পোশাকের রাজনীতি
ঊনবিংশ শতাব্দীর মুসলমানদের ধর্মবোধ ও আত্মপরিচয়সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্ন, পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ্বমুখর অস্তিত্বগত তাগিদ, তথাকথিত ভদ্রলোকদের দ্বারা প্রান্তিকীকরণের—এসব জটিল আবর্ত তাঁদের ঘিরে ধরেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বিজ্ঞানের প্রফেসর ইমেরিটাস মোহাম্মদ রশীদুজ্জামান এ লেখায় আত্মস্মৃতির মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক পোশাক হিসেবে মুসলমানেরা কেন একসময় আচকান, শেরওয়ানি ও ফেজ টুপি পরতেন, তা ব্যখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। আর এর মধ্য দিয়ে উন্মোচিত হয়েছে পোশাকের রাজনীতিও। লেখাটি লেখকের ‘আইডেন্টিটি অব আ মুসলিম ফ্যামিলি ইন কলোনিয়াল বেঙ্গল: বিটুইন মেমোরিজ অ্যান্ড হিস্ট্রি’ বইয়ের একটি অংশ। অনুবাদ করেছেন জি এইচ হাবীব
মোহাম্মদ রশীদুজ্জামান
১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে মাঝেমধ্যে নানা অনুষ্ঠানে, বিভিন্ন স্থানে এবং বিচিত্র ঘটনাক্রমে আমার সঙ্গে আমার বাবার কয়েকজন প্রাক্তন ছাত্রের সঙ্গে দেখা হয়। কখন ও কোথায় তাঁরা আমার বাবার (মৌলভী বদরুজ্জামান) ছাত্র ছিলেন, সেকথা বলার আগেই তাঁর পোশাকের কথা তাঁরা মনে করতে পেরেছিলেন: আচকান, পাজামা ও কালো ঝালর লাগোনো একটা লাল ফেজ টুপি। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডি ২০০৫ সালে একটি বক্তৃতা প্রদানের জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানায়। সেখানে বক্তৃতার পর এক বয়স্ক ভদ্রলোক আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। আমার ধারনা, তখন তিনি কোনো মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ সরকারের একজন সচিব ছিলেন। আমি তাঁর নাম জিজ্ঞাসা করার আগেই তিনি বললেন, ‘প্রথমে আমি আপনার বাবার ছাত্র ছিলাম, আর তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অল্প কিছুদিনের জন্য আপনার!’ আমার বাবার ধ্রুপদি পোশাক, এমনকি যখন সেটা আর ফ্যাশনদুরস্ত ছিল না, তাঁকে ঘরে ও বাইরে—তাঁর বিদ্যালয়ে, জনসমাগমে, অথবা বাজারে—একটি স্বতন্ত্র চেহারা দিয়েছিল। এটা ছিল ঘরের বাইরে তাঁর আনুষ্ঠানিক পোশাক, কিন্তু যখন তিনি আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে যেতেন, তখনো তিনি এই পোশাক পরতেন।
এ কথা স্বীকার করতে হবে যে কালো আচকান ও পাজামা, সঙ্গে তাঁর সেই তুর্কী লাল টুপি (যেটা মরোক্কোর ফেজ টুপি নামে পরিচিত ছিল), সেটা ছিল তাঁর ঘরের বাইরের একদম ধরাবাঁধা পোশাক। আমার জ্ঞাতি ভাইবোনরা তাঁকে লাল কাকা বা মামা বলে ডাকত। তাঁর লাল ফেজ টুপির কারণেই সম্ভবত। নাকি তাঁর লালচে ত্বকের কারণে? এ ব্যাপারে আমি কখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। বাড়িতে তিনি লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরতেন, সেই সঙ্গে কখনো কখনো একটা শার্ট: তিনি যেহেতু বাগান করার ব্যাপারে বেশ উৎসহী ছিলেন, তাই সে কাজের জন্য লুঙ্গিই ছিল আপাতদৃষ্টিতে বাস্তবসম্মত পোশাক।
১৯৫০-এর দশকের শেষের দিকে একজন প্রশিক্ষিত দর্জি পাওয়া কঠিন ছিল; এমনকি আচকানের জন্য ভালো মানের কালো কাপড়ের সরবরাহও কম ছিল। পরিবারের সবাই তাঁকে সেই পোশকের বদলে অন্য কোনো পোশাক পরার জন্য পীড়পীড়ি করত। শিক্ষকতা ও বাইরের অন্যান্য কাজকর্মের জন্য পাজমা আর কুর্তা (লম্বা শার্ট)। এই পোশাকটি সে সময়ে বেশ সহজলভ্য ছিল।
কিন্তু তিনি আমাদের কথা শোনেননি। তাঁর কথা ছিল: ‘এদেশে একজন মুসলমান ভদ্রলোকের জন্য এটাই হচ্ছে ক্লাসিক পোশাক! আমি সেই ১৯২০-এর দশক থেকে আমার কর্মক্ষেত্রের জন্য এই পোশাক বেছে নিয়েছি এবং আমি এটা ছাড়ছি না।’
১৯৫১ সালের মাঝামাঝি থেকে যখন আমি ঢাকায় থাকতে শুরু করি তখনকার এবং তারও আগের অভিজ্ঞতা থেকে জানতাম, আমার বাবার পোশাকের জন্য নির্দিষ্ট কাপড় আমি কোথায় পেতে পারি। একবার তাঁর একটি নতুন আচকান দরকার হলে আমি সেটার খোঁজে পুরান ঢাকা গিয়েছিলোম এবং সৌভাগ্যক্রমে দু-একটি জায়গায় তা পেয়েও যাই। কিছু রাজনৈতিক দলের গুটিকতেক বরিষ্ঠ রাজনীতিবিদ ছাড়া কালো আচকান বা শেরওয়ানি অন্য লোকজনের কাছে তেমন জনপ্রিয় ছিল না। ১৯৪০-এর দশকে পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয় মুসলিম লীগ নেতাদের অপেক্ষাকৃত বয়স্ক কয়েকজনকে আমি দেখেছিলাম যাঁরা কালো আচকান আর লাল টুপি পরে রাজনৈতিক সমাবেশে উপস্থিত থাকতেন, এমনকি ব্যক্তিগত জমায়েত ও বিবাহ সংবর্ধনাতেও পোশাকটি এতই আনুষ্ঠানিক ছিল যে এটি কেনার জন্য ১৯৫০-এর দশকের শেষ দিকে বেশি ক্রেতা আকৃষ্ট হতেন না; কাজেই মুষ্টিমেয় কিছু খুচরা বিক্রেতাই কেবল বিশেষ এই কাপড়গুলো বিক্রি করতেন। তা ছাড়া, কাপড়টা কী করে কাটতে হয় এবং আচকান বা শেরওয়ানি কীভাবে সেলাই করতে হয়, সেটা তরুণ ও সাধারণ দর্জিরা তখন আর জানতেন না। আমার মনে পড়ে, ১৯৪০ ও ১৯৫০-এর দশকে আমার বাবা কালো আচকান তৈরি করাতে ঢাকার চকবাজারে এক বৃদ্ধ দর্জির কাছে গিয়েছিলেন। আমি জানতাম, ইসলামপুর ও নবাবপুর এলাকায় কয়েকজন ভালো দর্জি আছেন, কিন্তু তাঁদের কাছ থেকে পোশাক তৈরি করাবার মতো আর্থিক সঙ্গতি বাবার ছিল না।
