জাভেদ হুসেন
কীভাবে সমাজ এক ধাপে ধাপে এমন সংকটে পৌঁছায়, যেখানে আর পুরনো ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয় না। আমেরিকা কি এখন সেই ধরনের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে? আমেরিকার কি তার শক্তির শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত পেরিয়ে গেছে? সে এখনো বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ। কিন্তু এর মানে এই নয় যে চিরকাল এই অবস্থায় থাকব। ইতিহাসের প্রতিটি সাম্রাজ্যের একটি আয়ুষ্কাল আছে। আছে তার বৃদ্ধি, চূড়ায় পৌঁছে যাওয়ার পর পতন।
আমেরিকার অবস্থা এখন অনেকটা রোমান রিপাবলিকের শেষ যুগের মতো। রোম তখন ভূমধ্যসাগর শাসন করছে। তাদের বাহিনী অপরাজেয়। কিন্তু ঠিক সেই সাফল্যের সঙ্গে শুরু হয় অভ্যন্তরীণ ক্ষয়। ধন-সম্পদের বিপুল প্রবাহে ধনী আর গরিবের মধ্যে বৈষম্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে। ছোট কৃষকের জমি ধনী জমিদাররা কিনে নেয়। আর কৃষকরা শহরে ভিড় জমায়। নাগরিকত্ব পাওয়া ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণের দাবিতে ইতালির অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে রোমের বিরোধ শুরু হয়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, রাজনৈতিক নেতৃত্ব তখন আর নিয়ম-নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে না। রোমান রিপাবলিকের মূল শক্তি ছিল—যে-ই ভোটে জিতুক, সবাই তা মেনে নিত। একসময় মানুষ বুঝতে পারল, আইন মানা না মানা ইচ্ছের ব্যাপার। যিনি হেরে যাচ্ছেন, তিনি নিয়ম বদলে ফেলেন। সেনাপতিরা সেনাবাহিনী নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধ শুরু করেন। জুলিয়াস সিজারের ক্ষমতা দখল ও হত্যাকাণ্ড, অক্টাভিয়ানের উত্থান—সব মিলিয়ে রিপাবলিক ভেঙে পড়ে। জন্ম নেয় একক সম্রাটশাসিত সাম্রাজ্য।
আজকের আমেরিকায়ও একই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। আয়ের বৈষম্য বেড়েছে ১৯২০-এর দশকের চেয়েও বেশি। নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকার নিয়ে আইনি লড়াই চলছে। বিশেষ করে ২০২০ সালের নির্বাচনের পর ভোট গণনা নিয়ে বিতর্ক, আদালতের ভূমিকা, এমনকি ক্যাপিটল হিলে সহিংস হামলা—এসবই আমেরিকান রিপাবলিকের রাজনৈতিক স্থিতি দুর্বল হওয়ার ইঙ্গিত।
রোমান রিপাবলিকের পতনের পরও রাজনৈতিক কাঠামোকে পুরোপুরি ভেঙে দেওয়া হয়নি। সেনেট তখনও ছিল, আইন তখনও পাশ হতো, নির্বাচনও হতো। কিন্তু এগুলো ধীরে ধীরে সব আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। সম্রাটরা সেনেটকে ব্যবহার করতেন ক্ষমতার বৈধতা দেওয়ার জন্য। আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া ছিল অনেকাংশে পূর্বনির্ধারিত—যা আসলে সম্রাটের সিদ্ধান্তকে অনুমোদন করত। সাধারণ নাগরিকদের জন্য এগুলো এক ধরনের ‘অংশগ্রহণের ছলনা’ তৈরি করত। এতে মনে হতো রিপাবলিক এখনো বেঁচে আছে।
বাইরে গণতন্ত্রের মুখোশ, ভেতরে একক শাসক। বিপদ এখানেই। আপনি যদি এমন এক ব্যবস্থায় পৌঁছান, যেখানে বাহ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে আছে, কিন্তু সিদ্ধান্ত আসলে এক ব্যক্তি বা ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর হাতে, তবে সেটি আর কার্যকর গণতন্ত্র থাকে না।
অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে আমেরিকায় আজ ঠিক এই দিকেই দেশ এগোচ্ছে। প্রেসিডেন্টের এক্সিকিউটিভ অর্ডারের পরিমাণ নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। আইন প্রণয়নের জন্য কংগ্রেসকে পাশ কাটানো হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের নিয়োগ প্রক্রিয়া এতটাই রাজনৈতিক হয়ে গেছে যে জনগণ আদালতকে আর নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান মনে করছে না। এমনকি নির্বাচন কমিশনের গঠন, ভোট গণনা ও ব্যালট যাচাইয়ের মতো মৌলিক বিষয়গুলো নিয়েও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বাড়ছে।
এই কেন্দ্রীভবনের আরেকটি বিপদ হলো, যখন ক্ষমতা এক জায়গায় জমা হয়, তখন তা সহজেই অপব্যবহার করা যায়। রোমে সেনাপতিরা তাঁদের সেনাবাহিনীকে ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো ব্যবহার করতেন। সিজার যখন রুবিকন নদী পার হয়ে রোমের দিকে অগ্রসর হন, এটি ছিল গণতান্ত্রিক নিয়ম ভেঙে ব্যক্তিগত ক্ষমতার চূড়ান্ত প্রকাশ।
আমেরিকায়ও ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হামলা অনেক বিশ্লেষকের চোখে সেই রুবিকন মুহূর্তের মতো। ঘটনাটি দেখিয়েছে—একজন নেতা যদি প্রতিষ্ঠানের নিয়ম মানতে অস্বীকৃতি জানান, তবে রাষ্ট্রকে আইনশৃঙ্খলার পথে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
এছাড়া তথ্যযুদ্ধ বা ডিসইনফর্মেশন এখন গণতন্ত্রের আরেক বড় হুমকি। রোমান সাম্রাজ্যে সম্রাটদের নিজেদের প্রচারের জন্য বিশাল ভাস্কর্য, মুদ্রা ও জনসমাবেশ ব্যবহার করা হতো। আজকের আমেরিকায় সোশ্যাল মিডিয়া সেই একই কাজ করছে। নেতাদের ব্যক্তিত্বকে কেন্দ্র করে জনগণের আনুগত্য তৈরি করছে, সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে তথ্য ছড়াচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে।
সব মিলিয়ে, রোমের মতোই আমেরিকার প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে আছে। কিন্তু ক্রমশ তাদের ভেতরের শক্তি ক্ষয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নাগরিকদের অংশগ্রহণের জায়গা সংকুচিত হচ্ছে। এটি সবচেয়ে বড় সতর্কবার্তা। যদি প্রতিষ্ঠানগুলো কেবল মুখোশ হয়ে যায়, তবে দেশ কার্যত গণতন্ত্রহীন হয়ে পড়ে। অথচ বাইরে থেকে তা গণতন্ত্রের মতো দেখায়।
ইতিহাসে বারবার দেখা গেছে যে কোনো শাসনব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্য কেবল সেনাবাহিনী বা আইনই যথেষ্ট নয়। এর পেছনে থাকে ক্ষুদ্র কিন্তু প্রভাবশালী এক শ্রেণি—যারা অর্থ, সম্পদ ও উৎপাদনের মূল উৎস নিয়ন্ত্রণ করে। এই শ্রেণির আনুগত্য ছাড়া কোনো রাজনৈতিক কাঠামো স্থায়ী হতে পারে না। এরাই রাষ্ট্রের কর আদায়, সেনাবাহিনীর রসদ, নতুন অবকাঠামো নির্মাণ—সব কিছুর অর্থ যোগান দেন। এদের আনুগত্য যদি ভেঙে যায়, রাষ্ট্র বিপর্যয়ের মুখে পড়ে।
রোমান ইতিহাসে এই শ্রেণিকে আমরা পাই সেনেটর ও ধনী অভিজাতদের মধ্যে। তারা প্রাদেশিক কর আদায় ও জমির নিয়ন্ত্রণ করত। রোমের ভেতরকার রাজনৈতিক সংকট আসলে ছিল এই ধনীক শ্রেণির স্বার্থের সঙ্গে সরাসরি সংঘাত।
একই দৃশ্য দেখা গেছে ফরাসি বিপ্লবের সময়। বিপ্লবের প্রথম দিকে কিছু উচ্চবংশীয় অভিজাতরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে একজোট হয়েছিলেন। কারণ তারা রাজা ষোড়শ লুইয়ের স্বৈরতন্ত্রে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। তারা চাইছিলেন নিজেদের ক্ষমতা বাড়াতে। এই অভিজাতদের সমর্থন না পেলে হয়তো বিপ্লব এত দ্রুত সফল হতো না। রুশ বিপ্লবেও দেখা গেছে, রাজপরিবারের ভেতরের একাংশ ও ধনী শিল্পপতিরা জারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিপ্লবকে গতিশীল করেছিলেন।
