একটি বিশেষ দলের প্রতি অন্ধ সমর্থনের পরিবর্তে একটি দেশের সঙ্গে আরেকটি দেশের সম্পর্ক চায়। সরকার আসবে যাবে, যৌথ জাতীয় স্বার্থের বিষয়গুলো অটুট থাকবে, সম্পর্ক চলমান থাকবে নীতি ন্যায্যতা ও আন্তর্জাতিক আইন ও রীতি-নীতির ভিত্তিতে।
এর সবগুলোই অতি সাধারণ ন্যায্য চাওয়া। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব মাত্রা ছাড়িয়েছিল—কিছু রাজনীতিবিদদের ভারতকে অতি মূল্যায়নের কারণে। জুলাই গণ-অভ্যুথানের একটি অন্যতম শিক্ষা হলো ভারতের অন্ধ সমর্থন থাকলেও জনগণ চাইলে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব। ভবিষ্যতে যাঁরা বাংলাদেশে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসবেন তাঁদের এখান থেকে শিক্ষা নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ ।
অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও বাংলাদেশ সরকার শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। দেশের বাজারে উচ্চমূল্যর কারণে এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনাও হয়েছে। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ বন্ধুত্বের বার্তা দিতে চেয়েছে।
এর আগেও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার মৌসুমি আম উপহার হিসেবে ভারতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের পাঠিয়েছিলেন। তবে এই কূটনৈতিক সৌজন্যে কী প্রভাব ভারতে পড়েছে, তা অজানা। এবারের দুর্গাপূজায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুরে একটি মণ্ডপে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসকে অসুর হিসেবে দেখানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকেও ভারতের পূজামণ্ডপে অসুর রূপে চিত্রিত করা হয়েছে। এটিকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা গেলেও ভারতের সমাজে সম্পর্কের তিক্ততার প্রতিফলন লক্ষ্যণীয়।
তবে ভারতের আধিপত্যবাদী নীতির সমালোচনা করতে গিয়ে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশটির ভূমিকাকে কোনোভাবেই ছোট করে দেখা যাবে না। আগ্রাসী নীতির বিরোধিতা আর ভারত-বিরোধিতা এক নয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যে দেশ তাদের সীমান্ত খুলে, মানবিক সাহায্য দিয়ে বাংলাদেশিদের জীবন বাঁচিয়েছিল, অস্ত্র, ট্রেনিং ও সামরিক সাহায্য দিয়ে ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি যুদ্ধ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে এ দেশকে মুক্ত করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিল— বাংলাদেশিদের সে অবদান মনে রাখতে হবে। ভারতকে ভাবতে হবে আজকের এ পরিস্থিতি কীভাবে সৃষ্টি হলো।
লেখক: ঢাকা স্ট্রিমের ইউএস ব্যুরো চিফ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও সাবেক ফুলব্রাইট হিউবার্ট এইচ হামফ্রে ফেলো, ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড
ভারত কি বাংলাদেশের বন্ধু? মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। আপনি যেকোনো আওয়ামী লীগের সমর্থক বা কর্মীকে প্রশ্নটি করলে তাঁরা কোনো দ্বিধা না করে বলবেন, অবশ্যই। এমনকি এটাও বলতে পারেন, ভারত না থাকলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকত না। আবার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী বা এনসিপির কোনো সমর্থককে জিজ্ঞেস করলে উল্টো কথা শুনবেন—ভারত বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থের বিপরীতে কাজ করছে।
কূটনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে ইংল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লর্ড পামারস্টোনের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে, ‘আমাদের কোনো চিরন্তন মিত্র নেই, আমাদের কোনো চিরস্থায়ী শত্রুও নেই। আমাদের স্বার্থই চিরন্তন ও চিরস্থায়ী, এবং সেই স্বার্থ অনুসরণ করাই আমাদের কর্তব্য।’ কিন্ত ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে কেবলই স্বার্থের ছকে ফেলা যাচ্ছে না, এখানে দেশের স্বার্থের চেয়ে বেশি যুক্তি-অতিক্রমী আবেগ ও ব্যক্তির পছন্দের পরিষ্কার প্রতিফলন দৃশ্যমান, যা দুটি দেশকেই ভোগাচ্ছে।