১৯৪০-এর দশকে সস্তায় শেরওয়ানি বা আচকান তৈরির চেষ্টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হাস্যকর রকমের দুর্দশায় পতিত হওয়ার বেশ কিছু গল্প আমার কানে এসেছিল। সেসবের একটি কাহিনি ছিল সত্যিই মজার আর নিষ্ঠুর! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোটোখাটো, গাট্টাগোট্টা, ও লক্ষণীয়ভাবে চাপা গায়ের রঙের একজন শিক্ষক একটি কালো শেরওয়ানি সেলাই করার জন্য চকবাজারের এক দর্জির কাছে গিয়েছিলেন এবং তিনি দাম কমানোর জন্য দর কষাকষি করছিলেন। আর তখন সেই দর্জি—দৃশ্যত যিনি বুদ্ধিদীপ্ত কৌতুকের জন্য প্রবাদপ্রতিম খ্যাতির অধিকারী সেই বিখ্যাত (ঢাকাইয়া) কুট্টি সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন—তিনি তাঁর খদ্দেরের ওপর রেগে গিয়ে সোজা তাঁর চোখে চোখ রেখে বলে উঠলেন, ‘কালো শেরওয়ানির জন্য আপনার কোনো কাপড়ের দরকার নাই। কয়েকটা বোতাম কিনে আনুন গিয়ে, সেগুলো আপনার গায়ে লাগিয়ে দেব, কোনো পয়সা নেব না।’
এসব ১৯৩০ ও ১৯৪০-এর দশকের কথা। সে সময়ে আচকান বা শেরওয়ানি তৈরি করা দর্জিদের খুব চাহিদা ছিল। এছাড়াও সে সময়ে চকবাজারে বেশ কিছু বইয়ের দোকান ছিল, যেগুলোতে বিশেষত ইসলামি বই আর পুঁথি বিক্রি হতো। আশপাশের এলাকাটা ছিল কেনাকাটার জন্য মুসলমানদের বেশ পছন্দে: এটা ছিল আসলেই ধ্রুপদি মুসলিম পোশাক, মুখে পানি আনা মোগলাই খাবার, আর পথের ধারের খাবারদাবারের কেন্দ্র। কার্যত, এটা ছিল ঢাকার সর্বমুসলিম অঞ্চল, যার বয়স কয়েক শ বছর। এলাকার পুরোনো মসজিদগুলো ঢাকার সাবেককালের কর্মচঞ্চল অংশের মুসলিম ঐতিহ্যের সাক্ষ্যবাহী। আমার চকবাজারের স্মৃতি প্রথমত সেই ১৯৪৪ বা ১৯৪৫ সালে আর পরবর্তীকালে ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকের।
আমার বাবা বাড়ির বাইরে খেতে তেমন একটা পছন্দ করতেন না। তাঁর ভয় ছিল ওসব খাবার স্বাস্থ্যকর নয়। তিনি সেই বিকিকিনির পাড়াতে যেতেন মূলত প্রয়োজন হলে, তাঁর আচকান সেলাই করাতে এবং তিনি নিকটবর্তী প্রাচীন ঐতিহাসিক মসজিদে নামাজ পড়তে পছন্দ করতেন। আর তিনি আমাকে মনে করিয়ে দিতেন যে কয়েক শ বছর আগে চকবাজার ছিল কেনাকাটার এক বিশাল এলাকা। কেবল কাপড়চোপড় আর খাবারদাবারের মতো সাধারণ পণ্যই নয়, একসময় এমনকি দাস-দাসীও কেনা-বেচা হতো এই বাজারে। তাঁর সঙ্গে ঢাকার পুরোনো রাস্তাঘাটে হাঁটা বা প্রাচীন কোনো মাজারের পাশ দিয়ে যাওয়ার মানে ছিল বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্মারক চিনিয়ে দেওয়া এক জীবন্ত ইতিহাসের সঙ্গে হাঁটা।
আমার বাবার লাল ফেজ টুপির সঙ্গে মুসলমানের আত্মপরিচয় ও সংস্কৃতির এক দীর্ঘ ইতিহাস জড়িত ছিল; লাল টুপিটি ছিল সময় ও পরিস্থিতিনির্ভর রাজনৈতিক বার্তাবহ। তাঁর জন্য আমি কোনো জায়গা থেকে একটা ফেজ টুপি সংগ্রহ করতে পারিনি, এমনকি করাচি থেকেও না; এটা ছিল আমার জন্য খুব হতাশাজনক। একবার ১৯৬০-এর দশকের গোড়ার দিকে আমি লন্ডনে জিনিসটার খোঁজ করেছিলাম। আমরা বলেছিলাম, সাধারণ মুসলমানেরা যেমন টুপি পরে সে রকম কোনো টুপি পরা উচিত তাঁর; এবং পছন্দ অনুযায়ী বেছে নেওয়ার মতো অনেক টুপি পাওয়া যেত ঢাকায়। নামাজের টুপি তৈরির কুটিরশিল্প বাংলাদেশে বিদ্যমান ছিল এবং যখন আমি এই লেখা লিখছি, তখন সেই টুপি গোটা মুসলিম বিশ্বে রফতানিও হচ্ছে। কিন্তু স্কুল ও অন্যান্য স্থানে যাওয়ার সময় তিনি কেবল ফেজ টুপিই পরতে পছন্দ করতেন। মনে পড়ে, আমার মা যখন বিবাহিত নারীদের বছরে একবার পিতৃ-মাতৃ গৃহে যাওয়ার প্রথানুযায়ী তাঁর বাৎসরিক নাইওরে যেতেন, বাবা তখন কালো আচকান পরতেন আর তাঁর মাথা ঢাকা থাকত ফেজ টুপিতে। আমার মনে পড়ে, আমার মায়ের এক কম বয়েসী জ্ঞাতি ভাই একবার বাবাকে তাঁর পোশাকের জন্য বিদ্রুপ করেছিলেন। আমি ভাবতাম, কেন তিনি সেই পোশাকটি আঁকড়ে ধরে আছেন। টুপিগুলো ‘রুমি টুপি’ নামেই বেশি পরিচিত ছিল। আমার ধারনা, সারা দুনিয়ায় পরিচিত সুফী কবি মৌলভি রুমির নামে টুপিটির নাম হওয়ায় তিনি এর প্রেমে পড়েছিলেন। আসলেই কি তাই?