আমেরিকার ক্ষেত্রেও একই বাস্তবতা কাজ করেছে। আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ মূলত ব্রিটিশ কর আরোপের বিরুদ্ধে ধনী উপনিবেশবাসীদের আন্দোলন হিসেবেই শুরু হয়। থমাস জেফারসন, জন অ্যাডামস, জর্জ ওয়াশিংটন—এরা প্রায় সবাই ছিলেন শীর্ষ ধনী জমিদার বা ব্যবসায়ী। আমেরিকার জন্মই হয়েছে এক অর্থনৈতিক স্বার্থসংঘাত থেকে।
বর্তমান আমেরিকায় ধনকুবেরদের ভূমিকা আরও বেশি স্পষ্ট। নির্বাচনী রাজনীতির সবচেয়ে বড় অর্থায়ন আসে কর্পোরেট দান ও সুপার প্যাক-এর কাছ থেকে। বিলিয়নিয়ার দাতাদের অনুমোদন ছাড়া বড় কোনো প্রার্থী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে টিকে থাকতে পারেন না। আইনপ্রণয়ন প্রক্রিয়ায় লবিং ইন্ডাস্ট্রি এতটাই শক্তিশালী যে, প্রায় প্রতিটি বড় আইন পাশের পেছনে থাকে কোনো না কোনো কর্পোরেট স্বার্থ।
এমনকি ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির বিদ্রোহের পর যখন ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সংকটে পড়েছিল, তখন রিপাবলিকান পার্টির অনেক দাতা ও কর্পোরেট গ্রুপ প্রথমে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তারা আবার ফিরতে শুরু করে। কারণ তারা বুঝেছিল ট্রাম্পপন্থী ভোটারদের বাদ দিয়ে রিপাবলিকান পার্টিকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। অর্থাৎ অর্থশক্তিই ঠিক করে দেয়, কোন রাজনীতিবিদ টিকে থাকবেন আর কে হারিয়ে যাবেন।
এই বাস্তবতা গণতন্ত্রের জন্য এক ধরনের নির্মম পরিহাস। বাইরে থেকে মনে হয় ক্ষমতা জনগণের হাতে, কিন্তু আসলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এই ধনী শ্রেণির মতামতই মুখ্য। একে কেউ কেউ বলেন প্লুটোক্রেসি—অর্থাৎ ধনীদের শাসন।
যে কোনো বিপ্লব বা ক্ষমতার পালাবদল তখনই সফল হয়, যখন ধনীক শ্রেণির অন্তত একটি অংশ বিদ্যমান ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যায়। কেবল সাধারণ মানুষের বিদ্রোহ খুব কম ক্ষেত্রেই শাসন উল্টে দিতে পারে। সুতরাং আমেরিকার ভবিষ্যতও অনেকটা নির্ভর করছে—এ দেশের শীর্ষ ধনকুবেরেরা কোন মুহূর্তে, কোন দিকে ঝুঁকবেন তার ওপর। তারা যদি বর্তমান ব্যবস্থায় লাভ করতে পারেন, তবে এই ব্যবস্থা টিকে থাকবে। কিন্তু যদি তারা মনে করেন এই ব্যবস্থা আর তাদের স্বার্থ রক্ষা করছে না, তবে তারাই নতুন রাজনৈতিক বিন্যাস তৈরি করতে উদ্যোগ নেবেন।
জানুয়ারি ৬-এর পর মনে হয়েছিল, রিপাবলিকান এলিটরা ট্রাম্পকে ছেড়ে যেতে পারে। কিন্তু তিনি আবার পুরো পার্টিকে নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। একজন নেতা হিসেবে ট্রাম্প সমগ্র রাজনৈতিক কাঠামোর ওপর প্রভাব বিস্তার করেছেন।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—যদি তিনি না থাকেন, তাহলে তার তৈরি আন্দোলনটি কতটা টিকে থাকবে। বর্তমানে এই আন্দোলন এবং পার্টির অনুগত্য বেশিরভাগই তাঁর ব্যক্তিত্ব ও জনপ্রিয়তার ওপর নির্ভরশীল। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভাজন আমেরিকায় তীব্রভাবে বেড়েছে। সশস্ত্র নাগরিক এবং রক্ষণশীল আন্দোলনগুলোর মধ্যে অস্ত্রাধারি শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। গণতান্ত্রিক সংলাপ ক্রমেই কঠিন হচ্ছে।
