আমীর খসরু
বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতি, স্বাধীনতা সংগ্রাম, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামসহ বিভিন্ন আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছে।
তবে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে অনেকে হতাশা ব্যক্ত করছেন। এর মাধ্যমে ‘কট্টর ইসলামপন্থীদের’ উত্থান হচ্ছে বলে দাবি করছেন অনেকে। ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভারতীয় গণমাধ্যম এবং রাজনীতিবিদ, কূটনীতিবিদ, এমনকি বুদ্ধিজীবীরাও—যেমন শশী থারুর বা হর্ষবর্ধন শ্রিংলা—একে ‘কট্টর ইসলামপন্থীদের উত্থান’ হিসেবে চিত্রায়িত করার চেষ্টা করছেন। একসময় অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে বিজেপিকে ভারতের জনগণ ভোট দিয়েছিল কংগ্রেসের বিকল্প হিসেবে। বিজেপি তখন উগ্র ধর্মীয় দল ছিল না।
পরবর্তীকালে উগ্র ধর্মীয় ও ভারতীয় জাতীয়তাবাদী চেতনার বিজেপি জন্ম দিয়েছে এখনকার বিজেপিকে। আগের বিজেপির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির বিজেপির বিস্তর ফারাক। এ বিষয়ও ভারতীয় বুদ্ধিজীবীদের মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশে এমন কোনো ঘটনা এখনো ঘটেনি। ডাকসুতে শিবির সমর্থিত প্যানেল জয়লাভ করেছে। একে শুধু ‘কট্টর ইসলামপন্থীদের’ বিজয় হিসেবে দেখলে চলবে না। এই প্যানেলকে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও ভোট দিয়েছেন। তাঁরা যে সবাই শিবির বা শিবিরের রাজনীতি করেন, তা নয়। শিক্ষার্থীরা শিবিরকে নয়, অপেক্ষাকৃত পরিচ্ছন্ন নেতৃত্বকে বেছে নিয়েছেন। ছাত্রদল বা অন্যান্য দলের ব্যক্তিরা নিজেদের পরিচ্ছন্ন হিসেবে শিক্ষার্থীদের সামনে হয়তো উপস্থাপন করতে পারেননি। এ কারণে হয়তোবা শিক্ষার্থীরা তাঁদের রাজনীতি সেভাবে পছন্দ করেননি। এর অর্থ একবাক্যে এভাবে বলা যাবে না যে তাঁরা ‘কট্টর ইসলামপন্থীদের’ বেছে নিয়েছে। অন্য বিকল্প না থাকায় শিক্ষার্থীরা শিবির সমর্থিত প্যানেলকে বেছে নিয়েছেন।
ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভারতের শক্তিশালী রাজনীতিবিদ ও লেখক শশী থারুর কিছু মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশে দুটি প্রধান দল আওয়ামী লীগ (সদ্য কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ও বিএনপি দুই দল-বাইপার্টিজানের প্রতিই জনগণের মধ্যে ক্রমশ হতাশা বাড়ছে। বাংলাদেশে যাঁরা হয় আওয়ামী লীগ, না হয় বিএনপির সমর্থক ছিলেন—তাঁরা ক্রমেই জামায়াত ইসলামীর দিকে ঝুঁকছেন। কিন্তু এর মানে এই নয় যে এরা সবাই উগ্রবাদী বা মৌলবাদী; বরং আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিরুদ্ধে (সঠিক বা ভুলভাবে) যে দুর্নীতি ও অপশানের অভিযোগ আছে, জামায়াত এখনও সেসব থেকে দূরে আছে।’
খুব উন্নত গণতান্ত্রিক সমাজে দ্বিদলীয় সরকার ব্যবস্থা বেশ জোরালোভাবে কাজ করে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো অপেক্ষাকৃত কম উন্নত দেশে দ্বিদলীয় ব্যবস্থা খুব একটা কার্যকর নয়। ফলে মানুষ দ্বিদলের অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিকল্প অনুসন্ধান করে। এর ফল যে সব সময় ভালো হয়, তা-ও নয়। এর জন্য জনগণকে দায়ী করা যাবে না। কারণ, তাদের সামনে রাজনীতিবিদরা ভালো বিকল্প হাজির করতে পারছেন না।