আমার বাবা মওলানা রুমির কবিতা পছন্দ করতেন। লাল রঙটি রুমির ঐশী প্রেমের স্মারক—বহু সুফি কবিতায় লাল গোলাপকে যেমন অমর করে রাখা হয়েছে, ঠিক তেমনি। তারপরেও এটা হয়তো আমার কষ্ট কল্পনাই। আমি যে কেবল আমার বাবাকেই আচকান আর লাল তুর্কি টুপিতে দেখেছিলাম তা নয়। স্কুলে আমি আমার মৌলভি শিক্ষককে (আরবি/ফারসি/উর্দু প্রশিক্ষক) এ রকম একটা ফেজ টুপি পরতে দেখেছিলাম, যখন তিনি মাঝেমধ্যে শেরওয়ানি বা আচকান পরে আসতেন। বাবার মতো তিনি সবসময় সেই পোশাক পরতেন না। মৌলভি শিক্ষক ক্লাশে এসে প্রথমে ফেজ টুপিটি খুলে রাখতেন। তারপরে চেয়ারে বসে পাঠদানের ভূমিকা হিসেবে একটা গল্প বলতে শুরু করতেন। অবশ্য, আরেকজন শিক্ষকও ছিলেন—মিশ্রি মিয়া, যিনি আমার বাবার চেয়ে খানিকটা সিনিয়র ছিলেন। তাঁর আচকান বা শেরওয়ানি কালো ছিল না। সেটা ছিল ক্রিম রঙের বা এমনকি সাদাও বলা যেতে পারে। ছোট, পাকা দাড়ি ছিল তাঁর। সেই ধ্রুপদি পোশাকে তিনি বেশ চোখে পড়ার মতোই ছিলেন। ক্লাসে বা ক্লাসের বাইরে তাঁকে যখনই দেখতাম, তাঁর মাথায় সবসময় সেই লাল তুর্কি টুপি পরা থাকত। ছাত্রদের জন্য তাঁর খুব দরদ ছিল। আমি যতটুকু জানি, মিশ্রি মিয়া নিঃসন্তান ছিলেন। আমাদের গ্রাম থেকে ছয় মাইল দূরের এক গ্রামে বাড়ি ছিল তাঁর। একবার তিনি আমাকে কাছে ডেকে বলেছিলেন, সম্ভবত সহকর্মীর সন্তানস্নেহে, ‘রশিদ, বড় হলে তোমারও উচিত হবে তোমার বাবার মতো পোশাক পরা! এটাই হচ্ছে মুসলমানের পোশাক!একজন মুসলমানের ছেলে হিসেব কথাটা মনে রেখো।’…
আমার ছাত্রাবস্থায় আমি আরও দু-একজন ভদ্রলোককে দেখেছি। তাঁদের একজন ছিলেন ঢাকার এক জেষ্ঠ্য সরকারি বেসামরিক কর্মকর্তা, আমার সমবয়সী একজন বন্ধুর বাবা। তিনি ছিলেন আমার বাবার শিক্ষকতা জীবনের গোড়ার দিকের ছাত্র। এই ভদ্রলোক কলকাতা রাইটার্স বিল্ডিংয়ে বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসে একটা চাকরি পেয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালে ঢাকায় চলে আসার পর তিনি আমাদের কালীগঞ্জ ব্যবস্থাপনা পরিষদের (কালীগঞ্জ স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটির) সচিব হন।তিনি যখন বিদ্যালয় পরিষদের সভায় যোগ দেওয়ার জন্য আসতেন, তাঁর পরনে থাকত কালো শেরওয়ানি।
বিশ শতকের পাঁচের দশকের গোড়ার দিকে আমি যখন ঢাকায় ছাত্র হিসেবে ছিলাম, তখন আমি একবার তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য তাঁর অফিসে যাই। সেখানেও তাঁকে কালো আচকান পরিহিত দেখতে পাই। আমার বাবা আমাকে ১৯৪০-এর দশকের শেষ দিকে এবং ১৯৫০-এর দশকের গোড়ার দিকে ঢাকায় তাঁর বাড়িতে এবং কালীগঞ্জের আশপাশে বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সম্ভবত সেই ভদ্রলোকের মধ্যে বাবা আমার জন্য একটি আদর্শ চরিত্র লক্ষ করেছিলেন। গুজব ছিল যে তিনি উচ্চ বেতনভোগী একজন সরকারি বেসামরিক কর্মকর্তা ছিলেন এবং লোকে এই ভেবে অবাক হতো যে প্রতিমাসে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে তিনি কী করতে পারেন! গ্রামের লোকজন তাঁকে সমীহ করে ‘ডেপুটি সাহেব’ বলে ডাকত।…
আমার নানাও তুর্কি টুপি পরতেন। কিন্তু সেটা কেবল বিয়ে বা সে রকম কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে আচকান বা শেরওয়ানি গায়ে চড়াবার সময়। আমি সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ নেতাদের অনেকের ছবি দেখেছি: তাঁদের বেশিরভাগই শেরওয়ানি পরিহিত ছিলেন। তাঁদের কয়েকজনের মাথায় ফেজ টুপি ছিল। শুনেছি, প্যান-ইসলামি ব্রিটিশবিরোধী খিলাফত আন্দোলনের সময় (১৯১৯-১৯২৩) তাঁদের মধ্যে ফেজ টুপি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যাঁরা ব্রিটিশ সরকারবিরোধী অটোমান সুলতানের সমর্থক ছিলেন। অন্যদিকে, ১৯৪০ ও ১৯৫০ দশকে জিন্নাহ টুপি বলে একটি টুপি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে; সবর্ত্রই সেটা সহজলভ্য ছিল। তরুণ-বৃদ্ধ সবাই জিন্নাহ টুপি কিনত—ঈদ উৎসব উদ্যাপন আর বিশেষ অনুষ্ঠানে তাঁরা সেই টুপি পরতেন। কিন্তু আমার বাবা নতুন ধরনের টুপিটির দিকে ভ্রূক্ষেপও করতেন না। তিনি তাঁর সেই লাল টুপিতেই আটকে রইলেন যতদিন না সেটা নির্বিকল্প রইল। তবে তিনি বাড়িতে আর আমাদের গ্রামের বাড়ির মসজিদে নামাজ পড়ার সময় সুতি টুপিই পছন্দ করতেন।