আন্তর্জাতিকভাবে, ট্রাম্পের সময়কালে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না অন্য দেশগুলো। চুক্তি বা আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় স্থায়িত্বহীনতার কারণে বিশ্বের নেতারা আমেরিকার ওপর আস্থা হারিয়েছে। এই পরিস্থিতি চীন, ভারত ও ইউরোপের মতো শক্তিগুলোকে নতুন সুযোগ দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র এখনও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে একটি বিশাল শক্তি। প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে সে এখনো অগ্রগামী। অভ্যন্তরীণ সহনশীলতা, স্থিতিশীল প্রতিষ্ঠান এবং বৃহৎ বাণিজ্য ও সেবা খাতও শক্ত ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। এসব মিলিয়ে এখনও দেশটি টিকে থাকার যোগ্য।
তবে কিছু সতর্কবার্তা উপেক্ষা করা যায় না। দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, তথ্য পরিবেশের ভাঙন, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং জলবায়ু বা অর্থনৈতিক ধাক্কা—যদি ঠিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়—তবে দেশটির সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো বিপর্যস্ত হতে পারে। আর পতন কোনো সরল বা লিনিয়ার প্রক্রিয়া নয়।
যখন কোনো দেশের পতনের সম্ভাবনা বিচার করা হয়, তখন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিশেষভাবে নজরে রাখা জরুরি। নির্বাচন সংক্রান্ত নিয়মে বড় ধরনের আইনি পরিবর্তন হলে সেটি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি সতর্কবার্তা হতে পারে। একইভাবে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে যে কোনো বিতর্ক বা ক্ষমতার অপব্যবহারও বিপদের ইঙ্গিত দেয়।
নির্বাচনে বারবার হস্তক্ষেপ বা ভোটাধিকার নিয়ে মিথ্যা দাবি সাম্য ও ন্যায়ের ভিত্তিকে দুর্বল করে। এর ফলে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের মধ্যে নীতিগত ফাটল বেড়ে গেলে রাজনৈতিক সংঘাতের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
কর্পোরেট বা অর্থনৈতিক শক্তির রাষ্ট্র ছেড়ে যাওয়ার মতো এলিট স্তরে বিচ্যুতি শাসন ব্যবস্থার স্থায়িত্বকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। পাশাপাশি, সামরিক এবং আইন-প্রয়োগ সংস্থার রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়লে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে পড়ে।
মিডিয়া ও সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে বিভাজন ও অপতথ্য ছড়ানোর মাত্রা বেড়ে গেলে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ও সংঘাতের সৃষ্টি হয়। আন্তর্জাতিক চুক্তি বা অঙ্গীকারের প্রতি ধারাবাহিক অবহেলা দেশের বৈশ্বিক বিশ্বাসযোগ্যতা কমিয়ে দেয়।
এই সব সূচক দিকে দেখলে যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি খুব আশাব্যঞ্জক বলে মনে হয় না।
(রোলিং স্টোনে প্রকাশিত নিকি ম্যাককান রামিরেজের ‘আর উয়ি উইটনেসিং দা ফল অব দা এমেরিকান এমপায়ার’ অবলম্বনে)
জাভেদ হুসেন: লেখক ও অনুবাদক
কীভাবে সমাজ এক ধাপে ধাপে এমন সংকটে পৌঁছায়, যেখানে আর পুরনো ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয় না। আমেরিকা কি এখন সেই ধরনের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে? আমেরিকার কি তার শক্তির শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত পেরিয়ে গেছে? সে এখনো বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ। কিন্তু এর মানে এই নয় যে চিরকাল এই অবস্থায় থাকব। ইতিহাসের প্রতিটি সাম্রাজ্যের একটি আয়ুষ্কাল আছে। আছে তার বৃদ্ধি, চূড়ায় পৌঁছে যাওয়ার পর পতন।