সহজভাবে বলতে গেলে ভারত নিজেকে নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় দেখতে চায়। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের আধিপত্যবাদী আচরণ স্পষ্ট। সবচেয়ে অদ্ভুত হচ্ছে ভারতের ‘বন্ধুত্বসুলভ’ আচরণ কেবল বাংলাদেশের একটি দলের সঙ্গে, দেশের সঙ্গে নয়।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমরা দেখেছি, আগের বছরের তুলনায় ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা অনেক কমিয়ে দিয়েছে। ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর দখল করার কথা বলেছেন, ভারতের কয়েকটি বন্দর ও স্থাপনা দিয়ে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বন্ধ করেছে। এছাড়াও এসময়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু ভারতীয় মিডিয়া ডিসইনফরমেশন ক্যাম্পেইন বা উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপতথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে, যাতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজ ক্ষুণ্ণ হয়।
একটা বিষয় পরিষ্কার বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে ভারতের বিজেপি সরকার সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করতে আগ্রহী নয়। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস তাঁর সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারগুলোতে সম্পর্কের এই টানাপোড়েনের ব্যাপারে কোনো রাখঢাক না রেখেই বলেছেন ভারত ছাত্রদের আন্দোলনের বিষয়টি পছন্দ করেনি।
ভারত পছন্দ না করলেও ভারতের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রভাব এখন মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে ভারত-বিরোধিতা আরও তীব্র হয়েছে। নেপালে জেন-জি অভ্যুত্থানের পর সাধারণ মানুষ নেপালপন্থী ছাড়া ভারত বা চীনপন্থী কাউকেই চায় না।
মালদ্বীপ থেকে ‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইনের পরবর্তী সময়ে ভারতীয় সেনারা ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে। শ্রীলঙ্কার বর্তমান সরকারের সময় কিছু অগ্রগতি থাকলেও সাধারণ মানুষ ভারতের ভূমিকা নিয়ে সন্দিহান। সর্বশেষ যুদ্ধের পর পাকিস্তানের সঙ্গে ‘চিরশত্রু’ বৈরিতা কেবল বেড়েছে।
ভারত-পাকিস্তানের সর্বশেষ যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভূমিকা অস্বীকার করার পর থেকে ভারত- যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কার্যত প্রায় তলানিতে ঠেকেছে। রাশিয়ার তেল কেনার কারণে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ, এইচ ওয়ান বি ভিসার (যার বর্তমান সুবিধাভোগী কর্মীর ৭০ শতাংশের বেশি ভারতীয়) ওপর ১লক্ষ ডলার ফি আরোপ, ইরানের চাবাহার বন্দরে ভারতীয় বিনিয়োগে ছাড় বাতিলসহ ভারতীয় কয়েকটি কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞায় ভারতের জাতীয় আয়, বৈশ্বিক ব্যবসা ও কূটনৈতিক ভাবমূর্তি মারাত্মক সংকটে পড়েছে।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে সৌদি আরবের কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রভাব। চীনের এসসিও সামিটে প্রেসিডেন্ট শি জিং পিং-এর সঙ্গে বন্ধুত্বের ছবি মিডিয়াতে ছড়িয়ে নতুন বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বার্তা দিতে চাইলেও ভারত কোথা থেকে আয় করে আর কোথায় খরচ করে সে হিসাব মেলাতে গেলে দেখে বাস্তবতা ভিন্ন । কূটনৈতিক এ বাস্তবতায় বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ভারতকে কাগুজে বাঘ হিসেবে দেখবে সেটাই স্বাভাবিক ।