তুরস্কের লৌহ মানব কামাল আতাতুর্ক যখন তুরস্ক থেকে রাজতন্ত্র ও খিলাফতের বিলুপ্তি ঘটান, তিনি তাঁর দেশে ফেজ টুপিও নিষিদ্ধ করেন। আমি পড়েছিলাম যে তুর্কি নারীদের জন্য তিনি পাশ্চাত্যের পোশাক পরা বাধ্যতামূলক করেন। স্পষ্টতই এটা ছিল তুর্কিদের পশ্চিমীকরণ, কিন্তু তখনো যাঁরা ভারত উপমহাদেশে এবং অন্যত্র ফেজ টুপি পরতে চাইতেন, ওই নিষেধাজ্ঞা তাদের নিরস্ত করতে পারেনি। উৎখাত হওয়া খলিফার জন্য কি আমার বাবার খানিকটা সহানুভূতি ছিল? আর ফেজ টুপির প্রতি তাঁর তীব্র ভালোবাসার মাধ্যমে কি তিনি একসময় সারা দুনিয়ায় মুসলমানদের সমীহ উদ্রেককারী খিলাফতের সঙ্গে নিজের একাত্মতা ঘোষণা করতে চাইতেন, এমনকি সেটা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পরেও? এই প্রশ্নের সঠিক জবাব আমার জানা নেই।
আমার বাবা মনে করতে পারতেন যে তিনি যখন কলেজের ছাত্র ছিলেন, ততদিনে খিলাফত আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। খিলাফত আন্দোলনের সমর্থকেরা সব মুসলমান ছাত্রকে আহ্বান জানাতেন যেন তাঁরা ব্রিটিশরাজ বা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে স্কুল ত্যাগ করতে বলেন। কারণ, এটা প্রবলভাবে বিশ্বাস করা হতো যে তুর্কি সুলতান ও খলিফার উৎখাতে ব্রিটিশ সরকারের ভূমিকা ছিল। কিন্তু আমার বাবা কলেজ ছেড়ে বা পরে চাকরি ছেড়ে সে আন্দোলনে যোগ দেননি; এবং তাতে জীবনে তাঁর ভালোই হয়েছিল। আমি শুনেছি, তাঁর এক বন্ধু, যিনি ১৯৬০ সালে মরণোত্তর আমার শ্বশুর হন, খিলাফতের সময়েও ছাত্রাবস্থায় কলেজ ছাড়েননি। অটোমান খিলাফতের জন্য মুসলমানদের যথাসম্ভব সহানুভূতি থাকার পরেও ভারতে খিলাফত আন্দোলন সব মুসলমানকে প্রতিবাদ হিসেবে বিদ্যালয় আর চাকুরি ছাড়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারেনি। আমার বাবা মনে করতে পারতেন যে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র দৃশ্যত খিলাফত আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য ক্লাসে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল এবং তার দরিদ্র পিতা তাতে গভীরভাবে বিচলিত হয়েছিলেন। তিনি যখন তাঁর পুত্রকে স্থানীয়ভাবে পরিচিত এক হিন্দু ভদ্রলোকের কাছে খানিকটা বুদ্ধিপরামর্শের জন্য নিয়ে গেলেন, সে সময়ে সেই মানুষটি সম্ভবত গ্রাম পরিষদের সভাপতি। তখন সেই ক্রোধান্বিত ভদ্রলোক ছেলেটিকে ছাতা দিয়ে আাঘাত করে এই বলে চেঁচিয়ে উঠলেন যে ‘তোর গরিব মুসলমান বাবা কত কষ্ট করে তোকে স্কুলে পাঠিয়েছে, আর তুই কি না কোন দূরের খিলাফতের জন্য রাস্তায় আন্দালন করে বেড়ানো লোকজনের সঙ্গে যোগ দিতে স্কুল ছেড়েছিস! লজ্জা হওয়া উচিত তোর! স্কুলে ফিরে যাবি তুই!’ সেদিনের সেই ভর্ৎসিত বালকটি ১৯৪৭ সালের পর পূর্ব পাকিস্তানের একজন জ্যেষ্ঠ বেসামরিক সরকারি চাকুরে হয়েছিলেন। কালো শেরওয়ানিই ছিল তাঁর আনুষ্ঠানিক পোশাক।
এ কথা আমি প্রায়ই ভাবি যে সারা জীবন অটোমান ফেজ টুপি আঁকড়ে ধরে থেকে আমার বাবা সম্ভবত প্রতিবাদ হিসেবে তাঁর বিদ্যালয় বা চাকুরি ত্যাগ করার মাধ্যমে খিলাফত আন্দোলনকে বেগবান করতে না পারার সেই আগের ব্যর্থতার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছিলেন। আমার বাবার সমসময়িকদের বহু বর্ণনায় আমি পেয়েছি, তাঁরা শেরওয়ানি ছাড়াই লাল ফেজ টুপি পরতেন। আমি দেখেছি, মানুষ পাজামা ও লম্বা শার্ট, এমনকি লুঙ্গি ও শার্ট গায়ে চড়িয়েও লাল টুপি পরতেন। আমরা এ রকমই একটি স্মৃতিচারণার দেখা পাই বিখ্যাত লেখক ও রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমদের আত্মজীবনীতে। আবুল মনসুর আহমদ লিখেছেন, উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি একটি লাল টুপি পরতেন, এমনকি গ্রীষ্মকালেও, যখন ব্যাপারটা মোটেই স্বস্তিদায়ক ছিল না। লিখেছেন, তাঁর হিন্দু সহপাঠী ও শিক্ষকদের বারণ সত্বেও তিনি সেই লাল টুপি পরা থেকে বিরত হননি। ফেজ টিুপি পরে তিনি গর্বভরে তাঁর মুসলিম আত্মপরিচয় ঘোষণা করতেন। তাঁর আত্মজীবনীর বয়ান অনুযায়ী, আবুল মনসুর আহমেদ সম্ভবত তাঁর বিদ্যালয়-জীবনেই ফেজ টুপির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তবে আমার বাবা হয়েছিলেন আরও অনেক পরে, যখন তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