আমেরিকার অবস্থা এখন অনেকটা রোমান রিপাবলিকের শেষ যুগের মতো। রোম তখন ভূমধ্যসাগর শাসন করছে। তাদের বাহিনী অপরাজেয়। কিন্তু ঠিক সেই সাফল্যের সঙ্গে শুরু হয় অভ্যন্তরীণ ক্ষয়। ধন-সম্পদের বিপুল প্রবাহে ধনী আর গরিবের মধ্যে বৈষম্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে। ছোট কৃষকের জমি ধনী জমিদাররা কিনে নেয়। আর কৃষকরা শহরে ভিড় জমায়। নাগরিকত্ব পাওয়া ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণের দাবিতে ইতালির অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে রোমের বিরোধ শুরু হয়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, রাজনৈতিক নেতৃত্ব তখন আর নিয়ম-নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে না। রোমান রিপাবলিকের মূল শক্তি ছিল—যে-ই ভোটে জিতুক, সবাই তা মেনে নিত। একসময় মানুষ বুঝতে পারল, আইন মানা না মানা ইচ্ছের ব্যাপার। যিনি হেরে যাচ্ছেন, তিনি নিয়ম বদলে ফেলেন। সেনাপতিরা সেনাবাহিনী নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধ শুরু করেন। জুলিয়াস সিজারের ক্ষমতা দখল ও হত্যাকাণ্ড, অক্টাভিয়ানের উত্থান—সব মিলিয়ে রিপাবলিক ভেঙে পড়ে। জন্ম নেয় একক সম্রাটশাসিত সাম্রাজ্য।
আজকের আমেরিকায়ও একই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। আয়ের বৈষম্য বেড়েছে ১৯২০-এর দশকের চেয়েও বেশি। নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকার নিয়ে আইনি লড়াই চলছে। বিশেষ করে ২০২০ সালের নির্বাচনের পর ভোট গণনা নিয়ে বিতর্ক, আদালতের ভূমিকা, এমনকি ক্যাপিটল হিলে সহিংস হামলা—এসবই আমেরিকান রিপাবলিকের রাজনৈতিক স্থিতি দুর্বল হওয়ার ইঙ্গিত।
রোমান রিপাবলিকের পতনের পরও রাজনৈতিক কাঠামোকে পুরোপুরি ভেঙে দেওয়া হয়নি। সেনেট তখনও ছিল, আইন তখনও পাশ হতো, নির্বাচনও হতো। কিন্তু এগুলো ধীরে ধীরে সব আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। সম্রাটরা সেনেটকে ব্যবহার করতেন ক্ষমতার বৈধতা দেওয়ার জন্য। আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া ছিল অনেকাংশে পূর্বনির্ধারিত—যা আসলে সম্রাটের সিদ্ধান্তকে অনুমোদন করত। সাধারণ নাগরিকদের জন্য এগুলো এক ধরনের ‘অংশগ্রহণের ছলনা’ তৈরি করত। এতে মনে হতো রিপাবলিক এখনো বেঁচে আছে।
বাইরে গণতন্ত্রের মুখোশ, ভেতরে একক শাসক। বিপদ এখানেই। আপনি যদি এমন এক ব্যবস্থায় পৌঁছান, যেখানে বাহ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে আছে, কিন্তু সিদ্ধান্ত আসলে এক ব্যক্তি বা ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর হাতে, তবে সেটি আর কার্যকর গণতন্ত্র থাকে না।
অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে আমেরিকায় আজ ঠিক এই দিকেই দেশ এগোচ্ছে। প্রেসিডেন্টের এক্সিকিউটিভ অর্ডারের পরিমাণ নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। আইন প্রণয়নের জন্য কংগ্রেসকে পাশ কাটানো হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের নিয়োগ প্রক্রিয়া এতটাই রাজনৈতিক হয়ে গেছে যে জনগণ আদালতকে আর নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান মনে করছে না। এমনকি নির্বাচন কমিশনের গঠন, ভোট গণনা ও ব্যালট যাচাইয়ের মতো মৌলিক বিষয়গুলো নিয়েও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বাড়ছে।