এবারের ডাকসু নির্বাচনের প্রেক্ষাপটটা ছিল একেবারেই ভিন্ন। আমাদের তরুণ প্রজন্ম বা জেন-জি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি, এমনকি ১৯৭৫ বা অন্যান্য বিষয়গুলো সম্পর্কে তাঁদের ধারণা থাকলেও চাক্ষুস সাক্ষী তাঁরা নন। তাঁরা সাম্প্রতিককালের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তাই তাঁদের কাছে বর্তমানই মুখ্য।
অন্যান্য দেশের মতোই বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মও বিগত সরকারের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। জুলাই আন্দোলনে বিএনপি যদি যথাযথ ভূমিকা পালন করত, তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতো। যে ছাত্র নেতৃত্বে জনমানুষের ক্ষোভটা সংগঠিত হয়েছে, তা শেষ পর্যন্ত আর বিপ্লব হিসেবে থাকেনি।
ডাকসুতে শিবির সমর্থিত প্যানেলকে ভোট দেওয়াটা হচ্ছে একেবারেই নেগেটিভ ভোট। শিবির খুব জনপ্রিয় হয়ে গেছে বা শিবিরই সব নিয়ন্ত্রণ করছে অথবা জামায়াতে ইসলামী এখন রাজনীতির সবটুকু নিয়ন্ত্রণ করছে, বিষয়টা একেবারেই এমন নয়। তবে আগে যা বললাম, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো তরুণদের সামনে ভালো বিকল্প হাজির করতে না পারার ফল ডাকসু নির্বাচনে এই অবস্থা। কিন্তু এ বিষয়টি ধরে এর বিরুদ্ধে পার্শ্ববর্তী দেশ যে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে, তা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত।
শশী থারুর জাতিসংঘে কাজ কাজ করেছেন। কংগ্রেসের বড় নেতা। বড় মাপের লেখকও তিনি। বাংলাদেশের দ্বিদলীয় রাজনীতির ওপরে তাঁর যে বয়ান, অর্থাৎ আওয়ামী লীগ-বিএনপির ওপরে তরুণেরা বীতশ্রদ্ধ হয়ে গেছে, এ মন্তব্য আমি মোটামুটি সমর্থন করি। তবে এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ‘কট্টোর ইসলামপন্থা’র পথে যাত্রা করেছে, সেটি মানতে আমি রাজি নই।
গণতন্ত্র মানে অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থা। বেশ অনেক বছর জন-অংশীদারিত্ব এবং জনগণের অংশগ্রহণের বিষয়টা আমাদের এখানে পুরোপুরি অনুপস্থিত ছিল। এরশাদকে হঁটানোর পরে যে আকাঙ্ক্ষাটা সবার ছিল, তার বাস্তবায়ন হয়নি। ওই প্রজন্ম তো বটেই, পরের প্রজন্মও একটা দুঃশাসন দেখেছে। এমন প্রেক্ষাপটে ভারতীয় কূটনৈতিক হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বা শশী থারুরের মতো বড় মানুষেরা ডাকসু নির্বাচন নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা ভারতীয় বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজের বাংলাদেশ নিয়ে বিভ্রান্তিরই বহিঃপ্রকাশ। আসলে বাংলাদেশ নিয়ে তাঁরা বিভ্রান্ত।
বাংলাদেশকে বুঝতে হলে ভিন্ন একটা মাত্রা প্রয়োজন। এটা আগে বুঝতে হবে যে পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে কোন দেশের কী সম্পর্ক। এমনকি কোন দেশকে বাংলাদেশের তরুণেরা সমর্থন করছেনন না, কেন করছেন না? এ বিষয়গুলো ভারতীয় বুদ্ধিজীবীরা বুঝতে পারছে না। ফেসবুক দেখে অথবা সংবাদপত্রের প্রতিবেদন দেখে বাংলাদেশকে বোঝা যাবে না। ভারতীয়দের বাংলাদেশের মানুষের মন বুঝতে হবে। অন্য দেশের মানুষের মন বুঝতে গেলে সংবাদপত্রের প্রতিবেদন আর ফেসবুক কোনো ব্যারোমিটার হতে পারে না।
ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে কট্টোর ইসলামিপন্থীরা ক্ষমতায় চলে আসল, উগ্রপন্থা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল, এটা ঠিক নয়। বাংলাদেশে উগ্রবাদ আছে, কিন্তু সেটি এখনো উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছায়নি। নানা ঘটনা ঘটেছিল গত শাসনামলে। সেটি ছিল অতিরঞ্জিত ও বাড়াবাড়ি। বর্তমানে বিভিন্ন মিডিয়াসহ ফেসবুক, ইউটিউবের মাধ্যমে তা ধরা পড়ছে। সেসব আসল তথ্য ছিল না।
তরুণ প্রজন্ম একটা পরিবর্তন চায়। এখন পরিবর্তনের জন্য তাঁরা আপাতত শিবিরকে পছন্দ করেছেন, তাঁরা জামায়াতকে পছন্দ করবেন কি করবেন না, এর জন্য অপেক্ষা করা ভালো। ভারতীয় বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রেণির এখনই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সঠিক হবে না। তাঁদের নিজেদের অতীত ভূমিকাও পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। নইলে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সঠিক তথ্য-বিশ্লেষণ তাঁরা করতে পারবেন না।
(শ্রুতিলিখন)
বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতি, স্বাধীনতা সংগ্রাম, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামসহ বিভিন্ন আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছে।
তবে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে অনেকে হতাশা ব্যক্ত করছেন। এর মাধ্যমে ‘কট্টর ইসলামপন্থীদের’ উত্থান হচ্ছে বলে দাবি করছেন অনেকে। ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভারতীয় গণমাধ্যম এবং রাজনীতিবিদ, কূটনীতিবিদ, এমনকি বুদ্ধিজীবীরাও—যেমন শশী থারুর বা হর্ষবর্ধন শ্রিংলা—একে ‘কট্টর ইসলামপন্থীদের উত্থান’ হিসেবে চিত্রায়িত করার চেষ্টা করছেন। একসময় অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে বিজেপিকে ভারতের জনগণ ভোট দিয়েছিল কংগ্রেসের বিকল্প হিসেবে। বিজেপি তখন উগ্র ধর্মীয় দল ছিল না।
পরবর্তীকালে উগ্র ধর্মীয় ও ভারতীয় জাতীয়তাবাদী চেতনার বিজেপি জন্ম দিয়েছে এখনকার বিজেপিকে। আগের বিজেপির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির বিজেপির বিস্তর ফারাক। এ বিষয়ও ভারতীয় বুদ্ধিজীবীদের মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশে এমন কোনো ঘটনা এখনো ঘটেনি। ডাকসুতে শিবির সমর্থিত প্যানেল জয়লাভ করেছে। একে শুধু ‘কট্টর ইসলামপন্থীদের’ বিজয় হিসেবে দেখলে চলবে না। এই প্যানেলকে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও ভোট দিয়েছেন। তাঁরা যে সবাই শিবির বা শিবিরের রাজনীতি করেন, তা নয়। শিক্ষার্থীরা শিবিরকে নয়, অপেক্ষাকৃত পরিচ্ছন্ন নেতৃত্বকে বেছে নিয়েছেন। ছাত্রদল বা অন্যান্য দলের ব্যক্তিরা নিজেদের পরিচ্ছন্ন হিসেবে শিক্ষার্থীদের সামনে হয়তো উপস্থাপন করতে পারেননি। এ কারণে হয়তোবা শিক্ষার্থীরা তাঁদের রাজনীতি সেভাবে পছন্দ করেননি। এর অর্থ একবাক্যে এভাবে বলা যাবে না যে তাঁরা ‘কট্টর ইসলামপন্থীদের’ বেছে নিয়েছে। অন্য বিকল্প না থাকায় শিক্ষার্থীরা শিবির সমর্থিত প্যানেলকে বেছে নিয়েছেন।
ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভারতের শক্তিশালী রাজনীতিবিদ ও লেখক শশী থারুর কিছু মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশে দুটি প্রধান দল আওয়ামী লীগ (সদ্য কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ও বিএনপি দুই দল-বাইপার্টিজানের প্রতিই জনগণের মধ্যে ক্রমশ হতাশা বাড়ছে। বাংলাদেশে যাঁরা হয় আওয়ামী লীগ, না হয় বিএনপির সমর্থক ছিলেন—তাঁরা ক্রমেই জামায়াত ইসলামীর দিকে ঝুঁকছেন। কিন্তু এর মানে এই নয় যে এরা সবাই উগ্রবাদী বা মৌলবাদী; বরং আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিরুদ্ধে (সঠিক বা ভুলভাবে) যে দুর্নীতি ও অপশানের অভিযোগ আছে, জামায়াত এখনও সেসব থেকে দূরে আছে।’
খুব উন্নত গণতান্ত্রিক সমাজে দ্বিদলীয় সরকার ব্যবস্থা বেশ জোরালোভাবে কাজ করে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো অপেক্ষাকৃত কম উন্নত দেশে দ্বিদলীয় ব্যবস্থা খুব একটা কার্যকর নয়। ফলে মানুষ দ্বিদলের অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিকল্প অনুসন্ধান করে। এর ফল যে সব সময় ভালো হয়, তা-ও নয়। এর জন্য জনগণকে দায়ী করা যাবে না। কারণ, তাদের সামনে রাজনীতিবিদরা ভালো বিকল্প হাজির করতে পারছেন না।
এবারের ডাকসু নির্বাচনের প্রেক্ষাপটটা ছিল একেবারেই ভিন্ন। আমাদের তরুণ প্রজন্ম বা জেন-জি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি, এমনকি ১৯৭৫ বা অন্যান্য বিষয়গুলো সম্পর্কে তাঁদের ধারণা থাকলেও চাক্ষুস সাক্ষী তাঁরা নন। তাঁরা সাম্প্রতিককালের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তাই তাঁদের কাছে বর্তমানই মুখ্য।
অন্যান্য দেশের মতোই বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মও বিগত সরকারের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। জুলাই আন্দোলনে বিএনপি যদি যথাযথ ভূমিকা পালন করত, তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতো। যে ছাত্র নেতৃত্বে জনমানুষের ক্ষোভটা সংগঠিত হয়েছে, তা শেষ পর্যন্ত আর বিপ্লব হিসেবে থাকেনি।
ডাকসুতে শিবির সমর্থিত প্যানেলকে ভোট দেওয়াটা হচ্ছে একেবারেই নেগেটিভ ভোট। শিবির খুব জনপ্রিয় হয়ে গেছে বা শিবিরই সব নিয়ন্ত্রণ করছে অথবা জামায়াতে ইসলামী এখন রাজনীতির সবটুকু নিয়ন্ত্রণ করছে, বিষয়টা একেবারেই এমন নয়। তবে আগে যা বললাম, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো তরুণদের সামনে ভালো বিকল্প হাজির করতে না পারার ফল ডাকসু নির্বাচনে এই অবস্থা। কিন্তু এ বিষয়টি ধরে এর বিরুদ্ধে পার্শ্ববর্তী দেশ যে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে, তা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত।
শশী থারুর জাতিসংঘে কাজ কাজ করেছেন। কংগ্রেসের বড় নেতা। বড় মাপের লেখকও তিনি। বাংলাদেশের দ্বিদলীয় রাজনীতির ওপরে তাঁর যে বয়ান, অর্থাৎ আওয়ামী লীগ-বিএনপির ওপরে তরুণেরা বীতশ্রদ্ধ হয়ে গেছে, এ মন্তব্য আমি মোটামুটি সমর্থন করি। তবে এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ‘কট্টোর ইসলামপন্থা’র পথে যাত্রা করেছে, সেটি মানতে আমি রাজি নই।
গণতন্ত্র মানে অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থা। বেশ অনেক বছর জন-অংশীদারিত্ব এবং জনগণের অংশগ্রহণের বিষয়টা আমাদের এখানে পুরোপুরি অনুপস্থিত ছিল। এরশাদকে হঁটানোর পরে যে আকাঙ্ক্ষাটা সবার ছিল, তার বাস্তবায়ন হয়নি। ওই প্রজন্ম তো বটেই, পরের প্রজন্মও একটা দুঃশাসন দেখেছে। এমন প্রেক্ষাপটে ভারতীয় কূটনৈতিক হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বা শশী থারুরের মতো বড় মানুষেরা ডাকসু নির্বাচন নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা ভারতীয় বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজের বাংলাদেশ নিয়ে বিভ্রান্তিরই বহিঃপ্রকাশ। আসলে বাংলাদেশ নিয়ে তাঁরা বিভ্রান্ত।