স্মৃতির অলিগলি ধরে আমার এই অলস পদচারণ ঠিক কখনোই আমার বাবা ও তাঁর সমসাময়িকদের ফেজ টুপিপ্রীতির কারণ সম্পর্কে মুসলমান স্বাতন্ত্র্য আর ধর্মীবোধ ছড়া অন্য কোনো পরিস্কার উত্তর বা ব্যাখ্যা খুঁজে পায়নি।…
লেখক: যুক্তরাষ্ট্রের রোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বিজ্ঞানের প্রফেসর ইমেরিটাস
অনুবাদক: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক; অনুবাদক
১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে মাঝেমধ্যে নানা অনুষ্ঠানে, বিভিন্ন স্থানে এবং বিচিত্র ঘটনাক্রমে আমার সঙ্গে আমার বাবার কয়েকজন প্রাক্তন ছাত্রের সঙ্গে দেখা হয়। কখন ও কোথায় তাঁরা আমার বাবার (মৌলভী বদরুজ্জামান) ছাত্র ছিলেন, সেকথা বলার আগেই তাঁর পোশাকের কথা তাঁরা মনে করতে পেরেছিলেন: আচকান, পাজামা ও কালো ঝালর লাগোনো একটা লাল ফেজ টুপি। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডি ২০০৫ সালে একটি বক্তৃতা প্রদানের জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানায়। সেখানে বক্তৃতার পর এক বয়স্ক ভদ্রলোক আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। আমার ধারনা, তখন তিনি কোনো মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ সরকারের একজন সচিব ছিলেন। আমি তাঁর নাম জিজ্ঞাসা করার আগেই তিনি বললেন, ‘প্রথমে আমি আপনার বাবার ছাত্র ছিলাম, আর তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অল্প কিছুদিনের জন্য আপনার!’ আমার বাবার ধ্রুপদি পোশাক, এমনকি যখন সেটা আর ফ্যাশনদুরস্ত ছিল না, তাঁকে ঘরে ও বাইরে—তাঁর বিদ্যালয়ে, জনসমাগমে, অথবা বাজারে—একটি স্বতন্ত্র চেহারা দিয়েছিল। এটা ছিল ঘরের বাইরে তাঁর আনুষ্ঠানিক পোশাক, কিন্তু যখন তিনি আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে যেতেন, তখনো তিনি এই পোশাক পরতেন।
এ কথা স্বীকার করতে হবে যে কালো আচকান ও পাজামা, সঙ্গে তাঁর সেই তুর্কী লাল টুপি (যেটা মরোক্কোর ফেজ টুপি নামে পরিচিত ছিল), সেটা ছিল তাঁর ঘরের বাইরের একদম ধরাবাঁধা পোশাক। আমার জ্ঞাতি ভাইবোনরা তাঁকে লাল কাকা বা মামা বলে ডাকত। তাঁর লাল ফেজ টুপির কারণেই সম্ভবত। নাকি তাঁর লালচে ত্বকের কারণে? এ ব্যাপারে আমি কখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। বাড়িতে তিনি লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরতেন, সেই সঙ্গে কখনো কখনো একটা শার্ট: তিনি যেহেতু বাগান করার ব্যাপারে বেশ উৎসহী ছিলেন, তাই সে কাজের জন্য লুঙ্গিই ছিল আপাতদৃষ্টিতে বাস্তবসম্মত পোশাক।
১৯৫০-এর দশকের শেষের দিকে একজন প্রশিক্ষিত দর্জি পাওয়া কঠিন ছিল; এমনকি আচকানের জন্য ভালো মানের কালো কাপড়ের সরবরাহও কম ছিল। পরিবারের সবাই তাঁকে সেই পোশকের বদলে অন্য কোনো পোশাক পরার জন্য পীড়পীড়ি করত। শিক্ষকতা ও বাইরের অন্যান্য কাজকর্মের জন্য পাজমা আর কুর্তা (লম্বা শার্ট)। এই পোশাকটি সে সময়ে বেশ সহজলভ্য ছিল।
কিন্তু তিনি আমাদের কথা শোনেননি। তাঁর কথা ছিল: ‘এদেশে একজন মুসলমান ভদ্রলোকের জন্য এটাই হচ্ছে ক্লাসিক পোশাক! আমি সেই ১৯২০-এর দশক থেকে আমার কর্মক্ষেত্রের জন্য এই পোশাক বেছে নিয়েছি এবং আমি এটা ছাড়ছি না।’
১৯৫১ সালের মাঝামাঝি থেকে যখন আমি ঢাকায় থাকতে শুরু করি তখনকার এবং তারও আগের অভিজ্ঞতা থেকে জানতাম, আমার বাবার পোশাকের জন্য নির্দিষ্ট কাপড় আমি কোথায় পেতে পারি। একবার তাঁর একটি নতুন আচকান দরকার হলে আমি সেটার খোঁজে পুরান ঢাকা গিয়েছিলোম এবং সৌভাগ্যক্রমে দু-একটি জায়গায় তা পেয়েও যাই। কিছু রাজনৈতিক দলের গুটিকতেক বরিষ্ঠ রাজনীতিবিদ ছাড়া কালো আচকান বা শেরওয়ানি অন্য লোকজনের কাছে তেমন জনপ্রিয় ছিল না। ১৯৪০-এর দশকে পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয় মুসলিম লীগ নেতাদের অপেক্ষাকৃত বয়স্ক কয়েকজনকে আমি দেখেছিলাম যাঁরা কালো আচকান আর লাল টুপি পরে রাজনৈতিক সমাবেশে উপস্থিত থাকতেন, এমনকি ব্যক্তিগত জমায়েত ও বিবাহ সংবর্ধনাতেও পোশাকটি এতই আনুষ্ঠানিক ছিল যে এটি কেনার জন্য ১৯৫০-এর দশকের শেষ দিকে বেশি ক্রেতা আকৃষ্ট হতেন না; কাজেই মুষ্টিমেয় কিছু খুচরা বিক্রেতাই কেবল বিশেষ এই কাপড়গুলো বিক্রি করতেন। তা ছাড়া, কাপড়টা কী করে কাটতে হয় এবং আচকান বা শেরওয়ানি কীভাবে সেলাই করতে হয়, সেটা তরুণ ও সাধারণ দর্জিরা তখন আর জানতেন না। আমার মনে পড়ে, ১৯৪০ ও ১৯৫০-এর দশকে আমার বাবা কালো আচকান তৈরি করাতে ঢাকার চকবাজারে এক বৃদ্ধ দর্জির কাছে গিয়েছিলেন। আমি জানতাম, ইসলামপুর ও নবাবপুর এলাকায় কয়েকজন ভালো দর্জি আছেন, কিন্তু তাঁদের কাছ থেকে পোশাক তৈরি করাবার মতো আর্থিক সঙ্গতি বাবার ছিল না।