এই কেন্দ্রীভবনের আরেকটি বিপদ হলো, যখন ক্ষমতা এক জায়গায় জমা হয়, তখন তা সহজেই অপব্যবহার করা যায়। রোমে সেনাপতিরা তাঁদের সেনাবাহিনীকে ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো ব্যবহার করতেন। সিজার যখন রুবিকন নদী পার হয়ে রোমের দিকে অগ্রসর হন, এটি ছিল গণতান্ত্রিক নিয়ম ভেঙে ব্যক্তিগত ক্ষমতার চূড়ান্ত প্রকাশ।
আমেরিকায়ও ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হামলা অনেক বিশ্লেষকের চোখে সেই রুবিকন মুহূর্তের মতো। ঘটনাটি দেখিয়েছে—একজন নেতা যদি প্রতিষ্ঠানের নিয়ম মানতে অস্বীকৃতি জানান, তবে রাষ্ট্রকে আইনশৃঙ্খলার পথে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
এছাড়া তথ্যযুদ্ধ বা ডিসইনফর্মেশন এখন গণতন্ত্রের আরেক বড় হুমকি। রোমান সাম্রাজ্যে সম্রাটদের নিজেদের প্রচারের জন্য বিশাল ভাস্কর্য, মুদ্রা ও জনসমাবেশ ব্যবহার করা হতো। আজকের আমেরিকায় সোশ্যাল মিডিয়া সেই একই কাজ করছে। নেতাদের ব্যক্তিত্বকে কেন্দ্র করে জনগণের আনুগত্য তৈরি করছে, সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে তথ্য ছড়াচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে।
সব মিলিয়ে, রোমের মতোই আমেরিকার প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে আছে। কিন্তু ক্রমশ তাদের ভেতরের শক্তি ক্ষয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নাগরিকদের অংশগ্রহণের জায়গা সংকুচিত হচ্ছে। এটি সবচেয়ে বড় সতর্কবার্তা। যদি প্রতিষ্ঠানগুলো কেবল মুখোশ হয়ে যায়, তবে দেশ কার্যত গণতন্ত্রহীন হয়ে পড়ে। অথচ বাইরে থেকে তা গণতন্ত্রের মতো দেখায়।
ইতিহাসে বারবার দেখা গেছে যে কোনো শাসনব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্য কেবল সেনাবাহিনী বা আইনই যথেষ্ট নয়। এর পেছনে থাকে ক্ষুদ্র কিন্তু প্রভাবশালী এক শ্রেণি—যারা অর্থ, সম্পদ ও উৎপাদনের মূল উৎস নিয়ন্ত্রণ করে। এই শ্রেণির আনুগত্য ছাড়া কোনো রাজনৈতিক কাঠামো স্থায়ী হতে পারে না। এরাই রাষ্ট্রের কর আদায়, সেনাবাহিনীর রসদ, নতুন অবকাঠামো নির্মাণ—সব কিছুর অর্থ যোগান দেন। এদের আনুগত্য যদি ভেঙে যায়, রাষ্ট্র বিপর্যয়ের মুখে পড়ে।
রোমান ইতিহাসে এই শ্রেণিকে আমরা পাই সেনেটর ও ধনী অভিজাতদের মধ্যে। তারা প্রাদেশিক কর আদায় ও জমির নিয়ন্ত্রণ করত। রোমের ভেতরকার রাজনৈতিক সংকট আসলে ছিল এই ধনীক শ্রেণির স্বার্থের সঙ্গে সরাসরি সংঘাত।
একই দৃশ্য দেখা গেছে ফরাসি বিপ্লবের সময়। বিপ্লবের প্রথম দিকে কিছু উচ্চবংশীয় অভিজাতরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে একজোট হয়েছিলেন। কারণ তারা রাজা ষোড়শ লুইয়ের স্বৈরতন্ত্রে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। তারা চাইছিলেন নিজেদের ক্ষমতা বাড়াতে। এই অভিজাতদের সমর্থন না পেলে হয়তো বিপ্লব এত দ্রুত সফল হতো না। রুশ বিপ্লবেও দেখা গেছে, রাজপরিবারের ভেতরের একাংশ ও ধনী শিল্পপতিরা জারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিপ্লবকে গতিশীল করেছিলেন।
আমেরিকার ক্ষেত্রেও একই বাস্তবতা কাজ করেছে। আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ মূলত ব্রিটিশ কর আরোপের বিরুদ্ধে ধনী উপনিবেশবাসীদের আন্দোলন হিসেবেই শুরু হয়। থমাস জেফারসন, জন অ্যাডামস, জর্জ ওয়াশিংটন—এরা প্রায় সবাই ছিলেন শীর্ষ ধনী জমিদার বা ব্যবসায়ী। আমেরিকার জন্মই হয়েছে এক অর্থনৈতিক স্বার্থসংঘাত থেকে।
বর্তমান আমেরিকায় ধনকুবেরদের ভূমিকা আরও বেশি স্পষ্ট। নির্বাচনী রাজনীতির সবচেয়ে বড় অর্থায়ন আসে কর্পোরেট দান ও সুপার প্যাক-এর কাছ থেকে। বিলিয়নিয়ার দাতাদের অনুমোদন ছাড়া বড় কোনো প্রার্থী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে টিকে থাকতে পারেন না। আইনপ্রণয়ন প্রক্রিয়ায় লবিং ইন্ডাস্ট্রি এতটাই শক্তিশালী যে, প্রায় প্রতিটি বড় আইন পাশের পেছনে থাকে কোনো না কোনো কর্পোরেট স্বার্থ।