বাংলাদেশ মর্যাদার ভিত্তিতে প্রতিবেশীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায়। অভিন্ন নদীগুলোর পানির ন্যায্য হিস্যা চায়। সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধ দেখতে চায়। একটি বিশেষ দলের প্রতি অন্ধ সমর্থনের পরিবর্তে একটি দেশের সঙ্গে আরেকটি দেশের সম্পর্ক চায়। সরকার আসবে যাবে, যৌথ জাতীয় স্বার্থের বিষয়গুলো অটুট থাকবে, সম্পর্ক চলমান থাকবে নীতি ন্যায্যতা ও আন্তর্জাতিক আইন ও রীতি-নীতির ভিত্তিতে।
এর সবগুলোই অতি সাধারণ ন্যায্য চাওয়া। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব মাত্রা ছাড়িয়েছিল—কিছু রাজনীতিবিদদের ভারতকে অতি মূল্যায়নের কারণে। জুলাই গণ-অভ্যুথানের একটি অন্যতম শিক্ষা হলো ভারতের অন্ধ সমর্থন থাকলেও জনগণ চাইলে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব। ভবিষ্যতে যাঁরা বাংলাদেশে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসবেন তাঁদের এখান থেকে শিক্ষা নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ ।
অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও বাংলাদেশ সরকার শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। দেশের বাজারে উচ্চমূল্যর কারণে এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনাও হয়েছে। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ বন্ধুত্বের বার্তা দিতে চেয়েছে।
এর আগেও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার মৌসুমি আম উপহার হিসেবে ভারতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের পাঠিয়েছিলেন। তবে এই কূটনৈতিক সৌজন্যে কী প্রভাব ভারতে পড়েছে, তা অজানা। এবারের দুর্গাপূজায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুরে একটি মণ্ডপে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসকে অসুর হিসেবে দেখানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকেও ভারতের পূজামণ্ডপে অসুর রূপে চিত্রিত করা হয়েছে। এটিকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা গেলেও ভারতের সমাজে সম্পর্কের তিক্ততার প্রতিফলন লক্ষ্যণীয়।
তবে ভারতের আধিপত্যবাদী নীতির সমালোচনা করতে গিয়ে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশটির ভূমিকাকে কোনোভাবেই ছোট করে দেখা যাবে না। আগ্রাসী নীতির বিরোধিতা আর ভারত-বিরোধিতা এক নয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যে দেশ তাদের সীমান্ত খুলে, মানবিক সাহায্য দিয়ে বাংলাদেশিদের জীবন বাঁচিয়েছিল, অস্ত্র, ট্রেনিং ও সামরিক সাহায্য দিয়ে ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি যুদ্ধ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে এ দেশকে মুক্ত করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিল— বাংলাদেশিদের সে অবদান মনে রাখতে হবে। ভারতকে ভাবতে হবে আজকের এ পরিস্থিতি কীভাবে সৃষ্টি হলো।
লেখক: ঢাকা স্ট্রিমের ইউএস ব্যুরো চিফ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও সাবেক ফুলব্রাইট হিউবার্ট এইচ হামফ্রে ফেলো, ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড
‘নির্বাচনী রাজনীতিতে ধর্মীয় দলগুলো পিছিয়ে কেন’ শিরোনামটি প্রাসঙ্গিকভাবেই আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের দিকে টেনে নিয়ে যায়। তাই লেখাটি একটু পেছন থেকে শুরু করা যাক।
২১ ঘণ্টা আগে২০২৫ সালে এসে একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান বাস্তবতা কী। এ প্রশ্ন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ২০২৪ সালের পরে। গত বছরের ঘটনা প্রবাহের পর বদলে গেছে এদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চালচিত্র।
১ দিন আগেময়মনসিংহের বৃদ্ধ ফকির হালিম উদ্দিন অকন্দের মাথার চুল জোর করে কেটে দেওয়ার ঘটনাটি সংবাদ হিসেবে ‘ছোট’ হলেও এর অভিঘাত বড়। এ শুধু একজন মানুষের মাথার চুল নয়, এটি আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি আর মানবিক মর্যাদার ওপর চালানো আক্রমণ। চুল কেটে দেওয়া মানে শুধু দেহের ক্ষতি নয়, আত্মার অপমান।
৩ দিন আগে