১৯৪০-এর দশকে সস্তায় শেরওয়ানি বা আচকান তৈরির চেষ্টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হাস্যকর রকমের দুর্দশায় পতিত হওয়ার বেশ কিছু গল্প আমার কানে এসেছিল। সেসবের একটি কাহিনি ছিল সত্যিই মজার আর নিষ্ঠুর! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোটোখাটো, গাট্টাগোট্টা, ও লক্ষণীয়ভাবে চাপা গায়ের রঙের একজন শিক্ষক একটি কালো শেরওয়ানি সেলাই করার জন্য চকবাজারের এক দর্জির কাছে গিয়েছিলেন এবং তিনি দাম কমানোর জন্য দর কষাকষি করছিলেন। আর তখন সেই দর্জি—দৃশ্যত যিনি বুদ্ধিদীপ্ত কৌতুকের জন্য প্রবাদপ্রতিম খ্যাতির অধিকারী সেই বিখ্যাত (ঢাকাইয়া) কুট্টি সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন—তিনি তাঁর খদ্দেরের ওপর রেগে গিয়ে সোজা তাঁর চোখে চোখ রেখে বলে উঠলেন, ‘কালো শেরওয়ানির জন্য আপনার কোনো কাপড়ের দরকার নাই। কয়েকটা বোতাম কিনে আনুন গিয়ে, সেগুলো আপনার গায়ে লাগিয়ে দেব, কোনো পয়সা নেব না।’
এসব ১৯৩০ ও ১৯৪০-এর দশকের কথা। সে সময়ে আচকান বা শেরওয়ানি তৈরি করা দর্জিদের খুব চাহিদা ছিল। এছাড়াও সে সময়ে চকবাজারে বেশ কিছু বইয়ের দোকান ছিল, যেগুলোতে বিশেষত ইসলামি বই আর পুঁথি বিক্রি হতো। আশপাশের এলাকাটা ছিল কেনাকাটার জন্য মুসলমানদের বেশ পছন্দে: এটা ছিল আসলেই ধ্রুপদি মুসলিম পোশাক, মুখে পানি আনা মোগলাই খাবার, আর পথের ধারের খাবারদাবারের কেন্দ্র। কার্যত, এটা ছিল ঢাকার সর্বমুসলিম অঞ্চল, যার বয়স কয়েক শ বছর। এলাকার পুরোনো মসজিদগুলো ঢাকার সাবেককালের কর্মচঞ্চল অংশের মুসলিম ঐতিহ্যের সাক্ষ্যবাহী। আমার চকবাজারের স্মৃতি প্রথমত সেই ১৯৪৪ বা ১৯৪৫ সালে আর পরবর্তীকালে ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকের।
আমার বাবা বাড়ির বাইরে খেতে তেমন একটা পছন্দ করতেন না। তাঁর ভয় ছিল ওসব খাবার স্বাস্থ্যকর নয়। তিনি সেই বিকিকিনির পাড়াতে যেতেন মূলত প্রয়োজন হলে, তাঁর আচকান সেলাই করাতে এবং তিনি নিকটবর্তী প্রাচীন ঐতিহাসিক মসজিদে নামাজ পড়তে পছন্দ করতেন। আর তিনি আমাকে মনে করিয়ে দিতেন যে কয়েক শ বছর আগে চকবাজার ছিল কেনাকাটার এক বিশাল এলাকা। কেবল কাপড়চোপড় আর খাবারদাবারের মতো সাধারণ পণ্যই নয়, একসময় এমনকি দাস-দাসীও কেনা-বেচা হতো এই বাজারে। তাঁর সঙ্গে ঢাকার পুরোনো রাস্তাঘাটে হাঁটা বা প্রাচীন কোনো মাজারের পাশ দিয়ে যাওয়ার মানে ছিল বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্মারক চিনিয়ে দেওয়া এক জীবন্ত ইতিহাসের সঙ্গে হাঁটা।
আমার বাবার লাল ফেজ টুপির সঙ্গে মুসলমানের আত্মপরিচয় ও সংস্কৃতির এক দীর্ঘ ইতিহাস জড়িত ছিল; লাল টুপিটি ছিল সময় ও পরিস্থিতিনির্ভর রাজনৈতিক বার্তাবহ। তাঁর জন্য আমি কোনো জায়গা থেকে একটা ফেজ টুপি সংগ্রহ করতে পারিনি, এমনকি করাচি থেকেও না; এটা ছিল আমার জন্য খুব হতাশাজনক। একবার ১৯৬০-এর দশকের গোড়ার দিকে আমি লন্ডনে জিনিসটার খোঁজ করেছিলাম। আমরা বলেছিলাম, সাধারণ মুসলমানেরা যেমন টুপি পরে সে রকম কোনো টুপি পরা উচিত তাঁর; এবং পছন্দ অনুযায়ী বেছে নেওয়ার মতো অনেক টুপি পাওয়া যেত ঢাকায়। নামাজের টুপি তৈরির কুটিরশিল্প বাংলাদেশে বিদ্যমান ছিল এবং যখন আমি এই লেখা লিখছি, তখন সেই টুপি গোটা মুসলিম বিশ্বে রফতানিও হচ্ছে। কিন্তু স্কুল ও অন্যান্য স্থানে যাওয়ার সময় তিনি কেবল ফেজ টুপিই পরতে পছন্দ করতেন। মনে পড়ে, আমার মা যখন বিবাহিত নারীদের বছরে একবার পিতৃ-মাতৃ গৃহে যাওয়ার প্রথানুযায়ী তাঁর বাৎসরিক নাইওরে যেতেন, বাবা তখন কালো আচকান পরতেন আর তাঁর মাথা ঢাকা থাকত ফেজ টুপিতে। আমার মনে পড়ে, আমার মায়ের এক কম বয়েসী জ্ঞাতি ভাই একবার বাবাকে তাঁর পোশাকের জন্য বিদ্রুপ করেছিলেন। আমি ভাবতাম, কেন তিনি সেই পোশাকটি আঁকড়ে ধরে আছেন। টুপিগুলো ‘রুমি টুপি’ নামেই বেশি পরিচিত ছিল। আমার ধারনা, সারা দুনিয়ায় পরিচিত সুফী কবি মৌলভি রুমির নামে টুপিটির নাম হওয়ায় তিনি এর প্রেমে পড়েছিলেন। আসলেই কি তাই?