এমনকি ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির বিদ্রোহের পর যখন ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সংকটে পড়েছিল, তখন রিপাবলিকান পার্টির অনেক দাতা ও কর্পোরেট গ্রুপ প্রথমে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তারা আবার ফিরতে শুরু করে। কারণ তারা বুঝেছিল ট্রাম্পপন্থী ভোটারদের বাদ দিয়ে রিপাবলিকান পার্টিকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। অর্থাৎ অর্থশক্তিই ঠিক করে দেয়, কোন রাজনীতিবিদ টিকে থাকবেন আর কে হারিয়ে যাবেন।
এই বাস্তবতা গণতন্ত্রের জন্য এক ধরনের নির্মম পরিহাস। বাইরে থেকে মনে হয় ক্ষমতা জনগণের হাতে, কিন্তু আসলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এই ধনী শ্রেণির মতামতই মুখ্য। একে কেউ কেউ বলেন প্লুটোক্রেসি—অর্থাৎ ধনীদের শাসন।
যে কোনো বিপ্লব বা ক্ষমতার পালাবদল তখনই সফল হয়, যখন ধনীক শ্রেণির অন্তত একটি অংশ বিদ্যমান ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যায়। কেবল সাধারণ মানুষের বিদ্রোহ খুব কম ক্ষেত্রেই শাসন উল্টে দিতে পারে। সুতরাং আমেরিকার ভবিষ্যতও অনেকটা নির্ভর করছে—এ দেশের শীর্ষ ধনকুবেরেরা কোন মুহূর্তে, কোন দিকে ঝুঁকবেন তার ওপর। তারা যদি বর্তমান ব্যবস্থায় লাভ করতে পারেন, তবে এই ব্যবস্থা টিকে থাকবে। কিন্তু যদি তারা মনে করেন এই ব্যবস্থা আর তাদের স্বার্থ রক্ষা করছে না, তবে তারাই নতুন রাজনৈতিক বিন্যাস তৈরি করতে উদ্যোগ নেবেন।
জানুয়ারি ৬-এর পর মনে হয়েছিল, রিপাবলিকান এলিটরা ট্রাম্পকে ছেড়ে যেতে পারে। কিন্তু তিনি আবার পুরো পার্টিকে নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। একজন নেতা হিসেবে ট্রাম্প সমগ্র রাজনৈতিক কাঠামোর ওপর প্রভাব বিস্তার করেছেন।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—যদি তিনি না থাকেন, তাহলে তার তৈরি আন্দোলনটি কতটা টিকে থাকবে। বর্তমানে এই আন্দোলন এবং পার্টির অনুগত্য বেশিরভাগই তাঁর ব্যক্তিত্ব ও জনপ্রিয়তার ওপর নির্ভরশীল। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভাজন আমেরিকায় তীব্রভাবে বেড়েছে। সশস্ত্র নাগরিক এবং রক্ষণশীল আন্দোলনগুলোর মধ্যে অস্ত্রাধারি শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। গণতান্ত্রিক সংলাপ ক্রমেই কঠিন হচ্ছে।
আন্তর্জাতিকভাবে, ট্রাম্পের সময়কালে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না অন্য দেশগুলো। চুক্তি বা আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় স্থায়িত্বহীনতার কারণে বিশ্বের নেতারা আমেরিকার ওপর আস্থা হারিয়েছে। এই পরিস্থিতি চীন, ভারত ও ইউরোপের মতো শক্তিগুলোকে নতুন সুযোগ দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র এখনও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে একটি বিশাল শক্তি। প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে সে এখনো অগ্রগামী। অভ্যন্তরীণ সহনশীলতা, স্থিতিশীল প্রতিষ্ঠান এবং বৃহৎ বাণিজ্য ও সেবা খাতও শক্ত ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। এসব মিলিয়ে এখনও দেশটি টিকে থাকার যোগ্য।