বাংলাদেশকে বুঝতে হলে ভিন্ন একটা মাত্রা প্রয়োজন। এটা আগে বুঝতে হবে যে পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে কোন দেশের কী সম্পর্ক। এমনকি কোন দেশকে বাংলাদেশের তরুণেরা সমর্থন করছেনন না, কেন করছেন না? এ বিষয়গুলো ভারতীয় বুদ্ধিজীবীরা বুঝতে পারছে না। ফেসবুক দেখে অথবা সংবাদপত্রের প্রতিবেদন দেখে বাংলাদেশকে বোঝা যাবে না। ভারতীয়দের বাংলাদেশের মানুষের মন বুঝতে হবে। অন্য দেশের মানুষের মন বুঝতে গেলে সংবাদপত্রের প্রতিবেদন আর ফেসবুক কোনো ব্যারোমিটার হতে পারে না।
ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে কট্টোর ইসলামিপন্থীরা ক্ষমতায় চলে আসল, উগ্রপন্থা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল, এটা ঠিক নয়। বাংলাদেশে উগ্রবাদ আছে, কিন্তু সেটি এখনো উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছায়নি। নানা ঘটনা ঘটেছিল গত শাসনামলে। সেটি ছিল অতিরঞ্জিত ও বাড়াবাড়ি। বর্তমানে বিভিন্ন মিডিয়াসহ ফেসবুক, ইউটিউবের মাধ্যমে তা ধরা পড়ছে। সেসব আসল তথ্য ছিল না।
তরুণ প্রজন্ম একটা পরিবর্তন চায়। এখন পরিবর্তনের জন্য তাঁরা আপাতত শিবিরকে পছন্দ করেছেন, তাঁরা জামায়াতকে পছন্দ করবেন কি করবেন না, এর জন্য অপেক্ষা করা ভালো। ভারতীয় বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রেণির এখনই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সঠিক হবে না। তাঁদের নিজেদের অতীত ভূমিকাও পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। নইলে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সঠিক তথ্য-বিশ্লেষণ তাঁরা করতে পারবেন না।
(শ্রুতিলিখন)
নেপাল সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ২৬টি প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করার পর যে জেন-জি বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে দেশটির তরুণ সমাজ। এমন আন্দোলনের কোনো অতীত নজির নেই। ৭৭টি জেলা শহরে ছড়িয়ে পড়া এ আন্দোলনে অন্তত ৫০ জন প্রাণ হারিয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগেজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) যাই না বহুদিন। আজ ৩৩ বছর পর ফিরে এসেছে জাকসু নির্বাচন। সেই উছিলায় আজ যাওয়া যেতেই পারে।
১ দিন আগেঅনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়কে সমাজের হু-বুহু প্রতিবিম্ব হিসেবে গড়ে তুলতে চান। বিশ্ববিদ্যালয় মানে তা নয়। সামাজিক বিজ্ঞানের চর্চাকারী হিসাবে জানি, সমাজের হু-বুহু প্রতিভূ হলে তা এমন সংকীর্ণ হবে যে সেখানে জ্ঞান-বিজ্ঞানের নতুন কিছু সৃষ্টি করা আর হবে না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় নতুন জ্ঞান সৃষ্টিরই পরিসর, তা অনেকেই
১ দিন আগেজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯২ সালে। প্রায় ৩৩ বছর দীর্ঘ বিরতির পর আবারও জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
২ দিন আগে