আমার বাবা মওলানা রুমির কবিতা পছন্দ করতেন। লাল রঙটি রুমির ঐশী প্রেমের স্মারক—বহু সুফি কবিতায় লাল গোলাপকে যেমন অমর করে রাখা হয়েছে, ঠিক তেমনি। তারপরেও এটা হয়তো আমার কষ্ট কল্পনাই। আমি যে কেবল আমার বাবাকেই আচকান আর লাল তুর্কি টুপিতে দেখেছিলাম তা নয়। স্কুলে আমি আমার মৌলভি শিক্ষককে (আরবি/ফারসি/উর্দু প্রশিক্ষক) এ রকম একটা ফেজ টুপি পরতে দেখেছিলাম, যখন তিনি মাঝেমধ্যে শেরওয়ানি বা আচকান পরে আসতেন। বাবার মতো তিনি সবসময় সেই পোশাক পরতেন না। মৌলভি শিক্ষক ক্লাশে এসে প্রথমে ফেজ টুপিটি খুলে রাখতেন। তারপরে চেয়ারে বসে পাঠদানের ভূমিকা হিসেবে একটা গল্প বলতে শুরু করতেন। অবশ্য, আরেকজন শিক্ষকও ছিলেন—মিশ্রি মিয়া, যিনি আমার বাবার চেয়ে খানিকটা সিনিয়র ছিলেন। তাঁর আচকান বা শেরওয়ানি কালো ছিল না। সেটা ছিল ক্রিম রঙের বা এমনকি সাদাও বলা যেতে পারে। ছোট, পাকা দাড়ি ছিল তাঁর। সেই ধ্রুপদি পোশাকে তিনি বেশ চোখে পড়ার মতোই ছিলেন। ক্লাসে বা ক্লাসের বাইরে তাঁকে যখনই দেখতাম, তাঁর মাথায় সবসময় সেই লাল তুর্কি টুপি পরা থাকত। ছাত্রদের জন্য তাঁর খুব দরদ ছিল। আমি যতটুকু জানি, মিশ্রি মিয়া নিঃসন্তান ছিলেন। আমাদের গ্রাম থেকে ছয় মাইল দূরের এক গ্রামে বাড়ি ছিল তাঁর। একবার তিনি আমাকে কাছে ডেকে বলেছিলেন, সম্ভবত সহকর্মীর সন্তানস্নেহে, ‘রশিদ, বড় হলে তোমারও উচিত হবে তোমার বাবার মতো পোশাক পরা! এটাই হচ্ছে মুসলমানের পোশাক!একজন মুসলমানের ছেলে হিসেব কথাটা মনে রেখো।’…
আমার ছাত্রাবস্থায় আমি আরও দু-একজন ভদ্রলোককে দেখেছি। তাঁদের একজন ছিলেন ঢাকার এক জেষ্ঠ্য সরকারি বেসামরিক কর্মকর্তা, আমার সমবয়সী একজন বন্ধুর বাবা। তিনি ছিলেন আমার বাবার শিক্ষকতা জীবনের গোড়ার দিকের ছাত্র। এই ভদ্রলোক কলকাতা রাইটার্স বিল্ডিংয়ে বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসে একটা চাকরি পেয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালে ঢাকায় চলে আসার পর তিনি আমাদের কালীগঞ্জ ব্যবস্থাপনা পরিষদের (কালীগঞ্জ স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটির) সচিব হন।তিনি যখন বিদ্যালয় পরিষদের সভায় যোগ দেওয়ার জন্য আসতেন, তাঁর পরনে থাকত কালো শেরওয়ানি।
বিশ শতকের পাঁচের দশকের গোড়ার দিকে আমি যখন ঢাকায় ছাত্র হিসেবে ছিলাম, তখন আমি একবার তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য তাঁর অফিসে যাই। সেখানেও তাঁকে কালো আচকান পরিহিত দেখতে পাই। আমার বাবা আমাকে ১৯৪০-এর দশকের শেষ দিকে এবং ১৯৫০-এর দশকের গোড়ার দিকে ঢাকায় তাঁর বাড়িতে এবং কালীগঞ্জের আশপাশে বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সম্ভবত সেই ভদ্রলোকের মধ্যে বাবা আমার জন্য একটি আদর্শ চরিত্র লক্ষ করেছিলেন। গুজব ছিল যে তিনি উচ্চ বেতনভোগী একজন সরকারি বেসামরিক কর্মকর্তা ছিলেন এবং লোকে এই ভেবে অবাক হতো যে প্রতিমাসে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে তিনি কী করতে পারেন! গ্রামের লোকজন তাঁকে সমীহ করে ‘ডেপুটি সাহেব’ বলে ডাকত।…
আমার নানাও তুর্কি টুপি পরতেন। কিন্তু সেটা কেবল বিয়ে বা সে রকম কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে আচকান বা শেরওয়ানি গায়ে চড়াবার সময়। আমি সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ নেতাদের অনেকের ছবি দেখেছি: তাঁদের বেশিরভাগই শেরওয়ানি পরিহিত ছিলেন। তাঁদের কয়েকজনের মাথায় ফেজ টুপি ছিল। শুনেছি, প্যান-ইসলামি ব্রিটিশবিরোধী খিলাফত আন্দোলনের সময় (১৯১৯-১৯২৩) তাঁদের মধ্যে ফেজ টুপি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যাঁরা ব্রিটিশ সরকারবিরোধী অটোমান সুলতানের সমর্থক ছিলেন। অন্যদিকে, ১৯৪০ ও ১৯৫০ দশকে জিন্নাহ টুপি বলে একটি টুপি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে; সবর্ত্রই সেটা সহজলভ্য ছিল। তরুণ-বৃদ্ধ সবাই জিন্নাহ টুপি কিনত—ঈদ উৎসব উদ্যাপন আর বিশেষ অনুষ্ঠানে তাঁরা সেই টুপি পরতেন। কিন্তু আমার বাবা নতুন ধরনের টুপিটির দিকে ভ্রূক্ষেপও করতেন না। তিনি তাঁর সেই লাল টুপিতেই আটকে রইলেন যতদিন না সেটা নির্বিকল্প রইল। তবে তিনি বাড়িতে আর আমাদের গ্রামের বাড়ির মসজিদে নামাজ পড়ার সময় সুতি টুপিই পছন্দ করতেন।
তুরস্কের লৌহ মানব কামাল আতাতুর্ক যখন তুরস্ক থেকে রাজতন্ত্র ও খিলাফতের বিলুপ্তি ঘটান, তিনি তাঁর দেশে ফেজ টুপিও নিষিদ্ধ করেন। আমি পড়েছিলাম যে তুর্কি নারীদের জন্য তিনি পাশ্চাত্যের পোশাক পরা বাধ্যতামূলক করেন। স্পষ্টতই এটা ছিল তুর্কিদের পশ্চিমীকরণ, কিন্তু তখনো যাঁরা ভারত উপমহাদেশে এবং অন্যত্র ফেজ টুপি পরতে চাইতেন, ওই নিষেধাজ্ঞা তাদের নিরস্ত করতে পারেনি। উৎখাত হওয়া খলিফার জন্য কি আমার বাবার খানিকটা সহানুভূতি ছিল? আর ফেজ টুপির প্রতি তাঁর তীব্র ভালোবাসার মাধ্যমে কি তিনি একসময় সারা দুনিয়ায় মুসলমানদের সমীহ উদ্রেককারী খিলাফতের সঙ্গে নিজের একাত্মতা ঘোষণা করতে চাইতেন, এমনকি সেটা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পরেও? এই প্রশ্নের সঠিক জবাব আমার জানা নেই।