তবে কিছু সতর্কবার্তা উপেক্ষা করা যায় না। দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, তথ্য পরিবেশের ভাঙন, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং জলবায়ু বা অর্থনৈতিক ধাক্কা—যদি ঠিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়—তবে দেশটির সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো বিপর্যস্ত হতে পারে। আর পতন কোনো সরল বা লিনিয়ার প্রক্রিয়া নয়।
যখন কোনো দেশের পতনের সম্ভাবনা বিচার করা হয়, তখন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিশেষভাবে নজরে রাখা জরুরি। নির্বাচন সংক্রান্ত নিয়মে বড় ধরনের আইনি পরিবর্তন হলে সেটি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি সতর্কবার্তা হতে পারে। একইভাবে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে যে কোনো বিতর্ক বা ক্ষমতার অপব্যবহারও বিপদের ইঙ্গিত দেয়।
নির্বাচনে বারবার হস্তক্ষেপ বা ভোটাধিকার নিয়ে মিথ্যা দাবি সাম্য ও ন্যায়ের ভিত্তিকে দুর্বল করে। এর ফলে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের মধ্যে নীতিগত ফাটল বেড়ে গেলে রাজনৈতিক সংঘাতের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
কর্পোরেট বা অর্থনৈতিক শক্তির রাষ্ট্র ছেড়ে যাওয়ার মতো এলিট স্তরে বিচ্যুতি শাসন ব্যবস্থার স্থায়িত্বকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। পাশাপাশি, সামরিক এবং আইন-প্রয়োগ সংস্থার রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়লে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে পড়ে।
মিডিয়া ও সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে বিভাজন ও অপতথ্য ছড়ানোর মাত্রা বেড়ে গেলে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ও সংঘাতের সৃষ্টি হয়। আন্তর্জাতিক চুক্তি বা অঙ্গীকারের প্রতি ধারাবাহিক অবহেলা দেশের বৈশ্বিক বিশ্বাসযোগ্যতা কমিয়ে দেয়।
এই সব সূচক দিকে দেখলে যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি খুব আশাব্যঞ্জক বলে মনে হয় না।
(রোলিং স্টোনে প্রকাশিত নিকি ম্যাককান রামিরেজের ‘আর উয়ি উইটনেসিং দা ফল অব দা এমেরিকান এমপায়ার’ অবলম্বনে)
জাভেদ হুসেন: লেখক ও অনুবাদক
বাংলাদেশে বইমেলা নিছক কোনো বাণিজ্যিক আয়োজন নয়। অমর একুশে গ্রন্থমেলা জাতির রক্তের সঙ্গে মিশে থাকা এক ঐতিহাসিক উৎসব। একে ঘিরেই লেখক-পাঠক-প্রকাশকের মিলন ঘটে, নতুন চিন্তার সঞ্চার হয়, সাহিত্য-সংস্কৃতির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।
১১ ঘণ্টা আগেআনু মুহাম্মদ অর্থনীতির মৌলিক বিষয় ও রাজনৈতিক উন্নয়নের জটিল বিষয়গুলো সহজভাবে মানুষের সামনে উপস্থাপন করে আসছেন, এখনো করছেন। একজন সংগঠক হিসাবে সর্বজনের জন্য রাজনীতিকে গতি দিয়েছেন, হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের প্রতিবাদী কণ্ঠের আইকন।
১ দিন আগেআধুনিক কালে সংগীত শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তি ও মিডিয়ার গুরুত্ব সুগভীর। একজন শিশু নৈতিক জ্ঞান কি শুধু ধর্ম থেকেই পায়? নাকি ভাষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান, পরিবেশ, ইতিহাস, দর্শন সবকিছু থেকেই পেতে পারে?
১ দিন আগেগতকাল বিকেল বেলা, একপশলা বৃষ্টি কেবল শেষ হয়েছে। ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে নিউজরুমে বসলাম ট্রেন্ডি কোনো ইস্যু নিয়ে স্যাটায়ার লিখব বলে। কিন্তু ট্রেন্ডে এমন কিছু পেলাম না, যা সম্পর্কে আমার জানাশোনা আছে। পেলাম হানিয়া আমিরকে। আমি তাঁকে চিনি না।
২ দিন আগে