আমার বাবা মনে করতে পারতেন যে তিনি যখন কলেজের ছাত্র ছিলেন, ততদিনে খিলাফত আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। খিলাফত আন্দোলনের সমর্থকেরা সব মুসলমান ছাত্রকে আহ্বান জানাতেন যেন তাঁরা ব্রিটিশরাজ বা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে স্কুল ত্যাগ করতে বলেন। কারণ, এটা প্রবলভাবে বিশ্বাস করা হতো যে তুর্কি সুলতান ও খলিফার উৎখাতে ব্রিটিশ সরকারের ভূমিকা ছিল। কিন্তু আমার বাবা কলেজ ছেড়ে বা পরে চাকরি ছেড়ে সে আন্দোলনে যোগ দেননি; এবং তাতে জীবনে তাঁর ভালোই হয়েছিল। আমি শুনেছি, তাঁর এক বন্ধু, যিনি ১৯৬০ সালে মরণোত্তর আমার শ্বশুর হন, খিলাফতের সময়েও ছাত্রাবস্থায় কলেজ ছাড়েননি। অটোমান খিলাফতের জন্য মুসলমানদের যথাসম্ভব সহানুভূতি থাকার পরেও ভারতে খিলাফত আন্দোলন সব মুসলমানকে প্রতিবাদ হিসেবে বিদ্যালয় আর চাকুরি ছাড়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারেনি। আমার বাবা মনে করতে পারতেন যে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র দৃশ্যত খিলাফত আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য ক্লাসে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল এবং তার দরিদ্র পিতা তাতে গভীরভাবে বিচলিত হয়েছিলেন। তিনি যখন তাঁর পুত্রকে স্থানীয়ভাবে পরিচিত এক হিন্দু ভদ্রলোকের কাছে খানিকটা বুদ্ধিপরামর্শের জন্য নিয়ে গেলেন, সে সময়ে সেই মানুষটি সম্ভবত গ্রাম পরিষদের সভাপতি। তখন সেই ক্রোধান্বিত ভদ্রলোক ছেলেটিকে ছাতা দিয়ে আাঘাত করে এই বলে চেঁচিয়ে উঠলেন যে ‘তোর গরিব মুসলমান বাবা কত কষ্ট করে তোকে স্কুলে পাঠিয়েছে, আর তুই কি না কোন দূরের খিলাফতের জন্য রাস্তায় আন্দালন করে বেড়ানো লোকজনের সঙ্গে যোগ দিতে স্কুল ছেড়েছিস! লজ্জা হওয়া উচিত তোর! স্কুলে ফিরে যাবি তুই!’ সেদিনের সেই ভর্ৎসিত বালকটি ১৯৪৭ সালের পর পূর্ব পাকিস্তানের একজন জ্যেষ্ঠ বেসামরিক সরকারি চাকুরে হয়েছিলেন। কালো শেরওয়ানিই ছিল তাঁর আনুষ্ঠানিক পোশাক।
এ কথা আমি প্রায়ই ভাবি যে সারা জীবন অটোমান ফেজ টুপি আঁকড়ে ধরে থেকে আমার বাবা সম্ভবত প্রতিবাদ হিসেবে তাঁর বিদ্যালয় বা চাকুরি ত্যাগ করার মাধ্যমে খিলাফত আন্দোলনকে বেগবান করতে না পারার সেই আগের ব্যর্থতার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছিলেন। আমার বাবার সমসময়িকদের বহু বর্ণনায় আমি পেয়েছি, তাঁরা শেরওয়ানি ছাড়াই লাল ফেজ টুপি পরতেন। আমি দেখেছি, মানুষ পাজামা ও লম্বা শার্ট, এমনকি লুঙ্গি ও শার্ট গায়ে চড়িয়েও লাল টুপি পরতেন। আমরা এ রকমই একটি স্মৃতিচারণার দেখা পাই বিখ্যাত লেখক ও রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমদের আত্মজীবনীতে। আবুল মনসুর আহমদ লিখেছেন, উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি একটি লাল টুপি পরতেন, এমনকি গ্রীষ্মকালেও, যখন ব্যাপারটা মোটেই স্বস্তিদায়ক ছিল না। লিখেছেন, তাঁর হিন্দু সহপাঠী ও শিক্ষকদের বারণ সত্বেও তিনি সেই লাল টুপি পরা থেকে বিরত হননি। ফেজ টিুপি পরে তিনি গর্বভরে তাঁর মুসলিম আত্মপরিচয় ঘোষণা করতেন। তাঁর আত্মজীবনীর বয়ান অনুযায়ী, আবুল মনসুর আহমেদ সম্ভবত তাঁর বিদ্যালয়-জীবনেই ফেজ টুপির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তবে আমার বাবা হয়েছিলেন আরও অনেক পরে, যখন তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
স্মৃতির অলিগলি ধরে আমার এই অলস পদচারণ ঠিক কখনোই আমার বাবা ও তাঁর সমসাময়িকদের ফেজ টুপিপ্রীতির কারণ সম্পর্কে মুসলমান স্বাতন্ত্র্য আর ধর্মীবোধ ছড়া অন্য কোনো পরিস্কার উত্তর বা ব্যাখ্যা খুঁজে পায়নি।…
লেখক: যুক্তরাষ্ট্রের রোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বিজ্ঞানের প্রফেসর ইমেরিটাস
অনুবাদক: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক; অনুবাদক
আজ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ৮৬তম জন্মদিন। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বই পড়ার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে তাঁর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। মূলত তিনি একটি সাংস্কৃতিক জীবনযাপন করেন। সমাজে একটি সাংস্কৃতিক জীবনযাপনের আবহ তৈরি করতে চান।
২১ ঘণ্টা আগেরাজপথে আন্দোলন থেকে শুরু করে বিমান বিধ্বস্তের মতো ঘটনায় ক্রমাগত আমাদের শিশু-কিশোরেরা ট্রমায় আক্রান্ত হচ্ছে। ভবিষ্যতে তারাই হবে এ দেশের মূল নাগরিক অংশ। ব্যক্তিক ও জাতীয় প্রয়োজনেই এই শিশু-কিশোরদের ট্রমামুক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২ দিন আগেএ ধরনের গণ-ট্র্যাজেডি, সামষ্টিক আবেগ থেকে যা প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়, তা কভার করার ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের এমন অবস্থান অবশ্য নতুন নয়। দুর্দশাকে উপজীব্য করে সস্তা সাহিত্য রচনার চল রয়েছে বহু আগে থেকেই। মাইলস্টোন ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দেশের সংবাদমাধ্যমে সেই ঐতিহ্যই প্রবাহিত হয়েছে।
৩ দিন আগে২১ জুলাই সোমবার আমাদের জীবনে দুর্যোগ নেমে এল। ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান হলো বিধ্বস্ত। বেলা একটার খানিক পরে অবতরণের আগমুহূর্তে স্কুলের হায়দার আলী ভবনের সামনে বিধ্বস্ত হয় এফ-৭ ফাইটার বিমানটি।
৩ দিন আগে